Saturday, January 27, 2024

সদ্য সমাপ্ত ও আংশিক বিতর্কিত ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে

 

সম্প্রতি ৭ জানুয়ারি ২০২৪ সংঘটিত আংশিক বিতর্কিত ১২ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে আমার মতামত এরকম, দেশের পরাজিত রাজনৈতিক শক্তির ফাঁকা বক্তব্য শুনলে আফসোস হয়। তারা বলছে দেশে একটা ডামি নির্বাচন হইছে অথচ ওদিকে নতুন মন্ত্রীসভা শপথ নিচ্ছে। তারা বলছেন জনগণ এই নির্বাচন বর্জন করেছেন। অথচ কত পারসেন্ট ভোটাধিকার প্রয়োগ করলে নির্বাচন সঠিক হয়েছে বলে গণ্য হওয়া উচিত তা নিয়ে কিছু বলছেন না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ৪১.৮ শতাংশ লোক ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে বলেছেন, সেই বক্তব্যকেও তারা বানোয়াট বলছেন। বৈদেশিক পর্যবেক্ষণ দলের বক্তব্যও তাদের কাছে সরকারের মদত পুষ্ট বৈদেশিক পর্যবেক্ষক দল বলে আখ্যা দিচ্ছেন। যখন সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন সংবিধানে বাদ দেয়া হলো তখন তারা জোর আন্দোলন করেন নি অথচ নির্বাচনের সময় এসে সংবিধান আবার সংশোধন করে নির্বাচন কালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃ সহযোজনের দাবি জানাচ্ছেন। তাদের সমমনা দল গুলোর লিফলেট বিলি করে জনমত গঠনের সময় বহু আগেই পার হয়ে গেছে। শেষ সময়ে এসে এত হুলুস্থুল করে যে জনমত গঠন করা যায় না তা বুঝার মত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তাদের থাকার কথা ছিল। কই এখন তো কোন অগ্নি সংযোগ, গাড়ি পোড়াও, রেল লাইন স্থান চ্যুতির ঘটনা ঘটছে না। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে অনধিকার প্রবেশ কি কার নির্দেশ ছারা কেউ করছে এখন বা কখনো করবে? পুলিশের উপর নির্যাতন সত্যেও তারা একটা গুলিও ছুড়েনি বরং উল্টা মার খেয়েছে। এগুলো সরকারই করে বিরোধী শক্তির উপর দোষ চাপিয়েছে, এরকম উদ্ভট বক্তব্যও তারা মানুষকে বিশ্বাস করতে বলছে আর কিছু মানুষ তা বিশ্বাস করে মজাও পাচ্ছে। রাজনৈতিক মতাদর্শে মতভেদ থাকতে পারে কিন্তু একেবারে এসপার (নর্থ পোল) কি ওসপার (সাউথ পোল) এত পার্থক্য কোন সভ্য দেশে থাকাটা শোভন দেখায় না। সমঝোতার মানে এই না যে, আমাকে চেয়ারম্যান না মানলে আমি সব বিষয়েরই বিরোধিতা করবো। দেশের জনগণ আগের চেয়ে শিক্ষিত, ভদ্র ও রাজনীতি সচেতন হয়েছে। তাদের যা খুশি বুঝাবেন তা তারা মেনে নিবে না। আমার মতে হ্যা-না ভোট হলে বিরোধী শক্তি হালে পানি পাবে না। জনমত এখনও বলে যদি বিরোধী দল নির্বাচনে আসতো তা হলে তারা হয়তো জয়ী হতেও পারতো। বিরোধী শক্তির নির্বাচন বিষয়ে এক কথায় না বলে দেয়াটা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়নি। দেশের সংবিধানে যা থাকবে তাই আইন আর তা মেনেই নির্বাচন হতে হবে। এটাই ভদ্র শিক্ষিত সমাজের চাওয়া। এটা কোন দলিয় মতের চাওয়া নয় বলেই আমি মনে করি। স্বাধীন ও দল নিরপেক্ষ নাগরিক সকলের এটা চাওয়া হওয়াটাই যুক্তি যুক্ত। উপরোক্ত আমার এই বক্তব্য কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে গেলে তা নিতান্তই কাকতালীয় আর সরকার বিরোধী দলের সিদ্ধান্ত গুলোর সাথে আমি একমত হতে পারি নি যেটা আমার সুচিন্তিত নিরপেক্ষ মতামত। 

এই মতামত একটি সোশাল মিডিয়াতে প্রকাশ করার সাথে সাথে প্রতিবাদ আসলো এটা নাকি নিরপেক্ষ মতামত হয় নি। আমি প্রশ্ন করলাম কি বললে নিরপেক্ষ হতো? যারা সঠিক কাজ করছে আর যারা বেঠিক কাজ করছে বলে আমার মনে হয়েছে তার প্রেক্ষিতে আমার উপরোক্ত বক্তব্য প্রকাশ করেছি, এটাকে পক্ষপাত দুষ্ট বলা যায় তখনি যখন তা অযৌক্তিক হবে কিন্তু আমার বক্তব্যের পক্ষে আমি আমার যুক্তি গুলোও তো লিখে দিয়েছি। যারা বেঠিক কাজ করেছে তারা কি করলে ঠিক হতো তার ইঙ্গিতও আমি প্রদান করেছি আমার লেখাতে। তা হলে তাকে পক্ষপাত মূলক কেন বলা হচ্ছে। যারা পক্ষপাত দুষ্ট মানুষিকতা পোষণ করে তাদের কাছে তা মনে হতেই পারে। আমাদের কালচারটাই এমন হয়ে গেছে যে, হয় তুমি আমার পক্ষে না হয় বিপক্ষে, মধ্যবর্তী কোন স্থান যেন রাখা হয়নি। এই মানুষিকতাটাই রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপে প্রকাশ পায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ১৯৭১ এ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর এ পর্যন্ত ৫২ বছরে আমাদের সংবিধান ২১ বার সংশোধিত হয়েছে আর সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনটি নিয়ে ১২ টি সংসদ গঠিত হয়েছে । বিষয়টা সবারই জানা কিন্তু স্পষ্ট করে সত্য বার বার বলা যায় তাতে করো বিরক্তির কিছু নাই বলে আমি মনে করি। 

১৩ই জানুয়ারি, ২০২৪ এর জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে বলা হয়েছে “এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের যে বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে, তা হলো কম ভোটার উপস্থিতি। আগের যেকোনো সময়ের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে এবার সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে। বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের বর্জনের মুখে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ যে ‘একতরফা’ নির্বাচন করেছিল, নির্বাচন কমিশনের হিসাবে সেই নির্বাচনেও ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ২০১৪ সালের তুলনায় এবার কিছুটা বেশি ভোট পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, এবার ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটের এই হিসাব ধরা হলেও প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ ভোট দেননি। এর মানে বেশির ভাগ জনগোষ্ঠী ভোটে আগ্রহ দেখায়নি।” https://www.prothomalo.com/politics/n88s11u6ww জনপ্রিয় পত্রিকাতে প্রকাশিত এই তথ্য থেকে সত্যটা পাওয়া গেলেও এর পিছনের কারটার কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায় না। আমরা যারা অনেকের কথা শুনি ও বুঝি তারা প্রকৃত সত্যটা ধরতে পরি মনে হয়। নির্বাচনের আগ দিয়ে বেশির ভাগ লোকের মুখে ছিল, নির্বাচন তো হয়েই গেছে। বিএনপি একটা বড় দল তারা যখন নির্বাচনে আসেনি তখন মাঠ ফাঁকা পেয়ে আওয়ামেলিগকে পিছনে ফেলতে পারে এমন শক্তি আর মাঠে রইলো কই? সবাই ধরে নিয়েছিল ক্ষমতাসীন দলই নির্বাচনে জিতে যাবে আর তা হয়েছেও তাই। বিএনপি নির্বাচনে না এসে মাঠ কেন ছেড়ে দিল? তাদের যুক্তি এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা নিরপেক্ষ হবে না। তারা গণ অভ্যুত্থানের আশা করেছিল কিন্তু জনগণ সাড়া দেয় নি তা স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে। প্রচার পত্র বিলি করে জনমত গঠন করেও কোন লাভ হয়নি। বরং তৃণমূল বিএনপি নামে নতুন আরেকটি দল বিএনপি থেকে বের হয়ে এসেছে। জনগণের মধ্যে ভোটের প্রতি অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে যখন মাঠে কেবল একটাই দল আছে আর তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম দলটি নির্বাচন বর্জন করেছে। নির্বাচন বর্জন করে যদি বিএনপি দেখাতে পারতো যে যারা নির্বাচন করেছে তারা ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারছে না বা দেশের লোকজন তাদের বিরোধিতা করে রাস্তায় নেমে এসেছে তা হলেও কথা ছিল কিন্তু তা তো বাস্তবে দেখা গেল না। এতকিছুর পরও বিএনপির নেতারা বলছে ডামি নির্বাচন হয়েছে, ডামি সংসদ বসেছে, ডামি সরকার গঠন করেছে। কই তাদের কথায় তো জনগণ সাড়া দিচ্ছে না। বিএনপি’র এতগুলো নেতা কারাবন্দী তাদের মুক্তি দাবিতেতো কোন আন্দোলনও তারা করে দেখাতে পারছে না। দলটির নেতৃত্ব স্থানীয়রা যে সকল কথা মিডিয়াতে বলছে তা এখন হাস্যকর শোনাচ্ছে। ঢাল নাই, তলোয়ার নাই নিধিরাম সরদার এর মত অবস্থা তাদের। গলাবাজি করা ছাড়া তারা আর কিছুই করতে পারছে বলে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না। কোন একটি বড় দল নির্বাচনে না আসলেই যে সেটা নিরপেক্ষ হবে না এমন কথা কিন্তু আমাদের সংবিধানে নেই। কত পারসেন্ট জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করলে সেই ভোট গ্রহণযোগ্য হবে আর তার নিচে হলে পুন নির্বাচন দিতে হবে এরকম কথা নিশ্চয়ই সংবিধানে থাকার কথা। যদি তাই থেকে থাকে তবে ৪০.৮% ভোটার ভোট দিলে যদি তা গ্রহণযোগ্য হয় তবে কারো কিছু বলার থাকে না। এর বিরোধিতা করলে তো সে সংবিধানের আইনের বিপক্ষে চলে গিয়ে দেশদ্রোহী হয়ে যাবে।

যদি বিএনপি মত পরিবর্তন করে ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনে আসতো তা হলে হতে পারতো যে তারা দুই তৃতীয়াংশ ভোট না পেলেও আওয়ামীলীগকে সংখ্যা গরিষ্ঠ হতে নাও দিতে পারতো। সেক্ষেত্রে স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টির সাথে কোয়ালিশনে এসে সরকার গঠন করতে পারতো। বিএনপি বলে জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামীলীগ একটা সমঝোতায় এসেছে এই ভাবে যে, কিছু কিছু সিটের নির্বাচনী এলাকায় তারা তাদের প্রার্থী সরায়ে নিয়েছে জাতীয় পার্টিকে জিতিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে। এক্ষেত্রে বিএনপিও কৌশল অবলম্বন করে ভিন্ন কোন পদ্ধতির আশ্রয় নিতে পারতো। পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো হয়নি বলে পরীক্ষাই দিব না এই মনোভঙ্গিটা আমার পছন্দ হয়নি। তারা রাজপথে আছে তা হলে মাঠে কেন খেলবে না। মাঠে খেলতে তাদের ভয় কিসের? তাদের এক দাবি ক্ষমতাসীনকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে, কিন্তু তা তো সংবিধান পরিপন্থী হয়ে যায়। এই অবস্থায় তো সংবিধানে সংশোধনীয় আনা যাবেনা। বিপক্ষকে মাঠ ছেড়ে দিলে তো তারা জিতবেই, আর সেটাই তো স্বাভাবিক। এখন তারা না পারছে সইতে না পারছে পরিস্থিতি সামাল দিতে। পরাজয় আগেই মেনে নিয়ে দলটি আজ অস্তিত্বর সংকটে পড়ে গেছে। রাজনীতিতে মার্সি বলে কিছু নাই। বিজিত দল পরাজিত দলকে চরম আঘাতে ঘায়েল করতে চাইবেই, এটাই রাজনীতি বা রাজার নিতি কিংবা নিতির রাজা যাই বলেন না কেন। একটা আদর্শ অন্য আদর্শকে প্রভাব বিস্তার করতে দিবে কেন?

কেউ কি এই নির্বাচনকে অস্বীকার করতে পারবে? এই নির্বাচন কি ঐতিহাসিক একটি ঘটনা হয়ে যায়নি? কেউ এটাকে ডামি নির্বাচন বলছে, তার মানে তারা কিন্তু মেনে নিয়েছে নির্বাচনটি হয়েছে যদিওবা তাদের দৃষ্টিতে এটা একটি পাতানো খেলা বৈ আর কিছু নয় কিন্তু নির্বাচন যে হয়েছে তা তারা অস্বীকার করতে পারে নাই।  আমার এই বক্তব্য কোন বিএনপি সমর্থক পড়লে বলবে নিশ্চয়ই এই লোক আওয়ামে লিগ সমর্থক তা না হলে কেন কেবল আওয়ামে লিগের পক্ষে কথা বলছে। তাকে আমার বলার আছে এই যে, আমি এমন কার চাকুরী করি না যাতে কোন দলকে তেল দেওয়ার বা তোয়াজ করার প্রয়োজন হয়।  আমি কোন রাজনৈতিক দলের কোন সাংগঠনিক কিংবা সমর্থক গোষ্ঠীর কোন সদস্যও নই এমনকি তাদের কারো সাথে জড়িতও নই। আমি যা দেখছি ও বুঝছি তার ভিত্তিতে আমার যা মনে হয়েছে তাই লিখছি। আমার মন্তব্যগুলো পক্ষপাত দুষ্ট হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি বরং বিএনপিকে রাজনৈতিক ভাবে আরো কৌশলী ও পারদর্শী দেখলে খুশি হতাম কিন্তু তাদের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তগুলো দেখে আমি হতাশ হয়েছি। বিএনপিতে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব আমাকে কষ্ট দিয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এর প্রতিষ্ঠিত একটি দলের এরকম রাজনৈতিক দৈউলিয়াত্ব দেখে আমি যার পর নাই নিরাশ হয়েছি। যারা নিজের ঘামে গন্ধ পায় না বা নিজের ভুল গুলো সনাক্ত করে তা শুধরাতে পারে না তারা উন্নত হবে কি করে। বোকার মত একই ভুলের চক্রে পাক খেতে থাকে। আমার মতে বিএনপির জনপ্রিয়তা হ্রাসের প্রধান কারণ তাদের তরুণ নেতৃত্বের পূর্বের অপকর্মগুলো। যে নেতা দেশকে ও দেশের জনগণকে ভালোবাসে ও তাদের উন্নতি দেখতে চায় সে বিদেশে বসে দেশিয় রাজনীতি পরিচালনা করছে আর ভাবছে দেশে তার জনপ্রিয়তা টিকে আছে তবে বলতে হবে তার চিন্তা ভাবনায় মারাত্মক ত্রুটি আছে। নেলসন মেন্ডেলা বহু বছর জেল খেটে তবে তার মত প্রতিষ্ঠা করেছে তার দেশে। কোন আদর্শ ছাড়া কোন রাজনৈতিক দল টিকে থাকতে পারে না। ”একটি রাজনৈতিক দলের চারটি জিনিস প্রয়োজন, ১) নেতৃত্ব ২) মেনিফেস্ট বা আদর্শ ৩) নিঃস্বার্থ কর্মী ৪) সংগঠন“ এই বক্তব্যটি ২১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে দৈনিক বাংলা মোড়ের কর্মসংস্থান ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের প্রবেশ পথের ডিজিটাল মারকিউ বা চলমান লেখা থেকে সংগৃহীত। আলোচ্য বিরোধীদলটির জনগণকে এ্যাডরেস করার ইস্যুটি ঠিক নাই। তারা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ে ইস্যু বানাতে পারতো, কিংবা তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে গন হারে মামলা নিয়ে ইস্যু বানাতে পারতো। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়াকে ইস্যু বানাতে পারতো। তা না করে ক্ষমতাসীন দল যে ভাবে তাদের নাচাচ্ছে তারা তাদের উঠানে সেইভাবে নাচছে বলে আমার মনে হয়েছে। এটাকে আমি রাজনৈতিক পরাজয় বলবো। দলটি জনগণের সামনে কোন স্বপ্নও দ্বার করাতে পারছে না। আওয়ামীলীগ দেশের জনগণকে ৪২ সালের মধ্যে স্মার্ট দেশ বানানোর স্বপ্ন দেখিয়েছে, বিপরীত পক্ষে বিএনপি কি কোন স্বপ্নর কথা বলেছে? নেতা সেই হতে পারে যে স্বপ্নও দেখাবে ও সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে দেখাবে। যা আওয়ামীলীগ সরকার করেছে ইতোমধ্যেই। পদ্মা ব্রিজের স্বপ্ন দেখিয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে। মেট্রো রেলের স্বপ্ন দেখিয়েছে আর জনগণ তার সুবিধা পাচ্ছে। এরকম আরো আছে যা ক্ষমতাসীন দলের বিগত সময়কালের অর্জন। আমি বুঝি না এত গুলো প্রকল্পর সফল বাস্তবায়ন করা স্বত্বেও কেন জনগণ তাকে সমর্থন দিবে না বলে অনেকে মনে করে। বহু লোক আছে যারা এত কিছু বাস্তবে দেখেও এই দলটাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। খুঁজে খুঁজে এর দোষত্রুটি বের করে বিতর্ক করে। এরা আমার দৃষ্টিতে নিরপেক্ষ নয়। দলের মার্কা দেখে ও কোন দলের সাথে ইমোশনালি যুক্ত হয়ে অন্ধভাবে তার সমর্থন দেয় কিংবা তাদের স্বার্থ জড়িত বলে সমর্থন দেয়। আমরা যেমন যারা ভালো করবে তাদের ভালো আর যারা খারাপ করবে তাদের খারাপ বলবো এরা তেমন নয়। এরা ভালো হোক মন্দ হোক কোন একটা দলের পক্ষ নিয়ে কথা বলবে। এই সব লোকেরাই মূলত দেশের জন্য ক্ষতিকারক। আমি এই মানুষিকতার ঘোর বিরোধী আর এদের আমি খানিকক্ষণ কথা বললেই ধরতে পারি। আমাদের দেশে খুব কম লোক আছে বলে আমার মনে হয় যারা নিরপেক্ষ বিচার করার সামর্থ্য রাখে। বেশির ভাগ লোকজনই হুজুগে মাতে, যার আরেক মানে ইমোশনালি জাজমেন্ট করে। রেশনাল নিরপেক্ষ বিচার বোধ সম্পন্ন মানুষরা তাই সংখ্যা লঘিষ্ঠ হওয়ায় চুপ করে থাকে, কাউকে কিছু বলে না, তারা ভোটও দিতে চায় না। আমার মতে এই ১২ তম সংসদ নির্বাচনের ব্যালটে একটা ঘর ফাঁকা রাখা উচিত ছিল যাতে কোন মার্কা নাই। ওটাতে নামের জায়গায় লেখা থাকতো আমি যারা দাঁড়িয়েছে তাদের কাউকেই ভোট দিতে চাই না। এই ঘরটা থাকলে কত পারসেন্ট এই নির্বাচনকে বর্জন করেছে তা জানা যেত। আসলে দেশের জনগণের মধ্যে নতুন কোন কিছু চিন্তা করার অভ্যাস নাই, তারা গতানুগতিক চিন্তা ভাবনাতেই নিমজ্জিত থাকতে চায়। বিএনপিও এই প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারতো নির্বাচন কমিশনকে।

বিএনপি’র রাজনৈতিক প্রজ্ঞার দৈউলিয়াত্ব প্রমাণ করে তারা আর শক্তিশালী বিরোধী শক্তি নেই। জন বিচ্ছিন্ন তো হয়েছেই তার উপর তারা কোন জনগুরত্বপূর্ণ ইস্যুই দার করাতে পারেনি। জনগণকে কোন স্বপ্নও দেখাতে পারেনি । তাদের নেতাদের এখনকার বক্তব্যগুলো হাস্যকর। অপরপক্ষে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা গ্রহণ করে সরকার হিসেবে আগামী ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে রাষ্ট্রদূতরাও তাদের শুভেচ্ছা পাঠাচ্ছে। বিএনপির এই শোচনীয় পরাজয় যাতে জনগণ বা তাদের সমর্থকরা বুঝতে না পারে তাই একের পর এক ফাঁকা বুলি বলে যাচ্ছে তাদের নেতারা বিভিন্ন জনসভার আয়োজন করে। আমেরিকা যখন ইরাকে তার সেনা বহর ঢুকিয়ে দিচ্ছে তখন সংবাদ মাধ্যমে ইরাকী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নানা রকম বক্তব্য দিচ্ছিল, বলছিল ওরা সাপের মত ঢুকে গেছে, এবার ওদের মাথাটা কেটে দিব, এই সব। তার পর যখন মার্কিন সামরিক বাহিনী বাগদাদ দখল করে সাদ্দামের মূর্তি ভেঙ্গে দিল তখন সেই পররাষ্ট্র মন্ত্রীর আর হদিস পাওয়া গেল না। বুঝা গেল সে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। সাদ্দামকে মাটির নিচের এক গর্ত থেকে তুলে এনে ফাঁসি দিল আমেরিকা। আমেরিকার ইরাক দখলের যুদ্ধটা আমি সংবাদ মাধ্যমে মুভি দেখার মত করে দেখেছি। প্রসঙ্গটা এই কারণে আনলাম যে, আগেও আমি প্রভাবশালী শক্তির পরাজয় দেখেছি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তির হাতে। আমার জীবনে নিজের দেশের একটা শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের এতটা অধঃপতন দেখতে হবে কখনও ভাবি নাই। নতুন অভিজ্ঞতা হলো, চেয়ে চেয়ে দেখলাম তুমি চলে গেলে, আমার বলার কিছু ছিল না, গনটা দিয়ে তাই শেষ করতে হচ্ছে।

সম্পাদনা ও উন্নয়ন ইতিহাসঃ ১২জানুয়ারী২০২৪> ১৫জানুয়ারী২০২৪> ২৩জনুয়ারী২০২৪> ২৫জনুয়ারী২০২৪>


আমার কাছে অনেকের প্রশ্ন
আপনি এত সময় কই পান? এত বড় বড় লেখা কখন লিখেন?

উত্তরঃ আমি একটা লেখা শুরু করার পর বিভিন্ন সময় তাতে আমার চিন্তা গুলো যোগ করে যখন দেখি তা অন্যর সাথে শেয়ার করার উপযুক্ত হয়েছে তখন তা ব্লগে প্রকাশ করে মতামত আশা করি। আমার লেখার উদ্দেশ্য মূলত অন্যর সাথে আমার চিন্তা ভাবনা গুলো শেয়ার করা। অনেকের প্রশ্ন লেখার জন্য এত সময় আমি পাই কই। একটু একটু করে লিখি অনেক দিন ধরে, কোন কোন লেখা বছর গড়ায়ে যায়। তাই আমার প্রতিটি লেখার নিচে কবে কবে লিখেছি তার একটা উন্নয়ন ও সম্পাদনা ইতিহাস যোগ করা থাকে। আমার এক বন্ধুর জানার আগ্রহে বলেছিলাম, কেউ আছে যারা দুইটা বল নিয়ে জাগল করতে পারে না আবার কেউ কেউ আছে যারা ৪, ৫ টা বল নিয়ে দুই হাতে জাগল করতে পারে। এটা তার বা যার যার দক্ষতার বিষয়। তাছাড়া বিন্দু বিন্দু করেই তো সিন্ধু হয়। অল্প অল্প করে লিখি একসময় তা অনেক হয়ে যায়, তখন সম্পাদনা করে কাট ছাট করে দরকারি কথা গুলো রেখে বাকি গুলো বাদ দিয়ে দেই। আজকের জমানায় এত এত সফটওয়ার আর অনলাইন টুল চলে আসছে যে আমরা অল্প সময়ে অনেক কাজ ও অনেকের সাথে যোগাযোগ করতে পারি তবে সেটা তখনই পারি যখন আমরা এই উন্নত টুলস গুলো সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে শিখি। সিস্টেমেটিক ভাবে কাজ করলে প্রচুর কাজ ও জটিল কাজ গুলো সহজে করা যায়। তাই যারা যত বেশি টুল ব্যবহার করতে শিখেছে তারা তত বেশি অন্যর চেয়ে বেশি কাজ করতে পারছে। আমি টুলস গুলো ব্যবহার করে অনেক কাজ দ্রুত করে ফেলতে শিখেছি তাই অন্য কারো কাছে মনে হতে পারে আমি হাইপার একটিভিটি শো করছি, প্রকৃত পক্ষে তা নয়, বরং ডিসিপ্লিন ও মেথড ব্যবহার করে আমি প্রচুর কাজ করছি স্বচ্ছন্দে ও সাবলীল ভাবেই। অন্যরা পারছে কি না সেটা আমার ধর্তব্যের বিষয় না।

আমি আমার লেখায় কম্পিউটার ব্যবহার করি আর আমার চিন্তাভাবনা গুলো লিখে রাখি বিভিন্ন সময়। আমার টাইপ স্পিড বাংলায় মিনিটে ৫০ শব্দ আর ইংরেজিতে ৫৫ শব্দ হওয়ায় প্রচুর কথা লিখতে পারি। টাইপ স্পিড বৃদ্ধির জন্য আমি মেভিস বেকন টিচার্স টাইপিং ভার্শন ফোর এর কাছে আমি ঋণী। বানান ভুল সংশোধনের জন্য আমি অভ্রর স্পেল চেকারের কাছে ঋণী। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর ট্রেক চেঞ্জ ফাংশন আমাকে আমার লেখা সম্পাদনা করতে যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্য করে। একটা হাইলি কাস্টমাইজড কম্পিউটার ফাইল আমার লেখাগুলো সংরক্ষণ করে যেটাতে আমি ন্যাভিগেশন টুল ব্যবহার করে যখন যে লেখাটাতে আমার কথা সংযুক্ত করতে চাই তা করতে পারি। এ সব গুলো টুল ব্যবহার করে আমার মনের কথা আপনার কাছে পৌঁছে দেই এই প্রত্যাশায় যে আপনি তা পড়ে আপনার মূল্যবান মতামত দিয়ে আমাকে সমৃদ্ধ করবেন। কিন্তু মানুষ পড়ে (কতগুলো হিট হলো তা আমি দেখতে পাই ব্লগের কন্ট্রোল প্যানেলে) কিন্তু কোন মন্তব্য করে না দেখে প্রায়শই হতাশ হই। বেশির ভাগ পাঠকই হয়তো এত বড় লেখা দেখে সুইপ ডাউন করে চোখ বুলায়ে যায়। পড়লে তো সে মন্তব্য করতো কিন্তু বাঙ্গালীদের মধ্যে ভারচুয়াল রিয়ালিটির কনসেপ্টটা এখনও পুরোপুরি বোধগম্য হয়নি কিংবা তারা সহজে মন্তব্য করতে চায় না, যা আমার বিশ্বের অন্যান্য অংশে দেখি না। ওখানে প্রায়শই তাদের পোস্টে মিলিয়ন মিলিয়ন রিএকশন আসতে দেখা যায়।

আপনি রাজনৈতিক ভাবে কোন মতাদর্শের অনুসারী?

উত্তরঃ আমাদের সংবিধানের মূল নীতি মতে সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। ধর্মীয় গোঁড়ামির মধ্যে আমি নাই। এই কিছুদিন আগেও ছিলাম কিন্তু এখন এর চরম বিরোধিতা করি। প্রতিটি ধর্মের ছাতার  নিচেই অন্ধকার আর ঝর বৃষ্টির ভয়ে অনেকেই সেই ছাতা মাথায় দিয়ে আছে, আমি মনে করি ছাতা সরালেই তারা আলোকিত আকাশটা দেখতে পাবে। আমি ছাত্রাবস্থায় কিংবা চাকুরী জীবনে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না তবে ২০০২ থেকে ২০১০ পর্যন্ত মুসলিম প্রফেশনালস ফোরাম এর সাথে যুক্ত ছিলাম। ওই সময় ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাই। ২০১৬ তে মায়ের মৃত্যুর পর ধর্মের উপর সকল আস্থা হারায়ে ধর্মনিরপেক্ষ ও পরবর্তীতে প্রথা বিরুদ্ধ মানুষিকতায় চলে আসি। দেশের কোন রাজনৈতিক দলের সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই, কখন ছিলও না। যারা ভালো কাজ করে ও সঠিক পথে চলে আমি তাদের সমর্থন করি আমার লেখার মাধ্যমে তা প্রকাশও করি।

No comments:

Post a Comment