এই কয়েক দিনের মধ্যেই পুরো জাতি একটি মতামত দিবে পরবর্তী পাঁচ বছর কারা দেশ চালাবে। প্রত্যেকবার নানা ঝামেলা হয় এই সময়গুলোতে, সাধারণ মানুষের মতামত তাই নানা রকম, কেউ বলে আমার ভোট আমি দেওয়ার আগেই দেয়া হয়ে যায়, লাভ কি ভোট দিয়ে? কারচুপি তো হবেই। যে যায় লংকায় সেই হয় রাবণ। সব শিয়ালের এক রা। এই বিশাল জন সমষ্টিতে এরকম নানা মতামত তো থাকাটাই স্বাভাবিক। আর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দুর্নীতি? তা কম বেশী সকল দেশেই আছে। অনেক জনমতের মধ্যে একটি মত এরকম যে, রাজনীতি করে খারাপ লোকে, অর্থ ও ক্ষমতার প্রতি যাদের লোভ তারাই এই নোংরা রাজনীতিতে সময় দেয়। মজার ব্যাপার হলো এঁরা কোন রাজনীতির কথা বলছে? রাজনীতি কিন্তু সকল গোষ্ঠিবদ্ধ মানবিক কর্মকাণ্ডতেই আছে। সর্বনিম্ন তিন জনের প্রতিষ্ঠানেও রাজনীতি হয়। উল্লেখিত মতটি মূলত জাতীয় রাজনীতিকে উদ্দেশ্য করে বলা। একটি বিশাল জনগোষ্ঠিকে একক ভাবে সঠিক দিকে পরিচালনা করা, ঐ জনগোষ্ঠির নানা মানুষের নানা মত, নানা ভেদ-বিভেদ, ভাল-মন্দ, সুবিধা-অসুবিধা অতিক্রম করে তাদের একক নেতৃত্বে সুনির্দিষ্ট দিকে পরিচালনা করা কি ভাবে একটি নোংরা কাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে? অনেকে বলবে যারা রাজনীতি করে তারা ভাল লোক নয়, রাজনীতিতে ভালো লোক থাকলে দেশ ও জাতীর আজকে এই দুরবস্থা হতো না। ভালো লোক বলতে তারা আসলে কাদের কথা বলছে? ফুটবলের মাঠে ক্রিকেটার নামালে তারা হয়তবা ভালই খেলবে বা অন্তত খেলতে পারবে কিন্তু মাঠে ভাল লোক নামাতে গিয়ে যদি কবি-সাহিত্বক-তাত্ত্বিক-জ্ঞানী লোক নামায়ে দেয় তবে খেলার মাঠ সংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজনীতি করবে যারা রাজনীতি বোঝে, যাদের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আছে, যারা সমাজের সকল স্তরের লোকদের জীবনযাপন গভীর ভাবে অনুভব করার ক্ষমতা রাখে। এই লোকেরা তাত্ত্বিক নাও হতে পারে, হলে ভাল কিন্তু দেশ ও সমাজের সকল স্তরেরর মধ্য হতেই তাদের উঠে আসতে হয় বিধায় লোকগুলো উচ্চতর স্তরের লোকের কাছে নোংরা মনে হলেও করার কিছু নাই, লোকটি খেলতে জানে কিনা তা এখানে বিচার্য । জাতীকে ভালবাসে কি না, সাধারণ জনতা ও জনমতকে মূল্যায়ন করে কি না, জাতীর উদ্দেশ্য সম্পর্কের সচেতন কি না? নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা আছে কি না? বিরোধ মীমাংসা করতে পারে কি না? ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শিতাই তাকে রাজনীতি করার উপযোগীতা বিচারের মাপকাঠি হওয়া উচিত। সে উচ্চ শিক্ষিত হলে তো অনেক ভাল কিন্তু তা হওয়াটা আবশ্যকীয় নায়। এই যে এইটি আবশ্যকীয় নয় তা অনেকে মানতে চায় না, এটা কি সম্ভব যে দেশের সবকটি লোক সমান ভাবে উচ্চ শিক্ষিত হবে, সব একই রুচির হবে, সবাই যেহেতু একই ভাষায় কথা বলে তাই সবাইকে একই ভাবে চিন্তা করতে হবে?
রাজনীতি কি নীতির রাজা না’কি রাজার নীতি তা নিয়েও অনেক বাক বিতণ্ডা রয়েছে। আমার মতে এটি দুটোই। রাজাই নীতি প্রণয়নের অধিকার সংরক্ষণ করতো, আজ প্রজাতন্ত্রে এই নীতি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রণীত হয়। তাই এটি রাজার নীতি বটে, আবার সকল নীতির নেতৃত্ব স্থানীয় নীতি হিসেবে এটি নীতির রাজাও বটে। মূল কথা রাজনীতিতে সকলের অংশ গ্রহণ করা উচিত, সক্রিয় রাজনীতি না করলেও সবার উচিত রাজনীতির খোজ খবর রাখা, তা সবাই করেও কিন্তু জিজ্ঞাসা করলে বলবে, ভাই, রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাই না, সব গুলোই চোর। দুর্নীতিবাজ লোকগুলোকে যদি আপনি মাঠ ছেড়ে দেন তো তারা চুরি করবে না কেন? এর জন্য তো ওরা নয় বরং আপনাকে দায়ী করা উচিত। সমাজের দায়িত্ব সম্পন্ন লোকগুলো যদি তাদের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ না করে তবে অসৎ/অসাধু লোকেরা তার সুযোগ নিবেই। যে কোন চা’এর দোকানের আড্ডায় রাজনৈতিক বাকবিতণ্ডায় রাজা উজির মারার প্রবণতা আছে। ঠিক ভোটের আগদিয়েই চা’এর কাপে ঝড় উঠে। এ সব আলোচনা রাজনীতিতে আপাত কোন প্রভাব ফেলে বলে মনে হয় না, তবে জনমত যাচাইয়ের জন্য ভাল তথ্য প্রদান করে। ওই আড্ডায় যদি একজন অন্তত শিক্ষিত লোক উপস্থিত থাকে ও অংশগ্রহণ করে তবে আলোচনা ভালোচনায় পরিণত হতে বাধ্য। আজকালকার টিভি টক-ঝাল শো গুলো ইদানীং রাজনৈতিক জনমত গঠনে ভালো ভূমিকা রাখছে বলে অনুমান করা যায়।
বেশ কিছুদিন আগে এক বড় ভাই বলেছিল, বাঙ্গালীরা কোন কিছু সহজভাবে গ্রহণ করে নি কোন সময়ই। এদেশের জনগণকে আলু খাওয়ান শিখিয়েছে পর্তুগীজরা, কিন্তু তারা কখনো আলু ভর্তা করে খায়নি। বাঙ্গালীদের সবকিছুই যেন একটু বেশী বেশী, আবেগ প্রবণতার প্রভাবে আসল বিষয়বস্তু গোলায়ে ফেলে। সেই গোপালের আমল থেকেই মাৎস্যন্যায় অবস্থাতেই নির্বাচন/নির্ধারণ হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার। একটু উনিশ বিশ করে সেই একই অবস্থা আজো বহাল আছে। রাজা-প্রজা সম্পর্ক কিংবা মালিক-দাস প্রথা আজ ভিন্ন ভাবে চালু আছে, যাদের তৃতীয় নয়ন আছে তারা তা ঠিকই দেখেতে পায়। সম্পদের সমান বন্টন স্বাভাবিক নয়, সুষম বন্টন হওয়াটা কাম্য কিন্তু সুষম হওয়ার মানদণ্ড কি হবে এবং কে তা নির্ধারণ করবে সে বিষয়ে কোন মীমাংসা আজো হয়নি। সর্বজন সম্মত মানদণ্ড বিধাতা ছাড়া কোন মানব বা মানবগোষ্ঠির পক্ষে প্রণয়ন করা সম্ভব নয়। পক্ষপাত মুক্ত মানব মন সম্ভব নয়। নিজের ভাই, নিজের ছেলে, আমার আত্মীয় ইত্যাদি বিষয়গুলো মানব মনে সাধারণ থেকে নিকটবর্তী হিসেবে বিবেচিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটি যদি না হয় তবে বলতে হবে সে অতিমানব বা দেবাত্মা।
দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিছুটা নিরপেক্ষ মতামত এরকম হতে পারে যে, যেহেতু এই মুহূর্তে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা একটি চলমান প্রক্রিয়াতে রয়েছে আর যেহেতু এই প্রক্রিয়ায় চলমান থাকলে অদূর ভবিষ্যতে কিছু বৃহৎ প্রকল্প সফল ভাবে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাই তাকে সেভাবেই চলতে দেয়া উচিৎ। হটাত গাড়ির চালক পরিবর্তন করলে কিংবা রোড ম্যাপ বদল করলে গন্তব্যে পৌছান দুষ্কর হয়ে যেতে পারে। কেবল খাম খেয়ালী-পনা করে কেউ যদি এরূপ মনোভাব পেষণ করে যে, গত বার যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের বদলে দেখা যাক না অন্যরা হয়তবা আরো ভাল ভাবে দেশ চালাবে, যে সিদ্ধান্তের সাথে দেশের সকল ব্যক্তির ভাগ্য-জীবনযাপন জড়িত, যে সিদ্ধান্তর জন্য দেশের সকলের মতামত চাওয়া হচ্ছে, সে মতামত এত সহজে নেয়া উচিত নয় বলে আমি মনে করি। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যারা যোগ্যতার বিচারে সঠিক বলে মনে হয় তাকেই নির্বাচন করা উচিত।
Chomotkar hoyeche, if you dont mind i hv 1 point ,
ReplyDeleteTahole to Govt big big project guli election er age hanging kore rakhbe, only this reason, Isn't it?
ReplyDeletehello
এই সময়গুলোতে সবকিছুই ক্ষনিকের জন্য থেমে যাওয়াটা স্বাভাবিক। ঝুলায় রাখা ও তার সুবিধা নেওয়াটা একটা অনুমান, চলমান প্রজেক্টগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ঝুলায়ে রাখা হলে তা সবার নজরে পরবে। দুরঅভিসন্ধী আম জনতার কাছ থেকে সব সময় লুকানো যায় না। কেউ তা চেষ্টা করলে বোকামী করবে। রাজনৈতিক বিষয়ে বোকামী কারার খেসারত আনেক।
ReplyDelete