Monday, January 29, 2024

“সদ্য গুলানো রাজকীয় গণতন্ত্রের সরবত- একটা কিনলে একটা ফাও”-অরুন্ধতী রায়

নিউইয়র্কের হার্লেমে রিভারসাইড ইতিহাসখ্যাত গীর্জায় ১৩ মে, ২০০৩ ভারতীয় লৈখিকা অরুন্ধতী রায় উপরোক্ত শিরোনামে যে ভাষন দেন তা ২৬ মে, ২০০৩ দিললীর আউটলুক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ করা হলো। [ভাষান্তর: ড.ইব্রাহীম মুকুল] দৈনিক ইত্তেফাক, ১১ জুন, ২০০৩

২০০৩ সালে আমেরিকা - ইরাক যুদ্ধের উপর অরুন্ধতী রায়ের ভাষন

১৯৮৮ সালের কথা। পারস্য উপসাগরে সংস্থাপিত মার্কিন মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্র দুর্ঘটনাক্রমে ইরানী বেসামরিক বিমান গুলিবিদ্ধ করে ভুপাতিত করে; এতে ২৯০ জন যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। প্রথম জর্জ বুশ তখন তার প্রেসিডেন্সিয়াল প্রচারাভিযানে দুর্ঘটনা সম্পর্কে তার মতামত চাওয়া হলে তিনি সম্পূর্ণ নির্দিধায় এবং অকপটে বলেন, “ঘটনা যাই হোক না কেন আমি কখনো যুক্তরাষ্টের পক্ষে ক্ষমা চাইবো না। বিষয়টি কি- আমি থোড়াই তোয়াক্কা করি- আসলে ঘটনাটি ঘটবে এমন, যেমন আমরা চাই”। -নব্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কি বাহারী প্রবচন।

তারপর যুক্তরাষ্ট্র আক্রমন করল ইরাক। নিউইয়র্ক টাইমস/সিবিএস নিউজ জরিপে বলা হলো ৪২% মার্কিনী বিশ্বাস করে সাদ্দাম হোসেন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগর আক্রমণের জন্য সরাসরি দায়ী এবং এবিসি সংবাদ জরিপ মতে ৫২% মার্কিনী বিশ্বাস করে সাদ্দাম হোসেন প্রত্যক্ষভবে ‘আল কায়েদা’- কে সমর্থন প্রদান করেছিল। অথচ এ ধরনের কোন মতামতই প্রমান -নির্ভরশীল নয়; কারন কোন প্রমাণই উপস্থিত নেই এ সবই মার্কিন কর্পোরেট মিডিয়া প্রচারিত পরোক্ষ উস্কানি, ইশারা এবং মিথ্যার ফুলঝুরির উপর প্রতিষ্ঠিত। এই মিডিয়া অন্যভাবে ফ্রী প্রেস হিসাবে পরিচিত যা সমসাময়িক মার্কিন গণতন্ত্রের ফাঁপা স্তম্ভ ছাড়া আর কিছু নয়।

ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পক্ষে জনমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বহুস্তর বিশিষ্ট মিথ্যার উপাখ্যান এবং প্রবঞ্চনার মাধ্যমে যা সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন স্বয়ং মার্কিন সরকার এবং বিশস্ততার সঙ্গে সম্প্রসারিত করে মার্কিন কর্পোরেট মিডিয়া।

ইরাক এবং ‘আল-কায়েদা’-এর যোগসূত্রের কাহিনী আবিষ্কার ছাড়াও ইরাকের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে এ জাতীয় প্রবল উন্মাদনা তো তৈরীই ছিল। জর্জ বুশ এ পর্যন্তই বলেছিলেন, বরং ইরাক আক্রমন না করাই হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আত্মঘাতীমূলক। আমরা পুনরায় প্রত্যক্ষ করলাম এমন এক মস্তিষ্কবিকৃত ভ্রান্ত ধারণা যে একটি অনাহারক্লিষ্ট, বোমাক্রান্ত এবং অবরুদ্ধ দেশ সর্বশক্তিমান যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেবে। কিউবা, নিকারাগুয়া, লিবিয়া, গ্রানাডা এবং পানামার পর সম্প্রতি ইরাক এই তালিকার একমাত্র দেশ। কিন্তু এবার সাধারণ মানের প্রতিবেশীসুলভ উন্মাদনা নয়; বরং এবারের উন্মাদনায় রয়েছে মতলব।

ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হলো, যুদ্ধে জয়ী হলো যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু গণ বিধ্বংসী অস্ত্র (WMD or Weapon of Mass distraction) পাওয়া গেল না, একটিও না। সম্ভবত সেগুলো আবিষ্কারের আগেই মাটির নিচে পুঁতে ফেলা হয়েছিল। এখন সম্ভবত আমাদের জন্য একটা ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া আরো কঠিন যে সাদ্দাম হোসেন কেন সেগুলো ব্যবহার করলো না যখন তার দেশ আক্রান্ত হচ্ছিল।  




অবশ্য কোন উত্তরই পাওয়া যাবে না। খাঁটি বিশ্বাসীরা অবশ্য উত্তর খুঁজবেন অস্পষ্ট এবং ঝাপসা টিভি প্রতিবেদনে প্রদর্শিত পুরানো গুদামের কয়েক ব্যারেল নিষিদ্ধ রাসায়নিক থেকে। তবে সেগুলো সত্যি সত্যি রাসায়নিক কিনা, বাস্তবিকই নিষিদ্ধ কিনা কিংবা প্রাপ্ত ক্যানব্যারেল কিনা সে বিষয়ে অভিন্ন মত পাওয়া যায়নি। অবশ্য অসমর্থিত গুজব রয়েছে যে, সেখানে এক চা চামচ পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট এবং পুরানো হার্মোনিকা পাওয়া গেছে।

কিন্তু এরি মধ্যে একটি বর্বর জাতি কর্তৃক নিশ্চিহ্ন্ হলো একটি সুপ্রাচীন সভ্যতা। যারা একথা বলেন যে, ইরাকের যদি রাসানিক এবং নিউক্লিয়ার অস্ত্র না থাকে, যদি ‘আল-কায়েদা’-এর সঙ্গে সম্পর্ক না থাকে, যদি ওসামা বিন লাদেন সাদ্দাম হোসেনকে যুক্তরাষ্ট্রের সমপরিমাণ ঘৃণা করেন, তাদের উদ্দেশ্য বুশের বক্তব্য-সাদ্দাম নরঘাতী স্বৈরাচারী, কাজেই ইরাকে সরকার পরিবর্তন প্রযোজন।

চল্লিশ বৎসর আগে জন এফ কেনেডী-এর সময়ে সিআইএ বাগদাদের সরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত করে। ১৯৬৩ সালে এক সফল অভ্যুথানে ইরাকে বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসে। নতুন বাথ সরকার সিআইএ সরবরাহকৃত তালিকা অনুসারে শত শত ডাক্তার, শিক্ষক, আইনজীবী এবং বামপন্থী হিসাবে খ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিকে অপসারন করে। সমগ্র বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করা হয়। ইন্দোনোশিয়া ও পূর্ব তিমুরেও একই কায়দায় শত শত লোককে হত্যা করা হয়। কথিত আছে এই রক্তস্নান তত্ত্বাবধানে তরুণ সাদ্দামেরও ভুমিকা ছিল। ১৯৭৯ সালে বাথ পার্টির অন্তর্দ্বন্দ্বের পর সাদ্দাম হোসেন ইরাকের প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৮০ সালের এপ্রিলে তিনি যখন শিয়াদের হত্যা করছিলেন, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ঝিগনিউ ব্রিঝিনস্কী ঘোষনা দিলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরাকের মৌলিক স্বার্থের কোন অসামঞ্জস্য দেখি না’। ওয়াশিংটন এবং লন্ডন গোপনে এবং প্রকশ্যে সাদ্দাম হোসেনকে সমর্থন দিলেন। তারা তাকে অর্থ দিলেন, অস্ত্র দিলেন এবং দ্বৈত ব্যবহারোপয়োগী গণ বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরীর উপকরণ সরবরাহ করলেন। সার্বিকভাবে তারা তার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ালো। ৮ বৎসর স্থায়ী ইরান যুদ্ধ এবং ৮৮ সালে কুর্দিদের উপর গ্যাস প্রয়োগকেও তারা সমর্থন দিলো, এখন ১৪ বৎসর পর সেই অপরাধ পুনঃ উত্তপ্ত করা হলো এবং ইরাক আক্রমণের যৌক্তিকতা হিসাবে ব্যবহৃত হলো। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পর বসরায় শিয়াদের উত্থানকে তারা প্ররোচিত করলো এবং সাদ্দামের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। কিন্তু সাদ্দাম সেই বিদ্রোহ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিলো এবং হাজার হাজার লোককে হত্যা করলো প্রতিহিংসার আগুনে পুড়িয়ে। 


এখানে বিচার্য বিষয় হলো যদ্ধদ সাদ্দাম হোসেন দুষ্কর্মের হোতা হন, তবে যারা তাকে সমর্থন যুগিয়েছেন, নিশ্চয়ই তাদের অন্তত যুদ্ধাপরাধের বিচার হওয়া উচিত। কেন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সেই সমস্ত কুখ্যাত নারী বা পুরুষ মুখ গুলো আবশ্যক ব্যক্তি তালিকায় থাকবে না, কারণ সাম্রাজ্যবাদে এসব কোন বিষয়ই নয়। আমাদেরকে বলা হচ্ছে এ সবই অতীত, সাদ্দাম হোসেন একটা দানব যাকে অবশ্যই থামাতে হবে এবং একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই তাকে থামাতে পারে। অতীতের শয়তানী পাপ এবং ভবিষ্যতের একটা মন্দ পরিকল্পনা থেকে বর্তমানের জরুরী নৈতিকতার অজুহাতে ব্যবহারের এটা একটা কার্যকর কৌশল। ইন্দোনেশিয়া, পানামা, নিকারাগুয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, তালিকা বেড়েই চলেছে। মিশর, সৌদি আরব, তুরস্ক, পাকিস্তান ও মধ্য এশিয়ান প্রজাতন্ত্র সমূহেও অশুভ সরকার ভর করার প্রস্তুতি চলছে ঠিক এখনি। মার্কিন এটর্নী জেনারেল জন এসক্রফট সম্প্রতি ঘোষণা করেন, মার্কিন স্বাধীনতা স্বয়ং বিধাতার দান, কোন সরকার বা দালিলিক মঞ্জুরী নয়। বিধাতা যখন হাতের মুঠোয়, তখন জাতিসংঘের তোয়াক্কা করার কি আছে? সুতরাং আমরা বিশ্ববাসী স্বর্গ থেকে প্রাপ্ত ম্যান্ডেটের অদিকারী এক সাম্রাজ্যের মুখোমুখি। আমরা মুখোমুখি এমন এক সাম্রাজ্যের যার অধিকার রয়েছে স্বেচ্ছায় যুদ্ধে যাওয়ার, যার অধিকার রয়েছে মানুষকে ধর্মীয় মৌলবাদ, কলুষিত আদর্শ, স্বৈরাচার, দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার। এই সাম্রাজ্য এগিয়ে চলছে এবং গণতন্ত্র চোরাগুপ্তা পথে যুদ্ধের জন্য মরিয়া হয়ে আছে। আপনার বাড়ীর দরজায় এখন গনতন্ত্র হাজির। এই নতুন পণ্য, সদ্য গুলানো রাজকীয় গণতন্ত্রের (গরম করুন, তেল দিন এবং বোমা মারুন) সুবিধা জনগণ মৃত্যুর মত সামান্য মূল্যে পেতে পারেন। কিন্তু সম্ভবত নিগ্রো বা পূর্ব এশিয়ার অধিবাসিগণ প্রকৃত মানুষ নন, সম্ভবত আমদের মৃত্যুও প্রকৃত মৃত্যু হিসাবে গণ্য হবার নয়, আমাদের ইতিহাসও প্রকৃত ইতিহাস হবার মত নয়। ইতিহাস হলো বিগত কয়েক মাসের ইতিহাস যখন পথিবী প্রত্যক্ষ করলো টিভিতে সরাসরি প্রচারিত যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইরাক আক্রমণ ও দখল। ওসামা বিন লাদেন এবং আফগানিস্তানে তালেবান যেভাবে মিলিয়ে গেলো, সেভাবে অদৃশ্য হয়ে গেলো সাদ্দামের সরকার যাকে বিশ্লেষকগণ আখ্যায়িত করেেলন- ‘ক্ষমতার শূন্যতা’ হিসেবে। যেসব নগরী অবরুদ্ধ ছিল, দিনের পর দিন খাদ্য বিহীন, পানি বিহীন, বিদ্যুৎ বিহীন ছিল, যেসব নগরীতে নির্বিচারে বোমা বর্ষিত হয়। সেখানে এক দশকের অধিক সময় ধরে জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা আরোপিত থাকায় জনগণ ছিল অনাহারে এবং দারিদ্র্যপীড়িত, সে সব জনপদ আকস্মিকভাবে হয়ে পড়লো নগর প্রশাসন বিহীন। ৭০০০ বৎসরের পুরোন সভ্যতা পর্যবসিত হলো অরাজকতায়-বিশৃঙ্খলায়।

দোকান, অফিস, হোটেল, হাসপাতালে লুট হলো, মার্কিন-বৃটিশ সেনারা পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো। তারা বললো, এ বিষয় তাদের প্রতি কিছু করার নির্দেশ নেই। কার্যত তাদের প্রতি নির্দেশ ছিল শুধু মানুষ মারার, তাদেরকে রক্ষা করার নয়। তাদের অগ্রাধিকার করণীয় পরিষ্কার ছিল। ইরাকীদের নিরাপত্তা-নিশ্চিতা তাদের কাজ ছিল না। ইরাকের অবকাঠামো যেটুকু অবশিষ্ট ছিল, তা রক্ষা করা মোটেই তাদের কাজ নয়। ইরাক আক্রমনের পূর্ব থেকেই তাদের কাজ স্থিরকৃত ছিল ইরাকের তেলক্ষেত্র রক্ষা করার মধ্যে।

সিএনএন এবং বিবিসি বার বার প্রচার করে ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। টিভি, প্রতিবেদক, সেনাবাহিনী এবং সরকারী মুখপাত্র এই গর্হিত কাজকে স্বৈরতন্ত্রের প্রতি ‘মুক্ত মানুষে’র উষ্মা প্রকাশ হিসাবে চিত্রিত করলেন। মার্কিন প্রতরিক্ষা সচিব ডোনাল্ড রামসফেল্ড বলেন, এটা স্বাধীনতা, মুক্ত মানুষ অপরাধ করার জন্য স্বাধীন, তারা ভুল করে এবং খারাপ কাজ করে। কেউ কি জানে যে  ডোনাল্ড রামসফেল্ড ছিলেন একজন নৈরাজ্যবাদী ? আমি বিস্মিত, রডনি কিং কে প্রহার করার পর লস  এঞ্জেলসের দাঙ্গার সময়ও তিনি কি একই মত পোষন করতেন ? বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে বন্দী দু'মিলিয়ন লোকের স্বাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তি সম্পর্কেও কি তিনি তার থিসিসে বিশ্বাসী কি ? পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী স্বাধীন দেশে সবচেয়ে বেশী বন্দী ? বিষয়টির উপকারিতা সম্পর্কে কি তিনি অফ্রিকান-আমেরিকানদের সঙ্গে কথা বলবেন যাদের ২৮% লোক তাদের প্রাপ্ত বয়ষ্ক জীবনের কিছু অংশ জেলে কাটাবেন? তিনি কি ব্যাখ্যা করবেন কেন তিনি এমন এক জন প্রেসিডেন্টের অধীনে কাজ করেন যিনি টেক্সাসের গভর্নর থাকাকালীন ১৫২ টি প্রানদন্ড কার্যকর করেন?

ইরাক যুদ্ধ শুরুর আগে ১৬টি গুররুত্বপূর্ণ অবস্থান রক্ষা করার জন্য The Office of Reconstruction & Humanitarian Assistance (ORHA) পেন্টাগনে একশটি তালিকা পাঠিয়েছিল। জাতীয় যাদুঘর ছিল তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে। তদসত্ত্বেও এটা শুধু লুট করা হয়নি, ধ্বংস করা হয়। জাদুঘরটি ছিল প্রাচীন সংস্কৃতির ঐতিহ্য। আজ আমরা যেই ইরাককে জানি, তা ছিল মেসোপোটেমিয়ার নদী বিধৌত ভূমিখন্ড। যেই সভ্যতা ফোরাত এবং ইউপ্রেটিস নদী তিরে গড়ে উঠেছিল, সেই সভ্যতার কীর্তি হলো বিশ্বের প্রথম লেক, প্রথম ক্যালেন্ডার, প্রথম নগরী, প্রথম লাইব্রেরী এবং হ্যাঁ বিশ্বের প্রথম গণতন্ত্র। ব্যাবিলনের রাজা হামবুরাবি সর্বপ্রথম নাগরিকদের জন্য সমাজ জীবনের উপর আইন প্রণয়ন করেন। এই আইনে পরিত্যক্ত নারী, গণিকা, ক্রীতদাস এবং এমন কি প্রাণীদের অধিকারও লিপিবদ্ধ করা হয়। হামরাবি প্রণীত আইনকে শুধু বৈধতার জন্ম হিসাবেই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়নি, বরং সামাজিক ইনসাফের ধারনা ও উপলব্ধি হিসাবেও গণ্য করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র তার এই অন্যায্য যুদ্ধের জন্য কম উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে পারলো না এবং ইনসাফের প্রতি অসম্ভব অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করলো।


অদ্ধকারের যুবরাজ রামসফেন্ড লুটপাটের সময় পেন্টগন ব্রিফিং এ তার অনুগত মিডিয়া বাহিনীকে ব্যবহার করেন। টিভিতে দেখা গেল বার বার একই চিত্র, ফুলদানি নিয়ে কয়েকটি ভবন থেকে কতিপয় ব্যক্তির হাঁটা-চলা, অন্তত বিশবার এবং আপনি বলবেন- ও খোদা! সেখানে কি এত ফুলদানি ছিল এটা কি সম্ভব যে সমগ্র দেশে অত ফুলদানি আছে।

হার্লেমের দরিদ্রদের পক্ষে কি মেট্রোপলিটন জাদুঘর লুট করা শোভন। এটা কি সানন্দে অভিনন্দনযোগ্য? তেল মন্ত্রণালয় রক্ষা করার অবস্থান ছিল ORHA কর্তৃক চিহ্নিত ১৬টি তালিকার ১৬ তম অবস্থানে। একমাত্র এটাকেই রক্ষা করা হয়েছিল। সম্ভবত দখলদার সেনারা ভেবেছিল মুসলমান দেশে উল্টোদিক থেকে পড়তে হয় কিনা? টিভি আমাদেরকে জানালো, ইরাককে মুক্ত করা হয়েছে এবং ধন্যবাদ বুশ-ব্লেয়ার, ২১ শতকের নেতৃস্থানীয় নারীবাদী ব্যক্তিত্ব, আফগানিস্তানও নারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়ার পথে। বস্তুতঃ ইরাকের অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত, খাদ্য নিঃশেষিত, জনগন অভুক্ত থাকার প্রান্তসীমায় উপনীত, শিয়া-সুন্নীদের মধ্যে সিভিল ওয়ার ঘটতে যাচ্ছে। এরইমধ্যে আফগানিস্তানও তালেবান পর্ব অরাজকতার পথে অগ্রসরমান হচ্ছে এবং দেশটিও প্রতিদ্বন্দ্বী যুদ্ধবাজদের দ্বারা বিভাজিত হচ্ছে।

এভাবে উৎসাহিত হয়ে ২রা মে বুশ ২০০৪ প্রচারাভিযানে নেমেছেন চুড়ান্তভাবে মার্র্কিন প্রেসিডেন্ট নিবাচিত হওয়ার জন্য। প্রচারাভিযানাটি ছিল ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম মিলিটারী জেট বিমান উড্ডয়ন যা সমুদ্র তীরে নোঙ্গর করা বিমানবাহী রণতরী আব্রাহাম লিস্কনে অবতরণ করে, এসোসিয়েটেড প্রেসের মতে, প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ স্বীকার করেন যে বিশাল জাহাজটি এমন একটি অবস্থানে রাখা ছিল যাতে সান দিয়াগো উপকূলরেখার পরিবর্তে পটভূমি হিসাবে সমুদ্রসহ বুশের ভাষনের জন্য যথার্থ টিভি এঙ্গল পাওয়া যায়। বুশ যিনি কখনো সামরিক বাহিনীতে ছিলেন না, মিলিটারী জ্যাকেট, কমবেট বুট এবং বৈমানিকের গগলস পরিহিত আকর্ষণীয় পোশাকে ককপিট থেকে বেরিয়ে আসলেন। উৎফুল্ল সেনাদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ইরাক যুদ্ধ বিজয় ঘোষণা করলেন। তিনি সতর্কতার সাথে বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এটা প্রাথম জয়। এভাবে চলতেই থাকবে। সরাসরি বিজয় ঘোষণা এড়িয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারন জেনেভা কনভেনশন অনুসারে বিজয়ী সেনারা দখলদার হিসাবে পরিগণিত হয়। আর বৃটিশ প্রশাসন দখলদারের দায় স্বীয় কাঁধে নিতে নারাজ। এদিকে যতই ২০০৪- নির্বাচন এগুচ্ছে, ততই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আরো একটি জয় প্রদর্শনের প্রয়োজন জরুরী হয়ে দেখা দিচ্ছে আন্দোলিত ভোটারদেরকে প্রলুব্ধ করার জন্য। এক্ষেত্রে সিরিয়া বলী হওয়ার জন্য মেদবহুল হয়ে উঠছে। বৃদ্ধ নাৎসী হার্মান গোয়েরিং বলেন-জনগণকে সবসময়ই নেতাদের দর-কষাকষিতে আনা যায়-যা আপনাকে করতে হবে, তা হলো তাদেরকে বলতে হবে যে আপনারা আক্রান্ত হতে যাচ্ছেন এবং শান্তিবাদীদের দোষারোপ করতে হবে এই বলে যে, যে তাদের দেশপ্রেম নেই এবং তারা দেশকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। যে কোন দেশে এই প্রচারণা কাজ করে।

তিনি যথার্থই বলেছেন। এটা খুবই সহজ। বুশ সরকার এর উপরই ভরসা রাখে। নির্বাচনী প্রচার এবং যুদ্ধ, গণতন্ত্র এবং স্বল্পসংখ্যক ব্যক্তির শাসনের প্রভেদ দ্রত বদ্ধ হয়ে আসছে। প্রচারণা যুদ্ধের সতর্কবাণী হলো যুক্তরাষ্ট্র নিঃশেষ হবে না, টিকে থাকবে। এটা ভোটারের আস্থা আন্দোলিত করে। কিন্তু যুদ্ধে মার্কিন সৈন্যের মৃত্যুর সমস্যা কম-বেশী আঘাতপ্রাপ্ত।

অপারেশন “Shock & Awe”-এর প্রাক্কালে এক মিডিয়া ব্রিফিং-এ জেনারেল টমী ফ্রাঙ্ক ঘোষানা দিলেন-এই অভিযান ইতিহাসের অন্য কোনটির মত নয়। সম্ভবত তিনি যথার্থই বলেছেন। আমি কোন সমর বিষয়ক ঐতিহাসিক নই, কিন্তু সর্বশেষ কখন এরকম একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল?

সত্যি সেটা ইতিহাসে বিরলই হবে যে, জাতিসংঘ কুটনীতির দাপ্তরিক কর্তত্ব (অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও অস্ত্র পরিদর্শন) খাটিয়ে ইরাককে হাঁটু পর্যন্ত নামানো, জনগণকে অনাহারী রাখা, অর্ধ মিলিয়ন শিশুর মৃত্যু, মারাতœকভাব অবকাঠামো ধ্বংস এবং অধিকাংশ অস্ত্রশস্ত্রও মারাতœকভাবে ধ্বংস হয়েছে মর্মে নিশ্চিত হওয়ার পর, Coalition of the Willing কাপরুষোচিত ভাবে ইরাকে আক্রমনকারী বাহিনী পাঠায়।

ইরাকীদের মুক্তির জন্য আক্রমণ? আমি তা মনে করি না। এ যুদ্ধ এমন একটি যুদ্ধ যে, ‘আসুন দৌড় প্রতিযোগিতায় নামি, তবে তার আগে আপনার হাঁটু ভেঙ্গে ফেলতে দিন’। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত ইরাক যুদ্ধের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রস্তাবনায় অসম্মতি জ্ঞাপনকারী ফ্রান্স, জার্মান এবং রাশিয়ান সরকার, যুদ্ধ শুরু হওয়া মাত্র একে-অপরের সঙ্গে এমন প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলো যে তারা কে কতটা চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র যেন যুদ্ধে জয়ী হয়।

প্রেসিডেন্ট জেক সিরাক বৃটিশ আমেরিকান বিমান বাহিনীকে তাদের বিমান সীমা ব্যবহারের সুযোগ প্রদান করলো। জার্মনীতে মার্কিন সামরিক স্থাপনা সমুহকে কাজ শুরু করার জন্য খুলে দেওয়া হলো। জার্মন পররষ্ট মন্ত্রী জোসস্কা ফিসার জনসমক্ষে সাদ্দাম হোসেন সরকারের দ্রুত পতন-এর ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন। একই আশাবাদ ব্যক্ত করলেন ভøাদিমির পতিনও। আক্রমণকারীদের দলে অতি দ্রুত অবস্থান নেয়ার পুর্বে ইরাককে নিরস্ত্রকরণে এই সরকারগুলোই বিভক্ত হয়ে পড়ে। ধ্বংসের সঙ্গে শরিক হওয়ার ইচ্ছাবাদ ব্যক্ত করা ছাড়াও তারা আশাবাদী হলো ইরাকের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ-পূর্ব তেল চুক্তিগুলোর প্রতি সাম্রজ্যবাদী শক্তি সম্মান প্রদর্শন করবে। কেবল কলাকৌশল জানে না এমন কেউ আশা করতে পারে পুরানো সাম্রাজ্যবাদীরা তা করবে না।

যুদ্ধ বিতর্কের সময়ে জাতিসংঘে প্রদত্ত রোমাঞ্চকর এবং দাম্ভিক উচ্চরব নৈতিক ভাষেণের বিষয়টি পাশ কাটালে, পরিণামে জনগণের বিরোধিতা সত্ত্বেও সন্ধিক্ষণে পশ্চিমা সরকারসমূহের একজোট হওয়ার ব্যাপরটি ছিল অভিভূত হওয়ার মত।

যখন তুর্কী সরকার তাদের ৯০ শতাংশ জনগণের মতামতের নিকট নতী স্বীকার করলো এবং তুরস্কের মাটি ব্যবহারের বিনিময়ে রক্তমুল্যের বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো, তখন তুরস্কের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির অভাবের অভিযোগ উত্থাপিত হলো। আন্তর্জাতিক গ্যালাপ জরিপ মতে, এককভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার বিষয়ে কোন ইউরোপিয়ান দেশের ১১ শতাংশের উপরে সমর্থন ছিল না। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মতামত উপেক্ষা এবং অবৈধ আক্রমন সমর্থন করার জন্য ইংল্যান্ড, ইঁটালী, স্পেন, হাঙ্গেরী এবং পর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশের সরকার সমূহের প্রশংসা করা হলো। ধারণা করা হচ্ছে সম্ভবত সেটাই গণতান্ত্রিক রীনি-নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য পূর্ণ। এটাকে কি বলা যায়? নব্য গণতন্ত্র (বৃটেনের New Labour -এর মত)?

আক্রমণের কয়েক সপ্তাহ পূর্বে ১৫ই ফেব্রুয়ারী সরকারগুলো কর্তৃক প্রদর্শিত অবিবেচক পণ্য বিকিকিনির বিপরীতে বিশ্ব প্রত্যক্ষ করলো প্রথমবারের মত ৫টি মহাদেশে যুদ্ধের বিরুদ্ধে নৈতিকতার স্বপক্ষে ১০ মিলিয়নের অধিক লোকের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয়-দর্শনীয় মিছিল। আমি নিশ্চিত, আপনাদের অনেকেই সেখানে অংশ গ্রহণ করেছেন।

তাদেরকে এবং আমাদেরেকে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে অবজ্ঞা করা হয়। যুদ্ধ-বিরোধী প্রতিবাদ সুম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে প্রেসিডেন্ট বুশ বলেন-‘এটা যেন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মত, ঠিক একটা ফোকাস গ্রুপের উপর ভিত্তি করে আমি পলিসি সিদ্ধন্ত নিতে যাচ্ছি। একজন নেতার ভূমিকা হলো নিরাপত্তা বিষয়ে পলিসি সিদ্ধান্ত গ্রহন করা, এক্ষেত্রে জনগনের নিরাপত্তা’।

আধুনিক বিশ্বের পবিত্র গাভী-গণতন্ত্র, আজ সংকটাপন্ন, এই সংকট খুবই গভীর। গণতন্ত্রের নামেই সকল প্রকার ক্ষতি সাধন করা হয়। গণতন্ত্র অন্তঃসারশূন্য ফাঁপা বুলি থেকে সামান্য বেশি। এটা এমন কিছু হতে পারে যা আপনি চাইবেন। গণতন্ত্র মুক্ত বিশ্বের বীরাঙ্গনা যে পোশাক খুলতে পারে, পরতে পারে, সকল স্বাদ পুরণ করতে প্রস্তুত, যাকে চাইলেই ব্যবহার বা অপব্যবহার করা যায়।

ঠিক ১৯৮০ সাল নাগাদ গণতন্ত্র প্রকৃতপক্ষে সামাজিক ইনসাফ কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু আধুনিক গণতন্ত্র নব্য উদার পূঁজিবাদীদের পক্ষে সেসব ধ্বংস করার কৌশল আয়ত্ত করার লক্ষ্যে বেরিয়ে পড়েছে। তারা স্বাধীন বিচার বিভাগ, স্বাধীন সংবাদপত্র, স্বাধীন সংসদ-গণতন্ত্রের এসব হাতিয়ার সমূহ প্রবিষ্ট করানো এবং সেগুলোকে নিজেদের মতলবে রূপান্তরের কৌশল আয়ত্ত করেছে। কর্পোরেট বিশ্বায়ন প্রকল্প সকল বিধি-বিধান চুর্ণ করে ফেলেছে। অবাধ নির্বচন, স্বাধীন সংবাদপত্র স্বাধীন এবং বিচার ব্যবস্থা খুব কমই অর্থবহ হয়ে উঠে যখন মুক্ত বাজার সেগুলোকে বিক্রয় যোগ্য পণ্যে রূপান্তর করে সর্বোচ্চ দরদাতাদের নিকট সহজলভ্য করে তোলে।

গণতন্ত্র কতটা অচল-অবরুদ্ধ এটা বোঝার জন্য আমাদের কতিপয় সমসাময়িক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করার মাধ্যমে ধারণা পাওয়া সম্ভব। সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র ভারত (এ সম্পর্কে আমি খানিকটা লিখেছি, তই আজ আর এ বিষয়ে বলছি না), সবচেয়ে আকর্ষণীয় দক্ষিণ আফ্রিকা, সবচেয়ে ক্ষমতাশালী যুক্তরাষ্ট্র এবং সবগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশী শিক্ষমুলক হলো সেসব পরিকল্পনা সমুহ যেগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে বিশ্বের নবীনতম ইরাককে অগ্রগামী করার জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ এবং ঔপনিবেশবাদের মাধ্যমে শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু কর্তৃক কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠদের উপর বর্বর রাজত্বের ৩০০ বছর পর ১৯৯৪ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র ক্ষমতাসীন হলো। এটা দৃশ্যমান অর্জন। ক্ষমতাসীন হওয়ার দু’বছরের মধ্যে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস কাঠামোতে বিন্যাস, প্রাইভেটাইজেশন এবং উদারীকরণের বিশাল কর্মসূচীর অনুসরণে শুধুমাত্র অদৃশ্যভাবে ধনী-দারিদ্রের ব্যবধান সৃষ্টি হলো। এক মিলিয়নেরও অধিক সংখ্যক লোক চাকরি হারালো। বিদ্যুৎ পানি এবং গৃহায়ণের মত মৌলিক সেবাগুলো কর্পোরেশনে রূপান্তরের ফলে ১০ মিলিয়ন দক্ষিন আফ্রিকান যা জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ, পানি এবং বিদ্যুৎ থেকে বিচ্যুত হলো, দু মিলিয়ন তাদের বাসস্থান থেকে বিতাড়িত হলো।

ইত্যবসরে, ঐতিহাসিকভাবে শতাব্দীকালের অমানবিক শোষণের সুবিধাভোগী স্বল্প সংখ্যক শেতাঙ্গ পূর্বের  তুলনায় অধিক নিরাপদ হলো। তারা সে দেশের ভূমি, খামার, কারখানা এবং পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করলো। তাদের জন্য বর্ণবাদ থেকে নব্য উদারতাবাদে উত্তরণ যেন ঘাসের বিরক্তির কারন ঘটায় মাত্র। আসলে এটা হলো পরিচ্ছন্ন বিবেকে বর্ণবাদ যা গণতন্ত্রের নামে পরিচিত হয়।

গণতন্ত্রের জন্য সাম্রাজ্যবাদের কোমল উক্তি হলো নব্য উদার পুঁজিবাদ। প্রথম বিশ্বের দেশগুলোতেও গণতন্ত্রের মেশিন গুলো কার্যকর ভাবে ধ্বংস প্রাপ্ত। রাজনীতিক, মিডিয়া, ব্যক্তিবর্গ, বিচারপতিগণ, ক্ষমতাশালী কর্পোরেট এবং সরকারী কর্মকর্তাগণ এমনভাবে একটি গুপ্ত কাঠামোতে সংস্থাপিত থাকে যা সংবিধান, কোর্ট, সংসদ এবং প্রশাসনের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর করে ফেলে এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বাধীন মিডিয়া যা সংসদীয় গণতন্ত্রের সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরী করে এ অবস্থাটা অস্পষ্টও নয়, আবার বিশদও নয়।

উদাহরণ স্বরূপ, ইটালিয়ান প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকনি প্রাধান প্রধান ইটালিয়ান সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, টিভি চ্যানেল এবং প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের স্বার্থ সংরক্ষণ করেন। ফাইনান্সিয়াল টাইমসের রিপোর্ট করে যে তিনি ইটালিয়ান টিভি প্রদর্শনের ৯০% নিয়ন্ত্রণ করেন। সম্প্রতি একটি ঘুষের অভিযোগের বিচারের সময় তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বামপন্থীদের কাছ থেকে ইটালীকে রক্ষা করতে সমর্থ হন। তিনি বলেন, ‘ত্যাগের জন্য আর কতকাল আমাকে বেঁচে থাকতে হবে’? যা অবশিষ্ট ১০ ভাগ টিভি দর্শকের জন্য ছিল অশুভ লক্ষণ। স্বাধীন বক্তৃতার মূল্য কত? কাদের জন্য স্বাধীন বক্তৃতা?

যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থাটা আরো জটিল। দেশের সবচেয়ে বড় রেডিও ষ্টেশনের মালিক হলো ক্লিয়ার চ্যানেল ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইনকর্পোরেটেড যা বারোশ’র অধিক চ্যানেল পরিচালনা করে এবং বাজারের নয় ভাগ ধারণ করে। প্রতিষ্ঠানের কর্মাধ্যক্ষ শত শত হাজার ডলার প্রদান করে বুশের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে। যখন শত শত হাজার মার্কিন নাগরিক ইরাক যুদ্ধের-বিরুদ্ধে রাজপথে অবস্থান নেয়, তখন ক্লিয়ার চ্যানেল দেশব্যাপী যুদ্ধের পক্ষে দেশপ্রেমিক ‘র‌্যালিজ ফর আমেরিকা’-এর আয়োজন করে। এটা তার রেডিও স্টেশন গুলোকে প্রচরে কাজে লাগায় এবং তার প্রতিনিধি পাঠায় তথ্য সংগহে যেন সেগুলো জনগুরুত্বপূর্ণ। সম্মতি উৎপাদনের সময় জায়গা করে দিয়েছে বার্তা উৎপাদনের সময়কে। শীঘ্রই মিডিয়া বার্তা কক্ষ মিথ্যা বর্ণনা পরিত্যাগ করে এবং সাংবাদিকের পরিবর্তে নাট্য পরিচালক নিয়োগ করা শুরু করে। যেহেতু মার্কিন প্রদর্শনী ব্যবসা (শো-বিজনেস) ক্রমে ক্রমে ভয়ংকর এবং যুদ্ধ-সদৃশ হয়ে ওঠছে, মার্কিন যুদ্ধ ক্রমে ক্রমে হয়ে ওঠছে প্রদর্শনী ব্যবসার (শো-বিজনেস) মত, সেহেতু কতগুলো আকর্ষণীয় পরিবর্তন ঘটছে। ডিজাইনার যিনি কাতারে ২৫০,০০০ ডলার মূল্যমানের সেট তৈরী করেছেন যেখান থেকে জেনারেল টমী ফ্রান্ক Operation Shock and Awe নিউজ কভারেজ এর মঞ্চ-আয়োজন, তা ডিজনী, এমজিএম এবং গুড মর্নিং আমেরিকার জন্যও সেট নির্মান করেছে।

এটা সত্যি নিষ্ঠুর নিয়তি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে মতামতের স্বাধীনতার সর্বাপেক্ষা উৎসাহী এবং ঘোষিত রক্ষাকরী এবং (অতি সম্প্রতি নাগাদ) যার এই স্বাধীনতা রক্ষায় রয়েছে পূর্ণাঙ্গ আইন, এতটাই সীমিত জায়গা জুড়ে আছে যেখানে স্বাধীনতা প্রকাশ করা যায়। যুক্তরাষ্ট্র মতামতের স্বাধীনতার আইনগত এবং ধারণাগত প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত হৈ চৈ অদ্ভুত পেঁচানো পথে আড়াল করে ফেলে স্বাধীনতার প্রকৃত প্রয়োগের সম্ভবনার দ্রুত ভাঙ্গন প্রক্রিয়াকে। AOL,-Time Warner Disney, Viacom, News Corporations -এর মত কতগুলো বৃহৎ কর্পোরেশন বহুলাংশে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ এবং বিনোদন শিল্প নিয়ন্ত্রণ করে। এসব কর্পোরেশনের প্রত্যেকের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে টিভি ষ্টেশন, ফিল্ম ষ্টুডিও, রেকর্ড কোম্পানী এবং প্রকাশনা সংস্থাসমূহ। এর বাইরে যাওয়ার দ্বার কার্যকর ভাবে বন্ধ।

যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া সাম্রাজ্য একটি গোষ্ঠী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। কলিন পাওয়েলের পুত্র ফেডারেল কমুনিকেশনের চেয়ারম্যান মাইকেল পাওয়েল কমুনিকেশন শিল্পের আরো বিরাষ্ট্রীয়করণের প্রস্তাব রাখেন যা এই নিয়ন্ত্রণ আরো সুদৃঢ় করবে। সুতরাং এখানেই বিশ্বের বৃহৎ গণতন্ত্র পরিচালিত হচ্ছে এমন এক ব্যক্তি কর্তৃক যিনি আইনসম্মতভাবে নির্বাচিত হননি। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্ট তাকে এই পদে আসীন করেছে। মার্কিন জনগণ এই ভেজাল রাষ্ট্রপতি পদের জন্য কত মূল্য প্রদান করেছেন?

বুশের শাসনের তিন বৎসরের মেয়াদে আমেরিকান অর্থনীতিতে দু মিলিয়নের অধিক সংখ্যক লোক চাকরি হারায়। বৈদেশিক সামরিক ব্যয়, ধনীদেরকে প্রদত্ত কর্পোরেট কল্যাণ এবং ট্যাক্স সুবিধা মার্কিন শিক্ষা ব্যবস্থাকে আর্থিক সংকটে ফেলে। National Council of State Legislatures -এর জরিপ মতে, ২০০২ সালে রাজ্যগুলো পাবলিক সার্ভিস, স্বাস্থ্য খাত, কল্যাণ সুবিধা এবং শিক্ষা খাতে ৪৯ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ হ্রাস করে। এ বৎসরও তারা আরো ২৫.৭ বিলিয়ন ডলার হ্রাসের পরিকল্পনা করেছে। সর্বমোট ৭৫ বিলিয়ন ডলার। ইরাক যুদ্ধের জন্য কংগ্রেসের নিকট বুশের প্রাথমিক বাজেট চাহিদা ছিল ৮০ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং যুদ্ধের জন্য অর্থের যোগানদাতা কে? দরিদ্র মার্কিনীরা, ছাত্ররা, বেকাররা, মায়েরা, হাসপাতাল এবং গৃহে শুশ্রষারত রোগীরা, শিক্ষকরা এবং স্বাস্থ্যকমীরা এবং প্রকৃতপক্ষে কারা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল?

পুনরায় বলতে হয়, দরিদ্র মার্কিনীরা। ইরাকের তপ্ত মরুতে যে সৈন্যরা জ্বলছিল, তারা ধনীদের সন্তান-সম্ভতি ছিল না। কংগ্রেস এবং সিনেটের সকল প্রতিনিধিগণের একজন মাত্র সন্তান ইরাক যুদ্ধে অংশ নেয়। ফেডারেল পরিসংখ্যানে দৃষ্ট হয় যে আফ্রিকান-আমেরিকান সমন্বয়ে গঠিত হয় সমগ্র সশস্ত্রবাহিনীর শতকরা ২১ ভাগ এবং সেনাবাহিনীর শতকরা ২৯ ভাগ। তারা সাধারন জনসংখ্যার মাত্র শতকারা ১২ ভাগ। অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে সেনাবাহিনীতে এবং কারাগারে উচ্চ হারে আফ্রিকান-আমেরিকান প্রতিনিধিত্ব দুঃখজনক নিশ্চয়ই। সম্ভবত আমাদের একটা ইতিবাচক দৃষ্টি দেয়া উচিত এবং বিষয়টির প্রতি কার্যকর ভাবে পদক্ষেপ নেয়া সমীচীন। চরম দুবৃত্তিপূর্ণ কাজের অভিযোগে প্রায় ৪ মিলিয়ন মার্কিনী (জনসংখ্যার শতকরা ২ ভাগ) ভোটাধিকারহারা; যার ১.৪ মিলিয়ন আফ্রিকান-আমেরিকান। অর্থাৎ ভোটের বয়সের সকল কৃঞ্চাঙ্গ জনগণের শতকরা ১৩ ভাগ ভোটাদানের অধিকার বঞ্চিত।

আফ্রিকান-আমেরিকানদের জন্য মৃত্যুতে হ্যাঁ-সূচক কাজের সুযোগ থাকে। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের গবেষণায় দৃষ্ট হয় চীন, ভারতের কেরালা, শ্রীলংকা অথবা কোষ্টারিকায় জন্মগ্রহণকারী লোকদের তুলনায় দলীয়ভাবে আফ্রিকান-আমেরিকানদের গড় আয়ুষ্কাল কম বা নিম্ন মানের। হার্লেমে আফ্রিকান-আমেরিকান পুরুষদের তুলনায় বাংলাদেশী পুরুষদের ৪০ বৎসর পর্যন্ত বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেশী।

এ বৎসর মার্টিন লুথার কিং-এর ৭৪তম জন্ম দিবসে প্রেসিডেন্ট বুশ আনুষ্ঠানিক ভাবে কৃষ্ণাঙ্গ এবং ল্যাটিনীদের পক্ষে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যাঁ-সূচক কর্মসূচী ঘোষণা করেন। তিনি এটাকে বিভাজন মূলক, মন্দ এবং অসাংবিধানিক আখ্যায়িত করেন। জর্জ বুশকে নির্বাচিত করার জন্য ফ্লোরিডায় কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটার তালিকাচ্যুত করার সফল প্রচেষ্টা অবশ্যই মন্দ বা অসাংবিধানিক ছিল না। সুতরাং আমরা জানি, কে যুদ্ধের অর্থ জোগায়, আমরা জনি কে যুদ্ধ করে। কিন্তু যুদ্ধ থেকে কে সুবিধা প্রাপ্ত হয়? কে একশত বিলিয়ন ডলার মূল্যামানের পুনঃর্গঠন চুক্তি পেতে যাচ্ছে? এটা কি দরিদ্র পীড়িত এবং বেকার মার্কিনীরা পাচ্ছেন? একক মার্কিন মায়েরা পাচ্ছেন? অথবা আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ এবং ল্যাটিন সংখ্যা লঘুরা?

জর্জ বুশ আমাদেরকে আশ্বস্ত করেন যে, ইরাকী তেল ইরাকী জনগণকে ফেরত দেয়ার জন্যই ‘অপারেশন ইরাকী ফ্রীডম’। অর্থাৎ বেকটেল, সেভরণ, হ্যালিবার্টন-এর মত কর্পোরেট বহুজাতিকদের মাধ্যমে ইরাকী তেল ইরাকী জনগণকে ফেরত দেয়া। পুনরায় এটা হলো ছোট একটি বৃত্ত। একটি কর্পোরেট, সামরিক এবং সরকারী নেতৃত্বকে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

এটা বিবেচনা করুনঃ ডিফেন্স পলিসি বোর্ড সরকার নিয়োজিত গ্রুপ যা পেন্টাগণকে ডিফেন্স পলিসি সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান করে থাকে। বোর্ডের সদস্যগণ প্রতিরক্ষা বিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারী কর্তক নিয়োগপ্রাপ্ত এবং ডোনাল্ড রামসফেল্ড কর্তৃক অনুমোদিত হন। এর সভা গুলো শ্রেণী বিন্যাসিত। জনগণের বাছাইয়ের জন্য কোন তথ্য পাওয়া যায় না। ওয়াশিংটন ভিত্তিক Centre for Integrity দেখতে পায় যে ডিফেন্স পলিসি বোর্ড-এর ৩০ সদস্যের মধ্যে ৯ জনই কোম্পানীর সঙ্গে যুক্ত যাদেরকে ২০০১ এবং ২০০২ বৎসরের মধ্যে ৭৬ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের প্রতিরক্ষা চুক্তির কাজ প্রদান করা হয়। যাদের একজন নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্পোঃ জেনারেল, যিনি বিশাল আন্তর্জাতিক সংস্থা বেকটেলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। কোম্পানীর চেয়ারম্যান রিলে বেকটেল প্রেসিডেন্টের এক্সপোর্ট কাউন্সিলেরও অন্তর্ভুক্ত। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বেকটেল গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত জর্জ শুলজ হলেন ইরাক মুক্ত করার লক্ষ্যে গঠিত কমিটির উপদেষ্টা বোর্ডের চেয়ারম্যান। স্বার্থের দ্বন্দ্বের উদ্ভবের ব্যাপারে উদ্বিঘœ কিনা এই মর্মে নিউইয়র্ব টাইমস কর্তৃক জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেন ‘আমি জানি না যে বেকটেল তা থেকে বিশেষ ভাবে উপকৃত হবে। কিন্তু যদি সেখানে করার মত কাজ থাকে, তবে বেকটেলই তা করার উপযুক্ত কোম্পানী’। বেকটেলকে ইরাকে ৬৮০ মিলিয়ন ডলারের পুনর্গঠন চুক্তি প্রদান করা হয়েছে। সেন্টার ফর রিসপনসিভ পলিটিক্স-এর মতে বেকটেল ১৯৯৯-২০০০ সালের রিপাবলিকান প্রচারের অভিযনে ১.৩ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।

১৩ অক্টোবর ২০০১ এ পাস হয় ইউএসএ প্যাট্রিয়ট এ্যাক্ট যার আদলে বিশ্বব্যাপী দেশসমূহে একই ধরনের সন্ত্রাস বিরোধী বিল গৃহীত হয়। এই আইনটি প্রতিনিধি পরিষদ হাউজ অব ডিপ্রেজেটীয় ভঙ্গ কর্তৃক ৩৩৭-৭৯ সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়। নিউ ইয়র্ক টাইমস অনুসারে, অনেক আইনপ্রণেতা বলেন, আইনটির উপর বিতর্ক কিংবা এমন কি আইনটি পড়াও ছিল অসম্ভব।

Patriot Act পদ্ধতিগত স্বয়ংক্রিয় নজরদারীর সূচনা করলো। এটা ফোন এবং কম্পিউটার মনিটর করায় এর এমন ভাবে লোকজনের উপর গোয়েন্দাগিরির সুযোগ করে দিল সরকারকে যা কয়েক বৎসর পুর্বে ছিল সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এটা এফবিয়াইকে সকল সার্কুলেশন ক্রয় এবং লাইব্রেরী ব্যবহার কারীদের অন্যান্য রেকর্ডপত্র এবং বুক ষ্টোর ক্রেতাদেরকে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের অংশ সন্দেহে আটক করার ক্ষমতা প্রদান করে।

এই আইন মতামত এবং দুস্কর্মের মধ্যে ব্যবধানের প্রাচীরটা ম্লান করে ফেলে যার ফলে আইন লংঘনকারী হিসাবে নাগরিক অবাধ্যতার অভিযোগের অজুহাত সৃষ্টির সুযোগ তৈরী হয়। ইতোমধ্যে দেশে দেশে শত শত লোককে ‘আইন অমান্যকারী’ হিসাবে অনির্দষ্ট মেয়াদে আটক করা হচ্ছে। ভারতে আটকের সংখ্যা হাজার হাজার, আর ইসরাইলে ৫,০০০ ফিলিস্তিনী রয়েছে কারাঅন্তরালে। অবশ্য অনিবাসীদের আদৌ কোন অধিকার নেই। তারা শুধু নিখোঁজ হয়ে যেতে পারে যেমন চিলিতে হতো ওয়াশিংটনের পুরানো মিত্র। জেনারেল পিনোশের আমলে। এক হাজারের অধিক সংখ্যক লোককে আটক করা হয়েছে যাদের বেশীর ভাগই মুসলমান অথবা মধ্যপ্রাচ্য উদ্ভব, যাদের কেউ কেউ অবৈধ অভিবাসীও বটে। যুদ্ধের প্রকৃত আর্থিক মূল্য বহন করা ছাড়াও মার্কিন জনগণ আজ ইরাকের মুক্তির নামে নিজেদের স্বাধীনতাকে আত্মাহুতি দিচ্ছে। নিজ দেশে খাঁটি গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘন্টা বাজিয়ে বিশ্বের অপরাপর দেশে ‘নব্য গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে সাধারণ মার্কিন নাগরিকদেরকে।

ইতোমধ্যেই মুক্তির নামে ইরাককে পরিণত করা হয়েছে ধ্বংস স্তুপে। (অথবা তারা কি এর মানে চিরমুক্তি বোঝাচ্ছেন?) ওয়াল ষ্ট্রীট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, বুশ প্রশাসন মার্কিন আদলে ইরাকের অর্থনীতি পুনর্নিমাণের পরিকল্পনা করছে। ইরাকের সংবিধান পুনর্লিখিত হচ্ছে। তৈরী হচ্ছে বাণিজ্য আইন, কর আইন, এবং মেধা সম্পদ আইন এমন ভাবে যাতে এটা মার্কিন ধাঁচের পুঁজিবাদী অর্থনীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হয়।

মার্কিন এজেন্সী ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইতোমধ্যে মার্কিন কোম্পানী সমূহের নিকট হতে ইরকে সড়ক-কাঠামো নির্মাণ, পানি সরবরাহ, পাঠ্যবই বিতরণ এবং সেলফোন নেটওয়ার্ক কজে অংশ নেয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে।


 

No comments:

Post a Comment