Sunday, October 29, 2023

সাধু ভাষার চল কি তবে চিরতরে উঠিয়াই গেল?

 

অতি সম্প্রতি সাহিত্য প্রকাশের শতবার্ষিক সংস্করণ, দক্ষিণারঞ্জন মিত্র-মজুমদারের ঠাকুরমা’র ঝুলির গল্পগুলা আমার পুত্র মুসাবকে রাত্রিকালীন ঘুমের পূর্বে পড়িয়া শুনাইতেছি। আমি এক পাতা পড়িলে সে কাড়িয়া লইয়া পরের পাতা আমাকে পড়িয়া শুনায়। উদ্দেশ্য মূলত আমার পুত্র ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশুনা করে বিধায় তাহাকে বাংলা সাহিত্য পঠনের প্রতি আকৃষ্ট করা। এরূপে আমরা একের পর এক বাংলার অতি প্রাচীন রূপ কথাগুলোর কল্পনা রাজ্য উন্মোচন করিয়া পিতা পুত্র দারুণ অভিজ্ঞতা লাভ করিতেছি। প্রথম গল্পটি পড়িয়া শুনানর সময় আমার নয় বৎসর বয়সের পুত্র তাহা পুরটা মনোযোগ সহকারে শুনিয় উহা অতি বিরক্তিকর বা বোরিং বলিয়া চলিয়া যায় কিন্তু পরবর্তী রাতগুলোতে পিতার সহিত একই সাথে পড়ার আনন্দ উপভোগ কল্পে এই চর্চা চলমান আছে। বাংলাদেশে ওয়াল্ট ডিজনির মত মহাপুরুষ জন্মগ্রহন করেন নাই বলিয়াই পশ্চিমা রূপকথা যেমন স্নো-হোয়াইট, রূপাঞ্জেল, সিনডারেলার মত রূপকথাগুলো এনিমেশন মুভি আকারে নির্মিত হইলেও বাংলার প্রাচীন রূপকথা, সাত ভাই চম্পা, কলাবতী রাজকন্যা, সোনার কাঠি রূপার কাঠির মত রূপকথাগুলো হারায়ে যাওয়ার পূর্বেই দক্ষিণারঞ্জান মিত্র মজুমদার তাহা ঠাকুরমার ঝুলি গ্রন্থে রক্ষা করিয়াছেন। তাহা তিনি করিয়াছেন বলিয়াই আজ আমি  তা একবিংশ শতাব্দীর সন্তানের হাতে তুলিয়া দিতে পারিতেছি। রবীন্দ্রনাথ দক্ষিণারঞ্জান মিত্র মজুমদারের ঠাকুরমার ঝুলি গ্রন্থের ভূমিকায় বলিয়া গেছেন “দক্ষিণা বাবুকে ধন্য। তিনি ঠাকুরমা’র মুখের কথাকে ছাপার অক্ষরে তুলিয়া পুঁতিয়াছেন, তবু তাহার পাতাগুলো প্রায় তেমনি সবুজ, তেমনি তাজাই রহিয়াছে, রূপকথার সেই বিশেষ ভাষা, বিশেষ ভীতি তাহার সেই প্রাচীন সরলতাটুকু তিনি যে কতটা দূর করিতে পারিয়াছেন, ইহাতে তাঁহার সূক্ষ্ম রসবোধ ও স্বাভাবিক কলানৈপুণ্যের প্রকাশ পাইয়াছে। আমি হইলে ত একাজে সাহসই করিতাম না।” গ্রন্থটির ভূমিকার শেষে দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার লিখিয়াছেন “এক্ষণে আমার প্রস্তাব এই যে, বাংলাদেশের আধুনিক দিদিমাদের জন্য অবিলম্বে একটা স্কুল খোলা হউক এবং দক্ষিণাবাবুর এই বইখানি অবলম্বন করিয়া শিশু-শয়ন-রাজ্যে পুনর্বার তাঁহাদের নিজেদের গৌরবের স্থান অধিকার করিয়া বিরাজ করিতে থাকুন’ – বোলপুর, ২০শে ভাদ্র ১৩১৪ বং। বুলবুল চৌধুরী বইটির ভূমিকায় লিখিয়াছেন, দক্ষিণারঞ্জন পাঠকদের প্রতি অকপটে নিবেদন করেনঃ- 

”তোমাদেরই হারাধন, তোমাদেরই বুলি,
আবার এনে ঝেড়ে দিলাম, হাতে তুলি।”

তিনি আরো বলিয়া গিয়াছেন

”ঘুম ঘুম ঘুম,
--সুবাস কুম্ কুম্ –
ঘুমের রাজ্যে ছড়িয়ে দিও
ঠাকুরমা’র

ঝুলি।”

ঠাকুরমা’র এ ঝুলিতে সন্নিবেশিত হইয়াছে দুধের সাগর, রূপ-তারসী, চ্যাং-ব্যাং, আম সন্দেশ এর মত বাংলার প্রাচীন রূপকথার গল্প গ্রন্থ গুলোও। বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত এবং সত্যজিৎ রায়ের নির্মিত ছায়াছবি “পথের পাঁচালী” তে সুন্দর করিয়া দেখাইয়াছেন কি ভাবে ঠাকুর মা তার নাতিদিগের ঘুম পাড়ানোর সময় এই সব রূপ কথাগুলো শুনাইতেন আর কুপির আলোতে তাহাদের ছায়ার কম্পনে সেই গল্পের জগতকে কতটা মোহনীয়তার সাথে ভয়াবহ রূপ ধারণ করিতো। আমার এ লেখার উদ্দেশ্য ঠাকুরমার ঝুলি নিয়ে নয় বরং আমি উহা পড়িতে পড়িতে মনে পড়িল আমি রবীন্দ্রনাথের “সাহিত্যের সামগ্রী” প্রবন্ধটি সাধু ভাষা হতে চলিত ভাষায় রূপান্তর করিয়াছিলাম ও আমার লেখা “আকাশ খুলে বসে আছি তা’ও কেন দেখছো না” তে অন্তর্ভুক্ত করিয়াছিলাম। আমার মনে হইতো সাধু ভাষায় লেখা বলিয়া অনেকেই প্রবন্ধটি পড়িবে না বরং তা চলতি ভাষায় লেখা হইলে অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য ও বোধগম্য হইবে। আজ যখন রূপকথার গল্পগুলি আমার শিশুপুত্র মুসাব বিন সার্জিল কে পড়িয়া শুনাইতেছি তখন তাহা দেখিলাম সাধু ভাষায় সংরক্ষিত আর তা পড়িতে মোটেও খারাপ লাগিতেছে না আর তা আমার সন্তানের কাছেও স্রুতি কটু লাগিতেছে না। সাধু ভাষা একদা ছিল অভিজাত্যের প্রতীক। বাংলা সাহিত্যের প্রথম যুগে সাধু ভাষাতেই গল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি লিখিত ও পঠিত হইতো। আজ কেন তবে তার প্রচল উঠিয়া যাইতেছে সেই ভাবনা থেকেই সাধুভাষাতেই আমার এই লেখার চেষ্টা। আমার লেখা যাহারা পড়েন তাহাদিগকে একটু চমকিয়া দেয়ার লোভেও বলতে পারেন সাধু ভাষায় অন্তত একটি লেখা লিখিবার চেষ্টা করিলাম।

সাধু ভাষায় লিখিত একটি প্রবন্ধ আর চলতি ভাষায় লেখা একটি প্রবন্ধ পাশাপাশি পড়িলেই বুঝা যায় যে সাধু ভাষা অত্যন্ত মোলায়েম আর অত্যন্ত শুধি জনের ভাষা। ভাষা কখনও একই থাকে না, সংস্কৃত ভাষা থেকে পালি ও বাংলা ভাষায় উত্তরণ একটা স্বাভাবিক সময়ের ঘটনা মাত্র। সংস্কৃত ভাষায় শুকনো কাঠকে বলা হয় শুষ্ঠং কাষ্ঠং বলিয়াছিলেন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের প্রথম বাংলা ক্লাসের স্যার, যার সূত্র ধরিয়া আমরা ছেলেরা মজা করিয়া শুকনা কাঠামোর এক মেয়ে সহপাঠীর ছদ্ম নাম রেখেছিলাম শুষ্ঠং কাষ্ঠং। সেই কঠিন সংস্কৃত ভাষায় আজ আর কেউ কোন লিখা লিখিবে না সেটাই যেন স্বাভাবিক। তেমনি করে সাধু ভাষায় পঠন ও লেখনও আজ কাল উঠিয়া গিয়াছে বলিয়া দেখা যাইতেছে। একটি ভাষার উদ্দেশ্য হইতেছে মানুষের মনের ভাব ও ভাষা অন্যের কাছে পৌছিয়ে দেয়া তা যে অক্ষর বা ভঙ্গিমায়ই হোক না কেন। যদি ভাষাটি সঠিক ভাবে মানুষের মনের ভাবকে অন্যের কাছে পৌছিয়া দিতে সক্ষম হয় তবেই সেই ভাষার সার্থকতা। বাংলা ভাষাকে নিম্ন মানের ভাষা বলাতে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা ভাষায় সনেট রচনা করিয়া প্রমাণ করিয়া দিয়াছিলেন যে বাংলা ভাষা বিশ্বের যে কোন ভাষার চেয়ে কম উন্নত নহে। এই ভাষা আজ বিশ্ব দরবারে মাতৃভাষার সম্মান অর্জন করিয়াছে। সব ভাষাতেই ক্লাসিকাল ভাষা বলে একটা উন্নত ভাষার সংস্করণ আছে যেমন আরবি ক্লাসিকাল ভাষাতে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়। ইংরেজিরও ক্লাসিকাল সংস্করণ আছে আর বাংলা ভাষার ক্লাসিকাল সংস্করণ এই সাধু ভাষা। তাই বলিতেছি এই ক্লাসিকাল ভাষাটির সময়ের গর্ভে হারায়ে যাওয়া কি উচিত হইতেছে? আমি যখন সিলেটে কম্পিউটার প্রশিক্ষক হিসেবে চাকুরীতে গিয়েছিলাম তখন সেখানকার সেন্টার হেড ছিলেন চন্দ্রশেখর মেহতা, উনি ভারতের লোক ছিলেন, তিনি বলিতেন বাংলাদেশিরা খাইছিলাম, ঘুমাইছিলাম, গেছিলাম এই ভাবে কথা বলিয়া থাকে আর পশ্চিম বংগের ওরা এই শব্দগুলোকেই বলিয়া থাকে খেয়েছিলাম, ঘুমিয়েছিলাম, গিয়েছিলাম এই ভাবে। আরো ভালো করিয়া বলিতে গেলে বলিতে হয়ে তাহারা এই ভাবে বলিত, খেয়েছিলুম, ঘুমিয়েছিলুম, গিয়েছিলুম – তাহা যেন অনেকটা নেকামি করার ছলে ভাষাটিকে আদুরে ভাবে প্রকাশ করার ভঙ্গী। এক বংগ ভঙ্গেই এই অবস্থা মানে হইলো ভাষার মধ্যে পার্থক্য দেখা দিয়াছে তাহা হইলে স্থানভেদে কালভেদে ভাষার বিবর্তন হইবে তাহাই স্বাভাবিক কিন্তু উচ্চতর মর্যাদা সম্পন্ন সাধু ভাষা কেন সকলে পরিত্যাগ করিতেছেন তাহাই এক মহা প্রশ্ন বটে।

আমার তিন সন্তানের শিশুকাল আমি দারুণ ভাবে উপভোগ করিয়াছি। বয়স এক বৎসরের কম থাকাকালীন প্রত্যেককে বুকের উপর বসাইয়া দুই হাতে তার দুটি হাত মুঠি করিয়া ধরিয়া তালে তালে ছড়া কাটিতাম, “আগডুম, বাগডুম, ঘোড়াডুম সাজে, ঢাক ঢোল ঝাঁজর বাজে, বাজতে বাজতে চললো ঢুলি, ঢুলি গেল কমলাফুলি, কমলা ফুলির টিয়েটা সুর্যি মামার বিয়ে টা”। ওরাও খুব মজা পাইতো। রাতে ঘুম পাড়ানোর সময় ছাড়া কাটিতাম “খুকু ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো বর্গি এলো দেশে, ধান শালিকে ধান খেয়েছে খাজনা দিব কিসে?, ধান ফুরালো পান ফুরালো, খাজনার উপায় কি? আর কটা কাল সবুর করো রশুন বুনেছি”। ওরা যখন একটু একটু বুঝতে শিখিয়াছে ও দু একটি কথা মুখে ফুটিয়াছে তখন জিজ্ঞাসা করিতাম খাজনার উপায় কি? ওঁরা উত্তরে বলিত ”রশুন বুনেছি”। তেমনি আরেকটা ছাড়া ছিল ”নোটন নোটন পায়রা গুলো ঝোটন বেধেছে, ও পারেতে ছেলে মেয়ে নাইতে নেমেছে, এ পারেতে রুই কাতলা ভেসে উঠেছে, কে দেখেছে? কে দেখেছে? দাদা দেখেছে, দাদার হাতে কলম ছিল ছুড়ে মেরেছে, উফ্ বড্ড লেগেছে”। আমার  শিশু কন্যা প্রদীপ্তি বলিয়া উঠিত ”বন্ড লেগেছে”। তা যাহাই হউক, সাধু ভাষায় ছড়া গুলোও তো লেখা হয় নাই কিন্তু এই ছড়া গুলিও আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতির অত্যন্ত সমৃদ্ধ উপাদান। আমি জানি না কতজন বাঙ্গালী বাবা মা তাহাদের বাচ্চাদের এই সব ছাড়া শুনাইয়া এখনও ঘুম পাড়ান। তারা মনে হয় ”টুইংকেল টুইংকেল লিটিল স্টার” ইংরেজি কবিতাটিকেই অধিকতর যুতসই মনে করিয়া থাকিবেন। কিন্তু বলিয়া রাখি বাংগালিয়ানা আমাদের মাঝে আজো টিকিয়া আছে আর প্রজন্ম প্রজন্মান্তরে এই বংলাই তাহার সুপ্রাচীন সমৃদ্ধ উপাদানগুলো বহন করিয়া চলমান থাকিবে বলিয়া আমি বিশ্বাস করি।

আমাদের দেশের সুধী সমাজ, সুশীল সমাজ, শিক্ষিত সমাজ ও বাংলা একাডেমীর কাছে সবিনয় আবেদন এই যে, বাংলার ক্লাসিকাল ভাষা, এই সাধু ভাষাকে সময়ের গর্ভে হারায়ে যাইতে দেওয়া উচিত নহে, বরং ইহাকে সংরক্ষণের তাগিদে সাধু ভাষায় সাহিত্য রচনার প্রচলন অব্যাহত রাখা উচিত। চলতি ভাষার প্রয়োজন আছে কারণ তাহা প্রায়োগিক ভাষা কিন্তু পুঁথিগত বিদ্যায় সাধু ভাষার অস্তিত্ব একেবারে বিলীন হইয়া যাইবে তাহা যেন মানিয়া লওয়া যায় না। বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনকে বদলাইয়া দিয়াছে দেখিয়া অনেকের মুখেই ইদানীং শুনা যায় সাহিত্যের আর কি বা দরকার রহিয়াছে। অন্তর্জলে বা ইন্টারনেট ঘাঁটিলে বহু জন আজকাল বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে নানা বক্তব্য নিমেষেই বলিয়া সকলকে অবগত করাইতেছেন। আমার পরিচিত দুই সুধীজনকে বিতর্ক করিয়া বুঝাইতে হইয়াছে যে সাহিত্যের প্রয়োজন যতকাল মানব সম্প্রদায় থাকিবে ও মানব হৃদয় উদ্বেলিত হইতে থাকিবে ততকাল সাহিত্যের প্রয়োজন ফুরাইবে না। এমনকি যুদ্ধ বা সংঘাতেও সাহিত্য তার অবদান রাখিয়া আসিয়াছে। ভাষা আন্দোলনের সময়কার স্লোগান, ”ওরা আমার মায়ের ভাষা কাইরা নিতে চায়”, কিংবা নজরুলের বিদ্রহী কবিতা গুলোই তাহার প্রমাণ বহন করিয়া থাকে। আমার জানা মতে পৃথিবীর আর কোন ভাষা নাই যাহার অধিকারের জন্য সালাম, বরকত, রফিকের মত কাউকে আত্মত্যাগ বা মৃত্যুবরণ করিতে হইয়াছে। বাংলাই একমাত্র ভাষা যাহার জন্য মানুষ রক্তদান করিয়াছে।নব্য বাঙ্গালী সমাজ পাশ্চাত্যের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে এতটাই মোহাচ্ছন্ন হইয়া পরিয়াছে যে নিজেদের সাহিত্য নিয়া তাহারা ততটা চিন্তা ভাবনা করার প্রয়োজন বোধ করেন বলিয়া মনে হয় না। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক শব্দরও আজকাল বাংলা প্রতিশব্দ হইতেছে। যেমন পারটিকেল এক্সিলারেটরের বাংলা হইয়াছে কণা ত্বরক যন্ত্র। কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর বাংলা প্রতিশব্দ হইয়াছে কণা বলবিদ্যা। ব্ল্যাক হোলের বাংলা প্রতিশব্দ হইয়াছে কৃষ্ণ গহ্বর। বাংলা সাহিত্যের বিকাশে বাংলা একাডেমীর অবদান অনস্বীকার্য আর তদ কর্তৃক প্রতি বৎসর বই মেলার আয়োজন বাংলা ভাষার বিস্তার ও বিকাশে অভূতপূর্ব অবদান রাখিয়া আসিতেছে। বাংলা একাডেমীর ভাষা শহীদ গ্রন্থমালার বই গুলো অত্যন্ত জ্ঞান গর্ভ আর তদ কর্তৃক বাংলায় অনুবাদ কৃত বহু পুস্তিকা বাংলা ভাষাকে উত্তর উত্তর সমৃদ্ধ করিয়া চলিয়াছে। বাংলা একাডেমীর পাশাপাশি সাধারণ বাঙ্গালীদের মাঝের বাংলার প্রতি মমতা থাকা উচিত আর তার বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা উচিত বলিয়া আমি মনে করি। বাংলা সাহিত্যে ঢাকা কলেজের জনপ্রিয় অধ্যাপক আবদুল্লা আবু সাঈদ ও তাঁর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রর অবদানও বিশাল। আমি ক্লাস ফাইভ কি সিক্সে পড়ার সময়কালীন তিনি বিশ্ব সাহিত্যের বই পড়া প্রতিযোগিতা নিয়া আমাদের ধানমন্ডি গভ. বয়েজ হাই স্কুলে আসিয়াছিলেন। তাহার দেয়া বক্তব্য ও অনুপ্রেরণাতেই আমার পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি বিশ্ব সাহিত্যের বিভিন্ন বই পড়ার অভ্যাস গড়িয়া উঠে। তাঁহার আলোকিত মানুষ চাই আন্দোলন ও গাড়িতে চলমান পাঠাগার প্রকল্পও সমাজের মানুষদিগের মাঝে পঠন পাঠনের অভ্যাস গড়িয়া তোলার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখিয়া চলিয়াছে। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর পায়ে হাঁটিয়া গ্রামে গ্রামে নারী শিক্ষা বিস্তারের প্রয়াস চালাইয়া ছিলেন বলিয়া শুনিয়াছি। এই সব গুনি মানুষ জন যুগে যুগে আমাদের পথ দেখাইতে আসেন আর কিছুকাল তাহাদের কৃত কর্মের উন্নয়নে আমরা উপকৃত হই। তাহার পর যেই সেই সব ভুলিয়া নিজ নিজ স্বার্থ ও ধান্দা লইয়া ব্যস্ত হইয়া পড়ি। বর্তমান বাঙ্গালী সমাজের সমৃদ্ধ জনগণের মাঝে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনার উদ্যোগ রচিত হউক ও চলতি ভাষার পাশাপাশি সাধু ভাষাতেও সাহিত্য রচনা যাহাতে অব্যাহত থাকে সেই দিকে তাহাদের সদয় দৃষ্টি নিবদ্ধ হউক এই প্রত্যাশা রাখিয়া, লেখাটি শেষ করিলাম।

এডিট ও আপডেট হিস্ট্রিঃ ২৯অক্টোবর২০২৩>

No comments:

Post a Comment