Wednesday, June 19, 2024

শরিফ সারেং পরিবারের গল্প-৭ : একজন সফল মুক্তি যোদ্ধার গল্প

 

মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন, লিখেছেন তাঁর স্ত্রী দিলআরা হোসেনঃ আজকে আমি যার সম্পর্কে লিখতে বসেছি তার সম্পর্কে লেখাটা অতোটা সহজ কর্ম নয়। অনেকটা দুঃসাহসিক কর্ম। কিন্তু তবু ও লিখতে হবে। কারন তা না হলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক এবং একজন বীর মুক্তি যোদ্ধার কথা জানতে পারবে না। আবার অনেকে আমাকে জোর তাগিদ দিচ্ছে তার সম্পর্কে অবশ্যই লিখতে। যার সম্পর্কে  আজ লিখতে  বসেছি সে তো সাধারণ মানুষ  ছিলেন না। তিনিতো ছিলেন অসাধারণ। সমাজে বসবাসকারী মানুষের মাঝে নানা ধরনের ভালবাসার জিনিস থাকে। কিন্তু  এমন মানুষ  কি আছে যে তার  দেশকে প্রচণ্ড ভালবাসে?  দেশকে স্বাধীন  করার  জন্য  যিনি জীবনের  মায়া ত্যাগ করে মুক্তি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। তিনি আর কেউ নয় তিনি আমার স্বামী  এবং আমাদের একমাত্র কন্যা সামিয়া রুহুল অনন্যার বাবা বীর মুক্তি যোদ্ধা মোঃ রুহুল আমিন। তিনি  নিজেই তার মুক্তি  যুদ্ধে থাকা কালীন সময়ের ঘটনাবলী লিখে রেখে গেছেন। আমি সেইগুলি গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করছি। ১৯৫২ সালের ৯ই অক্টোবর এক সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে লৌহজং থানার মৌছা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা  উনি  মৌছা গ্রামের সেরা বিদ্যালয় কাজির পাগলা উচ্চ বিদ্যালয় হতে সম্পন্ন করেন। যখন তিনি ষষ্ঠ শ্রেণীতে ওঠেন তখন তিনি ঢাকায় চলে আসেন। তার মা ও বড় ভাইদের সাথে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। তখন তিনি খিলগাঁও  সরকারী স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে ২ বছর পড়ার পর যখন তিনি ৮ম শ্রেণীতে ওঠেন তখন তিনি টি এন্ড টি হাই স্কুলে  ভর্তি হন এবং সেখান থেকে মাধ্যমিক  পরীক্ষায়  পাশ করেন। তারপর তিনি জগন্নাথ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়  কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে উচ্চ  মাধ্যমিক  পরীক্ষায়  পাশ করেন।  জগন্নাথ কলেজে পড়ার সময়টা ছিল ১৯৭১ সাল। তিনি তখন টগবগে তরুণ। দেশ তখন পাকিস্তানি হানদার বাহিনীর কবলে। বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য শুরু হয়ে গেল স্বাধীনতা সংগ্রাম। দেশ প্রেমিক  রুহুল আমিন তার দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন বুনছিলো মনে মনে। তখন ওনারা শাহজাহানপুরে জালাল দারোগার বাসায় ভাড়া থাকতেন। তার বাসার পাশেই বিরাট খোলা মাঠ ছিলো। ঐ মাঠেই এলাকার তার বয়সী ছেলেদের নিয়ে তিনি আলোচনা করতেন কিভাবে বাংলা দেশকে শএুমুক্ত করা যায়? না আর পরাধীনতা মানা যাচ্ছে না। যে করেই হোক দেশকে স্বাধীন করতেই হবে। তখন এলাকার ৫/৬ জন ছেলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলো তারা মুক্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু  পরিবার থেকে কি অনুমতি মিলবে? সবার চোখে মুখে আতংকের চিহ্ন। কি করবে কেহ ভেবে পাচ্ছে না। অতঃপর যা ভাবা তাই কাজ হলো। সবাই বললো তারা তাদের পরিবারের অনুমতি নিয়েই মুক্তিযুদ্ধে যাবে। একদিন সকালে রুহুল আমিন তার বড় ভাইদেরকে বললো তিনি মুক্তি যুদ্ধে যেতে চান। ভাইরা বললো এটাতো খুবই ঝুঁকি পূর্ণ । তাছাড়া মুক্তি যুদ্ধে যেতে চাইলেই যাওয়া যাবে না। যুদ্ধ করতে হলে আগে ট্রেনিং নিতে হবে। কিন্তু  দেশপ্রেমিক  রুহুল আমিন কোনো বাধাই  মানতে রাজী নন। তিনি বললেন ট্রেনিং নিয়েই তিনি মুক্তি যুদ্ধে যাবেন। তখন তারা বললেন মা যদি রাজী হন তাহলে তুমি যেতে পারবে। সাথে সাথে রুহুল আমিন তার মাকে জড়িয়ে ধরে বললো মা আমি দেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তি যুদ্ধে যেতে চাই। আপনি আমাকে অনুমতি দিন। মা বুঝতে পারলেন এ ছেলেতো কোনো বাধা মানবে না। তাই মা অনুমতি দিয়ে বললেন যা বাবা তোকে আল্লাহর নামে ছেড়ে দিলাম। বীর মুক্তি যোদ্ধা রুহুল আমিন বলেছিলো মাগো আপনার তো ৭ ছেলে এক ছেলে যদি দেশকে স্বাধীন করার  জন্য  জীবন দান করেন তবে সমস্যা কোথায়? যদি আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে আনেন তবে আমি আবার আপনার বুকে ফিরে  আসবো ইন শা আল্লাহ্। মা দেখলেন ছেলেতো  দেশের জন্য  যুদ্ধ  করতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে তাকে আর ফিরানো যাবে না। তাই মা ছেলেকে যুদ্ধে  যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেন। রুহুল আমিন যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি পেয়ে তার এলাকার আরো  ৫ জন ছেলেকে নিয়ে মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য বাসা হতে বের হয়ে গেলেন। একেবারে খালি হাত পায়ে তারা বের হয়েছিলো। তাদের গণ্তব্য ছিলো তারা ভারত সীমান্তে যাবে। তবে তারা যাওয়ার সময় কিভাবে ভারতে ঢুকা যাবে তার একটা ম্যাপ এঁকে নিয়ে গিয়েছিলো। এখানে একটি কথা বলে রাখা উচিত ওনার মাঝে creative বিভিন্ন ধরনের  গুণাবলীর সমাবেশ ছিল যেটা আমি নিজেও প্রতিনিয়ত observe করেছি। সে সকল ব্যাপারে আমি পরে লিখছি। সেদিন যদি উনি নিজ হাতে ভারতে ঢোকার ম্যাপ এঁকে নিয়ে না যেতো তাহলে তাদের পক্ষে ভারতে পৌঁছানো আরো অনেক কঠিন হতো। আমরা এখন কোনো অচেনা জায়গায় যেতে হলে কি করি? গুগলে সার্চ দিয়ে অচেনা জায়গাটার ম্যাপ বের করে সেই  জায়গায় মানুষ এখন সহজেই চলে যায়। কিন্তু বীর মুক্তি যোদ্ধা রুহুল আমিনের আজ থেকে ৫৩  বছর আগে এই বুদ্ধি টা মাথায় এসেছিলো যে একটা ম্যাপ এঁকে  নিয়ে গেলেইতো তাদের পক্ষে ঐ ম্যাপ দেখে ভারতে ঢোকাটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। 

চারিদিকে ছিলো পাকিস্তানি  হানাদার  বাহিনীর ভয়ংকর আক্রমণের তাণ্ডব লীলা। এর মধ্য দিয়েই তারা অনেকটা পথ হেঁটে, অনেক জায়গায় পানি ছিলো সেসব জায়গা সাঁতরিয়ে তারা পার হয়েছিলো। ৪/৫ দিন তারা ভাতের মুখ দেখেনি। শুকনো মুড়ি চিড়া খেয়ে তারা দিন কাটিয়েছিলো। অনেক চরাই উৎরাই পার করে পরিশেষে তারা  ভারতে ঢুকে যায়। ভারতে অনেক আনুষ্ঠানিকতা তাদের সম্পন্ন  করতে হয়েছিলো। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ভারতের বিহার প্রদেশের চাকুলিয়া নামক একটি জায়গায়। চাকুলিয়াতেই ওনাকে যুদ্ধ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিলো।



প্রশিক্ষণ শেষে চাকুলিয়া থেকে তাকে মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক কর্ণেল এম এ জি ওসমাণীর নির্দেশে ১১ নং সেক্টরে মিঃগুপত এবং মেজর জলিলের অধীনে পাঠানো হয়েছিলো। তারপর তাকে ২ নং সেক্টরে কমাণ্ডার  মেজর হায়দারের অধীনে ভারতের মেলাঘরে পাঠানো হয়। সেখান থেকে মেজর হায়দারের নির্দেশে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয় এবং তারই নির্দেশে রুহুল আমিন মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানা কমাণ্ডার হেদায়েতুল ইসলাম কাজলের অধীনে যোগ দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে  বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ যেদিন বিজয় লাভ করে সেদিন বীর  মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিনের শেষ অভিযান ছিলো ঢাকার মিরপুরে। মিরপুরে পাক হানাদার বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি  ছিলো। সেই ঘাঁটিকে ও তারা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন  করে দিয়েছিলো। বিজয়  লাভের কয়েকদিন পর বীর মুক্তি যোদ্ধারা তাদের নিজ নিজ বাসায় ফেরা শুরু করেছিলো। কিন্তু  বীর মুক্তি যোদ্ধা রুহুল আমিন যে দল নিয়ে গিয়েছিলো তারা সবাই ফিরে এসেছিলো কিন্তু রুহুল আমিন তাদের সাথে  আসতে পারেননি। তারা বলেছিলো তারা তাকে খুঁজে পাননি। মিরপুরে শেষ অভিযানের সময় তারা দলচ্যুত হয়ে পড়ে। সবাই ধরে নিয়েছিলো রুহুল  আমিন হয়তো আর ফিরে আসবে না। পরম করুণাময়  আল্লাহর অশেষ  রহমতে বীর  মুক্তি যোদ্ধা রুহুল আমিন বীরের বেশে তার কয়েকদিন পর তার বাসায় ফিরে আসে। তিনি বলেছিলেন  অনেক ভয়ংকর অবস্থার মুখোমুখি তাদের হতে হয়েছে যেখান থেকে বেঁচে আসাটা অনেক কঠিন ছিলো। বাংলাদেশ  স্বাধীন  হওয়ার পর মুক্তি যুদ্ধের অধিনায়ক কর্ণেল এম এ জি ওসমানীর নির্দেশে সকল মুক্তি যোদ্ধারা তাদের অস্ত্র জমা দিয়েছিলো। তারপর ওসমানী  বীর মুক্তি যোদ্ধাদের সনদপত্র প্রদান করেন।

বীর মুক্তি যোদ্ধা রুহুল আমিন আবারও তার ছাত্রজীবনে ঢুকে যান। তিনি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিষয় নিয়ে স্নাতক সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। এই বিশ্ববিদ্যালয়  থেকেই তিনি B.S.C Honours M.S.C ডিগ্রী  লাভ করেন। পড়াশোনা  শেষ করার  পর তিনি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ চলে যান এবং সেখানে প্রায় ৯ বছর চাকুরী করেন। আমাদের বিয়ের পর আমি তাকে বলেছিলাম তিনি মুক্তি যোদ্ধা হয়েও কেনো  বাংলাদেশ  সরকারের  কাছ থেকে কোনো সুযোগ সুবিধা নেন নি। তখন তিনি  বলেছিলেন আমি  যেনো কখনো তাকে এই ব্যাপারে কিছু না বলি। তিনি  বলতেন কিছু পাওয়ার জন্য তিনি  স্বাধীনতা যুদ্ধে যাননি। তিনি তার দেশকে ভালোবাসেন আর তাই তিনি জীবনের মায়া না করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে পেরেছিলেন এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমি তখন তাকে বলেছিলাম ঠিক আছে তোমাকে সরকারের কাছ থেকে কোনো কিছু নিতে হবে না৷ আমরা শুধু মুক্তি যোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ভারত থেকে ভারতীয় মুক্তি যোদ্ধাদের নামের যে তালিকা ভারত পাঠিয়েছিলো সেখানে তোমার নামটা  দেখে আসতে চাই। উনি রাজী হয়ে গেলেন এবং আমাকে নিয়ে মুক্তি যোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে গেলেন। সেখানে গিয়ে উনি ওনার নাম এবং আরো কিছু তথ্য দেওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের লোকেরা বেশ মোটা ২ টি বই নিয়ে আমাদের সামনে দিলেন। বীর মুক্তি যোদ্ধা রুহুল  আমিন এক সেকেন্ড দেরী না করে মুন্সিগন্জ জেলায়  ঢুকে গেলেন এবং বইয়ের প্রথম দিকেই তার নাম পাশে তার বাবা ও মায়ের  নাম দেখতে পেলেন। আমি দেখলাম ওনার  দুই  চোখ বেয়ে কান্না ঝরে পড়ছে। মন্ত্রনালয়ের লোকেরা বললেন ভারতীয় কল্যাণ ট্রাস্টের এই বই ২ টি সবচেয়ে বড় প্রমাণ এবং এরাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন  এদের নাম এখানেই সবাই  এসে দেখতে পারবে। ভারতেও তাদের নামের তালিকা রেখে দেওয়া হয়েছে। তারা বললো  প্রকৃত মুক্তি যোদ্ধা হয়েও এতোদিন  উনি কেনো যোগাযোগ  করেননি? বীর মুক্তি যোদ্ধা রুহুল  আমিন মুচকি হেসে একই কথা বলেছিলেন আমি কিছু পাওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করিনি। এরপর ও মুক্তি যোদ্ধা কমাণ্ড কাউন্সিল  থেকে ও লোক এসে তাকে ফরম  দিয়ে গিয়েছিল  পূরণ করে জমা দেওয়ার জন্য।  কিন্তু  তিনি তা জমা দেননি। এতো ত্যাগী, নির্লোভ জীবনের মায়া না করে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার  বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন  করা এমন বীর যোদ্ধাকে আমরা কি দিয়েছি? কতো অসাধারণ  গুণের সমাবেশ  ওনার মাঝে ছিলো। উনি ছিলেন  গণিত বিশারদ।  গণিতে  ছিলো  তার প্রচণ্ড দখল। যে কোনো জটিল  গণিত  উনি খুব কম সময়েই সমাধান করে ফেলতেন। ঘুমের মধ্যে উনি গণিতের সূত্র বলতেন। শুধু মাত্র আমাদের  শান্তিবাগ এলাকাই না ঢাকা শহরের  বিভিন্ন  স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা তার কাছে গণিত করতে আসতো। মৃত্যুর  আগের দিন পর্যন্ত উনি ওনার গণিতের  জ্ঞান তার ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে বিতরণ করে গিয়েছেন। আমাদের একমাত্র কন্যা অনন্যা কে ও উনি গণিতের ভালো জ্ঞান  দিয়ে গিয়েছেন। জমি মাপার আমিনের কাজও উনি নিজেই করতে পারতেন। মৌছা গ্রামের ওনাদের বাড়ি এবং আশে পাশের বাড়ির সীমানা মেপে উনি নিজেই চিহ্ন বসিয়ে দিয়েছেন। গ্রামের মানুষেরা এখনও দেখা হলে আমাকে এ কথা বলে। ওনার মৃত্যুর পর যখন ওনাকে বাংলাদেশের জাতীয়  পতাকা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় এবং  Guard Of Hounour দেওয়া হয় তখন তার মুখটা  আমাকে ও আমাদের একমাত্র কন্যা অনন্যা কে দেখানো হয়। আমি দেখলাম সেই বীর মুক্তি যোদ্ধা রুহুল  আমিন মুচকি হেসে আছেন এবং তিনি বুঝিয়ে  দিয়ে  গেলেন  আমি জিতে গেলাম যেভাবে ১৯৭১ সালের  ১৬ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের  বিজয় এনেছিলাম ঠিক সেভাবেই আজ ২০১৫ সালের ৮ ই জানুয়ারী তোমাদের কাছ থেকে  কোনো কিছু না নিয়েই আল্লাহর কাছে চলে গেলাম। আমি পরম করুণাময়  আল্লাহর কাছে সব সময় এই দোয়াই করি আল্লাহ যেনো তার ত্যাগের এবং সৎ কর্মের  বিনিময়ে তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। সবাই এই নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা    এবং মহান শিক্ষকের জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ যেনো তাকে জান্নাত বাসী করেন। আমিন। আমিন।আমিন। 

 

জাহীদ মোঃ রহমান রুহুল চাচার ভায়েরা ভাই। উনার ফেইসবুক পোস্ট থেকে রুহুল চাচার শেষ বিদায় কালীন সময়ের বর্ণনা আছে লেখাটাতে।

একজন মুক্তিযোদ্ধার শেষ যুদ্ধঃ-

”তাঁকে আমি চিনি প্রায় চব্বিশ বছর। একজন স‌্বল্পভাষী মানুষ।তবে দেশ এবং মানুষ নিয়ে যখন বলেন তখন অত্যন্ত দরদ আর ভালবাসা নিয়ে কথা বলেন। ক্রমান্নয়ে জানতে পারি তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। দেশের জন্য তাঁর নিখাদ ভালবাসা নিয়ে আমার মনে আর কখনো প্রশ্ন জাগেনি।  একদিন কথা প্রসংগে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সনদটি দেখতে চেয়েছিলাম।তিনি ঠোটে অব্যক্ত অভিমান আর বেদনামিশ্রিত হাসি ঝুলিয়ে বললেন,’কি হবে এগুলি দিয়ে? স্বাধীনতার চল্লিশ বছর কেটে গেল বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রুহুল আমিন তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র সংগ্রহ করার চেস্টা করলেন না। হঠাৎ করেই প্রায় তিন বছর আগে জানতে পারলাম তিনি মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহের জন্য ছুটাছুটি করছেন। এ অফিসের বারান্দা সে অফিসের করিডোর এর গোলকধাঁধায় সময় গড়িয়ে যায়। ঘর্মাক্ত শরীরে মন্ত্রনালয় আর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের অলিগলিতে পায়চারী করেন, মাঝে মাঝে উপরের দিকে চেয়ে বিরবির করেন, ‘এ জন্যই কি’? তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র মেলে না। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে গত বছর ২৪ জুলাই ২০১৪ তারিখে সরকারী গেজেটে তাঁর নামটি প্রকাশিত হল। এবার তাঁর সাফা-মারওয়া যাত্রার দ্বিতীয় পর্বের শুরু। তিনি ৮ জানুয়ারী ২০১৫ তারিখ সকালে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে গিয়েছিলেন তাঁর সনদের জন্য। ব্যর্থ হয়ে দুপুরের পরে বাসায় ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুততার সাথে এ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে নিয়ে হার্ট ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা। রুপসী বাংলার মোড়ে ভীষন ট্রাফিক জ্যাম। অগত্যা গাড়ী ঘুরিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সী। তাঁর আর জ্ঞান ফেরেনি। শুক্রবার শেষ অপরাণ্হে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও তাঁর শবদেহে পুস্পষ্তবক অর্পণ করা হয়। জানা গেল আগামী রবিবার তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র পাওয়া যাবে। কানে ভেসে এল,’কি হবে এগুলি দিয়ে?”


সম্পাদনা ও উন্নয়কালঃ ২২জানুয়ারী২০২৪> ১৯জুন২০২৪>



 

No comments:

Post a Comment