এই চলমান অস্থির মহাবিশ্বর সাথে আমি বা আমার অস্তিত্বর কোন সম্পর্ক আছে কি না তা ভাববার বিষয়। যখন পরবে না মোর পায়ের চিহ্ন এই ঘাটে তখনও তো এই বিশ্বটা চলমানই থাকবে, যদিও আমি মরে ভুত হয়ে যাব। ভুত হওয়ার পরও কি কথিত কল্পকাহিনীর মত বাস্তবতার চালচিত্র দেখতে পাব? আমার মনে হয় না তখন বোধ বুদ্ধি কাজ করবে। আত্মা বা আত্মনের রহস্যটা আজও ব্যাখ্যা করা যায়নি। হয় আমি অচেতন অবস্থায় দৃশ্যমান বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারব কিন্তু অনুভব করতে পারব না অথবা এ সব ইহ লৌকিক বিষয়াবলীর অনেক ঊর্ধ্বে এমন এক স্তরে অবস্থান করব যা ব্যাখ্যা করা আমার বর্তমান বোধগম্যতার বাইরের বিষয়। সে যাই হোক, যা বলছিলাম, অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সম দহে, এই ভাব সম্প্রসারণ মুখস্থ করেছি সেই স্কুলে পড়ার সময় এর পর আর কার মুখে এর কোন উচ্চ বাচ্য শুনি না। তখন ফেইসবুক কিংবা সোস্যাল মিডিয়ার নাম গন্ধও ছিল না, ইমু ভাইবার আর হোয়াটস এ্যাপ কহাকে বলে ও কত প্রকার পরিক্ষায় আসত না কিন্তু এই ভাব সম্প্রসারণের মত মূল্যবোধ সৃষ্টিকারী মাধ্যম এন্ডরয়েড এ্যাপ্স এ ইদানীং আর দেখা যায় না। আগে মানুষ মিথ্যা বলতে ভয় পেত পাপ হবে বলে আর আজকে মানুষ সত্য বলতে ভয় পায় বিপদ হবে বলে। মূল্যবোধের এই পট পরিবর্তনটা হয়ে গেছে যেন তা বিবর্তনের সহায়ক উপাদান। প্রকৃত সত্যটা আসলে আর্থ সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও সমাজের বিভিন্ন স্ট্রেটামের (স্তরের) আন্ত সংঘর্ষর ফলাফল। একে সোস্যাল এনট্রপি বললে মনে হয় ভুল হবে না। সব পুঁজিবাদী অর্থনীতির একই রকম ভাবে বেড়ে উঠার ইতিহাস আছে বলে মনে করি আমি। টাকা বা পুঁজি যখন নিয়ন্ত্রক তখন সব কিছু টাকার বিচারেই মূল্যায়িত হবে, তাই মূল্যবোধের পরিবর্তন একই ধারাতেই হওয়াটা স্বাভাবিক। এবার আমি একটা ভাইরাল সংবাদ (অনলাইন এর উড়ো সংবাদ) দেই। পড়ে দেখুন মূল্যবোধ বিভ্রান্তির মাত্রাটা কোথায় নেমেছে “কারো পাজেরো গাড়ি থামছে রাতের গভীরে নিষিদ্ধ পল্লীতে, ঘরে অপেক্ষারত স্ত্রী দীর্ঘশ্বাস ফেলছে! কেউ ভাঙা ঘরে থেকে স্ত্রীকে নিয়ে অবিরত স্বপ্নের জোয়ারে ভাসছে। কেউ ভাবছে আর কয়েকটা দিন! ডিভোর্স পেপারে সাইন করলেই মুক্তি। কেউ একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য যুদ্ধ করে চলছে। কেউ সন্তান ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চাইছে। কেউ একটা সন্তানের জন্য সারাটা জীবন হাহাকার করছে! কেউ বছরে কতজন ভালবাসার মানুষ বদলে ফেলছে! কেউ শুধু একটা সত্যিকারের ভালবাসার মানুষের জন্য অপেক্ষা করে চলছে। কেউ দামি শাড়ি হাতে পেয়ে তবু খুশি নয়! কেউ তাঁতের নতুন শাড়ির বারবার গন্ধ শুঁকছে। কেউ লাখ টাকার ডাইনিং টেবিলে বসেও তৃপ্তি সহকারে ভাত খেতে পারছেনা! কেউ পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ কচলিয়ে গোগ্ৰাসে ভাত গিলছে। কারো দামি খাটে শুয়েও আবার ঘুমের ওষুধ খেতে হচ্ছে! খোলা জায়গায় হিমেল হাওয়ায় কেউ অঘোরে ঘুমোচ্ছে। কারো পড়ার টেবিলে নতুন বইয়ের সমারোহ কিন্তু পড়তে ইচ্ছে করছে না। কেউ পুরাতন বইয়ের দোকান চষে বেড়াচ্ছে, পকেট খালি বলে! কেউ বিলাস বহুল গাড়িতে বসে চিন্তিত, সন্তানগুলো মানুষ হলো না! এতো সম্পত্তি ধরে রাখতে পারবে তো? কেউ পায়ে হেঁটে পথ চলছে, মনে মনে ভাবছে, সন্তান তো মানুষ করতে পেরেছি! আল্লাহ চাইলে, ওরাই জীবনটা এখন গড়ে নিবে। সত্যিই নানান রঙের মানুষ, নানান রঙের স্বপ্নের ঘুড়ি! জীবনের নিজস্ব আলাপনে, বাস্তবতার হাত ধরে!!” এত গেল সামাজিক এনট্রপির সাম্প্রতিক সাধারণ চিত্রায়ন কিন্তু দৃশ্যমান সমৃদ্ধ সমাজের অন্তরালের নিষ্পেষণ কি ঠিক মতই এ লেখায় উঠে এসেছে? পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সব থেকে নিচের একটা স্তর বা স্ট্রেটাম সর্বদা নিষ্পেষিত হতে থাকবেই তা না হলে এই অর্থনীতি চলবেও না আর ফ্লাই বা উড্ডয়ন করতেও পারবে না। এর উপর অন্য একটা লেখায় বিস্তারিত গল্প তুলে ধরেছি, এখনকার লেখায় শুধু বলতে চাই তর্জনী দিয়ে অন্যর দোষ দেখান যায় ঠিকই তখন খেয়াল কি করেছেন একই হাতের বুড়া আঙ্গুলটা আপনাকে দেখাচ্ছে? তাই উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দায়ী শুধু সামনের জন নয় আপনিও সমান দায়ী।
কেবল পত্রিকা পড়ে কিংবা টিভি নিউজ দেখে আর সোস্যাল মিডিয়াতে ইনফোগ্রাফিক দেখে যে বিজ্ঞ মহল, যারা পত্রিকা আর টিভি সংবাদের উপর নির্ভর করে সব বিচার বিবেচনা করেন আর যারা ভাইরাল ভাইরাল বলে অস্থির হয়ে যান আমি তাদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, বাস্তবতা অন্যের চোখ দিয়ে দেখা যায় না। স্বচক্ষে দেখার আর নিজ কানে শুনার মূল্য পাথর যুগ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় একই আছে। আরেকটি বিষয় এই যে, বাস্তবতা সবার চোখে সমান ভাবে ধরা পরে না, এটা অনেকটা ১০ জন অন্ধ লোকের সেই হাতি চেনার গল্পের মত ব্যাপার। অথবা অন্ধকে দুধ কত সাদা তা বুঝাতে যেয়ে বকের উদাহরণ দিলে তার যেমন দুধকে বকের ঠোটের মত চোঁখা কিংবা দ এর মত বাঁকা মনে হতে পারে, তার মত ব্যাপার। আবার একই বাস্তবতা একেক সময় একেক রকম মনে হতে পারে। অভিজ্ঞতার পরিবর্তনের কারণে একই বিষয় সম্পর্কে একই ব্যক্তি ভিন্ন সময়ে ভিন্ন বিচার বোধ করতে পারেন। তাই বাস্তবতা নিয়ে এত আলোচনা আর বিচার বিশ্লেষণের ঝড়। যথার্থতার মানদণ্ড নিয়ে আমি অনেক চিন্তা করেছি কিন্তু এর সর্বজন স্বীকৃত মাপকাঠি নির্ধারণ কতটা কঠিন তাই সুধু বুঝতে পেরেছি কিন্তু কোন সমাধান অদ্যাবধি পাই নাই। মানবিক আচরণ আর অমানবিক আচরণের কোন বিধিবদ্ধ নীতিমালা নাই, এটা একান্তই সামাজিক নীতিবোধের ব্যাপার। যা সমাজের বিজ্ঞ মহল আলোচনা, সমালোচনা আর বাক বিতণ্ডা পার করে বিধিবদ্ধ করেন। তখন তাকে কনসেনসাস বা সাধারণ জনমত বলা হয়ে থাকে। এর আরেকটা নাম সমাজের সম্মিলিত বিবেক বোধ তথা মূল্য বোধ।
কমিউনিকেশন প্রশিক্ষণ ওয়ার্কশপের জনপ্রিয় গল্প রূপসী নগর থেকে জনমত বা সমাজের বিবেকের বিষয়টির পরিষ্কার ধারণা দেয়া যেতে পারে। গল্পটি হলো এ রকম, এক জমিদার পত্নী তার একমাত্র পুত্র সহ মদ্যপ জমিদারের ঘর করত, জমিদারের বাড়ির পাশে নদী ও তার অপর পারে জমিদারী গ্রাম ও চাষের জমি। মদ্যপ জমিদার প্রায় রাতেই তার স্ত্রীকে মারধর করত, এক রাতে যখন অত্যাচার স্ত্রীর উপর থেকে সন্তান পর্যন্ত গড়াল তখন সেই জমিদার পত্নী আর সহ্য করতে না পেরে সেই রাতেই সন্তান সহ জমিদার বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। কিন্তু কোথায় যাবে সে? তার কাছে তো টাকা কড়ি কিছুই নাই, তার পরও সে ঘর ছাড়ল, নদী পার হতে নৌকার মাঝির কাছে অপদস্থ হল, গ্রামে গিয়ে আশ্রয় চাইল কিন্তু গ্রামের বাসিন্দারা জমিদারের ভয়ে তাকে আশ্রয় দিতে ভয় পেল। অনন্যোপায় হয়ে শ্বাপদ সংকুল বন পাড় হয়ে সেই নারী শহরে তার এক বন্ধুর বাড়ি গিয়ে আশ্রয় চাইল, কিন্তু এত রাতে সেই বন্ধু তাকে বাড়িতে উঠাতেও অস্বীকৃতি জানাল। নারীটি বিফল মনোরথ হয়ে যখন বনের মধ্যে দিয়ে ফিরছিল তখন বাঘের পেটে তার ও তার সন্তানের জীবন শেষ হল। এবার প্রশ্ন উত্তর পালা, এই অভাগা নারীর মৃত্যুর জন্য কে দায়ী? প্রশ্নটা করা হয় প্রশিক্ষণ ওয়ার্কশপে, একজনকে জাজ বানায়ে তার অগোচরে দুটো দলে অংশগ্রহণকারীদেরকে দু পক্ষ বানান হয়, দুই পক্ষের কাজ জাজকে কোন সিদ্ধান্তে আসতে না দেয়া, তর্কে-বিতর্কে এক সময় জাজ ব্যক্তিটি রেগে গিয়ে তার হাতের কোকের বোতলটি ছুড়ে ফেলব মহা বিরক্তিতে, এটা করা হয় বুঝানর জন্য যে, মানুষ যখন কনক্লুসিভ সিদ্ধান্ত নিতে না পারে তখন তার মধ্যে রাগের জন্ম হয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, ওই মহিলাটির মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? ১) মদ্যপ জমিদারটি? ২) গ্রামের বাসিন্দারা? নাকি তার ৩) শহরের বন্ধুটি? নাকি আপনি ভাবছে ৪) বাঘটাই দায়ী, ও’কে না খেলেই পারত, শত হলেও মানবতা থুড়ি বাঘমতা দেখায়ে বাঘটা তাকে না হয় ছেড়েই দিত। মানুষ যখন পশুর মত আচরণ করতে পারে তখন পশুও তো মাঝে মধ্যে মানুষের মত আচরণ করতে পারে, কি বলেন? সামাজিক মূল্যবোধ বা সমাজের বিবেক কিংবা যাকে ইংরেজিতে কনসেনসাস বলা হয় তা বহু প্রজন্মের চিন্তা ভাবনা, তর্ক বিতর্ক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সামাজিক সম্পর্ক ও বিচার বোধের নীতিমালা যা একটি প্রণালীবদ্ধ বা সিস্টেমে পরিণত হয়েছে। সামাজিক মূল্য বোধ তাই বহু প্রজন্মের অভিজ্ঞতার ফসল যা মোটেই স্বতঃসিদ্ধ কিংবা অপরিবর্তনীয় নয় বরং কালের বিচারে ঘাত প্রতিঘাতে তার সংস্কার চলতেই থাকে বহমান নদীর মত। এই চলমান সিস্টেম তখনই অপরাধ প্রবণ হয় যখন করাপটেড থট বা দুষ্ট চিন্তা ঢুকে যায়। চিন্তা প্রবাহর স্থবিরতায় যখন তা নতুন ধারণার মাধ্যমে সময় উপযোগী হয়ে না উঠে তখন তা অপসংস্কৃতির জন্ম দেয়। এরকম আরও হয় যখন সমাজের বয়োজ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ লোকেরা পূর্বের প্রজন্মের চেয়ে কম মেধাবী অথবা দুষ্ট প্রকৃতির হয়ে যায়। একবার দুষ্ট চিন্তা ঢুকে গেলে অবিরত দুষ্ট চক্রের মতো তা একাধিক মূল্য বোধের ক্ষতিসাধন করতেই থাকবে। সময়ের দাবী অস্বীকার করে যদি কোন নীতিমালাকে বদ্ধমূল করা হয় তখন তা কু-সংস্কারে পরিণত হওয়াটা স্বাভাবিক। যেমন রাতের বেলা নখ-চুল কাটলে অমঙ্গল হয়, আমাবস্যা-পূর্ণিমার রাতে হোঁদল কুত-কুত বের হয় ইত্যাদি। সময়ের সাথে সামাজিক নীতিবোধের বিচার বিশ্লষন করা তাই সমাজবেত্তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী। কখনো করাপটেড থট ইনকরপোরেটেড সিস্টেমে যদি আপনি বসবাস করেন তখন এমনটা হওয়াই যুক্তিযুক্ত। সিস্টেম তখনই করাপটেড হয় যখন চিন্তায় গলদ থাকে। চিন্তাটা আগে তার পর তাকে প্রণালীবদ্ধে আবদ্ধ করা হয়। এই চিন্তার গলদ গুল অত্যন্ত সূক্ষ্মও হতে পারে যাকে আপাত দৃষ্টিতে তেমন কিছু মনেই হবে না। দু একটা উদাহরণ দিচ্ছি, দুই জন প্রাক্তন কর্মচারী গুরুতর অসুস্থ, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ের প্রজ্ঞাপন জারী করল সকল শাখার সংস্থাপনকে যেন তারা তাদের অধীনস্থ কার্যালয় সমূহ হতে সাহায্য সংগ্রহ করে তাদের দিয়ে দেয়। সংস্থাটির নিজস্ব দুস্থ তহবিল (বেনভলেন্ড ফান্ড) থাকা সত্যেও এরূপ প্রজ্ঞাপন কি ভিক্ষাবৃত্তিকে ইনকরপরেটেড করা নয়? সিস্টেম মানুষের চিন্তার ফলশ্রুতি। সিস্টেম মানব চিন্তাকে চালায় না বরং তার দ্বারা চালিত হয়। গন পরিবহনের কথাই ধরা যাক, জনগণের প্রয়োজনে এই পরিবহণ ব্যবস্থা কিন্তু আমাদের রাস্তাঘাটে যা পাওয়া যায় তা গন-মানুষের গন্তব্যে পৌছানোর উপলক্ষে পরিচালিত হওয়ার কথা। আপনি কোথাও যেতে চাইলে রিক্সা, ট্যাক্সি কে রাজি করায়ে দর দাম করে তবে যেতে পারবেন। একটি মেট্রোপলিটন সিটির গণ পরিবহনের এহেন ফ্রি-মার্কেট ইকনমি ভাল দেখায় না। অনিয়মকে নিয়ম বানায়ে ফেললে সিস্টেম বিকৃত হতে বাধ্য। এছাড়া আছে যান্ত্রিক প্রগতির সাথে তাল মিলাতে না পারা। এক সময় ঘড়ি পরে নামাজ ঘরে প্রবেশ করা যাবে কি না কিংবা যান্ত্রিক আওয়াজে মাইক্রোফোন ব্যবহার করে উচ্চ শব্দর আজান/বয়ান সঠিক হবে কি না তা নিয়ে ইজতিহাদ বা গবেষণা হয়েছে। ছবি – চল ছবি –ছিনেমা ইত্যাদি নিয়েও ছি ছি করা হয়েছে যার অনেকগুলি আজকে বিসৃত, এ সব নিয়ে আজ আর কেউ বিতর্ক উত্থাপনই করে না। কোথায় হাত ঘড়ি পড়া যাবে কি যাবে না তা নিয়ে দুশ্চিন্তা আর এখন সবার পকেটে পকেটে ছিনেমা ও ঘড়ি সম্বলিত মোবাইল ফোন তাও কিনা আবার বাটন ছেড়ে টাচ মোবাইল পর্যায়ে উঠে গেছে। যন্ত্র বিপ্লব আর তার সাথে তাল মিলায়ে মূল্য বোধের উন্নয়ন করতে না পারাও আরেকটি বিরাট বিপর্যয় বটে। "যান্ত্রিক প্রগতি মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য একই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বিপদের ঝুঁকি বয়ে আনছে। কিন্তু অদ্যাবধি মানুষকে ঘিরে থাকা অনিষ্টকর অজস্র উপকরণ সম্পর্কে আমাদের উদাসীন্য এক ভীতিকর বাস্তবতা" - এটা রাশিয়ান লেখক বলেছেন ১৯৭৭ সালে [কিন্তুক, অবশেষে ২০২০ সালে মানব সভ্যতা ভড়কাইয়া গেল করনা হরর ফিল্মের বাস্তবতায় (তৃতীয় বন্ধনী আবদ্ধ লেখনীটা আমার বক্তব্য)] উপড়ের বক্তব্যটা বলেছিলেন ন. লুচনিক তার বই "কেন আমি বাবার মতন" যার কঠিন বাংলা অনুবাদক হলেন দ্বিজেন শর্মা, জেনেটিক্স এর উপর একটা অতি মূল্যবান বই, উনি কেন এত কঠিন বাংলায় অনুবাদ করলেন আমি এখনও বুঝতে পারি নি। একে বিষয়টা সাধারণের জন্য বুঝা কঠিন, তার উপর এই কঠিন কঠিন বাংলা শব্দ ব্যবহার করে উনি নিজের অনুবাদকে সমৃদ্ধ করেছন বটে কিন্তু আর সহজ বাংলা ব্যবহার করলেও পারতেন। উনি জেনেটিক্সের বাংলা করেছন বংশানুস্মৃতি, কিন্তু ম্যালিগন্যান্ট টিউমার এর বাংলা প্রতিশব্দ করেন নাই এজন্য উনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
“ধারণাগত বিশৃঙ্খলাই সকল বিরোধের ও বিভ্রান্ত মূল্য বোধের মূল কারণ”এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত, আমাদের সকলের মধ্যে ধারণাগত পার্থক্য বিদ্যমান, আর এর ফলেই সকল বিরোধ ও জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমার মনে হয়। এটি নিতান্তই আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি বলে আমি মনে করি। আমার পূর্ণকালীন চাকুরী জীবন শুরু হয় ১৯৯৯ সালে শিক্ষকতা দিয়ে, যদিও কারিগরি কৌশল বা NIIT এর কম্পিউটার প্রশিক্ষক হিসেবে। আমাদের প্রশিক্ষক হওয়ার ট্রেনিং প্রদান করা হয়েছিল সেই সময়। ওই সময়ই আমার বুঝে আসে যে, ছাত্রদের মধ্যে সঞ্জা ও ধারণা বপন করে শিক্ষকেরা। স্কুল জীবনে ক্লাস নাইনে ধানমন্ডী বয়েজ স্কুলের নতুন প্রধান শিক্ষক আমাদের অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখার সময় বলছিলেন ও’রা (মানে আমরা ছাত্ররা) হল মাটির দলার মত, যা দিয়ে মৃৎ শিল্পীরা মাটির শক্ত থালা-বাসন, ঘটি, বাটি কিংবা পুতুল তৈরি করে থাকেন, সেরূপ শিক্ষকরাই ওদের শক্ত ব্যক্তিত্বের প্রকৃত মানুষের রূপ প্রদান করেন। শিক্ষকদের মধ্যে যদি ধারণাগত ঐক্য থাকে তা হলে তা ছাত্রদের মধ্যেও প্রতিফলিত হওয়ার কথা কিন্তু যখন তা বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না, তার মানে হল শিক্ষকদের মধ্যে ধারণাগত সেই ঐক্যটা নেই। আরও একটি বিষয় হচ্ছে যে, ধর্ম ভিত্তিক দর্শন বাদ দিলে, বাদ দিচ্ছি কারণ ধর্ম কেন্দ্র গুলতে (মসজিদ, মন্দির, গির্জা, মঠ ইত্যাদি) বলা হয়ে থাকে সেখানে সামাজিক-অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক আলোচনা করা যাবে না। যার মানে হল ধর্মকেন্দ্র গুল মানুষকে ব্যবহারিক জীবনে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার পক্ষে সায় দিচ্ছে কোন এক অজানা কারণে। ধর্মকেন্দ্রগুলতে যদি শুধুমাত্র পরকাল ও ধর্মগ্রন্থ গবেষণা করা হয় আর জীবনের ব্যবহারিক অন্য সকল বিষয়কে বাদ দেয়া হয় তবে তা সাধারণ মানুষকে তার প্রত্যহিক জীবনাচরণের জন্য কোন দর্শন প্রদান করে না বরং একটা আরোপিত দর্শন বিনা বাক্য ব্যয়ে গ্রহণ করতে বলা হয় কোন সময়োপযোগী পরিশুদ্ধ করন ছাড়াই। এরকম অবস্থায় বাস্তবতায় চলমান জনগোষ্ঠীর জন্য একটি ব্যবহারিক দর্শনের প্রয়োজনীয়তা থেকেই যায়। এই গ্যাপটা অনেক বিজ্ঞ মহাত্ত্বার নজরে পড়ছে বলে আমার মনে হয় না। এরকম হলে প্রতি ঘটনাতেই একত্রে বসবাসকারী বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষর ঝুঁকি বেড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। এ রকম অবস্থায় যা’ই করতে যাওয়া হয় তা’ই কার না কার, কিছু না কিছুর সাথে সংঘর্ষিক মনে হবে। সবাইকে একক ধর্মমতে আনা সম্ভব হয় নাই, যার ফলে ধর্মনিরপেক্ষতা এতটা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে কিন্তু এই ধর্মনিরপেক্ষতাও সকলের কাছে পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না কারণ এর কোন ধর্মপুস্তক নাই। এসব কারণে সবার মধ্যে একই লয়ে সাধারণ ধারনাগত ঐক্যমত্য বা বিবেক প্রতিষ্ঠা পায় নাই। আবার যে সকল রাষ্ট্র একক ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত বা সংখ্যাগরিষ্ঠরা একই ধর্মের অনুসারী, উদাহারণ হিসেবে বলা যায় মধ্যপ্রাচ্য (মিডিল ইষ্ট) এর একাধিক রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপুঞ্জ , তাদের জনগণের মধ্যেও কিন্তু ধর্মকে নানা ধারায় বিভাজিত করে সেই বিশৃঙ্খল অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে বা যাচ্ছে। বিষয়টা যেন এরকম, মানব জাতি সময়ে চলমান থাকার কারণে সদা পরিবর্তনের তোড়ে বার বার নানা মুনির নানা মত মতো চলতে চায়। একক ধারণা কম্বল সম্বল করে বাচতে চায় বলে মনে হয় না। সময়ের স্রোতে নতুন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ ধারণা সমূহের ঘাতে পুরাতন ধারণার মূলগত পরিবর্তন হওয়াটাও একটা প্রভাবক হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে। তাই বলছি আমাদের বাঙ্গালীরা জাতিগত ভাবে কোন একক সর্বসম্মত দর্শন মেনে নেই নাই, কেউ কোন একক প্রভাব বিস্তারকারী দার্শনিকের নাম বলতে পারবে বলে মনে হয় না। অনেকই অনেক পণ্ডিতের নাম বলতে পারবেন, কিন্তু বিশেষ কোন দর্শনের কথা বলতে পারবেন না। এর মূল কারণ আমাদের শিক্ষকেরা কেবল পরদেশীদের কথা বলেন ও তাদের মতামতকে অনেক গুরুত্ব প্রদান করে ছাত্রদের সামনে উপস্থাপন করেন, আমাদের নিজেদের পণ্ডিতদের চেয়ে আমরা তাই বিদেশী পণ্ডিতদের অনেক মূল্য দেই। সবই তাই হয়ে গেছে ধার করা ও ধরাবাধা। এই কথা বলার সাথে সাথে আমি জানি অনেকেই বলে বসবে, কই আছে তো অমুক, তমুক, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অমুক জনপ্রিয় প্রফেসর বা লেখক ইত্যাদি, আমার কথা হচ্ছে যে, কোন লেখক বা প্রফেসর এর কথা আমি বলছি না, সেই লোক বা মত খুঁজছি যার কথা সবাই জানে, যাকে কেবল বই এর পাতাতেই পাওয়া যায় না বরং সকল মানুষের মুখে মুখে তার কথা থাকে। যেমন, মও-সে তুং সম্পর্কে চিনের কোন কৃষককে জিজ্ঞাসা করলেও সে তার সম্পর্কে কিছু না কিছু বলতে পারবেন। অথবা সুভাষ বোস সম্পর্কে তৎকালের সকলেই জানতেন, এরা কেবল রাজনীতিই করে নাই, এরা মানুষের মাঝে একটি স্বতন্ত্র দর্শনকে ভাল লাগাতে পেরেছিলেন। সে রকম একজন বাঙ্গালী যাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বলা হয় তাঁর নাম সকলেই জানেন, এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকেই সেই রূপ উচ্চ সম্মান দেয়া উচিত। যত যাই হোক সঠিক সময়ে সঠিক নেতৃত্ব দেয়া জাতির জন্য একটা বিরাট পাওয়া। তার পরবর্তী বর্তমানে আমাদের দেশে বা জাতিতে সেরূপ সত্তা আছে কিভাবে বলি? যেমন ডা. বোদরুদ্দোজা, ডা. ইউনুস, হুমায়ুন আহমেদ, কিংবা জাফর ইকবাল প্রমুখেরা অনেকের মাঝে এক প্রকার দর্শন জনপ্রিয় করে তুলতে পেরেছিলেন বটে, কিন্তু তারা কোন দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিস্তার করতে পারেন নাই। আমি একে অপারগতা বলব, সোজা কথা তারা পারেন নাই। এরকম আরও অনেকেই আছেন, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, তারা যে ভাল তাতে কোন সন্দেহ নাই কিন্তু প্রত্যেকেই এক জায়গায় হেরে গেছেন। কোন এক অজানা কারণে তিঁনারা জাতির সকল মানুষের মনে যে তাদের জায়গা করে নিতে হবে, এটা যে তাদের জাতির প্রতি কর্তব্য, জাতির অভিভাবগত্য করার দায়িত্ব, এত মস্ত বড় পণ্ডিত ও ভাল মানুষ হয়েও তঁরা এই বিশেষ দায়িত্ব নিতে ভুলে গেছেন। তাই যা হবার তাই হচ্ছে লাল সবুজ পতাকা নিয়ে আমরা কেবল জাতিয় সঙ্গীত গাইছি। ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে জাতির প্রত্যেকের ভাববার মত অনেক বিষয় রয়েছে। বছরটা জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে উজ্জাপন করার বিষয়ে সকলের সচেতন হওয়া উচিত কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে সাধারণের মধ্যে তেমন কোন উৎসাহ আমি ইতোমধ্যে দেখি নাই। দেশটাতে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হতে চলেছে অথচ জাতিটার মধ্যে তেমন কোন আনন্দ আন্দোলন নাই বিষয়টি অদ্ভুত লাগাটাই স্বাভাবিক।
এক হাতে যেমন তালি বাজে না তেমনি মনে রাখতে হবে এই সমসত্ত্ব সমাজে যত ঘটনা আর অঘটন ঘটছে তার সব গুলর সাথে আমার কর্মকাণ্ডের যোগসূত্র আছে। হয় আমি যা ঘটছে তার সাথে মানায়ে নিচ্ছি নিজেকে না হয় আমি এর সংশোধনে কিংবা উন্নয়নে ভূমিকা রাখছি। আমার উপস্থিতি সমাজে একটা ইমপ্যাক্ট ক্রিয়েট করেছে তা আমি চাই বা না চাই। এই ঘটমান বিশ্বচরাচরের সাথে আমার অস্তিত্বর একটি যোগসূত্র আছে আর সেটা কি তা বুঝার ক্ষমতার মাধ্যমেই আমরা উন্নততর মানবে উত্তরণ ঘটাতে পারি। উন্নত সমাজবদ্ধ মানুষ তাই বুঝতে পারে কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ যদি না করি তা হলে তার দায়ভার আমার উপরও চলে আসে।।
আপডেট হিষ্ট্রি: ১৭ডিসে২০১৩>১৭অক্টোবর২০১৯>২৩জানু২০২০>১৮মে২০২০> ০৭জানু২০২১>১৪ জানু২০২১>১৯ জানু২০২১> ২১ জানু২০২১।
Mashallah brother.💜💜💜👍
ReplyDelete