কবি মোফাজ্জল শাম্স একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সমাজসেবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। মূল নাম মোঃ মোফাজ্জল হোসেন। জন্ম ২৫ মার্চ ১৯৫৭, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার সিংহদী গ্রামে। পিতা মরহুম সামসুদ্দিন ভূঁইয়া, মাতা বেগম সৎ মেহের। স্ত্রী অধ্যাপক যোবাইদা খাতুন, দুই পুত্র গালির মুহম্মদ আফজাল জুনাইদ (রাফাত) ও ইয়াসির মুহম্মদ ফয়সাল জুবায়ের (সিফাত) কে নিয়ে কবির সংসার। কবির লেখালেখির সূচনা স্কুল জীবন থেকে। প্রথম লেখা দৈনিক সংবাদে ও খেলাঘর পাতায় প্রকাশিত হয়। তারপর থেকে নিয়মিত বিভিন্ন পত্রিকায় ছাড়, কবিতা, গল্প, ফিচার, রম্য, প্রবন্ধসহ নানাবিধ বিষয় নিয়ে লিখছেন। সাহিত্য ও সমাজসেবায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি অর্জন করেছেন- শতকন্ঠ সাহিত্য পুরস্কার-১৯৭২, মৃত্তিকা পদক-২০০৯, এন্টি ড্রাগস সোসাইটি সম্মাননা-২০০৭, ভাষা শহীদ বরকত স্মৃতি সম্মাননা -২০০৭, ভাষা শহীদ বরকত স্মৃতি সম্মাননা-২০০৮ সহ বিভিন্ন পুরস্কার। তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য ও বাংলা একাডেমীর সদস্য এবং লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকা সোনালীর ভাইস প্রেসিডেন্টসহ বহু সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। আড়াই হাজার সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর আজীবন রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট। তিনি সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর জেনারেল ম্যানেজার পদ হতে অবসর গ্রহণ করেন। ‘তুমি এসেছিলে অচেনা বসন্তে’কবির প্রথম কাব্যগন্থ। দেশপ্রেম, বিরহ, মিলন, বিদ্রোহ, সামাজিক নানা অসংগতি তার কবিতায় নানাভাবে ফুটে উঠেছে। ২০০৪ হতে ২০১০ স্যারের সাথে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। সোনালী ব্যাংকে যোগদানের সময় থেকে ভিজিল্যান্স এন্ড কন্ট্রোল ডিভিশনের এমডি’স স্কোয়াডে কর্ম কালীন সময়। আমি কবির ”বীরাঙ্গনা তোমাকেই চাই” কাব্যগ্রন্থটি হতে তিনটি কবিতা উনার অনুমতিক্রমে আমার ব্লগে সংরক্ষণ করলাম।
একরাশ বেদনা
পাবনার হেমায়েতপুরের দেয়ালঘেরা হাসপাতালে
বন্ধু মোশাররফের চেনা এক চিকিৎসকের কক্ষে,
ধূমায়িত চা, নোনতা বিস্কুট হাতে চেয়ে দেখি
চিকিৎসক বিরবির করে কি যেন বলে যাচ্ছে অবিরত,
আপন মনে। পাগলের মতোই চেয়ারে বসে
হাত নেড়ে যাচ্ছে, পাগলের মতই। তার সাথে গেলাম কটি
ওয়ার্ডে। সুরের লহরী ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ডে।
ওয়ার্ডের গেটের কাছে যেতেই সমস্বরে সালামের আওয়াজ,
স্যার , আমি পাগল নই, আমাকে ছেড়ে দেন।
সৎ মায়ের ষড়যন্ত্রে সবাই এখানে রেখে গেছে।
হঠাৎ সে যুবক ছেলেটাই লাফ দিয়ে ঘাড়ে উঠলো।
লোহার গারদের ভেতর দাঁড়ানো.. আরেক জনের
বেশ ক’টি ওয়ার্ড ঘুরে শুনলাম অনেক না জানা কথা
ব্যথা বেদনায় ঝংকার উঠলো হৃদয় বীণার তারে।
মহিলা ওয়ার্ডের বারান্দায় হেঁটে যাবার সময়
হঠাৎ শুনি নারীর চিৎকার ‘আমাকে
ভালবাস সুমন, আমি নিজকে সঁপে দেব-
এক প্রেম প্রত্যাখ্যাত নারীর করুন আর্তনাদ
বেদনায় নীল হয়ে উঠলো মনটা।
স্যার, আমাকে দেখলে কি পাগল মনে হয়?
... আরেক নারীর করুন আকুতি।
বাবা তুমি কেমন আছো
২০০৫ এর আটাশে জানুয়ারির বাদ জুম্মায়
তুমি চলে গেলে না ফেরার দেশে
বাবা তুমি কেমন আছো?
কেমন আছে তোমার শেষ প্রহরের দিনগুলো?
বাবা আমি তোমায় অনেক ভালবাসি
ভালবাসি তোমার কথা, উপদেশ
ছায়ার মতো আড়ালে রাখতে শত দুঃখ কষ্টেও।
তোমার চলে যাওয়া আমাকে দিশেহারা করে
মাটির প্রতি তোমার অন্তরের টান
অভাব অনটনে তোমার ঠোঁটের সিগ্ধ হাসি
দেখিনা অনেক দিন। এখনো মনে হয় তুমি
আছো আমাদের চারপাশে ছায়ার মতো।
তোমাকে খুঁজি আমি সকল কাজের ধারাপাতে।
তুমি কি আমাকে দেখতে পাও?
এখনো আমি তোমার তপস্যায়
প্রতিটি কাজের মূল্যায়ন ব্যস্ত থাকি।
ব্যস্ত থাকি তোমার ফেলে যাওয়া অসমাপ্ত
কর্মযজ্ঞকে বাস্তবের নিরিখে রুপায়নের।
আমি গর্বিত তোমার অনুপ্রেরণায়।
মুক্তিযুদ্ধের সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে
তোমার ছেলে দেশমাতৃকাকে মুক্ত করতে
যুদ্ধে গিয়ে ছিল, ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা,
সত্যিই তুমি গর্বিত পিতা
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম অংশীদার;
আলোর মাতলামি ঝলসানো রূপের।
জীবন যুদ্ধ গল্প
জীবন যুদ্ধ গল্প কবিতায়
আমি মা, দেশ, সোদালো মাটির গন্ধ পাই।
গন্ধ পাই ধান কাউনের ।
যুদ্ধের হাতছানিতে আমাকে নিয়ে যায়,
মরু প্রান্তরের সেই
নবীজির জন্ম ঠিকানা পবিত্র
মক্কা, মদিনায়।
বদর, উহুদ খন্দকের যুদ্ধের মত আমিও
যুদ্ধ চাই, এ মাতৃভূমির জন্য।
যে যুদ্ধে দূর হবে যত অনাচার,
খতম হবে ধর্ষণকারী, যত অনিয়ম।
দু’হাত তুলে আমিও প্রার্থনা করি
প্রভু ক্ষমা করো আমায়।
ক্ষমা করো আমার মা, মাটি, দেশকে।
কখনো কখনো চোখের পানিতে
ভিজে যায় আমার আঁখি
ধারণ করে রক্তিম বর্ণ।
আমি খুঁজি তাহাজ্জুদকে, ফজরকে
জোহর, আসর মাগরিবে খুঁজে পাই
না ফেরার দেশের ঠিকানা, মৃত কথা
সাদা কাফন পড়িয়ে দাফনের লক্ষ্যে
আমাকে নিয়ে যাচ্ছে-
চারপাশে আগরবাতির ধোঁয়া
আতর, সুরমা দিয়ে সাজিয়ে,
নিয়ে যাবে আপন ঠিকানায়।
শুধু পড়ে রবে আমার সকল স্মৃতি, কবিতা।
আমি চিৎকার করে বলবো-
মুনকার নকিরকে, সেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে
আমি জীবন, যুদ্ধ , গল্পের বহর সাজাতে চাই
আমার মা, মাটি, মাতৃভূমির।
No comments:
Post a Comment