Friday, September 22, 2023

কনফ্লিক্ট রেজোল্যুশন বা কলহ নিরসন প্রসঙ্গে

 

খামাখা মানুষ মানুষকে ভুল বুঝে, কৈশোরে এটা ছিল আমার মৌলিক ধারণা। তখন আমার অভিজ্ঞতা কম ছিল আর সরল চিন্তা থেকেই এরকম ভাবতাম আমি। আমার স্ত্রী আমার খালাত বোন, বিয়ের আগে যখন খালার মত ছিল না কিন্তু ওর মত ছিল তখন একদিন ওর হাতে হাত রেখে বলেছিলাম আমি দেখায়ে দিব যে দুজনের মনের মিল সত্য হলে দাম্পত্য কলহ হওয়া সম্ভবই না। কিন্তু সেই আমি বিয়ের তিন দিনের মাথায় হয় এসপার না হয় ওসপার করার মত কান্ড করে বসেছিলাম। ওকে তিন দিন ভাববার সময় দিয়েছিলাম ও থাকবে না চলে যাবে। তিন দিনের মাথাও ও কিছু না বলাতে জানতে চাইলাম, ও বললো যাবে না। এই তিন দিন কথা বন্ধ ছিল। ওর উত্তর শুনে ঘাবড়ে গেলাম, বলে কি! এত কিছুর পরও ও থাকবে? আসলে আমার মনে হতো ওকে সারাক্ষণ বিনোদন দিয়ে রাখতে হবে, কিন্তু ও মুখ গোমড়া করে রাখতো তাতে আমার মনে হতো ওকে ঘরে এনে আমি মারাত্মক ভুল করে ফেলেছি, আর অতিরিক্ত বিনোদন দিতে গিয়েই যত বিপত্তি হতো। আজ ২৫ বছর পর আমি বুঝি যে ওর সান্ত মুখটাই দেখতে ব্যথা ভারা লাগে আমার কাছে তাই ওকে দেখে আমি যা ভাবতাম তা মারাত্মক ভুল ছিল। বলা হয়ে থাকে ফেইস ইজ দ্যা ইনডেক্স অব মাইন্ড কথাটা সর্বত ভাবে সত্য নয়। হোচট খেয়ে শিখতে হয়েছে সেটা।

আমার এলাকার ছোটবেলার বন্ধু সোহেল, একই সাথে আমরা সোনালী ব্যাংকে জয়েন করি ২০০৪ সালে। ও সিনিয়র অফিসার আইটি আর আমি অফিসার আইটি হিসেবে। ও’র কথা বার্তা ও কথা বলার ভঙ্গি সব সময়ই আমার কাছে বিরক্তিকর লাগতো। মনে হতো ও দাম্ভিকতার সাথে অহং বোধে সব কথা বলে। পরে বুঝতে পারলাম ওরকম ভাবাটা আমার মারাত্মক ভুল, ও’র মুখভঙ্গিটাই এমন যে কথা বললে মনে হবে ও দাম্ভিক ভাব নিয়ে কথা বলছে। আসলে কিন্তু ও মোটেও তা নয়। সাধারণ স্বাভাবিক ও আমাদের মত করেই কথা বলছে কিন্তু ও’কে আমি ভুল বুঝতাম। আমার ভুল ভেঙ্গেছে অনেক পরে। আমাদের কলিগ আরেকটা মেয়েকে হাটতে দেখতাম দুলকি চালে হাটে, মনে হবে সে না জানি কত সুন্দর দেখতে আর তার অহমিকায় সে ও’রকম দুলকি চালে হাটে বলে আমার মনে হতো। পরে বুঝেছি ওটা তার নিজের হাটার ধরন, যখন থেকে হাটতে শিখেছে সে ও’ভাবেই শিখেছে। সে দেখতে কাল হতে পারে বা আমার দৃষ্টিতে অতটা সুন্দর মনে না’ও হতে পারে তবে সে তার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী সেটাই যথেষ্ট। আমার তার ব্যাপারে ভুল বুঝাটা আমি নিজেই ধরতে পেরেছি। এ তো গেল দুটো মাত্র উদাহারন যা আমি অন্যর সম্পর্কে ভুল বুঝেছিলাম ও তা পরে সংশোধন করে নেই। কিন্তু এরকম বহু উদাহারন আছে যার কারণে মানুষ মানুষকে খামাখা ভুল বুঝে সম্পর্ক নষ্ট করে কিংবা কার বলা কথার ভুল ব্যাখ্যা করে ভীষণ কলহতে মেতে উঠে।

আমার লেখা যারা পড়েছেন তারা দেখবেন আমি পুঁথিগত উদাহারন খুব কম দেই, মানে হলো বই এর থেকে জ্ঞান অর্জন করে সেই জ্ঞান লেখার মধ্যে ঝাড়া আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি মনে করি বই এর আগে আসে কোন বিষয় নিয়ে মানুষের চিন্তা ভাবনা ও তার অভিজ্ঞতা যা পরবর্তীতে সে বই আকারে বা লেখা আকারে প্রকাশ করে। মানুষের মধ্যে চিন্তার সূত্রপাত করতে পারলেই বাকিটা সে নিজেই বুঝতে পারে তার জন্য বড় বড় লেকচার শুনা কিংবা বই পড়ার দরকার হয় না । ২০০৪ কি ২০০৭ সালে কনফ্লিক্ট রেজুলেশন সম্পর্কে শ্যামল কান্তি নাথ সারের একটা পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড শো আমার হতে চলে এসেছিল যখন এমডিস স্কোয়াডে আমার পোস্টিং ছিল। শ্যামল কান্তি নাথ স্যার এক সময় আমার ইমিডিয়েট বস হন, তাও জয়েনিং এর পর ৫ম বছরের শুরুর দিকে। এসপিও থেকে উনার এজিএম প্রমোশন কয়েকবার পিছাল দেখে উনি খুব দুঃখিত ছিলেন আর বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে লেখা তার আক্ষেপ ভারাক্রান্ত চিঠি আমি টাইপ করে দিয়েছিলাম। উনি পরবর্তীতে পিডি’র এজিএম হন তার পর বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডিভিশনের ডিজিএম হওয়ার পর রিটায়ারমেন্টে যান। উনার কাছ থেকে পাওয়া কনফ্লিক্ট রেজুলেশন ডকুমেন্ট টা হাতে পেয়ে আমি যার পর নাই খুশি হয়েছিলাম যে ভাল করে পড়ে দেখবো। প্রিন্ট দিয়ে টেবিলের কোনায় রেখে দিয়েছিলাম যে সময় পেলেই পড়বো কিন্তু অন্যান্য কাজের ঝামেলায় বহু দিন পর পর একটু আধটু পড়ার সময় হতো। তাই পুরোটা পড়া হয় নাই, যে টুকু পড়েছি তাতে দেখলাম, ওটাতে প্রথমে কনফ্লিক্ট এর কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছে তার পর তা নিরসনে সমাধান ব্যাখ্যা করেছে। যেটুকু মনে পর কনফ্লিক্ট এর প্রথম কারণটি ওখানে বলা ছিল সম্পদের অপর্যাপ্ততা বা স্কারসিটি হলে কনফ্লিক্ট বা দ্বন্দ্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যেমন আপেল আছে দুটা কিন্তু খেতে চায় তিন জন তা হলে তো কনফ্লিক্ট হবেই, মানে কাড়াকাড়ি হবে। সমাধান বলা ছিল সেক্ষেত্রে একটা উপায় হলো সম্পদ বাড়ায়ে দাও, যদি পার তো দুইটার বদলে তিনটা আপেল দিয়ে দিলেই তো সমাধান। বিষয়টা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফুটবল খেলা দেখে মন্তব্য করার মত হয়ে গেল মনে হয়। সে বলেছিল একটা ফুটবল নিয়ে বাইশ জন কাড়াকাড়ি না করে বাইশ জনকে বাইশটা বল দিয়ে দিলেই তো লেঠা চুকে গেল। সে যাই হোক, এটা কনফ্লিক্টের বা কলহর একটা অন্যতম কারণ মাত্র। আর নানা কারণে কনফ্লিক্ট সিচুয়েশন হতে পারে যার সব গুলো নিয়ে গবেষণা ধর্মী কোন লেখা আমার লেখার ইচ্ছা নেই এখানে। যার প্রয়োজন সে লাইব্রেরিতে কিংবা গুগল মামার কাছ থেকে জেনে নিতে পারবেন। তবে কয়েকটা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রের কনফ্লিক্ট নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা শেয়ার করবো যা অন্য কেউ জানলে তাদের কাজে আসতেও পারে আর আমর জন্য তা চিন্তার পরিচ্ছন্নতা তৈরি করবে তারই উদ্দেশ্যে এই বিষয়ে লেখা।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আমার প্রথম চাকুরীতে এন্ট্রি দাতা এক ইন্ডিয়ান ভদ্রলোক যার নাম দেভজিত সরকার, যাকে আমি আমার প্রফেশনাল গুরু হিসেবে সম্মান করি এখনো। ২০০০ সালের শেষের দিকে আগস্ট কি সেপ্টেম্বর মাসে সিলেটের এন.আই.আই.টি সেন্টারে উনার এক দিনের কমিউনিকেশন স্কিলের ওয়ার্কশপে নিজের ছাত্রদের সাথে আমিও অংশ গ্রহণ করেছিলাম আর ওটা ছিল আমার জন্য এক বৃহৎ শিক্ষা। ওই ওয়ার্কশপের স্লাইড শো বানায়ে আমি বহু জায়গায় ওই দিনের পুর বক্তব্য অনেককে বলেছি। ২২ বছর পর পুরানো সিডিতে সংরক্ষিত সেই লেকচার স্লাইড শো তুলে এনে আমার তিন সন্তানকেও শুনিয়েছি। ওখান থেকেই জেনেছি যে সকল মানুষিক কলহ’র মূল কারণ কমিউনিকেশন স্কিল এর অদক্ষতা বা যোগাযোগের অদক্ষতা কিংবা যাকে বলা যায় ভাষাগত বা ভাষাহীন যোগাযোগের অদক্ষতা। আজ সোনালী ব্যাংকে নতুন জয়েন করা অনেকের মধ্যেই এমনকি উচ্চতর পদবী ধারী অনেকের মধ্যেই আমি সেই কমিউনিকেশন স্কিলের ত্রুটি গুলো ধরতে পারি দেভজিত সরকারের সেদিনকার ওয়ার্কশপের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে। আবার কার কারো মধ্যে সেই দক্ষতার কৌশলগুলোও প্রয়োগ করতে দেখি, তখন বুঝতে পারি তারা বিষয়গুলো জানে। ওই ওয়ার্কশপের অর্জিত ঞ্জানের ভিত্তিতেই আমি নিচের কলহ পরিস্থিতি ‍গুলো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো আর তার সমাধান কি হতে পারে তাও বলার চেষ্টা করবো যতটুকু আমার বিদ্যা বুদ্ধিতে কুলায় ততটুকুই। কারো কাছ থেকে ধার করা কোন বক্তব্য দিয়ে নয় বরং আমার নিজের চিন্তা ভাবনা ও অভিজ্ঞতা থেকেই সমাধানের পথ দেখাবো। লেখাটা অনেকটা উইজডম বা প্রজ্ঞা শেয়ারিং এর মত।  

দাম্পত্য কলহ প্রসঙ্গেঃ
অন্তর্জালে (ইন্টারনেটে) ভাইরাল হওয়া একটা হাসির গল্প হলো এরকম। (“রাগ করে বাবার বাড়ি চলে গেছে স্ত্রী। অসহায় স্বামী স্ত্রীর কাছে ফোন দিয়ে অনুনয় বিনয় করছে। এক পর্যায়ে স্ত্রী নরম স্বরে বলছে, স্ত্রী :- আচ্ছা টেবিলে গ্লাস  আছে না? স্বামী :- হুম আছে। স্ত্রী :- ঐটা হাতে নাও। স্বামী :- নিলাম। স্ত্রী :- এবার হাত থেকে গ্লাসটা ফেলে দাও। স্বামী :- ওকে ফেলে দিলাম। স্ত্রী :- এবার দেখ গ্লাসটা ভেঙে গেছে। তুমি চাইলেও ঐ টুকরো টুকরো গ্লাসের খণ্ডগুলো আর জোরা লাগাতে পারবে না। লাগাতে পারলেও সেটা আর আগের মতো হবে না। ঠিক তেমনই মন ও বিশ্বাস কবার ভেঙে গেলে সেটা আর জোরা লাগানো যায় না। কোন ভাবে লাগানো গেলেও তা আর আগের মতো হয় না। স্বামী :- কিন্তু গ্লাসটা তো ভাঙ্গেনি, কারণ সেটা স্টিলের ছিলো স্ত্রী :- হায়রে কপাল আমার । তুমি আর শোধরাবে না। বুঝেছি এই পাগলটাকে নিয়েই আমাকে সারা জীবন চলতে হবে। আমি রেডি হচ্ছি তুমি তাড়াতাড়ি এসে আমাকে নিয়ে যাও।” ) এ তো গেল স্বামী স্ত্রীর ছোট খাট মজার ঝগড়ার গল্প। এর চেয়েও মারাত্মক মারাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে দাম্পত্য জীবনের কলহ। আবার এই ইন্টারনেটেই আরেকটা ভিডিও দেখেছিলাম যেখানে এক রিক্সায় স্বামী তার স্ত্রীকে হাত দিয়ে নামতে বাধা দিয়ে ধরে রেখেছে, রিকশাওয়ালা পরেছে বিপদে, এরা রিক্সাও ছাড়ে না ওভাবেই কয়েক ঘণ্টা বসে আছে, রিক্সা ওয়ালা লোকজনের শরণাপন্ন হলে মহিলাটা উত্তর দেয় পাসের জন তার স্বামী। স্বামী মহাশয় ভীষণ জেদি সে কোনভাবেই তার স্ত্রীকে রিক্সা থেকে নামতেও দিচ্ছে না। আর ওভাবেই তারা ঘনটার পর ঘণ্টা বসে আছে। লোকজন বলে কয়েও ভদ্রলোককে রাজি করাতে পারছে না তার হাত সরায়ে নিতে। মানে হলো দুজনের ঝগড়ার পর বউ চলে গিয়েছিল বাপের বাড়ি এখন যখন আবার পেয়েছে তখন স্বামী তাকে ছাড়বে না আবার তাদের ঝগড়ারও কোন সমাধান করবে না। একবার একটা মুভি দেখেছিলাম ছোট বেলায় বিটিভির মুভি অফ দ্য উইকে। এক আঁকিয়ে একটা ছবি শেষ করতে পারছে না ওদিকে যে ছবিটা কিনছে সে তাগাদা দিচ্ছে। আঁকিয়ে মানে আর্টিস্ট ২৪ ঘনটার সময় চেয়ে নিয়ে কি করলো দেখেন, এক দৌর দিল!! বিভিন্ন জায়গায় খোজ করতে থাকলো তার বউ কই গেছে, খুঁজতে খুঁজতে সে যেখানেই যায় তার বউ সেখান থেকে অন্যত্র চলে গেছে ততক্ষণে, সে আবার দৌর বউ এর খোজে, এভাবে সিনেমাটা চলতে থাকে, শেষে যখন বউকে পায় তখন সে তাকে কোন কথা না বলে সোজা কোলে তুলে নিয়ে বাড়ি নিয়ে আসে তার পর তার ছবিটা আঁকতে বসে ও শেষ করতে সক্ষম হয়। মজার ব্যাপার হলো বউ ঘরে না থাকার কারণে সে ছবিটা শেষ করতে পারছিল না। এরকম মজার ছায়াছবি বাংলাদেশে তৈরি হয় না যা আফসোসের বিষয় বটে।

শুরু করেছিলাম আমার স্ত্রীর সাথে আমার দাম্পত্য কলহর ইতিহাস দিয়ে, বিয়ের সেই প্রথম জীবনে আমি লিস্ট করে ৩৫ টা কারণ আবিষ্কার করেছিলাম যার কারণে ওর সাথে আমার দাম্পত্য টিকবে না। আজ ২৫ বছর পার হয়ে গেছে আমরা ঠিক ঠাকই আছি, বাচ্চা তিনটাও ভাল আছে বাপ-মা এর মধ্যে ঝগড়া হতে দেখে না। আমার বাবা-মা যখন ঝগড়া করতো তখন পাড়া পড়শি এক হয়ে যেত। একবার আমি বাসা থেকে বের হয়ে মিজান চাচা (বাবার ছোট ভাই) এর বাসায় চলে গিয়েছিলাম আর বলেছিলাম এবার মনে হয় এসপার ওসপার হয়েই যাবে। বাবা মারা যাওয়ার পর মা পাড়ার রাস্তায় বসে যে মাতম করেছে তা দেখলে কেউ তাদের দাম্পত্য কলহ  যে হতো তা কল্পনাই করতে পারবে না। দাম্পত্য কলহ তাই বিবাহিত জীবনে সম্পর্কের নবায়নে অভূতপূর্ব সহায়তা করে থাকে। যে দম্পতির মধ্যে কলহ হয় না তা সহজেই ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সব থেকে ভয়ংকর হলো দুজনের মধ্যে যখন কেউ কথা বন্ধ করে দেয়। এতে কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি হয় যা আর ভাংতে চায় না। এই বরফ গলানর জন্য তাপ দরকার, উত্তপ্ত বাক্যালাপও দরকার তখন। দাম্পত্য জীবনে যত কলহেই হোক কথা বন্ধ করা উচিত না। হই চই হোক কিংবা নিঃশব্দ বাদ প্রতিবাদ হোক দু পক্ষের মধ্যে সংলাপ চলতে দিতে হবে। তা ভারভাল বা ভাষাগত হোক বা ননভারভাল বা ভাষাহীন হোক তা হতেই হবে তা না হলে সমাধান আসবে কোথা থেকে। এগুলো আমাদের উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজের উদাহারন। স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত নিম্ন বিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত সমাজে বিয়ে ভেঙ্গে যায় মূলত অর্থনৈতিক কষ্টের কারণে, আমার বাড্ডার বাসার এক ভাড়াটিয়ার এক সুন্দরী বউ ছিল। ওই ভদ্রলোক প্রাণ কোম্পানিতে এ্যাডভেরটইজমেন্টে কাজ করতো। তার বউ একদিন কার সাথে যেন চলে গেল এক বাচ্চা সহ। ভদ্রলোক কান্না কাটি করেছে সবার সামনেই। আমার সাথে যখন দেখা হলো তখন বললো ভাই আমি দশজন মেয়েছেলের সাথে কাজ করি আমার না হয় অন্য সম্পর্ক বা অনৈতিক সম্পর্ক থাকার কথা কিন্তু আমার স্ত্রীর কিভাবে তা থাকলো। প্রকৃত পক্ষে সে তার স্ত্রীকে কম সময় দিতে পারতো আর উপার্যন নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত থাকতো তার পরও যথেষ্ট উপার্যন মনে হয় করতে পারতো না। এ সব ফ্যাক্টরের/প্রভাবকের সামগ্রিক এফেক্টেই পরিবারটা ভেঙ্গে গেল বলে আমার মনে হয়েছে। মিডিল ইস্টে কাজ করে স্বামী, তার সাথে ইমুতে ভিডিও কলে কথা বলার সময় সে সেজেছে, লিপস্টিক দিয়েছে অথচ তার স্বামী তার এই সাজ গোঁজ দেখে মহা খেপে গেল, সে এত সাজ গোঁজ কেন করেছে তাতে সে জলে পুর ছাড় খার হওয়ার অবস্থা। এই হলো আমাদের অশিক্ষিত নিম্নবিত্তদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা। কোথায় স্বামীর খুশি হওয়র কথা তার বউকে সেজে গুজে তার সাথে কথা বলার জন্য তা না বুঝে সে নানা কিছু সন্দেহ করে বসল আর রাগ দেখাল।

ভেঙ্গে যাওয়া পরিবার গুলোর সন্তানদের বড় হতে দেখেছি আমি, তারাও ছন্নছাড়া হয়ে যায়। আমাদের নিচের তলায় ভাড়া থাকতেন রফিক আংকেল, তার স্ত্রীটি দেখতে ছিল বেশ সুন্দরী কিন্তু তাদের ছাড়া ছাড়ি হয়ে যায়। তিনটা ফুটফুটে বাচ্চা, মেয়েটাও দেখতে খুব সুন্দর হয়েছিল। ছেলে দুটাও দেখতে খুব স্মার্ট। মা বাবা এক সাথে না থাকাতে আর বাচ্চাদের বাবা তাদের খালা ও খালাত ভাই বোনদের বেশি আদর করা দেখে কষ্ট পেত ওরা। বড় ছেলেটা বিদেশে পড়তে চলে গেল। মেয়েটা পাড়ার এক সাধারণ ছেলের সাথে বিয়ে হলো। আর ছোট ছেলে নিঝু আমার দেয়া কম্পিউটার স্কুলে কাজ করতো। পরে তার এক মেয়ে ফেইসবুক ফ্রেন্ড তাকে বিয়ে করে বিদেশে নিয়ে যায়, ওখানে সে ভালই আছে এখন। ওর বিদেশ যাওয়ার সময় আমার দেয়া ওর চাকুরীর অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট ওর কাজে এসেছিল আমেরিকার ভিসা পেতে।

আমার স্ত্রী আমার খালাতো বোন, ওর সাথে কম কলহ হয় নি আমার। প্রত্যেক বার কলহ হওয়ার পর মনে হতো এ আর সমাধান হবে না। কিন্তু তা কালক্রমে সমাধান হয়েছে। যত যাই হোক ও ছিল আমার আদরের লিটিল সিস্টার, বড় আদরের ছোট বোন। একদম ছোট বেলায় আমার মা ওর হাতের আঙ্গুল চুষা বন্ধ করতে হত দোলনায় বেধে দিয়েছিল এই ভেবে যে হাতের আঙ্গুল চিকন হয়ে যাবে। আমার মা’র অদ্ভুত কথা সেই বয়সেই আমি ধরতে পেরে ওর হাতের বাধন আমি চুপি চুপি খুলে দিয়েছিলাম। আমার একটাই খালা আর মা ও খালার মধ্যে সম্পর্কও ছিল এক আত্মার মত। আমার খালাকে আমি মা ডেকেছি ছোট বেলায়। তার মেয়ে আমার স্ত্রী। আসলে ওকে আমি খালাতো বোন ভাবতাম না নিজের বোন ভাবতাম কারণ আমাদের মামাত ভাই বোনরা আমাদের অনেক পরে জন্মেছে। তাই এক সময় আমি আর ওই ছিলাম পরিবারে ছোট বাচ্চা দুই জন। আমার সাথে ওর বয়সের ব্যবধান ৬ বছর মাত্র। ওকে বুঝতে না পারার কারণ আমি মনে করি অনেকটা জেনেটিক। আমার বাবা বিক্রমপুরের আর ও’র বাবা কুমিল্লার। দুজনের নানা-নানু একই তারা সলিম নগর আর টাংগাইলের। বিক্রমপুরের মানুষের মন বড় আর সহজ সরল আর কুমিল্লার মানুষ গুলো হয় আটকানো মনের, সবাইকে সন্দেহ করার প্রবণতা আছে তাদের, সহজে নিজেকে প্রকাশ করে না। অন্যের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখে। বিক্রমপুর আর কুমিল্লার মানুষের প্রাচীন ও প্রথাগত দ্বন্দই মূলত আমার ওকে না বুঝার কারণ। তার চেয়েও ভয়ংকর হলো তিনটা বাচ্চা হয়ে যাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই ও আমার সেই আগের খালাতো বোন হয়ে গেল। মানে হলো ওকে আবার বিয়ে দেয়া যাবে। আমি মেনে নিয়েছি, কি আর করবো শত হলেও খালাতো ছোট বোন। একমাত্র খালার মেয়ে তাকে তো আর দুরে ঠেলে দিতে পারবো না। দাম্পত্য সম্পর্কটা টিকে থাকে অনেক গুলো সমঝোতার উপর। এই সমঝোতা গুলো একেক জনের কাছে একেক রকম। তবে দুজনকে সমঝোতায় আসতেই হবে কোন না কোন এক সময়। আমি যখন ২০১৪ সালে বুয়েট ব্রাঞ্চে কর্মরত ছিলাম তখন এজিএম স্যার একদিন রাতে ফোন দিয়ে আমাকে তার ছেলের ইমেইল একাউন্ট থেকে আসা মেইল গুলো কেন দেখতে পাচ্ছেন না জানতে চেয়েছিলেন, কথার ফাকে স্যার বললেন নেন একজন ভদ্রমহিলা আপনার সাথে কথা বলবে, তো ভাল কথা বুঝলাম ভাবী কথা বলবে, ভাবী ফোন ধরে বলা শুরু করলো ইদানীং কালের বুড়োরা রাত জেগে ইন্টারনেটে পচা পচা ছবি দেখে --- বলতে বলেতে স্যার ফোন কেড়ে নিয়ে রেখে দিল। বুঝলেন বিষয়টা স্যার কোন ভদ্রমহিলাকে ফোনটা দিয়েছিলেন, ভাবি একজন ভদ্রমহিলা তার কাছে আমার স্ত্রী যেমন আবার খালাতো বোন হয়ে গেছে আমার কাছে।

২০১০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত আমি ফেইসবুকে ইন্টালিজেন্ট ডিসকোর্স – ভিউপয়েন্ট নামে একটা আইডি খুলে তাতে ইসলামদের দাওয়া করতাম। তেমন কিছুই না, সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক ছবির ডিজিটাল প্ল্যাকার্ডে ইসলামের বানি লিখে গ্লোবালই ছেড়ে দিতাম। ওই আইডি টা অনেকের কাছে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে সবাই ওটাকে আইডিভি বলে ডাকতো। আমার সাথে বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকজন ব্যাকগ্রাউন্ডে যোগাযোগ করে আমাকে সহযোগিতাও করেছিল যার কারণে দুটো ব্যাকগ্রাউন্ড গ্রুপও খুলেছিলাম আমি যাতে প্লেকারড গুলো প্রাথমিক উপস্থাপন করার পর সবার মতামত নিয়ে গ্লোবালই পোস্ট করা হতো। এরা ছাড়াও কয়েকজন আমার সাথে যোগাযোগ করতো মানে তারা চেহারা বিহীন আইডিভির সাথে কথা বলতে চাইতো। কয়েক জন্য ছেলের পাশাপাশি রোকেয়া নামের একটা পাকিস্তানী মেয়ে আমার সাথে কথা বলতো, আমি অবাক হতাম ইসলামী একটা আইডিতে কেন একটা মেয়ে এভাবে কথা বলবে, সে আমাকে তার প্রথম প্রেমের কাহিনী বলতো আমি তাকে পরামর্শ দিতাম। বেশ কয়েক বছর কোন যোগাযোগ ছিল না তার পর যখন কথা হলো জানলাম তার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল পরে সে বিয়ে ভেঙ্গেও যায়। তার তখনও তার সেই প্রথম প্রেমের কথা মনে পড়ে। আমি বললাম সে তার বৈবাহিক সম্পর্কে আদি রসের তৃতীয় ধারা ধরে রাখতে পারে নি বলেই বিয়ে ভেঙ্গে গেছে। আদি রসের তৃতীয় ধারা কি জানতে চাইলে ব্যাখ্যা করতে কয়েকটা বেলি ড্যান্সের ভিডিও দেওয়ার পর সে আমার সাথে আর কখনই যোগাযোগ করে নাই। আদি রসের তৃতীয় ধারা বৈবাহিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কিন্তু সন্তান সন্ততি হয়ে গেলে আর দীর্ঘ সময় ধরে এই ধারা একই রকম আনন্দ বহ রাখাটা খালেক  ভাইয়ের ভাষায় বলতেই হয় শুধু অসম্ভবই না নামুমকিন হে। 

প্রিয় কলিগ নোমান ভাই বলেছিলেন দাম্পত্য জীবনে লিবিডো মাত্র ৬ মাস টিকে থাকে তার পর সব ডাল ভাত। কথা কম সত্য নয়। প্রথম দাম্পত্যে যা দৈনিক তিন চার বারও হয় তা বয়স কালে মাসে ১ কি ২ বারে এসে ঠেকে। এর জন্য দু পক্ষই দায়ী তবে এটা প্রাকৃতিকও বটে। বিয়ে ত কেবল ওই কাজ করে মজা নেয়ার জন্য নয়, প্রচুর দায় দায়িত্ব ও নির্ভরশিলতার দড়ি, সুতা টানা থাকে এই সম্পর্কে। এ প্রসঙ্গে মজার একটা মুভির কথা মনে পড়ে গেল, যা দেখেছিলাম ১৯৯০ কি ১৯৯১ সালে যখন সিডি প্লেয়ারে মুভি দেখা হতো, ডিভিডিও এদেশের বাজারে এসে পৌছায় নাই। তো সে মুভির কাহিনীটা ছিল এমন যে এক বড় মাপের আর্টিস্ট রং এর বড় বড় কৌটা নিয়ে ছবি আঁকে বিশাল দেয়াল জোড়া ক্যানভাসে। একদিন ছবি আকার সময় তার রং এর বড় বড় কৌটা গুলো সব খোলা এমন সময় তার প্রেমিকার আগমন ও দুজনে তুমুল দাম্পত্য কলা তাও আবার সেই ক্যানভাসের চাদরে ঝড় তুলে। তাতে করে সারা গায়ে রং মেখে ঝড় তুললে যা হয় একটা মাস্টার পিস এবসট্রাক্ট আর্ট হয়ে গেল। ওটা প্রদর্শনীতে অনেক দামে বিক্রি হলো। এর পর চললো তাদের নতুন পদ্ধতিতে বড় ক্যানভাসে ছবি আকার খেলা। দুজনেই চাদরে দাম্পত্য ঝড় তুলে আর একটা করে মাস্টারপিস ছবি হয়ে যায়। এমন সময় একদিন দুজনে ঝগড়া হয় আর দুজন আলাদা হয়ে যায়। তার পর সেই আর্টিস্ট আর ছবি আঁকতে পারে না, অন্য কারো সাথে তো সেই ঝড় আর উঠে না। তার মানে হলো দাম্পত্য জীবনে এই আদি রসের ঝড়টা দরকার। এটা বড় বড় ইন্টারভেলে হলেও দরকার আছে। এটা দুজনকেই বুঝতে হবে। দুজন দুজনের কাছে আকর্ষণীয় থাকতে হবে যত দিন পারা যায় বা তার জন্য চেষ্টাটা অন্তত থাকতে হবে। আমাদের দেশের মেয়েরা এটা মনে হয় বুঝেও বুঝে না। তারা স্বামীর চাহিদার বিষয়ে উদাসীন যা দাম্পত্যকে নিরস করে দেয়। পুরুষদেরও নানাবিধ সমস্যা থাকতেই পারে কিন্তু তার জন্য ডাক্তারি পরামর্শ নেয়ার ব্যবস্থাও তো আছে কিন্তু তারা লজ্জায় তাদের শরণাপন্ন হয় না। লন্ডনে স্কুল পর্যায়ে যৌন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে আনুমানিক ২০০২ সালের দিকে আর আমাদের দেশে না আছে মানুষিক স্বাস্থ্য শিক্ষার কোন বিষয় না যৌন শিক্ষার সাধারণ জ্ঞান। হলিউডের একট্রেস দিপিকা পদুকন এর লিভ, লাফ, লাভ বা (3এল) ফাউন্ডেশনের ওয়েব পেইজ দেখলাম সেদিন। ওরা মানুষের মানুষিক স্বাস্থ্য সমস্যার মূল উৎপাটনে মানুষিক শিক্ষার প্রতি প্রচারণা করছে ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, যারা মানুষিক সমস্যায় আছে তাদের পরামর্শও দিচ্ছে। আর লন্ডনে যৌন শিক্ষার নামে যাচ্ছে তাই শেখান হচ্ছে স্কুলে তার সমালোচনা পড়লাম সেদিন। যে সব দম্পতির দু জনই চাকুরীজীবী তাদের জন্য দাম্পত্য কাজ কর্ম পালন আরো দুরূহ, তারা এমনিতেই কম সময় পায় একে অপরের জন্য। তাদের উচিত সপ্তাহান্তে প্রচুর ঘুরা ঘুরি করা ও একে অপরকে প্রচুর সময় দেয়া। আমার বাবা ১৯৮৯ সালে লিবিয়া থেকে ঢাকায় এসে তার ওখানকার এক কলিগের শ্যালকের দাম্পত্য কলহ নিরসনে প্রচুর শ্রম দেয়, মা বিরক্ত হতো কিন্তু আমার বাবা ছিল চরম সহজ সরল মানুষ তার একটা জেদ ছিল কেন মানুষকে বুঝান যাবে না। ওই দম্পতিকে নিয়ে যে কত মিটিং এর আয়োজন করেছিলেন আমার বাবা আমার কৈশোরে সেই ঘটনা এখনো আমার মনে দাগ কেটে আছে। এ প্রসঙ্গে একটা কথা না বললেই নয়, যে পরিবার গুলো ভেঙ্গে যায় তাদের দ্বিতীয় বিয়ে না করাই ভাল, মনোবিজ্ঞানীরা বলেন যে দ্বিতীয় বিয়ে বহুলাংশেই ভঙ্গুর হয় বা কখনই ভাল ফলাফল দেয় না। আমার বাবার মৃত্যুর পর মা আবার বিয়ে করতে পারতেন কিন্তু তা তিনি করেননি আমার কথা চিন্তা করে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমাকে আগলে রেখেছেন, এমন মা কয়জন পায় আমার জানা নাই। আমার বাবার ছোট ভাই আলিম চাচা ২৭ বছর বয়সে হৃদরোগে সৌদিআরবে মৃত্যুবরণ করার পর চাচী আবার বিয়ে করেন, সেই ঘরে তার আরেকটি ছেলে সন্তানও হয়, তাদের দ্বিতীয় বিয়ে টিকে গেছে তবে এরকম দ্বিতীয় বিয়ের সফল হওয়ার সংখ্যা অনেক কম বলেই শুনেছি।

দাম্পত্য কলহ নিয়ে এভাবে লিখতে থাকলে পুর একটা বই লেখা হয়ে যাবে, তাই অন্য কলহ প্রসঙ্গ গুলো আলোচনায় আনার তাগিদে এই আলোচনাটা সংক্ষেপ করলাম। আমার আর আমার স্ত্রীর দাম্পত্য কলহ সব গুলো নিয়ে লিখলে তা কামসূত্রকেও হার মানাতে পারে। লেখার ইচ্ছা ছিল কিন্তু তা আর লিখলাম না। এত গোপন কথা সবাইকে বালার দরকার নাই। যারা যার দাম্পত্য তার তার ব্যাপার সবার কলহ প্রকৃতি এক রকম নয় হওয়ার কথাও নয় আর হওয়াটা উচিতও নয়। দাম্পত্য কলহ নিজেদের মধ্যেই রাখা উচিত অন্য কাউকে এর মধ্যে নাক গলাতে দেয়া উচিত নয় বলে আমি মনে করি।

কৈশোরের সন্তানের সাথে অভিভাবকদের কলহঃ
এই বয়সটাতে সন্তান মানুষ থেকে ভিন্ন প্রজাতি হয়ে যাওয়া এরকম মন্তব্য করেছিলেন একজন স্বনামধন্য বক্তা কোন এক আলোচনা ভিডিওতে। যা হোক কথাটা কমবেশি সত্য। আমি বায়োলজিতে ভাল ছিলাম, ওখানে পড়েছিলাম লার্ভা পিউপামথ বা প্রজাপতি। বুকে হাটা লার্ভা গুটি গঠন করে কৈশোরে তার পর গুটি থেকে বের হয়ে তার পাখা গজায় তাই হয়ে যায় মথ বা প্রজাপতি। এটা আমাদের প্রকৃতির স্বাভাবিক ধারা। কৈশোরটা আসলে এই গুটি পাকানো অবস্থা। শৈশব পাড় করে যখন তারা কৈশোরে উঠে তখন গুটি পাকান পিউপাতে পরিণত হয় তার পরই তাদের প্রজাপতি হওয়ার পালা, মানে পাখা গজান। অভিভাবকদের এই পরিবর্তনটা মনে হতে পারে তার সন্তান মানুষ থেকে ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীতে পরিণত হয়ে গেছে। কৈশোরে একবার আমি নানা পশ্চিমা শিল্পীর বড় বড় পোস্টার বা ছবি দিয়ে ঘর ভরে ফেলেছিলাম তা দেখে মা ভীষণ খেপে গেল। বাবাকে এনে দেখাল, সেও বিরূপ মন্তব্য করলো। তার পর রাগের চোটে আমি সব ছিঁড়ে ছুড়ে ফেলেছিলাম। সাধারণত ১৩ থেকে ১৯ বয়সটাকে ইংরেজিতে টিন এইজ বলে কারণ এই সংখ্যাগুলো উচ্চারণের শেষে টিন শব্দটা আসে আর এই বয়স গুলোই কৈশোরের ভিন্ন প্রজাতির গুটি পাকানোর বয়স। তবে কার কার ক্ষেত্রে কয়েক বছর আগে বা প্রলম্বিত কৈশোরও হয়ে থাকতে পারে বলে মনোবিজ্ঞানীরা বলে। কৈশোরিক প্রবণতা গুলো কার কার ক্ষেত্রে  ওই বয়স গুলোর আগে আসতে পারে আর কাটতেও পারে কয়েক বছর পর। তবে বুঝতে হবে যে এই গুটি পাকানোটা স্বাভাবিক ভাবে মানব জীবনে আসবেই আর তা কেটে যেতেও বাধ্য। শৈশবের পর কৈশোরে না ছোট না বড় অবস্থাটা খুব জটিল, মনের মধ্যে বিশ্ব সম্পর্কে নানা স্বপ্ন, দেহে নানা হরমোনের মাতামাতি, মনে নানা রংবেরং এর অনুভূতির আর ভাবের উত্থান পতন মনুষ্য সন্তানদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা দুষ্কর এটা তাদের বাবা মা রা হয়তো বুঝতে চান না। বাচ্চাদের উদ্ভট আচরণ দেখে তারা ভয় পেয়ে যান। আমার লেখা “মনের স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশকে যা বন্ধ করে দেয় তাই অনিষ্টকর “ পড়ে সকল ৮৯ এসএসসি’র এক ইউনিভার্সাল গ্রুপের বেচ মেট লিপি আমাকে ফোন করে বললো আমার লেখা কয়েক লাইন পড়ার পর যখন দেখতে পায় তা অনেক বড় তখন তার মাথা ঘুরে যায় আর আগাতে পারে না। তাই ফোন করি জানালো তার মেয়েকে নিয়ে তার নানা সমস্যার কথা। সে সবিস্তারে তা বর্ণনা করে আমার পরামর্শ চাইলো। তার মেয়ে পড়ে নর্থ সাউথ ইউনিভারসিটিতে, মা বাবার কথা শুনতে চায় না, প্রাত্যহিক জীবনাচরণেও প্রচুর অনিয়ম করে। আমি বুঝায়ে বললাম আমার দুই কাজিন ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ে বের হয়েছে তাদের স্বামীরাও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের। ওখানকার ছাত্রদের একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, তাদের দেশ প্রেম থাকে না, পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে যায়। তাদের বানানো হয় মেটেরিয়াল বেনিফিট ফোকাস্ড, স্বার্থপরতা পরম ধর্ম ওদের কাছে। ওদের কেউই দেশে নাই, এক দম্পতি গেছে আমেরিকায় আরেক দম্পতি গেছে ক্যানাডায়। ওরা দেশীয় সংস্কৃতিকে তোয়াক্কা করে না। দেশর ঐতিহ্যকে গ্রাহ্য করে না। এদের কাছ থেকে দেশ খুব একটা উপক্রিত হওয়ার কথা না। বুঝায়ে বললাম চাপ না দিতে, একে পরিবারের অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা সম্পর্কে সে জানে তার জন্য তাকে টিউশনি করতে হচ্ছে, দ্বিতীয়ত তার স্বাধীনতা খর্ব করে এমন কিছু সে মেনে নিতে চাচ্ছে না। মা তার পিছনে সারাক্ষণ লেগে আছে এটাও তার পছন্দ না। কৈশোরে সন্তানকে খানিকটা ব্যক্তিগত স্পেস দিতেই হয় যা অনেক বাবা মা দিতে চায় না। কৈশোরের চরম উত্তেজনা গুলো প্রশমনের এগজস্ট না দিলে তারা বিদ্রহ করে বসবে তাই পিতা মাতার উচিত কৌশলে সেই এক্সজস্ট এর ব্যবস্থা করে দেয়া। আমার কৈশোরেও আমি প্রচুর আজগুবি কাজ করেছি আর আমার বাবা মাও আমাকে নিয়ে চিন্তিত ছিল। বাবা আমার কৈশোর কাটার আগেই পরপারে চলে গেল। আর মা তার পর আমাকে ছেড়ে দিয়েছিল। আর ছেড়ে দিয়েছিল বলেই আমি হোঁচট খেয়ে খেয়ে পথ চলা শিখেছি। আমার দুই মেয়ে সন্তানের এক জন এখন কৈশোরে, প্রথমটাকে নিয়ে কোন সমস্যাই হয় নাই, দ্বিতীয়টাকে নিয়েও কোন সমস্যা দেখছি না। ছেলেটা ছোট এখনও কৈশোর পর্যন্ত পৌছায় নাই। যে মেয়েটা কৈশোরে সে তার ছোট ভাইকে খেলার সাথির মত নেয় যার ফলে ও’র সমস্যা হচ্ছে না। আমার পরিবারে সমাজের অন্য পরিবারের সংযোগ কম, অনেক কনজারভেটিভ পরিবারের বড় হয়েছ আমার মা আর খালা তাদের নাতিরা তো কনজারভেটিভ হবেই। ওদের মা কড়া আর আমি হলাম স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান প্লাস পরিবারের কর্তা, এই সেট আপ ওরা ভালই গ্রহণ করেছে। ওদের মানসিক স্বাস্থ্যর দিকে আমার গভীর নজর আছে বিধায় কোন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না এখনো। তবে ভয়ে আছি ছেলেটাকে নিয়ে কারণ ও যখন কৈশোরে পড়বে তখন আমি মহা বৃদ্ধ বা মৃত। সময়ই বলে দিবে কি হয়। কোন গাছ যখন তার ফুলের মঞ্জুরি উন্মুক্ত করে তখন দেখেছেন কি তার নিচে তারা কয়েকটা পাতার একটা বেইজ তৈরি করে নেয়, বাবা মা মূলত সন্তানের জন্য সেরকম একটা বেইজ, তারা যদি পরস্পর সম্পূরক না হয় তবে মঞ্জুরি স্বরূপ সন্তানেরা শক্ত বেইজের উপর দাড়াতে পারে না আর তখনই কনফ্লিক্ট সিচুয়েশন এর সৃষ্টি হয়।

বন্ধুতে বন্ধুতে কলহঃ
খুব বেশি কাছে আসতে নাই কারো তাতে ঠোকা ঠোকি লাগবেই। আমার মতাদর্শন যখন পরিবর্তন হয়ে ধার্মিকতা থেকে নাস্তিকতার দিকে চলে গেল তখন সকল বন্ধ মহলেই আমার সাথে টক্কর লাগলো। আমি তাতে বিচলিত হই নাই বরং আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি। যদিও তাতে তেমন একটা লাভ হয় নাই কারণ যারা ধর্মান্ধ তারা আফিম খাওয়া নেশাগ্রস্থের মত আচরণ করে থাকে। তাদের কাছে ধর্ম বিরুদ্ধ কিছু বলা মানেই শয়তানের ওয়াসওয়াসা বা ফিসফিসানি। যত যুক্তিও দেন না কেন তারা তাদের তালগাছ ছাড়বে না। তালগাছের আগায় উঠে বসে থাকবে আর পরকালের স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকবে। আমি বন্ধু পছন্দ করি আর বন্ধু ছাড়া জীবন অচল এই ভাবনাটা আমার পছন্দ কিন্তু তার মানে এই নয় যে সে আমার মতামতের গুরুত্ব দিবে না। বন্ধুত্বর বন্ধন সহমর্মিতার এখানে ভাবাদর্শন কিংবা ধর্ম বাধা হতে পারে না। সোনালী ব্যাংকের দু একজন বেচ মেট তুই তুকারি সম্পর্ক এমন কাছে বানায়ে ফেলতে চায় যেন আমরা সেই ছোট বেলার বন্ধুর মত। তাদের আচরণে অতিরিক্ত আন্তরিকতা যা এক পর্যায়ে কনফ্লিক্টে রূপ নেয়। ওদের বুঝাতে হয়েছে যে আমারা পরিণত বয়সে এসে বেচ মেট হয়েছি তার মানে এই নয় যে আমরা পাড়ায় যে ছোট বেলার বন্ধুদের সাথে আচরণ করি সেরকম গালিগালাজ আচরণ এখানেও করবো। ওরা বুঝেছে কিনা তা জানি না তবে আচরণে ওদের পরিবর্তন এসেছে তাই যথেষ্ট মনে করি। বন্ধুতে বন্ধুতে ঝগড়া লাগতেই পারে তা পরে মিলমিশ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে যদি তা অর্থ সংশ্লিষ্ট হয় কিংবা আতে ঘা দিয়ে কথা বর্তা হয় তবে তা আর জোড়া লাগে না। এখানেও ওই একই সমাধান, কথা বন্ধ না করে সংলাপ চালায়ে যাওয়া উচিত যাতে বরফ গলে পানি হয়ে যায়।

ক্ষমতার প্রভাব নিয়ে কলহঃ
এটা রাজনৈতিক কলহ, যাকে পাওয়ার ক্ল্যাশ বলা যায়। সোনালী ব্যাংকের বিএমইবি শাখায় থাকা কালে আমি নিজের প্রচেষ্টায় মাদ্রাসা বোর্ডের প্রচুর মানে বস্তা বস্তা ডিডি আসার প্রক্রিয়াটি অটোমেশনের জন্য প্রস্তাব রাখি ম্যানেজার সারের কাছে তার পর প্রধান কার্যালয়ের আইটি প্রোগ্রামারদের সাথে মাদ্রাসা বোর্ড ও ঢাকা বোর্ড এর আইটি কর্মকর্তাদের সাথে মিটিং এর ব্যবস্থাও করি যার ফলশ্রুতিতে সোনালী সেবা নামক নতুন ইনহাউজ সফ্টওয়ার বিল্লাল স্যার আর যহির স্যার এর মাধ্যমে বাস্তবে রূপ লাভ করে। কিন্তু টিটি প্রেরণ কথাটাকে ইএফটি প্রেরণ না করায় বা না বলায় সবাই টিটি পাঠাতে থাকে আমাদের প্রচলিত আরএমএস প্লাস (রেমিটেন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস প্লাস) এর মাধ্যমে। শাখার আমার একই পদমর্যাদারে আরেক কলিগ আনিস ভাই বলে বেড়াচ্ছিল যে সোনালী সেবা কার্যকর করা যাবে না, এত টিটির কোনটা আরএমএস প্লাস এর মাধ্যমে আসলো আর কোনটা সোনালী সেবার মাধ্যমে আসলো তা সব তালগোল পাকায়ে যাবে। ওখানে আমি শক্ত হাতে আরেক অধস্তন সহকর্মী কেয়া মেডামের মাধ্যমে আরএমএস প্লাস এর মাধ্যমে পাঠানো সব টিটি ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করলাম ও ম্যাসেজে লিখে দিতে বললাম তা যেন সোনালী সেবার মাধ্যমে পাঠানো হয়। আমি তার জন্য আলাদা এক্সেল ডাটা বেইজের ব্যবস্থা করলাম যাতে ট্রেক রাখা যায় কোন গুলো ফেরত গেল আর তা পুনরায় সোনালী সেবার মাধ্যমে পাঠান হয়েছে কিনা। এভাবে সোনালী সেবা সারা দেশের সব সোনালী ব্যাংকের ব্রাঞ্চে পরিচিতি পেয়ে গেল। এখন ১২ কি ১৩ টা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার ফি কিংবা রেজিস্ট্রেশন ফি জমা নেয়া হয় সোনালী সেবার মাধ্যমে। আমার ওই দিনের দৃঢ় অবস্থান না নিলে সোনালী সেবাকে সারা দেশের সব ব্রাঞ্চে পরিচিত করাতে সময় লাগতো অনেক। এতে আনিস ভাই এর সাথে আমার কনফ্লিক্ট হয়েছিল কিন্তু কেয়া মেডাম আমাকে সহযোগিতা করেছিল। যা হোক ক্ষমতার প্রভাব বা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সব জায়গায় আছে, তা তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানেও আছে, পরিবারেও আছে আবার বাড় বড় প্রতিষ্ঠানে তো আছেই। এটা সম্মুখ লড়াই বা ফ্রন্ট লাইন কমবেট, কোন কোন দেশের সংসদে হাতাহাতি, চেয়ার টেবিল ভাঙ্গা এ সবও দেখা গেছে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নিরসনেই সংবিধান ও নির্বাচন ইত্যাদির অবতারণা। সাংগঠনিক গঠনতন্ত্রে আচরণবিধি ও সিদ্ধান্ত নেয়ার পদ্ধতি ভাল ভাবে উল্লেখ থাকলে এসব কনফ্লিক্ট সমাধান সহজ হয়।

অফিসের বসের সাথে অধস্তন কর্মীর কলহঃ
কিছু কিছু লোক আছেন যারা অন্যের উপর তার রাগ ঝাড়েন, বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে হয়তো দেখা যাবে তার ব্যস্ততার কারণেই তার অধস্তন ভুলটি করেছিল কিন্তু বসের মনে হতেই পারে যে তার অধস্তন সহকর্মীর অদক্ষতার কারণে কিংবা অবহেলার কারণে বিষয়টি ঘটেছে। বসের মন রক্ষা করে চলা ছাড়া কর্পোরেট চাকরীগুলোতে কোন পথ খোলা নাই। বসের অসন্তুষ্টির জের বহু সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। তবে বসদের আরো বিজ্ঞ হওয়া উচিত, তাদের অধস্তনদের মানসিক ও পারিবারিক সমস্যা গুলো বুঝে দেখা উচিত আর অধস্তনের উপর কাজের প্রেশার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে। কোন একটা অঘটনের জন্য কে দায়ী তা নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার না করলে অধস্তনরা অবিচারের সম্মুখীন হয়। গুরু পাপে লঘু শাস্তি যেমন খারাপ তেমনি লঘু পাপে গুরু শাস্তিও সমান ক্ষতিকারক। এক্ষেত্রে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ খুব কম লোকই পেয়ে থাকে। আমার চাকুরী জীবনে এ পর্যন্ত যতগুলো বস পেয়েছি তারা সবাই খুব ভালো ছিল কিন্তু একসাথে কাজ করতে গেলে কোন না কোন সময় মনমালিন্য কিংবা ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েই যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অধস্তনদেরকেই মানায়ে নিতে হয়। পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে যাতে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত আর তা হয়েই গেলে সরে যাওয়াই শ্রেয়। আমার সকল প্রিয় বস যারা আমাকে অত্যন্ত প্রিয় মনে করতো তাদের সবার সাথে লম্বা সময়ের শেষের দিকে দ্বন্দ্ব হয়েছে আবার তা নিরসনও হয়ে গেছে। আমি বর্তমানেও একটা কলহ বা দ্বন্দ্বর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি জানি না এটার সমাধান হবে কিনা, তবে আগের অভিজ্ঞতা থেকে জানি সময়ে সব ঠিক হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে জীবনটা দুই দিনের বাকি পাঁচ দিনইতো অফিস।

উপরোক্ত কলহ প্রসঙ্গ গুলো ছাড়াও আরে অনেক কলহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে যা আলোচনা করতে গেলে লেখাটা অনেক বড় হয়ে যাবে। উপরোক্ত কয়েকটা কলহ দমন করতে পারলেই আমাদের জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি। কলহর প্রকৃতি বুঝতে পারা আর তার সমাধান জানা থাকলে সকল কলহ সমস্যার নিরসন খুব সহজ হবে বলে আমার বিশ্বাস। সব কথার শেষ কথা এই যে, কমিউনিকেশন মিসমেচই সকল কলহের মূল কারণ এটা মনে রাখলেই প্রচুর কলহ পরিস্থিতি এড়ানো যাবে।

আপডেট হিস্ট্রিঃ ০১ফেব্রুয়ারী২০২৩> ৩১আগস্ট২০২৩> ২৩ সেপ্টেম্বর২০২৩>
 

 

No comments:

Post a Comment