Sunday, December 25, 2022

দেঁকি না কিঁ করে – সব ব্যাংক লুটেরার দল

ছোট বেলায় শুনেছিলাম ভানুর কমিক। এই প্রজন্মের কেউ হয়তো ভানু বন্দোপাধ্যায়ের নামই শুনে নাই। ১৯৭০ – ১৯৮০র দশকের বাঙ্গালী জনপ্রিয় কমেডিয়ান যে কোলকাতায় বাংলাদেশি বাংলা আইসিলাম, খাইসিলাম গেসিলাম বলে কোলকাতার লোকদের হাসাত। ওঁরা তো কুলীন, বলতো এসেছিলুম, গিয়েছিলুম, খেয়েছিলুম ইত্যাদি তাই এপার বাংলার ভাষা তাদের কাছে হাস্যকর মনে হতো। ভানুর কমিক গুলোর রেকর্ড তখন ঘরে ঘরে রেকর্ড প্লেয়ারে বা টু-ইন-ওয়ানে (রেডিও ও অডিও ক্যাসেট প্লেয়ার) বাজত। একটা ছিল এমন যে, সে নাঁকি গলায় বলছে প্রশ্ন করবেন না, উত্তর দিতে পারব না। কেন? কেন? সবার জিজ্ঞাসায় তার উত্তর ছিলো যদি বলেন কেমন আছেন? মিথ্যা বলতে হবে যে? ভানুর একটা কমিক ছিল এমন যে, ফুটবল খেলা দেখে সে মন্তব্য করছে ২২ জন একটা ফুটবল নিয়ে কাড়াকাড়ি না করে সবাইকে একটা করে বল দিয়ে দিলেই তো হয়। আরেক জায়গায় সে বলছে বোজ মোহন, কেউ একজন ঠিক করে দিল বোজ হবে না একটা রফলা লাগবে হবে ব্রজ মোহন, এ রকম আরেকটা শব্দে রফলা লাগবে এর পর আরেকটা শব্দে আর রফলা লাগবে না। ভানু খেপে গিয়ে বলছে “দ্রিমু য্রখন ত্রখন স্রব ক্রটাতেই দ্রিমু”। গত ৫০ বছরে ভানুর মত এত জনপ্রিয় কমেডিয়ান বোধ হয় বাংলায় আর জন্ম নেয় নাই। তবে বিটিভির ঈদ অনুষ্ঠান আনন্দমেলার উপস্থাপক হানিফ সংকেতের সাথে তাঁর কিছুটা তুলনা দেওয়া যেতে পারে তাও তিনি যখন ফজলে লোহানী উপস্থাপিত জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান “যদি কিছু মনে না করেন” এ কমেডিয়ানের ভূমিকায় অভিনয় করতেন। বর্তমানের স্টেন্ডআপ কমেডিয়ান মির আক্কেল কিংবা ভাইরাল হিরু আলমের চেয়ে অনেক জনপ্রিয় ছিলেন এই ভানু। ভানুর একটা কৌতুক মনে পড়ে যেখানে ঘরে চোর ঢুকেছে আর সে ঘুম থেকে জেগে উঠে বলছে দেঁকি না কিঁ করে? চোর একটার পর একটা জিনিস লোপাট করে দিচ্ছে আর ভানু নাঁকি গলায় কেবল বলেই যাচ্ছে দেঁকি না কিঁ করে? এ রকম করতে করতে চোর সব চুরি করে নিয়ে যায় আর ভানু কেবল দেঁকতেই থাকে। আমাদের দেশে যে ভাবে ব্যাংকের টাকা লুট হচ্ছে আর জনগণ যে ভাবে দেঁকি না কিঁ করে? বলে কেবল দেখেই যাচ্ছে তাতে ভানু অন্তত অবাক হতেন না। ভানুর আরেকটা কৌতুক বা কমিক ছিল ”বল হঁরি ধিঁনচারাক্কা”। এ দেশের সব মানুষ যেন ১৬ কোটি ভেড়ার এক বিশাল পাল। কয়েক বছর পরপর যাদের লোম কেটে কিছু সংখ্যক মানুষ বড় লোক হয়ে যায়। তারা হয়ত তখন ভানুর মতই বলে উঠেন “বল হঁরি ধিঁনচারাক্কা”। বলবেই বা না কেন? বিনা পরিশ্রমে কয়েকটা মাত্র প্রভাবশালী লোকের নিকট জন হয়ে এত হাজার কোটি টাকা যদি পকেটস্থ করা যায় তারা মহা আনন্দে এরকম বলতেই পারে। দোষ তো তাদের না দোষ হলো এ দেশের ১৬ কোটি মানুষের দুর্ভাগ্যর। বার মিশালি বাঙ্গালীদের মধ্যে স্বজনপ্রীতি, বিশ্বাসঘাতকতা, পরশ্রীকাতরতা, হিংসা ইত্যাকার আরো বহু ভেজাল মানুষিকতা বিরাজমান রয়েছে। কেউ কারো উন্নতি দেখে খুশি তো হয়ই না বরং তার বদনাম করা বা তাকে নিচে নামানর পথ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পরে। বাঙ্গালীদের মধ্যে মোঙ্গোলিয়ান, নিগ্রয়েড আর ককেশিয়ান দের যে ঘোটা মিক্স আছে তা আম জনতার দিকে এক ঝলক তাকালেই বুঝা যায়। কেউ যেন কার ভাল সহ্য করতে পারে না। কিছু লোক অতি বুদ্ধিমান হয়ে সকলের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাবে তাতে তাদের দোষ কোথায়? সেটাই বরং স্বাভাবিক। আম জনতা পরিশ্রম করবে, উৎপাদন করবে আর কিছু লোক আরামসে তাদের উপার্জিত অর্থ থেকে চেঁছে চেঁছে ভাল অংশটা হস্তগত করবে। আর রাজনৈতিক পরিবর্তন আসন্ন হলে কোদাল দিয়ে কেটে দেশের সম্পদের ভাল একটা অংশ নিজের কাছে রাখবে। সামনে দুর্ভিক্ষ হওয়ার আশংকা থাকলে তো কথাই নাই লক্ষ কোটি টাকা হস্তগত করে আগে নিজের জান বাচা। নিজে বাঁচলে পরের নাম এই নীতিবাক্য শিরোধার্য। 

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) এর ভাণ্ডার থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা ঠিকানা বিহীন প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে দেশের এক জনপ্রিয় দৈনিকে প্রকাশ পাওয়ার পর আর জানা গেল আর ৩০ হাজার কোটি টাকা এর মালিক পক্ষ সরায়ে নিয়ে গেছে এবং তিনি সিংগাপুরে বসতি স্থাপন করেছেন। এর পর পর শোনা গেল সব মিলায়ে এক লক্ষ কোটি টাকা নানা ভাবে একই ব্যাংক থেকে ঋণ হিসাবে কেউ না কেউ নিয়ে গেছে। এ রকম খবর শুনলে যারা তাদের জীবনের সকল সঞ্চয় বা শেষ সম্বল ওই ব্যাংকে রেখেছিলেন তারা কি ভাবে স্থির থাকতে পারেন? আমার খালু সে রকম একজন ব্যক্তি, তিনি পর পর তিন রাত ঘুমাতে পারেন নাই। তাকে এই বলেও আস্বস্থ করা যায় নাই যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে গত ৫০ বছরে কোন ব্যাংক দেউলিয়া হয় নাই বর্তমানেও সেরকম সম্ভাবনা নাই। তার পরও বললাম কোন একটা ব্যাংক এত সহজে হঠাৎ করে ধসে যায় না।  এত বড় একটা ব্যাংক ধসে পড়তেও তো সময় লাগবে। এত সব বলা সত্যেও তিনি তার সঞ্চিত অর্থের অর্ধেকেরও বেশী টাকা ওখান থেকে প্রিমেচিওর এমটিডিআর (ইসলামী এফডিআর) ভাঙ্গায়ে সরকারী সোনালী ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোতে নিয়ে আসলেন। এরকম আর কয়েক জনকে একই কাজ করতে দেখলাম। আমার খালুর প্রশ্ন ছিল অর্থ মন্ত্রী কেন সাংবাদিকদের বলছেন ব্যাংক হতে টাকা লোপাট হচ্ছে বিষয়ে তাঁকে লিখিত অভিযোগ দিতে। তিনি কি পত্রিকা পড়েন না? আমি বললাম পত্রিকার বরাত দিয়ে তিনি তো অফিসিয়ালি কিছু করতে পারবেন না। কেউ তাকে লিখিত অভিযোগ দিলে তার প্রেক্ষিতে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে সেটা তদন্ত করে দেখতে বলতে পারেন। এর পর পরই আবার খালু আসলেন বলতে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর মহোদয় কেন আইবিবিএল এর পরিচালনা পর্ষদের উপর অভিজ্ঞ কাউকে বসায়ে বিষয়টার সমাধান করছেন না। আমি বললাম টাকাটা তো অবৈধ পথে কেউ সরায় নাই বরং ব্যাংকিং বিধি ও নিয়ম নীতি মেনেই ঋণ দেয়া হয়েছে। কোন ব্যাংক যদি তার গ্রাহকের উপর এতটাই আস্থা স্থাপন করতে পারে যে তাকে ৯০০০ কোটি টাকা সহজ কিস্তিতে ঋণ দিয়ে দিবে তবে কার কি বলার আছে। টাকাটা মুনাফা সহ ফেরত আসার ব্যাপারে তারা যদি নিশ্চিত হয় তবে সমস্যাটা কোথায় আর সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মহোদয়ই বা কেন হস্তক্ষেপ করবেন? যাক মনে করলাম এবার মনে হয় খালুর মন শান্ত হয়েছে। তিনি কিছুক্ষণ পর আবার ছুটে আসলেন বললেন কিছু আইনজীবী প্রধান বিচার পতিকে এ বিষয় অবহিত করায় তিনি তাদেরকে তৎক্ষণাৎ এর উপর রিট করতে বলেছেন। রিট করলে কি হবে জানতে চাইলে বললাম রিট হলে শুনানি হবে তার পর বিচারপতি মহোদয় একটা রায় দিবেন, সেটা হতে পারে তিনি সরকারকে এ বিষয়ে তদন্ত করতে বলবেন বা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কে এ বিষয়ে তদন্ত করে তাকে জানাতে বলতে পারেন। খালু তাতেও তার আস্থা অর্জন করা গেল না, পরবর্তী দিন সকালে ব্যাংকে গিয়ে তার সঞ্চিত অর্থের অর্ধেক তুলে নিয়ে আসলেন ও সরকারী সোনালী ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোতে মুদারাবা টার্ম ডিপোজিটে সংরক্ষণ করলেন। 

২০১৩ কি ২০১৪ সালে আমার মিরপুরের শ্যাওড়াপাড়া শামীম সরণী বাসার চারতলায় ভাড়া থাকতেন মজিদ সাহেব। ডানা ইন্টারন্যাশনাল নামে ইন্ডিয়া থেকে পাথর আমদানি রপ্তানির ব্যবসা করতেন। ভাল ব্যবসা ছিল, ব্যবসায়ী হওয়ার আগে সাংবাদিকতা করতেন। আমার বাসায় ৪ বছর ভাড়া থাকার সময় তার অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছিল, বড় গাড়ি, ড্রাইভার ইত্যাদি। উনি প্রথম যখন আমার বাসা ভাড়া নিতে আসেন তখন আমার অফিস সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, বেগম রোকেয়া সরণী শাখায় এসে আমার টেবিলে মোটা বাইন্ডিং করা তার সকল ব্যবসায়িক কাগজপত্র দিয়েছিলেন। যা অত্যন্ত সুন্দর করে সাজান। সেই উনি হঠাৎ ৪ বছরের মাথায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেলেন। উনার অফিসের লোকজনও আর উনাকে খুঁজে পায় না। তৃতীয় মাসের মাথায় আমি থানায় জিডি করলাম, ওনার সাথে অফিস ভাড়ার চুক্তিপত্রে দেয়া স্থায়ী ঠিকানায় লোক পাঠালাম। কোন খোঁজ পাওয়া গেল না। অগত্যা ওনার অফিসের জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করে অন্যত্র বাসা ভাড়া দিয়ে দিলাম। ৫ মাস পর সে আমাকে ফোন করে হুমকি দিল তার অফিসের নথি পত্র গুলো কই, ওগুলো না দিতে পারলে সে আমার নামে মামলা করবে। ভাগ্য ভাল আমার যে শেষ অফিস ভাড়ার চুক্তিটা শুধু মাত্র সাদা কাগজে করা হয়েছিল স্ট্যাম্প কাগজে নয়, তাই বলেছিলাম যা পারেন করেন গিয়ে। এদিকে আমি উনার অফিসের কম্পিউটার খুঁজে দেখি উনি ফারমার্স ব্যাংক যা বর্তমানের পদ্মা ব্যাংক হয়েছে তা থেকে কয়েক কোটি টাকা ঋণ করেছেন। তখন ওই কাগজ গুলা দুদকে পাঠালাম ইমেইলে আর পদ্মা ব্যাংকেও কনসার্নড অফিসারের সাথে দেখা করলাম। ওরা কোন সহযোগিতা করল না। এর পর শুনলাম উনার নামে থানা থেকে বডি ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। ব্যাংক থেকেও উনার খোঁজে একাধিক বার লোক আসল। মনে হয় উনি ঋণ নিয়ে ইন্ডিয়ার কোন শহরে বা গ্রামে আত্ম গোপন করে আছেন। আমেরিকান এক্সপ্রেস থেকেও লোক এসেছিল উনি উনার এমএক্স কার্ডের সব টাকা উঠায়ে লোপাট করে দিয়ে গেছেন। এ তো গেল ছিচকে লুটেরার কাহিনী যা আমি নিজে দেখেছি। এরকম কত ছিচকে লুটেরা রয়েছে যার অভাব নাই আর রাঘব বোয়াল রা তো শত কোটি টাকা লোপাট করছে সবার চোখের সামনে দিয়েই। জনপ্রিয় উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার এর একটা বক্তব্য সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছিল ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ ফাইনাল ১৮ ডিসেম্বর এর আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্সের সেই শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের পরের দিন যেখানে তিনি বলছেন, বিশ্বকাপ ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ৪২ মিলিয়ন ডলার বা ৪৯৫ কোটি টাকা। পক্ষান্তরে রানার্স আপ দল পাবে ৩০ মিলিয়ন ডলার বা টাকায় ৩৩৬ কোটি টাকা। এই পুরো টাকার চেয়ে বেশি, ৯০০ কোটি টাকা একই ব্যাংক থেকে নিয়েছে এক চব্বিশ বছরের ছেলে যার বয়স ফ্রান্স দলের এমবাপের কাছাকাছি। অতএব এত কষ্ট করে ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেয়ে বাংলাদেশে ব্যাংকে ঘুরঘুর করে চুরচুরয়ে ঋণ নেয়া ভালো। 

বাংলাদেশ ব্যাংকে এফআইইউ বা ফিনানসিয়াল ইনটালিজেন্স ইউনিট কিংবা সিআইবি বা ক্রেডিট ইনফরমেশন বিউরো উনারা তবে কি করতে আছেন। জনগণ যদি টাকা পয়সা নিয়ে এতটা অনিশ্চয়তায় ভুগে তবে তাদের সচল রেখে লাভ টা কোথায়? এ সব প্রতিষ্ঠান সামনে দিয়ে একটা সুইও অনৈতিক ভাবে যেতে দেয় না কিন্তু পিছন দিয়ে যে পুকুর চুরি হচ্ছে সে সব বিষয়ে তাদের কোন ভূমিকা দেখা যায় না।  লিগালাইজ্ড থেফ্ট বা বৈধ কৃত চুরি নতুন কিছু নয়, কৃত্রিম মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করে সরকার জনগণের কাছ থেকে সম্পদ সরায়ে নিয়েছিল লন্ডনে তা’ও বহু বছর আগে। জনপ্রিয় মুসলিম বক্তা ও লেখক ও আখেরুজ্জামান এর প্রবক্তা ইমরান নজর হোসেনের “দি গোল্ড দিনার এন্ড সিলভার দেরহাম, – ইসলাম এন্ড দি ফিউচার অব মানি” বইয়ে এই লিগালাইজ্ড থেফ্ট সম্পর্কে ২০০৭ সালে লিখেছেন, 

“The reason behind the continuous inflation in various nations maybe a cause & consequences to the Historical event known as The Legalized theft (Trial run) In April 1933 USA forced his citizens to submit any form of gold with them in exchange of $20 per ounce of gold by the Federal Reserve Bank, if not then they were to fine $10,000 or imprisoned for 6 months. Some rushed and some who understood shipped their gold away to Swiss banks. In January 1934 USA de valuated the US paper $ 41%, the American people rushed back to exchange their paper dollars for gold at the new exchange value of $35 per ounce, they were robbed of 41% of their wealth. This trial run was then replicated to the Europe as in September 1931 UK pound devalued 30%, Then French franc by 30%, Italian Lira by 41% etc. All theses resulted in mass unemployment and overall decline in world trade known as the Great Depression. This calculated inflation influx the tendency to shift away huge amount of wealth from a population behind their eyes.” 

এরূপ ভাবে ধনী দরিদ্রর বৈষম্য ক্রমাগত যাতে বারতেই থাকে তার সু ব্যবস্থা চলমান আছে। ১লা সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালের দৈনিক ইত্তেফাকের সুবর্ণ জয়ন্তী সংখ্যায় “প্রচার মাধ্যম ও আমাদের কালের সংকট” আরটিকেলে লেখক হক সাহেব লিখেছিলেন “পৃথিবীর রাষ্ট্র সমূহের অভ্যন্তরীণ অবস্থার দিকে তাকালে দেখা যায়, ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য আগের তুলনায় অনেক দ্রুত অনেক বেশি গুনে বেড়ে চলেছে। অল্প কিছু পরিবারের হাতে সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে। অর্থনীতিতে মনোপলির প্রবণতা আগের তুলনায় অনেক বেশি। সম্পদ বৃদ্ধি পেলেও শতকরা নব্বুই ভাগ মানুষ আগের মতোই গরিব রয়ে গেছে। কৃষি উৎপাদন বেড়েছে বটে, কিন্তু উৎপাদনশীল কৃষকের অবস্থান কোন দিক দিয়েই ভালো হয়নি। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি সব দিক দিয়েই কৃষকের দুর্গতির শেষ নেই। পৃথিবীর প্রায় সকল রাষ্ট্রের ধনিক শ্রেণী আজ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এক ধারায় চলছে – তারা পৃথিবীর শতকরা নব্বই ভাগ মানুষের জীবনকে একবারে অসহায় করে রেখেছে। পৃথিবীর অবশিষ্ট দশ ভাগ মানুষ যদৃচ্ছ সম্পদের মালিক হয়ে স্বেচ্ছাচারী ভোগবাদী জীবনে মগ্ন আছে।” এই বক্তব্যটি আমি আমার কমনওয়েলথ এক্সিকিউটিভ এমবিএ বা সিম্বা’র মাস্টার পেপারে বিষদ গবেষণা সহ উপস্থাপন করেছিলাম। এই একই কথা বিভিন্ন ভাবে প্রচার মাধ্যমে আসলেও এ বিষয়ে সাধারণের কোন ভাবান্তর নাই যা বিস্ময়কর বটে। ২০০৭ হতে আজ ১৫ বছর অতিবাহিত কিন্তু ধনী দরিদ্রর বৈষম্য সৃষ্টিকারী যন্ত্র আজও বন্ধ হয় নাই বরং নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার হচ্ছে। ওই যে অধুনা অর্থনীতির মূল মন্ত্র সম্পদ সীমিত কিন্তু মানুষের আকাঙ্ক্ষা অসীম তাই অন্যকারোটা কেড়ে না নিলে আপনার অসীম বাসনা পূর্ণ হবে কি করে? আমার সন্তানদের তাই উপদেশ দিয়েছি জনগণে ভরপুর দেশে জন্মাইছো এখানে কেউ সেধে দিবে না কেড়ে নিতে হবে। আমার কমনওয়েলথ এক্সিকিউটিভ এমবিএ’র মাস্টার পেপারে উল্লেখ করেছিলাম সুদি অর্থনীতি বা সুদ ভিত্তিক অর্থনীতিতে এই বৈষম্য করণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয় যাকে প্রণোদনা বলে মনে করা হয়। কিন্তু টাকা যখন ভোগ্য পণ্যে পরিণত হয়ে যায় তখন সরিষা ভুত হয়ে গেছে তাই এই ব্যবস্থায় সরিষার ভুত ছাড়াবেন কি ভাবে। মোহাইমিন পাটোয়ারী লিখিত ব্যাংক ব্যবস্থা ও টাকার গোপন রহস্য বইতে এরিস্টটল এর উদ্ধৃতি দিয়েছেন যা তিনি বলেছেন ৩৮৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আজ হতে ২৪০০ বছর আগে। তিনি বলেছিলেন “মুদ্রার উদ্দেশ্য বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করা, সুদে বেড়ে যাওয়া নয়। সুদ মানে টাকা নিজেই আরেকটা টাকার জন্ম দিচ্ছে এবং নতুন জন্ম নেয়া টাকাটা জন্মদাতা টাকার অবিকল প্রতিরূপ বটে। পৃথিবীতে সম্পদ বৃদ্ধির যাবতীয় উপায়ের মধ্যে এটিই সবচেয়ে উদ্ভট ও অপ্রাকৃতিক।” এরিস্টটল তো স্বর্গীয় অহি প্রাপ্ত হয়ে এই কথা বলেন নাই। তার স্বাভাবিক বিচার বোধ থেকেই বলেছেন। এই সাধারণ কথাটা কেন ২৪০০ বছরেও মানুষের বোধগম্য হলো না তা গবেষণার বিষয় বটে। জনগণ ধনী দরিদ্রর এই বৈষম্যটা উপভোগ করে বলে মনে হয়। যারা ধনি তারা সেই রোমান সম্রাজ্যের ধনীদের মত সাদ পায় আর যারা দরিদ্র সীমার নিচে কিংবা সামান্য উপরে তারা সমাজে স্বপ্রনদিত দাসের মত আচরণ করে। এই ব্যবস্থাটা সেই পুরাতন ব্যবস্থার নব রূপায়ন। সাধারণ জনগণ তাই রাজা প্রজার সেই প্রথার নবায়ন কৃত রূপটা পছন্দ করে বলে মনে হয় তা না হলে এর বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ তো চোখে পড়ে না। হয় তারা সচেতন নয় কিংবা তাদের অধিকাংশই বোকা। তাই কেবল দেখতেই থাকে আর ভানুর মতো বলতে থাকে দেঁকি না কি কঁরে?।

আপডেট হিস্ট্রিঃ ০১ডিসেম্বর২০২২> ১৮ডিসেম্বর২০২২> ২৫ডিসেম্বর২০২২

No comments:

Post a Comment