Thursday, February 8, 2024

শরিফ সারেং পরিবারের গল্প-৩ আমাদের পরিবারের এনথ্রপলজিকাল বিশ্লেষণ ও সমাজবিদ্যার আলোকে সংঘের গুরুত্ব

 

নিম্নোক্ত বক্তব্যটি একান্তই আমার ব্যক্তিগত ধারণা, কাউকে বড় কিংবা ছোট করার উদ্দেশ্যে এই বিশ্লেষণ করা হয় নাই বরং প্রকৃত সত্য অনুসন্ধানের চেষ্টাতেই তা করা হয়েছে। কার কাছে অহেতুক কিংবা বিরক্তিকর মনে হতেও পারে তবে আমার কাছে এই বিশ্লেষণের গুরুত্ব আছে আর তা থেকে শিক্ষা নিয়ে সকলের মনোভাবে একটা সমতা কিংবা সমঝতা আনা যেতে পারে। এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করার কিছুই নেই কারণ এটা আমার নিজস্ব দৃষ্টি ভঙ্গি, অন্য কেউ হয়তো অন্য ভাবেও এই বিষযটা ব্যাখ্যা করতে পারে তবে তাকে আমার যুক্তি খন্ডায়ে তা করতে হতে পারে।  

২৫জানুয়ারী২০২৪> আমাদের পরিবারের এনথ্রপলজিকাল বিশ্লেষণ বা এনালিসিস। তিনটি ধারার ও তাদের মিশ্র ধারাগুলো যা আমি সনাক্ত করতে পেরেছি। এই তিন ধারার মধ্যেই মূলত কনফ্লিক্ট হয়, তাই ধারা তিনটি সনাক্ত করতে পারলে হয়তো আমরা কনফ্লিক্ট এড়ায়ে যেতে পারবো বলে আমার ধারণা। যেহেতু এনথ্রপলজি বলছি তাই মানষ্য প্রকৃতিটা আগে বুঝতে হবে। বুঝার সুবিধার্থে বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষকে মৌলিক তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে ১) ককেশিয়ান (ফ্যাকাসে সাদা ও লম্বা, উঁচা নাক) [হোয়াইট পিপল] ২) নিগ্রয়েড (কালো ও কোঁকড়া চুলের) [ব্ল্যাক পিপল] ৩) মঙ্গোলিয়ান (চাইনিজ পিপল বা নাক বোচা বেটে খাট এশিয়ান পিপল)[ইয়োলো পিপল] এই তিন ধারার মধ্যে মিশ্রিত হয়ে হয়েছে কালারড পিপল, যেমন বাংলাদেশিরা বার মিশালি কালারড পিপল। বাঙ্গালীরা ১২ মিশালি বলে এদের মধ্যে মতপার্থক্যও অনেক বেশি যা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতারও মূল কারণ বলে মনে করেন এনথ্রপলজিস্টরা। আমি এনথ্রপলজিস্ট নই তাই আমার জ্ঞানের স্বল্পতা আছে, তার পরও কিছুটা বুঝি কারণ আমার ছাত্র জীবনে সমাজবিদ্যা আর ইতিহাস ছিল, এনথ্রপলজির সাথে ইতিহাস আর সমাজবিদ্যার যোগসূত্র আছে আর তা থেকেই বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করবো।

বঙ্গদেশে বা আদি বঙ্গীয় সমাজে দ্রাবিড় বা অনার্যরা ছিল যাদের প্রকৃষ্ট উদাহরণ শ্রীলঙ্কান মানুষেরা। রামায়ণে এদের রাক্ষস জাতি বলা হতো, দেখতে তারা নিগ্রয়েডদের মত হলেও পুরপুরি তা নয়, বহু আগে কোন ভাবে নিগ্রয়েডদের সাথে এদের মিশ্রণ হয়ে থাকতে পারে। এই দ্রাবিড়দের সমাজে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান থেকে বা ইউরাল পার্বত্য এলাকা থেকে আর্য বা এরিয়ানরা এসে মিশতে শুরু করে, তারা সাথে করে নিয়ে আসে জরথুস্ত বাদ (বৃদ্ধ বা হলুদ উটের আরোহীর প্রবর্তিত ইরানী ধর্ম মত)  সংস্কৃত ও বেদ সমূহ (সনাতন বা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আদি পুস্তকাদি) । পূর্বে দ্রাবিড়দের মধ্যে যে সনাতন ধর্মমতের বা হিন্দু ধর্মমতের সরস্বতী মূর্তি ছিল তা ছিল কালো বর্ণ কালীর মত, তাকে তারা শ্বেতাঙ্গ রূপ দেয়। এই এরিয়ানরা মূলত ককেশিয়ান বা শ্বেতাঙ্গ মনুষ্য প্রজাতির। তাই প্রথম মিশ্রণটা ঘটে আর্য আর অনার্যদের মধ্যে। এর পরবর্তীতে বঙ্গীয় উপমহাদেশে বৌধ্য যুগে মঙ্গলিয়ানরা আসে আর তার পর মোঘল সম্রায্য, এই মোঘলরাও মঙ্গলিয়ানদেরই বংশ উদ্বুত। তদপরবর্তী আমারা জানি ইংরেজরা আসে সাথে নিয়ে আসে তাদের নিগ্রয়েড দাস দের। এভাবেই আদি দ্রাবিড়দের সাথে ককেশিয়ান, মোঙ্গলিয়ান আর নিগ্রয়েডদের মিশ্রণে বার মেশালি কালারড পিপলে ভরা আমাদের দেশ। রবীন্দ্রনাথও বলেছিলেন এ বিষয়ে যে আমাদের রক্ত নানা ধারার মিশ্রণ রয়েছে।

আমাদের পরিবারে আমি যে তিনটি ধারা সনাক্ত করতে পেরেছি তা হলো ১) এরিয়ান মিক্স ২) আদি মৌলিক দ্রাবিড় ৩) মঙ্গলিয়ান মিক্স। চতুর্থ আরেকটি ধারা সনাক্ত করতে পেরেছি যাকে একক বা দ্বৈত ভাবে কোন ধারায় ফেলা যাচ্ছে না তবে বিক্রমপুরের একটি আদি মিশ্র কিন্তু সতন্ত্র ধারা আছে ওই ধারার সাথে এই ধারার মিল আছে বলে আমার ধারণা। প্রতিটি ধারার দুই তিনজনের নাম আমি উল্লেখ করতে পারবো, একই পরিবারে একাধিক ধারাও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এমেরিকা কিংবা ইউরোপে ককেশিয়ান পরিবারে যেমন নিগ্রয়েড বাচ্চা হতে দেখা যায় না তেমনি নিগ্রয়েড পরিবারেও শ্বেতাঙ্গ বাচ্চা হয় না। মা-বাবা ককেশিয়ান আর নিগ্রয়েড মিক্স হলে তাদের বাচ্চাদেরও সাদা বা কাল যে কোন ভাবেই দেখা যায়।

এই ধারা গুলোর মধ্যে আচরণগত পার্থক্যও থাকে যেহেতু তাদের জেনেটিক সাতন্ত্রতা বিদ্যমান। কেউ হয়তো প্রচুর উদারতা ও মন অনেক বড় কার বা মন অনেক ছোট ও কট্টর ধরনের মানুষিকতা কেউ অত্যন্ত রাগী আর একই সাথে অত্যন্ত অমায়িক প্রকৃতির। চতুর্থ ধারাটি যাকে আমি আদি বিক্রমপুরের ধারা বলছি তাদের মন বড় ও সব বিষয়ে আদি বিক্রমপূইরা ধাঁচ আছে। ধারা গুলোতে কে কে আছে তা বলবো না, এটা যার যার মত বুঝে নিতে হবে। তবে এই ধারা গুলোর মধ্যেই কনফ্লিক্ট হয়। আমরা যদি আমাদের প্রকৃতিটা বুঝতে পারি ও তার ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলো শুধরে নিতে পারি তবে আমাদের পরিবারে সংঘর্ষিক মতামতগুলোও কমে আসবে বলে আমি আশা রাখি। সারা পৃথিবীতে এমন কোন পরিবার বা পারিবারিক সংঘ নাই যেখানে সংঘর্ষিক মতামত নেই তবে এর প্রকট প্রভাব অনেক পরিবারে অনেক কম। যে সব পরিবারে সংঘর্ষিক মতামত কম তারাই সংগঠিত হয়ে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। যে পরিবার গুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাদের মধ্যে সংঘর্ষিক মতামতের প্রভাব এত বেশি কাজ করে যে তা বাইন্ডিং ফোর্সের চেয়ে বিচ্ছন্নকারী ফোর্সকে শক্তিশালী করে দেয় ও পরিবারটি সমাজে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে অন্যদের সাথে মিশে হারায়ে যায়। সে সকল পরিবারের সন্তানেরা তাদের আদি পুরুষদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত হয়।

 

 
৫জানুয়ারী২০২৪> ৪ফেব্রুয়ারী ২০২৪> সমাজবিদ্যার আলোকে সংঘের গুরুত্বঃ আমার অধ্যয়ন পর্বের এক পর্যায়ে সমাজ বিদ্যা ছিল, তখন এক জায়গায় পড়েছিলাম “সমাজ গঠিত হওয়ার পর তার উপর আমরা দেখতে পাই সংঘ সমূহের গুরুত্ববহ প্রভাব সমূহ” পাঠ্য বইয়ে এর পর আর কোন ব্যাখ্যা ছিল না দেখে তখন বুঝতে পারি নাই সংঘের গুরুত্বটা কোথায়। আজ যখন আমি আমার প্রফেশনাল বেচ মেট সোনালী ব্যাংকে ২০০৪ সালে অফিসার আইটি হিসেবে জয়েন কৃতদের সংঘের সভাপতি আর কমনওয়েলথ এক্সিকিউটিভ এমবিএ বা সিম্বা’র এলুমনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি তখন বুঝতে পারি সংঘ সমূহের গুরুত্ব কত বিশাল। এই সব সংঘ গুলো তা রাজনৈতিক হোক বা অরাজনৈতিক হোক সমাজের কনসেনসাস (সাধারণ জনমত) গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে ও প্রেশার গ্রুপ হিসেবেও কাজ করে । সমাজের বিবেক (সাধারণ ভাবে সকলের মেনে নেয়া নৈতিকতার বা ন্যায়-নিতিবোধ সমূহ) ও মূল্যবোধ (কোন কিছুরই নিজস্ব কোন মূল্য নাই যতক্ষণ আমরা তাতে মূল্য আরোপ করি) গঠনে এরাই বিশেষ ভাবে কাজ করে আর সে কারণেই সমাজের নেতৃত্বও এরাই দেয়। একান্নবর্তী পরিবার থেকে যখন বটবৃক্ষের মত বৃহত্তর পরিবারের সৃষ্টি হয় তখন তা এক রকম সংঘের মতই কাজ করে তবে তখনই যখন তারা ঐক্যবধ্য হয়ে সংগঠিত থাকে। বিশ্বের সব পরিবারেই কম বেশি মতপার্থক্য থাকতেই পারে তবে সংঘবদ্ধ পরিবার আমরা তাকেই বলি যেখানে বিরোধের চেয়ে ঐক্যের শক্তিটা বেশি। পারিবারিক সংঘ গুলো অনেক শক্তিশালী তার প্রমাণ পাওয়া যায় আমাদের দেশের ডাইনেস্টি পলিটিক্সে (পরিবার নির্ভর রাজনীতি) তিনটি পরিবার যেমন শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, এরশাদ এই তিনটি পরিবারের বিশাল প্রভাব দেখে। সংঘ গঠনে একটি কাঠামো ও নেতৃত্ব অবশ্য অবশ্য বাধ্যতামূলক আর সমবায় ফান্ড গুলো থেকেও প্রচুর উন্নয়নমূলক ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড সমাজে সংঘটিত হতে দেয়া যায়। আমার স্কুল ফ্রেন্ড ডাক্তার তমাল লন্ডনে আভিবাসনকৃত সে ওখানকার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ডাক্তার দের নিয়ে একটি সমবায় করছে যাতে দেশের একটা সঞ্চয়পত্র খুলে তার মুনাফা দিয়ে তারা দেশের দরিদ্র ডাক্তার শিক্ষর্থিদের পড়াশুনায় আর্থিক সহযোগিতা করতে পারে। নেতৃত্ব গঠনে একটি আদর্শও দরকার যে আদর্শকে বাস্তবে প্রয়োগ করেন একজন নেতা। বাকিদের অধিকাংশের সমর্থন ছারা সংঘটি বা সংগঠনটি কাজ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। প্রতি সংগঠনেই রাজনীতি আছে মানে দুষ্ট লোকজন থাকেই কিন্তু শুভ শক্তির পক্ষের লোকের চাপে তারা দুরে সরে যায় বা যেতে বাধ্য হয়। যে কোন সংঘ গঠনে কতগুলো পর্যায় আছে, যাকে ফরমিং – স্টরমিং –নরমিং –পারফরমিং –এডজরনিং এই কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়। স্টরমিং আর নরমিং পর্বগুলো সংগঠনের মেনুফেস্টো বা আদর্শ গঠনে ও গঠনতন্ত্র নির্মাণে (মেমোরেন্ডাম অব আনডারস্টেনডিং [MOU] এবং আরটিকেলস অব এসোসিয়েশন [AOA] কিংবা এক কথায় সংবিধান) মূল ভূমিকা রাখে। পর্যায়গুলো ওভারলেপিং হতে পারে। স্টরমিং ও নরমিং একাধিকবার সাইকেল হতে পারে তবে পারফর্মিং টা চলতেই থাকে। এই স্টরমিং ও নরমিং এর ফলেই সংবিধানে সংশোধনী আনার ব্যবস্থা রাখা হয়। এক সময় না এক সময় এডজরনিং তো হবেই। সব কিছুর লাইফ সাইকেলে সমাপ্তি বা উত্থান রেখার পতন তো আছেই। তখন নতুন করে লুপ করে আবার চলমান প্রক্রিয়াকে উঠায়ে আনা হয়। সংঘ গুলো এজিএম (এনুয়াল জেনারেল মিটিং) বা বাৎসরিক পিকনিকের আয়োজন করে পুর প্রক্রিয়াটাকে লুপ করে আবার সূচনা রেখার মত উত্তরণ ঘটায় সাংগঠনিক কার্যক্রমের। রাষ্ট্র যেমন প্রতি ৫ বছর অন্তর নির্বাচন করে সেই একই লুপ সৃষ্টি করে। পারিবারিক সংঘ সমূহের এডজরনিং এত সহজে না হলেও সম্পর্কের বাধন বা বন্ধন গুলো দুর্বল হয়ে যেতে থাকে আর তাকে কাছে নিয়ে আসতে নেতৃস্থানীয় লোকেরা বা ফ্রন্ট লাইনাররা তৎপর হয়। পুনরমিলনীগুলো এখানে লুপের মত কাজ করে। -এইটুকু লেখাকে আপাতত প্রকাশ করলাম আমাদের নিজস্ব গ্রুপে, এই আংশিক লেখাটা একটা বড় লেখার অংশ করার ইচ্ছা আছে অন্য কোন এক সময়।
 

 
লেখাটা পরে আরো আপডেট করবো তবে সময় ও সুযোগ মত। আপাতত যা বল্লাম তা হল, একটা বৃহত্তর পরিবার সংঘের মত কাজ করে আর আমাদের দেশে মিশ্র প্রকৃতির মানুষের কারনে পরিবারগুলোতেও তার প্রতিফলন দেখা যায় যার করনে মানবিক আচরণগত পার্থক্য একই পরিবারের ভিতের দেখতে পাওয়া যায়। যা প্রচুর আন্ত পরিবার কনফ্লিক্ট এর কারণ বলে আমার মনে হয়েছে।

সম্পাদনা ও উন্নয়কালঃ ২৫জানুয়ারী২০২৪>  ৪ফেব্রুয়ারী ২০২৪>  ৯ফেব্রুয়ারী ২০২৪>

 

No comments:

Post a Comment