শত কোটি সংখ্যাটাকে অংকে না লিখে কথায় লিখলাম যাতে অন্তত ভয় না লাগে। অংকে লিখলে সংখ্যাটা বোধগম্যতা হারায়ে ফেলতো কিংবা কল্পনার সীমানা পেরিয়ে যেত। আজি হতে শত বর্ষ পরে কবিতা তো আমাদের সবার জানা কিন্তু কোন কবি মনে হয় শত কোটি বছর পরের কল্পনা করার সহসও দেখান নাই। শত কোটি বছর কেন? তা শুনেছিলাম বা কোথায় যেন পড়েছিলাম তিন শত কোটি বছর বিবর্তনের পর মানুষ তার আজকের অবস্থায় এসে পৌঁছেছে যখন সে যুক্তি তর্ক সাপেক্ষ চিন্তা করার ক্ষমতা অর্জন করতে সমর্থ হয়। প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নয়ন ইদানীং এত ত্বরান্বিত হয়েছে যে, আগামী কালই কোন নতুন প্রযুক্তি আমাদের জীনাচরণ আমূল বদলে দিবে কিনা তা বলা যায় না। তাই শত কোটি বছর পর এই মানব যা চিন্তা করতে পারে ও প্রকৃতির রহস্য বুঝতে পারে তারা কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা অনুমান করার চেষ্টাটা নেহায়েত কম কথা নয়।
বিবর্তন যে হচ্ছে তা আর নতুন করে যুক্তি তর্ক সম্পাদন করে বুঝার দরকার পরে না। এক করনা পেনডেমিক চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায়ে দিয়েছে বিবর্তন কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি। জেরি কয়েনের ব্লগ আর বই “কেন বিবর্তন বাদ সত্য” পড়লে বুঝা যায় যে বিবর্তন হচ্ছে বৃহৎ ক্যানভাসে যা ছোট সময়, মানে হলো হাজার বছর কিংবা ১০০ বা ২০০ বছরের ক্যামেরায় ধরা পড়বে না। বিবর্তন বুঝতে হলে আর বড় ওয়াইড এঙ্গেল লেন্সের কেমেরা লাগবে। যাতে শত কোটি কিংবা হাজার কোটি বছরের ব্যবধানে প্রজাতিগুলোর বিলুপ্তি কিংবা টিকে যাওয়া প্রজাতিগুলোর বিবর্তন ধরা পড়বে। তাই বিবর্তন হচ্ছে কি হচ্ছে না তা নিয়ে বিতর্ক কারা আজকের সময়ে অর্থহীন হয়ে গেছে। ছাত্র জীবনে আমি একবার অযথা এক মহা বিতর্কে আটকে গিয়েছিলাম জুনিয়র এক পরিচিতর সাথে। তার কথা হলো গাছের জীবন আছে তাই তার প্রাণ আছে আমি বলছিলাম গাছের জীবন আছে কিন্তু প্রাণ নাই। বিতর্কটা পরবর্তীতে আমি আবিষ্কার করেছিলাম ইংরেজি আর বাংলা পরিভাষা জনিত বিভ্রাট এর কারণে সৃষ্টি হয়েছিল। আমার কথা ছিল যেহেতু গাছকে প্রাণী বলা যায় না কারণ তার স্নায়ু তন্ত্র কিংবা মস্তিষ্ক নাই তাই তাকে প্রাণ থাকা সত্যেও প্রাণী বলা যাবে না। আর বিপক্ষের যুক্তি ছিল গাছের প্রাণ আছে তাই সেটাকে প্রাণী বলতে হবে। গাছের জীবন চক্র আছে কিন্তু সেটা প্রাণী ক্যাটাগরির মধ্যে পড়বে না কারণ তার নিজস্ব চিন্তা চেতনা নাই। Plant can’t be called animal as it do not have a nurves ststem but it has life cycle thus is a living element.। জীব-জীবন, প্রাণ –প্রাণী’র পরিভাষাগত এই বিতর্ক আমি বুঝতে পারছিলাম কিন্তু সেই নতুন পরিচিত জুনিয়র ব্যক্তিটিকে বুঝাতে পারছিলাম না। আমি যতই বলি সে ততই বিতর্ক করে। আমি পরে বিতর্ক পরিত্যাগ করে চলে আসি। বাসায় এসে আমি বুঝেছিলাম বিতর্কটি হতই না যদি ইংরেজিতে কথা গুলো বলা হতো। এটা ভাষা গত পরিভাষা জনিত একটি ভ্রম ছিল। বিবর্তনবাদ মানতে না চাওয়া লোকগুলো মূলত ধার্মিক তারা বিবর্তন মেনে নিলে তাদের ধর্মবোধে আঘাত লাগে। ধর্মে যে মন্ত্র বলা আছে মানব উৎপত্তি কোন প্রজাতি গত বাস্তবতা নয় বরং মানবকে স্বতন্ত্র আদলে সৃষ্টি করে সরাসরি পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে। এই মন্ত্র তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যদিও বাস্তব বহু প্রমাণ দেখা যায় বহু প্রাণীর সাথে আমাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যর সদৃশ। আমাদের দেহে ছাগল, গরু, ঘোড়ার মতই লোম হয়, পায়ে নখ হয় পাখিদের মত, আমরা গরুর মতই জাবর কাটাই (পেট থেকে বের করে আনা খাবার অবশ্যই নয়) পান খাওয়ার সময়। আমাদের লেজ না থাকলেও লেজরে হাড্ডি দিব্বি এখনও টিকে আছে। সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতেই আমাদের দুটি চোখ, একটা নাক, মাথায় চুল ইত্যাদি প্রচুর সাদৃশ্য বিদ্যমান তা সত্যেও কেন যে মানুষ মনে করে তাদের আলাদা ভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে তাই তো এক মহা বিশ্বয়। মানুষের নিজেকে বিরাজমান জগতে বিশেষ মনে করে গর্বিত হওয়ার জন্যই কি তাদের এই ভ্রান্ত চিন্তার প্রতি কনভিকশন বা বদ্ধমূল ধারণা? আমার অন্তত তাই মনে হয়েছে। ধর্ম সকল মানব সভ্যতার একটা নির্দিষ্ট সময় ব্যাপ্তিতে সকলের মাঝে বিস্তার লাভ করে, মোদ্দা কথা সবগুলোর ভাবসম্প্রসারণ প্রায় একই, একজন অতিপ্রাকৃত পরিকল্পনাকারীর ইচ্ছানুযায়ী বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডর সব কিছু সৃষ্টি ও পরিচালিত হচ্ছে। এরূপ ধর্ম বিশ্বাস অতি পূর্বের অনুন্নত মানব সম্প্রদায় সমূহের যজ্ঞ প্রক্রিয়ার পরবর্তী উন্নত রূপ। যজ্ঞে মানুষ কোন অতিপ্রাকৃত সত্তার কাছে প্রার্থনা করত না বরং প্রকৃতি জয় করার জন্য খাদ্যর যথার্থ সংস্থানে আপ্রাণ প্রচেষ্টার এক প্রকার রিহারসেল কিংবা জোটবদ্ধ অনুপ্রেরণা সৃষ্টির জন্য এরূপ যজ্ঞর নাচ গানের আয়োজন করা হতো। যা পরবর্তীতে যখন খাদ্য আহরণ প্রক্রিয়া তারা রপ্ত করল তখন পূর্ববর্তী শ্রেণীহীন সমাজ থেকে শ্রেণীযুক্ত সমাজের সৃষ্টি শুরু হলো। অন্যের উদ্বৃত্ত সম্পদ বিনা শ্রমে একদল লোক দখল করার কৌশল আবিষ্কার করল, সৃষ্টি হলো পুরহিত শ্রেণী আর সমাজপতিদের যারা সাধারণ শ্রমজীবী মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল হিসেবে তাদের ধর্মীয় ভয় ও নিয়ম মানার প্রতি সাধারণ লোকজনকে বিশ্বাস অর্জন করাতে সক্ষম হলো। আগে ছিল প্রকৃতির সাথে মানুষের সংগ্রাম, এর পর হলো মানুষের সাথে মানুষের সম্পদের বণ্টনের সংগ্রাম। এই প্রক্রিয়াও হঠাৎ করে হয় নাই বরং বছরের পর বছর (হাজার বছর ধরে নয় কোটি বছর ধরে) বিবর্তনের ফলে এরূপ শ্রেণীযুক্ত সমাজের সৃষ্টি হয়েছে। আজ সময় এসেছে বিষয়টার আপাদমস্তক পোস্টমর্টেমের। কারণ এই কোটি বছরের বিবর্তনের সমাপ্তি যুগ চলছে আর তা চলবেও কয়েক শত সহস্র (কোটি) বছর ধরে। তার পর বিবর্তিত নতুন সমাজ ব্যবস্থা আসবে। তারই সুর দেখা যায় এই নগর কেন্দ্রিক পূর্বতন সমাজের ব্যবস্থা থেকে ভিন্নতর এই সমাজের ভিন্ন কাঠামোতে। ধর্মীয় অনুশাসন গুলো টিকে আছে তবে তাতে যে ক্ষয় ধরেছে তা স্পষ্টই দেখতে পাওয়া যায়। যাদের সংস্কারমুক্ত মন আছে তারা তাদের তৃতীয় নয়ন দিয়ে তা ঠিকই দেখতে পায় বলে আমার ধারনা।
বিবর্তন সম্পর্কে বলতে গেলেই বেশ আগে, গত ১০ কি ১২ বছর আগে দেখা ইভোলিউশন মুভিটার কথা বার বার মনে পরে। গল্পটা ছিল এ রকম যে, কোন এক ভিন্ন গ্রহ থেকে এক খণ্ড উল্কা পিণ্ড আমেরিকার এক মরুভূমিতে এসে পড়ল। সেখানে যেয়ে দেখা গেল তা তেমন কোন পরিবর্তন করছে না কিন্তু কিছুদিন পরই দেখা গেলে নতুন ধরনের সব প্রাণী তাতে বা তা সংলগ্ন এলাকায় জন্ম নিচ্ছে। এ যেন এক নতুন পৃথিবী নতুন ভাবে সৃষ্টি হচ্ছে। খবর পেয়ে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ জায়গাটা সংরক্ষণ করে কিন্তু এক তরুণ বিজ্ঞানী ও তার সহকর্মীরা বিষটির কারণ খুঁজতে শুরু করে। তারা বুঝতে পারে এই নতুন প্রজাতিগুলো নাইট্রোজেন বেইজড, আমরা যেমন অক্সিজেন বেইজ্ড এরা তেমন নাইট্রোজেন বেইজ্ড। যার ফলে কর্তৃপক্ষ যেমন চাচ্ছে যে আর্মি দেয়ে গোলা মেরে এদের নিশ্চিহ্ন করে দিবে তার বদলে এই বিস্ফোরণ তাদের দৈহিক বৃদ্ধি আরো ত্বরান্বিত করবে। তাই তারা খুঁজে বের করে অক্সিজেন বেইজড আমরা যেমন আর্সেনিক এর দ্বারা বিষাক্ত হই তেমনি এই নাইট্রোজেন বেইজড নতুন প্রজাতি সিলিকন সালফাইড (যা হেড এন্ড শোলডার শ্যাম্পু তে প্রচুর পরিমাণে থাকে) তা দিয়ে এদের বিষাক্ত করে মেরে ফেলা যেতে পারার কথা। তাই তারা ওই শহরের সকল ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এর হেড এন্ড সোল্ডার শ্যাম্পু একটা ফায়ার ব্রিগেড এর পনির ট্যাংকারে ভরে ফেলে। ইতোমধ্যে ওই শহর ইভাকুয়েট করা বা খালি করা হয়ে গিয়েছিল যেহেতু আর্মি এই বিদঘুটে সৃষ্টি হওয়া উদ্ভট ক্ষুদ্র বিশ্বটাকে নিশ্চিহ্ন কারার পরিকল্পনা করেছে আর্মি’র ব্যবহৃত বোম্ব স্বোয়াড দ্বারা। যথা সময়ে দেখা গেল বিস্ফোরণের ফলে ওই এলাকাটা তে উদ্ভূত উদ্ভট প্রাণীকুল সমৃদ্ধ ক্ষুদ্র বিশ্বটা তো নিশ্চিহ্ন করা গেলই না বরং ফুলে ফেঁপে তা মহা এক আকার ধারণ করল আর সেই বৈজ্ঞানিক টিম ওই বিশাল জীবন্ত আকৃতিটার ভিতর সেলেনিয়াম সালফাইড স্প্রে করার ফলে তা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে বিলুপ্ত হলো। বিবর্তন নিয়ে করা এই মুভিটা বিবর্তন এর বিষয়ে মানুষের মনে যে সংশয় তা অনেকটাই নির্মূল করে দেয়। ছবিটা দেখা না থাকলে বিবর্তন বুঝতে আমারও বেশ বেগ পেতে হতো। বৃহৎ ক্যানভাসে বিবর্তন হচ্ছে আর এটা নিয়ে বেহুদা বিতর্ক করে আর লাভ নাই। একে বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে।
ধর্মীয় পুরহিতগন বিবর্তনে বিশ্বাসকে ভয় পায় এ জন্য যে, একে মেনে নিলে তাদের ধর্মর উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ ব্যহত হবে। অপর পক্ষে বিবর্তনকে ল্যাবরেটরিতে কিংবা সময়ের ক্ষুদ্র পরিসরে প্রমাণ করে দেখান সম্ভব নয়। ধর্মীয় পণ্ডিত গন আপনাকে কোন যুক্তি তর্ক ছাড়া ধর্মের সকল ব্যাখ্যা মেনে নিতে বলবেন আর আপনি তাতে প্রকাণ্ড এক সুখানুভূতি বা শান্তিময় অনুভূতিতে ডুবে যাবেন যার কারণ আপনি সব জেনে গেছেন। একাল – পরকাল, একাল ক্ষণিক পরকাল অনন্ত। পরকালের জন্য একালে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। কিংবা ধরুন বলা হচ্ছে, একালে সাধনার ফলে আপনি পরকালে নির্বাণ পেয়ে যাবেন তার পর সুখ দুঃখ বলে আর কিছুই আপনাকে বিব্রত করতে পারবে না। কিংবা ধরুন বলা হচ্ছে এ কালে ভাল কাজ করলে পরকালে আপনি উন্নত প্রাণী হিসেবে আবির্ভূত হবেন আর একালে খারাপ কাজ করলে পরবর্তী কালে আপনি ইতর প্রাণী হিসেবে জন্মাবেন। আপনার আত্মা অবিনশ্বর আর তা বার বার ফিরে আসে। এ সব মিথের কারণও আজকাল আমাদের জানা। মেক্সওয়েলের সূত্র আবিষ্কারের আগে বর্য বিদ্যুতের কারণ হিসেবে ভগবানদের মাঝে ঝগড়া আর তাদের তরবারি ঝংকারে বর্য বিদ্যুতের সৃষ্টি মনে করা হতো । ম্যালেরিয়া রোগ হলে খারাপ বাতাস লেগেছে বলে মনে করা হতো। এ সবই আজ প্রমাণ করে তৎকালের ধারনা গুলো ছিল কেবল নির্বুদ্ধিতা। অনেক জ্ঞানীগুণী জন ধর্মের কাছে আত্ম সমর্পণ করে এসেছেন এর কারণ ভাববাদকে ভাববাদ দিয়ে খণ্ডন করা যায় না। ভাববাদ থেকে বস্তুবাদে উত্তরণে বাস্তবতা সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের প্রয়োজন। মানব সভ্যতার খ্রীষ্টের জন্মের পর ২০২৩ বছর পার হয়েছে মাত্র আর তার আগের ১০০০ বছরের লিখিত ইতিহাস টেনে টুনে পাওয়া যায়। কিন্তু মানব ইতিহাস তো এত কম সময়ের না। বরং বৃহৎ ক্যানভাসটা অনেক বড়, শত কোটি বছর আগের ইতিহাস আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কিছু জীবাশ্ম থেকে যার ছিটা ফোটা আবিষ্কার করা যায় তাও যারা মুক্ত বুদ্ধি দেয়ে বিষয় গুলো বিচার করে থাকেন তাদের জন্য।
ধর্ম সকলের একটা প্রথাগত যুক্তি শৃঙ্খল আছে, যে কোন অবিশ্বাসীকে তারা এই যুক্তি টানেলে নিয়ে আসে। বিজ্ঞান বিশ্ব বাস্তবতার কারণ অনুসন্ধান করে একে বুঝতে চায় ও প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দৈনন্দিন অভাব পূরণের পথ আবিষ্কার করতে চায়। এ সব নিয়ম কোথা থেকে আসল, কেন প্রকৃতিটা এরকম, অন্য রকম হলো না কেন? এ সব কি অনন্ত কাল থেকেই এরকম না কি কোন এক অতিপ্রাকৃত সত্ত্বা এ সব পরিকল্পনা করে দিয়েছেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বিজ্ঞানের জানা নাই তার বিচার্য বিষয়ও নয়। আর ধর্ম পুরহিত গন বা যারা ধর্মের প্রতি অনুরাগী তারা এই জায়গায় আপনার সকল চিন্তাকে বা সর্বসাধারণের চিন্তাকে নিয়ে আসবেন। তার পর বলবেন যেহেতু আপনি বা কোন বিজ্ঞ বিজ্ঞানী এর কোন উত্তর দিতে অক্ষম তাই এটা মেনে নেয়া উচিত যে এই বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ড একা একাই চলছে না বরং কোন অতিপ্রাকৃত সত্ত্বার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও তার’ই ইচ্ছায় এগুলো অস্তিত্বশীল। অশিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত লোকজন এর বেশি ভাবতে অপারগ তাই তাদের জন্য আত্মসমর্পণ করা সহজ যখন বিনিময়ে নিশ্চিত ও নির্ভাবনার একটা ইহ লৌকিক জীবন পাওয়া যাবে আর পরলোকের অনন্ত সুখের নিশ্চয়তা তো রয়েছেই। কিন্তু যারা ক্রমাগত চিন্তাশীল তারা ভাবতেই থাকে আর সর্ব রোগের ঔষধ হিসেবে ধর্মের ব্যাখ্যাকে এত সহজে মেনে নিতে তারা প্রস্তুত নয়। এ সব কারণে অনেকের মধ্যে সৃষ্টি হয় ধর্ম-নিরপেক্ষ চিন্তাধারার যা এক পর্যায়ে নাস্তিকতায় পর্যবসিত হয়। কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক এক কথায় বলা অসম্ভব। কিন্তু মুক্ত চিন্তার দেশে মানুষের এই বিশ্বাস গুলো নিয়ে তাদের তিরস্কার করা ঠিক নয়। প্রত্যেকেরই চিন্তার স্বাধীনতা তার জন্মগত অধিকার আর নিজের জীবনের সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারও সবার সমান যেখানে অন্য কারো বাগড়া দেয়ার অধিকার নাই। আগে হিন্দুরা মুসলমানদের অচ্ছুত মনে করত। এমনকি কোন মুসলমানের খাওয়া প্লেট ধোয়ার লোকও পাওয়া যেত না হিন্দু বাড়িতে। মুসলমানদের বাড়িতে হিন্দুদের অবস্থানের প্রশ্নই আসতো না, তাদের জন্য দূরবর্তী বাড়িতে অবস্থানের ব্যবস্থা করা হতো। আজ সে সব কুসংস্কার ধীরে ধীরে বাতিল হয়ে যাচ্ছে। তার পরও দেখা যায় হিন্দুদের প্রদীপ জালন উৎসবে তাদের দরজার বাইরে প্রদীপ রাখায় আমার বাড্ডার বাড়ির অপর দিকে বসবাসরত মুসলিম মোল্লা পরিবার আমাকে ফোন করে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। এক ধর্মে গরু কোরবানি পুণ্যের কাজ আর এক ধর্মে গরুর মল মূত্রও পবিত্র মহার্ঘ। এত বৈপরীত্যই প্রমাণ করে এ সবই আসলে মিথ বা কল্পনা বিলাস। মিথ হলেও তা শক্তিশালী মিথ যা সমাজের শিকড় বাকড় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। কয়েক শত কোটি বছর অতিবাহিত হয়ে যাবে এসব উদ্ভট বিশ্বাসের মূল উৎপাটন করে আলডস হক্সলির ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ডে মানব সকলের পদার্পণে। তার পরও হয়তো কিছু লোক ধর্মের ধ্বজাধারী থেকেই যাবে। ধর্ম এতটা নিশ্চয়তার সাথে প্রশান্তি পাওয়ার একটা সুযোগ করে দেয় যা অন্য কোন বিদ্যার পক্ষে সম্ভব নয়। মন্ত্র-তন্ত্র-তাবিজে বিশ্বাসী লোক আজও আছে। শুধু মতিঝিলে নয় কুয়াকাটাতেও দেখলাম পোষ্টার লাগান আছে অমুক তান্ত্রিক কামরুক কামাক্ষা থেকে অলৌকিক তন্ত্র সাধনা করে এসেছে। যাদের দাম্পত্য কলহ, বউ বস মানে না, সন্তান হয় না, কেই বান মেরেছে, ভাগ্য খারাপ এদের চিকিৎসা দেবে তারা মন্ত্র পড়ে তাও আবার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গেরান্টি সহকারে। মন্ত্র-তন্ত্র-তাবিজের গ্রাহক এখনও যখন আছে তাতে মনে করা যায় আজ হতে শত কোটি বছর পরও এগুলো থাকবে তবে তখন তারা হয়ত অনলাইনে গ্রাহক সেবা প্রদান করবে।
আজ হতে ১০০ কোটি বছর পর তা হলে কি হতে পারে বলে আমরা অনুমান করতে পারি? আমার আপনার আয়ুষ্কাল বড়জোর আর ২০ থেকে ৩০টা বছর। তার পর আমাদের হাড্ডি মাংসও কেউ খুঁজে পাবে না। আমাদের সন্তানেরা আমাদের বিষয়ে চিন্তা করাও ভুলে যাবে। আমি আমার দাদাকে দেখি নাই, আমার জন্মের পূর্বেই তিনি গত হয়ে গেছেন। আমার ছেলেও তার দাদাকে দেখে নাই। আমার দাদার বাবার সম্পত্তি আমরা আপোষ বন্টননামা দলিল করে পেয়েছি। চাচাতো ভাই বোনেরা তাদের প্রাপ্ত সম্পত্তির অনেকাংশই বিক্রি করে দিয়েছে কিন্তু আমি ওই সম্পত্তির মূল্য বুঝি। হাজার চেষ্টা করেও ওই সম্পত্তি বিক্রির কথা মনে আসলে মন সায় দেয় না। আমার বাবা তার পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে কিছু না নিয়েই সকল সম্পত্তি নিজের মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে অর্জন করেছে আর আমি এক মাত্র সন্তান হওয়াতে সে গুলো তো পেয়েছিই উপরন্তু দাদা’র বাবার কেনা (উনার কেনা কিনা তা’ও জানি না, হতে পারে সেটা তাঁর দাদার বাবা’র কিনা) সম্পত্তি’র ও ভাগ পেয়েছি। কোন সাহসে আমি এ গুলো বিক্রির চিন্তা করতে পারি তা আমার মাথায় ঢুকে না। আমি ছিন্ন মূল নই, আমার একটা অতীত ঐতিহ্য আছে। আমার বাপ-চাচারা গ্রামে পড়ুয়া ও ভাল ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিল। ওই বাড়ির সব কটা ছেলে লেখাপড়া করে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত। এ সব কথা শুনলে আমার মন ভরে যায়। আর গ্রামের সাথে আমাদের সংযোগ তো ওই জমিগুলোই যেখানে আমার বাপ-চাচারা ও তাদের পিতা-মাতা দাদা-দাদি পদচারণা করে গেছেন। আজকালকার জেনারেশনে এ সব ইমোশন কে ফালতু ইমোশন (যত্তসব রাবিশ) বলে মনে করে। তারা যত দ্রুত সম্ভব এখানকার পাট চুকায়ে বিদেশেরে উন্নত প্রথম শ্রেণীর বিশ্বে জীবনকে স্থাপন করতে চায়। মানুষ কখন মাইগ্রেট করে? অন্য সকল প্রাণীকুলের মত যখন কোন স্থান বসবাসের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে যায় তখন কি তারা মাইগ্রেট করে? এদেশে তারা ভাল চাকুরী করা সত্যেও বিদেশে উন্নত জীবনের আশায় মাইগ্রেট করছে। এটাই মানব প্রকৃতি অবলিগ সকল প্রাণীকুলের সহজাত প্রবৃত্তি বলে মনে হয়। তাই বলছিলাম মানব সকল উরে এস জুরে বসা কোন অতিপ্রাকৃত উপাদান নয় বরং এই প্রকৃতি থেকে উদ্ভুত এক উন্নততর প্রজাতি মাত্র। এ বিষয়ে যারা বিতর্ক করতে চান তারা বিতর্ক করতে থাকুন আমার সামনে অগ্রসর হতে চাই। সময় নষ্ট করে লাভ কি, উনারা বিতর্ক শেষে যে সিদ্ধান্তে পৌছবেন ততক্ষণে আমরা ভবিষ্যতের আর খানিকটা অগ্রবর্তী পরিবর্তন সম্পর্কে ধারনায় উপনীত হতে পারব।
অতি পরবর্তী বিশ্বটা কেমন হতে পারে তা নিয়ে হলিউড মুভি স্টার ওয়ার্স সুন্দর সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছে। আমেরিকা বিশ্বের সকল অর্থনৈতিক সম্পদ মানব চক্ষুর অন্তরালে অত্যন্ত মহা কৌশলে অল্প অল্প করে আয়ত্ব করে তাই তাদের অর্থনীতি হৃষ্ট পুষ্ট আর এর অধিবাসীরা তাই সৌখিন চিন্তা করে প্রচুর পয়সা খরচ করে চমৎকার সব মুভি নির্মাণে সক্ষম। মুভিগুলো বলিউড মুভির মত কেবল প্রেম নির্ভর নয় তাই নতুন চিন্তার খোরাক সমৃদ্ধ হওয়ায় মানব চিন্তনে তা ভাল অবদান রেখে থাকে। স্টার ওয়ার্স কিংবা ম্যাট্রিক্স এর কথা বাদ দিলেও টম ক্রুজ অভিনীত মাইনরিটি রিপোর্ট, ওয়ার অফ ওয়ার্লডসও ভবিষ্যতের বাস্তবতার প্রকল্পিত কল্প দৃশ্য। অভতার মুভিটাও কোন অংশে কম যায় না। ও’রা এত বর্ণালী চিন্তার অবতারণা করতে পারে অথচ আমরা পারি না কেন? ও’রা উন্নত বিশ্ব আর আমরা অনুন্নত তাই কি? আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় আর ও’রা পিজা’র রকমারি ফ্লেভারে ভরপুর খেয়েও শেষ করতে পারে না তাই কি? আসলে আমাদের এই অনুন্নত দেশের মেধা সমৃদ্ধ সন্তানেরা ওদের দেশে যেয়ে বড় বড় আবিষ্কার করে ওদের জীবন যাত্রার মান বাড়িয়ে দেয় তা কি আমরা জানি না। অতি পরবর্তী ভবিষ্যৎ কি হতে পারে তাই ও’রা ভাল বলতে পারে আর আমরা নিরন্তর অন্ন সংস্থানে ব্যস্ত থাকি বলে ওসব নিয়ে চিন্তা করি না। এটা অবশ্যই বলা যায় যে, যে সব বড় বড় আবিষ্কার গুলো মানব সভ্যতার গতি পরিবর্তন করে দিয়েছে যেমন, পাথর যুগ, আগুনের নিয়ন্ত্রণ পরবর্তী লৌহ যুগ, ব্রোঞ্জ যুগ, সেমিকন্ডাক্টরের আবিষ্কার, গতির সূত্রাবলী আবিষ্কার, স্টিম ইঞ্জিন এর আবিষ্কার, দুরবিক্ষণ যন্ত্র, অণুবীক্ষণ যন্ত্র, ইলেকট্রিক বাল্ব, গাড়ি, উড়োজাহাজ, কম্পিউটার, ইন্টারনেট বেক বোন, ব্লক চেইন ইত্যাদি প্রযুক্তিগত আবিষ্কার ও স্থাপনা মানুষের জীবনধারার আমূল পরিবর্তন করেছে আর করেই চলেছে। যে হারে নতুন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আমরা এখন প্রত্যক্ষ করছি তাতে ভয় লাগে যে শত কোটি বছর নয় আর দ্রুত বিবর্তনের গতি আমরা দেখতে পাব। কিন্তু এত উন্নয়নের পরও জীবনের মৌলিক প্রশ্নগুলো থেকেই যাবে। আমারা কি হতে চাচ্ছি, কোথায় যেতে চাচ্ছি, এত সব এলো কোথা থেকে আর এর পরিসমাপ্তিই বা কি হতে পারে। ধর্ম রোগে আক্রান্ত মানুষেরা এর উত্তর দিতে এক পায়ে খাড়া তারা সর্ব রোগের ঔষধ হজম করে পরকালের অভিযাত্রী কিন্তু যারা জানে যে ধর্ম সকল এক মহা বিভ্রান্তির সমাধানে প্রণীত এক প্রকার মনগড়া ব্যবস্থাপত্র তারা জানে ইহকালেই সব পরিবর্তনের সম্মুখীন হতে হবে। হয় আমি না হয় আমার কোন দূরবর্তী বংশধর সেই বাস্তবতায় তখন চলমান থাকবে।
Edit and update history> ১৭মার্চ২০২৩> ২০মার্চ ২০২৩> ২৩মার্চ২০২৩>
No comments:
Post a Comment