Wednesday, January 17, 2024

শরিফ সারেং পরিবারের গল্প-১ : দিলশাদ মিজান (মিমি)

 

আলহামদুলিল্লাহ, রওনক ও রুশো ভাইয়ার উদ্যোগে এখানে অনেককে পেলাম। ভাল লাগছে। এতটা সময় বের করে সবার সাথে যোগাযোগ করে একসাথে করা এবং উৎসাহ নিয়ে সবাইকে রেগুলার আপডেট রাখা সত্যি এপ্রিশিয়েট করার মত। সবাই একত্রিত হলে বা হওয়ার মনোভাব দেখালে, আমার আমাদের আব্বুর কথা খুব মনে পড়ে। আমার আব্বু ডঃ মিজান, সবার সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা জীবনের শেষ পর্যন্ত করে গিয়েছেন। মানুষের ছোটবেলার স্মৃতি খুব পাওয়ারফুল। ছোটবেলায় কোন ঈদ ছিল না যে আমরা আমাদের প্রত্যেক চাচাদের বাসায় যায়নি। আব্বু আমাদের কে নিয়ে সবার বাসায় যেতেন। কোন বিয়ের দাওয়াত থাকলে আমাদের চার ভাই-বোনের একজন কেও ফেলে যেতে চাইতেন না। গ্রামের বাড়িতে ও আব্বুর সঙ্গে অনেক গিয়েছি। নিজেদের বাড়ি ছাড়াও  অন্যান্য অনেক গ্রামের আত্মীয়স্বজনদের বাসায় গিয়েছি। গ্রামের আত্মীয়রাও আসতেন, এখনো আসেন আমাদের শান্তিবাগের বাসায় । তাই গ্রামের আত্মীয় এবং ফুপু অম্মার পরিবারের সবার সঙ্গে খুব আন্তরিক সম্পর্ক আমাদের সবসময়। এখন ফিরে তাকালে দেখি, পরিবারের প্রায় সবাইকে চিনি মাশাআল্লাহ, সবার সঙ্গেই ছোট -বড় স্মৃতি আছে। আমি অনেক বছর দূরে থাকি তাই আমার সঙ্গে এখন দেখা কম হয়। কিন্তু একা থাকি তো, সবাইকে মনে করি।  

এখানে যারা বড়-চাচার ফ্যামিলি থেকে আছ, তোমাদের বড় হওয়ার সময়টাতে আমাদের যোগাযোগ কম হয়েছে। কিন্তু আগে অরুন মুসা ইকবাল ভাইরা যখন একসঙ্গে ছিলেন তখন এবং তারপর ও ভাইয়ারা বেঁচে থাকা পর্যন্ত দেখা হতো, আমাদের বাসায় সবাই আসতেন। আমরাও শবে বরাতে,  ঈদ সহ এমনিতেও যেতাম। রাকিব আমার চেয়ে কিছুটা ছোট।  তানিয়া, রাকিবের মনে থাকবে। রিয়াদ রাসেল ছোট ছিল। মুসা ভাইয়া মনিকা -সৈকত কে নিয়ে আমাদের বাসায় আসতেন। পরে মুসা এবং ইকবাল ভাই অনেক দূরে থাকতেন তাই ওদের আমরা বড় হতে দেখিনি। আসলে আমাদে বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের মাযেরা খুব একা হয়ে গিয়েছিলেন। পলাশ ভাইয়ারা, রওনক ভাইয়া, হীরা ভাইয়া, আমরা, রাকিবারা, মনিকারা আমাদের বড় হওয়ার লেখাপড়ার এই সময়টাতে আমাদের বাবারা চলে গেছেন। আমাদের মায়েরা আল্লাহর অশেষ রহমতে আমাদের এতদূর নিয়ে এসেছেন। অনেক ধৈর্য্য আমাদের মায়েদের, তাদের কষ্টের, ত্যাগের ফলে আজকে সবাইকে এখানে সাকসেসফুল মানুষ হিসাবে দেখছি, আলহামদুলিল্লাহ।  

আব্বু-আম্মু  আমাদেরকে ধর্মীয় বাউন্ডারিয়াস এর মধ্যে বড় করার চেষ্টা করেছেন। আমাদের চাচাদের মেযেদের মধ্যে আমাদের তিন বোনের বয়সী কোন মেযে তখন ছিল না। আলেয়া আপা আমাদের অনেক বড়, হলেও একটা সময় আলেয়া আপাকে আমরা অনেক পেয়েছি তাই সেলিনা আন্টির সঙ্গেও সখ্যতা ছিল। শিমুল আপু - লাবনী আপু আমাদের বড় ছিলেন, বাসা বেশ দূরে ছিল। কম দেখা হতো।কিন্তু যখনি দেখা হয়েছে খুব মিষ্টি করে কথা বলেছেন, আদর করেছেন। আমাদের জেনারেশন এ আর কোন মেয়ে নেই।  আব্বু মারা যাওয়ার পর রুহুল কাক্কু- কাকী আমাদের সঙ্গে সব সময় ছিলেন। অনন্যা অনেক ছোট হলেও, ও আমাদের অনেক কাছের। হঠাৎ রুহুল কাক্কু ও আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। কাক্কুকে অনেক মনে পড়ে, একদম ছোটবেলা থেকে রুহুল কাক্কুর সঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি, অনেক আদর-স্নেহ পেয়েছি। বড় কাক্কু আর আলীম কাক্কু ছাড়া আমার সব কাক্কুদের সঙ্গে আনন্দের স্মৃতি আছে। আমি লিখবো ইনশাআল্লাহ।

আমাদের লেখাপড়া, চাকরী, ছেলেমেয়ে নিয়ে মোটামোটি সবাই কিছুটা সেটেলড হতেও অনেকটা  সময় চলে গিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা চেয়েছেন বলে আমরা এখন যে যার জায়গা থেকে আবার কানেক্টেড হতে চেষ্ট্রা করছি। সবার কান্ট্রিবিউশন এখানে জরুরী।  রওনক ভাইয়া চেষ্টা করছে, আমরা যে যখন ফ্রি, কিছটা যোগাযোগের চেষ্টা করি।  আমি দূরে থাকি কিন্তু সবাই গেট-টুগেদার করছে দেখলে ভাল লাগবে। এক-দেড় বছর পর পর দেশে আসি, ইনশাআল্লাহ তখন দেখা হবে। ২০২১ এ পলাশ ভাইয়ার আয়োজন করা গেট-টুগেদার গিয়ে অনেকের সঙ্গে একসঙ্গে দেখা হয়ে খুব ভাল লেগেছিলো।   

আমাদের চাচাদের জীবনে একটা পর্যায়ে তারা প্রচন্ড একতাবদ্ধ ছিলেন। সমযের সাথে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের জন্য কিছুটা দূরে চলে গিয়েছিলেন। আব্বু আমাদের তাদের জীবনে ভাইদের অবদান, সুন্দর স্মৃতিগুলো নিয়ে অনেক গল্প করতেন, কথা বলতেন। দাদুর কাছ থেকে অনেক অনেক আগের তাদের জীবনের গল্প শুনেছি। কাক্কুরা যখন যে আমাদের বাসায় এসেছেন বা কোথাও দেখা হয়েছে আমাদে চার ভাই-বোনকে অনেক আদর করেছেন। তাদের সবার মাঝেই একটা নরম-সুন্দর মন ছিল, আমার সবসময় মনে হয়েছে। খুব মেধাবী এবং আবেগী মানুষও ছিলেন তারা।

আল্লাহ আমার দাদা-দাদু, আব্বু, কাক্কু-কাকীদের, ভাইদের এবং যারা চলে গিয়েছেন তাদেরকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।  সত্যিকার অর্থে আমাদের বাবা-চাচারা প্রত্যেকে ব্যাক্তিগতভাবে খুব ভাল মানুষ ছিলেন। আমার আব্বু তার ৫৩ বছরের এই ছোট্ট জীবনে এমন অনেক কিছু করেছেন যেটা মানুষ অনেক লম্বা হায়াৎ পেয়েও করতে পারেনা, নিঃস্বার্থভাবে  সাধ্যমতো মানুষের জন্য করেছেন, আল্লাহর জন্য যেভাবে মানুষ কে আল্লাহর পথে ডেকেছেন, দুনিয়ার এম্বিশন থেকে সরে গিয়ে আখিরাত-মুখী জীবন করার চেষ্টা করেছেন। আমার আব্বুকে তার গুনের জন্য এখনো জানা- অজানা অনেক মানুষ মনে করে, দোআ করে। আর একজন আমার কাছ থেকে দেখা মানুষ হলেন রুহুল কাক্কু, তার মতো এত সহজ মানুষ, এত অনেস্ট মানুষ নেই বললেই চলে। অনুকরণ করার মতো মানুষ। আমি খুব কাছ থেকে এই দুইজন কে দেখেছি বলে তাদের কথা তুলে ধরলাম। আমার অন্য কাক্কুরাও অনেক গুণী মানুষ ছিলেন।  আমাদের ভাই-বোন, ভাগ্না-ভাগ্ন, ভাতিজা-ভাতিজি সবার মাঝেও মানুষ হিসেবে অনেক ভাল গুন আছে। সেগুলোও যেন আমরা এক্সপ্লোর করি।

ফুপু আম্মা আর সোনা কাক্কুকে আল্লাহ নেক হায়াৎ দিন এই দোআ করি। আমাদের বাবাদের জেনারেশন এর প্রায় সবাই চলে গিয়েছেন। তাদের দেখে একটা জিনিস তো আমরা নিশ্চিত যে ' মানুষ আসলে চলেই যায়, আমাদের চলে যাওয়ার দিন ও খুব কাছেই '। এরপর অনন্ত আখিরাত। তাই যেকদিন দুনিয়াতে আছি নিজেরা আল্লাহর দেওয়া পথ অনুযায়ী চলার চেষ্টা করি। যারা চলে গিয়েছেন তাদের দুআ করার, ভাল কাজ করার আর কোন সুযোগ নেই, তাই তারা বেনিফিটেড হবেন এমন কাজ যেন আমরা করি।  আত্মীয়তার সম্পর্ক রাখা খুব বড় একটা কাজ।  আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা ঈমানের পরিচায়ক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে’। আমরা যেন সেটা বজায় রাখতে পারি, সুখে দুঃখে একে ওপরের পাশে থাকতে পারি । এই দোআ সবার জন্য।

No comments:

Post a Comment