মনিকাঃ আসসালামু আলাইকুম। শুরুতে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি রওনক কাকা বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছিলেন আমি রিসিভ করতে পারি নাই।আসলে আমি কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে ছিলাম না। ২১তারিখ যে প্রোগ্রাম বাড়িতে আয়োজিত হতে যাচ্ছে সেখানে আমি উপস্থিত হতে পারবো কি না ঠিক জানি না।তবে কাকা আমি খুব কষ্ট পাইছি আমার পরিবারের লোকজনদের থেকে।আমি প্রতিটা অনুষ্ঠানে প্রত্যেককে ধরে ধরে কুশলাদি জানতে চাইতাম কিন্ত কেউ আমার কুশলাদি কখনও জানতে চায় নাই।আমি কে কোথার থেকে এসে কথা বলে গেলাম কেউ খোঁজও রাখে নাই।এমনকি আমার মাকেও কেউ এতটুকুও সন্মান দেখায় নাই।আমাদের পরিবারের সবাই খুব ব্যস্ত কারোও জন্য এতটুকু সময় ব্যয় করতে রাজি না।তাই এমনি এমনি ফোন দিয়ে কথা বলার সময় তাদের নাই কিন্ত কোনো অনুষ্ঠানে দেখা হলেও এমন ব্যবহার করে যেনো আমি নিজেই কথা বলতে যেয়ে বিব্রতবোধ করি।বড়দের কথা না হয় বললাম না তারা যেহেতু আমার মুরব্বি কিন্ত আমার থেকে বয়সে যারা ছোট ওদের ব্যবহার আমাকে পীড়িত করেছে।ওরা তাহলে কী শিক্ষা পেয়েছে।আসলে যোগ্যতা দিয়ে যদি আপন মানুষের কাছে পরিচত হতে হয় তাহলে আমি নাহয় আপনাদের কাছে অপরিচিতই থেকে গেলাম।আর আমি না থাকলে একদিন আমার বাবার নামও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে তখন আর মনে করতেও হবে না।
রওনকঃ মনিকার সাথে কথা বলবো আমি, ও কেন নিজেকে এত অবহেলিত মনে করবে। আমরা ওর পাসে আছি সব সময়। এতদিন একটু দুরত্ব ছিল, হ্যা আমরা সবাই নিয়মিত সবার খবরাখবর নিতে পারি নাই কিন্তু এখন থেকে আমরা সবাই একে অপরের খবরাখরব নিবো। বাসায় যাবো। বছরে চারটা গেট টু গেদার করার চেষ্টা করবো। তখন আর ও এরকম মনে করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।
মিমিঃ মনিকার লেখাটা পড়লাম। ছোট বেলায় মনিকা আর সৈকতকে অনেক আদর করেছি। ভাইয়া চলে যাওয়ার পরে সত্যিই ওদের খবরাখবর নিতে পারিনি। কেন পারিনি সেটা আমার লেখায় আমি বলেছি। মনিকার মনে যে কষ্ট, সেই ফিলিং টা কম-বেশি আমাদের অনেকের মনেই হয়তো আছে। অনেক দুঃখ-অনেক কষ্টের এমনকি আনন্দের সময়ও আমরা একে অন্যের পাশে থাকিনি। সবাই অনেক আগের গল্প শুনতে-বলতে -সমালোচনা করতে পছন্দ করছে। কিন্তু গত ২০ বছর আমরা কে কেমন করে এই সময়টা পার করলাম সেটা নিয়ে কেও কখনো জানতে চায় না। এটা কিছুটা অদ্ভুত! তবে এটা ভেবে ভাল লাগছে যে মনিকা ওর মনের কথাগুলো এখানে বলতে পেরেছে। মানুষকে আপন না ভাবলে এই কথাগুলো বলা সহজ না। গ্রুপটা বানানো হয়েছে এবং সবাই জয়েন করেছে, এই জন্য ভাল লাগছে। ধন্যবাদ /থ্যাংকস বলতে গেলে আবার মুকুট পরানো হয়, রওনক ভাইয়া রেগে যেতে পারেন, তাই কিছু বললাম না।😄
সময়টা এমন এসে গিয়েছে যে, আমি নিজে থেকে যদি না বলি যে 'আমি বেঁচে আছি' ,আমাকে কেও মনে করবে না। আগে পাশের মানুষ রাগ করলে বা অভিমান করলে মানুষ প্রানান্তকর চেষ্টা করতো তার রাগ ভাঙাতে। যখন থেকে আমরা স্মার্ট হয়েছি, স্মার্টফোনে এসেছে, সবকিছুর পর মানুষ ফোন এ ব্যাস্ত হয়ে ডুবে যায়, দিন-দুনিয়া কি হলো, কোথায় গেলো ঐটা নিয়ে আর চিন্তা করে না। এটা আমি গ্লোবাল স্টাডি থেকে বলছি। আমি সাইকোলজি তে মাস্টার্স করতে গিয়ে এই জিনিসগুলো আরো বেশি দেখতে পাচ্ছি। যদিও আমি আইটি ব্যাকগ্রাউনড এর মানুষ। Ux এ কাজ করতে গিয়ে ইউজার-সিকোলোজি নিয়ে কাজ করতে হয়, ব্যাপারগুলো খুব ইন্টারেষ্টিং লেগেছে তাই খুব ইন্টারেস্ট নিয়ে আবার পড়া শুরু করেছি। তো যেটা বলছিলাম, কিছুটা যোগাযোগ নিজের চেষ্টায় রাখতে হবে। সবার রেস্পন্স একই রকম পাওয়া যাবে না , কিন্তু ২-৩ জন ও যদি আমাকে বুঝতে পারে সেটাও কম না, এভাবে চিন্তা করতে হবে। আজকে আমি যদি নিজে থেকে কথা না বলতাম আমাকে কে মনে করতো? ভাবতো সে বিদেশে আছে ভালই আছে হয়তো।
মনিকার বাবা নাই , বড় চাচা নেই , কিন্তু ছোট চাচা ইকবাল ভাইয়া আছেন। হয়তো কিছুটা দূরে থাকেন। কিন্তু ওর মনের অভিমান দূর করতে ওকে আরো সাপোর্ট দিতে পারেন ইকবাল ভাইয়া । বাবা যখন না থাকেন চাচাকে খুব আপন লাগে। চাচাদের মাঝে বাবার ছায়া দেখা যায়। আমাদের যেমন রুহুল কাক্কুকে দেখে লাগতো। কাক্কু আমাদের বাসায় আসতেন, লম্বা সময় নিয়ে কথা বলতেন, খোঁজ-খবর করতেন। আমি লন্ডন থেকে গেলে কেমন আছি, কিভাবে দিন কাটাই, একা একা কি কি কষ্ট করি জানতে চাইতেন। কালো হয়ে গেলাম না ফর্সা হয়েছে গেলাম সেটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে যেতেন। এই ভালোবাসা গুলোর কোনো মূল্য হয় না। কিন্তু এই ভালোবাসা মানুষকে হিল করতে পারে।
আমরাও পাশে থাকবো মনিকা, তুমি বলো। আমি দূরে আছি কিন্তু লুসি, শাহনাজ, মুহাম্মদ আছে দেশে । ভাইয়ারা আছে। তুমি জনাবা। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ চাইলে তোমার এরকম আর লাগবে না। যেকোনো কিছু ভাঙা তো খুব সহজ, কিন্তু এক করা কঠিন। তাই সবাই সবাইকে এক করার চেষ্টা করবে আশা করি, দোআ করি সবার জন্য। ২১ ফেব্রুয়ারী তে সবাই এক সঙ্গে আনন্দ করো, মনিকা, তুমি ও যায় , ভাল লাগবে আশা করি।
রওনক মিমিকেঃ আমি ওকে বলছি যখন ইচ্ছা সেটা রাত ২ টা ৩ টা কিংবা যে কোন সময় আমাকে ফোন করতে যেন হেজিটেট না করে। আমি রেসপন্ড করবো বা পাসে থাকবো। ও যেন নিজেকে অবহেলিত আর না মনে করে। ভাবিকেও একই কথা বলছি।
এবার আমি রওনক আমার কিছু কথা যোগ করবো এই আলোচনাটার জন্য। একটা বড় গাছের অনেক ডাল পালা থাকে। যখন কোন একটা ডাল আহত হয় তখন সেই ডালের কান্ডের অংশটা শক্ত হাতে তাকে রক্ষা করে, এই প্রাকৃতিক শিক্ষা থেকে মিমির কথা ঠিক আছে, সব থেকে বেশি সাপোর্ট আসার দরকার ইকবাল ভাই এর পরিবারের কাছ থেকে, কারন ওই বড় পরিবারে তিনিই একমাত্র নিকটতম সারভাইবার। মনিকার কথা আমাদের অন্তরকে আহত করেছে, ওর প্রতি দায়িত্ববোধ অনুভব করেছি আমরা।
সম্পাদনা ও উন্নয়ন ইতিহাসঃ ৪ফেব্রুয়ারী২০২৪ > ৯ফেব্রুয়ারী২০২৪>
No comments:
Post a Comment