Saturday, June 24, 2023

উন্নয়ন কখনই তার বিকাশ বন্ধ করে না

 আজকের এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সময়েও অনেক যত্ন ও পরিশ্রম করে গড়া একটি চূড়ান্ত পণ্য বা বিষয় যাকে আপনি আজ নিখুঁত বলে মনে করছেন তা অচিরেই বা অতি দ্রুত অপ্রচলিত বা পুরাতন হয়ে যাচ্ছে। যদি আপনি তা অনুভব করতে না পারেন তা হলে বুঝতে হবে আপনার নিজের বিকাশই বন্ধ হয়ে গেছে। সমস্যা হল, এই অপ্রচলিত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বা এর আরো উন্নয়নকে অগ্রসরমানতা হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নাকি এটি একটি বৃত্তাকার পথে অন্ধভাবে ঘুরতে থাকা বা সর্পিলাকারে অবস্থার উত্তরণ বুঝাবে। আরেকটি সমস্যা হলো ঠিক কখন আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের আগের নিখুঁত পণ্যটি নতুনভাবে বিকশিত করা যেতে পারে। কে আমাদের এটা আপগ্রেড করতে বলে বা পথ দেখায়। ঠিক কি নিশ্চিত করে যে সময় এসেছে এটিকে আলাদা করার বা পুরাতন অবস্থা থেকে নতুন করে তুলে আনার।  

গত বছর আমি ভেবেছিলাম আমি যথার্থতার মানদণ্ডর উপর একটি বই লিখব, চিন্তাটি মাথায় এসেছিল কারণ আমি বুঝতে পারতাম যে লোকেরা তাদের আলোচনায় কিংবা বিচারের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি বিবেচনা করেন না। কোনটি যথার্থতার মানদণ্ডে উপযুক্ত এবং উপযুক্ত হওয়ার মানদণ্ডটি কি হওয়া উচিত তা কোন লেনদেন করার আগে বিচার করে নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। কোনো না কোনো ভাবে এই প্রাথমিক বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করা হয় এবং এটি সব ধরনের বিতর্কিত পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যায়। যদি এই বিচার মানদণ্ডের একটি নির্দিষ্টতা থাকত তবে কোন প্রকারের লেনদেনের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব কখনই সৃষ্টি হতে পারতো না। এখন আমি মনে করি এই যথার্থতার মানদণ্ড ফ্যাক্টরটি সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে একটি পরিবর্তনশীল বিষয় বা ভেরিয়েবল। সময়ের সাথে উপযুক্ততার এই ধারণাটি পরিবর্তিত হয় এবং এর পরিসীমা সময়ে সময়ে পৃথক হয়। প্রশ্ন হলো এই পরিবর্তনটি কিসের ভিত্তিতে হয়? বিকাশ নিজেই একটি শব্দ যা পরিবর্তনশীল বা প্রগতিশীল, এর কখনও শেষ নেই। যা বলা যায় তা হলো, আজকের উন্নয়ন একটি অতীত ঘটনা যখন আমরা অতীত থেকে আজকের ভবিষ্যতের দিকে ফিরে তাকাই। এখনকার বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে আমরা একই জিনিসটিকে এমন ভাবে সংস্কার করতে চাই যেন এটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে এটি আমরা আগে যেটি বিবেচনা করেছিলাম তার চেয়ে একটি উন্নত রূপে পরিবর্তিত হয়। সোশিয়ালিস্ট ব্লক থিংক ট্যাঙ্কগুলি আপনাকে বলবে যে এটি খুবই স্বাভাবিক এবং তারা এই ঘটনাটিকে উপরের দিকে ক্রমবর্ধমান একটি সর্পিল সিঁড়ি কেস বলে। এবং আপনাকে আরও স্পষ্টভাবে বলতে এবং আপনি যদি পুরো সিঁড়ির কেসটি দেখেন তবে আপনি দেখতে পাবেন যে এটি নিজেই স্বয়ংক্রিয় ভাবে সঞ্চালিত হচ্ছে এবং সর্পিল বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি এই অত্যন্ত আত্মকেন্দ্রিক মানব সভ্যতার জন্য একটি গোলকধাঁধা তৈরি করেছে। তারা এটাকে বলে পরিমাণগত পরিবর্তন গুনগত রূপান্তর ঘটায় আর তার পর হয় নেগেশন অব নেগেশন বা প্রতিষেধের প্রতিষেধ। প্রকৃতির অন্যান্য আন্তলীন বৈশিষ্ট্যের মত এটাও আরেকটি বৈশিষ্ট্য  বলে তারা মনে করে।

আমার আগের লেখাতেও উল্লেখ করেছি, “কোন কিছুর মূল্য নাই যতক্ষণ না আমরা তাতে মূল্য আরোপ করি”। এতদিন ভাবতাম এই বচনটি আমার একার উদ্ভাবিত একটি ধারনা যা আমি আমার নিজের চিন্তা ভাবনা দিয়ে বুঝতে পেরেছি। কিন্তু গতকাল বারট্রান্ড রাসেলের লেকচার বই “আমি কেন ধর্ম বিশ্বাসী নই” এর ৬৮ পৃষ্ঠায় ঠিক এই কথাটাই পড়ে আমি অবাক হলাম, তিনিও ঠিক একই কথা বলে গেছেন, তাও আবার ৬০ কি ৭০ বছর আগে। আর যাই হোক আমার অনুধাবনটি ভুল নয়, অন্তত তা প্রমাণ হলো। তিনি বলেছেন “মূল্যের জগতে প্রকৃতি নিজেই নিরপেক্ষ। সে ভালও নয়, খারাপও নয়, সে প্রশংসারও যোগ্য নয়, নিন্দারও যোগ্য নয়। আমরাই মূল্য সৃষ্টি করি এবং সেই ধরণের আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি করি যা মূল্য প্রদান করে থাকে। এই রাজত্বে আমরা রাজা এবং আমরা তখন আমাদের রাজত্বকে নিকৃষ্ট করে তুলি যখন আমরা প্রকৃতির কাছে অবনত হই। আমাদের জন্যই মঙ্গলময় জীবনকে নির্ধারণ করতে হবে, প্রকৃতির জন্য নয় – এমনকি সেই প্রকৃতির জন্যও নয় যাকে আমরা ঈশ্বরে পরিণত করেছি।“ আমার ও তার দুই বক্তব্যই প্রমাণ করে যে, বস্তুর নিজস্ব কোন মূল্য নেই যতক্ষণ না আমরা তাকে মূল্যায়িত করি। উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান বিকাশ যা এখনকার প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে আরো উন্নয়নের অবকাশ রাখে তা মূলত মানুষের বা সম্মিলিত মানুষের চিন্তা ভাবনার ফলশ্রুতি মাত্র। সামাজিক কনসেনসাস যাকে বলা হয় অর্থাৎ সমষ্টিগত মানুষের চিন্তাভাবনার ঐক্যমত্য। অনেকেই এই ঐকমত ধরতে পারে না আর তার অনুবর্তী হয়ে যান। এই ঐক্যমত্যে তারও যে মতামত দেয়ার অধিকার আছে তা সে হয়ত জানে না কিংবা মনে করে এটা তার উপর আপতিত একটা মতামত যা সবার উপরই আপতিত হয়। জিনসের প্যান্ট যত বেশি ছিঁড়া পড়া যায় তত বেশি আধুনিক হয় এই অধঃপতিত জনমতটি যে হাস্যকর সে বিষয়ে আপনার হাসার অধিকার আছে, তা মনে হয়ে অনেকেই জানেন না।

প্রযুক্তিগত দ্রুত উন্নয়নের এই যুগে এই আপগ্রেড হওয়ার গতি অত্যন্ত বেশি তাই ধরা যাচ্ছে না এই নতুন নতুন পরিবর্তন গুলো কতটা আমাদের উপকারে আর কতটা অপকার করছে। একটা কথা বলে রাখি প্রযুক্তির উন্নয়ন সব সময়ই ভালর দিকে গেছে। আগুনের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা একটা প্রযুক্তিগত বিপ্লব, এই আগুন দিয়ে রান্নাবান্না থেকে তরবারি পর্যন্ত বানানো গেল আবার এই আগুন কিন্তু ভুল ভাবে ব্যবহার করলে তা মানুষকে পুরিয়ে মারার কাজেও ব্যবহার করা যায়। প্রযুক্তি সব সময় নিরপেক্ষ, মানুষ তাকে তার উপকারে এবং অপকারে দু ভাবেই ব্যবহার করতে পারে। পারমানবিক শক্তি দিয়ে বোমাও বানানো যায় আবার স্বল্প খরচে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। কোনটি করার সিদ্ধান্ত আপনি নিয়েছেন তার উপর প্রযুক্তির ব্যবহার নির্ভর করে। উন্নত প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই মানুষকে উন্নততর করে তোলে। ক্লোনিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আমার এক ছোট ভাই এক সেমিনারে যেখানে বলা হচ্ছিল ক্লোনিং ইসলামে নিষেধ, সে প্রশ্ন করছিল যদি পুর মানুষের ক্লোনিং না করে অঙ্গ, প্রত্যঙ্গর ক্লোনিং করা হয় তাতে তো মানুষের উপকার হবে, বিকলাঙ্গ মানুষগুলোকে অঙ্গ দেয়া যাবে। সেমিনারের বক্তারা এর উত্তর দিতে পারে নাই। তথ্য প্রযুক্তির যন্ত্রপাতির উন্নয়ন সব থেকে ভাল উদাহারণ উন্নয়ন কাকে বলে তা বুঝার জন্য। সেই মাত্রার বড় কম্পিউটার কিভাবে উন্নত হতে হতে হাতের মুঠায় চলে আসল তা বিচার করলেই এর দ্রুত ধাবমান উন্নয়ন চোখে পড়ে। মানব জাতি জন্ম থেকেই উন্নত হচ্ছে তার জ্ঞান বিজ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে। কম্পিউটারের উন্নয়ন আমার অভিজ্ঞতায় যেভাবে ধরা পরেছে তা অনেকটা এরকম মাইক্রোসফট অপারেটিং সিস্টেম ডস, - উইন্ডোজ 4.11 (যা ডস এ বুট হয়ে তার পর ওপেন হতো) - উইন্ডোজ ৯৫ - উইন্ডোজ ৯৮ উইন্ডোজ মিলিনিয়াম -
উইন্ডোজ এনটি - উইন্ডোজ ২০০৩ - উইন্ডোজ 7 - উইন্ডোজ ১০ - চলমান। আর মাইক্রোসফট অফিসের ক্ষেত্রে অফিস 97 - অফিস 98 - অফিস 2007 - অফিস 2010 - অফিস 2013 - অফিস 2016 - চলমান। আর ইন্টেল প্রসেসর 3086 - 4086 -পেন্টিয়াম -পেন্টিয়াম 1 (এমএমএক্স) - সেলেরন প্রসেসর - এএমডি প্রসেসর - ডুয়েল কোর প্রসেসর - কোর আই 3 - কোর আই ৭ - চলমান। উল্লেখিত প্রতিটি পরিবর্তনের সাথে আমাকে অভিযোজিত হতে হয়েছে। মানে হলো প্রতিটা ধামে কম্পিউটারে আগের গতি প্রকৃতি বদলে গেছে যাতে আগের স্টাইলে কাজ করলে আর চলে নাই। আমাকেও এই ধাপ গুলোর সাথে আপগ্রেড হতে হয়েছে। যারা বাটন মোবাইল থেকে টাচ মোবাইলে আরোহণ করেছেন তারা বুঝবেন আপগ্রেড হতে কিছুটা হলেও বেগ পেতে হয়। প্রথম প্রথম আন ইজি লাগে তার পর আর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে মন চায় না। নতুন অবস্থায় উত্তরণটা ততদিনে পছন্দ হয়ে গেছে। মিচিও কাকু যিনি হকিং মহোদয়ের মৃত্যুর পরে সব থেকে জনপ্রিয় পদার্থবিজ্ঞানী তার বই প্যরালাল ওয়ার্ল্ডস এর ২১৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কথা। এটা হলো পরবর্তী প্রজন্মের কম্পিউটার। বর্তমানের কম্পিউটার গুলো বিট ও বাইটে কাজ করে মানে হলো 0 বা 1 এই বাইনারি সিস্টেমে সে গণনা করে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার কিউবিটে (শূন্য থেকে ১ এর মাঝখানে যে কোন কিছু) নিয়ে কাজ করবে। যার ফলে সাধারণ কম্পিউটারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে  ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম কম্পিউটার। তবে তার জন্য হয়ত আমাদের কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হতে পারে। কারণ এই কম্পিউটার গুলো কোয়ান্টাম টেকনোলজির মাধ্যমে চলবে যা পদার্থবিদ্যার শেষ অধ্যায় এবং এখনও বিকাশমান। মিচিও কাকু লিখেছেন “যেমন একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ভিত নড়িয়ে দিতে পারে। বর্তমানে বড় ব্যাংক, বহুজাতিক কর্পোরেশন ও শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের গোপনীয়তা রাখে জটিল কম্পিউটার অ্যালগরিদম দিয়ে। অনেক গোপন কোডের ভিত্তি হলো বড় বড় সংখ্যার ফ্যাক্টর। ১০০ অংকের একটা সংখ্যা ফ্যাক্টর ভাংতে একটা সাধারণ কম্পিউটারের কয়েক শতাব্দী লাগতে পারে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কাছে তা জলভাত। এ রকম গণনা অনায়াসে করতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। এগুলো দিয়ে যে কোন দেশের গোপন কোড সহজেই ভাঙ্গা সম্ভব।” এর মানে হলো আমার নাতি যখন কম্পিউটিং করবে তখন তারা কোয়ান্টাম কম্পিউটারে কাজ করবে যার ক্ষমতা হবে বর্তমানের কম্পিউটারের চেয়ে কয়েক হাজার গুন বেশী। ১৯৯৮ এ কেনা আমার প্রথম কম্পিউটারের হার্ড ডিক্স ছিল ২ জিবি আর রেম ছিল ১৬ মেগা বাইট, প্রসেসর ছিল ইন্টেল ৫৫০ মেগাহার্টজ। আর আজকে এই কথা শুনলে সাধারণ লোকজনই হাসবেন। প্রথম পেন ড্রাইভ আমি যেটা হাতে পেয়েছিলাম তার স্টোরেজ কেপাসিটি ছিল 5 জিবি। মাত্র কয়েকদিন আগের কথা আর এখন এই সব কথা শুনলে নতুন প্রজন্ম অবাক হবে। একটা বিষয় লক্ষণীয় তা হলো বাচ্চারা মোবাইল ফোনের প্রতি অতি মাত্রায় আকৃষ্ট হয়, এটা সব বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সমান ভাবে দেখা যায়। এই তীব্র আকর্ষণ আর কিছুই নয় প্রযুক্তির প্রতি মানুষে বুদ্ধিবৃত্তিক টান যা তাকে বুঝায় যে এই জিনিসটা তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে মারাত্মক একটা কৌশল দিবার ক্ষমতা রাখে। 

ইউভাল নোয়া হারারী তার বই সেপিয়েন্স এর শেষের দিকের একটা অধ্যায়ের শিরোনাম রেখেছেন, আমরা কি হতে চেয়েছিলাম? আমরা মানে হলো এই হিউমেন রেইস বা মানব সভ্যতা। যাকে বারট্রান্ড রাসেল মঙ্গলময় জীবন বলেছেন আমরা তো সেই মঙ্গলময় জীবনই চেয়েছিলাম যা জ্ঞানের দ্বারা চালিত ও প্রেমের দ্বারা উজ্জীবিত। আমার মনে হয় আমরা প্রকৃতির সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সুস্থ সুন্দর জীবনের অধিকারী হতে চেয়েছিলাম ও এখনও চাচ্ছি। এর আরেক অর্থ করা যায় আমরা আরাম আয়েশের আর আলস্যের জীবন গঠন করতে চেয়েছিলাম। আজকের অধিক সম্পদে মানুষ হওয়া বড় লোকদের অতি আদরের নাদুস নুদুস ছেলে মেয়েদের দেখলে কথটার সত্যতা পাওয়া যাবে। নাৎসি বা জার্মান উগ্র জাতীয়তাবাদীদের একটা পোষ্টারে পাশাপাশি দুটো ছবি দেয়া ছিলো, যার একটাতে খেলোয়াড় সদ্রশ সুঠাম দেহী একজন মানুষ আর পাশেরটি স্থূলকায় গোবেচারা টাইপের মানুষ। জার্মানদের কাছে সুঠাম দেহী খেলোয়াড় সদ্রশ মানুষগুলো হলো উন্নত জার্মান জাতি আর পাশের স্থূলকায় গোবেচারারা হলো ইহুদিদের ক্রসব্রিড যার করানে তারা মনে করতো জার্মান জাতীকে শুদ্ধ করতে হলে ইহুদিদের মেরে ফেলতে হবে। পৃথিবীর শুভ চিন্তার মানুষের বিজয় হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যার ফলে আমরা সকল প্রজাতির মানুষ স্বাধীন ভাবে বেচে আছি। হিটলার জয়ী হলে উন্নত মানুষের  পৃথিবী বানানোর নামে না জানি আরো কত লক্ষ কোটি মানুষকে গ্যাস চেম্বারে মেরে ফেলার ব্যবস্থা করতো।

আমার উপর্যুক্ত শিরোনামে লেখাটার উদ্দেশ্য ছিল এটা বুঝে দেখা, আমরা কেন ক্রমাগত উন্নয়নের কথা বলি এবং এর শেষ কোথায়। না কি এর কোন শেষ নাই, এটা ক্রমাগত উন্নতই হতে থাকে। এটা বুঝে দেখা যে, উন্নয়ন মানে কি আমাদের সম্মিলিত জনমতের ক্রমাগত উন্নত হওয়ার বাসনা নাকি ব্যক্তিগত উন্নয়ন এর ধারনা এর মূলে কাজ করে। আমার যা মনে হয় তা হলো মানুষের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে তত তার বৈষয়িক ভাবনার পরিবর্তন আসছে। সে আরো উন্নত জীবন যাপনের পথে অগ্রসর হচ্ছে। আগে ছিল লেপা মাটির ঘরের ফ্লোর, তার পর আসল কনক্রিটের ফ্লোর, তারপর মোজাইক আর এখন টাইলস না হলে চলেই না। এটাকে প্রযুক্তিগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন বলাই সঠিক হবে। চারপাশের সোশ্যাল এস্কেলেশনের কারণে বাবার বানান শ্যাওড়াপাড়ার ৪ তলা বাড়িটা প্রাচীন কালের গুহার মত হয়ে গিয়েছিল, চারপাশের উঁচু উঁচু বিল্ডিং এর কারণে আকাশ তো দেখা যেতই না, কোন আলো বাতাসও আসতো না। বাধ্য হয়ে সিদ্ধেশ্বরীর একটা এপার্টমেন্টের অষ্টম তলায় বাসা ভাড়া নিয়ে চলে আসলাম। জন্ম আমার ওই এলাকাতেই আর ওই এলাকার ক্রমবর্ধমান উন্নয়নও আমর ছোট বেলা থেকেই দেখা। তাই আমার ছোট মেয়েকে খেলনা ড্রোন চালনায় পরদর্শী হতে বলছিলাম এই বলে যে, “দেখ এই যে এত ১৫ তলা ২০ তলা এপার্টমেন্ট গুল এখন দেখছো, এখানে এক সময় সব টিনের ঘর ছিল। তার পর হলো ৪ তলা কি ৫ তলা ভবন, সেগুলোও ভেঙ্গে এখন হচ্ছে এত উঁচু উঁচু বিল্ডিং এর আর কিছুকাল পর দেখতে পাবা এগুলোও ভেঙ্গে ৩০ তলা ৪০ তলা বিল্ডিং হবে আর তখন ফুড পান্ডারা ড্রোনে করে খাবার ডেলিভারি দিবে। তখন হয়ত ড্রোন ডেলিভারি রিসিভ করার জন্য ড্রোণ ভেন্ট এর ব্যবস্থা থাকবে ওই স্কাই স্ক্রেপার বিল্ডিং গুলোতে আর তখন তোমরা চাকুরী আবেদন সিভিতে ড্রোন নিয়ন্ত্রণ করার প্রদর্শিতর কথাও উল্লেখ করতে পারবা যা জব মার্কেটে গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হবে।” আমার কথা শুনে ও হেসেই অস্থির। বিশ্বাসই করতে চায় না। আমি বুঝাতে চেষ্টা করেছিলাম এটা দূরদৃষ্টিতা ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বুদ্ধিবৃত্তিক অনুমান কোন হাসির কথা নয়।

আপডেট ও এডিট হিস্ট্রিঃ- ৩১অক্টোঃ২০১৭> ২০ ডিসেম্বর ২০২০>  ১৫মে২০২৩> ২১ জুন ২০২৩ > ২৫জুন২০২৩ > ০৯জানুয়ারী২০২৪>
 

No comments:

Post a Comment