Friday, August 4, 2023

এক জন অতি সাধারণের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

 

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার কিছু কথা বলার আছে। আমি নিতান্তই রাজনীতি থেকে হাত পা ঝাড়া একজন মানুষ। আমার পরিবারের বয়স্ক কয়েকজন রাজনীতির প্রতি দলীয়ভাবে সামান্য যুক্ত হলেও আমি না ছাত্র জীবন না চাকুরী জীবন কখনই রাজনীতির সাথে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করি নাই। তাই রাজনৈতিক বিচারে আমি বকলমই বলা যায়। জীবনের শেষ চেপটারে পৌঁছে গেছি তাই আগামী নির্বাচনে একজন নিরপেক্ষ ফ্লোটিং ভোটার হিসেবে আমার মতামত গুলো হয়তো কোন কাজে আসলে আসতেও পারে। আমি যে চাকরী করি আর আমার যে সামাজিক অবস্থান তাতে কাউকে তেল মারা কিংবা তোয়াজ করার প্রয়োজন পরে না। নির্বাচন যত আগায়ে আসবে ততো রাজনৈতিক বলয় গুলো সক্রিয় হয়ে উঠবে। জাতির টারনিং পয়েন্ট বা এই সময় গুলোতে রাজনৈতিক ভাবে সচেতন ও সরব হয়ে উঠাটা আমি যৌক্তিক মনে করি। তারই ফল স্বরূপ আমি একটা পক্ষ নিচ্ছি। কয়েকটা লেখাও ব্লগে প্রকাশ করব আশা রাখি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সকলকেই তাই সরব ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাই।  ১৯৮৫ সাল থেকে আমি রাজনীতি ভাল ভাবে বুঝতে শুরু করি। এরশাদের পতন এর কয়েকদিন পর মানে ১৯৯০ সালের ১৫ ডিসেম্বর আমার বাবা মারা যান, তাই ওই সময়টা আমার স্পষ্ট মনে আছে। এরশাদের ৯ বছরের শাসনামলের পুরটাই আমি দেখেছি ও বাস্তবতা দিয়ে অনুভবও করেছি।  

আমি ছাত্র জীবনেও রাজনীতি করি নাই আর চাকুরী জীবনে কেউ বলতে পারবে না কোন দলের হয়ে কখন কাজ করেছি। এই আমি আজ বলছি ১৯৭৫ এর আগস্ট মাসে যা ঘটেছে তা নিঃসন্দেহে ন্যক্কার জনক ও দুঃখজনক ঘটনা। যে লোকটি নিরন্তর পরিশ্রম করে অবহেলিত এক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখল তাকে স্বাধীনতার কয়েক বছরের মধ্যে সপরিবারে খুন করে ফেলার কথা চিন্তা করাও পাপ। কোন অশুভ চিন্তার ফলে কিছু উচ্চাভিলাষী সৈনিক এই কাজটি করেছিল তা আমার বোধগম্য তো নয়ই তার উপর এ জাতি তখন কেন এর প্রবল প্রতিবাদ করেনি তাও আমার কাছে রহস্যময়। তাই বলছিলাম এই জাতির নিতীবোধের অভাব আছে তা এই ঘটনা থেকেই বুঝা যায়। সবাই বলছে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি জিতবে, তাই যদি হয় আর তারা যদি তারেক রহমানকে ক্ষমতায় বসায় তা হলে এদেশের সর্বনাশের শেষ দেখে যেতে হবে শেষ জীবনে। আমরা কি রাজকীয় গণতন্ত্রের বা পরিবার তন্ত্রের বাইরে এসে কিছু চিন্তা করতে পারি না? শিরিন আপার কাছে শুনেছি মাসরুর আরেফিনের “আগস্ট আবছায়া”লেখাটি অত্যন্ত ভাল যাতে এই আগস্টের ট্র্যাজেডিটা সুন্দর ভাবে লিখেছেন। এখনও পড়া হয় নাই। ভাবছি বইটা কিনে পড়বো।

০৩ আগস্ট ২০২৩ তারিখে উপরের মন্তব্য ফেইসবুকে পোষ্ট করার পর আমার একজন প্রিয় কলিগ আহসান আল আলভি আমাকে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানায় তার সাথে মেসেঞ্জারে কথোপকথনের মধ্য দিয়ে বেশ কিছু কথা উঠে আসে। যা এই লেখার অংশ করা হলো। উনাকে বলছিলাম, এখন মনে হয় আমি রাজনৈতিক ভাবে একটা পক্ষ নিচ্ছি। আমার মামা তিন জন তারা বিএনপির পক্ষে আর জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর খবর শুনে আমার বাবার চোখে পানি দেখেছিলাম সেই ছোট বেলায় যখন লিবিয়ার তবরুখে ছিলাম। কিন্তু আজ যখন আমার বয়স ৫০ তখন আমার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান দিয়ে বুঝতে পারছি করা ভাল দেশের জন্য আর কারা ভাল না। তাই একটা পক্ষ নিচ্ছি।

আমার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিটা একটু বলে রাখি। আমি ১৯৮৫ থেকে রাজনীতি বুঝতে ও দেখতে শুরু করি, মানে এরশাদের আমল থেকে রাজনীতির বাস্তব স্মৃতি আছে আমার মনে। তাই তখন থেকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন গুলো ধারাবাহিক তুলনা করতে পারি আমি। এর পূর্বের ঘটনা গুল বাবা-মা আর বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে শুনা বা বই ও পত্রিকা পড়ে জানা। শহীদ সহরোয়ারদী, মওলানা ভাসনী আর শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেবরা যখন তাদের কর্মকালের শেষের দিকে তখন শেখ মুজিবর রহমান আওয়ামী মুসলিম লীগের ফ্রন্ট লাইনে চলে আসেন আর তার জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পেতে থকে। তিনিই মূলত বাংলাদেশের স্বপ্ন দ্রষ্টা। এর পর ৬ দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৫২র ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান ও ৭১ এর স্বাধীনতা পার করে যখন সে দেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখন তিনি জাতীর মৌলিক গঠনতন্ত্রর দিকে বেশী মনোযোগী হওয়াতে দেশ পরিচালনায় পরদর্শিতা দেখাতে পারেন নি বলে আমার ধারনা। যার ফলে তার কিছু সহযোগী ক্ষমতার অপব্যবহার করে শেখ মুজিবের দুর্নাম করে ফেলেন। ১৯৭৫ এর সময় যাদের নামের আগে শেখ ছিল তারা তা বলতে লজ্জা পেত বলে শুনেছি। শেখ পরিবারের সদস্যদের কিছু দুর্নীতি ও প্রভাবের অপ ব্যবহার সবার নজরে চলে আসে। তাই যখন কিছু বামপন্থী সৈনিক তাকে সপরিবারে নিহত করে মোস্তাক নামক নব্য মীরজাফরের প্ররোচনায় তখন দেশের তরুণ ও মধ্য বয়স্ক জনগোষ্ঠী ভিতরে ভিতরে সন্তুষ্ট হয়েছিল বলে বাবার কাছে শুনেছি। এর পর কয়েকটা ঘটনার পর মেজর জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আরোহণ গোপালের ক্ষমতায় আরোহণের মত ঘটনা বলে মনে হয়েছে আমার কাছে।

মেজর জিয়া ক্ষমতায় আসার পর যে সিদ্ধান্ত গুলো নিয়েছিলেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। তার খাল খনন কর্মসূচি আর মধ্যপ্রাচ্যে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি সবার মাঝে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। মেজর জিয়ায় ক্ষমতায় আসাটা কাকতালীয় নয়। রাজনৈতিক প্রেসার গ্রুপ গুলো, মূলত আইএসআই আর ইন্ডিয়ার “র” (রিসার্চ এন্ড এনালিসিস উইং) এর মাঝের দ্বন্দ্বে মেজর জিয়া ফ্রন্ট লাইনে চলে আসেন। আর বামপন্থী কর্নেল তাহের তাকে উপরে তুলে ধরে, এই মনে করে যে সে ক্ষমতায় গেলে বামপন্থীদের উপকার হবে। আর যেই কর্নেল তাহের মেজর জিয়াকে সামনে নিয়ে আসল, মেজর জিয়া কিনা তাকেই কোর্ট মার্শাল করে মৃত্যু দণ্ডর ব্যবস্থা করেছিলেন। এটা নিঃসন্ধেহে বলা যায় শেখ মুজিবের পর মেজর জিয়ার জনপ্রিয়তা ছিল অতুলনীয়, বিশেষ করে তার স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রর কারণে। তাই তার জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও ছিল যথেষ্ট। শেখ মুজিবের অবর্তমানে তার জনপ্রিয়তা তখন সর্বোচ্চ ছিল বলা যায়। আহসান আল আলভীর মন্তব্য ”এখানে আমার একটা পলিটিকাল ভিউ আছে, সেটা হলো স্বাধীনতার পর রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যর্থতা আর জাসদ এর বাড়াবাড়িই মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে আসে। জাসদ এর গণ বাহিনীকে রুখতে গিয়েই রক্ষী বাহিনীর জন্ম। সূত্র: জাসদের উত্থান পতন - সাংবাদিক মহিউদ্দিন, প্রথমা প্রকাশন”।

আমার বাবা মেজর জিয়াকে পছন্দ করতেন কারণ সে ছিল তরুণ বাঙ্গালীর প্রতীক, আধুনিক ও স্মার্ট তার পাশাপাশি মিডিল ইস্ট ঘুরে দেশের জন্য সে যে সুযোগ গুলো নিয়ে এসেছিলেন জনশক্তি রপ্তানির তা তরুণ বাঙ্গালীদের মনে দারুণ উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল। যার বদৌলতে আমার বাবা তার ভায়েরা ভাই যিনি আমার খালু ও সশুর তাকে ও বাবার ছোট বেলার প্রিয় বন্ধু খায়ের আংকেলকে মিডিল ইষ্টে চাকুরীতে পাঠাতে সক্ষম হন এবং তিনি নিজেও লিবিয়াতে চাকুরী নিয়ে চলে যান সপরিবারে। মেজর জিয়া তরুণ ছিলেন আর দেশকে ভাল বাসতেন তাতে কোন সন্দেহ নাই কিন্তু তাকেও আততায়ীর হাতে মরতে হয়েছে বহিঃ শত্রু কিংবা আভ্যন্তরীণ কোন গুপ্ত শত্রুর হাতে। আহসান আল আলভি বললো “জিয়াউর রহমানের আমলে অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছিল এ কথা সত্য। তবে তাকে ক্ষমতা চুত করার জন্য অনেক গুলো ক্যু হয়েছিল। সেনাবাহিনীতে কু এর সাজা হলো মৃত্যুদণ্ড। এই কারণেই অনেকেরই ক্ষোভ ছিল তার উপর । আর এটাকেই কাজে লাগিয়েছিল একটি ক্ষমতা লোভী চক্র।” আলভী আরো বলেছিল ”অনেক ধন্যবাদ ভাই। আমি যৌক্তিক আলোচনা খুব পছন্দ করি। আপনিও করেন জেনে খুশি হলাম। গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী মত থাকবে কিন্তু আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পরস্পরিক মত বিনিময় হবে, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকবে এটাই স্বাভাবিক।”

মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের পর মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ মনে হয় জাতিগত ভাবে তৃতীয় জনপ্রিয়তায় ব্যক্তি ছিলেন কিন্তু তাকে তো মেরে ফেলা হলো। আমরা তাকে অকালে হারিয়েছি আর তিনি বেচে থাকলে আমাদের রাজনীতি মনে হয় আর অন্য রকম হতো। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল ওসমানীকেও রাজনীতিতে তেমন একটা সক্রিয় হতে দেখা যায়নি আর পাকিস্তানী বাহিনী ইন্ডিয়ান বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের সময় জেনারেল ওসমানীর উপস্থিত না থাকাটা আমার মনে কষ্ট দেয়। মনে হয় সেই কষ্টেই উনিও আর রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয় হন নি বা তাকে সক্রিয় হতে দেয়া হয়নি। এর পর এরশাদ ক্ষমতয় আসে প্রায় মেজর জিয়ার মত একই রকম পথ ধরে। এরশাদ পাকিস্তানে ছিল যুদ্ধের সময়। বাংলাদেশের আর্মিতে দুটো দলীয়করণ হয়ে গিয়েছিল বলে শুনেছি। একটা যারা যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানে ছিলেন আর যারা এপারে ছিলেন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। যা হোক, এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর নয় বছর ক্ষমতায় টিকে থাকেন। ওই সময়টা থেকেই আমার রাজনীতি বুঝা শুরু। লেফটেনেন্ট জেনারেল হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ – চিফ মার্শাল ল এ্যাডমিনিট্রেটর এর সময় ফার্মগেট থেকে মিরপুর ১০ পর্যন্ত সোজা রাস্তাটা নির্মিত হয়। ৮৮’র বন্যার পর ঢাকা শহর রক্ষা বাধ দেয়া হয়। গুচ্ছ গ্রামের প্রচলন করেন তিনি। কবিতাও লেখেন যা টিভিতে প্রচার করা হতো। পথ শিশুদের তিনি পথ কলি নাম দেন। তাকে পল্লি বন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তখন টিভিতে আইন আদালত নামে একটা অনুষ্ঠান হতো তাতে কোথায় কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে তা তুলে ধরা হতো। এখনকার ক্রাইম পেট্রলের মত। এরশাদ যখন রাস্তা দিয়ে যেত তখন তার গাড়ি বহরের  সামনে ৬ জোড়া আর পিছনে ৬ জোড়া সুদৃশ্য পুলিশ মোটার সাইকেল থাকতো তাতে এক এলাহি কাণ্ড হতো, যা দেখার মতো ছিল।

এরশাদকে বাধ্য করা হয় তার মার্শাল ল থেকে সরে যেতে তা ১৯৯০ এর ডিসেম্বর মাসেই। ভাল সিদ্ধান্তই নিয়েছিল পদত্যাগ করে না হলে আগের দুই জনের মত তাকেও হয়তো আততায়ীর হাতে প্রাণ দিতে হতো। সে যে দল গঠন করেছে লাঙ্গল প্রতিকে তার আজকে ত্রিভঙ্গ অবস্থা। ক্ষমতা ছাড়ার পর এরশাদের চারিত্রিক অধঃপতিত অবস্থার গল্প গুলো তা তার দলের নেতাদের মধ্যেও স্বাভাবিক ভাবেই দেখা যায়। এরশাদ আর তার ছোট ভাই আর রওশন এরশাদের জাতীয় পারটি নিয়ে খুব একটা আশা করার কিছু নাই। সুবিধাবাদী দল হিসেবেই তা বহুল পরিচিতি ইতিমধ্যেই অর্জন করে বসে আছে। এরশাদের পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিএনপি এবং আওয়ামে লিগের ক্ষমতায় দেশটা চলেছে পর পর বেশ কয়েকবার। ওরকম সময় মনে হতো যেন নিরবাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই আমাদের দেশের জন্য ভালো। কিন্তু মঈন ইউ আহমেদ যে তামাসা দেখাল আর মাইনাস টু ফরমুলা বাস্তবায়ন করতে চাইল সেই সময়টা মনে হয় বাংলাদেশের জন্য একটা সংকট কাল ছিল। অবশেষে মঈন ইউ আহমেদের পলায়ন ও আওয়ামে লীগের ক্ষমতায় আসা, যা পর পর দুই টার্ম চলছে। তুলনামূলক বিচারে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যবস্থাপনায় নির্বাচিত বিএনপির দ্বিতীয় টার্মে তারেক জিয়া আর বাবর এর কর্মকাণ্ডগুলো এদেশের লোকজন ভুলে গেছে বলে আমার মনে হয় না। সব থেকে অযোগ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ছিল বাবর। সে প্রথমে এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ মাহমুদের পিছন পিছন থেকে ভাব সাব বুঝে নেয়। হয়তো আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ছিল দলিয় ভাবে যে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব দেয়া হবে। যখন আলতাফ মাহমুদ সরে যান তাকে গদিতে বাসয়ে দিয়ে তখন বুঝা গিয়েছিল বাবর কি জিনিস। সংবাদিকদের বলা তার জনপ্রিয় ডায়ালগ “উই আর ইন সার্চ অফ শত্রু” অনেকেই কৌতুকের পাঞ্চ লাইন হিসেবে ব্যবহার করে। যখন বিরোধী দল কোন ইস্যুতে প্রতিবাদের ডাক দিচ্ছে তখন তারেক জিয়া তার দলের রাজনিতিকদের নিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের আয়োজন করে বুঝাতে চাচ্ছে যে তোমাদের প্রতিবাদের আমরা থোরাই কেয়ার করি। বিশেষ করে তারেক জিয়া আর বাবরের কর্ম কান্ডগুলোই মনে নানা অশুভ প্রতিক্রিয়া করে।

বিএনপির এক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী যাকে প্রেসিডেন্ট করা হয়েছিল, তিনি রিকশাওয়ালাদের আপনি করে সম্বোধন করতে বলেছিলেন জনগণকে। উনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আমার মা তার কাছে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন, মা বলেছেন আমাকে। উনাকে বিএনপি থেকে সরায়ে দেয়া হলো যাতে উনার ছেলে মাহি বি চৌধুরী তারেক রহমানের জনপ্রিয়তাকে অতিক্রম করতে না পারে। এই কারণটা অবশ্য আমার ব্যক্তিগত ধারনা। ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিকল্প ধারা নামে আরেকটি দল গঠনের চেষ্টা করেন কিন্তু তা দেশের আপামর জনগণের উপর তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পেরেছে বলে আমার মনে হয় না। উনার প্রচেষ্টাটা ডা. কামাল এর গণ ফোরাম করার মত আরেকটা ঘটনা বলা যায়। বিএনপি থেকে সরে গেলেন নাজমুল হুদা, উনিও যথেষ্ট প্রভাবশালী লোক ছিলেন। বিএনপি আমলে জামাতের দুই নেতাকে দুই মন্ত্রণালয় দেয়া হয়েছিল এবং তারা দুর্নীতি না করে তা দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেছেন। কিন্তু এই দুই নেতা মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ছিলেন যাদের পরবর্তীতে বিচারে ফাঁসি দেয়া হয়। বিএনপি জামাতের উপর ভর করে চলছিল শেষ দিকটায় আওয়ামে লীগের এরকম দাবি আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যখন আওয়ামে লীগ ক্ষমতায় আসার পর জামাতকে দুর্বল করে দেওয়াতে বিএনপির অবস্থার দ্রুত অবনতি দেখতে পাই। বিএনপির সময়কালে ধর্মীয় রাজনৈতিক ছোট খাট দলগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল যা আওয়ামে লীগ সরকার এসে নির্মূল করে। এগুলো আমার নিজের চোখে দেখা বাস্তবতা, যা আমি বুঝেছি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। বর্তমানে বিএনপির যে নেতাদের ফ্রন্ট লাইনে দেখা যায় তারা নিবেদিত প্রাণ সন্দেহ নাই কিন্তু এত বড় একটা দেশের সব গুলো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার মত যথেষ্ট দক্ষ লোক তাদের আছে কি না তাতে আমার সন্দেহ আছে। নাকি আবার বাবরের মত অদক্ষ কাউকে হুট করে কোন গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসায়ে দেশের সর্বনাশ করবে তা কে জানে।  

আওয়ামে লিগের এই টার্মের অনেক এচিভমেন্ট এর সুফল পাওয়ার পরও যদি এদেশের জনগণ তাদেরকে পুনর্বার ক্ষমতায় না বসায় তা হলে বুঝতে হবে এই জাতির ব্যক্তিবর্গের মধ্যে মারাত্মক কোন মানসিক রোগ রয়েছে। যখন কারেন্ট যায় না, কই তখন তো কাউকে উচ্চ স্বরে উল্লাস করতে দেখি না। লোড শেডিং হলেই যত হই চই শুরু হয় আর একে ওকে দোষারোপ করা চলে। এখনও তো বর্ষা কালে বৃষ্টি হচ্ছে আর শরৎ কালে কাশ ফুল ফুটছে, কয়েকদিন এদিক ওদিক হলেই লোকজন বলা শুরু করে আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে। প্রকৃতির ঠেকা পরেছে যেন কেলেন্ডারের পাতা ধরে চলবে। সাধারণ জনমতের উপর আমার আস্থা উঠে গেছে। এ দেশটাকে সাধারণ জনমতের উপর ছেরে দিলে দেশটার যাচ্ছে তাই অবস্থা করে ছাড়বে। আমাদের ভাগ্যে কি যে আছে কে জানে। বিবেচনার ক্ষেত্রে এত অবিচার করলে তাদের কাছ থেকে সুবিচার কি ভাবে আশা করা যায় আমি বুঝি না। তবে আওয়ামে লীগ সরকার যে চেষ্টা করছে তা বুঝা যায়। আমার মতে এ পর্যন্ত যা দেখলাম বাজার দর উঠা নামা করলেও মানুষের ক্রয় সীমার মধ্যেই ছিল। হ্যাঁ কার কার কষ্ট গেছে কিন্তু উঠা নামা করলেও একটা ভারসাম্যে চলে আসছে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও উঠা নামা হয়েছে কিন্তু এখন ঠিক আছে। সব দিক মিলায়ে সব ভাল যার শেষ ভাল হলেই হয়।

এডিট ও আপডেট হিস্ট্রিঃ ২৮ জুন২০২৩> ১৫জুলাই২০২৩> ১৮জুলাই২০২৩> ০৫আগষ্ট২০২৩>

No comments:

Post a Comment