Friday, December 29, 2023

প্লাস্টিক আর কনক্রিটের মানুষ আর তাহাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রসঙ্গে

 

আমার শৈশবে ঘাসের গন্ধ সহ বৈকালিক মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু আমার সন্তানদিগের মাঝে তার অবকাশ আর দেখিতে পাইলাম না। বাধ্য হইয়া তাহাদের মাকে বলিলাম ঘটা করিয়া বাচ্চাদিগকে রমনা পার্কে নিয়া তাহাদের খালি পায়ে খেলাধুলার আয়োজন করিতে। তাহারা তা করিল বটে কিন্তু মাঠে কাদা থাকায় বেশিক্ষণ খেলিতে পারিল না। কাদা মাখামাখি করিয়া গ্রামে ফুটবল খেলার দৃশ্য দেখিলে তাহারা পেটের খাদ্য বমি করিয়া দিতে পারে এইরূপ অবস্থা। উহাদের দোষ দিয়া কি লাভ। আমরা বড়রা অফিস থেকে বাসায় আসি জুতা পরিয়া তার পর মুজা খুলিয়া স্যান্ডেল পরি যাতে কনক্রিটের ফ্লোরের স্পর্শও না লাগে আমাদের পায়ে। এই প্রজন্মর তাই মটিতে পা পড়ে না। আগে বলা হইত অহংকারে তাহার মাটিতে পা পড়ে না। এখন কবে যে খালি মাটিতে পা ফেলিয়া হাঁটিয়াছি তাহাই ভুলিয়া গেছি। মাটির সাথে সংযোগ না থাকিলে কি মাটির মানুষ হওয়া যায়? এই কারণেই এখনকার মানুষগুলোকে কনক্রিটের মানুষ বলাই শ্রেয়। আর প্লাস্টিকের মানুষ তাহারাই যাহাদের জীবন মান সকলই যান্ত্রিক হইয়া গেছে। আমার চাচাতো ভাই কার্ডিওলজিস্ট, আমার এক কি দুই বছরের ছোট হইবে। তাহার আহার নিদ্রারও সময় আছে বলিয়া মনে হয় না। ফোন করিলেই বলে রুগী দেখিতেছি। একবার দুপুরের খাবারের আয়োজনে আমরা কয় চাচাত ভাই একসাথে হইয়াছিলাম। তো তাহাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম জীবনকে এতটা ব্যস্ত করার কি খুবই প্রয়োজন আছে?। উত্তরে সে বলিয়াছিল এই ব্যস্ততা টাকার জন্য নহে বরং চিকিৎসকের মহান দায়িত্ববোধ হতেই সে এরূপ ব্যস্ত জীবন বাছিয়া লইয়াছে। আমার কথা হইলো, এই দায়িত্ববোধে আসক্ত হইয়া সে তাহার পরিবার ও আমাদিগকে সময় দিতে অবহেলা করিতেছে তাহার তা খেয়াল হইতেছে না। ইহা আমার যুক্তিতে মোটেও সঠিক সিদ্ধান্ত বলিয়া মনে হয় নাই। আমি আমার দাদার বৃহত্তর পরিবারকে একত্রিত করার প্রয়াস নিয়াছি কিন্তু আমার কারডিওলজিস্ট এই চাচাতো ভাই এর সময়ের অভাবের কারণে তা দুরূহ কাজ বলিয়া মনে হইতেছে। রাত ৯টা কি ১০ টার সময়ও সে রুগী দেখিয়া থাকে। দৈনিক ১৮ ঘণ্টা রুগী দেখিলে তাহার অভ্যাসে পরিণত হইয়াছে কেবল মীমাংসা দেয়া। আমি আমাদের পরিবারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি নিয়া আলাপ করার প্রয়াসে সে একের পর এক প্রতিবাদের ঝর তুলিল ও তাহার সিদ্ধান্ত দিতে লাগিল। আমি বুঝিলাম ১৮ ঘণ্টা রুগীদের অবস্থা বুঝিয়া সিদ্ধান্ত দিতে দিতে সে সকলকে কেবল তাহার রুগী মনে করিয়া সিদ্ধান্ত দিতে থাকে। ইহা যেন তাহার অভ্যাসে পরিণত হইয়া গেছে। এইরূপ মানুষেরা কনক্রিটের তো বটেই তাহার উপর ইহারা প্লাস্টিকের মন লইয়া চলাফেরা করে।  

প্লাস্টিকের মন তাহাদের যাহারা সূর্যোদয়ের সুন্দর সকাল অনুভব করিতে পারেন না, যাহারা কোন কিছু মন দ্বারা অনুভব করার বদলে বুদ্ধি দিয়া বিচার করিয়াই সিদ্ধান্ত নিয়া নেন। জীবনের গতি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে মানুষের চিন্তা করিবার গতিও বৃদ্ধি পাইয়াছে তাই অনুভব করার জন্য যে ধীর চিন্তার প্রয়োজন তা তাহারা ভুলিয়া গেছেন বা সেই ক্ষমতা হারাইয়া বসিয়া আছেন। আমার এক প্রিয় সহকর্মী বড় বোন ধীরে চিন্তা করেন বলিয়া আমার মনে হইত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলেন যাহার কারণে তাহার দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা পাঠ্য ছিল। তিনি ধীরে চিন্তা করিলেও তাহার বিচার বোধ অত্যন্ত স্বচ্ছ ও জীবন্ত আর তাহার কাছ হইতে আমি বহু পুস্তকের নাম ও লেখকদিগের আদ্যপান্ত জানিয়াছি। আমি ভাবিতাম কলা বিভাগের ছাত্রী বলিয়াই বুঝি তিনি ধীরে সুস্থে চিন্তা করিতে পারেন কিন্তু পরে বুঝিতে পারিলাম আমি দ্রুত চিন্তা করায় আমার মনে অনুভবের ক্ষমতা হারাইয়া গেছে কিন্তু সহকর্মী সেই বড় বোনটির কিন্তু মন এখনো সতেজ আছে তিনি প্রকৃতিকে অনুভব করতে পারেন যাহা আমি পারি না। দিনকে দিন আমরা এতটাই যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত হইয়া যাইতেছি যে আমাদের মন অনুভবের ক্ষমতা হারাইয়া প্লাস্টিকের মনে পরিণত হইয়া যাইতেছে।


মানুষের সাথে মাটির সংযোগে তাহার আর্থিং হয়, যাহাতে তাহার দেহের ইলেক্ট্রো কেমিক্যাল একটা নিউট্রালাইজেশনও হইয়া থাকে। বিভিন্ন ভাইরাল মিডিয়াতে যাহা ভিডিও ক্লিপ আকারেও দেখান হইয়াছে। আমরা কেন পৃথিবীতে বসবাস করিয়াও পৃথিবীর মাটিকে অবজ্ঞা করিতেছি? কোন কারণে আমরা মাটিকে ময়লা জ্ঞান করিতেছি? মাটি বলিতে তো কেবল সিলিকা, আয়রন, ফসফরাসের ও অন্যান্য যৌগ ও মৌলের সংমিশ্রণ বুঝায় না। মাটির একটি বিশেষ রং রয়েছে এবং একে আলাদা ভাবে নামকরণও করা হইয়াছে। শরীরে মটি লাগিলে আমরা কেন তাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে কিংবা ময়লার দৃষ্টিতে দেখি। হ্যাঁ সাগরে গোছল করিয়া আসিয়া আমরা শাওয়ার ছাড়িয়া গোছল করিয়া নেই যাতে নোনা ভাবটা দুর হইয়া যায় তেমনি মাটি গায়ে লাগিলেও আমারা গোছল করিয়া নিতে পারি কিন্তু মাটি হইতে নিজের শরির বাচাইয়া আমরা আসলে কি পাইতে চাহিতেছি তা বুঝা মুশকিল। ছোট বেলায় বিকাল বেলা দূর্বা ঘাস পরিব্যাপ্ত মাটে ফুটবল খেলিতে গেলে ঘাসের যে গন্ধ পাইতাম তা আমার সন্তানেরা জানলই না। একবার আহসান মঞ্জিলে ওদের নিয়া গিয়াছিলাম, আমার ছেলে পা উঁচু করিয়া ফড়িং এর মত করিয়া ঘাসের মধ্যে হাঁটিয়া ছিল। তাহারা অহরহ ঘাস বেষ্টিত মাঠ তো দেখা নাই, কেবলই কনক্রিটের ফ্লোরে হাটা চলা করিয়াছে আর বাহিরে গেলে গাড়িতে চরিয়া গেছে। কোন পার্কে নিয়া গেলে সেখানকার পাথর নির্মিত রাস্তা দিয়া হাঁটিয়াছে। তাহাদের কাছে যেন ঘর হইতে আঙ্গিনা বিদেশ। তাহাদের মাটির গন্ধ, ঘাসের গন্ধ কোথা হইতে আনিয়া দিব। তাহারা তাই কনক্রিটের মানুষেই পরিণত হইতেছে।

আমাদের ঢাকাকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগ করিয়া দুটি সিটি কর্পোরেশন করা হইলো কিন্তু ঢাকা শহর এতই অনিয়ন্ত্রিত ভাবে গড়িয়া উঠিয়াছে যে, প্রতি লোকালয়ে বাচ্চাদের জন্য একটি ছোট খাট খেলার মাঠ স্থাপনের জায়গাও আর অবশিষ্ট নাই। বড় বড় এপার্টমেন্টের ছাদে গাছ লাগাইয়া একটু ঘুরা ঘুরির ব্যবস্থা করিলেও সেখানে দূর্বা ঘাসের মাঠের প্রতিরূপ করা অসম্ভব। আর সেই সব ছাদে যুবক যুবতীদের গোপন আলাপের স্থানে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনায় সেই সুযোগও অনেক অট্টালিকা মালিক সমিতি বন্ধ করিয়া দিয়াছেন। আমি যে এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে বসবাস করি তাহার নিচের ফ্লোরে গাড়ির গ্যারেজের পাশে উন্মুক্ত জায়গা আছে হাটা চলার জন্য। ওখান সন্ধ্যাবেলা ছেলে মেয়েরা খেলা ধুলা করিত, ওদের দুষ্টামি এতটাই বাড়িয়া গেল যে, তাহারা নানা প্রকার দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকাতে অযথা হানা দিতে লাগিল। কেউ কেউ গ্যারেজের গাড়িগুলোতে অযথা দাগ দেওয়ারও চেষ্টা করিল। তাহা দেখিয়া কর্তৃপক্ষ তাহাদের সকল প্রকার ফুটবল, ক্রিকেট খেলা বন্ধ করিয়া দিল ও মাগরিবের আজানের পর কার নিচে থাকাও নিষেধ করিয়া দিল।

আমি সন্ধ্যা বেলা অফিস হতে ফিরিয়া দেখি আমার বাসার সবাই নিঝুম পল্লির মত ঘুমাইয়া রহিয়াছে। সন্ধ্যা বেলা হলো গোধূলি বেলা, এই বেলায় বাচ্চারা ঘুমাইয়া থাকিবে কেন? তাহাদিগের মাকে বকা ঝকা করিলেও কাজ হয় না। বাচ্চাদের মানুষিকতাই হয়ে গেছে আরাম প্রিয়। তাহারাও বিকাল বেলা বাহিরে যাইতে চায় না। মাঝে মাঝে বকা ঝকা দিয়া খেলিতে পাঠাইতে হয়ে তাও সেই কনক্রিটের বেসমেন্ট প্লেগ্রাউন্ডে দূর্বাঘাস পরিবেষ্টিত মাঠে নয়। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের এহেন দুর্ভাগ্যের জন্য কাহাকে দায়ী করিব? কাহাকে বলিব আমাদের ছেলে মেয়েদের দূর্বাঘাসের মাঠ আনিয়া দাও। ওদের মাটিতে পা এর সংস্পর্শ হউক। ওরা মাটির মানুষ হউক। কোন কর্তৃপক্ষের কাছে আর্তি জানাবো জানি না। এই দুর্ভাগ্য তো মানিয়া লওয়া যায় না। আমার অবাক লাগে ইহা ভাবিয়া যে, এই শহরের অনেকেই আফসোস করে আহা আগে কত মাঠ ছিল আজ সব অট্টালিকায় ভরিয়া গেছে। তাহারা আক্ষেপ করেন কিন্তু প্রতিকার করেন না, এমনকি প্রতিবাদ করার উপায় নিয়েও চিন্তা করেন না। তাহাদের কাছে এ যেন ভবিতব্য যাহাকে মানিয়া লওয়া ছাড়া গত্যন্তর নাই। এহেন মানুষেরা সমাজের উন্নয়নে কোন পরিবর্তন কখনই আনিতে পারিবেন না। ঢাকা শহরের দুই দুই জন নগর পিতা বা মেয়র আছে, কেন তাহারা তাদের কাছে আর্জি পেশ করেন না এই অধঃপতিত পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য? তাহাদের কি এই সৎ সাহসটুকুও নাই? 
 


দিনকে দিন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আমাদের জীবন যাত্রাকে যান্ত্রিক করিয়া তুলিতেছে। যত প্রকারের আরাম আয়েশ আছে তার সুব্যবস্থা করিয়া দিতেছে। জীবন মান উন্নত হইতেছে বলিয়া মনে হইতেছে কিন্তু মানুষ পক্ষান্তরে অলস হইয়া যাইতেছে। ঘরে বসিয়া ফুড পাণ্ডাকে অর্ডার করিলেই ঘরে খাবার হাজির হইয়া যায়। গিজার অন করিয়া ৫ মিনিট অপেক্ষা করিলেই শাওয়ারে গরম পানি মিশ্রিত পানি দিয়া গোছল করার সুব্যবস্থা। মাটি হইতে ৯০ ফিট উচ্চতায় বসবাস যাহাতে চিকা, ইঁদুর ও শব্দ দূষণের আর ধুলা বালির আক্রমণ হতে বাঁচিয়া চলা যায়। টাকা দিনকে দিন ইলেকট্রনিক হইয়া অদৃশ্য মুদ্রায় পরিণত হইতেছে। গভীর রাতেও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা যাইতেছে। ফান্ড ট্র্যান্সফারে কোন ঝামেলা ছাড়াই কয়েকটি বোতাম স্পর্শ করিয়া টাকার স্থানান্তর করা যাইতেছে। পরীক্ষার খাতাও অপটিকাল মার্ক রিডার বা ওএমআর এর মাধ্যমে যাচাই বাছাই করা যাইতেছে। এহেন আধুনিক যুগে মনুষ্য প্রজাতি অহংকারী হইয়া তাহাদের মাটিতে আর পা পড়ে না। মাটিকে অস্বীকার করিলে কি চলিবে? মাটির উপরই তো সকল সভ্যতা দাঁড়াইয়া আছে। প্রযুক্তি যতেই উন্নত হইতেছে মানুষের জীবন যাত্রাকে তাহা প্রভাবিত করিতেছে কিন্তু মানুষের আদি কাঠামো কি পরিবর্তন করিতে পারিতেছে। বলা হইতেছে অদূর ভবিষ্যতে মানুষ নানা বিধ যন্ত্রাংশ শরীরে স্থাপন করিয়া আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করিয়া তাহাদের ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করিতে সক্ষম হইবে। তখন তাহাদিগকে সাইবার্গ নামে অভিহিত করা হইবে। কোন কোন বিদ্বান পণ্ডিত বলিতেছেন মানুষ একসময় অজর, অমর অক্ষয় হইয়া যাইবে যখন দুর্ঘটনা ছাড়া মৃত্যুবরণ করিবে না কিংবা বার্ধক্য জনিত রোগকে দমিত করিয়া দীর্ঘ জীবন লাভ করিবেন। কিন্তু তখনও মানুষ তো রক্ত মাংসের মানুষই রহিয়া যাইবে। আমার এক কারডিও সার্জেন বন্ধুবর বলিয়াছিল ল্যাবরেটরিতে যেইদিন রক্ত উৎপাদন হইবে সেইদিন সে এই সব বিষয়ে আস্থা রাখিবার কথা চিন্তা করিবে। আমি বলিয়াছিলাম তাহার জন্য হয়তো তাহাকে আরো কয়েক শত বছর বাঁচিয়া থাকিতে হইবে যাহা সম্ভবপর নয়। কিন্তু প্রযুক্তি উন্নয়নের গতি হিসাব করিলে ইহা যে বাস্তব হওয়ার সম্ভাবনা অনেক তাহা সহজেই বুঝিতে পারা যায়।

প্রযুক্তি যতই উন্নত হউক আর যতই আমাদের জীবন যাত্রাকে বদলে দিক আমরা রক্ত মাংসের মাটির মানুষই থাকিয়া যাইবো। এই পৃথিবীতে জন্মিয়াছি আর এই খানেই মরিব। এই পৃথিবীটা দুষিত হয়ে মানুষের বসবাসের অযোগ্য হইতে কয়েক লক্ষ কোটি বছর লাগিবে বা লাগিতে পারে বলিয়া বিজ্ঞানী মহল মত প্রকাশ করেন। ততদিন এই পৃথিবীই আমাদিগের আবাসভূমি। মানব সমাজ তার মেধা দিয়া আজ উড়তে শিখিয়াছে, তাহার চিন্তা সংরক্ষণের যন্ত্র আবিষ্কার করিয়াছে। গবেষণার জন্য উন্নত থেকে উন্নততর যন্ত্র আবিষ্কার করিয়া চলিয়াছে। ধর্মান্ধদের পথরোধ সত্যেও প্রগতিশীল মানুষদের অগ্রযাত্রা দুর্বার গতিতে আগাইয়া যাইতেছে। তাহার পরও আমরা মানুষ, আমাদের সাথে মাটির সংযোগ থাকতেই হইবে। এতদ্ প্রসঙ্গে হলিউডের ওয়ালি মুভিটার উদাহারণ উল্লেখ যোগ্য। ইভা একটা গাছের সন্ধান পাওয়ার সাথে সাথেই স্পেস স্টেশনের নাদুস নুদুস মানুষের প্রজন্ম পৃথিবীতে ফেরত চলিয়া আসে। হাজার কোটি বছর পরও এই সবুজ পৃথিবীর আবহাওয়া আর মাটির গন্ধ মানুষের প্রাণ প্রিয়ই থাকিয়াই যাইবে। উন্নত বিশ্ব বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন আছে বলিয়াই মনে হয়, আমার খালা ও শাশুড়ি কিছু দিন পূর্বে কানাডায় তাঁহার ছোট মেয়ের সংসার দেখিতে গিয়াছিলেন। তিনি ফিরিয়া আসিয়া আমাকে বলিয়াছিলেন ওই খানে খালি মাটি তিনি দেখেন নাই, বাড়ির সামনের জায়গার লনে ঘন সবুজ ঘাস। যেখানেই বাড়ি তার সামনে ও পিছনে সবুজ ঘাসে ভরা। পরিষ্কার আর পরিচ্ছন্নতায় তারা আমাদের থেকে অনেক আগিয়ে কিন্তু তাহারা ঘাসের মর্যাদা ঠিকই বুঝিয়াছেন। এই বাংলায় আমারা ১৬ কোটি মানুষ যেটুকু মাটি পাইয়াছি তাহা ময়লা আবর্জনা দিয়া ভরিয়া ফেলিয়াছি আর শহরগুলোতে কনক্রিটের দালান উঠাইয়া এক বিশাল নোংরা বস্তির সৃষ্টি করিয়াছি। ভদ্র লোকেরা ভদ্র এলাকায় সরিয়া গেছেন বটে কিন্তু তাহারাও গাদা গাদি করিয়া সেই কনক্রিটের জঙ্গলই বানাইয়াছেন। বাচ্চাদিগের ঘাসের মাঠের যে প্রয়োজন তাহা যেন তাহারা ভুলিয়াই গেছেন। এমনকি বাচ্চাদের স্কুল কলেজগুলোতেও মাঠের অভাব পরিলক্ষিত হইয়া থাকে। 

মানুষে মানুষে মত পার্থক্য থাকিবেই কারণ প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন তবে মতামতগুলো যতটা সম্ভব কাছাকাছি নিয়ে আসাই আলোচনার উদ্দেশ্য। আমি যে লিখি তা মূলত মানুষের মধ্যে চিন্তার সূত্রপাত করানোর জন্য। যাহাতে করিয়া তাহার মতামতগুলো আমি পাই ও তাহার সাথে আমার চিন্তা ভাবনা গুলো যাচাই বাছাই করিয়া দেখিয়া লইতে পারি। এই যাচাই বাছাই যদি উভয়েই জানিতে পারে তবে উভয়েরই উপকার হইবে। তাই আমার লেখা পড়িয়া মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো পাঠকগনের কাছে।

সম্পাদনা ও উন্নয়কালঃ ১৮নভেম্বর২০২৩> ১৫ নভেম্বর ২০২৩> ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩> ২৫এপ্রিল২০২৪>৭জুন২০২৫>

 


আমার কাছে অনেকের প্রশ্ন
আপনি এত সময় কই পান? এত বড় বড় লেখা কখন লিখেন?

উত্তরঃ আমি একটা লেখা শুরু করার পর বিভিন্ন সময় তাতে আমার চিন্তা গুলো যোগ করে যখন দেখি তা অন্যর সাথে শেয়ার করার উপযুক্ত হয়েছে তখন তা ব্লগে প্রকাশ করে মতামত আশা করি। আমার লেখার উদ্দেশ্য মূলত অন্যর সাথে আমার চিন্তা ভাবনা গুলো শেয়ার করা। অনেকের প্রশ্ন লেখার জন্য এত সময় আমি পাই কই। একটু একটু করে লিখি অনেক দিন ধরে, কোন কোন লেখা বছর গড়ায়ে যায়। তাই আমার প্রতিটি লেখার নিচে কবে কবে লিখেছি তার একটা উন্নয়ন ও সম্পাদনা ইতিহাস যোগ করা থাকে। আমার এক বন্ধুর জানার আগ্রহে বলেছিলাম, কেউ আছে যারা দুইটা বল নিয়ে জাগল করতে পারে না আবার কেউ কেউ আছে যারা ৪, ৫ টা বল নিয়ে দুই হাতে জাগল করতে পারে। এটা তার বা যার যার দক্ষতার বিষয়। তাছাড়া বিন্দু বিন্দু করেই তো সিন্ধু হয়। অল্প অল্প করে লিখি একসময় তা অনেক হয়ে যায়, তখন সম্পাদনা করে কাট ছাট করে দরকারি কথা গুলো রেখে বাকি গুলো বাদ দিয়ে দেই। আজকের জমানায় এত এত সফটওয়ার আর অনলাইন টুল চলে আসছে যে আমরা অল্প সময়ে অনেক কাজ ও অনেকের সাথে যোগাযোগ করতে পারি তবে সেটা তখনই পারি যখন আমরা এই উন্নত টুলস গুলো সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে শিখি। সিস্টেমেটিক ভাবে কাজ করলে প্রচুর কাজ ও জটিল কাজ গুলো সহজে করা যায়। তাই যারা যত বেশি টুল ব্যবহার করতে শিখেছে তারা তত বেশি অন্যর চেয়ে বেশি কাজ করতে পারছে। আমি টুলস গুলো ব্যবহার করে অনেক কাজ দ্রুত করে ফেলতে শিখেছি তাই অন্য কারো কাছে মনে হতে পারে আমি হাইপার একটিভিটি শো করছি, প্রকৃত পক্ষে তা নয়, বরং ডিসিপ্লিন ও মেথড ব্যবহার করে আমি প্রচুর কাজ করছি স্বচ্ছন্দে ও সাবলীল ভাবেই। অন্যরা পারছে কি না সেটা আমার ধর্তব্যের বিষয় না।

আমি আমার লেখায় কম্পিউটার ব্যবহার করি আর আমার চিন্তাভাবনা গুলো লিখে রাখি বিভিন্ন সময়। আমার টাইপ স্পিড বাংলায় মিনিটে ৫০ শব্দ আর ইংরেজিতে ৫৫ শব্দ হওয়ায় প্রচুর কথা লিখতে পারি। টাইপ স্পিড বৃদ্ধির জন্য আমি মেভিস বেকন টিচার্স টাইপিং ভার্শন ফোর এর কাছে আমি ঋণী। বানান ভুল সংশোধনের জন্য আমি অভ্রর স্পেল চেকারের কাছে ঋণী। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর ট্রেক চেঞ্জ ফাংশন আমাকে আমার লেখা সম্পাদনা করতে যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্য করে। একটা হাইলি কাস্টমাইজড কম্পিউটার ফাইল আমার লেখাগুলো সংরক্ষণ করে যেটাতে আমি ন্যাভিগেশন টুল ব্যবহার করে যখন যে লেখাটাতে আমার কথা সংযুক্ত করতে চাই তা করতে পারি। এ সব গুলো টুল ব্যবহার করে আমার মনের কথা আপনার কাছে পৌঁছে দেই এই প্রত্যাশায় যে আপনি তা পড়ে আপনার মূল্যবান মতামত দিয়ে আমাকে সমৃদ্ধ করবেন। কিন্তু মানুষ পড়ে (কতগুলো হিট হলো তা আমি দেখতে পাই ব্লগের কন্ট্রোল প্যানেলে) কিন্তু কোন মন্তব্য করে না দেখে প্রায়শই হতাশ হই। বেশির ভাগ পাঠকই হয়তো এত বড় লেখা দেখে সুইপ ডাউন করে চোখ বুলায়ে যায়। পড়লে তো সে মন্তব্য করতো কিন্তু বাঙ্গালীদের মধ্যে ভারচুয়াল রিয়ালিটির কনসেপ্টটা এখনও পুরোপুরি বোধগম্য হয়নি কিংবা তারা সহজে মন্তব্য করতে চায় না, যা আমার বিশ্বের অন্যান্য অংশে দেখি না। ওখানে প্রায়শই তাদের পোস্টে মিলিয়ন মিলিয়ন রিএকশন আসতে দেখা যায়।  হলিউড তারকা মরগান ফ্রিম্যান এর কাজ ও কথা আমাকে মারাত্মক প্রভাবিত করেছে তাছাড়া বারট্রান্ড রাসেল ও এলডাস হাক্সলির লেখাও আমার অত্যন্ত প্রিয়।

আপনি রাজনৈতিক ভাবে কোন মতাদর্শের অনুসারী?

উত্তরঃ আমাদের সংবিধানের মূল নীতি মতে সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। ধর্মীয় গোঁড়ামির মধ্যে আমি নাই। এই কিছুদিন আগেও ছিলাম কিন্তু এখন এর চরম বিরোধিতা করি। প্রতিটি ধর্মের ছাতার  নিচেই অন্ধকার আর ঝর বৃষ্টির ভয়ে অনেকেই সেই ছাতা মাথায় দিয়ে আছে, আমি মনে করি ছাতা সরালেই তারা আলোকিত আকাশটা দেখতে পাবে। আমি ছাত্রাবস্থায় কিংবা চাকুরী জীবনে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না তবে ২০০২ থেকে ২০১০ পর্যন্ত মুসলিম প্রফেশনালস ফোরাম এর সাথে যুক্ত ছিলাম। ওই সময় ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাই। ২০১৬ তে মায়ের মৃত্যুর পর ধর্মের উপর সকল আস্থা হারায়ে ধর্মনিরপেক্ষ ও পরবর্তীতে প্রথা বিরুদ্ধ মানুষিকতায় চলে আসি। দেশের কোন রাজনৈতিক দলের সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই, কখন ছিলও না। যারা ভালো কাজ করে ও সঠিক পথে চলে আমি তাদের সমর্থন করি আমার লেখার মাধ্যমে তা প্রকাশও করি।




No comments:

Post a Comment