Tuesday, September 10, 2019

সাক, সুকুক ও ইসলামী ব্যাংকিং


মূসক যদি বুঝে থাকেন তাহলেও সুকুক বুঝেন কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। খেয়াল রাখবেন, এটা শুশুক বা শামুক নয় সুকুক, সাকের বহুবচন সুকুক। যখন প্রথম মূসক বলা চালু হল, অর্থাৎ যখন ভ্যাট বা ভ্যালু এ্যাডেড ট্যাক্স এর বদলে “মূল্য সংযোজন কর” বা মুসক বালা শুরু হল তখন নতুন যারা শুনেছেন তাদের মূষিক বা মিশুক জাতীয় কোন প্রাণীর কথাই প্রথম প্রথম হয়ত মনে হত । বিষয়টা অনেকটা এরকম, আগে জানতাম Source Tax  এখন বলি TDS বা Tax Deducted at Source মোদ্দা কথা একই তবে একটু ঘুরায়ে বলা হয়েছে আরকি। সুকুক বা সাক শব্দটা নতুন মনে হলেও তা নতুন নয় বরং সাক থেকেই চেক শব্দের উৎপত্তি – কথাটা শুনে চমকে যাওয়ার মতই বিষয়, এতো পুরাতন? ! সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজের ফ্যাকাল্টি শামীম ভাই সাককে একটু ভিন্ন ভাবে উচ্চারণ করে তাকে আলাদা করতে চাচ্ছিল, আমি পরিষ্কার করে বললাম, ডেটা বা ডাটা হল ডাটা শাক তাই না? আর এটা হল শুধু শাক বা সাক যার উচ্চারণটাও কাছাকাছিই হবে।

আমি বেশ কবার মারাত্মক রকম চমকেছি জীবনে, প্রথমবার বোধহয় রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছের একটি গল্পের পাঞ্চ লাইন “হৃদয়টা যদি লোহার বয়লার হইত তবে দপ করিয়া ফাটিয়া যাইত” পড়ে যে বিরামহীন হfশি হেসেছিলাম ছাত্রজীবনে তা ছিল আমার জীবনের রেকর্ড পরিমাণ হাশির চমক আর ইদানীং যখন জানলাম ব্রিফ হিষ্ট্রি অব টাইম বইটা লিখার সময় বা তার আগে হকিংস মহাশয় জেকব ব্রাওনস্কি’র তাত্ত্বিক টিভি সিরিয়াল “দি এ্যাসেন্ট অব ম্যান” দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। অবাক হয়েছিলাম এই ভেবে যে, আরে  হকিংস সাহেব তো তা হলে এই সেদিনকার কথা বলছেন, ১৯৮৭ সাল, আর আমি তো তখন ক্লাস এইটের স্কুল ছাত্র, আমারও তো প্রিয় ডকুমেন্টারি ছিল ওটা, বিবিসি থেকে নিয়ে বিটিভি সাপ্তাহিক প্রচার করত। তখন অবশ্য ওই একটা টিভি চ্যানেল বিটিভিই ছিল অন্ধের যোষ্ঠি। জেকব ব্রাওনস্কির বই “দ্যা কমন সেন্স অব সাইন্স” এর বাংলা অনুবাদ গ্রন্থ মেলা থেকে কিনতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেছিলাম আর তা পড়ে নিজেকে মহা পণ্ডিত পণ্ডিত ভাবতাম ছাত্রাবস্থায়, বলা বাহুল্য বইটা দুই বার পড়েছি, আর দ্বিতীয়বার দাগায়ে নাস্তানাভুত করে ছেড়েছি। এই হকিংস ভদ্র মহোদয়ও তাঁর ভক্ত ছিলেন?!, বলে কি !! এর পরেরর বিস্ময়কর খবরটি ছিল ১৯৮৩ সালের পূর্বে এম আজিজুল হক স্যার, সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজের প্রথম অধ্যাপক কর্তৃক ইসলামী ব্যাংকিং এ দেশে সূত্রপাতের কথা জানতে পারা। বলে কি এরা, ইসলামী ব্যাংকিং এর শুরুটা সোনালী ব্যাংকে?! অবাক না হয়ে যাই কই। তেমনই চমকপ্রদ হল সাক থেকে চেক শব্দের উ‌ৎপত্তির কথা জানতে পারার চমক। বিআইবিএম এর ক্লাসে আলমগির স্যার যখন কথাটা বলল, তখন মাথার ভিতর ঢং করে একটা ঘন্টা বেজেছিল, হলপ করে বলতে পারি আপনিও চমকের মধ্যে আছেন, না চমকালও অবাক হয়েছেন ত বটেই।

আমাদের ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোতে নতুন প্রডাক্ট দরকার, কিন্তু তা কি হতে পারে তা নিয়ে ভাবতে হয়েছে অনেক। এটা, সেটা, অন্যরা কি করছে, আমরা কি করতে পারি ভেবে অস্থির, নতুন কিছু মাথায় আসছিল না, কিন্তু যখন সুকুক সম্পর্কে জানলাম, তখন বুঝলাম এই খানেই দরজা খুলবে। বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতিতে সুকুকের সম্ভাবনা অনেক, আরব ইসলামি বিশ্বে সুকুক অতি পরিচিত একটি আর্থিক ইনসট্রুমেন্ট। আলমগির স্যার তার ক্লাসে আমাদের কোরআনের জ্ঞান কত তা মাপতে মাপতেই সময় পার করে দিলেন, অথচ তাঁর লেকচার সিট পরে দেখি, ওরে বাবা !! কত কি যে আছে এই সুকুক নিয়ে। উনি প্রচুর সুকুকের স্ট্রাকচার দিয়েছেন তার স্লাইড গুলোতে। ক্লাস শেষে যাওয়ার সময় স্যার বলে গিয়েছিলেন লেকচার সিট গুলো পড়তে রিডিং গ্লাস লাগবে, তা লেগেছিল ঠিকই, চারটা করে স্লাইড একটা পেইজে প্রিন্ট দেয়া। ছোট হয়েছে ঠিকই তবে সুকুক স্ট্রাকচার গুলো খুব ভাল ভাবেই বুঝা যাচ্ছে। লেকচারে বা লেকচার সিটেই হোক কিংবা পড়াশুনার জন্যই হোক, ফ্লো চার্ট , স্ট্রাকচার, হাইয়ারআরকি ট্রি স্ক্যামেটিক বা স্টেটিসটিকাল ডেটার গ্রাফিকাল রিপ্রেজেনটেশন ইলাসট্রেশন গুলো দারুণ ভাবে কাজে আসে। বিষয়টা বুঝতে এতটাই সহজ হয় যে, এক ঝটকায় অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যায়। রিডিং গ্লাসে আলমগির স্যারের দেয়া সুকুক স্ট্রাকচার গুলো যতই দেখি ততই নানা রকম প্রডাক্ট একটার পর একটা মাথায় উদয় হতে থাকল। এতদিন আতিপাতি করে খুঁজেও নতুন ইসলামী প্রডাক্টের প ও পাই নাই আর এখন ঝুড়ি ঝুড়ি আইডিয়া। সুকুক নিয়ে গুগল সার্চ দিলাম সেখানে এক ব্যাংক গ্রিন সুকুক পর্যন্ত চলে গেছে বলে পত্রিকায় পেলাম। অথচ এখন পর্যন্ত আমরা সাদা মানে সাধারণ সুকুক কি তাই জানি না।

সুকুক নিয়ে এতটা খোঁজা খুঁজি হয়ত করা হতনা যদি না এর উপর লেকচার দেওয়ার চাপ থাকত। গত দুই বছরের মত এবারও সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজের (এসবিএসসি’র) মিজান স্যার এর ফোন আসল ঠিক যখন ভাবছিলাম এবছর তো ক্লাস নেয়ার ডাক পরল না । মিজান স্যার যে বিষয় গুলোর উপর ক্লাস নিতে বলল তা গত বছরও নিয়েছি, তাই তাতে নতুন কিছু প্রস্তুতি নেয়ার  ছিল না, কিন্তু প্রথম ক্লাসের শেষে বেখাপ্পা একটা শব্দ এই সুকুক দেয়া আছে কেন তা প্রথমে মাথায় ঢুকল না। ক্লাস দুটোর একটা লাঞ্চ ব্রেকের আগে আরেকটা পরে। দুটো ক্লাসের বিষয়বস্তু ধারাবাহিক বটে কিন্তু মাঝখানে এই সুকুক কেন? আর সুকুক প্রথম ক্লাসের শেষে বললে পরের ক্লাসে বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা কিভাবে ধরে রাখা যাবে তা নিয়ে ভাবনায় পরেছিলাম। যা হোক, কি মনে করে মিজান সার সুকুক কে ঐ যায়গায় প্লেস করেছে জানিনা কিন্তু আমি এই বার সুকুক নিয়ে অনেক কিছুই জানি ও প্রচুর বলতে পারব বলে মনে হল। আমাকে দুইটি ক্লাসের প্রথমটির শেষাংশে দেয়া হয়েছে সুকুকের বিষয়ে বলার জন্য কিন্তু আমার যা রসদ তাতে সারা দিন বক্তব্য রাখলেও শেষ হবে না। সব কিছুই নির্ভর করছিল ক্লাসে অংশগ্রহণকারীদের ব্যাংকিং বিষয়ে অভিজ্ঞতার উপর, যদি তারা পুরাতন হয় তবে অন্য বিষয় গুলো অত বিস্তারিত না বলে বরং সুকুকে সময়টা টেনে আনা যাবে, এই ভেবেই গিয়েছিলাম ক্লাস নিতে, কিন্তু তা হয়নি। অংশগ্রহণকারীদের সবাই প্রায় নতুন তাই তাদের কোন বিষয়ই কম বলা যাবে না, বরঞ্চ সুকুক সম্পর্কে পরিচিতিমূলক স্বল্প বক্তব্যই তাদের জন্য ভাল হবে, বেশী বললে দুটি ক্লাসের মূল ধারার সাথে তা গোলমেলে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। সুকুক নিয়ে সেই বিশাল বক্তব্য সংক্ষেপ করতে করতে মাত্র ১০ মিনিটে সুকুকের বক্তব্য শেষ করতে হয়েছিল সেদিনকার ক্লাসে। কে কি বুঝেছে জানি না তবে সুকুক যে ইসলামী ব্যাংকিং এর একটি সম্ভাবনাময় ইনসট্রমেন্ট তা সবাই বোধ হয়ে জেনে গেছে।

সুকুক নিয়ে আমি যত সম্ভাবনাই দেখি না কেন উপর মহল থেকে যতক্ষণ না কোন নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে ততক্ষণ এই নতুন সম্ভাবনার কোন দাম নাই। সেদিন একজন বলছিল বন্দর সংলগ্ন শাখা গুলোতে দৈনিক এমন সব ব্যবসা আছে যে এক লোক সকালে চেক ছাড়া প্রচুর টাকা নিয়ে যায় আর বিকালে তার অধিক জমা দিয়ে যায়, সমস্যা হল সে সকালে কোন ভাউচার ছাড়াই টাকাটা নেয় যেহেতু তার একাউন্টে কোন টাকাই থাকে না। ব্যাংকিং হিসাবে এটা অবৈধ, ম্যানেজার পরিচিত বিধায় কাজটা সে করে আসছিল বেশ কিছুদিন ধরে, কিন্তু একদিন অডিট এসে ভোল্টের টাকা আর ক্যাশ বই এর ব্যালেন্সে ব্যাপক অমিল পাওয়ায় সেই ম্যানেজার সাসপেন্ড হয়ে যায়। এখানে কেউ কিন্তু অর্থ তসরুপ করেনি বরং এটি বৈধ ব্যবসা যা ব্যাংকের কোন প্রক্রিয়ায় প্রনালীবদ্ধ করা যায়নি। যায়নি কারণ কনভেনশনাল ব্যাংক সরাসরি ব্যবসা করতে পারবে না, কিন্তু এই সমস্যা ইসলামী ব্যাংকে নাই বরং মুসারাকা সুকুক এর মাধ্যমে এই ব্যবসা ইসলামী ব্যাংকিং করতে পারবে। সুকুক অথরিটির মাধ্যমে উক্ত শাখা ঐ ব্যক্তিকে এক দিনের জন্য বড় মাপের টাকা ঋণ দিতে পারবে যা সে দিন শেষে মুনাফা সহ প্রদান করবে আর বিনিময়ে সে কমিশন নিবে বা মুনাফার একটা অংশ যা সুকুক চুক্তিতে থাকবে তা নিয়ে যাবে। সেই পুরন প্রবাদটা আবার বলতে হয়, ব্যবসার প্রয়জনে ব্যাংকিং, ব্যাংকিং এর প্রয়জনে ব্যাবসা নয়। সাবজেক্টিভিটি আর অবজেক্টিভিটি নিয়ে এই যে গোলমাল তা বহুবছর ধরেই চলে আসছে। একদিকে জট খুলে তো আর এক দিকে নতুন করে জট লাগে। জীবনের জন্য ধর্ম  না ধর্মের জন্য জীবন? বাচর জন্য খাওয়া না কি খাওয়ার জন্য বাচা? ঘোড়ার জন্য গাড়ী নাকি গাড়ির জন্য ঘোড়া। এই হাতি ঘোড়ার বিভ্রান্তি মানব সমাজে চলতেই থাকবে। উন্নত বিশ্বে অবশ্য এই বিভ্রান্তি কমে গেছে, যাবেই তো, তা না হলে তারা উন্নত হল কি করে।

কনভেনশনাল ব্যাংক বাজারে সরাসরি ব্যবসা করতে পারে না কিন্তু ইসলামী ব্যাংক পারে কারণ তার নীতিমালাই ব্যবসার উপর প্রতিষ্ঠিত, সে অর্থে এটি একটি আর্থিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বটে। এই একটি কারণে ইসলামী ব্যাংকিং নীতিগত ভাবে একধাপ এগিয়ে, কোন ইহুদী ব্যাংকার আমার সাথে একমত হবেন না, কারণ তিনি ব্যাংকিং বলতে বুঝেন বসে বসে টাকা উপার্জন, কিন্তু ইসলামী ব্যাংকিং তা মানে না। বসে বসে টাকা উপার্জন অস্বাভাবিকই শুধু নয় অনৈতিকও বটে। টাকা বাড়াতে হলে তাকে অবশ্যই ব্যবসায় খাটতে হবে এটা হল একজন মুসলিম ব্যাংকারের দৃঢ় বিশ্বাস। ইহুদি ব্যাংকিং নীতি অন্যকে বা অন্যর টাকার কৌশলগত ব্যবহার করে অন্যকে দিয়ে ফয়দা উঠায়ে নেওয়াকে ব্যাংকিং দক্ষতা মনে করে।  সরলীকরণ করলে দাড়ায় অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়া বা কৈ মাছের তেলেই কৈ মাছটি ভাজা। ইসলামী ব্যাংকিং নীতি অন্যের টাকা তার অনুমোদনে ব্যবহার করে অন্যের সম্পৃক্ততায় বা নিজে ব্যবসায় খাটান নিশ্চিত করে অন্যকে মুনাফা করে দেওয়া ও তার সম্মতিতে নিজের জন্য লভ্যাংশের একটা ভাগ নেওয়া। প্রথমটি বৈধ কৃত গণপ্রতারণার কৌশল আর পরেরটি স্বাভাবিক ব্যবসা।

সুকুকের আরেকটি চমকপ্রদ ফিচার হল এর বন্ড মার্কেট ফ্লেভার বা শেয়ার মার্কেট ফ্লেভার। ব্যাংক কারবারকে যদি বলা হয় পরের টাকায় পোদ্দারী তবে শেয়ার মার্কেট হল পরের টাকায় জুয়া চুরি। এই বক্তব্য হয়ত কার কার মধ্যে বিচিত্র অনুভূতির সৃষ্টি করতে পারে তবে এই কথার বিপক্ষে যদি কেউ বেট ধরে তবে আমার কাছে যে তথ্য সম্ভার আছে তাতে আমার জিতে যাওযার সম্ভাবনাই বেশী। তুরুপের তাস বা ট্রাম্প কার্ড আমার হতে তাই ভয় নাই। ইসলামের মুয়ামালাতে শেয়ার মার্কেটকে মানা করা আছে !! এবার কেউ কেউ সত্যি সত্যি আমার উপর খেপে যাবেন মনে হয়। ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা সমর্পকে আমারই এক স্যার বলতেন ‍‍তখনকি আর মুদ্রার চল ছিল? তখনত বারটার চলত !! আমি হতবাক!! সে আমাকে এর বিপক্ষে প্রমাণ দেখাতে বলেছিল। খুঁজাখুঁজি করে যা দেখলাম তাতে দেখা যায় তখন দুটোই চালু ছিল। মুদ্রার এক্সচেঞ্জ রেটের পার্থক্য মুসলমান বা প্রকৃত খ্রীষ্টানরা মানে না কারণ তাতেও রিবা বা সুদ হয়ে যায়। ইসা (আঃ) এ রকম যারা করছিল তাদের উপর মারাত্মক রেগে গিয়েছিলেন বলে কথিত আছে। আর ইজিপ্টে ইউসুফ (আঃ) কে তো কয়েক দেরহামে বিক্রি করে দেয়ার কথা আর স্পষ্ট ভাবেই পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে। তা হলে কেন স্যার বললেন তখন কেবল বারটার প্রথা ছিল মুদ্রার প্রচলন ছিল না? বা মুদ্রায় কেনা বেচা হত না !! বাস্তবতা বড়ই বিচিত্র। এ থেকে বুঝা যায় অনেকেই মনে করেন সেই সময় এত পুরাতন যে, তখন আধুনিক একাউন্টিং ছিল না, কিংবা ধরুন ডেরিভেটিভ এর মত এত জটিল অংক তারা করতে পারত না আর তাই এ বিষয়ে সেই ১৪০০ বছর আগে আইন করে এসব মানা করার প্রসঙ্গই আসে না। এইবার তবে তুরুপের তাসটা দেখাই ? আপনাদের তথাকথিত পশ্চিমা পণ্ডিত মহাশয়েরা যাদের আধুনিক একাউন্টিং এর গুরু মানা হয় তারা ত শূন্যর ব্যবহারই জানত না,  যদি না আল খারেজমী গণিতে শূন্যর ব্যবহার শিখায়ে দিত। ১৪০০ বছর আগের সেই আরব দেশে উটের কেনা বেচার উপর একটি হাদিসে ডেরিভেটিভের উপর আইন দেয়া আছে খুঁজে দেখবেন। তুরুপের আরেকটি তাস হল, ইসলাম আপনাকে আপনার ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি আছে এমন সকল আর্থিক লেনদেন চুক্তি বা পদ্ধতিকে বাতিল করেছে। ইসলাম ব্যবসায় স্বতন্ত্র সত্ত্বা হিসেবে লিমিটেড কোম্পানিকেও স্বীকার করে না কারণ একমাত্র মানব – মানব চুক্তি সম্ভব, বা ফান্ড – ফান্ড চুক্তি সম্ভব ইসলামে, মানব – ফান্ড চুক্তিকে ইসলাম কখনই সমর্থন করে নাই, এর মনে হল ব্যবসা একটি ব্যক্তি নিরপেক্ষ পৃথক স্বত্বা তা ইসলাম মানে না । যে সম্পদের উপর বিক্রেতার অধিকার নাই তার উপরও চুক্তি কিংবা ভবিষ্যতে হতে পারে সেই সম্ভাবনার উপর ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সমূহ ইসলাম মানা করে। কেবল স্পেকুলেশনের উপর ভিত্তি করে ব্যবসা করা ইসলামে নাই। আর এতে যে কোন পক্ষের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় তা নাকচ করে দেয়া হয়েছে। যা-হোক, চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী, উলু বনে মুক্তা ছিটানর মত বোকমি না করাই ভাল। কার সাথে এ নিয়ে বিশাল বিতর্ক করার ইচ্ছা নাই আমার, যাদের এই নীতিগুলো আপত্তিকর লাগছে তাদের অনুরোধ করব ইসলামী অর্থনীতির প্রাথমিক বই গুলো পড়তে, তা হলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।  এই লেখা লেখার সময় আমার এক সহকর্মীর বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেনিং চলছিল বন্ড এর উপর, সে ফিরে যখন বলল যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি সুকুক নিয়ে তেমন কোন চিন্তা-ভাবনা নাই। সুকুক নিয়ে তার প্রশ্নের জবাবে প্রশিক্ষণে তাই বলা হয়েছে। এই কথা শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এত ভাল একটা ইনসট্রমেন্ট অথচ এদেশের মানুষ জানেই না আবার উপর থেকেও কেউ এর জন্য কিছু করছে না। যা বলছিলাম, সুকুকের শেয়ার মার্কেট ফ্লেভার রয়েছে, অর্থাৎ বন্ড মার্কেটের মত এটাকে চালনা করা যায় আবার শেয়ার মার্কেটেও তাকে প্লট করা সম্ভব। উদাহারণ স্বরূপ পদ্মা সেতুর উপর সুকুক ছাড়া যেত, কিংবা মেট্র-রেলের উপরও করা যেত। কর্তার  ইচ্ছায় কর্ম, কর্তা ব্যক্তিরা চায় না, আমরা হাউ কাউ করে আর কি করতে পারব। তবে এই কথাটা জানা থাকা প্রয়জন যে, বর্তমান শেয়ার মার্কেট ইসলাম অনুমোদন করে না নীতিগত কারণে কিন্তু সুকুকে সেই নীতিগত প্রতিবন্ধকতা থাকে না। তাই ইসলামী বন্ড সুকুকে বিনিয়োগ সুদ মুক্ত হবে ও সমাজে কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না। শেয়ার মার্কেটে ধস গুলো যারা অনুভব ও উপভোগ করেছেন তারা বুঝেন শেয়ার মার্কেট সমাজে কত খানি ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে। সুকুক সেই ঝুঁকি থেকে মুক্ত।

একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, যারা অনেক কিছু জেনে যায় তারা তা সহজেই সরলীকরণ করে অন্যকে বুঝতে সহযোগীতা করতে পারে, কিন্তু তখন তারা সহজ করে আর অন্যদের বলতে চায় না । মনে হয় তাতে করে তাদের কষ্টার্জিত জ্ঞানের অসম্মানের সম্ভাবনা থাকে। ধরুন যদি বলি হুন্ডি এর বহু পূর্ব সংস্করণ হল সাক আর তারই সমরূপ প্রতিশব্দ হল বন্ড। আব্বাসীয় আমলের সেই খলিফা হারুন অর রশিদের সময় বিপদজনক রাজ্যের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার জন্য নগদ অর্থ না নিয়ে একটি লিখিত আর্থিক ডকুমেন্ট বা বন্ড সার্টিফিকেট নিয়ে যাওয়া আর হুন্ডি নিয়ে যাওয়া বলা কি ভুল বলা হবে? কেন যে খামাখা সহজ বিষয় গুলোকে জটিল ভাবে উপস্থাপন করা হয় তা আমার বোধগম্যতার বাইরে। সাক বা হুন্ডির বৈধ ও সারবীকিকৃত (ষ্ট্যাণ্ডার্ডাইজড) ফরমেটই পরবর্তীতে চেক বা বন্ড ইনুষ্ট্রমেন্ট। ইতিহাস আর উদ্দেশ্য অবজ্ঞা করা হয় বলেই আজকালকার নব্য প্রজন্মের কার কার মধ্যে সংকীর্ণ মনোভাব দেখেতে পাওয়া যায়। পুরন দিনের সেই সব বড় মনের, বড় মাপের মানুষ ইদানীং কমই দেখতে পাওয়া যায়। সেই পুরাতন প্যারাডক্স এখানেও কাজ করে, জ্ঞানার্জনের জন্য পড়াশুনা না পড়াশুনার জন্য জ্ঞান, ইদানীং তো ক্যারিয়ার এর জন্য পড়াশুনা তাতে জ্ঞান থাকুক আরা না থাকুক কিচ্ছু আসে যায় না। ব্যাপারটা এখন এরকম, পড়াশুনা কর পরীক্ষার জন্য, চাকরী কর আর্থ উপার্জনের জন্য, কেউ বলে না পড়াশুনা কর  জ্ঞানার্জনের জন্য আর চাকরী কর আনন্দময় জীবনযাপনের জন্য। যে তার পড়াশুনা আর চাকরী একই ধারায় করে তার আনন্দ চিন্তা করে দেখেছেন? ওরকম একজন মানুষ বোধহয় আমাদের সোনালী ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি স্যার, জনাব ওবায়েদউল্লাহ আল মাসুদ, উনি টিভি সাক্ষাৎকারেও বলেছেন, ছাত্রাবস্থায় উনি স্বপ্ন দেখেছেন ব্যাংকার হওয়ার, পড়াশুনাও করেছেন ওই লাইনে আর কর্মক্ষেত্রও তিনি অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়ে আসছেন ব্যাংকিঙে। ইসলামী ব্যাংকিঙে সুকুক একটি ভাল বিনিয়োগ মাধ্যম তা সম্পর্কে নিজের অভিমত জানানই ছিল এই লেখার উদ্দেশ্য। একটু মজা করে লিখেছি, তাই তা যদি খানিকটা আনন্দ দিতে পারে তাতেই খুশি।

১৯আগষ্ট১৯>৪সেপ্টেম্বর১৯>০৯সেপ্টেম্বর১৯>

1 comment:

  1. Read is the first ward of the Quran. We need to read and know about Islamic banking.

    ReplyDelete