Saturday, January 2, 2021

তিঁনি কেবল পাশাই খেলেন না, পাশার ঘুঁটিগুলোও হারায়ে ফেলেন!

এই তিঁনাকে নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা হয়ে গেছে বিগত আনুমানিক দশ হাজার (১০,০০০) বছরের বিবর্তিত মানব সভ্যতার লিখিত ইতিহাসে। আর বানর থেকে মানব সদৃশ প্রাণীতে উত্তরণে, অর্থাৎ যে সকল উন্নত লেজবিহীন বানর দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি ধারণ করতে পারে ও ধারণকৃত স্মৃতির ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের বিষয়ে চিন্তা বিশ্লেষণ করে কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে সক্ষম, সেরূপ উন্নত বানরে তথা মানবে উত্তরণে সময় লেগেছিল তিন শত কোটি (৩০০,০০,০০,০০০) বছর । এই দীর্ঘ সময়কালে সে তার সাধের লেজটা হারিয়েছে বটে কিন্তু লেজের হাড্ডিটা আজও রয়ে গেছে।  ২০০৫ কি ২০০৬ হবে, বাচ্চাদের একটা ছবির এনসাইক্লোপিডিয়া বই সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের লাইব্রেরী থেকে নিয়েছিলাম বাসায় আমার ছেলে মেয়েদের জন্য, যাতে সুন্দর ছবি সহ অনেক কিছু আছে, পাতা উল্টাতেই প্রথমেই পেলাম মানব উৎপত্তি সম্পর্কে ডারউনের মতবাদ। আমি তখন সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিভিন্ন জনের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছাতাম ইসলামের ধারণা-গুল মানুষের কাছে নিয়ে যেয়ে এর স্বপক্ষে বিতর্ক করতামবাইটা খুলার পর প্রথমেই মনটা খারাপ হয়ে গেল, ডারউইন যে কিনা নিজেই তার মতবাদ সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তার বইয়ের একটি অধ্যায়ে, সেই মতবাদকেই বদ্ধমূল ধারনা হিসেবে দৃঢ় ভাবে বাচ্চাদের মনে প্রথিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে বইটাতে। দামি মলাটের four color CMYK নয়, বরং আর উন্নত ছাপা ও মলাটের বিদেশী বই চকচকে কাগজ আর ঝকঝকে ছাপা, কম টাকা খরচ হয়নি বইটা প্রকাশ করতে। মহা বিজ্ঞ ডারউইন মহোদয়ের এই মতটি অতি জনপ্রিয় বটে, কিন্তু এই মতটিকে স্বতঃসিদ্ধ ধরে নেয়া হচ্ছে কেন? উত্তরটা হতে পারে স্বতঃসিদ্ধ মীমাংসায় পৌছতে পারা যায় নাই এই সহজ সত্যটা অকপটে স্বীকার করতে মানবের চিরাচরিত আত্ম সম্মান বোধে আঘাত লাগে বলে।

ব্ল্যাক হোল বইতে মহা বিজ্ঞানী হকিংস লিখেছেন কথাটা, “তিনি কেবল জুয়াই খেলেন না, ঘুঁটিগুলো হারায়ে ফেলেন”লেখাটা পরে হাসলাম কতক্ষণ, যারা হকিং এর লেখার ভক্ত তারা এই উক্তিটি পড়ে হেসেছেন কিনা জানি না তবে বিষয়টা মারাত্মক ভাবে হাস্য উদ্রেককর বটে। নিলস বোর (Niels bohr) আর  আলবার্ট আইনেস্টাইনের (Albert Einstein) সেই বিখ্যাত বিতর্ক সম্পর্কে মজার গল্পটা এখন সবাই জানেওই সময়ই আইনেষ্টাইন হুজুর মানতে পারেননি কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অনিশ্চয়তা সূত্র, বলেছিলেন স্রষ্টা পাশা খেলেন না। তাঁর এই মন্তব্য কোয়ান্টাম ম্যানিক্স এর অস্তিত্বর প্রশ্নে একটা তাৎক্ষনিক ধাক্কা ছিল। তার অনেকদিন পর এখানে হকিং সাহেব তাঁর বইয়ে (দশম অধ্যায়ে3) লিখেছেন তিনি কেবল পাশাই খেলেন না বরং ঘুঁটিগুলো মাঝে মধ্যে হারায়ে ফেলেন, তাঁর এই বক্তব্যে তাই এত হাসি আসে। 

চিত্র: Niels_Bohr_ এবং Albert_Einstein footnote-2  

স্রষ্টা পাশা খেলেন না, মানে হল স্রষ্টার মহাত্বকে স্বীকার করলে তার কোন ঘাটতি থাকতে পারে তা ভাবা যায় না। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অনিশ্চয়তা সূত্র মতে কণিকার ভরবেগ মাপা গেলে তার অবস্থান পাওয়া যায় না ঠিকেই তবে পরমৃহুর্তের সম্ভাব্য কয়েকটি অবস্থান পাওয়া যায়। কণিকার মোমেন্টাম বা ভরবেগ কিংবা অবস্থানের নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী করার সামর্থ্য কার্যক্ষেত্রে অর্ধেক হয়ে যায়। এই সম্ভবতা নিয়েই যত বিপত্তি, স্রষ্টা সম্ভাব্যতার উপর নির্ভর করে বিশ্ব পরিচালনা করেন এটা মানা যায় না। হকিংস সাহেব তাঁর ব্ল্যাক হোল বইয়ের দশম অধ্যায়ে3 লিখেছেন কৃষ্ণগহ্বরের ব্যাপারে পরিস্থিতি আরও খারাপ, কারণ এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকের জ্ঞান আরও সীমিত, তিনি নির্দিষ্ট ও নিশ্চিত ভাবে একটি কণিকার ভরবেগ কিংবা অবস্থান সম্পর্কে যুগপুতভাবে কোন মন্তব্য তো করতে পারেনেই না এমনকি এ দুটো রাশির সমন্বয়ে কোন সম্ভাব্য অবস্থানও বলতে পারেন না, পারেন শুধু বলতে কতগুল কণিকা নির্গত হবে তার একটি সম্ভাব্য সংখ্যা। তাই আইনেষ্টাইন যখন বলেছিলেন ‘সৃষ্টিকর্তা জুয়া খেলেন না’ তখন তাঁর ভুল হয়েছিল দ্বিগুণ। কৃষ্ণগহ্বর থেকে উৎসর্গিত কণিকা গুল বিশ্লেষণ করলে মনে হবে সৃষ্টি কর্তা শুধুমাত্র জুয়াই খেলেন না, অনেক সময় জুয়ার ঘুঁটি গুল এমন জায়গায় নিক্ষেপ করেন যে, সেগুলোকে খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই মতবাদ গুল (doctrine: Principle set of religious belief)4 নির্দিষ্ট নিয়তিবাদ (নির্ধারনীয়তাবাদ / determinism4) কে মারাত্মক ভাবে ধাক্কা দেয়। সবকিছুই আগে থেকে ঠিক করা আছে এই প্রতিপাদ্যে বিশ্বাস স্থাপনের আগে তাই বিস্তর চিন্তা ভাবনার অবকাশ আছে। নিয়তিবাদ কিংবা নির্ধারনীয়তাবাদ (determinism: doctrine that human actions, events, etc. are determined by causes external to their free will)5 এর সমস্যা গুল নিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ভালোচনা হয়ে আসছে6 কিন্তু কেউই আজও শেষ মীমাংসায় পৌছাতে পারেনি। নিয়তিবাদ আর মানব মনে স্রষ্টার ধারণা এই  বিষয় দুটি পরস্পর অত্যন্ত সম্পর্কযুক্ত, তাই এই লেখায় আমি চেষ্টা করব অন্তত একটা বিষয়ের মীমাংসায় পৌঁছানর। নির্দিষ্ট কিংবা অনির্দিষ্ট নিয়তিবাদ এর বিতর্ক সম্পর্কে হকিং মহোদয় তাঁর ব্ল্যাক হোল বইয়ের দশম অধ্যায়ে ”সব কিছুই কি আগে থেকে ঠিক করা আছে” শিরনামে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এ বিষয়ে তাঁর তিনটা প্রশ্ন এবং তার উত্তর প্রসঙ্গে। নিজে প্রশ্ন উত্তাপন করে নিজেই আলোচনা করেছেন প্রশ্নোত্তর গুল কি হতে পারে। খুব ভাল একটা আলোচনা নিঃসন্দেহে। ওই প্রসঙ্গটি এখানেই না টেনে পরে লিখব ঠিক করেছি, আগে স্রষ্টা ও ধর্ম সম্পর্কিত আমার ধারণা গুলর মধ্যে একটু বুঝা পড়া করে নেই।

প্রথম প্রথম আমিও বুঝতাম না তিঁনি ”স্রষ্টা পাশা খেলেন না” বলে কি বুঝাতে চেয়েছেন। সেই প্রশ্নটা মনে চলে আসত, স্রষ্টা কি এমন পাথর বানাতে পারে যা সে নিজেই উঠাতে পারে না? প্রশ্নটা স্ব-বিরোধী আর নাস্তিকতার পক্ষে অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্রষ্টার সংজ্ঞা তা ব্রহ্মা হোক বা ইলাহ হোক সব ধর্মর প্রজ্ঞাপনেই প্রায় কাছাকাছি বদ্ধমূল ধারনা বা বিশ্বাসভিন্ন ভিন্ন চিত্রায়ন হলেও কোন খানেই স্রষ্টার সামান্যতম অপারগতাকে স্বীকার করা হয় নাই। আমি যাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করে সর্বত ভাবে নির্ভর করি সেই যদি অসম্পূর্ণ হয় তবে তা আমার জন্যই ভীতি কারক হবে। স্রষ্টা প্রসঙ্গে অনুসন্ধান সহজাত, মানব প্রকৃতিই এমন যে সে প্রশ্ন করতে জানে। সে চিন্তা করে তার আশপাশের বাস্তবতার পিছনের কারণ গুল সম্পর্কে মানব চিন্তাশীল প্রাণী তাই তার এই চিন্তা করাটা স্বাভাবিক। মানব কুল আর বানর কুলের মধ্যে পার্থক্যটা এখানেই। মানব মনের অনুসন্ধিৎসা তাকে আজকে আর্টিফিশিয়াল ইনটালিজেন্সের মত বিস্ময়কর দিগন্তে পা বাড়াতে সাহস যুগিয়েছকণা পদার্থবিদ্যার অনিশ্চয়তা সূত্র যদিও তাকে ধাঁধাঁয় ফেলে দেয় তবু না দমে সে স্ট্রিং থিওরির বা মাল্টিভার্স কিংবা ব্লক ইউনিভার্স এর মত ধারণা উন্নয়নে প্রবৃত্ত হয়। ছোটবেলা থেকেই জীবন ও জগত সম্পর্কে গভীর চিন্তার প্রতি আগ্রহ ছিল আমার। কৈশোর থেকে জীবনের মৌলিক প্রশ্নগুলো নিয়ে নানা প্রশ্ন সমাধানের চেষ্টা শুরু হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনে শরিফ হারুনের “দাণ্ডিক বস্তুবাদ” বইটি পরে দার্শনিক ধারাগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট একটা ধারনা পাই। ১৯৯০ এ বাবার মৃত্যু ও ২০১৬ সালে মা’র মৃত্যু পরবর্তী মানুষিক আবস্থা গুলর কারণে ১৯৯৮, ২০০২ ও ২০১৬ সালে স্রষ্টা সম্পর্কে ধারনা আমার মধ্যে তিনবার পরিবর্তন হয়। ২০১৭ সাল হতে যা ধারাবাহিক পরিবর্তনের কিংবা বিবর্তনের (ঝড়, জাপটার) মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। পর্যায় গুল এভাবে ভাগ করা যায়, (১৯৯২১৯৯৮) বছর, (২০০২২০১০) বছর, (২০১৭ হতে আজ পর্যন্ত) বছর। ১৯৯২ হতে ১৯৯৮ সালে হারুন শরিফের দাণ্ডিক বস্তুবাদ বইটি পড়া হয় যা মানব সভ্যতার দার্শনিক পটভূমির উপর লেখা। তার লেখার ধরন ও সরলতার কারণে আমি দার্শনিক মূল ধারা গুল বুঝতে পারি ও মারাত্মক ভাবে ধার্মিক চিন্তা থেকে সরে যাই কিন্তু মন মানছিল না, নানা ভাই এর ধার্মিক আদর্শ আর লিবিয়ার তবরুক শহরে বাবার কলিগ পাকিস্তানের মাসুম আঙ্কেলের আমাকে আগ্রহ ভরে কোরআন, উর্দু লেখন ও ধর্ম শিক্ষা এত সহজে ভুল মনে করব এ রকম অর্বাচীন আমি না। তাই তখন (১৯৯৮) সেই তরুণ বয়সে ১০টি প্রশ্নের একটি সেট তৈরি করেছিলাম যা বিভিন্ন জনের সাথে আলোচনা করে যদি উত্তর পাই তবেই একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিব এই ভেবেপ্রশ্ন গুলর আনুমানিক উত্তর আমার জানা ছিল কেবল নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। আমার চাকুরী জীবনে প্রবেশ ১৯৯৮ সালে আ এই প্রশ্নগুলো ছিল ঠিক ঐ সময়কার। চার বছর খোঁজাখুজির পর উত্তর আমার অফিস টেবিলে একটা লিফলেটের মধ্যে লেখা হয়ে চলে আসে২০০২ সালে আমি তখন Canada based বাচ্চাদের আন্তর্জাতিক মানের কম্পিউটার শিক্ষাক্রমের প্রতিষ্ঠান টেকনোকিডস ধানমন্ডিতে চাকুরীরত। নতুন প্রতিষ্ঠান তাই কাজ কম, চা খেতে বাইরে গিয়েছিলাম, এসে দেখি একটা সাদা কাল লিফলেট আমার ডেস্কে যাতে লেখা “ব্লাইন্ড ফেইথ অর ইন্টেলেকচুয়াল বিলিফ?”। আমার মাথা পুরাই নষ্ট হয়ে গেল লিফলেট টা দেখে। এই দ্বন্দ্বই ত ওই ১০ টা প্রশ্নর মূল যা গত দুই বছর যাবত সমাধান করার চেষ্টা করছিযেতেই হবে এই কনফারেন্সে আর গেলামওদু জন ব্যক্তি বক্তব্য রেখেছিলেন সেদিন সেই পুরাতন কৃষিবিদ অডিটোরিয়ামে (আজ যা ফার্মগেটের কেআইবি)। সেই কনফারেন্সের প্রথম বক্তা জনাব শাহ নেওয়াজ ভাই এর বক্তব্য মনে নাই, একজন ফিজিক্স গ্রেজুয়েট পেশায় শিক্ষকতা করেন লন্ডনে আর দ্বিতীয় বক্তা জনাব ইমরান ভাই যিনি লন্ডনে ডাক্তারি পড়ছেন, ইন্টার্নশিপে ছিলেন তখন। শাহ্‌ নেওয়াজ ভাই এর চৌকস ভাবভঙ্গি আর স্পষ্ট বক্তব্য মাথা ঘুরায়ে দিয়েছিল, আরে আমরা যে সব মোল্লাদের কাছ থেকে ধর্ম সম্পর্কে শুনি তাদের চেয়ে এঁরা শত গুন শ্রেষ্ঠ আর দারুণ ব্যক্তিত্বের মানুষ। ডা. ইমরান ভাইয়ের বক্তব্যটা আমি যত দিন বেচে থাকি মনে থাকবে।  সেই অতি পরিচিত ১৬ বছর বয়সের ইমাম আবু হানিফা (রহিমাল্লা)র গল্প, যেখানে তিনি এক ঘন্টা দেরি করে এক বিতর্কে উপস্থিত হয়ে পুর বিতর্ক জিতে নেন। তার দেরির কারণ বলেছিলেন যে নদী পার হতে কোন নৌকা পাচ্ছিলেন না তাই কলাগাছ গুল নিজেরাই নিজেদের কেটে ছেঁটে বেধে ভেলা বানায়ে তাকে নদীটি পারাপারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে আর তাতেই তার আসতে এক ঘণ্টা সময় দেরি হয়েছে। উপস্থিত কেউ তার বলা কারণ বিশ্বাস করতে পরছিলেন না, তাদের কাছে তা সত্য বলে গ্রহণযোগ্য হচ্ছিল না। তখন তিনি প্রশ্ন রেখেছিলেন প্রকৃতি একা একাই সব সৃষ্টি করেছে (কার বা কোন বুদ্ধিমত্তার ইশারা ছাড়া) এই বিতর্কে আমাকে ডেকে এনেছ আর তেমরাই এখন বিশ্বাস করতে পারছ না সামান্য এই কলাগাছ গুল একা একা নিজেদের কেটে ছেঁটে ভেলা বানায়ে আমাকে পার করেছে !!? এই ছোট্ট স্মৃতি-গল্পটি মারাত্মক একটি সূত্র প্রদান করে। মানুষের পুর চিন্তার পটভূমিকে পাল্টে দেয়, যারা নাস্তিকতায় বদ্ধমূল তাদের জন্য এটা পুরা মাত্রার ভূমিকম্প বটে। তাদের গভীর মনের ভাবনা যে, বিশ্বচরাচর একা একাই সৃষ্টি হয়েছে ও চলমান আছে এই বদ্ধমূল ধারণায় ফাটল ধরায়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী বক্তব্য

স্রষ্টার ধারনার ধারাবাহিক ইতিহাসের উপর একটা বই কিনেছিলাম বিগত ২০১৯ সালের একুশে বই মেলায়, বইটা মনে হয় রিভাইজ না করেই পাবলিশ করেছে, প্রচুর বানান ভুল, প্রথম কয়েক অধ্যায়ে বাংলা আর ইংরেজির মহা মিশ্রণ তা সত্যেও যে ঐতিহাসিক তথ্য বইটাতে প্রকাশ করা হয়েছে তার সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন রাখা যায় অনেক, লেখকের বলা কথামালার মতই লেগেছে, যেন উনি বক্তব্য রাখছেন, বই লেখার মত করে লেখা নয় তবে ইতিহাসের ধারাবাহিকতাটা আছে খুব ভাল ভাবেই। শেষের কয়েক অধ্যায়ে বুঝা যায় লেখক মুসলিম তবে সিয়াদের একাধিক ধারার কোন একটা ধারার হবে হয়ত (উয়াইসী তরিকায় খেলাফত প্রাপ্ত ১৯৯৬)। উয়াইসী তরিকায় দাবি করা হয় আল্লাহকে দেখা যায় যদি সেই মাত্রার জ্ঞান থাকে কার। বইটির শেষ অধ্যায় গুলতে তা আলোচনা কর হয়েছ। প্রথম অধ্যায় গুলতে মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে স্রষ্টার ধারনার ধারাবাহিক ক্রমবিকাশ লেখক বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন যা নিয়েও বিপুল বাকবিতণ্ডা করার অবকাশ আছেবইটি ঐতিহাসিক ঘটনার গবেষণাপত্র ত নয়ই বরং উনার ব্যক্তিগত জ্ঞান ভাণ্ডারের প্রকাশ মাত্র। তার পরও বলতে চাই - উনি যে ভাবে বলছেন ঐতিহাসিক ঘটনা গুল যদি ঠিক ওভাবে না হয়ে থাকেও তার কাছাকাছি হয় তবে স্রষ্টার ভাবনা চিন্তাশীল মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তির মত মনে হয়েছে আমার কাছে। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক যে চিন্তাশীল মানুষের পক্ষেই এই প্রশ্নটা করা সংগত, অন্য কোন প্রাণীর এই প্রশ্ন করার ক্ষমতাই নাই। বইটার নাম বলেই দেই "ঈশ্বর GOD আল্লাহর ইতিহাস" - শাহ্‌ সৈয়দ নুরুল কবীর উয়াইসী। বইটির পৃষ্ঠা-৭৭ থেকে উল্লেখ করছি, "Gnostic Christianity এর পরে আরও এক ধরেনর নিগূঢ় তত্ত্ববিদরা আসলেন তারা বললেন : Abandon the search of God and the creation and other matters of a similar sort. Look for him by taking yourself as the starting point. Learn who it is within you makes everything his own and says, My God, my mind, my thought, my soul, my bodies. Learn the sources of sorrow, joy, love, hate. Learn how it happens that one watches without willing, loves without willing. If you can carefully investigate these matters, you will find him in yourself. পৃষ্ঠা-৭৪ এ আছে, Which is also called Grace and Silence. এই Grace and Silence এর উপর ব্র্যাড পিটট এর একটা ডায়ালগ বিহীন ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম কয়েক বছর আগে যাতে ওই sorrow, joy, love, hate এবং watches without willing, loves without willing বিষয় গুল অভিনয় ও গল্পকারে দেখান হয়েছে। তখন তা কিছুই বুঝি নাই, ৫ কি ৬ বছর পর এই বই এর পৃষ্ঠা-৭৭ আর ৭৪ পড়ার সময় ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। উল্লেখিত বইটাতে স্রষ্টার ধারণা ধারাবাহিক ইতিহাস বর্ণনায় বলা হয়েছে বহু স্রষ্টার ধারণা থেকে একক স্রষ্টার ধারনা (মনোথিজম) আনুমানিক এত সময়ে আদম নামে এক ব্যক্তি প্রচার শুরু করে যার ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে ইব্রাহীম (আঃ) আসেন সেই ধারণারই বাহক হিসেবে, তার একটি দারুণ সামাজিক সংস্কার ছিল এই যে, তৎকালীন সমাজে প্রথম সন্তান বলি দেয়ার প্রথা রদ করে তার বদলে পশু কোরবানির প্রচলন করা হয়। স্রষ্টার ধারণার প্রসঙ্গে ওয়ারম হোল উইথ মরগান ফ্রিমেন এর ডকুমেন্টারিতে বলা হয় আদম ও হাওয়ার স্বর্গবাস গল্পসমূহ টাইগ্রিস ও ইউফ্রিটিস নদীর অববাহিকা গাল্ফ এর অতীত অবস্থানে অনুমান করা যেতে পারে, বলা বাহুল্য ব্যাবিলন সভ্যতা ওই অবস্থানেই বিকাশ লাভ করেছিল। এই সব বক্তব্য গুল সাধারণ সজ্ঞান মুসলমানদের বদ্ধমূল ধারণা বা আকিদাকেও প্রচণ্ড নাড়া দেয়। অন্য দিকে থিওরেটিকাল পদার্থবিদদের বক্তব্যও চরম বিব্রতকর মনে হয়। যেমন ধরুন শিশু মহাবিশ্ব আর সমান্তরাল বহু বিশ্বর (Parallel Multiverse) ওয়ার্ম হোল খুঁজতে খুঁজতে এই অপদার্থ (ভাল অর্থে) বিজ্ঞানীরা যা শুরু করছে, পুরা রূপকথার গল্প মনে হয় মাঝে মধ্যে বিগ ব্যাং থিউরি প্রমাণ করার পর বলে কিনা এই কণিকা সমৃদ্ধ মহাবিশ্বর সবকিছু সুতা বান্ধা, এই মহাবিশ্বটা স্রষ্টার এক মহা সঙ্গীত মূর্ছনার মত যার নাম স্ট্রিং থিওরি, আর আমরা সেই সুর তরঙ্গে পাগলের মত নাচিতেছি খাঁটি গ্রাম্য বাংলায় তাই বলতে ইচ্ছা করে, “'রা পাইছেটা কি? যা কইব তাতেই আমরা সই“ কেউ হাল ছাড়ে না, না মোল্লারা, না বিজ্ঞানীরা, মাঝখানে মরে শুধু আমাগো মত হতচ্ছাড়ারা স্ট্রিং থিওরি এখনও হাইপোথিসিস, তাই বিজ্ঞান এর দেয়া বিশ্ব বীক্ষণের পুর ব্যাপারটা যেন দু দিক বন্ধ একুরিয়ামের মত। যত বাইরের দিকে যাওয়া যায় কিংবা যতই ভিতরে ঢুকা যাক না কেন, অবশেষে কিছুই পাওয়া যায় না সাধারণ বুদ্ধির মানুষের দম বন্ধ হয়েই তো মরে যাবার মত ব্যাপার তিন ডাইমেনশনেরই এই অবস্থা, আর স্ট্রিং থিওরি মতে আর বেশ কয়েকটা ডাইমেনশন আছে যা কোকরায়ে এতই ছোট হয়ে গেছে যে আমরা তা দেখতে পাচ্ছি না এত কিছু বুঝার চেয়ে উন্মাদ হয়ে যাওয়া অনেক আরামের ব্যাপার বলে মনে হতে পারে অনেকের কাছে। এত সমস্যার সমাধান করতে আর একটা নয়, এই মহাকালের স্রোতে আর কয়েকটা আইনেষ্টাইন এর জন্ম নেয়া লাগবে বলে মনে হয়। সময় স্থির, চলমান নয়, এটা আমারও মনে হয় কখন সখন। ব্লক ইউনিভার্স থিউরি মতে তা ফ্লিপ স্টোরি বুকের মত বিগ ব্যাং থেকে বিগ ক্রাঞ্চ একটা গল্প একই সময়ে অবস্থান করছে। প্রশ্ন হল হকিং মহাশয় বললেন বিগ ক্রাঞ্চ শুরু হলে এন্ট্রপি উল্টা পথে চলবে (যদিও তা আজি হতে শত সহস্র বছর পরে হলেও হতে পারে)। মানে হল টেবিল থেকে পড়ে যাওয়া কাপের ভাঙ্গা টুকরা গুল আবার যোরা লাগবে। সময় তখন উল্টো পথে হাঁটবে। সময় যদি চলমান না হয়ে বস্তুর চতুর্থ মাত্রা ও একই এই মহাবিশ্বে স্থির হয় (যা হওয়াটা ব্লক ইউনিভার্স থিউরি/তত্ত্ব মতে যথাযথ) তবে অতীত ও ভবিষ্যৎ সবই তাতে পাওয়া যাবে কিন্তু তা বদলান যাবে না তাই প্যারাডক্সও হবে না- বুঝলাম, কিন্তু সেই আদি প্রশ্নটা তাতে সমাধান হল কই?। সব এক জায়গাতেই ও একই সময়ে আছে বুঝলাম কিন্তু এই এক জায়গায় রাখলটা কে? আবার যদি স্ট্রিং থিওরি প্রমাণ হয়ে যায় তবে সব অনিশ্চয়তার অবসান ঘটায়ে সেই আদি অকৃত্রিম প্রশ্নটা আর জটিল হবে। সময় তখন আর চুতুর্থ মাত্রাই নয় বরং আর ৫/৬ টা নতুন মাত্রা পাওয়া যাবে যা নিয়ে বিস্তর জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে যাবে।

ধর্মের অপ ব্যাখ্যার মত মরাত্মক জাদুমন্ত্র মানব ইতিহাসে এক চমকপ্রদ আবিষ্কার বটে। এক দল লোক কে নিয়ন্ত্রণ করতে এর বিকল্প কোন রাজা কিংবা রাষ্ট্রনায়ক বের করতে পারেন নাই আজও। জনমতকে জীবন ও জগতের মৌলিক প্রশ্ন সমূহের ব্যাখ্যা দানকারী যে কোন একটি বিধানের অন্ধ বিশ্বাসে বদ্ধমূল করে ফেলেন তার পর যা বলবেন তা-ই কোন না কোন ভাবে সত্য ও রাজার নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হয়ে যাবে। তারা এক পাল ভেড়ার মত রাজার (বা রাষ্ট্রনায়ক/নেতা) কথা মত নেতৃত্ব মেনে চলবে। একটা বা কয়েকটা নতুন ধর্মগ্রন্থ রচনা করতে হতে পারে হয়ত কিংবা যে কয়টা আছে তাতেই দারুণ কাজ চলবেসত্য ধর্ম অবশ্য ধরন ধারণে একই ধারার মনে হলেও তার ভিতরকার অবকাঠামোটা ভিন্ন যা গভীর মননিবেশে ধরা পড়েআমি এই সব ভিন্ন ভিন্ন ধারার বিশ্বাসের মানুষের মধ্যে বিশৃঙ্খল ভাবে সব ধর্ম থেকে নিজের মন মত বেছে নিয়ে জীবনে প্রয়গ করার প্রবণতা লক্ষ্য করেছি। এটা অনেকটা ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র দেয়ার মত বিষয়। অসুখের সমাধানে যে ওষুধে কাজ হবে তাতেই চলবে, প্রস্ততকারক ভিন্ন হোক কিংবা ভিন্ন রেসিপিতে রান্না হোক, তাতে কি যায় আসে, কাজ তো হচ্ছে। সম্প্রতি হতচকিত হয়ে গেছি কত গুল বিষয় দেখে যা’র বর্ণনা করাও শক্ত। ইংগিতে বলি, জেনে শুনে ধর্মিও বিধি, বিধানের চরম অনিয়ম করতে থাকা অবস্থায় আচার গুল পালনের মাধ্যমে নিষ্ঠাবান সাজা কিংবা মনে মনে ঠিক আছি ভাবা, কিংবা আচার পালনে ও তার বিষয়ে সবই ঠিক ঠাক কিন্তু ধর্মর মূল ব্যবস্থাপত্র গুল সম্পর্কে সম্পূর্ণ রূপে অজ্ঞতামূলক আচরণ করাশুধু অজ্ঞ বললে ভুল বলা হবে, অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী প্রবাদকে সঠিক প্রমাণ করে অল্প জেনে তার ভুল প্রয়গ করতে দেখে আমি মানুষিক ভাবে যার পর নাই ধাক্কা খেয়েছি বেশ কয়েকবার। তার পর এসব আর দেখেও দেখি না। অনেক গুলর মধ্যে একটা মাত্র উদাহরণ দেই, মুজিব বর্ষ হওয়ায় ২০২০ শালের সোনালী ব্যাংকের ক্যালেন্ডারে প্রতি পাতায় জাতীর পিতা শেখ মুজিবের বিভিন্ন সময়ের ছবি দেয়ায় সবার এক কথা এই ক্যালেন্ডার দেয়ালে ঝুলালে নামাজ হবে না !!! আচ্ছা বলেন তো, সুদী ব্যাংকের যদি চাকরও হয় আর সে পশ্চিম দিকে দৈনিক শতবার মাথা ঠুকে নামাজ পড়ে, তার নামাজ কোন বিধানে যুক্তিযুক্ত হওয়া জায়েজ? হ্যাঁ, যদি আল্লাহ চাহে ত সবই সম্ভব, কিন্তু তাঁর দেয়া বিধান মতে কি সম্ভব? কোন মানুষিকতার ভিত্তিতে বা কোন যুক্তিতে সুদী ব্যবসার ধারক বাহকরা নিশ্চিন্তে ভাবে তাদের নামাজ কবুল যোগ্য অথচ দেয়ালে ছবি ঝুললে তা কবুল হবে না? এটা কি চিন্তা না অপ-চেতনা? এই সব যখন ইতিহাস হবে তখন নতুন কোন নাম ব্যবহার করতে হবে এই বিদঘুটে সম্প্রদায়কে উল্লেখ করার জন্য। যারা ধর্মের সব বিধানকে দুমড়ে মুচড়ে নিজেদের সুবিধা মত গুছায়ে নিয়েছে। এই নতুন সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটি বিকল্প মনোভঙ্গি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই বিশেষ মনভঙ্গিটি সেকুলার বা ধর্ম-নিরপেক্ষ মনোবৃত্তি যা গণতন্ত্রের চার মূল স্বাধীনতা স্তম্ভের উপর দাড়িয়ে থাকে। একটি মানুষ মনে বদ্ধমূল করে ধর্মকে আঁকড়ে ধরে থাকতে পারে, ধর্ম বিশ্বাস মানা না মানা যে কার পূর্ণ স্বাধীনতা যা সেকুলার মনোবৃত্তি, অথচ বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, একজন মৌল ধার্মিক তা মানে না, কারণ তার ধর্ম যদিও বলে সবার জন্য শান্তির কথা কিন্তু অন্য ধর্মের লোকদের কিংবা ভিন্ন মত হলেই সে আর সহ্য করতে পারে না তাদের নিধন করতে বলে, তা মানুষিক ভাবে না হলে নিধন কর যে ভাবে পার। সম্প্রতি মায়েনমার (পূর্বের বার্মা) এর রহিঙ্গা মুসলিমদের বৌদ্ধ সম্প্রদায় কর্তৃক নিধন যার চরম একটা উদাহরণ। চিন্তা করতে পারেন যে বৌদ্ধ ধর্মর মূল মন্ত্র অহিংসা পরম ধর্ম তারাই কি ভয়ংকর রকম সহিসংতা দেখাল। সেকুলার বা ধর্ম নিরপেক্ষরা মনে করে যার যা জীবন বিশ্বাস সেটা তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অধিকার অন্য কার থাকতে পারে নাগান্ধীজী তো আর এক ধাপ এগিয়ে বলে গেছেন শুধু স্বাধীনতাই নয়, সকলকে অপরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীলও হতে হবেমহাত্মা গান্ধীকে খাট কারার অধিকার এই উপমহাদেশে যদি কার থাকে তাকে আমি ভারত উপদ্বীপের সন্তান বলে আমি মনে করি না। তার পরও বলব অপরের ধর্মকে শ্রদ্ধা করা কোন প্রকৃত ধার্মিক ব্যক্তির পক্ষে সম্ভবই না, গোঢ়া ধার্মিক হলে তো কথাই নাইতেমনি, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, মালিকানার স্বাধীনতা আর মত প্রকাশের স্বাধীনতাকেও  সকল ধর্ম সীমাবদ্ধ করেছে যা সেকুলার মানুষিকতায় পূর্ণ স্বাধীনতা হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। মনে হতে পারে আমি সেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষতা বাদের প্রতি অনুরক্ত হয়ে এর পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছি, আদতে আমার ইদানীং মনে হয় মহাত্মা গান্ধী বহুবছর আগেই এই অবধারিত পরিণতি এই বাস্তবতায় প্রয়োগ করে গেছেন যা আমাদের বুঝতে এতটা সময় লাগল। ধর্ম রাষ্ট্রর দিন বহু আগেই শেষে হয়ে গেছে, তাই বলে তো আর অধর্ম রাষ্ট্র হতে পারে না বরং উত্তরণটা হয়েছে এই ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থায়, আর এই পরিণতিটা সময়ের সাপেক্ষে যথাযথ প্রমাণ হয়ে গেছে, তাও আমার জন্মেরও বহু বছর আগেই।

গেলালিও কিংবা জিওরদান ব্রুনর মত মহাব্যক্তিত্ব গণের সত্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে মরতে হয়েছে কিংবা গির্জার পাদ্রীদের (ক্লার্জী) রোষানলে পড়তে হয়েছে। সেই রকম ডারউইনকে কিংবা মেনডেলকে পড়তে হয়নি। কিন্তু ডারউইন তার প্রথম জাহাজ অভিযানে সংগ্রীহিত তথ্য সব হারায়ে ফেলে বা নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু হাল না ছেড়ে তিনি দ্বিতীয়বার সে সব সংগ্রহ করেছেন, তেমনি মেনডেলের হাইপোথিসিস বা পরীক্ষালব্ধ ফলাফল তার মৃত্যুর বহুবছর পর স্বীকৃতি পেয়েছে জেনে অবাক লেগেছ। ডারউইনের মতবাদ সারভাইবাল এ্যাট দ্যা ফিটেস্ট বা প্রাকৃতিক নির্বাচনে যেটাই টিকে গেছে সেটাই পরে বিস্তার লাভ করেছে। মানব উৎপত্তি ও বিবর্তন সম্পর্কে তার প্রস্তাবিত অভিমতকে কনভিকশন (বদ্ধমূল ধারণা) পর্যায়ে নিয়ে গেছে সমাজতান্ত্রিকেরা। সমাজতন্ত্র বা নাস্তিক তন্ত্র কিংবা ধর্ম তন্ত্র বা ক্লারজীরা (রাবাই কিংবা কাঠ-মোল্লা বা ওলামা-এ-করিম এক্সওয়াইজেড-রা) অথবা এই সেকুলার ধনতান্ত্রিক পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিকেরা সবাই এই তিঁনাকে নিয়ে যে নানা প্রকার জল্পনা কল্পনা করে তাকে কনভিকশান পর্যায়ে নিয়ে গেছেন তাদের বিষয়ে যারা অনুরক্ত তাদের এই লেখা না পড়ার অনুরোধ জানায়ে রাখলাম আগেই। খোলা মন নিয়ে যদি পড়েন তবে সমস্যা নাই কিন্তু এনকর্ড মাইন্ড (খুঁটি গাঢ়া মন) হলেই দেখবেন দড়িতে টান পড়েছে, তখন মনে ব্যথা লাগবে।

আমি একবার নিজের কাছেই প্রশ্ন রেখেছিলাম, মানব মনের সঞ্জায়নে মানব নিজেই একটা তমসা করেছে, তন্ময়তাকে সুযোগ দিয়েছে, অনেকটা এই কারণে যে, তন্ময়তাকে বাদ দিলে সে মেশিন না মানব তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিতে পারেসেরকম ভাবে এই মানব সম্প্রদায় প্রেমের সঞ্জায়নে ধারাবাহিক রূপান্তর আজও চালিয়ে যাচ্ছে এবং একে অনন্তকাল ধরে তমসাচ্ছন্ন রাখাকে পাকাপোক্ত করা হয়েছে। হার্ট ওভার হেড থেকে হার্ট ওভার এভরিথিং করা হয়েছে যা আর উন্নত হবে অদূর ভবিষ্যতে। এই সঞ্জায়ন গুলো মানব মনের কিংবা সম্মিলিত মানব মানসের সাধারণীকৃত স্বীকৃত মতামত। আমার প্রশ্নটা ছিল যদি মানব নিজের সঞ্জায়নে আর তার প্রশান্তির সঞ্জায়নে এরূপ বিস্তর বিভ্রান্তকে সুযোগ প্রদান করে তবে স্রষ্টার সঞ্জায়নে এত বিভিন্নতা হবে এটাই স্বাভাবিক। মানে হল আমি মনে করতে চেয়েছিলাম বা বলতে চাচ্ছি স্রষ্টার সঞ্জাও মনে হয় মানব মন প্রসূত একইরকম এতটাই ধাঁধাঁর যা সে একক নিঃসন্দেহ ভাবে সর্ব মত সিদ্ধ করতে প্রস্তুত নয় কিংবা এর সম্পূর্ণ মীমাংসা করেত চাচ্ছে না। 

দ্রষ্টব্য/ফুট নোটঃ
১। ব্ল্যাক হোল, মূলঃ স্টিফেন হকিং, ভাষান্তর: এনায়েত রসুল পৃষ্ঠা ১২৩ অধ্যায় ১২।

2। (https://commons.wikimedia.org/wiki/File:Niels_Bohr_Albert_Einstein_by_Ehrenfest.jpg#/media/
চিত্র:Niels_Bohr_Albert_Einstein_by_Ehrenfest.jpg
)

3| ১। ব্ল্যাক হোল, মূল: স্টিফেন হকিং, ভাষান্তরঃ এনায়েত রসুল পৃষ্ঠা ১০৯ অধ্যায় ১০।

4: POD: (Pocket Oxford Dictionary) : determinism  n. doctrine that human actions, events, etc. are determined by causes external to the will. (external to their free will)

5| POD: (Pocket Oxford Dictionary) : doctrine n. 1 what is taught; body of instruction. 2 a principle of religious or political etc. belief. b set of such principles.

6| ১। ব্ল্যাক হোল, মূল: স্টিফেন হকিং, ভাষান্তরঃ এনায়েত রসুল পৃষ্ঠা ১২1 অধ্যায় ১২।

7। "ঈশ্বর GOD আল্লাহর ইতিহাস" - শাহ্ সৈয়দ নুরুল কবীর উয়াইসী

My write up Edit History: - ১৪অক্টোবর১৯,  26অক্টোবর2020, 26dec2020, 30ডিসে20,  ১জানুয়ারী২০২১

No comments:

Post a Comment