Monday, August 19, 2024

স্কুলের বন্ধুদেরকে বিদায় অভিশাপ

 


রবীন্দ্রনাথের বিদায় অভিশাপ কয়জন পড়েছিস জনি না, তবে আমি পড়েছি, যা বুঝি তা হলো বিদায় অভিশাপ তাকেই দেয়া যায় যাকে বা যাদের গভীর ভাবে ভালবেসে তার পর বিদায় দিতে হয়। আমি তোদের বিদায় অভিশাপ দিচ্ছি। 

আমার তিনটা অধিকার তোরা হরণ করেছিস, যার কারণে আমি চলে যাচ্ছি। সবাই জানে গণতন্ত্রে মানুষের ৪টা মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা হয় যা মানবতার জন্য অপরিহার্য বলে এই তন্ত্রে বিবেচনা করা হয়। ১) ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, ২) বিশ্বাসের স্বাধীনতা ৩) মত প্রকাশের স্বাধীনতা ৪) মালিকানার স্বাধীনতা। আমাকে তোরা ১, ২, ৩, নং অধিকারে চরম ভাবে আঘাত করেছিস। দেশে গণতন্ত্র থাকলে তোদের স্পেসিফিক কয়েকজনের নামে মৌলিক অধিকার হরণের মানহানির মামলা করতাম। এ দেশে মানুষ এই চারটি মৌলিক অধিকার সম্পর্কে অস্বচ্ছ ধারণা রাখে, তাই এদেশে ততদিন গণতন্ত্র সম্ভব না যতদিন না তারা তা বুঝতে পারে।

বিপু (বাবু) ২০১৫ বা ১৬ তে আমি যখন কাজিপাড়ায় সোনালী ব্যাংকের বেগম রোকেয়া সরণী শাখায় কর্মরত ছিলাম তখন ও বললো আমাদের স্কুল গ্রুপ আছে ভাইবারে। তখন জয়েন করে বলেছিলাম কেউ মনে হয় আমাকে চিনতে পারবে না, তখন বিজু আমাকে চিনতে পারে কোন ছবি না দেখেই, আমি যার পর নাই অবাক হয়েছি, তারেক, বাবু, বিপু, ইউসুফ, আজিজ এর পর বিজু, জাফর আর তমাল আমার ঘনিষ্ঠ ছিল মনে পড়ে যায়। যা হোক বিগত ৯ বছর তোদের অনেকে কাছে পেয়ে আমার আনন্দের অন্ত ছিল না। গ্রুপে সব সময় সক্রিয় ছিলাম। বিজু গ্রুপ থেকে আলগোছে সড়ে গেছে, গ্রুপে ধর্মান্ধতা পছন্দ করে না দেখে। অবাক বিষয় হলো গ্রুপে ৪৭ জন মেম্বার হলেও মাত্র ১৩ থেকে ১৬ জন সক্রিয়, তার সাথে দেখি ৫ কি ৬ জন নীরব দর্শক, বাকিরা পুরাই নীরব। শুধু এই গ্রুপে না অন্যান্য গ্রুপেও এমন অবস্থা থেকে বুঝা যায় যে এ দেশের মানুষগুলোর মেরুদন্ড নাই, নুনুও ছোট। সব দুই ঠাপে মাল আউট কইরা জনসংখ্যা এত বৃদ্ধি করছে। ভালো মত সেক্স করতেও জানে না কিন্তু করে প্রচুর পরিমাণে বাচ্চা পয়দা করার জন্য।

আমার প্রতি তোদের অবিচার তোরা বুঝতে পারলে ভালো, না বুঝলে আরো ভালো, কিছুই যায় আসে না। তবে এক বন্ধুর বক্তব্য অনুযায়ী হিমেল ও আহমেদুল ডাক্তারিতে চান্স পেয়েছে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পত্র পেয়ে, তা যদি সত্য হয় তবে দেশের এই অবস্থায় ওদের উচিত ডাক্তারি সার্টিফিকেট গুলো ফেরত দিয়ে যেই মেধাবী ছাত্রদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে তা না পারুক, প্রকৃত মেধায় যার ডাক্তারি পড়েছে তাদের সুযোগ করে দেয়।। হিমেল ও আহমেদুলের এটিচুড সব সময় তারা এরিস্ট্রক্রেট, না জানি তারা কি, এই রকম ভাব করে থাকে সব সময়। মানে ওরা জন্ম নিয়েছেই এরিট্রক্রেট হিসেবে আর বাকিরা সব ওদের মত কুলীন না । তারেক যে ক্রিকেট স্টেডিয়াম ডিজাইন করেছে তা নৌকার আদলে (কাজের মধ্যমে তেল মারছে আরকি), এখন সরকার বদল হলে ও হয়তো নৌকাতে মাস্তুল লাগায়ে জাহাজ বানায়ে দিবে। আমাদের সেই বন্ধু গ্রুপে বলতে বলেছিল মারুফ তার মেয়েকে কো-এডুকেশনে পড়াবে না বলে অন্যত্র ভর্তি করছে অথচ তারেক এমন দেশে তার মেয়ে দুটাকে পাঠাইছে যে দেশে কু-কালচার ভরা। তারেক কখনই কোনকিছু সময় মত প্রতিবাদ করে না, সব সময় পরে বাও বুঝে দাও মারে। আজিজ, সোহেল আর আমার আলাদা গ্রুপ ছিল মেসেঞ্জারে আর হোয়াটস এ্যাপে, ওটাতে আমরা পর্ণ শেয়ার করতাম, বেশি কালেকশন ছিল আজিজের, সোহেল তাল দিতো, তবে আমার কাছে ওর রুচি খারাপ বলে মনে হয়েছে। ওর রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা আমার সাথে মিলে না। আজিজ আপাদমস্তক একটা ভালো ছেলে, সুন্দর মনের মানুষ। মুক্ত আমার গাছা বোর্ড বাজারের জমি বিক্রির বিষয়ে এক বাটপারকে ক্রেতা হিসেবে নিয়ে এসেছিল, আমি না বুঝে কম দামে জমিটা ছেড়ে দিতে চাওয়ায় তার আগ্রহের অন্ত ছিল না। পূর্বানীতে এ নিয়ে দুই বার বৈঠকও হয়েছিল। আমি পরে জেনেছি সে ওই এলাকার দালালদের সাথে চুক্তি করে ফোকটে ৩ কোটি টাকা মেরে দেওয়ার সুযোগ খুঁজছিল। মুক্ত আমাকে বাধ্য করেছিল ওই বদ লোকটাকে ২২ হাজার টাকা দিতে। মুক্তর সাথে আমার স্কুল জীবনে তেমন কোন সম্পর্ক ছিলনা। এই বয়েসে এসে জানলাম ও ফটকা বাজ একটা ছেলে। সানা’র আচরণ ও ছদ্ম ক্ষমতা প্রবণতা আমার কাছে হাস্যকর লেগেছে, এটা যদি ফৌজি আচরণ হয় তবে আমাদের আর্মিদের কি অবস্থা তা বুঝা যায়। ও সামনা সামনি কোন কথা বলে না, একে, ওকে তাকে দিয়ে বলানর চেষ্টা করে। নুরুল মাসুদকে আমার ভালো লেগেছে। ফিরোজ অসম্ভব ইমোশনাল একটা ছেলে, একবার না দুবার ও গ্রুপ ছেড়ে বের হয়ে যায়, একবার আমার সাথে ঝগড়া করে। তবে আমি হাসপাতালে শুনে ও চলে এসেছিল আমাকে দেখতে। ফিরোজের ইদানীং কথাবার্তা গুলো খুব ভালো লেগেছে। মারুফ হেফাজত বুঝতে দেরি হলেও এখন জানি, ইসলামী দলগুলো তো কোন কালেই এক হতে পারবে না, যদিওবা কোন একটা দল সরকার গঠন করে তবে অন্যরা তাকে টেনে নামায়ে ফেলবে, এটা আমার জন্য একটি সুসংবাদ। আমি গত বছর থেকে একটু আওয়ামে লিগ ঘেঁষা হয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু এই আন্দোলনে গণহারে হত্যা দেখে ও গুপ্ত খবর গুলো জানতে পেরে এই দলকে আর সমর্থন করি না, কিন্তু এর প্রতিস্থাপক আরেকটি দল কি হতে পারে তাও বুঝতে পারি না। তবে দেশে ইসলাম রাষ্ট্রক্ষমতায় না আসুক তাই চাই। লিটন প্রথম যখন রি-ইউনিয়ন করে তখন দাড়ি রাখে নাই, এখন দাড়ি রেখে মহা মুসুল্লি হয়ে গেছে, তবে ওর মধ্যে সহনশীলতা আছে দেখে ভালো লাগলো।

তারেক, বাবু, ইউসুফ, বিপু, বিজু, তমাল, আজিম, জাকু, লিটন, রাসেল, রনি, দিদার এরা আমার বন্ধু থাকবে যতদিন বাচি। আরিফ আমার অফিসে আসছে বেশ কয়েকবার, ওর সাথেও বন্ধুত্ব রাখবো। কিন্তু বাকিরা আমার নাগালে আসলে অক্ষত হোগা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবি না। আমি আমার পরিবার নিয়ে ও আমার কাজ কর্ম নিয়ে খুব ভালো আছি, তোদের দোয়া চাই না। যে বইটা আমাকে নাস্তিক হতে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে সেটা বারট্রান্ড রাসেলের “কেন আমি ধর্ম বিশ্বাসী নই” বারট্রান্ড রাসেলের লেখা আমি ছাত্র জীবন থেকে পড়ে অভ্যস্ত তাই তার কথাগুলো আমার কাছে গ্রহণযোগ্য লেগেছে। অমিত যখন হঠাৎ করে গ্রুপ ছেড়ে বের হয়ে যায় তখন আমার খারাপ লেগেছিল, তাই আমি ওভাবে চলে গেলাম না, সব বলে দিয়ে গেলাম। আরিফের কাছ থেকে জেনেছি, ও, আহমেদুল, হিমেল, অমিত, পাপ্পু ওরা সব কাছাকাছি বাসায় থাকতো, তাই ওদের মধ্যে সম্পর্ক অন্য রকম। আমি থাকতাম শ্যাওড়াপাড়ায় তাই তোদের সবার সাথেই আমার স্থানগত দূরত্ব ছিল। দৈনিক সঙ্গী হিসেবে বন্ধু হিসেবে তোদের পেয়েছিলাম, এ ছাড়া আমার কোন উপকারে তোরা আসিস নাই। দু এক জনকে পারলে সহযোগিতা করেছি ব্যাংকিং বিষয়ে। যে ফান্ডটা গঠন হয়েছে, অবাক লাগতো যাদের অনেক টাকা আছে তারা মাত্র ৫০০ টাকা করে দেয়, যারা ফান্ডটা নিয়ে প্রচুর কথা বলে তারা কিছুই দেয় না। দুর দেশ থেকে আজিম নিয়মিত টাকা পাঠাতো যৌক্তিক পরিমাণে। লিপুকে যা বলার বলে দিছি আগেই, ওকে ক্লাস ৫ থেকে পাইছি কিন্তু কখনই ঘনিষ্ঠতা হয় নাই, তখন থেকেই দেখতাম ওর মুখে কিছু আটকায় না, মানে মুখ দিয়ে দুর্গন্ধের মত খুব খারাপ শব্দ বের হয়, আজও হয়, যতই দাড়ি রাখুক না কেন, ও যেমন ছিল তেমনই আছে। জাকু একটা অসাধারণ মানুষ, ফেইসবুকে ওর মিষ্টি মেয়েটাকে দেখি, আজীবন আদর থাকবে ওর জন্য। পাপ্পুর ছেলেটার পড়াশুনাটা যাতে হয় এখন এটা তোদের দায়িত্ব টাকা পাঠানোর।

আমার মহৌষধের রহস্যটা ফাঁস করে দেই, ২০১৭ সালে আমি তিনটা ভিন্ন ভিন্ন ঔষধ খুঁজে পাই তিনটাই কাজ করে, তার মধ্যে একটা আমি নিয়মিত ব্যবহার করছি, এটা আর কিছুই না চিন দেশে পাওয়া যায় জিনসিং নামে আদার মত একটা শিকরের গুড়া। হামদার্দ ইউনানি আর স্কয়ারও এটার টেবলেট বের করেছে কিন্তু ওগুলোতে কাজ হয় কম, বরং অন্যান্য ইউনানি থেকে যা পাওয়া যায় ওগুলো ভালো কাজ করে। এটা পেট খালি কারার জন্য খুব ভালো, খাওয়ার আধাঘণ্টার মধ্যে পেট খালি করার চাপ আসে। অনেকে বল বৃদ্ধিকারক হিসেবে সকালে একটা ও রাতে একটা খায়। এটা খেলে এটার সাইড এফেক্ট হিসেবে ধন শক্ত থাকে যখন তা কাজে প্রয়োগ করা হয় তখন ও অনেকক্ষণ। দুপুরে ১টায় একটা টেবলেট খেলে দুপুর ৫টার মধ্যে পেট ক্লিয়ার হয়ে যাবে, তখন বুঝবি ঔষধটা কাজ করছে। এর পর রাতে যখন খুশি যৌনাচারে যদি তোর ধন খাড়ায় তবে তা অনেক ক্ষণ ধরে, মানে তুই যতক্ষণ চাস ততক্ষণ শক্ত থাকবে। এটাই এতদিন তোগ বলি নাই। আমি ২০১৮ থেকে ব্যবহার করে এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাই নাই।

আমার লেখায় প্রচুর বানান ভুল আছে, অফিসের কাজের ফাকে লেখাটা শেষ করলাম, গত রাত থেকে চিন্তা করছিলাম কি কি বলা যায় শেষ বিদায়ে। তোদের কাছে আমার ক্ষমা চাওয়ারও কিছু নাই দোয়া চাওয়ারও কিছু নাই। পাঁচ, ছয়টা বন্ধু মারা গেছে আর আমারে তোরা জেন্ত কবর দিয়া দিলি।  বিদায় বন্ধুগণ।


সম্পাদনা ও উন্নয়ন ইতিহাসঃ ১৯আগস্ট২০২৪

Thursday, July 25, 2024

অস্তিত্বের সংকট ও আমাদের বাস্তবতা

 


আমার মেঝ মেয়ে সহজেই আনন্দে থাকে কিন্তু বড়টা ছোট বেলা থেকেই গম্ভীর, সবার ছোট ছেলেটাও হয়েছে বড়টার মত গম্ভীর প্রকৃতির, ও’রা যুক্তি খুব ভাল বুঝে তাই খামখা আনন্দ হলে তার অর্থ তারা বুঝতে পারেনা। ইউভাল নোয়া হারারী তার বই এর কোন এক জায়গায় লিখেছিলেন যে কিছু কিছু মানুষ খুব সহজেই আনন্দ পায় আবার কেউ কেউ আছেন যে অল্প দুখেই কাতর হয়ে পরেন। এই কয়েক মাস আগেও মনটা কাজে ব্যস্ত থাকত, কিন্তু হঠাত করে ইদানীং মাথাটা পুরা ফাঁকা হয়ে গেছে, কোন কাজেই মন সায় দেয় না। সারাক্ষণ কর্ম উদ্দিপনাহীন অলস সময় কাটাতে ইচ্ছা করে। এরকম ভয়ঙ্কর শূন্যতা আর অনিশ্চয়তা আগে আমাকে পেয়ে বসে নাই। এরকম মনের অবস্থা ব্যাখ্যা করাও কঠিন। নিজের মানসিক অবস্থা খারাপ বা অসুস্থ মনে হয়, পাশাপাশি শারীরিক অবস্থাও মনে হয় খারাপের দিকে, নানা রকম আশঙ্কা, হতাশা, কর্মউদ্দমহীনতা সব এক সাথে পেয়ে বসেছে। কিচ্ছুই ভাল লাগে না, আমার অবশ্য সেই ছোটবেলা থেকেই এই ভাল না লাগার রোগ আছে। অবস্থা বুঝে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে এই ভালো না লাগা রোগ। করনার বছর ২০২০ সালে মনের এই অবস্থা হয়েছিল আমার। সকল কর্মকান্ডের মূল্য শূন্য মানে নেমে গিয়েছিল। বহু কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার নিরন্তর চেষ্টা ছিল তখন। ২০২০ সাল পার হয়ে এখন ২০২৪ চলছে কিন্তু মনের অবস্থার খুব সামান্যই পরিবর্তন হয়েছে যদিও অগ্র যাত্রা আবার শুরু হয়েছে । খোজ নিয়ে জেনেছি যাদের করনা হয়েছিল কিংবা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তারাও ওই সময় একই রকম বিষণ্ণ একটা সময় কাটিয়েছেন। আমার বিষয়টা অন্যরকম, বাবা আর মা কে হারানর পর থেকেই বিষণ্ণতা রোগ আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে সময় পেলেই। বাবা আর মার মৃত্যু আমি সহজ ভাবে মেনে নিতে পারি নাই আর সহজ ভাবে মানতে চাচ্ছিও না। যখন অন্যরা সান্ত্বনা দেয়ার মত করে বলে বাবা-মা চিরকাল কার বেচে থাকে না, তখন আমার খুব রাগ হয়। মৃত্যুই যদি জীবনের একমাত্র পরিণতি হয় তবে এখনই মরে যাওয়াই তো ভাল, বেচে থেকে এত সব করে কি লাভ। বাবা-মা সারাজীবন স্বপ্ন দেখল এটা করবে ওটা করবে, সবেই করল কিন্তু সেগুলো ভোগ করার আগেই তাদের জীবনাবসান হয়ে গেল। এত কিছু করে তবে কি এমন হলো? বুঝলাম আমার জীবনটা সহজ করে দিয়ে গেছে। আমি তো ভবঘুরে হই নাই, চাকরি করছি, আমার সন্তানরাও ভাল ভাবে বড় হয়ে উঠছে। ওদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য তৈরি হচ্ছে। আমার স্ত্রী যথেষ্ট দায়িত্বশীল ও আমার ও বাচ্চাদের বিষয়ে যন্তশীল। কোথাও কোন সমস্যা দেখছি না এখন পর্যন্ত। সব সমস্যা আমার মনের মধ্যে। মা-বাবা কে হারানোর পর জীবনের মূল্য আমার কাছে অতি নগণ্য হয়ে গেছে। মরে গিয়ে বাবা-মা’র কাছে চলে যেতে ইচ্ছা করে কিন্তু মৃত্যুর পরে যে অনন্ত জীবনের কথা ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ আছে তাতে আমার বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেছে। বাবা-মা যখন ছিল তখন কতই না নিশ্চিন্ত থাকতাম। যা করার উনারাই করবে, আমি শুধু তাদের সাথে থাকব। হঠাত করে তারা নাই হয়ে গেল, এখন আমি কোথায় সেই নিশ্চয়তার ছাতা পাই? সন্তানকে তাই এতটা নির্ভরশীল করে বড় করা ঠিক না যাতে বাবা মার অবর্তমানে তারা এতটা অসহায় বোধ করে, আমার এখন তাই মত। আমি একমাত্র সন্তান হওয়ায় বাবা মার অতিরিক্ত যত্ন ও আদর পেয়েছি। আর ওটাই আমার মনের মধ্যে নিরন্তর অসহায়ত্বর জন্ম দিয়েছে। 

কম বয়স্কদের মধ্যে যে উদ্যম আর উদ্দীপনা দেখি, মনে হয় তারাও এক সময় না এক সময় নিভু নিভু প্রদীপ হয়ে যাবে। কেউকারাডং পাহাড়ে উঠেছিলাম সোনালী ব্যাংকের ১৮ জন সহকর্মীর এক ট্র্যাকিং টিমের সঙ্গে। যখন নামছিলাম তখন উঠার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছিল। চিংড়ি ঝরনার কাছে বিশ্রাম নেয়ার সময় যারা নতুন উপরের দিকে উঠছে তাদের দেখা গেল অতি জল জল চোখ সামনে না জানি কি আছে তা দেখার উদ্দীপনা। জীবনের এই পড়ন্ত বয়সে তাই মনে হয় যৌবন এর উঠতি বয়সের উদ্দীপনা এই ‍উপরে চড়ার মত না জানি কত কি আছে সামনে। সব জানা হয়ে গেলে যখন পড়ন্ত সময় আসে তখন আর কিছুই ভাল লাগে না। মনে হয় সবই তো দেখা হল এর পর আর কি-ই বা আছে। তার চেয়ে যত তাড়াতাড়ি এই জীবন থেকে বিদায় নেয়াই শ্রেয়। অস্তিত্বের সংকট এবং লোগো থেরাপি প্রসঙ্গে ভিক্টর এমিল ফ্র্যাঙ্কেল এর বই “জীবনের তাৎপর্যের সন্ধানে [ম্যানস সার্চ ফর মিনিং]” বইটা পড়ার পর বুঝলাম মানুষের সব মানসিক সমস্যার মূলে এই অস্তিত্বের সংকট সম্পর্কে মনের অত্যন্ত গভীরে প্রথিত একটি চিরন্তন অনিশ্চয়তা রয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে এই লেখাটি লিখবো বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু অনেক সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও লেখাটা শেষ করতে না পারায় লেখার আগ্রহও হারায়ে বসেছি। তবে এটা ঠিক যে, ভিক্টর এমিল ফ্র্যাঙ্কেল যে কঠিন কষ্টকর জীবন পার করেছেন তার পর তার যে গবেষণা ও বক্তব্য তা অত্যন্ত গভীর চিন্তার ফল। আমি এখন বুঝতে পারি আমার ছোট বেলা থেকে যে ভালো না লাগা রোগ, তা মূলত এই অস্তিত্বের সংকট থেকে উদ্ভূত। এই সংকটটি মনের এত গভীরে কাজ করে যে তা হয়তো অনেকেই বুঝতে পারেন বলে আমার মনে হয় না। আমাদের তথা মানব সম্প্রদায় সমূহের বৃত্তি প্রবৃত্তিগুলো বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তাদের প্রথমটাই হলো সারভাইভাল বা বেচে থাকার বাসনা, দ্বিতীয়টা হলো বংশ বৃদ্ধি আর তার পরই আসে সেল্ফ একচুয়ালাইজেশন বা পূর্ণাঙ্গতার বাসনা। ধার্মীকদের জন্য এই বাসনা চরিতার্থ করা সহজ, কারণ তাদের ধর্মেই এর সমাধান দেয়া আছে কিন্তু যারা ধর্মের দেয়া ব্যবস্থাপত্রে আস্থা রাখতে পারেন না তাদের জন্য এই জীবনকে সার্থক করার প্রয়াস অত্যন্ত দুরূহ। বংশ পরম্পরায় টিকে থাকাই হলো তাদের জন্য জীবনের সার্বিকীকিকরন বলে মনে হয়। আমি থাকবো না কিন্তু আমার সন্তানেরা টিকে থাকবে এটাই যেন তাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য বা পরিণতি। বহু প্রজাতি এই পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে গেছে, ডাইনোসররাও তো আর এই পৃথিবীর মধ্যে টিকে নাই। ডাইনোসররা তো চিন্তা করতে অপারগ ছিল, তারা তাই তা নিয়ে মাথাও ঘামায় নাই। কেবল মানব মাত্রই চিন্তাশীল প্রাণী আর তাই তাদের মধ্যে এত ধর্ম ও অধর্ম নিয়ে বাক বিতন্ডা। বেচে থাকা ও টিকে থাকার জন্য লড়াই করার ক্ষেত্রেও তাদের এত ভাবের আদান প্রদান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। মানব সাহিত্যের কয়েকটা উদাহরণ নিচে উল্লেখ করছি যাতে দেখা যাবে এই বাসনাই বার বার প্রতিফলিত হয়েছে স্বনামধন্য লেখকদের লেখনীর মধ্য দিয়ে।

আমাদের দেশের জনপ্রিয় লেখক মাসরুর আরেফিনের “আগস্ট আবছায়া” বই এর পৃষ্ঠা ১৪: “আইয়ার বললেন,‘স্যার জীবন অনেক কষ্টের, অনেক। বেঁচে থাকা একটা ভার, একটা বোঝা। ষাটের পরে শরীরে যে কী সব শুরু হয়, তা কাউকে বোঝানো যাবে না যদি না তার বয়সও ষাট হয়ে থাকে। কিন্তু শুধু শরীরের অনেক ব্যথা-অসুখ-কষ্টই না, ব্যাপারটা সে করম না মোটেই। মনের বিমর্ষতা, সার্বিক উদ্যমহীনতা ও মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা, মৃত্যুর ইচ্ছা, প্রতিদিন চাওয়া যে সব শেষ হয়ে গেলে কত ভালো হতো – ষাটের পরের এই পৃথিবী ভয়ানক, স্যার।’” পৃষ্ঠা ১৬: “আমরা এর নাম দিয়েছি জীবনসংগ্রাম, বলছি এই সংগ্রামে তোমাকে জিততে হবে, জেতার ওই চেষ্টাটাই তোমার জীবনের মানে। কমিউনিস্টরা তখন এসে বলছে, না জীবনের মানে ওটা না, জীবনের মানে হচ্ছে তাদের উৎখাত করা যারা তোমাকে এই ভয়ংকর সংগ্রামের মধ্যে পুরে নিঃশেষ হতে বাধ্য করছে। তখন ধর্ম এসে বলছে, না মারামারি কোর না, খোদার প্রতি ভরসা রাখো এবং সংগ্রাম চালিয়ে যাও, কষ্ট তাহলে অনেক কম হবে, দেখো। আমার মনে পড়ল নবোকভের কথাটা: ‘শিশু বয়সের দোলনাটা দুলছে এক অতল গহ্বরের ওপরে। জীবনের দীর্ঘ দাগটার দুপাশে দুই অন্ধকার—জন্মের আগে অন্ধকার, এবং মৃত্যুর পরে আবার অন্ধকার। আমাদের বেঁচে থাকাটা দুই প্রান্তের এই দুই অনন্ত অন্ধকারের মাঝখানে এক আলোর সামান্য ঝলকানি মাত্র।’ আইয়ারের দৈনন্দিন জীবনের এই গল্প শুনে মনে হলো, নবোকভ ভুল। দুই প্রান্তের দুই অন্ধকারের মাঝখানে যে জীবন সেটার আলোটুকুও আমাদের চোখের ওপরে এত নিষ্ঠুরভাবে ধরা যে সেই আলো, চোখ ধাঁধানো এক বর্বর আলো, আদতে অন্ধকারই।” পৃষ্ঠা ৬২: আমার ধর্মবিশ্বাস কতটা গাঢ় তা নিয়ে আমি, এই পৃথিবীর অন্য অনেক বিশ্বাসী মানুষের মতোই, সংশয়ে থাকি। মনে হলো, আহা, সামান্য এক মানুষ হিসেবে আমি যদি শুধু নিশ্চিত করে জানতাম অসামান্য ও বিশাল খোদা সব সময়েই আমাদের পাশে আছেন সবকিছুর ওপরে তাঁর বদান্যতা ও সুবিচারের বিশাল হাতটা মেলে, তার উর্ধ্বারোহী গান ও উড্ডয়নশীল সুরের গূঢ় অর্থদ্যোতক প্রসাদগুণ আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে, সব মানুষ ও পশুপাখি, পতঙ্গ ও বৃক্ষের জন্য তার ন্যায়নিষ্ঠত্বের স্পষ্ট অঙ্গীকারের তরঙ্গ তুলে, আহা, তাহলে কীভাবে আমি অর্থ খুঁজে পেতাম এই অন্ধকার ঘরের আলোকশূন্যতার মাঝেও। কীভাবে উতরে যেতাম আমার মনের অসুখ ও শরীরের গতিশূন্যতার এই জেলহাজতটাকে।  -------- কারণ আর পারিছিলাম না আমি –আল্লাহ, খোদা, ইয়ওয়েহ, কৃষ্ণ, পরব্রহ্ম, জিউস, আহুরা মাজদার সঙ্গে। কিন্তু আকাশে-বাতাসে আমার সেই নিঃশব্দ অন্বেষা অন্বেষাই থেকে গেল আপাতত “

আমেরিকার একজন জনপ্রিয় বিজ্ঞান কল্প কাহিনীর লেখক এর বই এর পরিচিত মূলক পোস্ট থেকে পরের কথা গুলো নেয়া। তাতেও দেখা যাবে আমার উপরোক্ত আলোচনাটির প্রতিফলন, “জন্মের মুহূর্ত থেকে আমরা অস্তিত্বের চেতনার অগাধ গভীরতায় নিমজ্জিত ও বাস্তবতার অমোঘ পরিস্থিতি দ্বারা বেষ্টিত। আমাদের নিজস্ব চেতনার সীমাবদ্ধতা থেকে যেন কোন রেহাই নেই। আমাদের পার্থিব অস্তিত্বের চেতনার সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করার কোন উপায়ও নেই। এমনকি মৃত্যুও  এই তমসাচ্ছন্ন অস্তিত্বের খপ্পর থেকে আমাদের রেহাই দেয় না। আমরা চলতে থাকি এবং কবরে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কিছু গঠন করতে থাকি বা কেবল এই সত্যটির সাথে সমঝতা করতে থাকি যে বাস্তবতার বুননে আমরা নিতান্তই অসহায়। অনেকের জন্যই অস্তিত্বের এই সংকট একটি প্রাথমিক এবং গভীরভাবে প্রথিত অস্থির অভিজ্ঞতা। এটা এমন একটা ভয় এই উপলব্ধি থেকে জন্মায় যে আমরা বিশাল মহাবিশ্বের মধ্যে অতি নগণ্য এবং অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খলার মহাসমুদ্রে প্রবাহমান। জন্মের মুহূর্ত থেকেই আমরা জীবনের জটিলতাগুলির সম্মুখীন হয়ে দুঃসাধ্য কাজের মুখোমুখি হই। আমাদের সামনে থাকা অগণিত চ্যালেঞ্জ এবং অনিশ্চয়তার সাথে মোকাবিলা করা এবং উপলব্ধি করার জন্য আমাদের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অস্তিত্বের সমস্ত মৌলিক রহস্যগুলি আমাদেরকে এমন এক মহাবিশ্বে একাকীত্বের অনুভূতি প্রদান করে চলে যা একধারে সুন্দর এবং ভয়ঙ্কর।

মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বৈজ্ঞানিক এবং গাণিতিক বোধগম্যতা প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে অস্তিত্বের বোধগম্য প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের সচেতনতাও বৃদ্ধি পায়। প্রতিটি নতুন আবিষ্কারের সাথে আমরা অনির্ধারিত উপলব্ধির মুখোমুখি হই যে বাস্তবতা আমাদের কল্পনার চেয়ে অনেক বেশি অপরিচিত এবং আরও জটিল। তবুও এটি অন্তত সচেতনতা যা আমাদেরকে অনিশ্চয়তার মুখে অর্থ এবং বোঝার সন্ধান দেয়, আমাদের অস্তিত্বের মৌলিক রহস্যের মুখোমুখি হতে ঠেলে দেয়। আমরা ধর্ম, দর্শন এবং মতাদর্শের সান্ত্বনাদায়ক বিভ্রমকে দাবি করি এমন একটি অনিশ্চিত বিশ্বে অর্থ এবং উদ্দেশ্যের কিছু সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়ার আশায় যা প্রায়শই আমাদের সংগ্রামের প্রতি সম্পূরক বলে প্রতীয়মান হয়। তবুও এই সান্ত্বনাদায়ক বিভ্রমগুলি মানুষের অবস্থার কেন্দ্রস্থলে থাকা অস্তিত্বের সংকটের মুখে সামান্য সান্ত্বনা স্বরূপ। প্রকৃতপক্ষে অস্তিত্ব সম্পর্কে বলা যায় এটি কারণ এবং এর প্রভাবক সমূহের পরিবর্তনশীল আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি নির্ধারক ঘটনা। সময়ের সূচনা থেকে বর্তমান মুহূর্ত পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনা কার্যকারণের একটি বিশাল এবং আন্তঃ সংযুক্ত জালের অংশ যা আমরা আজ যে বাস্তবতায় বাস করি তার মধ্যে দিয়ে অনির্দিষ্টভাবে টেনে নিয়ে চলেছে। আমাদের জন্মের মুহূর্ত থেকে আমরা অস্তিত্বের চাকায় নিবন্ধিত সময় এবং স্থানের স্রোত দ্বারা পরিত্রাণের কোন আশা ছাড়াই চলমান থাকি। তার পরও এই অপ্রতিরোধ্য অনিবার্যতার মুখে আশার ঝিলিক রয়েছে। একটি স্বীকৃতি যে এই মহাজাগতিক ট্যাপেস্ট্রির একটি অংশ হিসাবে বিদ্যমান থাকার কাজটি অজানাকে আলিঙ্গন করার এবং জীবনের অনিশ্চয়তাকে আলিঙ্গন করার একটি সুযোগ। যদিও অস্তিত্বের ভয় জীবনের অনিশ্চয়তায় স্বাভাবিক এবং সহজাত প্রতিক্রিয়া হতে পারে, এটি আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে থাকা গভীর সম্ভাবনারও স্মরণ করিয়ে দেয়। আমাদের ভয়ের মোকাবিলা করার মাধ্যমে আমরা আমাদের অচেতনতার সীমাবদ্ধতা গুলো অতিক্রম করার চেষ্টা করতে পারি এবং মহাবিশ্বের সীমাহীন সম্ভাবনাকে আলিঙ্গন করতে পারি, শেষ পর্যন্ত অজানাকে মোকাবেলা করার জন্য আমাদের অস্তিত্বের অনিশ্চয়তাকে আলিঙ্গন করার ইচ্ছা যা আমাদেরকে সংজ্ঞায়িত করে অনুসন্ধানী সত্তা হিসেবে এবং আমাদের জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে দেয় পরিবর্তনশীল ট্যাপেস্ট্রিতে । “

আমাদের বাস্তবতার চিন্তায় অস্তিত্বের সংকটটি কতটা গভীর তা উপরের লেখকবৃন্দের লেখা থেকে কিন্তু স্পষ্ট বুঝা যায়। মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রা কিন্তু এই অস্পষ্ট অস্তিত্বর ধারণা নিয়েই আগায়ে চলেছে। ফ্র্যাঙ্ক ক্লোজ লিখিত আ্যান্টিম্যাটার, ভাষান্তর উচ্ছ্বাস তৌসিফ বই থেকে নিচের উদ্ধৃতি গুলো তুলে ধরছি, যাতে বুঝা যাবে এই সংকট উত্তরণে মানব সভ্যতা আজ কতটা জ্ঞান অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

পৃষ্ঠা ৪৭ “নিখাদ শক্তি কিংবা বলা যায়, নিখাদ শক্তির সবচেয়ে নিখাদ রূপ ‘আলো’থেকে বস্তুর জন্ম নেয়াকে এক কথায় বলতে হবে ঐশ্বরিক। প্রতিপদার্থের সঙ্গে পদার্থের যোগকে বলা যায় সবকিছুর শুরু। সৃষ্টির শুরু। কেমন করে বিগ ব্যাং থেকে এই মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছিল তা আমরা এখান থেকেই বুঝতে শুরু করতে পারি। প্রচন্ড উত্তাপ ও অনেক উচ্চশক্তির আলো মিলে জমাট বেঁধে জন্ম নিয়েছিল পদার্থ এবং প্রতিপদার্থ। ”

পৃষ্ঠা ১৬৬ ”সব সংস্কৃতির মানুষেরই মহাবিশ্ব সৃষ্টি নিয়ে ভেবেছে। কীভাবে শূন্য থেকে এত কিছু এল, সে হেঁয়ালি আমাদের বিহ্বল করে রেখেছে আজও। বিগ ব্যাং কেন হয়েছে, তা এখনো কেউ জানে না। কিন্তু এর শক্তি থেকেই জন্ম নিয়েছে আমাদের আজকের এ মহাবিশ্ব ও এর মধ্যকার সবকিছু। আর প্রতিপদার্থের রশ্মিই – প্রথমে প্রতি-প্রোটন ও পরে পজিট্রন – আমাদের গবেষণাগারে সেই শিশু মহাবিশ্বের সিমুলেশন তৈরি করে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা এক সেকেন্ডের এক বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ বয়সী শিশু মহাবিশ্বে ফিরে যেতে পারি, তাকে বোঝার চেষ্টা করতে পারি। মানুষের মেধার এক অবিস্মরণীয় অর্জন এটি। একতাল পরমাণু এক হয়েছে, চিন্তা করতে পারছে এবং প্রবল বিস্ময় ও কৌতূহল নিয়ে তাকাচ্ছে মহাবিশ্বের দিকে। বানাতে পারছে এমন যন্ত্র, যা আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে বিগ ব্যাংয়ের অসম্ভব কাছের মুহূর্তে। এই সব কিছুই সম্ভব হয়েছে প্রতিপদার্থ গবেষণার মাধ্যমে। বাস্তবতাই যদি এত চমৎকার হয়, তাহলে কল্প গল্পের কী দরকার?”

উপরের তিনটি উদ্ধৃতি থেকে বুঝা যায় মানব সভ্যতার অস্তিত্বের সংকট নিয়ে একটি সর্বজনীন অতি গভীর বিশ্লেষণ সকল সাহিত্য ও মানব কর্মের অন্তরালে কাজ করে আসছে। বিভিন্ন ধর্মে মানব সভ্যতার বিশ্বাস মূলত এই সংকটের একটা সমাধান দেয় কিন্তু তা বিশ্বাস নির্ভর, চিন্তাশীল মানুষ কেউ কেউ তাতে আস্থা রেখে শান্তি খুঁজে কিন্তু আরো মানুষ আছে যারা ধর্মের প্রদত্ত সমাধানে আস্থা রাখতে পারে না। ৪৭ বছর বয়সে এসে সকল সংশয় থেকে মুক্ত হয়ে আমি ধর্মের প্রদত্ত ব্যাখ্যার উপর থেকে আস্থা উঠায়ে নিতে বাধ্য হয়েছি। যারা আস্থা রাখছে তাদের প্রতি আমার কিছু বলার নেই। যে যার যার মত করে তার অস্তিত্বের সংকটের সমাধান করবে, তাতে কার কিই বা বলার আছে। তবে এই প্রসঙ্গে ভিক্টর এমিল ফ্র্যাঙ্কেল এর জীবনের তাৎপর্যের সন্ধানে বইটি পড়ে দেখার অনুরোধ রেখে এই লেখাটা শেষ করছি।

জীবনের তাৎপর্যের সন্ধানে [ম্যান’স সার্চ ফর মিনিং] মূলঃ ভিক্টর এমিল ফ্র্যাঙ্কেল ভাষান্তর এহসান উল হক, প্রকাশকঃ আতাউল কবির খান, বিন্দুতে সিন্ধু, প্রথম প্রকাশ আগস্ট ২০১৯।

এডিট ও আপডেট হিস্ট্রিঃ ২৭অক্টবর ২০২২> ২৫মে২০২৩> ১৮আগস্ট২০২৩>৩১আগস্ট২০২৩> ২২জুলাই২০২৪>

 আমার কাছে অনেকের প্রশ্ন

https://surzil.blogspot.com/2024/02/blog-post_28.html
ব্লগ লিংকঃ https://surzil.blogspot.com
ফেইসবুক প্রফাইলঃ https://www.facebook.com/mustafa.surzil.rawnak

সুস্থ – অসুস্থ রাজনৈতিক আন্দোলন প্রসঙ্গে


আমি পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব একজন এদেশীয় নাগরিক যে ছাত্র জীবনে কিংবা চাকুরী জীবনে কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করেনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত কোন একপেশে রাজনৈতিক মনোভাবও পোষণ করিনি। আমার জীবদ্দশায় ১৯৮৫ সাল থেকে এরশাদ সরকার এর শাসন আমল ও তার পতন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন, প্রধান দুটি দলের পালা বদলে ক্ষমতায়ন ও বেশ কয়েকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় তাদরে আসা সহ বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক উত্থান পতনের সাক্ষী হয়েছি। । আমি যখন নিশ্চিত হই যে, আমি এদেশ ছেড়ে অন্যত্র যাবো না ও আমার তিন সন্তানও এদেশেই তাদের জীবন অতিবাহিত করবে তখন স্বাভাবিক ভাবেই রাজনৈতিক ভাবে নিজে ও পরিবারকে সচেতন করা আমার কর্তব্য ধার্য করি। সেই লক্ষ্যই আমি নিজে ও আমার সন্তানদের কে দেশের ইতিহাস, জাতীয়তা বোধ ও রাজনৈতিক ভাবে সচেতন করতে প্রয়াস পাই। পাশাপাশি আমার চিন্তা ভাবনা গুলোও লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেই। এরকম সময়ে ১লা জুলাই থেকে ছাত্রদের মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় ও তা এক পর্যায়ে, অর্থাৎ ১৬ তারিখ তা তুঙ্গে উঠে যায়। সরকারের তাদের পক্ষে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল ও আদালতের ৮ই আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করলেও ছাত্ররা রাষ্ট্রপতি বরাবর তাদের স্মারক লিপি প্রদান করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে একটি সমাধান চায়। তারা ১৮ তারিখ পুর দেশে লকডাউন (ধর্মঘট বা হরতাল) এর ঘোষণা দেয়। আমি তিন দিন (১৪ থেকে ১৬ জুলাই, ২০২৪) বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এর একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ব্যস্ত ছিলাম। এর মধ্যেই হোয়াটস এ্যাপ গ্রুপ গুলোতে আলোচনা হচ্ছিল। আমি আমার মতামতও দিচ্ছিলাম। অনেকেই আমার মতামতের সমালোচনা করে কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় আমার অনুমানই সঠিক হয়ে দেখা দেয়। ছাত্রদের এই আন্দোলনকে পিছন থেকে উস্কে দিয়ে তৃতীয় পক্ষ যারা বর্তমান রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধাচরণ করে ব্যর্থ হয়েছে তারা উপরে উঠে আসে। ১৯শে জুলাইয়ে তাদের চেহারা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। যা ছিল ছাত্রদের নৈতিক আন্দোলন আর যার প্রতি পাবলিক সেন্টিমেন্টও ছিল পক্ষে, সেই সুযোগে বিরোধী মতাদর্শের লোকজন সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদে আগুন দেয়া শুরু করে। পুর দেশে ২৫০ প্লাটুন বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ –আধা সামরিক বাহিনী) ও ঢাকা শহরে ২৫ প্লাটুন বিজিবি নামান হয়। পুলিশ আর র‌্যাব ঢাকা ও সারা দেশে সক্রিয় হয় ও সহিংস আন্দোলনকারীদের দমনে কাজ করে। সংবাদ মাধ্যমে বলা হয় সারা দেশে ৩৫ জন লোক এই সহিংসতায় নিহত হয় জুলাইয়ের ১৯ তারিখ পর্যন্ত।

১৬ জুলাই ২০২৪ সন্ধ্যায় মেট্রোরেলে বাসায় আসতে গিয়ে সেক্রেটারিয়েট স্টেশনে নামলাম, শুনলাম বাসে আগুন দিচ্ছে দেখে স্টেশন থেকে বের হওয়ার সব দরজা ওরা বন্ধ করে দিয়েছে, তাই পুনরায় উপরে উঠে মেট্রোরেলে মতিঝিল যেয়ে নেমে রিক্সায় করে বাসায় পৌঁছলাম। সব টিভি চ্যানেল ঘেঁটে ও ইউটিউব থেকে সব পক্ষের সব সংবাদ শুনলাম। প্রধান মন্ত্রীর ও ওবায়েদুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী সহ সময় টিভির লাইভ টক শোতে ছাত্র নেতাদের বক্তব্যও শুনলাম। সময় টিভির সব খবরে সারা দেশে ছাত্রদের তন্ডবও দেখলাম একের পর এক। আমার বুদ্ধিতে যা কুলায়। যা বুঝলাম তা হলো পুর ছাত্র আন্দোলনটা শুরু হইছে আকস্মিক, কিন্তু হাইকোর্টের পূর্বের রায় স্থগিত করে আগস্টের ৮ তারিখ শুনানির কথা বলার পরও ছাত্রদের আন্দোলন ত্যাগ না করা এবং প্রধান মন্ত্রীর একটি সাধারণ মন্তব্যকে নিজের ঘারে নিয়ে নেয়া মোটেও সমর্থনযোগ্য মনে হলো না আমার কাছে। অপর পক্ষে ছাত্রলীগকে ক্ষেপায়ে তাদের সংঘর্ষে লিপ্ত করাটা মোটেও স্বাভাবিক ছিল না। পুর ব্যাপারটাই ম্যানুফেকচার্ড বা কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলে আমার মনে হয়। দেশের সংবিধান ও জন প্রশাসন সংবিধান মতই চলবে, সেই মতই সকল বিপত্তি নিষ্পত্তি হবে, এটা ছাত্র সহ সকল যোগ্য শিক্ষিত ও শিক্ষারত নাগরিককে মেনে নিতে হবে সেটাই কাম্য। ”গুলির ঘটনা ও মৃত্যু” দুটাই ছাত্র নামধারীদের কাজ বলে আমার মনে হলো যাদের অন্যকেউ নিয়োগ দিয়েছে হয়তো। এটা পুরটাই বানানো একটা খেলা যাতে ছাত্রদের হুজুগে অংশগ্রহণ ঠিক হচ্ছে বলে আমার মনে হয়নি। -যদিও বিষয়টি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার ধারনা কিছুদিন আগে বিগত সামরিক প্রধান ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ প্রধান সহ একসময়কার প্রচুর ক্ষমাতাবন অনেক অসাধু ব্যক্তির অসৎ উপায়ে বিপুল সম্পদ অর্জন ধরা পরে যাচ্ছিল জনগণের সামনে ও সংবাদ মাধ্যমে। তারা বর্তমান সরকারের কাছে আশ্রয় না পেয়ে বিরোধী শক্তির সাথে হাত মিলায়ে এই পরিকল্পনা ফেঁদেছে বলে আমার অনুমান হলো। আমি নিশ্চিত নই তবে আমার ধারনা এসব অসাধু লোকেরাই, যারা বর্তমান সরকারের পতন চায় তারা সুকৌশলে এই দেশিয় ছাত্রদের ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে থাকতে পারে। আমি বহু আগে ইউরোপে সম্ভবত বেলজিয়ামে অরেঞ্জ বিপ্লব সংগঠিত করার উপর একটা ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম আর ২০০২ থেকে ২০১০ পর্যন্ত এমপিএফ নামক একটি অরাজনৈতিক সংগঠন এর সাথে সম্পৃক্ত থাকার সময় তাদের আন্দোলন এর সূত্রপাত কারার কৌশল গত আলোচনা শুনেছিলাম, তার প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে দেশ জোড়া এসব বড় ধরনের আন্দোলনের পিছনে থাকে ২ থেকে ৩ জন ক্ষুরধার তরুণ রাজনীতিবিদ, তারা মারাত্মক বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যে কোন জনগোষ্ঠীর মৌলিক ইমোশনগুলো খুঁজে কার্যকর একটাকে বেছে নেয় ও তাতে ফুয়েল দেয়। ঠিক নাভিটা খুঁজে বের করে তাতে তেল ঢালে, তার পর যা হয়, জনগোষ্ঠী দাউ দাউ করে জলে উঠে। এই আন্দোলনটাকে আমার প্রথম থেকেই সেই রকম মনে হয়েছে । একসাথে দুটো আন্দোলন চলছিল জুলাই এর শুরু থেকেই। শিক্ষকদের পেনশন নিয়ে আন্দোলনে তারা কর্মবিরতিতে ছিল, যার কারণে আমার সিম্বা এলুমনাই এসোসিয়েশন এর জন্য তাদের সাথে যোগাযোগের তারিখ স্থগিত করি, তার পরপরই ছাত্রদের এই আন্দোলন উত্তর উত্তর জনসমর্থন পেতে থাকে। এই ঘটনায় চাপা পরে যায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন এবং অসাধু সরকারী কর্মকর্তাদের দুর্নীতির খবরাখবরও। যারা পিছন থেকে কল কাঠি নাড়ছিল তারা বুঝে যায়, তাদের ১ম উদ্দেশ্য সফল হয়েছে, জনগণের দৃষ্টি অসাধু চোর ধরা থেকে অন্যত্র সরান গেছে, এখন দরকার চরম এক আঘাতে লক্ষ্য অর্জন তথা সরকারের পতন। সরকার যখন ছাত্রদের পক্ষে আদালতে আপিল করলো ও আদালত ৮ই আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করে দিল, তখন ছাত্ররা অধৈর্য হয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি পেশ করে ও ২৪ ঘন্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা বলাটা একটা ওদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ মনে হয়েছে আমার কাছে এবং তা তারা কোন অদৃশ্য দুষ্ট চক্রের পরামর্শে করেছে বলে আমার ধারনা। এর মধ্যে প্রধান মন্ত্রী তার চীন সফর সংক্ষিপ্ত করে ঢাকায় এসে প্রেস কনফারেন্স করার সময় এক সাংবাদিক তাকে ছাত্রদের এই প্রসঙ্গে একটা কৌশলী প্রশ্ন করে, যার প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী উত্তর দেন, যোগ্যতার বিচারে যে উঠে আসল তাকে চাকুরী না দিয়ে কি রাজাকার এর নাতি পুতিকে দেয়া হবে? এটা তার একটা প্রশ্ন ছিল অথচ ছাত্ররা এটাকে ভুল ব্যাখ্যা করে বানাল যে, প্রধান মন্ত্রী আন্দোলন রত ছাত্রদের রাজাকার বলেছে। এই ভুল ব্যাখ্যাটাও সেই দুষ্ট চক্রের মাথা থেকে এসেছে বলে আমার বিশ্বাস, তাদের স্লোগান, ”তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার, কে বলেছে?, কে বলেছে?, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার, চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার”। কিংবা এর পরে বিভিন্ন জায়গাও ৬ জন ছাত্র চলমান সংঘাতে মৃত্যুবরণ করার পর আসলো স্লোগান “বুকের ভিতর দারুণ ঝর, বুক পেতেছি গুলি কর”। এগুলোর পিছনে সেই অদৃশ্য দুষ্ট চক্রর হাত আছে বলে আমার ধারণা। ১৮ তারিখ পর্যন্ত ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি জনসমর্থন ছিল কিন্তু ১৯ তারিখ শুক্রবার যে দেশ জোড়া ও ঢাকা শহরের রাষ্ট্রীয় সম্পদে অগ্নি সন্ত্রাস ও ধ্বংশাত্বক কার্যাবলী শুরু হলো তাতে ছাত্ররা ঘোষণা দিয়ে বললো এই সব সহিংস ঘটনায় তারা জড়িত নয় এবং তাদের আন্দোলন কোন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের আন্দোলনও নয়। আমার কথা হচ্ছে, এত বাড় বাড়াটা কি ঠিক হলো। আন্দোলন কর ঠিক আছে কিন্তু দেশের সম্পদ নষ্ট করার জন্য দুষ্ট চক্রকে সুযোগ করে দিতে তোমাদের কে বলেছে? এত সাহস তোমরা কোথায় পাও যে দেশের সর্বচ্চো সম্মানিত রাষ্ট্রপতিকে সময় বেধে দাও তোমাদের দাবী পূরণের? আমার বড় মেয়ে যে ডাক্তারি ৫ম বর্ষের ছাত্রী আমার সাথে বেয়াদবি করে বসলো যখন বললাম যে, প্রধান মন্ত্রী যা বলেছে তা ঠিক আছে। সে  পরদিন সকালে বৈষম্যমূলক কোটা সংস্কার এর ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিতে চেয়েছিল, পরে সে তার অপরাধ বুঝতে পেরে আমার কাছে ক্ষমা চায় ও অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। এই কোমল মতি ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার করে যে সকল কুচক্রী ব্যক্তিবর্গ রাজনীতি করে তাদের বলতে চাই আপনাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দেয়া উচিত। আর এদেশের সাদা সিধা জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলা করা আপনাদের মোটেও উচিত নয়। দেশটায় বেশির ভাগ মানুষই হুজুগে, ইমোশনালি বায়াস্ড, সেই সুযোগ নিয়ে কিছু অতি কুবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ পিছন থেকে কল কাঠি নারে, এটা এদেশের সকল মানুষকে বুঝতে হবে ও সজাগ থাকতে হবে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন এর এই ছাত্র আন্দোলনের বিপরীতে কাজ না করে এর পক্ষে কাজ করে এদের সঠিক ভাবে পরিচালিত করতে পারতো তা না করে এর বিরুদ্ধতা করে তারা সঠিক কাজ করেছে বলতে পারছি না।  

গণজাগরণ হতে হবে ভ্যালিড রিজনের উপর, এটা এমন একটা রিজন যেটাকে ডাই হার্ড রিজন বলা যায় না। এটা এমন একটা ইস্যু যা আমাদের জাতির জন্য এখনই জন গুরুত্বপূর্ণও না। এমনতর একটা বিষয়কে ইস্যু বানায়ে গণ অভ্যুত্থান ঘটায়ে ফেলবে এমন যদি কেউ মনে করে থাকে তবে সে বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। এর আগেও শাপলা চত্বর হেফাজতে ইসলাম সাদা টুপি দিয়ে ঘেরাও করে পুর মতিঝিল অচল করে বসে ছিল দুই দিন । তারপর যা হয়েছে তা আমরা সকলেই জানি। সরকার একসময় তার শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করবেই। ওই মোল্লাদের আত্মবিশ্বাস এতই বেড়ে গিয়েছিল যে বলছিল সরকার পালাবার পথ পাবে না। ওদের মত গর্ধব ওই আত্ম অহংকারেই মরেছে। র‌্যাব যে অপারেশন চালিয়েছিল তাতে তারা ছত্র ভঙ্গ হয়ে যায়। বিরোধী দলের দাবি র‌্যাব নাকি রক্ত গঙ্গা বানায়ে দিয়েছিল সেখানে, কিন্তু নিদিষ্ট কিছু লোককে তারা হতে পারে সরায়ে দিয়েছে কিন্তু বিশাল জমায়েত ছত্র ভঙ্গ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। এগুলো আমাদের চোখের সামনেই হয়েছে। আমার এক কলিগ বললেন হেফাজতে ইসলামের সেদিনকার আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করতে যে র‍্যাবের বাহিনী কাজ করেছিল তার নেতৃত্বে ছিল বেনজির আহমেদ, যার নজির বিহীন দুর্নীতি এখন লোকজনের অবগত।

সুস্থ রাজনৈতিক আন্দোলন কিরকম হওয়া উচিত? এরশাদ পতনের সময় বক্তৃতায় বলেছিল “আমি আপনাদের রাজনীতি শিখাবো”, এর পরপরই সে জাতীয় পার্টি গঠন করে, যে পার্টির কোন ছাত্র সংগঠন নাই বা ছিল না। আজ আমরা দেখি জাতিয় পার্টির নেতাদের অনেকেই দুশ্চরিত্র। যা হোক, দেশের প্রচলিত আইন, রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল, সংসদের অধিবেশন, ৩০০ আসনের এমপি গন এরা যদি জনস্বার্থের কোন দাবি আমলে না নেয়, তখন জনগণ তার জন্য রাজপথে আন্দোলনে নামবে ও তাদের দাবি পেশ করবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে কিংবা রাষ্ট্রপতি বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করবে। সেটা শান্তিপূর্ণ ভাবে করা সম্ভব এদেশে। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে সময় বেধে দেয়া একটা উদ্ধত্তপূর্ণ কাজ এটা তো সবারই বুঝার কথা, কেন সেটা ছাত্ররা বুঝল না সেটা আমার একটা বিশ্বয় বটে। দেশ যখন কার্যকর থাকে, দেশের চারটি মূল মাথা, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, নির্বাচন কমিশনার ও অডিট জেনারেল যখন সজীব ও সক্রিয় থাকে। দেশের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যখন সচল ও স্বাভাবিক থাকে তখন শান্তিপূর্ণ উপায়েই দাবি আদায় সম্ভব। দেশের সংসদ যখন চলমান তখন ৩০০ জন এমপির যে কোন একজন জনগণের দাবি সংসদে উত্থাপন করতে পারে যা নিয়ে সংসদে আলোচনা হতে পারে। আরবিট্রেশনের (আপদ নিষ্পত্তির) এতগুলো উপায় থাকতে কেন আগেই রাজপথে হট্টগোল করতে হবে? যখনই তা করা হয় তখন স্বাভাবিক রাষ্ট্রীয় নিয়ম ভঙ্গ করে কোন কুচক্রী মহল তাতে ইন্ধন যোগাচ্ছে তা সমাজের বিজ্ঞ মহল, শিক্ষিত মহলের বুঝার কথা। তা কেন এ ক্ষেত্রে জনগণ বুঝলো না সেটা কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণার একটা বিষয় হতে পারে। আমার মতে এদেশের জনগণ হুজুগে আর রাষ্ট্র যন্ত্রের প্রকৃত জ্ঞান সম্পর্কে তারা প্রকৃত ধারনা রাখে না। উচ্চ শিক্ষিতরা বেশিরভাগই ডাক্তার না হয় ইঞ্জিনিয়ার যারা রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখে বলে আমার মনে হয় নি, তা যদি থাকতো তা হলে তারা এই চক্রান্ত শুরুতেই ধরে ফেলতে পারতো। আমার স্কুলের বন্ধু মহল আমার সমবয়সী, তাদের যে সকল মতামত আমি সোশাল মিডিয়া আমাদের হোয়াটস এ্যাপ গ্রুপে পেলাম, তাতে আমার আশ্চর্য হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। এদের মধ্যে, আর্মির উচ্চতর পদমর্যাদার অফিসার, উচ্চ শিক্ষিত ডাক্তার, আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার, নন ব্যাংকিং ফিনানশিয়াল অর্গানাইজেশনের প্রাক্তন এমডি, আরএমজির ব্যবসায়ীরা ছিল। তাদের বক্তব্যগুলো বিচার বিশ্লেষণ করলে এদেশের আপামর শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটা স্যাম্পল এনালিসিস পাওয়া যায়। আমার বিচারে তাদের মতামত গুলো ছিল পুরটাই অর্বাচীনের মত। তারা কেউ রাজনীতি বুঝে বলে মনে হয়নি, উড়ো খবর, হুজুগ, স্বেচ্ছাচারী মনভঙ্গী, এসবের এক মিশ্রণ বলে মনে হয়েছে। সুদূর অষ্ট্রিলিয়া থেকে আমার এক প্রিয় বন্ধু যে মন্তব্য করলো তাতেও আমি হতবাক হয়েছি। যখন ঘটনা প্রবাহ আমার মতের পক্ষেই আসলো তখন তারা কিন্তু আমার বলা কথা গুলো সম্পূর্ণই ভুলে গেল, বরং আমার মতামত যে সঠিক ছিল সে বিষয়কে সমর্থন জানানো তাদের ইগোইস্টিক বিষয় মনে হলো বোধ হয়। সাধারণ জনসাধারণের এই জনমত তাই সর্বদাই ভ্রান্ত পথ ধরে আগায়। ঘটনা যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন তাদের হায় হায় করা ছাড়া পথ থাকে না। আমি যখন বললাম, সরকার শুনানির দিন ৮ই আগস্ট থেকে ২১ জুলাই রবিবার উচ্চ আদালতে প্রস্তাব করে আগায়ে এনেছে ও সাধারণ মেধার কোটা ৮০ শতাংশ ও ২০ শতাংশ অন্যান্য কোটা করার প্রস্তাব করবে বলে ঘোষণা দিলো। প্রধান মন্ত্রী যেখানে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের সাথে আলোচনার জন্য আইনমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে দায়িত্ব দিলো, তারাও তা প্রেস মাধ্যমে সবাইকে জানালো তখন তো তাদের আন্দোলন স্থগিত করা উচিত ছিল। আমার স্কুলের বন্ধু মহল তখনও আমার কথায় সায় দেয় নাই। এ থেকে বুঝা যায় দেশের মানুষজন শিক্ষিত হয়েছে ঠিকই, উচ্চ শিক্ষিতও হয়েছে কিন্তু তাদের বিবেক বোধ ও নৈতিকতা বুঝার এখনও অনেক বাকি আছে। অশিক্ষিতদের তো এরাই পথ দেখাবে, কিন্তু যখন এদের শিক্ষাই পূর্ণতা পায় নাই তখন সে আশা করা দুরাশা।

এর পর আমরা যা দেখি তা খুব স্বাভাবিক, পুর দেশে কারফিউ জারি করা হয় ও সেনা মোতায়েন করা হয়। ছাত্রদের তিন জন সমন্বয়কারী তাদের ৮ দফা দাবি পেশ করে ও সরকারের তিন মন্ত্রী তা গ্রহণ করে। পরের দিন সকালে সর্বোচ্চ আদালতের রায় হবে। আমার কথা হলো, এমন একটা আন্দোলন করে দেশ ও জাতিকে থামায়ে দেয়া ও জাতীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করতে বিরোধী শক্তিকে সুযোগ করে দেয়ার দায় কে নিবে। বুঝলাম বেশ কিছু তরুণ প্রাণ ঝড়ে গেছে তার দায় কি শুধু সরকারের? যারা অনিমতান্ত্রিক ভাবে হুজ্জতি আন্দোলন করলো তাদের ঘারে বর্তাবে না তা তো হতে পারে না। ছাত্রদের সামনে আগায়ে দিয়ে যারা পেছনে ওত পেতে ছিল তারাই মূলত দায়ী বলে আমি মনে করি। দেশের মূল প্রায়োরিটি এখন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, এই ধারাকে যারা বুঝতে না পারে তারা মূলত দেশের অগ্রযাত্রায় অযথা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এই বোধটা ছাত্র সমাজ থেকে শুরু করে দেশের সকল সুস্থ জনগণকে বুঝতে হবে। যারা এই সরকারের প্রতি বিরক্ত ও নতুন ব্যবস্থা চায় তাদের বুঝতে হবে বিকল্প কি আছে আমাদের হাতে। দেশকে চালানোর মত দক্ষ বিরোধী কোন শক্তি আছে কি না? আমার মতে নাই। এই মুহূর্তে এই সরকার অপসারণ করা হলে দেশে প্রতিস্থাপক আরেকটি যোগ্য সরকার গঠনের মত যথেষ্ট শক্তিশালী জনগোষ্ঠী আছে কিনা তা নিশ্চিত করেই সরকারের পতন চাওয়া উচিত বলে আমার ধারণা।

সম্পাদনা ও উন্নয়ন ইতিহাসঃ ১৬জুলই২০২৪>২১জুলাই২০২৪> ২৩জুলাই২০২৪> ১৪আগস্ট২০২৪>


আমার কাছে অনেকের প্রশ্ন

https://surzil.blogspot.com/2024/02/blog-post_28.html

ব্লগ লিংকঃ https://surzil.blogspot.com

ফেইসবুক প্রফাইলঃ https://www.facebook.com/mustafa.surzil.rawnak


 

Wednesday, June 19, 2024

শরিফ সারেং পরিবারের গল্প-৭ : একজন সফল মুক্তি যোদ্ধার গল্প

 

মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন, লিখেছেন তাঁর স্ত্রী দিলআরা হোসেনঃ আজকে আমি যার সম্পর্কে লিখতে বসেছি তার সম্পর্কে লেখাটা অতোটা সহজ কর্ম নয়। অনেকটা দুঃসাহসিক কর্ম। কিন্তু তবু ও লিখতে হবে। কারন তা না হলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক এবং একজন বীর মুক্তি যোদ্ধার কথা জানতে পারবে না। আবার অনেকে আমাকে জোর তাগিদ দিচ্ছে তার সম্পর্কে অবশ্যই লিখতে। যার সম্পর্কে  আজ লিখতে  বসেছি সে তো সাধারণ মানুষ  ছিলেন না। তিনিতো ছিলেন অসাধারণ। সমাজে বসবাসকারী মানুষের মাঝে নানা ধরনের ভালবাসার জিনিস থাকে। কিন্তু  এমন মানুষ  কি আছে যে তার  দেশকে প্রচণ্ড ভালবাসে?  দেশকে স্বাধীন  করার  জন্য  যিনি জীবনের  মায়া ত্যাগ করে মুক্তি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। তিনি আর কেউ নয় তিনি আমার স্বামী  এবং আমাদের একমাত্র কন্যা সামিয়া রুহুল অনন্যার বাবা বীর মুক্তি যোদ্ধা মোঃ রুহুল আমিন। তিনি  নিজেই তার মুক্তি  যুদ্ধে থাকা কালীন সময়ের ঘটনাবলী লিখে রেখে গেছেন। আমি সেইগুলি গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করছি। ১৯৫২ সালের ৯ই অক্টোবর এক সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে লৌহজং থানার মৌছা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা  উনি  মৌছা গ্রামের সেরা বিদ্যালয় কাজির পাগলা উচ্চ বিদ্যালয় হতে সম্পন্ন করেন। যখন তিনি ষষ্ঠ শ্রেণীতে ওঠেন তখন তিনি ঢাকায় চলে আসেন। তার মা ও বড় ভাইদের সাথে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। তখন তিনি খিলগাঁও  সরকারী স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে ২ বছর পড়ার পর যখন তিনি ৮ম শ্রেণীতে ওঠেন তখন তিনি টি এন্ড টি হাই স্কুলে  ভর্তি হন এবং সেখান থেকে মাধ্যমিক  পরীক্ষায়  পাশ করেন। তারপর তিনি জগন্নাথ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়  কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে উচ্চ  মাধ্যমিক  পরীক্ষায়  পাশ করেন।  জগন্নাথ কলেজে পড়ার সময়টা ছিল ১৯৭১ সাল। তিনি তখন টগবগে তরুণ। দেশ তখন পাকিস্তানি হানদার বাহিনীর কবলে। বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য শুরু হয়ে গেল স্বাধীনতা সংগ্রাম। দেশ প্রেমিক  রুহুল আমিন তার দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন বুনছিলো মনে মনে। তখন ওনারা শাহজাহানপুরে জালাল দারোগার বাসায় ভাড়া থাকতেন। তার বাসার পাশেই বিরাট খোলা মাঠ ছিলো। ঐ মাঠেই এলাকার তার বয়সী ছেলেদের নিয়ে তিনি আলোচনা করতেন কিভাবে বাংলা দেশকে শএুমুক্ত করা যায়? না আর পরাধীনতা মানা যাচ্ছে না। যে করেই হোক দেশকে স্বাধীন করতেই হবে। তখন এলাকার ৫/৬ জন ছেলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলো তারা মুক্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু  পরিবার থেকে কি অনুমতি মিলবে? সবার চোখে মুখে আতংকের চিহ্ন। কি করবে কেহ ভেবে পাচ্ছে না। অতঃপর যা ভাবা তাই কাজ হলো। সবাই বললো তারা তাদের পরিবারের অনুমতি নিয়েই মুক্তিযুদ্ধে যাবে। একদিন সকালে রুহুল আমিন তার বড় ভাইদেরকে বললো তিনি মুক্তি যুদ্ধে যেতে চান। ভাইরা বললো এটাতো খুবই ঝুঁকি পূর্ণ । তাছাড়া মুক্তি যুদ্ধে যেতে চাইলেই যাওয়া যাবে না। যুদ্ধ করতে হলে আগে ট্রেনিং নিতে হবে। কিন্তু  দেশপ্রেমিক  রুহুল আমিন কোনো বাধাই  মানতে রাজী নন। তিনি বললেন ট্রেনিং নিয়েই তিনি মুক্তি যুদ্ধে যাবেন। তখন তারা বললেন মা যদি রাজী হন তাহলে তুমি যেতে পারবে। সাথে সাথে রুহুল আমিন তার মাকে জড়িয়ে ধরে বললো মা আমি দেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তি যুদ্ধে যেতে চাই। আপনি আমাকে অনুমতি দিন। মা বুঝতে পারলেন এ ছেলেতো কোনো বাধা মানবে না। তাই মা অনুমতি দিয়ে বললেন যা বাবা তোকে আল্লাহর নামে ছেড়ে দিলাম। বীর মুক্তি যোদ্ধা রুহুল আমিন বলেছিলো মাগো আপনার তো ৭ ছেলে এক ছেলে যদি দেশকে স্বাধীন করার  জন্য  জীবন দান করেন তবে সমস্যা কোথায়? যদি আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে আনেন তবে আমি আবার আপনার বুকে ফিরে  আসবো ইন শা আল্লাহ্। মা দেখলেন ছেলেতো  দেশের জন্য  যুদ্ধ  করতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে তাকে আর ফিরানো যাবে না। তাই মা ছেলেকে যুদ্ধে  যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেন। রুহুল আমিন যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি পেয়ে তার এলাকার আরো  ৫ জন ছেলেকে নিয়ে মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য বাসা হতে বের হয়ে গেলেন। একেবারে খালি হাত পায়ে তারা বের হয়েছিলো। তাদের গণ্তব্য ছিলো তারা ভারত সীমান্তে যাবে। তবে তারা যাওয়ার সময় কিভাবে ভারতে ঢুকা যাবে তার একটা ম্যাপ এঁকে নিয়ে গিয়েছিলো। এখানে একটি কথা বলে রাখা উচিত ওনার মাঝে creative বিভিন্ন ধরনের  গুণাবলীর সমাবেশ ছিল যেটা আমি নিজেও প্রতিনিয়ত observe করেছি। সে সকল ব্যাপারে আমি পরে লিখছি। সেদিন যদি উনি নিজ হাতে ভারতে ঢোকার ম্যাপ এঁকে নিয়ে না যেতো তাহলে তাদের পক্ষে ভারতে পৌঁছানো আরো অনেক কঠিন হতো। আমরা এখন কোনো অচেনা জায়গায় যেতে হলে কি করি? গুগলে সার্চ দিয়ে অচেনা জায়গাটার ম্যাপ বের করে সেই  জায়গায় মানুষ এখন সহজেই চলে যায়। কিন্তু বীর মুক্তি যোদ্ধা রুহুল আমিনের আজ থেকে ৫৩  বছর আগে এই বুদ্ধি টা মাথায় এসেছিলো যে একটা ম্যাপ এঁকে  নিয়ে গেলেইতো তাদের পক্ষে ঐ ম্যাপ দেখে ভারতে ঢোকাটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। 

চারিদিকে ছিলো পাকিস্তানি  হানাদার  বাহিনীর ভয়ংকর আক্রমণের তাণ্ডব লীলা। এর মধ্য দিয়েই তারা অনেকটা পথ হেঁটে, অনেক জায়গায় পানি ছিলো সেসব জায়গা সাঁতরিয়ে তারা পার হয়েছিলো। ৪/৫ দিন তারা ভাতের মুখ দেখেনি। শুকনো মুড়ি চিড়া খেয়ে তারা দিন কাটিয়েছিলো। অনেক চরাই উৎরাই পার করে পরিশেষে তারা  ভারতে ঢুকে যায়। ভারতে অনেক আনুষ্ঠানিকতা তাদের সম্পন্ন  করতে হয়েছিলো। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ভারতের বিহার প্রদেশের চাকুলিয়া নামক একটি জায়গায়। চাকুলিয়াতেই ওনাকে যুদ্ধ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিলো।



প্রশিক্ষণ শেষে চাকুলিয়া থেকে তাকে মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক কর্ণেল এম এ জি ওসমাণীর নির্দেশে ১১ নং সেক্টরে মিঃগুপত এবং মেজর জলিলের অধীনে পাঠানো হয়েছিলো। তারপর তাকে ২ নং সেক্টরে কমাণ্ডার  মেজর হায়দারের অধীনে ভারতের মেলাঘরে পাঠানো হয়। সেখান থেকে মেজর হায়দারের নির্দেশে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয় এবং তারই নির্দেশে রুহুল আমিন মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানা কমাণ্ডার হেদায়েতুল ইসলাম কাজলের অধীনে যোগ দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে  বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ যেদিন বিজয় লাভ করে সেদিন বীর  মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিনের শেষ অভিযান ছিলো ঢাকার মিরপুরে। মিরপুরে পাক হানাদার বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি  ছিলো। সেই ঘাঁটিকে ও তারা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন  করে দিয়েছিলো। বিজয়  লাভের কয়েকদিন পর বীর মুক্তি যোদ্ধারা তাদের নিজ নিজ বাসায় ফেরা শুরু করেছিলো। কিন্তু  বীর মুক্তি যোদ্ধা রুহুল আমিন যে দল নিয়ে গিয়েছিলো তারা সবাই ফিরে এসেছিলো কিন্তু রুহুল আমিন তাদের সাথে  আসতে পারেননি। তারা বলেছিলো তারা তাকে খুঁজে পাননি। মিরপুরে শেষ অভিযানের সময় তারা দলচ্যুত হয়ে পড়ে। সবাই ধরে নিয়েছিলো রুহুল  আমিন হয়তো আর ফিরে আসবে না। পরম করুণাময়  আল্লাহর অশেষ  রহমতে বীর  মুক্তি যোদ্ধা রুহুল আমিন বীরের বেশে তার কয়েকদিন পর তার বাসায় ফিরে আসে। তিনি বলেছিলেন  অনেক ভয়ংকর অবস্থার মুখোমুখি তাদের হতে হয়েছে যেখান থেকে বেঁচে আসাটা অনেক কঠিন ছিলো। বাংলাদেশ  স্বাধীন  হওয়ার পর মুক্তি যুদ্ধের অধিনায়ক কর্ণেল এম এ জি ওসমানীর নির্দেশে সকল মুক্তি যোদ্ধারা তাদের অস্ত্র জমা দিয়েছিলো। তারপর ওসমানী  বীর মুক্তি যোদ্ধাদের সনদপত্র প্রদান করেন।

বীর মুক্তি যোদ্ধা রুহুল আমিন আবারও তার ছাত্রজীবনে ঢুকে যান। তিনি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিষয় নিয়ে স্নাতক সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। এই বিশ্ববিদ্যালয়  থেকেই তিনি B.S.C Honours M.S.C ডিগ্রী  লাভ করেন। পড়াশোনা  শেষ করার  পর তিনি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ চলে যান এবং সেখানে প্রায় ৯ বছর চাকুরী করেন। আমাদের বিয়ের পর আমি তাকে বলেছিলাম তিনি মুক্তি যোদ্ধা হয়েও কেনো  বাংলাদেশ  সরকারের  কাছ থেকে কোনো সুযোগ সুবিধা নেন নি। তখন তিনি  বলেছিলেন আমি  যেনো কখনো তাকে এই ব্যাপারে কিছু না বলি। তিনি  বলতেন কিছু পাওয়ার জন্য তিনি  স্বাধীনতা যুদ্ধে যাননি। তিনি তার দেশকে ভালোবাসেন আর তাই তিনি জীবনের মায়া না করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে পেরেছিলেন এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমি তখন তাকে বলেছিলাম ঠিক আছে তোমাকে সরকারের কাছ থেকে কোনো কিছু নিতে হবে না৷ আমরা শুধু মুক্তি যোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ভারত থেকে ভারতীয় মুক্তি যোদ্ধাদের নামের যে তালিকা ভারত পাঠিয়েছিলো সেখানে তোমার নামটা  দেখে আসতে চাই। উনি রাজী হয়ে গেলেন এবং আমাকে নিয়ে মুক্তি যোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে গেলেন। সেখানে গিয়ে উনি ওনার নাম এবং আরো কিছু তথ্য দেওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের লোকেরা বেশ মোটা ২ টি বই নিয়ে আমাদের সামনে দিলেন। বীর মুক্তি যোদ্ধা রুহুল  আমিন এক সেকেন্ড দেরী না করে মুন্সিগন্জ জেলায়  ঢুকে গেলেন এবং বইয়ের প্রথম দিকেই তার নাম পাশে তার বাবা ও মায়ের  নাম দেখতে পেলেন। আমি দেখলাম ওনার  দুই  চোখ বেয়ে কান্না ঝরে পড়ছে। মন্ত্রনালয়ের লোকেরা বললেন ভারতীয় কল্যাণ ট্রাস্টের এই বই ২ টি সবচেয়ে বড় প্রমাণ এবং এরাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন  এদের নাম এখানেই সবাই  এসে দেখতে পারবে। ভারতেও তাদের নামের তালিকা রেখে দেওয়া হয়েছে। তারা বললো  প্রকৃত মুক্তি যোদ্ধা হয়েও এতোদিন  উনি কেনো যোগাযোগ  করেননি? বীর মুক্তি যোদ্ধা রুহুল  আমিন মুচকি হেসে একই কথা বলেছিলেন আমি কিছু পাওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করিনি। এরপর ও মুক্তি যোদ্ধা কমাণ্ড কাউন্সিল  থেকে ও লোক এসে তাকে ফরম  দিয়ে গিয়েছিল  পূরণ করে জমা দেওয়ার জন্য।  কিন্তু  তিনি তা জমা দেননি। এতো ত্যাগী, নির্লোভ জীবনের মায়া না করে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার  বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন  করা এমন বীর যোদ্ধাকে আমরা কি দিয়েছি? কতো অসাধারণ  গুণের সমাবেশ  ওনার মাঝে ছিলো। উনি ছিলেন  গণিত বিশারদ।  গণিতে  ছিলো  তার প্রচণ্ড দখল। যে কোনো জটিল  গণিত  উনি খুব কম সময়েই সমাধান করে ফেলতেন। ঘুমের মধ্যে উনি গণিতের সূত্র বলতেন। শুধু মাত্র আমাদের  শান্তিবাগ এলাকাই না ঢাকা শহরের  বিভিন্ন  স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা তার কাছে গণিত করতে আসতো। মৃত্যুর  আগের দিন পর্যন্ত উনি ওনার গণিতের  জ্ঞান তার ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে বিতরণ করে গিয়েছেন। আমাদের একমাত্র কন্যা অনন্যা কে ও উনি গণিতের ভালো জ্ঞান  দিয়ে গিয়েছেন। জমি মাপার আমিনের কাজও উনি নিজেই করতে পারতেন। মৌছা গ্রামের ওনাদের বাড়ি এবং আশে পাশের বাড়ির সীমানা মেপে উনি নিজেই চিহ্ন বসিয়ে দিয়েছেন। গ্রামের মানুষেরা এখনও দেখা হলে আমাকে এ কথা বলে। ওনার মৃত্যুর পর যখন ওনাকে বাংলাদেশের জাতীয়  পতাকা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় এবং  Guard Of Hounour দেওয়া হয় তখন তার মুখটা  আমাকে ও আমাদের একমাত্র কন্যা অনন্যা কে দেখানো হয়। আমি দেখলাম সেই বীর মুক্তি যোদ্ধা রুহুল  আমিন মুচকি হেসে আছেন এবং তিনি বুঝিয়ে  দিয়ে  গেলেন  আমি জিতে গেলাম যেভাবে ১৯৭১ সালের  ১৬ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের  বিজয় এনেছিলাম ঠিক সেভাবেই আজ ২০১৫ সালের ৮ ই জানুয়ারী তোমাদের কাছ থেকে  কোনো কিছু না নিয়েই আল্লাহর কাছে চলে গেলাম। আমি পরম করুণাময়  আল্লাহর কাছে সব সময় এই দোয়াই করি আল্লাহ যেনো তার ত্যাগের এবং সৎ কর্মের  বিনিময়ে তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। সবাই এই নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা    এবং মহান শিক্ষকের জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ যেনো তাকে জান্নাত বাসী করেন। আমিন। আমিন।আমিন। 

 

জাহীদ মোঃ রহমান রুহুল চাচার ভায়েরা ভাই। উনার ফেইসবুক পোস্ট থেকে রুহুল চাচার শেষ বিদায় কালীন সময়ের বর্ণনা আছে লেখাটাতে।

একজন মুক্তিযোদ্ধার শেষ যুদ্ধঃ-

”তাঁকে আমি চিনি প্রায় চব্বিশ বছর। একজন স‌্বল্পভাষী মানুষ।তবে দেশ এবং মানুষ নিয়ে যখন বলেন তখন অত্যন্ত দরদ আর ভালবাসা নিয়ে কথা বলেন। ক্রমান্নয়ে জানতে পারি তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। দেশের জন্য তাঁর নিখাদ ভালবাসা নিয়ে আমার মনে আর কখনো প্রশ্ন জাগেনি।  একদিন কথা প্রসংগে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সনদটি দেখতে চেয়েছিলাম।তিনি ঠোটে অব্যক্ত অভিমান আর বেদনামিশ্রিত হাসি ঝুলিয়ে বললেন,’কি হবে এগুলি দিয়ে? স্বাধীনতার চল্লিশ বছর কেটে গেল বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রুহুল আমিন তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র সংগ্রহ করার চেস্টা করলেন না। হঠাৎ করেই প্রায় তিন বছর আগে জানতে পারলাম তিনি মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহের জন্য ছুটাছুটি করছেন। এ অফিসের বারান্দা সে অফিসের করিডোর এর গোলকধাঁধায় সময় গড়িয়ে যায়। ঘর্মাক্ত শরীরে মন্ত্রনালয় আর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের অলিগলিতে পায়চারী করেন, মাঝে মাঝে উপরের দিকে চেয়ে বিরবির করেন, ‘এ জন্যই কি’? তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র মেলে না। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে গত বছর ২৪ জুলাই ২০১৪ তারিখে সরকারী গেজেটে তাঁর নামটি প্রকাশিত হল। এবার তাঁর সাফা-মারওয়া যাত্রার দ্বিতীয় পর্বের শুরু। তিনি ৮ জানুয়ারী ২০১৫ তারিখ সকালে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে গিয়েছিলেন তাঁর সনদের জন্য। ব্যর্থ হয়ে দুপুরের পরে বাসায় ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুততার সাথে এ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে নিয়ে হার্ট ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা। রুপসী বাংলার মোড়ে ভীষন ট্রাফিক জ্যাম। অগত্যা গাড়ী ঘুরিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সী। তাঁর আর জ্ঞান ফেরেনি। শুক্রবার শেষ অপরাণ্হে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও তাঁর শবদেহে পুস্পষ্তবক অর্পণ করা হয়। জানা গেল আগামী রবিবার তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র পাওয়া যাবে। কানে ভেসে এল,’কি হবে এগুলি দিয়ে?”


সম্পাদনা ও উন্নয়কালঃ ২২জানুয়ারী২০২৪> ১৯জুন২০২৪>



 

Wednesday, June 12, 2024

ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে চ্যাট জিপিটি ও আমাদের আলোচনা

 

বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে একটা বিশ্লেষণ ধর্মী লেখা ”ব্যাংকিং সেক্টর ডেটা এনালিসিস ২০২৩ -২৪ অর্থ বছর” লেখার পর দেখলাম সংগৃহীত আরো কিছু তথ্য আছে আমার হাতে। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে এ বিষয়ের আলোচনা ও মতামত সহ চ্যাট জিপিটি 3.5 আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর বিশ্লেষণটা দিয়ে এই লেখাটা সাজিয়েছি। তাতে করে বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংক সেক্টর সম্পর্কে একটা ভিন্ন ধর্মী মতামত পাওয়া যেতেও পারে।  

উপরের চার্টটি প্রাইমারি ডাটা থেকে প্রস্তুত করা হয়েছে। একটা স্যাম্পল বেইজ ফান্ড ফ্লো থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের পরিস্থিতির একটা খন্ড চিত্র পাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। চার্টটি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক প্রাথমিক অবস্থায় অর্থাৎ জুলাই ২০২৩ এ নিচের দিকে থাকলেও মে ২০২৪শে ক্রমাগত ফান্ড কালেকশন বাড়িয়েছে। অপর দিকে এসআইবিএল অক্টোবর ২০২৩শে একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে গেলেও মার্চ ২০২৪ এ সামান্য হলেও ফান্ড পেয়েছে। ওদিকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি একটা স্টেডি লাইন শো করছে। এক্সিম ব্যাংক ট্রেন্ড লাইনে উত্থান পতন হলেও তাতে ফান্ড ফ্লো ভারসাম্যেই রয়েছে। উপরোক্ত লাইন চার্ট থেকে বুঝা যায় চারটি ব্যাংকের মধ্যে মারাত্মক প্রতিযোগিতা হয়েছে ফান্ড কালেকশনের বিষয়ে। আর এই প্রতিযোগিতায় তাদের হাই কস্ট ডিপোজিট গ্রহণ করতে হয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরে একটা টার্বুলেন্সের জন্যই যে এই প্রতিযোগিতা তা বুঝা যায়।

৩রা জানুয়ারি ২০২৪ এ আমার ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ হাই স্কুলের বন্ধুদের (এসএসসি ১৯৮৯) হোয়াটস এ্যাপ গ্রুপে সাম্প্রতিক ব্যাংকি পরিস্থিতি নিয়ে ভালো একটা আলোচনা হয়ে যায়। সেই আলোচনাটা নিচে উল্লেখ করলাম। আলোচনায় যেমন ব্যাংকার রয়েছে, তেমনি আরএমজি সেক্টরের ইনভেস্টার আছে, ঢাকা সিএমএইচ এর আর্মির লে. কর্নেল ডাক্তারও আছে, স্বনামধন্য আর্কিটেক্টও আছেন, তাই এই আলোচনাটা সাধারণের মধ্যে ব্যাংকিং সম্পর্কে পেশাজীবীদের জনমত বা তার একটা প্রতিফলন বলা যেতে পারে। স্কুল বন্ধুদের মধ্যে কথা হওয়ায় তুই তুকারি আছে যা আমাদের সমাজের চল ও পাঠকদের সহজ ভাবে নিতে অনুরোধ করবো। সাম্প্রতিক ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে মানুষের মনোভাবটা কি তা এই আলোচনা থেকে উঠে আসবে বলে আশা করা যায়।

মারুফ মনসুর (প্রাক্তন এক এনবিএফআই এর এমডি) বলছিল সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় টাকা গায়েব হওয়ার অভিযোগ - ডিবিসি নিউজে শিরনামাকারে এসেছে । তার প্রেক্ষিতে ডা. লে. কর্নেল নুরুল মাসুদের বক্তব্য এত গায়েব করলে আবার লাভ হয় কি ভাবে? এভাবেই আলোচনার সূত্রপাত হোয়াটস এ্যাপের গ্রুপে। আমিঃ This year we are in First position in profit রেজানুর সোহেলঃ Public perception is otherwise আমিঃ ডাটা কথা বলে, তুলনামূলক চিত্র দিতাছি খাড়া রেজানুর সোহেলঃ We are good in data manipulation আমিঃ কি সব বলিস, এটা কি কোন পাতি গারমেন্টেস এর উইন্ডো ড্রেসিং। পুরা দেশের ব্যাংকিং জগত এর সাথে জড়িত। এখানে ডাটা মেনুপুলেশন করলে চলবে? সরিষাই যদি ভুত হয়ে যায় তো ভুত ছাড়াবে কে? রেজানুর সোহেলঃ You know how we calculate our country FCY reserves…..now IMF suggest us to recalculate আমিঃ কোন ব্যাংকের মুনাফা উইন্ডো ড্রেসিং করার কোন উপায় নাই। বাংলাদেশ ব্যাংক আছে অভিভাবক। কেউ উল্টা পাল্টা তথ্য দিলে তার দফা রফা করে দিবে। তোরা কি যে বলিস, বুঝি না। আমাদের ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার খবরও তো আমরা পাই। আমাদের নন পারফর্মিং এ্যাসেট কমেছে। লোন রিকভারি বেড়েছে। তরুণ প্রজন্ম উচ্চতর পদে চলে আসছে। তারই প্রতিফলন এবারকার মুনাফায় প্রথম হওয়া। ব্যাংকিং সেক্টরে ভুয়া তথ্য দিলে সে তৎক্ষণাৎ ধরা পরে যাবে। এটা লুকোচুরির ব্যাপার না। তোরা সব বোকার স্বর্গে বসবাস করিস। রেজানুর সোহেলঃ Bankers bank এর গায়ের চামড়া নাই…হেরা কী করবো? আমিঃ সরকারের স্ট্যাটিসটিক্স দপ্তর গণসুমারি করে যখন বললো দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ই আছে, আমার ড্রাইভার বলছিল ওটা ভুয়া তথ্য দিছে। আমি বললাম এই খবর ভুয়া হলে সরকার চলতে পারবে না। এই তথ্যর সাথে দেশের অর্থনীতি, মুদ্রানীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি সব জড়িত। আর দেশের একটা বড় মন্ত্রণালয় ভুয়া তথ্যের উপর ভর করে সব সিদ্ধান্ত নিবে, এটা আমার গাড়ির ড্রাইভার মনে করতে পারে কিন্তু আমার তাতে সায় দেয়া কিংবা সেরকম মনে করা সাজে না। ১৮ বছরের স্কুলিং এর বিদ্যা তাতে লজ্জা পাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন যে অবস্থায় আছে তা প্রশংসার দবি রাখে। এনপিএসবি, আরটিজিএস এর মত ব্যবস্থা, এফআইইউ এগুলো দারুণ কাজ করছে। ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে তোরা তেমন কিছু জানিস না। খামাখা তর্ক করিস। ১ মিনিটে এখন সিআইবি বের করা যায় যে কারো। ঋণ খেলাপি কিনা তা জানা যায়। কি মনে করিস তোরা বাংলাদেশ ব্যাংককে? তোরা সব আজব দেশের বাসিন্দা, বাংলাদেশ সম্পর্কে কিচ্ছু জানিস বলে মনে হয় না। সোহেলঃ Paranoid….we are miraculous highly blessed by nature আমিঃ মনে করতে থাক, আজগুবি সব চিন্তা ধারা। দেশ চলতেছে ঠিক মতই। কোথাও চরম অবনতি হলে তার সংবাদ ঠিকই পেতাম। আমার নেটওয়ার্কের কোথা থেকে কোন নেগেটিভ তথ্য নাই। সোহেলঃ bottom line…..We are not able open LC as wanted, banks are calling us several times for deposits. Banks are in FCY crunch and LCY crunch আমিঃ সারা পৃথিবীতে ডলার ক্রাইসিস, যখন বাবল এন্ড বার্স্ট হয় তখন এ দেশে বেচে গেছে। আমেরিকায় মানুষ চাকরি হারাচ্ছে অথচ আমরা তার ধাক্কা সামলায়ে উঠেছি। করনার সময়ও আমরা পারছি। এই ডলার ক্রাইসিসেও আমাদের দেশে পাকিস্তানের মত ২০০ টাকা হয় নাই ডলারের দাম। চোখে ঠুলি পড়ে থাকলে হয়? আমাদের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে তোরা সুতা বানাতে পারিস না, কাপড় হয় না আমাদের দেশে? সব কজে এলসি এলসি করিস কেন। বেক টু বেক এলসি না করে দেশিয় সম্পদ কাজে লাগতে পারিস না? আমেরিকার এক ক্লায়েন্ট বলছিল পাটের বানানো ডিসপোজেবল গারবেজ ব্যাগ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে এ দেশে? পাটের ডিসপোজেবল গারবেজ ব্যাগ হলে প্লাস্টিকের গারবেজ ব্যাগ বাতিল হয়ে ওটার জায়গা এটা দখল করে নিবে। নতুন কিছু করতে পারিস না, খালি এলসি খুলতে পরছি না দেখে হা হুতাশ। সোহেলঃ পাকিস্তান এর সাথে তুলনা করে শান্তি পাওয়ার কোন কারণ দেখি না। আমিঃ আজকের রেট ছিল 124.70 টাকা। আরিফ আমাদের বন্ধু সকালে আসছির আমার অফিসে ডলার রেট জানতে। আমার এক মামা প্রায় ১৯ লক্ষ টাকার ডলার কিনে রাখছে এই ভেবে যে দাম আরো বাড়বে, সে বলছিল ৫০০ টাকা হবে, তাও দুই মাস আগে, কই বাড়ছে? ২০০ টাকাও তো হয় নাই। বাড়বে হয়তো কিন্তু কেউ শিওর দিচ্ছে শুধু মাত্র তার চাপার জোড়ে, নাও বাড়তে পারে। অনুমান অনুমানই, তোগো যা মনে চয় ভাবতে থাক। আমার সময় নষ্ট করিস না। সোহেল এলসি খুলতে পারতাছে না তাই তার ধারনা হইছে আমাগো দেশ রসাতলে গেছে। ও ভাবতে থাক আর দেখতে থাক। সোহেলঃ কোন হলায় কইসে ? India’s FCY reserve is 500 billion আমিঃ তোরে সাধারণ একটা ইনডিকেটর দেই (ডাটা থাক বাম হাতে) নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য বাড়ছে কিন্তু বিরোধী দল গুলা রাস্তায় এক লাইনে ব্যানর নিয়া মিছিল করে। পিছনে জনগণ নাই, মানেটা কি? নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য যদি মানুষের ক্রয় সীমার বাইরে চলে যাইত তা হলে রিক্সা ওয়ালা থেকে শুরু করে উচ্চ মধ্যবিত্তর পেটে টান পড়তো, তারা ঘরে থাকতে পারতো না। শ্রীলংকার মত অবস্থা হইতো। নিশ্চয়ই মানুষের পারচেজিং পাওয়ার পেরটি (পিপিপি) বাড়ছে। ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে তা না হলে বিরোধীরা এটারে ইস্যু বানায় না কেন? বানাতে পারছে না তাই। বিরোধী দলগুলার ইস্যু তত্ত্বাবধায়ক সরকার, দ্রব্য মূল্যর উচ্চ মূল্য না। এটা কি একটা সংকেত না আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ক্ষেত্রে? বাজারে পণ্য আছে ক্রেতাও আছে তার মানে অর্থনীতি সচল আছে স্বাভাবিক আছে। এটা কি কাউকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায়ে দেয়া লাগবে?

উপরের আলোচনাটা হয়েছিল জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এর পর সময় পর হয়ে যখন বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে মার্জার আর একুইজিশন প্রস্তাব করছিল বাংলাদেশ ব্যাংক তখন ৯ এপ্রিল এ নিচের আলোচনাটা হয়।

Maruf monsure, Ex MD, NBFI> ভাল ছেলের সাথে খারাপ মেয়ের বিয়ে দিলে যা হয়, আমাদের ভাল (?) ব্যাংকগুলার সাথে খারাপ ব্যাংকের Merger and acquisition  এ-ও তাই হচ্ছে আর এর পরিণতি মোটেও ভাল হবে বলে মনে হয় না। বিশাল দুর্নীতি ঢাকা পড়ে যাবে আর ভাল ব্যাংকগুলার পাইন মারা যাবে। সময় কথা বলবে। সাধু সাবধান! লন্ডন থেকে ডাক্তার Tomal>আমারও তাই মনে হয়। আমি তো ব্যাংকিং এর কিছুই বুঝিনা, তবে মনে হচ্ছে এর মাধ্যমে কতগুলো চোর বাটপারের এক্সেপ রুট তৈরি করা হচ্ছে। একটু ভালো ব্যাংকগুলোর টাকা দিয়ে ওইসব চুরি করা টাকা কম্পেনসেট করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেলে চোর গুলোকে আইডেন্টিফাই করা যেতো, কিন্তু এখন তো এইসব কাহিনী হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে, কেউ জানবেও না। Lipu in Education sector> এটা করা হচ্ছে শুধুমাত্র যারা হ‌্যালোর জোরে হাজার কোটি টাকা লোন নিয়েছে তাদের বাচানোর জন‌্য আর গোটা আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করার জন‌্য। সামনে পরিণতি ভয়াবহ। সম্ভবত যারা আমাদের দেশ নিয়ে সুদুপ্রসারি প্লান করেছে তারা এখন জাল গুটাইয়া আনতেছে। Taraque H. Chowdhury, Architect> আমারও হুবুহু এই জাল গুটানোর ফিলিংটা হচ্ছে।

উপরে আমার বন্ধুদের আলোচনাটি এ দেশের পাঁচ মিশালী জনগণের মত বলে ধরে নেয়া যায় কিংবা একটা স্যাম্পল জনমত বলে ধরে নেয়া যায়। এখন জুন মাস চলছে, বেশ কয়েকটা ব্যাংক মার্জার আর একুইজিশনও হয়ে গেছে। সব থেকে মজার মন্তব্যটা গতকালের। আমার মামা ফোন করে জানতে চাইলো রিউমার শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংক নাকি গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না? আমি বললাম, হ্যাঁ মামা আমিও তাই শুনেছি, মামা জিজ্ঞাসা করলো লোকজন নাকি ব্যাংক থেকে টাকা উঠায়ে ঘরে নিয়ে জমা করছে, কথাটা শুনে আমি হেসে দিয়েছিলাম। ব্যাংকিং পরিস্থিতি যে ভয়াবহ তা বুঝা যায় কিন্তু কতটা ভয়াবহ তা বুঝা সত্যিই মুশকিল। একেবারে স্বচ্ছ করে বুঝার উপায় নাই, এই মুহূর্তে শুধু এটুকুই বলা যায়।
চ্যাট জিপিটি বর্তমানের ফ্রি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া আছে। পুর ইন্টারনেট মুহূর্তে ঘেঁটে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যটা সে ঠিক ঠিক বের করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে তাও আবার যে ভাষায় আপনি চাচ্ছেন সেই ভাষাতে উপরন্তু সে আপনার প্রশ্ন করা ও তার উত্তর এর উপর ফিড ব্যাক নেয় যাতে সেও শিখতে পারে। ক্রমাগত এই যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তা উন্নত হচ্ছে আর তাকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে বরং তাকে উন্নত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। আজকাল প্রায় সব বিষয়েই মানুষকে গুগল করতে শুনা যায় কিন্তু গুগল আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় লিংক গুলো ধরায়ে দিবে যা থেকে আপনাকে উত্তরটা জেনে নিতে বা খুঁজে নিতে হবে কিন্তু চ্যাট জিপিটি আপনাকে আপনার প্রশ্নের উত্তর ইন্টারনেট ঘেঁটে একদম ভাজা মচমচা করে রেডি করে দিবে। অচিরেই মনে হয় চ্যাট জিপিটি কিংবা তারো চেয়ে উন্নত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তা) আমাদের ব্যবহারিক জীবনের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠবে।

প্রশ্ন ১) বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ব্যাংকিং সেক্টরের সম্যক অবস্থাটা বলেন?
 

চ্যাট জিপিটি 3.5 : বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর সাম্প্রতিক কয়েক বছরে অনেক পরিবর্তন এবং উন্নতি অনুভব করেছে। এই সেক্টরের বিকাশ সংকেত হিসেবে বিভিন্ন উন্নতি ও চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছেঃ

ডিজিটাল ব্যাংকিং: বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রণালী ত্রাণ পাচ্ছে। অনেক ব্যাংক অ্যাপ এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং পরিষেবা উপলব্ধ করে এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিয়ে অনেক জনগণ পরিচিত হয়েছেন।
ফিনটেক এবং স্টার্ট-আপ: ফিন্যান্সিয়াল টেকনোলজি (ফিনটেক) সেক্টরে বাংলাদেশে অনেকগুলি স্টার্ট-আপ উদ্ভাবন করেছে, যা ব্যাংকিং পরিষেবা উন্নত করতে সাহায্য করছে।
মোবাইল ফিন্যান্স: মোবাইল ফিন্যান্স সেবায় অনেক জনগণের অংশগ্রহণ হচ্ছে, যা তাদের অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ে অধিকারী করছে।
নতুন প্রযুক্তি এবং সুরক্ষা: ব্যাংকিং সেক্টরে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সাথে সাথে সিকিউরিটি এবং ডাটা সুরক্ষা বাড়াচ্ছে।

চ্যালেঞ্জ: তবে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন ক্রেডিট রিস্ক, প্রযুক্তি স্বার্থ, এবং ব্যাংকিং সেবার জন্য সামাজিক এবং আইনি বাধা।
সারাংশঃ বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর প্রযুক্তিগত উন্নতি এবং ডিজিটাল প্রণালীর মাধ্যমে ব্যাপক সংস্থানিক ব্যবস্থা উন্নত করছে, তবে এখনো কিছু চ্যালেঞ্জের সামনে রয়েছে।

প্রশ্ন ২) বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলোতে যে লিকুইডিটি ক্রাইসিস তার কারণ ও প্রভাবক গুলো কি কি?

চ্যাট জিপিটি 3.5 : বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে কিছু ব্যাংকের মধ্যে লিকুইডিটি ক্রাইসিস হয়েছে, যা প্রধানত নিম্নলিখিত কারণে ঘটেছে:

জোরের ক্রেডিট বৃদ্ধি: কিছু ব্যাংক প্রাসঙ্গিক ভাবে জোর করে ক্রেডিট প্রদান করেছে, যা লিকুইডিটি সংকটে পরিণত হয়েছে।
ট্রাস্ট ক্রেডিটের সমস্যা: কিছু ব্যাংকে একের পর এক ট্রাস্ট এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে অসামঞ্জস্য লেনদেনের কারণে প্রধানত লিকুইডিটি সংকট ঘটেছে।
অজানা রিস্কের উপর অত্যধিক নির্ভরতা: কিছু ব্যাংক অজানা রিস্কের উপর অত্যধিক নির্ভরতা করেছে, যা পরবর্তীতে লিকুইডিটি সংকটে ফেলেছে।
অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং মার্কেটের বর্ধন: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কিছু অবস্থা এবং বিদেশী মার্কেটের বর্ধন কারণে কিছু ব্যাংক লিকুইডিটি সংকটে পড়েছে।

এই লিকুইডিটি সংকট গুলির ফলে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে নিরাপত্তা ও ভারসাম্যর বিশেষ কিছু সমস্যায় পড়েছে, যা হতে পরিত্রাণ পেতে প্রচুর প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

প্রশ্ন ৩) বাংলাদেশে ইসলামী শরিয়া ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক গুলোর সাম্প্রতিক সামর্থ্য কতটুকু?

চ্যাট জিপিটি 3.5 :  ২০২২ সালের তথ্যর উপর নির্ভর করে করা বিশ্লেষণে বলা যায়, বাংলাদেশে ইসলামী শরিয়া ভিত্তিক ব্যাংক গুলো প্রায়শ্চিত্তিক গতি অনুভব করছে। কিছু বৃহত্তর ইসলামী ব্যাংক যা প্রধানত বাংলাদেশে প্রকাশ্যে কাজ করছে এবং সকল প্রধান সাংবাদিক রিপোর্ট অনুসারে তাদের অনেকগুলি অগ্রগতির ক্ষেত্র তুলে ধরেছে।

ইসলামী ব্যাংকিং সেক্টর বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে বেশ উন্নতি করেছে কারণ এটি ব্যাংকিং প্রক্রিয়াকরণে শীর্ষ গুণগত উন্নতি এনেছে।  যদিও এটি নির্দিষ্ট সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হয়নি, তবে সামগ্রিক ভাবে মনে হয় যে ইসলামী ব্যাংকিং সেক্টর বাংলাদেশে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জনগণের মধ্যে এর প্রতিষ্ঠান এবং সেবার জন্য আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সারাংশ হিসেবে, বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকিং সেক্টর সাম্প্রতিক সময়ে উন্নতির একটি ট্রেন্ড প্রদর্শন করেছে, তবে সেখানে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা রয়েছে।

প্রশ্ন ৪) বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে এস আলম গ্রুপের ভূমিকা কি?

চ্যাট জিপিটি 3.5 : সালাউদ্দিন আলম এবং তার পরিবারের গঠিত এস আলম গ্রুপ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলির একটি বৃহত্তর এবং প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান। এস আলম গ্রুপ ব্যাংকিং সেক্টরে তাদের অধিষ্ঠিত রয়েছে এবং এটি বাংলাদেশের ব্যাংকি অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে।

এস আলম গ্রুপের অন্তর্গত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক এবং অন্যান্য বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের এই প্রতিষ্ঠানগুলি বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে এবং সেক্টরের উন্নতি ও বৃদ্ধির সাথে সাথে কার্যক্রম করে যাচ্ছে।

সারাংশঃ এস আলম গ্রুপ বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।

Question 5 to Chat GPT 3.5: How do you predict the development of Bangladesh's Banking sector?

চ্যাট জিপিটি 3.5 : Predicting the development of Bangladesh's banking sector requires considering various factors, including economic indicators, government policies, technological advancements, and global economic conditions. While I cannot make future predictions with certainty, I can provide an analysis based on historical trends and existing data.

Here are some factors to consider:

Economic Growth: Bangladesh has experienced robust economic growth over the past decade, driven by its garment industry, remittances, and a growing middle class. A strong economy generally supports a thriving banking sector.

Financial Inclusion: The government and the central bank of Bangladesh have been promoting financial inclusion initiatives to bring more people into the formal banking system. This includes expanding branch networks, promoting mobile banking, and offering financial literacy programs.

Regulatory Environment: The regulatory framework plays a crucial role in shaping the banking sector. Bangladesh Bank, the central bank of Bangladesh, has been implementing reforms to strengthen the sector, improve governance, and enhance risk management practices.

Technology and Innovation: Technological advancements, including digital banking, fintech solutions, and online payment systems, are transforming the banking landscape globally. In Bangladesh, there has been a growing focus on adopting digital solutions to enhance efficiency, reach underserved populations, and offer innovative financial products and services.

Challenges: The banking sector in Bangladesh also faces challenges, such as non-performing loans, governance issues, and cyber security risks. Addressing these challenges effectively is crucial for sustainable growth and stability.

Given these factors, the development of Bangladesh's banking sector is likely to continue evolving, driven by economic growth, technological advancements, and supportive government policies. However, addressing existing challenges and ensuring robust risk management practices will be essential to maintain stability and foster long-term growth.

It's important to note that unforeseen events, changes in global economic conditions, or shifts in government policies can also impact the trajectory of the banking sector. Therefore, continuous monitoring and adaptive strategies will be crucial for stakeholders in the banking industry in Bangladesh.

চ্যাট জিপিটি 3.5 কে করা উপরের পাঁচটি প্রশ্নর সুন্দর উত্তর প্রদান করেছে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। আছিরেই এটি আরো উন্নত হবে আশা করা যায়। অনেকে ভয় পায় যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি এতটাই উন্নত হয়ে যায় তবে তো সে মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যাবে এবং হয়তো কোন একসময় মানুষ এই বুদ্ধিমত্তার উপর এতটাই নির্ভরশীলে হয়ে যাবে যে সে তার নিজের সৃজনশীলতা হারায়ে ফেলতে পারে। এই আশংকা নিতান্তই নির্বুদ্ধিতা মনে হয় আমার কাছে। ডিনামাইটের আবিষ্কার মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করে নাই বরং উন্নতিতে অধিক সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যতই উন্নত হোক না কেন তা মানব বুদ্ধিমত্তাকে সহায়তা করতে পারে কিন্তু তাকে অতিক্রম করতে পারবে না কারণ স্রষ্টাকে সৃষ্টি কখনই অতিক্রম করতে পারে না। সৃষ্টি যতটা উন্নত হবে স্রষ্টা তার চাইতেও উন্নত অবস্থানে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক নিয়ম। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কল্পকাহিনী রচনা সম্ভব কিন্তু যারা বাস্তবতার সাধারণ সূত্রগুলো বুঝে তাদের কাছে এটা অত্যন্ত পরিষ্কার যে যন্ত্র কখনই মানব সভ্যতার অতিবর্তী হতে পারবে না, সব সময় অনুবর্তী হয়েই থাকতে হবে। এমনকি যন্ত্রকে যদি মানব চেতনার মত সেল্ফ লার্নিং ও সেল্ফ ডেভেলপিং ক্যাপাবিলিটিও প্রদান করা হয় তবুও মানুষ তার লাগাম নিজের হাতে রাখবে। এটাই সৃষ্টি ও স্রষ্টার মধ্যকার প্রাথমিক, প্রাকৃতিক ও একমাত্র শর্ত।

সম্পাদনা ও উন্নয়ন ইতিহাসঃ ৩জানুয়ারী২০২৪> ১৮মার্চ২০২৪> ২৭মার্চ২০২৪> ৩১মার্চ২০২৪>৩১মে২০২৪>১২ জুন ২০২৪

আমার কাছে অনেকের প্রশ্নর উত্তর 

https://surzil.blogspot.com/2024/02/blog-post_28.html

ব্লগ লিংকঃ https://surzil.blogspot.com

ফেইসবুক প্রফাইলঃ https://www.facebook.com/mustafa.surzil.rawnak

 চ্যাট জিপিটি 3.5 : https://chatgpt.com