Thursday, July 25, 2024

সুস্থ – অসুস্থ রাজনৈতিক আন্দোলন প্রসঙ্গে


আমি পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব একজন এদেশীয় নাগরিক যে ছাত্র জীবনে কিংবা চাকুরী জীবনে কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করেনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত কোন একপেশে রাজনৈতিক মনোভাবও পোষণ করিনি। আমার জীবদ্দশায় ১৯৮৫ সাল থেকে এরশাদ সরকার এর শাসন আমল ও তার পতন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন, প্রধান দুটি দলের পালা বদলে ক্ষমতায়ন ও বেশ কয়েকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় তাদরে আসা সহ বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক উত্থান পতনের সাক্ষী হয়েছি। । আমি যখন নিশ্চিত হই যে, আমি এদেশ ছেড়ে অন্যত্র যাবো না ও আমার তিন সন্তানও এদেশেই তাদের জীবন অতিবাহিত করবে তখন স্বাভাবিক ভাবেই রাজনৈতিক ভাবে নিজে ও পরিবারকে সচেতন করা আমার কর্তব্য ধার্য করি। সেই লক্ষ্যই আমি নিজে ও আমার সন্তানদের কে দেশের ইতিহাস, জাতীয়তা বোধ ও রাজনৈতিক ভাবে সচেতন করতে প্রয়াস পাই। পাশাপাশি আমার চিন্তা ভাবনা গুলোও লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেই। এরকম সময়ে ১লা জুলাই থেকে ছাত্রদের মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় ও তা এক পর্যায়ে, অর্থাৎ ১৬ তারিখ তা তুঙ্গে উঠে যায়। সরকারের তাদের পক্ষে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল ও আদালতের ৮ই আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করলেও ছাত্ররা রাষ্ট্রপতি বরাবর তাদের স্মারক লিপি প্রদান করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে একটি সমাধান চায়। তারা ১৮ তারিখ পুর দেশে লকডাউন (ধর্মঘট বা হরতাল) এর ঘোষণা দেয়। আমি তিন দিন (১৪ থেকে ১৬ জুলাই, ২০২৪) বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এর একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ব্যস্ত ছিলাম। এর মধ্যেই হোয়াটস এ্যাপ গ্রুপ গুলোতে আলোচনা হচ্ছিল। আমি আমার মতামতও দিচ্ছিলাম। অনেকেই আমার মতামতের সমালোচনা করে কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় আমার অনুমানই সঠিক হয়ে দেখা দেয়। ছাত্রদের এই আন্দোলনকে পিছন থেকে উস্কে দিয়ে তৃতীয় পক্ষ যারা বর্তমান রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধাচরণ করে ব্যর্থ হয়েছে তারা উপরে উঠে আসে। ১৯শে জুলাইয়ে তাদের চেহারা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। যা ছিল ছাত্রদের নৈতিক আন্দোলন আর যার প্রতি পাবলিক সেন্টিমেন্টও ছিল পক্ষে, সেই সুযোগে বিরোধী মতাদর্শের লোকজন সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদে আগুন দেয়া শুরু করে। পুর দেশে ২৫০ প্লাটুন বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ –আধা সামরিক বাহিনী) ও ঢাকা শহরে ২৫ প্লাটুন বিজিবি নামান হয়। পুলিশ আর র‌্যাব ঢাকা ও সারা দেশে সক্রিয় হয় ও সহিংস আন্দোলনকারীদের দমনে কাজ করে। সংবাদ মাধ্যমে বলা হয় সারা দেশে ৩৫ জন লোক এই সহিংসতায় নিহত হয় জুলাইয়ের ১৯ তারিখ পর্যন্ত।

১৬ জুলাই ২০২৪ সন্ধ্যায় মেট্রোরেলে বাসায় আসতে গিয়ে সেক্রেটারিয়েট স্টেশনে নামলাম, শুনলাম বাসে আগুন দিচ্ছে দেখে স্টেশন থেকে বের হওয়ার সব দরজা ওরা বন্ধ করে দিয়েছে, তাই পুনরায় উপরে উঠে মেট্রোরেলে মতিঝিল যেয়ে নেমে রিক্সায় করে বাসায় পৌঁছলাম। সব টিভি চ্যানেল ঘেঁটে ও ইউটিউব থেকে সব পক্ষের সব সংবাদ শুনলাম। প্রধান মন্ত্রীর ও ওবায়েদুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী সহ সময় টিভির লাইভ টক শোতে ছাত্র নেতাদের বক্তব্যও শুনলাম। সময় টিভির সব খবরে সারা দেশে ছাত্রদের তন্ডবও দেখলাম একের পর এক। আমার বুদ্ধিতে যা কুলায়। যা বুঝলাম তা হলো পুর ছাত্র আন্দোলনটা শুরু হইছে আকস্মিক, কিন্তু হাইকোর্টের পূর্বের রায় স্থগিত করে আগস্টের ৮ তারিখ শুনানির কথা বলার পরও ছাত্রদের আন্দোলন ত্যাগ না করা এবং প্রধান মন্ত্রীর একটি সাধারণ মন্তব্যকে নিজের ঘারে নিয়ে নেয়া মোটেও সমর্থনযোগ্য মনে হলো না আমার কাছে। অপর পক্ষে ছাত্রলীগকে ক্ষেপায়ে তাদের সংঘর্ষে লিপ্ত করাটা মোটেও স্বাভাবিক ছিল না। পুর ব্যাপারটাই ম্যানুফেকচার্ড বা কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলে আমার মনে হয়। দেশের সংবিধান ও জন প্রশাসন সংবিধান মতই চলবে, সেই মতই সকল বিপত্তি নিষ্পত্তি হবে, এটা ছাত্র সহ সকল যোগ্য শিক্ষিত ও শিক্ষারত নাগরিককে মেনে নিতে হবে সেটাই কাম্য। ”গুলির ঘটনা ও মৃত্যু” দুটাই ছাত্র নামধারীদের কাজ বলে আমার মনে হলো যাদের অন্যকেউ নিয়োগ দিয়েছে হয়তো। এটা পুরটাই বানানো একটা খেলা যাতে ছাত্রদের হুজুগে অংশগ্রহণ ঠিক হচ্ছে বলে আমার মনে হয়নি। -যদিও বিষয়টি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার ধারনা কিছুদিন আগে বিগত সামরিক প্রধান ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ প্রধান সহ একসময়কার প্রচুর ক্ষমাতাবন অনেক অসাধু ব্যক্তির অসৎ উপায়ে বিপুল সম্পদ অর্জন ধরা পরে যাচ্ছিল জনগণের সামনে ও সংবাদ মাধ্যমে। তারা বর্তমান সরকারের কাছে আশ্রয় না পেয়ে বিরোধী শক্তির সাথে হাত মিলায়ে এই পরিকল্পনা ফেঁদেছে বলে আমার অনুমান হলো। আমি নিশ্চিত নই তবে আমার ধারনা এসব অসাধু লোকেরাই, যারা বর্তমান সরকারের পতন চায় তারা সুকৌশলে এই দেশিয় ছাত্রদের ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে থাকতে পারে। আমি বহু আগে ইউরোপে সম্ভবত বেলজিয়ামে অরেঞ্জ বিপ্লব সংগঠিত করার উপর একটা ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম আর ২০০২ থেকে ২০১০ পর্যন্ত এমপিএফ নামক একটি অরাজনৈতিক সংগঠন এর সাথে সম্পৃক্ত থাকার সময় তাদের আন্দোলন এর সূত্রপাত কারার কৌশল গত আলোচনা শুনেছিলাম, তার প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে দেশ জোড়া এসব বড় ধরনের আন্দোলনের পিছনে থাকে ২ থেকে ৩ জন ক্ষুরধার তরুণ রাজনীতিবিদ, তারা মারাত্মক বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যে কোন জনগোষ্ঠীর মৌলিক ইমোশনগুলো খুঁজে কার্যকর একটাকে বেছে নেয় ও তাতে ফুয়েল দেয়। ঠিক নাভিটা খুঁজে বের করে তাতে তেল ঢালে, তার পর যা হয়, জনগোষ্ঠী দাউ দাউ করে জলে উঠে। এই আন্দোলনটাকে আমার প্রথম থেকেই সেই রকম মনে হয়েছে । একসাথে দুটো আন্দোলন চলছিল জুলাই এর শুরু থেকেই। শিক্ষকদের পেনশন নিয়ে আন্দোলনে তারা কর্মবিরতিতে ছিল, যার কারণে আমার সিম্বা এলুমনাই এসোসিয়েশন এর জন্য তাদের সাথে যোগাযোগের তারিখ স্থগিত করি, তার পরপরই ছাত্রদের এই আন্দোলন উত্তর উত্তর জনসমর্থন পেতে থাকে। এই ঘটনায় চাপা পরে যায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন এবং অসাধু সরকারী কর্মকর্তাদের দুর্নীতির খবরাখবরও। যারা পিছন থেকে কল কাঠি নাড়ছিল তারা বুঝে যায়, তাদের ১ম উদ্দেশ্য সফল হয়েছে, জনগণের দৃষ্টি অসাধু চোর ধরা থেকে অন্যত্র সরান গেছে, এখন দরকার চরম এক আঘাতে লক্ষ্য অর্জন তথা সরকারের পতন। সরকার যখন ছাত্রদের পক্ষে আদালতে আপিল করলো ও আদালত ৮ই আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করে দিল, তখন ছাত্ররা অধৈর্য হয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি পেশ করে ও ২৪ ঘন্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা বলাটা একটা ওদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ মনে হয়েছে আমার কাছে এবং তা তারা কোন অদৃশ্য দুষ্ট চক্রের পরামর্শে করেছে বলে আমার ধারনা। এর মধ্যে প্রধান মন্ত্রী তার চীন সফর সংক্ষিপ্ত করে ঢাকায় এসে প্রেস কনফারেন্স করার সময় এক সাংবাদিক তাকে ছাত্রদের এই প্রসঙ্গে একটা কৌশলী প্রশ্ন করে, যার প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী উত্তর দেন, যোগ্যতার বিচারে যে উঠে আসল তাকে চাকুরী না দিয়ে কি রাজাকার এর নাতি পুতিকে দেয়া হবে? এটা তার একটা প্রশ্ন ছিল অথচ ছাত্ররা এটাকে ভুল ব্যাখ্যা করে বানাল যে, প্রধান মন্ত্রী আন্দোলন রত ছাত্রদের রাজাকার বলেছে। এই ভুল ব্যাখ্যাটাও সেই দুষ্ট চক্রের মাথা থেকে এসেছে বলে আমার বিশ্বাস, তাদের স্লোগান, ”তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার, কে বলেছে?, কে বলেছে?, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার, চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার”। কিংবা এর পরে বিভিন্ন জায়গাও ৬ জন ছাত্র চলমান সংঘাতে মৃত্যুবরণ করার পর আসলো স্লোগান “বুকের ভিতর দারুণ ঝর, বুক পেতেছি গুলি কর”। এগুলোর পিছনে সেই অদৃশ্য দুষ্ট চক্রর হাত আছে বলে আমার ধারণা। ১৮ তারিখ পর্যন্ত ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি জনসমর্থন ছিল কিন্তু ১৯ তারিখ শুক্রবার যে দেশ জোড়া ও ঢাকা শহরের রাষ্ট্রীয় সম্পদে অগ্নি সন্ত্রাস ও ধ্বংশাত্বক কার্যাবলী শুরু হলো তাতে ছাত্ররা ঘোষণা দিয়ে বললো এই সব সহিংস ঘটনায় তারা জড়িত নয় এবং তাদের আন্দোলন কোন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের আন্দোলনও নয়। আমার কথা হচ্ছে, এত বাড় বাড়াটা কি ঠিক হলো। আন্দোলন কর ঠিক আছে কিন্তু দেশের সম্পদ নষ্ট করার জন্য দুষ্ট চক্রকে সুযোগ করে দিতে তোমাদের কে বলেছে? এত সাহস তোমরা কোথায় পাও যে দেশের সর্বচ্চো সম্মানিত রাষ্ট্রপতিকে সময় বেধে দাও তোমাদের দাবী পূরণের? আমার বড় মেয়ে যে ডাক্তারি ৫ম বর্ষের ছাত্রী আমার সাথে বেয়াদবি করে বসলো যখন বললাম যে, প্রধান মন্ত্রী যা বলেছে তা ঠিক আছে। সে  পরদিন সকালে বৈষম্যমূলক কোটা সংস্কার এর ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিতে চেয়েছিল, পরে সে তার অপরাধ বুঝতে পেরে আমার কাছে ক্ষমা চায় ও অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। এই কোমল মতি ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার করে যে সকল কুচক্রী ব্যক্তিবর্গ রাজনীতি করে তাদের বলতে চাই আপনাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দেয়া উচিত। আর এদেশের সাদা সিধা জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলা করা আপনাদের মোটেও উচিত নয়। দেশটায় বেশির ভাগ মানুষই হুজুগে, ইমোশনালি বায়াস্ড, সেই সুযোগ নিয়ে কিছু অতি কুবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ পিছন থেকে কল কাঠি নারে, এটা এদেশের সকল মানুষকে বুঝতে হবে ও সজাগ থাকতে হবে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন এর এই ছাত্র আন্দোলনের বিপরীতে কাজ না করে এর পক্ষে কাজ করে এদের সঠিক ভাবে পরিচালিত করতে পারতো তা না করে এর বিরুদ্ধতা করে তারা সঠিক কাজ করেছে বলতে পারছি না।  

গণজাগরণ হতে হবে ভ্যালিড রিজনের উপর, এটা এমন একটা রিজন যেটাকে ডাই হার্ড রিজন বলা যায় না। এটা এমন একটা ইস্যু যা আমাদের জাতির জন্য এখনই জন গুরুত্বপূর্ণও না। এমনতর একটা বিষয়কে ইস্যু বানায়ে গণ অভ্যুত্থান ঘটায়ে ফেলবে এমন যদি কেউ মনে করে থাকে তবে সে বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। এর আগেও শাপলা চত্বর হেফাজতে ইসলাম সাদা টুপি দিয়ে ঘেরাও করে পুর মতিঝিল অচল করে বসে ছিল দুই দিন । তারপর যা হয়েছে তা আমরা সকলেই জানি। সরকার একসময় তার শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করবেই। ওই মোল্লাদের আত্মবিশ্বাস এতই বেড়ে গিয়েছিল যে বলছিল সরকার পালাবার পথ পাবে না। ওদের মত গর্ধব ওই আত্ম অহংকারেই মরেছে। র‌্যাব যে অপারেশন চালিয়েছিল তাতে তারা ছত্র ভঙ্গ হয়ে যায়। বিরোধী দলের দাবি র‌্যাব নাকি রক্ত গঙ্গা বানায়ে দিয়েছিল সেখানে, কিন্তু নিদিষ্ট কিছু লোককে তারা হতে পারে সরায়ে দিয়েছে কিন্তু বিশাল জমায়েত ছত্র ভঙ্গ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। এগুলো আমাদের চোখের সামনেই হয়েছে। আমার এক কলিগ বললেন হেফাজতে ইসলামের সেদিনকার আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করতে যে র‍্যাবের বাহিনী কাজ করেছিল তার নেতৃত্বে ছিল বেনজির আহমেদ, যার নজির বিহীন দুর্নীতি এখন লোকজনের অবগত।

সুস্থ রাজনৈতিক আন্দোলন কিরকম হওয়া উচিত? এরশাদ পতনের সময় বক্তৃতায় বলেছিল “আমি আপনাদের রাজনীতি শিখাবো”, এর পরপরই সে জাতীয় পার্টি গঠন করে, যে পার্টির কোন ছাত্র সংগঠন নাই বা ছিল না। আজ আমরা দেখি জাতিয় পার্টির নেতাদের অনেকেই দুশ্চরিত্র। যা হোক, দেশের প্রচলিত আইন, রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল, সংসদের অধিবেশন, ৩০০ আসনের এমপি গন এরা যদি জনস্বার্থের কোন দাবি আমলে না নেয়, তখন জনগণ তার জন্য রাজপথে আন্দোলনে নামবে ও তাদের দাবি পেশ করবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে কিংবা রাষ্ট্রপতি বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করবে। সেটা শান্তিপূর্ণ ভাবে করা সম্ভব এদেশে। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে সময় বেধে দেয়া একটা উদ্ধত্তপূর্ণ কাজ এটা তো সবারই বুঝার কথা, কেন সেটা ছাত্ররা বুঝল না সেটা আমার একটা বিশ্বয় বটে। দেশ যখন কার্যকর থাকে, দেশের চারটি মূল মাথা, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, নির্বাচন কমিশনার ও অডিট জেনারেল যখন সজীব ও সক্রিয় থাকে। দেশের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যখন সচল ও স্বাভাবিক থাকে তখন শান্তিপূর্ণ উপায়েই দাবি আদায় সম্ভব। দেশের সংসদ যখন চলমান তখন ৩০০ জন এমপির যে কোন একজন জনগণের দাবি সংসদে উত্থাপন করতে পারে যা নিয়ে সংসদে আলোচনা হতে পারে। আরবিট্রেশনের (আপদ নিষ্পত্তির) এতগুলো উপায় থাকতে কেন আগেই রাজপথে হট্টগোল করতে হবে? যখনই তা করা হয় তখন স্বাভাবিক রাষ্ট্রীয় নিয়ম ভঙ্গ করে কোন কুচক্রী মহল তাতে ইন্ধন যোগাচ্ছে তা সমাজের বিজ্ঞ মহল, শিক্ষিত মহলের বুঝার কথা। তা কেন এ ক্ষেত্রে জনগণ বুঝলো না সেটা কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণার একটা বিষয় হতে পারে। আমার মতে এদেশের জনগণ হুজুগে আর রাষ্ট্র যন্ত্রের প্রকৃত জ্ঞান সম্পর্কে তারা প্রকৃত ধারনা রাখে না। উচ্চ শিক্ষিতরা বেশিরভাগই ডাক্তার না হয় ইঞ্জিনিয়ার যারা রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখে বলে আমার মনে হয় নি, তা যদি থাকতো তা হলে তারা এই চক্রান্ত শুরুতেই ধরে ফেলতে পারতো। আমার স্কুলের বন্ধু মহল আমার সমবয়সী, তাদের যে সকল মতামত আমি সোশাল মিডিয়া আমাদের হোয়াটস এ্যাপ গ্রুপে পেলাম, তাতে আমার আশ্চর্য হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। এদের মধ্যে, আর্মির উচ্চতর পদমর্যাদার অফিসার, উচ্চ শিক্ষিত ডাক্তার, আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার, নন ব্যাংকিং ফিনানশিয়াল অর্গানাইজেশনের প্রাক্তন এমডি, আরএমজির ব্যবসায়ীরা ছিল। তাদের বক্তব্যগুলো বিচার বিশ্লেষণ করলে এদেশের আপামর শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটা স্যাম্পল এনালিসিস পাওয়া যায়। আমার বিচারে তাদের মতামত গুলো ছিল পুরটাই অর্বাচীনের মত। তারা কেউ রাজনীতি বুঝে বলে মনে হয়নি, উড়ো খবর, হুজুগ, স্বেচ্ছাচারী মনভঙ্গী, এসবের এক মিশ্রণ বলে মনে হয়েছে। সুদূর অষ্ট্রিলিয়া থেকে আমার এক প্রিয় বন্ধু যে মন্তব্য করলো তাতেও আমি হতবাক হয়েছি। যখন ঘটনা প্রবাহ আমার মতের পক্ষেই আসলো তখন তারা কিন্তু আমার বলা কথা গুলো সম্পূর্ণই ভুলে গেল, বরং আমার মতামত যে সঠিক ছিল সে বিষয়কে সমর্থন জানানো তাদের ইগোইস্টিক বিষয় মনে হলো বোধ হয়। সাধারণ জনসাধারণের এই জনমত তাই সর্বদাই ভ্রান্ত পথ ধরে আগায়। ঘটনা যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন তাদের হায় হায় করা ছাড়া পথ থাকে না। আমি যখন বললাম, সরকার শুনানির দিন ৮ই আগস্ট থেকে ২১ জুলাই রবিবার উচ্চ আদালতে প্রস্তাব করে আগায়ে এনেছে ও সাধারণ মেধার কোটা ৮০ শতাংশ ও ২০ শতাংশ অন্যান্য কোটা করার প্রস্তাব করবে বলে ঘোষণা দিলো। প্রধান মন্ত্রী যেখানে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের সাথে আলোচনার জন্য আইনমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে দায়িত্ব দিলো, তারাও তা প্রেস মাধ্যমে সবাইকে জানালো তখন তো তাদের আন্দোলন স্থগিত করা উচিত ছিল। আমার স্কুলের বন্ধু মহল তখনও আমার কথায় সায় দেয় নাই। এ থেকে বুঝা যায় দেশের মানুষজন শিক্ষিত হয়েছে ঠিকই, উচ্চ শিক্ষিতও হয়েছে কিন্তু তাদের বিবেক বোধ ও নৈতিকতা বুঝার এখনও অনেক বাকি আছে। অশিক্ষিতদের তো এরাই পথ দেখাবে, কিন্তু যখন এদের শিক্ষাই পূর্ণতা পায় নাই তখন সে আশা করা দুরাশা।

এর পর আমরা যা দেখি তা খুব স্বাভাবিক, পুর দেশে কারফিউ জারি করা হয় ও সেনা মোতায়েন করা হয়। ছাত্রদের তিন জন সমন্বয়কারী তাদের ৮ দফা দাবি পেশ করে ও সরকারের তিন মন্ত্রী তা গ্রহণ করে। পরের দিন সকালে সর্বোচ্চ আদালতের রায় হবে। আমার কথা হলো, এমন একটা আন্দোলন করে দেশ ও জাতিকে থামায়ে দেয়া ও জাতীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করতে বিরোধী শক্তিকে সুযোগ করে দেয়ার দায় কে নিবে। বুঝলাম বেশ কিছু তরুণ প্রাণ ঝড়ে গেছে তার দায় কি শুধু সরকারের? যারা অনিমতান্ত্রিক ভাবে হুজ্জতি আন্দোলন করলো তাদের ঘারে বর্তাবে না তা তো হতে পারে না। ছাত্রদের সামনে আগায়ে দিয়ে যারা পেছনে ওত পেতে ছিল তারাই মূলত দায়ী বলে আমি মনে করি। দেশের মূল প্রায়োরিটি এখন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, এই ধারাকে যারা বুঝতে না পারে তারা মূলত দেশের অগ্রযাত্রায় অযথা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এই বোধটা ছাত্র সমাজ থেকে শুরু করে দেশের সকল সুস্থ জনগণকে বুঝতে হবে। যারা এই সরকারের প্রতি বিরক্ত ও নতুন ব্যবস্থা চায় তাদের বুঝতে হবে বিকল্প কি আছে আমাদের হাতে। দেশকে চালানোর মত দক্ষ বিরোধী কোন শক্তি আছে কি না? আমার মতে নাই। এই মুহূর্তে এই সরকার অপসারণ করা হলে দেশে প্রতিস্থাপক আরেকটি যোগ্য সরকার গঠনের মত যথেষ্ট শক্তিশালী জনগোষ্ঠী আছে কিনা তা নিশ্চিত করেই সরকারের পতন চাওয়া উচিত বলে আমার ধারণা।

সম্পাদনা ও উন্নয়ন ইতিহাসঃ ১৬জুলই২০২৪>২১জুলাই২০২৪> ২৩জুলাই২০২৪> ১৪আগস্ট২০২৪>


আমার কাছে অনেকের প্রশ্ন

https://surzil.blogspot.com/2024/02/blog-post_28.html

ব্লগ লিংকঃ https://surzil.blogspot.com

ফেইসবুক প্রফাইলঃ https://www.facebook.com/mustafa.surzil.rawnak


 

No comments:

Post a Comment