কয়েকদিন আগে “নহ মাতা, নহ কন্যা, নহ বধূ, উর্বশী প্রসঙ্গে” লেখাটা শেষ করে দেখলাম নারী সম্পর্কে লেখার আরো কিছু কথা বাকি রয়ে গেছে। বিষয়টা হলো নারীকে নিয়ে লিখতেই ভয় লাগে, কে যে কি বলে বসবে তার কোন ঠিক নাই। তবে আগের লেখাটা সম্পর্কে আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী ভাই এর মন্তব্য ছিল লেখাটা আমার সব থেকে ভালো লেখা গুলোর মধ্যে একটা হয়েছে, তাই সাহস করে পরের কথাগুলো লিখছি। পুরুষ মাত্রেই নারীকে নিয়ে তার মনে অনেক চিন্তা, কল্পনা, ভাবনা রয়েছে যার অধিকাংশই সে পাবলিকলি বা জনসমক্ষে প্রকাশ করে না বা করতে চায় না। নারী পুরুষের সম্পর্কের বিষয়ে পৃথিবীতে যতগুলো সমাজ আছে তার প্রতিটিতে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
১৩-মার্চ-২০২৪ তারিখে আমার স্কুল গ্রুপে বন্ধু সোহেলের পোস্টঃ ”ভয়ংকর এক নারী প্রজন্মের অপেক্ষায় আমরা!! ৭৫% উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে ২৭ থেকে ৩০ বয়সেও বিয়েহীন। ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে এরা এমন এক সংকট তৈরি করেছে যে, আগামী ৫ বছরে লাখ লাখ মেয়ে বিয়েহীন থাকবে। তাদের যৌবনের চাহিদা, আবেগ, ভালোবাসা হারানোর ফলে। স্বামীর মন জয় করার পরিবর্তে স্বামীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েই সংসারে দরকষাকষি করবে ৷ আর স্বামীও তাদের মাঝে আনুগত্য, কোমলত্ব, নারীত্ব না পেয়ে অসহ্য হয়ে উঠবে। তখন সংসার টিকানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ তার স্ত্রী ৩০টা বছর পুরুষের ফিতরাতে টেক্কা দিয়ে সে নিজেই পুরুষে বিবর্তিত হয়ে গেছে। তার আস্ত দেহটাই নারীর বৈশিষ্ট্য হলেও সে মানসিক ভাবে পুরুষ। স্বামী তাকে দৈহিক ভাবে নারী পেলেও সে ম্যান্টল ভাবে পুরুষ, এমন একটা দিন আসতে যাচ্ছে। মেয়েরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যৌবন থেকে যেমন বঞ্চিত হবে। বঞ্চিত হবে সংসার থেকেও। বঞ্চিত হবে আখিরাতের মুক্তি থেকেও।” -লিখেছেন ডাক্তার, জাকিয়া সুলতানা।
সোহেল আমার স্কুলের বন্ধুর বক্তব্য ছিল “মনে হয় বিয়ে বিষয়টাই উঠে যাবে।” আমি প্রত্যুতরে বলেছিলাম, বাংলা একাডেমীর ভাষা শহীদ গ্রন্থমালার বই “বিবাহ” আমি পড়েছি। আর বিবাহের ধারনায় ইতিমধ্যেই বিবর্তন হয়ে গেছে, সামনে আরো হবে। ডাক্তার জাকিয়া সুলতানার উপরোক্ত বক্তব্য আমি সোশাল মিডিয়ার আরেক জায়গাতেও পড়লাম কিন্তু তার বক্তব্যর সাথে আমি একমত হতে পারি নাই। আমার মা ছিলেন ১৯৭০ সালের হোম ইকনমিক্স গ্র্যাজুয়েট, বাবা ঢাকা শহরের একজন শিক্ষিত মহিলাকে বিয়ে করবেন তাই তার ভাইয়েরা বিক্রমপুরের মেয়েদের বিয়ে করতে চাইলেও বাবা বিয়ে করলেন শহুরে এক শিক্ষিত মেয়েকে। আমার বাবার ভাইদের পরিবার তা সহজে মেনে নিতে পারে নাই, তাই বাবা মাকে নিয়ে আলাদা সংসার করে সরে গিয়েছিলেন। আমার মা বাবাকে কখনো আপনি বলে সম্বোধন করেনি আর আমিও বাবা মাকে আপনি বলি নি, সব সময় তুমি বলেই সম্বোধন করেছি। ওই সময়ে এটা সামাজিক রীতি ছিল না। আমার মা শিক্ষিত ছিল দেখেই আমার বাবার অকাল মৃত্যুর পর তিনি আমাকে লেখা পাড়া শিখায়ে বড় করে আমার তিন সন্তানের জনক হতে দেখে তার পর পরপারে চলে গেছেন। বাবা-মা’র মধ্যে প্রচুর ঝগড়া আমি প্রত্যক্ষ করছে কিন্তু তাদের ভিতরকার ভালোবাসাও আমি অনুভব করেছি। আমি ছিলাম তাদের একমাত্র সন্তান তাই বাবা-ম আর আমার বন্ধন ছিল প্রায় একাত্মার মত। ১৯৯০ এ বাবা আর ২০১৬ তে মা কে হারায়ে আমার পুর পৃথিবী অর্থহীন হয়ে যায়। মা’র শিক্ষিত হওয়া আমার বাবা মা পরিবারকে নষ্ট করতে পারে নাই বরং পারিবারিক অগ্রযাত্রায় মা এর ভূমিকা বিচার করলে বলতে হবে তারা পরস্পরের সম্পূরক ছিল। বাবা যতদূর আগায়ে দিয়ে গেছে, মা তা ধরে রেখে পরিবারটাকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আরো সুদৃঢ় বা পাকা পোক্ত করে গেছেন।
নেপোলিয়ন বলে গেছেন তাকে শিক্ষিত মা দিলে তিনি শিক্ষিত জাতি দিতে পারবেন। অশিক্ষিত মা সন্তান জন্ম দিতে পারলেও তার সন্তানদের সঠিক পথে গাইড করতে পারেন না। সন্তানেরা হয় গাইড লেস বাউণ্ডুলের মত। তার কয়েকটা বড় বড় উদাহারণ দিতে পারি যা আমার জীবদ্দশাতেই দেখে গেলাম। নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর গ্রামের পর গ্রাম খালি পায়ে হেটে প্রচার করেছেন অথচ আজকের জাকিয়া সুলতানা নারী হয়েও নারীর শিক্ষার বিরুদ্ধে বলছেন, এটা কি মেনে নেয়া যায়? শিক্ষিত নারী মানুষিক ভাবে পুরুষে পরিণত হয়ে যায় জাকিয়া সুলতানার এই বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বরং ইদানীং তৃতীয় লিঙ্গ নামে আরেকটি ধারণা সমাজে চলে এসেছে যেখানে নারী দেহে পুরুষ ও পুরুষ দেহে নারীর মানুষিকতাকে বুঝায়। এটা দৈহিক ভাবে বিকৃত নারী পুরুষ নয় বরং মানুষিক ভাবে বিবর্তিত নারীদেহে পুরুষ মানুষিকতা আর পুরুষ দেহে নারী মানুষিকতা। যার কারণ হিসেবে মানব দেহেরে হরমোনাল ইমবেলেন্সকে দায়ী করা হচ্ছে। থাইল্যান্ডের পাতায় সমুদ্র সৈকতে প্রচুর লেডি বয় দেখতে পাওয়া যায় যারা দৈহিক ভাবে পরিবর্তিত হয়ে পুরুষ থেকে নারী হয়েছে জীবিকার প্রয়োজনে। শিক্ষিত নারী পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী হবে তখনই যখন নারীকে ভুল শিক্ষায় শিক্ষিত করা হবে। পুরুষ নারীর মধ্যে আনুগত্য চাবে কেন? দুজনেই তো মানুষ আর দুজনের সহমতেই তো তারা সংসার গঠন করে। আগের দিন কি আছে? যে জানা নেই শুনা নেই ”উঠ ছেরি তোর বিয়া” কিংবা আমার মা’র মামা আমার বড় নানা ভাই কে তার বাবা ঢাকা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ঘাটাইলের কাজি বাড়ির এক মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। নানা ভাই জানতোও না যে তাকে বিয়ের জন্য ডেকে পাঠান হয়েছে। আজকের দিনের সংসার আর আগের দিনের সংসার এক নয়, ধারণাগত পার্থক্য আছে। আমার স্ত্রী শিক্ষিত বলে আর আমার সন্তানদের উপর তার নিয়ন্ত্রন থাকায় আমি অবাক হয়ে দেখেছি যে, প্রতিটা সন্তানই সঠিক ভাবে সব আদব কায়দা শিখে বড় হচ্ছে। অথচ হাতের কাছেই উদাহারণ আছে যে মা মানুষিক ভাবে সংসারে সময় দিতে অগোছালো হওয়ায় সন্তানদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আধুনিক পরিবারে শিক্ষিত মা’য়ের বিকল্প চিন্তাই করা যায় না। জাকিয়া সুলতানার বক্তব্য শিক্ষিত নারীরা অধিক বয়স পর্যন্ত বিয়ে করতে চায় না আর পুরুষকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে, তার এ সব কথা তার ব্যক্তিগত চিন্তার ফল, বাস্তবে তা হলে আমার মা-বাবার পরিবার টিকতো না। বর্তমানের স্বামীদের স্ত্রীদের কাছ থেকে আনুগত্য পেতে হলে তাকে তার স্ত্রীর চেয়ে অধিকতর জ্ঞান সম্পন্ন প্রমাণ করতে হবে, তা না হলে সেটা সে আশা করতে পারে না। কোমলত্ব আর নারীর স্বভাবসুলভ কমনীয়তা তা যে কোন নারী মাত্রেই আছে, সেটা সে তার স্বামীকে দিবে যদি সে তার স্বামীকে সেই ভাবে ভালোবাসে। বিয়ে করলেই যে একটা মেয়ে তার কমনীয়তা তার স্বামীকে দিতে বাধ্য সেই দিন শেষ হয়ে গেছে। স্বামীকে তার স্ত্রীর কাছ থেকে সেই নারীত্ব বা কমনীয়তাও আদায় করে নিতে হবে। আগে যা ছিল ফাও বা ফ্রি এখন তা সহানুভূতি আর ভালোবাসার দামে কিনে নিতে হবে। পূর্বের অশিক্ষিত নারী ও শিক্ষিত পুরুষে এর দাম্পত্য জীবন আর আজকের আধুনিক নারী-পুরুষ উভয়ে শিক্ষিত এর দাম্পত্য জীবনে এতটুকুই পার্থক্য। এর চেয়ে বেশি কিছুই না।
শিক্ষিত নারী কে অনেক পুরুষ ভয় পায় যে তার কাছ থেকে আনুগত্য পাবে না, অনেক পুরুষ বিয়ে করতেই চায় না এই কারণে। এক্ষেত্রে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যটা একটা উদাহারণ।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কে বলতে চাই, অনেক বিয়ে না করা পুরুষের বক্তব্যই এরকম কারণ সে তার মনের উর্বশীকে মেয়ের মধ্যে দেখতে চায় কিন্তু পুরুষ মনের উর্বশীর ধারণা সব সময় অধরাই থেকে যাবে, উর্বশী একটি বিমূর্ত ধারণা তা বাস্তবের নারীর মধ্যে খুঁজতে যাওয়া ভুল। নারীকে তার আসল রূপেই গ্রহণ করতে হবে উর্বশী রূপে নয়। হ্যাঁ নারী আপনার কাছে উর্বশী রূপে ধরা দিবে যখন তার ইচ্ছা হয় তখন, আপনি চাইলেই তাকে সব সময় ওই রূপে পাবেন না। সব নারীর মধ্যেই উর্বশী লুকায়ে আছে আর সে যাকে ইচ্ছা তাকে সেই রূপ প্রদর্শন করে থাকে। আপনার মনের মত উর্বশীকে না খুঁজে যে কোন নারীকে নারী হিসেবে কিংবা স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করুন তার পর তার মধ্যের উর্বশীকে বের হয়ে আসার অমন্ত্রন জানান, আপনি ভালোবাসা দিয়েই সেই উর্বশীর দেখা পাবেন অন্যথায় নয়।
নিচের লেখাগুলো হুমায়ুন আজাদের উক্তির নামে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচারিত হয়েছিল,
“নারীকে চাকরী দিবো কিন্তু সে মা হতে পারবেনা!!! মা হবে এটা মেনে নিয়ে মাতৃত্বকালীন ছুটি দিলেও সন্তান সাথে আনা যাবেনা। এমন একটা পরিবেশ সব কর্মক্ষেত্রে বিরাজ করছে। কিন্তু কোন নারী তা স্পষ্ট করে, চিৎকার করে বলতে পারছে না। যদি চাকুরি খানা চলে যায়। কর্মক্ষেত্রে রাষ্ট্র নারী নিয়োগ দিলে সে একদিন মা হবে এটা কি তার অজানা?
নারী যদি মা হয় তবে তার সন্তানকে কে দেখবে যদি কর্মক্ষেত্র সন্তানবান্ধব না হয়! নারী ডাক্তার হলে চিকিৎসা নিবেন, নার্স হলে সেবা নিবেন, শিক্ষক হলে শিক্ষা নিবেন,
পাইলট হলে বিমান চালায়ে নিবেন, ব্যাংকার হলে টাকার হিসাব কষাবেন শুধু নিবেন না তার সন্তানকে!! সবার জেগে ওঠা দরকার। জানতে চাওয়া দরকার বাচ্চাটা থাকবে কোথায়! রাষ্ট্র কেন তার নাগরিকের দ্বায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে!
মাতৃত্বকে অবজ্ঞা করবেন না তাহলে নিজের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। যেখানে ভিনদেশী নারীরা সন্তান কাঁধে নিয়ে সংসদে। সেখানে আমাদের কর্মস্থলে সন্তান কাঁধে থাকলে নাকি শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হবে। রাষ্ট্রের উচিত অনতি বিলম্বে সব প্রতিষ্ঠানে নারীর সন্তানের জন্য উদ্যেগ গ্রহন করা। বুয়ার কাছে আলমারির চাবি রাখতে পারে না অথচ নিজের সন্তানকে রাখতে বাধ্য হচ্ছে কর্মজীবী সকল নারী।”
উপরের কথাগুলো কিন্তু একটা বিশাল আপত্তি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্যান্টিনের উপরতলায় ”বেবিস ডে কেয়ার” বা কর্মজীবী মহিলাদের বাচ্চাদের দেখা শুনার জন্য ব্যবস্থা দেখেছি। দেখে হতাশ হয়েছি, এরকম বাজে পরিবেশে কেউ তার বাচ্চাকে রাখতে রাজি হবে কেন? আমার জানামতে এক চাকুরীজীবী দম্পতি তার বাসায় ১২ টা সিসিটিভি কেমেরা লাগিয়ে বুয়াদের কাছে বাচ্চা রেখে আসে, যাতে প্রয়োজনে সে বুয়াকে ডেকে বাচ্চাদের টেইক কেয়ারে সহযোগিতা করতে পারে। আমার খালা চলে গেলেন ক্যানাডায় আমার খালুকে একা বাসায় ফেলে রেখে কারণ তার ছোট মেয়ে দু দুটা বাচ্চা সামলে চাকুরী করতে পারছে না, মাকে দরকার বাচ্চাদের দেখাশুনার জন্য। মেয়েদের মাতৃত্বকালীন ছুটিও যথেষ্ট নয় বাচ্চাদের দেখা শুনা করার জন্য। এই সমস্যার সমাধান আমারও জানা নাই।
“বাপরে বাপ লেখাটি পড়ে মনে হল কি যে এক দুরন্তপনা বয়স, মন চাইলেই রাজার রাজা আবার না চাইলেই বয়সের কষ্টে যেন ইঁদুর ছানা” মন্তব্যটা করেছেন আমার সমবয়সী ১৯৮৯ এ এসএসসি বেচের এক মহিলা বান্ধবী, তার কাছ থেকেই নিচের কবিতাটা সংগৃহীত। উনি আমার একটা লেখা পড়ে তার কিশোরী মেয়ের অবাধ্যপনা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তার করনীয় সম্পর্কে অনেক পরামর্শ জেনে নিয়েছিল। তখন নিচের কবিতাটা পাই তার মন্তব্য সহ তার সংগ্রহে। তখন তুলে রেখেছিলাম এই লেখার অংশ করবো বলে।
🌷পঞ্চাশের যুবতী🌷
কি সাহস রে বাবা মহিলার।
বয়সটা যে পঞ্চাশ ছুঁয়েছে সে দিকে
কোনো ভ্রুক্ষেপ ই নেই।
কি একটিভ স্যোশাল মিডিয়ায় !!
ফেসবুক,ইনস্টাগ্রাম কিছুতে--ই বাদ নেই।
সারা দিনে তার লাইক, কমেন্ট,আর শেয়ারের ছড়াছড়ি।
আবার টিকটকেও কখনো নায়িকা-, --তো কখনো গায়িকা !
বাপরে বা---প পারেও বটে।
নিজেকে একেবারে টিন এজারে এনে নামিয়েছে।
এই তো সেদিন দেখলাম
হৈ হৈ করতে করতে
পার্টিতে মেয়ের সাথে ডান্স করছে।
উঁঃ লজ্জার মাথা খেয়েছে এক্কেবারে।
* * *
হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন। যত্ত খুশি বলুন।
এ সব শুনে শুনে গা সওয়া হয়ে গেছে, বুঝলেন।
কি হয়েছে পঞ্চাশ হয়েছে তো।
পঞ্চাশ হয়েছে বলে ঘরের কোণে
একটা সুতির ছাপা পরে বসে থাকব নাকি।
শুনুন,সারা জীবন শুধু
এটা করতে নেই, ওটা করতে নেই
এখানে যাওয়া হবে না, ওখানে যাওয়া হবে না
এই ই শুনে এসেছি।
যখন ষোলোই ছিলাম
ছেলে বন্ধু তো দূরের কথা
কোনো মেয়ে বন্ধুর বাড়িতে গেলেও
মা কে সঙ্গে নিয়ে যেতে হতো।
আর পিকনিক, ঘোরাফেরা, সিনেমা !
এ সব তো অলীক কল্পনা ছিল মশাই---
অলীক কল্পনা।
তারপর যখন কুড়ি হল---
বেশ রাঙা টুকটুকে বৌ সেজে শ্বশুরবাড়িতে এলাম।
বাপ রে বা---প !!!
সেখানেও আবার এমন নজরদারি,
কি বলি !! ---
কোনটা খাইনা, কেন খাইনা?
হাতে কেন বড় বড় নখ রেখেছি?
সকলের সামনে নাইটি পড়তে আমার লজ্জা করে কিনা,---
মেয়ে মানুষ হয়ে এত হৈ হৈ কিসের,
ইত্যাদি ইত্যাদি।
আর বাইরে গেলে !
শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, জা -ননদ হাজারটা কৈফিয়ত।
তারপর পঁচিশে---, যখন মা হলাম,
ছেলেকে খাওয়াতে অসুবিধা হবে বলে
নাইটি ছেড়ে সুতির ছাপা পড়া ধরলাম।
কোমরে আঁচল গুঁজে এমন দশভুজা হয়ে গেলাম যে----
কোথায় সিনেমা,কোথায় বেড়ানো,
আর কোথায় যে আনন্দ সব ভুলে গেলাম।
না না এটার জন্য আক্ষেপ করছি না।
এটা তো আমার কর্তব্য।
দেখতে দেখতে আরো পঁচিশটা বছ--র কেটে গেল।
ছেলে আর মেয়ের পড়াশোনা, গানবাজনা
আর ওদের সামাজিক প্রতিষ্ঠা নিয়ে।
ওদের সংসারও গড়ে দিয়েছি নিজের হাতে।
ওরা এখন যে যার মত ---
বন্ধু বান্ধব, হৈ হুল্লোড়,পার্টি, ভ্রমণ এসব নিয়ে ব্যস্ত।
তাই আমিও একটা প্রফাইল খুললাম
খুঁজে নিলাম নিজের একটা জগৎ।
জানেন? আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডের সংখ্যা এখন দু-হাজার ছাড়িয়েছে!
আমা---র আবার ফেসবুকে ভেসে ওঠা
ঐ সব রেডিমেড কমেন্টে মন ভরেনা।
তাই ভালো কোনো পোষ্ট পেলেই
ইয়া---ব্বড় একটা কমেন্ট লিখি।
কত খুশি হয় ওরা জানেন?
আর আমার কবিতা গুলো যখন
শেয়ারের পর শেয়ার হয়,
তখন মনটা আনন্দে উথলে ওঠে।
এই নিয়েই তো আমার একার দুপুর টা কাটিয়ে দিই রোজ।
মেয়ে, জামাই, ছেলে, বৌমা ওরা যখন দু-দিনের জন্য এসে আবার চলে যায়
তখন ঐ খারাপ মনটা ভোলাতে খুব বেশি সময় লাগে না আমার।
জানেন,আমি এখন নিজের পছন্দের মাছ কিনি বাজার থেকে।
আর যে খাবারটা খেতে ইচ্ছে সেটাই বানাই।
যেখানে যেতে ইচ্ছে করে সেখানে যাই।
আর তো কটা মাত্র দিন পড়ে আছে তাই না।
নিজেকে কি করে ঠকাই বলুন তো?
মর্নিং ওয়াক করি, কিটো ডায়েট করি,
ঘন ঘন পার্লারে যাই।
শরীর চর্চা থেকে মনের চর্চা
স---ব সব করি এখন।
এই তো আমার যুবতি হওয়ার বয়স।
তাই যে যাই বলুক
চলুন, মনের বয়স বাড়তে না দিয়ে
এই পঞ্চাশেই আবার না হয় যুবতি হয়ে যাই।
✍ কলমেঃ গোপা গরাইন মন্ডল।
গোপা গরাইন মন্ডল আপনি যে ই হন না কেন, আপনার “পঞ্চাশের যুবতী” কবিতার কথাগুলোর সাথে শতভাগ একমত হওয়া ছাড়া কারো কোন গত্যন্তর নাই। আমাদের দেশের মেয়েদের জীবনের পুরটাই বর্ণনা করেছেন আপনি। বর্তমান সময়ে এটাই সর্বতোভাবে স্বাভাবিক কথন।
নারী দিবসে আমাদের গোপী নাথ দাস স্যার (সোনালী ব্যাংক পিএলসি’র এক্স জিএম) অবসরে নিচের কবিতা গুলো ফেইসবুকে পোস্ট করেছেন। প্রাসঙ্গিক বলে তুলে আনলাম।
। ১ ।
নারীবাদী ভাবেন এবং বলেন,
সমাজের প্রধান ভুমিকায়
পুরুষেরা নিজেদের ভাবে মুখ্য
তারা নারীদের ভাবে গৌণ
সম্পুর্ন প্রতিপক্ষ যেন
নারী ঠিক মানুষ নয়
ভিন্নকিছু।
পুরুষ নারীর সিংহী শক্তিরে
দুর্বল করে অলংকারের শৃঙ্খলে
মনি-কাঞ্চন প্রিয়তমা দেবী বলে।
নারী মুক্তি মুচ্কি হাসে আড়ালে।
৷ ২ ।
আইন কানুন সংবিধান
নারী ও পুরুষের অধিকার সমান।
তবে বাস্তবে তা
ভোগ করতে পারে না নারী, কেননা
সবকিছুতেই নারীকে
তাকিয়ে থাকতে হয় পুরুষের দিকে।
। ৩ ।
হাজার হাজার বছর ধরে
সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে
পুরুষের অন্যায় নিপীড়নে
ব্যবহৃত অসহায় নারী।
দুর্বল নারী রক্তে হীনমন্যতা
প্রতিশোধ আর ক্ষমতার স্পৃহা
সুযোগে জ্বলে ওঠা
নিরবে খেলা করে মনে।
। ৪ ।
শিকল ভেঙে ঘুমটা ফেলে
অবরোধের পাহাড় পেরিয়ে
নারী আজ
বেরিয়ে পড়েছে প্রগতির পথে।
অবদান রেখে চলেছে সভ্যতা বিনির্মানে
জয়তু জয়িতা কীর্তিময়ী নারী তাঁর
জয়ৈষণায় জয়টিকা
সাহসী বুদ্ধিদীপ্ত মন-মননে
বাজুক জয়শঙ্খ চরনে চরনে।
। ৫ ।
ইরানী ফুলের সুগন্ধি
নার্গিস মোহাম্মদি
জান জিন্দেগী
চাহে
নারী জীবনের আজাদি।
উপরের গোপিনাথ স্যারের পাঁচটি কণিকা পদ্য পড়ে মনে হলো সবটাই বুঝেছি শুধু পঞ্চমটা বাদে। আমি এত এত লেখা লিখে যা বুঝাতে চাচ্ছি তা স্যার মাত্র পাঁচটা কণিকা কবিতায় বর্ণনা করে দিলেন, অবাক ব্যাপার। ৫২ বছরের এই জীবনে প্রায় সব ধরনের নারী সম্পর্কেই কিছু না কিছু ধারণা হয়েছে। দুই কন্যা সন্তানের জনকও হয়ে গেছি ইতিমধ্যে। আমার কাছে নারী পুরুষ আসলে মানবেরই দুটো ভিন্ন রূপ। সব শিশুই নাকি প্রথমে নারী তার পর নারী বা পুরুষে পরিবর্তিত হয় মাতৃগর্ভে। আগে বন্ধ্যা নারীর জন্য কেবল নারীকে দায়ী করা হতো এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের বদৌলতে জানা গেলে সন্তান না হওয়ার জন্য পুরুষকেও দায়ী করা যায়। ছেলে সন্তানের জন্ম দিতে পারে না বলে নারীকে দায়ী করা হতো আগে, আজ সবাই জানে ছেলে হবে না মেয়ে হবে সন্তান তা নির্ভর করে পুরুষটার বীজের উপর। নারীকে পুরুষে কিংবা পুরুষকে নারীতে রূপান্তর করা সম্ভব তার শরীরের হরমন পরিবর্তন করে যা আজকের পৃথিবীতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পুরুষ দেহে নারীর মন কিংবা নারীদেহে পুরুষ মনও মনস্তাত্ত্বিক ভাবে প্রমাণিত সত্য আজকের জমানায়। তাই নারীর পরাজিত অবস্থাটা এখন আর নাই। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এর সেই নারী মুক্তি আন্দোলন আজকের সময়ে বাস্তব রূপ পেয়েছে। নারীরা সর্বক্ষেত্রে পুরুষের সমানে সমান প্রমাণ করে ছেড়েছে। নারী পুরুষের সেই ব্যবধানটা এখন আর নাই বললেই চলে। তবে প্রকৃতিগত ভাবে নারীত্ব (উর্বশী) আর পৌরুষ (হারকিউলিস) টিকে থাকবে যতদিন মানব সভ্যতা টিকে থাকে। নারী নিয়ে অনেক কিছু লিখলাম এই দুটো লেখাতে, আমার আর কিছু বলার নাই। ভবিষ্যতের নারী পুরুষের সমান সমান সেটা সব পুরুষ মেনে নিক, পাশাপাশি নারী যেন তার নারীত্বকে ভুলে না বসে তার দিকে খেয়াল রাখুক এ দুটো কথাই এতকিছু লেখার সারমর্ম।
সম্পাদনা ও উন্নয়ন ইতিহাসঃ ২৮ফেব্রুয়ারী২০২৪> ১৪মার্চ২০২৪> ২৪মার্চ২০২৪>
প্রাসঙ্গীক লেখাঃ-
নহ মাতা, নহ কন্যা, নহ বধূ -উর্বশী প্রসঙ্গে
https://surzil.blogspot.com/2024/03/blog-post_21.html
প্লাস্টিক আর কনক্রিটের মানুষ আর তাহাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রসঙ্গে
https://surzil.blogspot.com/2023/12/blog-post_29.html
যথার্থতার মানদণ্ডই বিবেক
https://surzil.blogspot.com/2023/10/blog-post.html
বাস্তবতার আন্তলীন গুণাবলী Inherent attributes of reality
https://surzil.blogspot.com/2023/01/inherent-attributes-of-reality.html
মনের স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশকে যা বন্ধ করে দেয় তাই অনিষ্টকর
https://surzil.blogspot.com/2023/07/blog-post_25.html
আমার কাছে অনেকের প্রশ্ন
https://surzil.blogspot.com/2024/02/blog-post_28.html
No comments:
Post a Comment