২০২৪ এর শুরুতেই বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের কিছু প্রাইমারি আর সেকেন্ডারি ডাটা হাতে চলে আসায় মনে হলো একটু বুঝে দেখি। সাম্প্রতিক ব্যাংকিং সেক্টরে একটা অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে বলে সবাই বলা বলি করছে। ডাটা গুলোর মানের উত্থান পতন তার ভিত্তিতে আমরা কি ধরনের সিদ্ধান্তে পৌছতে পারি তাই বুঝে দেখার চেষ্টা করবো এই লেখায়। এর আগেও আমি একটা ফিনানসিয়াল এনালিসিস করেছিলাম তবে তা কেবল এ দেশের ইসলামী ব্যাংকিং সেক্টরের একটি মাত্র উইন্ডোর ডাটা এনালিসিস ছিল। সমসাময়িক ব্যাংকিং পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলা যায় না অনেকের মত। লোকজন ব্যাংকে টাকা রাখতে ভয় পাচ্ছে। নিজে ব্যাংকার হওয়ায় নানা জনকে বুঝায়ে বলতে হচ্ছে সমস্যা গুলো কোথায় এবং কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নির্ভরযোগ্য। আমি ভাবতে ছিলাম ব্যাংকিং অঙ্গনের এই পরিস্থিতিটা সাময়িক এবং সহসাই সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে কিন্তু এই সেদিন মনে ২৭-ফেব্রুয়ারি-২০২৪ তারিখেও যখন লস-এঞ্জেলস এ বসবাসরত এক বয়স্ক প্রবাসী দম্পতি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি তে রক্ষিত তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থের কিয়দংশ আমাদের ব্যাংকের ইসলামিক উইন্ডোতে এমটিডিআর (ইসলামিক এফডিআর) করতে আসলেন তখন বুঝলাম সংকট এখনও কটে নাই আর রিউমারটা সুদূর লস এঞ্জেলস প্রবাসীদের কাছেও পৌঁছে গেছে। ব্যাংক ব্যবসা হলো বিশ্বাসের ব্যবসা বা ট্রাস্ট এর ব্যবসা তাই ব্যাংকারদের ট্রাস্টি বলা হয়। কোন ভাবে যদি এই বিশ্বাস ভেঙ্গে যায় তবে ব্যাংকারদের মূলধন ধরে টান পরে যা আজকের পরিস্থিতি দেখে প্রমাণ পাওয়া যায়।
বারচার্ট-১
উপরের গ্রাফটা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় সোনালী ব্যাংক পিএলসি ২০২৩ সালে তার আগরে সব রেকর্ড ছাড়ায়ে সবার উপরে চলে গেছে। হতে পারে তার নন পারফর্মিং এসেট বেশি, হতে পারে খেলাপি ঋণ বা সিএল হিসাবায়নে আনলে মুনাফার চিত্রটা বদলে যাবে, তার পরও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, যে কোন ভাবেই হোক সোনালী ব্যাংকে বিশাল পরিবর্তন এসেছে যা ইতিবাচক। অপরপক্ষে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি বিগত দুই বছরের তুলনায় এ বছর ভালো করেছে কিন্তু কিছু রিউমারের কারণে লোকজন টাকা সরায়ে ফেলছে ব্যাংকটা থেকে। আমার শিক্ষা জীবনের গুরু হাবিব স্যার আছে এই ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন পদে উনার সাথে আলাপে যা বুঝেছি তা হলো, ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’র এসেট অনেক। এত বিশাল একটা ব্যাংক জনমত যেমন মনে করছে তেমন ভাবে নিঃশেষ হয়ে যাবে না কিংবা যাওয়ার কথাও না। পত্রপত্রিকাতে নানা রকম খবরাখবর আসছে ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে যার কিছু নিয়ে নিচে আলোচনা করবো।
নিউজ সার্ভেঃ (সেকেন্ডারি ডাটা ) ব্যাংকিং খাতের বিষয়ে সমসাময়িক মিডিয়া কি বলছে একটু দেখা যাক, আমি কতগুলো পেপার কাটিং এখানে নিয়ে এসেছি যাতে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার বিশ্লেষণ করা যায়।
Daily Sun Report, Dhaka Sunday, 24 December, 2023
Around Tk92,261 crore has been plundered from the country’s banking sector in 24 major scams over the past 15 years – from 2008 to 2023, according to a report of the Centre for Policy Dialogue (CPD).
The amount was more than 12% of the budget for FY24, which means it would have been possible to meet the budget deficit easily if the money was not stolen from the banks.
The country’s banking sector has plunged into the grip of a particular group of people and the situation is worsening gradually. Despite the worsening condition, there is a lack of effective measures to address the problems in this sector, said the CPD in a media briefing titled “Economy of Bangladesh 2023-24: Ongoing Crisis and Actions” at its Dhanmondi office in Dhaka on Saturday.
At the programme, CPD Executive Director Fahmida Khatun said financial irregularities, including sanctioning loans against fake documents, loans for non-existent institutions, and embezzlement of money took place over the past 15 years. The money taken illegally from the banks during the period is about 2% of the current gross domestic product (GDP).
মুনাফা খেয়ে ফেলেছে খেলাপি ঋণ: সোনালী ব্যাংকের এমডি
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ২০২৩ সালে ৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। কিন্তু ব্যাংকের পরিচালন ব্যয়, খেলাপিসহ সব ধরনের ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) এবং সরকারি ট্যাক্স হিসাব করা হয়নি। খরচ বাদ দিয়ে মূলত নিট মুনাফা হিসাব করা হয়। খরচ বাদ দিলে ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা আসলে কিছুই থাকবে না। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ফেডারেল বা প্রভিশন রাখতে অতিরিক্ত সময় নিয়েছে সোনালী ব্যাংক। অর্থাৎ খেলাপির বিপরীতে এসব প্রভিশন রাখার পর নিট মুনাফার বিপরীতে লোকসানে পড়বে ব্যাংকটি। সোমবার সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম। ০১ জানুয়ারি ২০২৪, https://www.jugantor.com
নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ২১,৬৫৮ কোটি টাকা
নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে ঋণ বিতরণ করা হয়, তার প্রায় ৩০ শতাংশ ঋণ ইতোমধ্যেই খেলাপি হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খুবই নাজুক। এসব প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা ঋণের ৪৩ থেকে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত খেলাপি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, https://www.jugantor.com
নির্ধারিত দামে মিলছে না নগদ ডলার
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নির্ধারিত দামে নগদ ডলার মিলছে না। তবে কিছু ব্যাংকে চড়া দাম দিয়ে সীমিত পরিমাণে ডলার পাওয়া যাচ্ছে। খোলাবাজারে ডলার কিছুটা পাওয়া গেলেও দাম বেশ চড়া। ব্যাংকগুলোতে নগদ ডলারের নির্ধারিত সর্বোচ্চ দাম হচ্ছে ১১৭ টাকা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ১২২ থেকে ১২৫ টাকা করে। খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১২৬ টাকা করে। ১0 জানুয়ারি ২০২৪, https://www.jugantor.com
নগদ টাকার টানাটানি, লাফিয়ে বাড়ছে সুদ
অনিয়ম, দুর্নীতি এবং আস্থাহীনতায় তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে অন্তত এক ডজন ব্যাংক। এর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা খুবই নাজুক। বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও এসব ব্যাংক প্রতিদিন একে অপরের থেকে নগদ টাকা ধার করে চলে। সবল ব্যাংক দুর্বল ব্যাংককে ধার দিয়ে থাকে। আন্তঃব্যাংকের ধারের এই পদ্ধতিতে ব্যাংকিং ভাষায় কলমানি মার্কেট বলা হয়। সে কলমানি মার্কেটে লাফিয়ে বাড়ছে সুদহার। জানা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদহার বাড়ানোকে অন্যতম টুল হিসাবে ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে কারণেই চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) শুরু থেকেই সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা প্রত্যাহার করা হয়েছে। যার সরাসরি প্রভাব দ্রুত কলমানি মার্কেটেও পড়েছে।“ ১৪জানুয়ারি২০২৪, https://www.jugantor.com
শরীয়াহ ব্যাংকের কারণে তারল্য ঘাটতিতে পুরো ব্যাংক খাত
গ্রাহকের জমা টাকা বা আমানত সুরক্ষায় ব্যাংকগুলোকে আমানতের একটি অংশ বাধ্যতামূলকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। তবে ইসলামী ব্যাংকসহ ছয়টি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ও দুটি প্রচলিত ধারার ব্যাংক চাহিদা মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সেই অর্থ জমা রাখতে পারছে না। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা এসব ব্যাংকের চলতি হিসাব মাঝেমধ্যে বড় ঘাটতিতে পড়ছে। কয়েকটি ব্যাংকের বড় এই ঘাটতির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা ব্যাংকগুলোর আমানত সুরক্ষার অর্থে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত নভেম্বর শেষে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিসেম্বরভিত্তিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
দেশের ব্যাংকগুলোকে গত নভেম্বরে নগদ জমা বাবদ (সিআরআর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৭১ হাজার ৫২ কোটি টাকা জমা রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল; কিন্তু ব্যাংকগুলো জমা রাখতে পেরেছিল ৬৫ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। তারল্য–সংকটে না থাকা ব্যাংকগুলো সিআরআর বাবদ প্রয়োজনের বেশি অর্থ জমা রাখলেও সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এ বাবদ ঘাটতি ছিল পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূলত শরিয়াহভিত্তিক কিছু ব্যাংক সিআরআর বাবদ অর্থ জমা রাখতে না পারায় সার্বিকভাবে এ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সিআরআরের অর্থ জমা রাখতে না পারা ব্যাংকগুলো জরিমানা গুনছে, জরিমানার সেই টাকাও তারা জমা দিতে পারছে না। https://www.prothomalo.com/business/bank/v1n208u561
ব্যাংকে রাখা আমানত কমছে, সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন পোশাককর্মীরা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য বিদায়ী ২০২৩ সালের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে পোশাকশ্রমিকদের ৯ লাখ ৩ হাজার ৭৫৩টি ব্যাংক হিসাবে সর্বমোট জমা ছিল ৩০০ কোটি টাকা। এর আগের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে যা ছিল ৩৩০ কোটি টাকা। ওই প্রান্তিকে হিসাবসংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫০৩টি। অর্থাৎ তিন মাসে পোশাকশ্রমিকদের হিসাবসংখ্যা বাড়লেও আমানত কমেছে ৩০ কোটি টাকা বা ৯ শতাংশ। https://www.prothomalo.com/business/bank/vx9vnuy68c
ডলারের কারণে মুনাফা কমতে পারে ব্যাংকগুলোর, বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক
ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও তহবিল খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমতে পারে। কারণ, বৈশ্বিক সুদের হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় টাকার অবমূল্যায়নের কারণে যাঁরা বিদেশি ঋণ নিয়েছেন, তাঁদের বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে অভ্যন্তরীণ ঋণের তহবিল খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, সাম্প্রতিক কালে খেলাপি ঋণের হার সামান্য কমলেও ক্রমাগত খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নজরদারি আরও জোরদার করার ইঙ্গিত বহন করছে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের চিহ্নিতকরণ, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নপূর্বক আইন গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। https://www.prothomalo.com/business/bank/a0wnt4ir48
রেড জোনে ৯ ব্যাংক, ইয়োলোতে ২৯
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকস হেলথ ইনডেক্স (বিএইচআই) অ্যান্ড হিট ম্যাপ’শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দেশের ৯টি ব্যাংক রেড জোনে আছে। আর ইয়েলো জোনে আছে ২৯টি এবং গ্রিন জোনে আছে ১৬টি ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বিভাগ অর্ধবার্ষিক পারফরেমেন্সের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে ভঙ্গুর আর্থিক দশা বোঝানো হয়েছে রেড জোন দিয়ে। গ্রিন জোন সূচকের দিক থেকে ভাল পারফরমেন্সকে বোঝায় এবং ইয়োলো জোন মধ্যবর্তী অবস্থানকে বোঝায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী রেড জোনে আছে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড, পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড, বেসিক ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক পিএলসি, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড ও এবি ব্যাংক লিমিটেড।
ইয়োলো জোনে আছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ওয়ান ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।
গ্রিন জোনে আছে, প্রাইম ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ব্যাংক আলফালাহ, ব্যাংক এশিয়া, সীমান্ত ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, উরি ব্যাংক, এইচএসবিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সিটি ব্যাংক এনএ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশ ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
https://www.itvbd.com/economy/135659/রেড-জোনে-৯-ব্যাংক-ইয়োলোতে-২৯
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৪
নিউজ মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত সেকেন্ডারি ডাটা এনালিসিসঃ-
বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে যে পর্যালোচনা পাওয়া যায় তাতে সবসময় একটা ডাউট ফ্যাক্টর কাজ করে তার পরও একটা সাম্যক চিত্র পাওয়ার জন্য তা যথেষ্ট পরিমাণে নির্ভরযোগ্য ধরে নেয়া যেতে পারে। খেলাপি ঋণ এর রোগটা এদেশে নতুন নয়, যা নতুন তা হলো ডলার ক্রাইসিস। এই ক্রাইসিসের কারণে বৈদেশিক বাণিজ্য যেমন মারত্মক ভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি যে সব ছাত্র ছাত্রী বিদেশে পড়তে যেতে চাচ্ছে তারাও যেতে পারছে না। উপায়ান্তর না পেয়ে তারা হুন্ডি করে হলেও বিদেশে যাচ্ছে। শরিয়া ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক গুলোর মালিকানায় মনোপলি হয়ে গেছে, দেশের একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান বেশিরভাগ শরিয়া ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক কিনে তার মূলধন থেকে টাকা সরায়ে ফেলার খবর রিউমার আকারে গণমাধ্যমে চলে আসায় যারা ওই সব ইসলামী ব্যাংকে টাকা রেখেছিল তারা তা সরায়ে নিয়ে আসে নির্ভর যোগ্য ব্যাংক গুলোতে। সেকেন্ডারি ডাটা থেকে পাওয়া চিত্র বলে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা মোটেও স্বাভাবিক অবস্থায় নাই কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সেরকম কোন রেড এলার্ট জারী করা হয় নাই বরং তারা সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবহিত ও তা দক্ষতার সাথে সামাল দিচ্ছে বলে আমার মনে হয়েছে।
নন ব্যাংকিং হোক আর ব্যাংকিংই হোক না কেন, এই খেলাপি ঋণ যেন একটা কালচারে পরিণত হয়ে গেছে এ দেশে। ঋণ নিব কিন্তু ফেরত দিব না এরকম একটা মানসিকতা কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর মধ্যে আছে। সৎ ব্যবসা করে লাভ করা না গেলে তারা এই পথ ধরে বলে আমার ধারণা। ব্যাংকে সঞ্চিত অন্যের টাকা নিয়ে এরা মেরে দিচ্ছে সবার চোখের সামনে। কানাডায় শুনেছি ওখানে যদি কেউ তার কোন ঋণ এর কিস্তি ডিফল্টার হয় তবে তার ক্রেডিট / ডেবিট কার্ডের সকল লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। তাই তাদের কোন কিস্তি খেলাপি হওয়ার সুযোগ নাই। এরকম ব্যবস্থা আমাদের দেশেও করা উচিত। ইদানীং দেয়াল লেখন দেখা যাচ্ছে ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে চীনের মতো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক। আমিও মনে করি ঋণ খেলাপি ব্যাংকারের দৃষ্টিতে একজন ক্রিমিনাল তাকে বার বার লোন ক্লাসিফিকেশনের সুযোগ না দিয়ে বরং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করলে এই খেলাপি ঋণের প্রবণতা কমে যাবে।
আমার কাছে সিপিডি আর টিআইবি’র গবেষণা পত্র গুলো থেকে উঠে আসা পেরামিটিার গুলোকে সঠিক বা নির্ভরযোগ্য বলে সব সময় মনে হয়েছে। আমার কথা হলো এই প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য উপাত্ত তো গবেষণার মাধ্যমে আসে আর তা তারা প্রকাশ করতেই পারে। জনগণ তা গ্রহণ করবে কি করবে না তা তাদের বিষয়। তাদের কথাগুলো সত্য তা আমরা সবাই জানি, যা বলেছে যে ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে লোন দেয়া কিংবা কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে লোন দেয়া, যে লোন আদায় হয় না, কুঋণ হয়ে যায় তা তো সত্য আর তাতে যে ২০০৮ হতে ২০২৩ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট হয়েছে তাতে কার সন্দেহ থাকার কথা না। তবে তা ফিগারে বা পরিমাণে পাওয়া গেল ওদের গবেষণার মাধ্যমে। এই তথ্য এলার্মিং এদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিবেচনায়।
প্রাথমিক উপাত্ত বা প্রাইমারি ডাটা এনালিসিসঃ-
প্রাথমিক উপাত্ত সব থেকে নির্ভর যোগ্য সোর্স কোন বিশ্লেষণে কিংবা কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য। তাই সেকেন্ডারি ডাটার চেয়ে আমরা প্রাইমারি ডাটার উপর নির্ভর করতে পারি বেশি।
নিচে বিভিন্ন ব্যাংকে একটি ইসলামী ব্যাংকিং ইউনিটের সারপ্লাস ফান্ড ফ্লো এনালিসিস করলে দেখা যায় ২০১৯ সালে ও ২০২০ সালে বিভিন্ন শরীয়া ভিত্তিক ব্যাংকে কম বেশি ফান্ড ফ্লো করলেও ২০২৩ সালে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকে ফান্ড ফ্লো একদম নাই অথচ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিতে ফান্ড রাখা হয়েছে যা ২০১৯ কিংবা ২০২০ সালে রাখা হয়নি। দুই বছরের ব্যবধানে ফান্ড ফ্লোর এই তথ্যটা বলে দেয় যে, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিশেষ করে ইসলামী শরীয়া ভিত্তিক ব্যাংক গুলোতে একটা তোলপাড় চলছে।
পই চার্ট ১, ২ ও ৩ বিবেচনায় আনলে দেখা যায় যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক আর ইউনিয়ন ব্যাংকে কোন ফান্ডই রাখা হয়নি অথচ ২০১৯ ও ২০২০ সালে কিন্তু এই দুটি ব্যাংকে বিশাল অংশ ফান্ড রাখা হয়েছিল। প্রশ্ন হতেই পারে যে কি এমন হলো যে এই দুটো ব্যাংক থেকে ফান্ড সরায়ে নেয়া হলো? এটা প্রায় স্পষ্ট যে শরীয়া ভিত্তিক ব্যাংকিং সেক্টরে একটা পরিবর্তন এসেছে যা সবাই জানে আর তারই প্রেক্ষিতে এই চিত্রটি পাওয়া যায়।
লাইন চার্ট-১
দেশের ইসলামী ব্যাংক গুলোর কল মনি মার্কেট না থাকায় ইসলামী ব্যাংকিং ইউনিটগুলো তাদের অতিরিক্ত বা আইডেল ফান্ড অন্য ইসলামী ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে সংরক্ষণ করে বা বিনিয়োগ করে। উপরের লাইন চার্ট থেকে দেখা যায় একটি ইসলামী ব্যাংকিং ইউনিটের আদার ব্যাংক এমটিডিআর (ইসলামী এফডিআর) সংরক্ষণের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ এর রেখাচিত্রে যে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। উপরের চিত্র থেকে বুঝা যায় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ফান্ড পুরটাই সরায়ে তা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি আর আল আরাফাহ্ ব্যাংকে রাখা হয়েছে যেখানে এক্সিম ব্যাংকে রক্ষিত আমানত কিছুটা কমলেও তা টিকে গেছে।
বার চার্ট-২
বারচার্ট ২ এ বিগত ৮ বছরে একটি ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর ডিপোজিট ও ইনভেস্টমেন্টের তুলনা চিত্র দেখানো হয়েছে। বাস্তবতা অনুযায়ী কিন্তু এই এডি রেশিও অনেক ভালো। যা আমানত তাই বিনিয়োগ করা হয়েছে। এটা প্রমাণ হয় যে ব্যাংক ব্যবসায় কিন্তু তেমন কোন বাধা পায় নাই বিচার্য ব্যাংকিং ইউনিটটির কিন্তু ২০১৮ থেকে ২০১৯ এ একটা বিশাল পরিবর্তন হয়েছে তা বুঝা যায়। ডিপোজিট আর ইনভেস্টমেন্ট দুটাই বিশাল ব্যবধানে বেড়ে গেছে আর তার পর যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো ২০২২ এর ব্যবসায়িক অবস্থার অবনতি হয়েছে ২০২৩ সালে। নিচের চার্ট গুলোতে এই অবনতির কিছুটা ব্যাখ্যা পাওয়া যেতে পারে।
বার চার্ট-৩
বিগত আট বছরে আমানত সংগ্রহে প্রদত্ত টার্গেটের বিপরীতে অর্জন বিবেচনা করলে দেখা যায় অন্যান্য বছর আশানুরূপ অর্জন হলেও ২০২৩ সালে প্রদত্ত টার্গেটের অনুপাতে অর্জন মারাত্মক ভাবে নিচে নেমে গেছে। এই অধঃপতনের জন্য কি আমরা দেশের ব্যাংকিং অঙ্গনের অস্বাভাবিক অবস্থাকে দায়ী ভাবতে পারি? নিচে বিনিয়োগের চিত্রটা বিচার করা যাক।
বার চার্ট-৪
টার্গেটের বিপরীতে অর্জন বিবেচনায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও উপরের বার চার্ট-৪ থেকে দেখা যায় ২০২২ সালে প্রস্তাবিত টার্গেটের চেয়ে বিনিয়োগ বেশি অথচ ২০২৩ সালে টার্গেট রিচ করতে পারে নি ব্যাংকিং ইউনিটটি। এটা স্পষ্টতই প্রমাণ করে ব্যাংকিং ব্যবসায় একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
বার চার্ট-৫
বিস্ময়কর চিত্রটি হলো যদিও আমানত ও বিনিয়োগে একটা অধঃপতন আমার উপরের চার্ট গুলোতে লক্ষ্য করেছি কিন্তু মুনাফা অর্জনে ব্যাংকিং ইউনিট কিন্তু আগের বছর গুলোর তুলনায় প্রস্তাবিত টার্গেটের চেয়ে পূর্বের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছে। আমানত ও বিনিয়োগে প্রস্তাবিত টার্গেটে ব্যর্থ হয়েও মুনাফায় পূর্বের সকল রেকর্ড অতিক্রম করাটাও কিন্তু একটা অস্বাভাবিক অবস্থাই নির্দেশ করে।
সর্বশেষ বিবেচনায়ঃ-
দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে যদি এরকম অস্বাভাবিক অবস্থা থাকে তবে বুঝতে হবে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও একটা অস্বাভাবিকতা আছে। অর্থনৈতিক সমীকরণগুলোতে বলা হয়ে থাকে যখন দেশের অন্যান্য সেক্টর স্বাভাবিক থাকবে তবে সূত্র গুলো কাজ করবে, দেশের অন্যান্য সেক্টর বলতে ব্যাংকিং সেক্টরকেও বিবেচনায় আনা যায়। যেহেতু তা অস্বাভাবিক তাই অর্থনীতির সূত্রগুলোর স্বাভাবিক কার্যকর থাকার কথা না। আমরা শুনি দেশ থেকে প্রচুর অর্থ অন্যত্র পাচার হয়ে যাচ্ছে, আমরা শুনি মুদ্রা স্ফীতির কথা কিন্তু বাজার বিবেচনা করলে অবাক হই। এত অর্থ পাচার, এত মুদ্রাস্ফীতি অথচ বাজারে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি নাই আবার ক্রেতাও কমে নাই। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি অথচ তা ক্রেতার পারচেজিং পাওয়ার পেরটি বা ক্রয় ক্ষমতাকে অতিক্রম করে নাই। তা যদি করতো তবে জনগণ রাজ পথে নেমে আসতো এর প্রতিবাদে, তা তো দেখা যাচ্ছে না। তা হলে আমরা কি বুঝবো? অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও কোন এক অজানা ফেক্টরে দেশের অর্থনীতিতে ভারসাম্য বিদ্যমান আছে? রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কাড়নেই হোক কিংবা দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের কারনেই হোক ডলার ক্রাইসিস দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে একটা অস্বাভাবিক অবস্থা নিয়ে এসেছে তার সাথে যোগ হয়েছে শরীয়া ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক গুলোর মালিকানায় একক কোন প্রতিষ্ঠানের একছত্র আধিপত্য। এই দুটা ফ্যাক্টরের পাশাপাশি দেশীয় কালচার ঋণ খেলাপির কারণেও দেশের ব্যাংকিং অঙ্গনে ২০২৩ - ২০২৪ অর্থ বছরে একটা অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে বলে আমার মনে হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের চিহ্নিতকরণ, তালিকা প্রকাশ ও তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত জরুরী ও সময়ের দাবী বলে আমি মনে করি।
সম্পাদনা ও উন্নয়ন ইতিহাসঃ ০১জানুয়ারী২০২৪> ০৩জানুয়ারী২০২৪> ১৪জানুয়ারী২০২৪> ১৭ফেব্রুয়ারী২০২৪> ২৮ফেব্রুয়ারী২০২৪> ১৮মার্চ২০২৪
Related Write ups প্রাসঙ্গিক লেখা
Islamic banking window in current context
https://surzil.blogspot.com/2023/01/islamic-banking-window-in-current.html
দেঁকি না কিঁ করে – সব ব্যাংক লুটেরার দল
https://surzil.blogspot.com/2022/12/blog-post_25.html
প্রশ্ন উত্তরে ইসলামী ব্যাংকিং – মোহাম্মদ মোস্তফা সার্জিল
https://surzil.blogspot.com/2020/11/blog-post.html
সাক, সুকুক ও ইসলামী ব্যাংকিং
https://surzil.blogspot.com/2019/09/blog-post.html
ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
https://surzil.blogspot.com/2019/08/blog-post_14.html
ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোতে দেড় বছর
https://surzil.blogspot.com/2018/12/blog-post_28.html
ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো- একটি কেইস স্টাডি
https://surzil.blogspot.com/2021/02/blog-post_11.html
আমার কাছে অনেকের প্রশ্ন
https://surzil.blogspot.com/2024/02/blog-post_28.html
No comments:
Post a Comment