Wednesday, February 28, 2024

আমার কাছে অনেকের প্রশ্ন ও তার উত্তর

 

আপনি এত সময় কই পান? এত বড় বড় লেখা কখন লিখেন?

উত্তরঃ আমি একটা লেখা শুরু করার পর বিভিন্ন সময় তাতে আমার চিন্তা গুলো যোগ করে যখন দেখি তা অন্যর সাথে শেয়ার করার উপযুক্ত হয়েছে তখন তা ব্লগে প্রকাশ করে মতামত আশা করি। আমার লেখার উদ্দেশ্য মূলত অন্যর সাথে আমার চিন্তা ভাবনা গুলো শেয়ার করা। অনেকের প্রশ্ন লেখার জন্য এত সময় আমি পাই কই। একটু একটু করে লিখি অনেক দিন ধরে, কোন কোন লেখা বছর গড়ায়ে যায়। তাই আমার প্রতিটি লেখার নিচে কবে কবে লিখেছি তার একটা উন্নয়ন ও সম্পাদনা ইতিহাস যোগ করা থাকে। আমার এক বন্ধুর জানার আগ্রহে বলেছিলাম, কেউ আছে যারা দুইটা বল নিয়ে জাগল করতে পারে না আবার কেউ কেউ আছে যারা ৪, ৫ টা বল নিয়ে দুই হাতে জাগল করতে পারে। এটা তার বা যার যার দক্ষতার বিষয়। তাছাড়া বিন্দু বিন্দু করেই তো সিন্ধু হয়। অল্প অল্প করে লিখি একসময় তা অনেক হয়ে যায়, তখন সম্পাদনা করে কাট ছাট করে দরকারি কথা গুলো রেখে বাকি গুলো বাদ দিয়ে দেই। আজকের জমানায় এত এত সফটওয়ার আর অনলাইন টুল চলে আসছে যে আমরা অল্প সময়ে অনেক কাজ ও অনেকের সাথে যোগাযোগ করতে পারি তবে সেটা তখনই পারি যখন আমরা এই উন্নত টুলস গুলো সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে শিখি। সিস্টেমেটিক ভাবে কাজ করলে প্রচুর কাজ ও জটিল কাজ গুলো সহজে করা যায়। তাই যারা যত বেশি টুল ব্যবহার করতে শিখেছে তারা তত বেশি অন্যর চেয়ে বেশি কাজ করতে পারছে। আমি টুলস গুলো ব্যবহার করে অনেক কাজ দ্রুত করে ফেলতে শিখেছি তাই অন্য কারো কাছে মনে হতে পারে আমি হাইপার একটিভিটি শো করছি, প্রকৃত পক্ষে তা নয়, বরং ডিসিপ্লিন ও মেথড ব্যবহার করে আমি প্রচুর কাজ করছি স্বচ্ছন্দে ও সাবলীল ভাবেই। অন্যরা পারছে কি না সেটা আমার ধর্তব্যের বিষয় না।

আমি আমার লেখায় কম্পিউটার ব্যবহার করি আর আমার চিন্তাভাবনা গুলো লিখে রাখি বিভিন্ন সময়। আমার টাইপ স্পিড বাংলায় মিনিটে ৫০ শব্দ আর ইংরেজিতে ৫৫ শব্দ হওয়ায় প্রচুর কথা লিখতে পারি। টাইপ স্পিড বৃদ্ধির জন্য আমি মেভিস বেকন টিচার্স টাইপিং ভার্শন ফোর এর কাছে ঋণী। বানান ভুল সংশোধনের জন্য আমি অভ্রর স্পেল চেকারের কাছে ঋণী। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর ট্রেক চেঞ্জ ফাংশন আমাকে আমার লেখা সম্পাদনা করতে যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্য করে। একটা হাইলি কাস্টমাইজড কম্পিউটার ফাইল আমার লেখাগুলো সংরক্ষণ করে যেটাতে আমি ন্যাভিগেশন টুল ব্যবহার করে যখন যে লেখাটাতে আমার কথা সংযুক্ত করতে চাই তা করতে পারি। ব্লগ স্পট এর কাছে কৃতজ্ঞ আমার লেখাগুলো অনলাইনে প্লেস করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আর হোয়াটস এ্যাপ, ফেইসবুক, ম্যাসেঞ্জার এর মাধ্যমে লেখাগুলো আমার প্রিয়জনদের কাছে পৌছে দেই। সব গুলো টুল ব্যবহার করে আমার মনের কথা আপনার কাছে পৌঁছে দেই এই প্রত্যাশায় যে আপনি তা পড়ে আপনার মূল্যবান মতামত দিয়ে আমাকে সমৃদ্ধ করবেন। কিন্তু মানুষ পড়ে (কতগুলো হিট হলো তা আমি দেখতে পাই ব্লগের কন্ট্রোল প্যানেলে) কিন্তু কোন মন্তব্য করে না দেখে প্রায়শই হতাশ হই। বেশির ভাগ পাঠকই হয়তো এত বড় লেখা দেখে সুইপ ডাউন করে চোখ বুলায়ে যায়। পড়লে তো সে মন্তব্য করতো কিন্তু বাঙ্গালীদের মধ্যে ভারচুয়াল রিয়ালিটির কনসেপ্টটা এখনও পুরোপুরি বোধগম্য হয়নি কিংবা তারা সহজে মন্তব্য করতে চায় না, যা আমরা বিশ্বের অন্যান্য অংশে দেখি না। ওখানে প্রায়শই তাদের পোস্টে মিলিয়ন মিলিয়ন রিএকশন আসতে দেখা যায়। হলিউড তারকা মরগান ফ্রিম্যান এর কাজ ও কথা আমাকে মারাত্মক প্রভাবিত করেছে তাছাড়া বারট্রান্ড রাসেল ও এলডাস হাক্সলির লেখাও আমার অত্যন্ত প্রিয়।

আপনি রাজনৈতিক ভাবে কোন মতাদর্শের অনুসারী?

উত্তরঃ আমাদের সংবিধানের মূল নীতি মতে সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। ধর্মীয় গোঁড়ামির মধ্যে আমি নাই। এই কিছুদিন আগেও ছিলাম কিন্তু এখন এর চরম বিরোধিতা করি। প্রতিটি ধর্মের ছাতার  নিচেই অন্ধকার আর ঝর বৃষ্টির ভয়ে অনেকেই সেই ছাতা মাথায় দিয়ে আছে, আমি মনে করি ছাতা সরালেই তারা আলোকিত আকাশটা দেখতে পাবে। আমি ছাত্রাবস্থায় কিংবা চাকুরী জীবনে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না তবে ২০০২ থেকে ২০১০ পর্যন্ত মুসলিম প্রফেশনালস ফোরাম বা এমপিএফ এর সাথে যুক্ত ছিলাম। ওই সময় ইসলাম ধর্ম ও রাজনীতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাই। ২০১৬ তে মায়ের মৃত্যুর পর ধর্মের উপর সকল আস্থা হারায়ে ধর্মনিরপেক্ষ ও পরবর্তীতে প্রথা বিরুদ্ধ মানুষিকতায় চলে আসি। দেশের কোন রাজনৈতিক দলের সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই, কখন ছিলও না। যারা ভালো কাজ করে ও সঠিক পথে চলে আমি তাদের সমর্থন করি আমার লেখার মাধ্যমে তা প্রকাশও করি।

আপনার লেখার উদ্দেশ্য কি?

উত্তরঃ সব লেখকেরই লেখার একটা উদ্দেশ্য আছে, আমারও আছে, আমি মনে করি আমার লেখা যদি পাঠকের মনে চিন্তার সূত্রপাত করতে পারে তবেই তা সার্থক। কারণ ইদানীং কালের মানুষের মধ্যে চিন্তা ভাবনা করার ফুরসতও নাই তাই অভ্যাসও কমে গেছে, কিন্তু মানুষের মনের মৌলিক চিন্তা ভাবনায় যদি পরিবর্তন আনতে হয় তবে তাকে দিয়ে চিন্তা ভাবনা করাতে হবে। হ্যাঁ, অনেকেই আমার মাঝারি গোছের আর্টিকেল গুলো পড়ার আগ্রহ পাবে না আমি জানি তবে কেউ কেউ কিন্তু বিষয়বস্তু ও তার সার সংক্ষেপ পড়ে আগ্রহ পাবে, যারা পড়ুয়া তারা পড়বে আর তা তাদের মধ্যে চিন্তার সূত্রপাত করবে। আমার উদ্দেশ্য ওটাই।

মানুষে মানুষে মত পার্থক্য থাকবেই কারণ প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন তবে মতামতগুলো যতটা সম্ভব কাছাকাছি নিয়ে আসাই আলোচনার উদ্দেশ্য। আমি যে লিখি তা মূলত মানুষের মধ্যে চিন্তার সূত্রপাত করানোর জন্য। যাতে করে তার মতামতগুলো আমি পাই ও তার সাথে আমার চিন্তা ভাবনা গুলো যাচাই বাছাই করে দেখতে পারি। এই যাচাই বাছাই যদি উভয়েই জানে তবে উভয়েরই উপকার হবে। তাই আমার লেখা পড়ে মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো।


 প্রশ্নঃ কবে থেকে লেখালেখি শুরু করেন?

উত্তরঃ আমি লেখা লেখি খুব বেশি দিন হয় নাই যে শুরু করেছি, আনুমানিক ২০১৮ সালের মধ্যভাগ থেকে। কখনো ভাবিও নাই যে ব্লগে আমার এতগুলো লেখা আপলোড করতে পারবো। আমার আগের লেখা গুলো মূলত নিজের সাথে আত্মকথনের মত ছিল আর বিশৃঙ্খল বা জগাখিচুড়ির মত ছিল। কাউকে দেখাতে হবে না বলে আবোল তাবোল চিন্তাগুলো লিখে রাখতাম, যখন ব্লগে আপলোডের প্রসঙ্গ চলে আসলো তখন সঠিক বানানে সুন্দর করে একটা উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লেখা গুলো গুছানো গেল। আমি রিথোরিকাল পাওয়ার এর উপর একটা বই পেয়েছিলাম হাতে ওটার পরামর্শগুলোও কাজে আসছে। প্রথম কয়েকটা লেখা ইংরেজিতে লিখে পরে দেখলাম ইংরেজির চেয়ে বাংলায় আমি অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, তখন ওই ইংরেজি লেখাগুলো অনুবাদ করে বাংলায় এনে তাকে আরো উন্নত করেছি। ব্লগে লেখা শুরু করার পর দেখলাম আমি যখন এর লিংক গুলো আমার পরিচিত জনদের দেই তখন তারা সেটা পড়ে, সবাই না, তবে বেশ কয়েকটা দিক থেকে সাড়া পেলাম। লেখা কিন্তু চাইলেই আসে না, মনের কথাগুলো গুছায়ে লেখাটাতেও মন লাগে আর একটা বিষয় ছোট্ট করে প্রকাশ করলে তার মর্ম কথাটা সঠিক ভাবে অন্যের কাছে প্রকাশও করা যায় না। আমি কিন্তু আমার ব্লগ লিংক গুলো কতগুলো হিট হল তা জানতে পারি, ধরে নেই তার তিন ভাগের এক ভাগ হয়তো পড়ে, বাকিরা সুইপ করে চলে যায়। তবে যারা পড়ে তারা মন্তব্য করে, তাও ব্লগে না, সামনা সামনি দেখা হলে ওই প্রসঙ্গে বলে।

আমি গল্প উপন্যাস লিখতে পারি না, কবিতা তো নয়ই, কিন্তু আমি আমার চিন্তা ভাবনা গুলো তোমার সামনে মেলে ধরতে পারি, তার প্রেক্ষিতে তোমার চিন্তা ভাবনা গুলোর মিথস্ক্রিয়া অবশ্যই হবে আর যুগ যুগ ধরে সেই সক্রেটিসের আমল থেকে থিসিস+এন্টিথিসিস=সিনথেসিস (বাদ+প্রতিবাদ=সংবাদ বা সংলাপ) মানুষের মনের পরিবর্তন করে আসছে। নতুন কিছু আনতে হলে এই বাদ প্রতিবাদ এর সংশ্লেষণ লাগবেই। তার জন্যই আমি লিখে যাচ্ছি। সাতটা করে লেখার একটা করে ছোট্ট বই আকারে প্রকাশেরও ইচ্ছা হচ্ছে ইদানীং, ছোট মামার প্রেসে লেখাগুলো পাঠাচ্ছি। কম খরচে কয়েক হাজার কপি করে ছাপবো। সাতটা বই এর নাম ও লেখা আলাদা করে ফেলেছি। একদিকে নতুন লেখা চলবে আর তার পাশাপাশি বই আকারে একই ধারার লেখাগুলোর বইও ছাপবো আশা রাখি।


প্রশ্নঃ পাঠকদের প্রতি কি আপনার কোন বক্তব্য আছে?


উত্তরঃ বর্তমান সমাজে লোকগুলোর মানুষিকতা দ্রুত আগ্রহ হারায়ে ফেলা কিংবা কেবল সাম্প্রতিক বিষয়াবলীতে আগ্রহ থাকা, তার সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু ওই যে বলে না কোয়ান্টিটি বাড়ালে কোয়ালিটি কমে যায় তখন তাতে ভারসাম্য আনতে কৌশল লাগে। হ্যাঁ সমাজে মানুষের জীবনাচরণ ও জীবন দর্শনে পরিবর্তন আসছে কিন্তু যদি খেয়াল করে দেখা যায়, অনলাইন নিউজ থাকলেও নিউজ পেপার পত্রিকা প্রকাশ কিন্তু থেমে থাকেনি। টিভি নিউজ চ্যানেলও চলছে যেখানে ইউটিউবে সেই খবরই যখন তখন দেখা যায়। সমাজ ও জীবনাচরণ বদলাচ্ছে কিন্তু আগের গুলো সবই যে অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে তা নয়। পুর সমাজটা একবারে বদলাচ্ছে না, এখানেও স্ট্রেটাম থেকে স্ট্রেটামে নানা রকম চিন্তা ভাবনা চলমান আছে। আমাদের জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক জনগোষ্ঠীর চিন্তা ভাবনা গুলোকে যদি কাছা কাছি আনা যায় তবে সমাজে পরিবর্তন আসবেই। আমি লেখা লেখির মাধ্যমে সেই চেষ্টাটাই করতে চাচ্ছি যতটা পারছি আমার পেশা ও পরিবারকে ঠিক রেখে। আমাদের আবাস এই দেশের উন্নয়নে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের উন্নত ভবিষ্যতের জন্যও যতটা সম্ভব আমাদের অংশগ্রহণ করা উচিত বলে আমি মনে করি। আরেকটা কথা, লিখে যা প্রকাশ করা যায় তা কিন্তু কথায় অনেক সময় প্রকাশ করা যায় না। কথা ক্ষণিক বাদ মেনে চলে, ক্ষণিকেই তা অতীত কিন্তু লিখলে তা সহজে অতীত হয় না, সময়ে তাকে ধরে রাখা যায়।

 

উন্নয়ন ও সম্পাদনা ইতিহাসঃ ২৪ডিসেম্বর২৩> ২৮ফেব্রুয়ারী২০২৪> ০৪মার্চ২০২৪> ১৭মার্চ২০২৪> ১৭এপ্রিল২০২৪>

2 comments:

  1. Very elaborate response which will help many of us. Thank you, Surzil

    Please drive on and contribute through your writings.

    Best wishes
    Brig General Mofiz *R)

    ReplyDelete
    Replies
    1. মফিজ ভাই, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। হ্যা আমি লেখা চালিয়ে যাবো আপনাদের দেয়া অনুপ্রেরণাই একটা দারুণ শক্তি দেয় মনে। আমি প্রত্যেকটা ফিড ব্যাককে অত্যন্ত মূল সহকারে বুঝার চেষ্টা করি। আমার লেখার ধরণ ধারণ ও পরিবেশন অনেকের ফিড ব্যাকের কারনেই পরিবর্তিত ও উন্নত হয়েছে। আমার ভুল গুলো আমি ধরতে পারি আপনাদের দেয়া ফিড ব্যাক থেকে ও সেই মত আমার চিন্তা ভাবনা গুলোও উন্নত হয়।

      Delete