আমরা একমত হই বা না হই, বাস্তবতা হল, প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায় থেকে মানুষের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধর্মনিরপেক্ষ জীবনধারার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। জ্ঞাতসারে বা অজান্তে, ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়। এই প্রবণতার পিছনে একটি সমাজতাত্ত্বিক কারণ তো অবশ্যই থাকতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার পিছনে সুবিধাজনক ধারণাটি হল, এটি বলে যে আপনাকে আপনার ধর্মীয় বিশ্বাসকে অস্বীকার বা পরিত্যাগ করতে হবে না, বরং এটিকে অন্যদের সাথে মিলায়ে নিতে হবে এবং এটার কঠোর বিধি নিষেধকে আপনার দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় বাধ্যতামূলক করার তেমন একটা দরকার হবে না, বিশেষ করে অর্থনৈতিক এবং সমাজতাত্ত্বিক ক্রিয়াকলাপের উপর এবং আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে। আপনার জীবনের অন্যান্য অসামান্য অর্জনের মতই একে উপভোগ করুন সময়ের সাথে এর সৌন্দর্যে অভিভূত হন। আপনার মর্যাদা বৃদ্ধিতে এটিকে ব্যবহার করুন কিন্তু সীমাহীন সুযোগের বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে নিজের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবেন না। এই ইস্যুতে অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব থাকতে পারে তবে একটি সাধারণ পর্যবেক্ষক হিসাবে, আমি খুঁজে দেখতে চাই এর পিছনের কারণ কি কি হতে পারে। আপনি যখনই কোনো মুসলমানকে ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন, তখন তারা বলবেন, ওহ!, এটি বর্তমান বিশ্বে দ্রুত বর্ধনশীল, দ্রুত সম্প্রসারণশীল ধর্ম এবং যদিও পশ্চিমা বিশ্ব এই ধর্মের অপব্যাখ্যা করে এটিকে দুষ্ট সন্ত্রাসী প্রেরণার উৎস হিসাবে রঙ করার চেষ্টা করে। এটি বিশ্বের একমাত্র সত্য ধর্ম। কেউ কেউ হয়ত বলবে, দেখো, ১৪০০ বছর আগে পবিত্র কুরআনে প্রতিটি জ্ঞান এবং প্রতিটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং বিজ্ঞানীরা কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে তাদের আবিষ্কার গুলোর সূত্র খুঁজে পাচ্ছে। আবার কেউ কেউ আছে যারা বেশি ধার্মিক এবং স্বর্গীয় বই এবং ধর্মগ্রন্থের প্রতি তাদের অপ্রতিরোধ্য আবেগের কারণে তাদের বিচার অস্পষ্ট এবং পক্ষপাতদুষ্ট। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা একই রকম মোল্লা (মোল্লা শব্দটি সাধারণত চরমপন্থি এবং অন্ধ-ও-বদ্ধ মানসিকতার ধর্মীয় প্রচারকের নামকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়) এবং তারা মানুষকে বদ্ধ মানসিকতার দিকে ডাকবে যেখানে তাদের নির্ধারিত শাসনের বাইরে কাজ করা পাপ হবে, তারা একই রকম অন্ধকার যুগের পাদরি বা তাদের মনোভাব এমন এবং তারা তাদের নিজস্ব গোষ্ঠী তৈরি করার চেষ্টা করে। একজন শিক্ষিত ব্যক্তি, যে তার মনকে এমনভাবে সংস্কৃতিবান করেছেন যে সে যে কোনও সীমাবদ্ধতার বাইরে বাস্তবতাকে অন্বেষণ করতে পারে এবং অন্ধ বিশ্বাসকে এত সহজে মেনে নিতে পারে না। সে বুঝতে সক্ষম হবে যে এই লোকেরা কি প্রচার করছে। আধুনিক দিনের ব্যক্তিত্ব এমনভাবে বেড়ে ওঠে যে তারা বিভিন্ন ঐচ্ছিক বাস্তবতা অনুকরণ করার ক্ষমতা রাখে এবং ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে যে এটি মানবতা এবং ন্যায়বিচারকে সন্তুষ্ট করবে কিনা। মোল্লা এবং পাদ্রীরা তাদের সংজ্ঞা অনুসারে আপনাকে একটি বাক্সে রাখার চেষ্টা করবে তারপর তাকে স্বর্গে (বা নরকে) নিয়ে যাবে। এই ধরনের কঠোর প্রচারণা দেখে সাধারণ মানুষের মন পালানোর দরজা খুঁজছে এবং ডিফল্ট ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার (অবাধ এবং নিরপেক্ষ) মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। এটি প্রস্তাবিত আলোচনার প্রাথমিক যুক্তি, আলোচনার মূল ভিত্তি হবে ধর্মের চেয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত কিনা এবং যদি এটা একটা ভাল ধারণা হয় তবে করনীয়টা কি?
আমি কেন ধার্মিক হব না?
আমি নিজের সম্পর্কে বলতে পারি, আমি জীবন এবং এর উদ্দেশ্য সংক্রান্ত মৌলিক প্রশ্নগুলি খুঁজতে শুরু করি। মানব, জীবন এবং মহাবিশ্বের মূল প্রশ্নগুলি আমার ছোট বয়সে কেউ আমাকে চূড়ান্তভাবে বলে দেয়নি, যদিও অনেকেই এটি ব্যাখ্যা করেছেন তাদরে মত করে। তাদের ব্যাখ্যায়, আমি খুঁজে পেয়েছি যে এই ব্যাখ্যাগুলির চিন্তাভাবনার ধরণে কোথাও না কোথাও একটা ত্রুটি আছে। আমি তাই অন্য কোথাও এর উত্তর খুঁজতে শুরু করি এবং বেশ কয়েকটি বই পড়ে দেখি। এক পর্যায়ে আমি থামলাম এবং নিজেকে বললাম, কিছু মৌলিক প্রশ্ন ঠিক করি এবং লোকেদের তাদের উত্তর দিতে বলি। যদি তারা চূড়ান্তভাবে ঐ সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে তবে আমি তারা যা বলবে তা অনুসরণ করব। প্রশ্নের চতুর অংশটি ছিল, আমি সেই প্রশ্নের উত্তর এর প্যাটার্ন জানতাম। যে ব্যক্তি তাদের উত্তর দিতে পারে তাকে নির্দিষ্ট চিন্তাধারা থেকে রেখা আঁকতে হবে, তাকেও ব্যাখ্যা করতে হবে কেন এই প্রশ্নগুলি মানুষের মনে তৈরি হয়। আমার পরিচিত আত্মীয়-স্বজন ও শিক্ষকরা তাদের উত্তর দিতে পারেননি, আমার পরিচিত কোনো সুপরিচিত পণ্ডিতও পারেননি, আমি দুই বছর ধরে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে বিচলিত ছিলাম এবং আমাকে তা আর এগোতে দেয়নি। ২০০২ সালের কোন এক সময় আমার অফিস ডেস্কে 'অন্ধ বিশ্বাস না কি বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্বাস' (Blind Faith or Intellectual Belief) শিরোনামের একটি লিফলেট রেখে গিয়েছিলেন কেউ একজন। বাইরে থেকে ফিরে এসে আমি এটি দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম যে এই লিফলেটের পিছনে থাকা লোকেরা আমার মনের মধ্যে জ্বলন্ত প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারবে বলে মনে হয়। আমি সেই সেমিনারে অংশ নিতে গিয়েছিলাম কিন্তু সেমিনারের শেষ অবধি অপেক্ষা করিনি, বরং একটি নোট রেখে এসেছিলাম, “দয়া করে কাউকে পাঠান যাতে আমি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারি”। সেই সেমিনারে আধা ঘণ্টার মত থাকার পর আমি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম যে আমি যাদের এতদিন খুঁজছিলাম তাদের খুঁজে পেয়েছি। একজন লোক এলো এবং আমরা আলোচনা করলাম, আমি সেই প্রশ্নগুলো উল্লেখ করলাম এবং তিনি চিন্তা করার জন্য সময় নিলেন, পরের কয়েক সেশনে আমি অবাক হয়ে দেখলাম যে যদিও সে আমার প্রশ্ন গুলোর উত্তর সরাসরি দিতে পারেনি যেমনটা আমি ভেবেছিলাম কিন্তু তার কথাবার্তা আমার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে। যেখান থেকে আমি নিজেই প্রশ্নগুলোর ভালো উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম। আমি তাকে আরও জ্ঞানের পথপ্রদর্শক হিসাবে গ্রহণ করলাম। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘটে, তারা আপনাকে এক পয়েন্ট চুক্তিতে টেনে নেয়, তারপরে তারা আপনাকে যে কোনও ধরণের বোঝাপড়ার দিকে টানতে সক্ষম হয়ে যায়। আমি বলছি না যে এই ধরনের সমস্ত প্ররোচনা খারাপ উদ্দেশ্যের জন্য, যেমন আমার ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি আমার চিন্তাভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিলেন তিনি আমাকে সোজা পথেই টেনে নিয়েছিল, আমি একই মানসিকতার লোক খুঁজে পেয়ে খুশি হয়েছিলাম এবং এর পরে আমি অনেক কিছু শিখেছি। সেই ব্যক্তি থেকে একই মনের অন্যদের কাছে আমি তাদের বেশি ধার্মিক এবং উচ্চতর জ্ঞানের অধিকারী হিসেবে পেয়েছি। আমি তাদের সাথে বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণও করেছি যেমন, সেমিনার, টক শো এবং আলোচনা বৃত্তের আয়োজন করা। তারা ভাল এবং স্মার্ট ছিল। উচ্চতর জ্ঞানের আলোচনা বেশ কিছুদিন চলার পর এক সময় একের পর এক তাঁরা চলে গেলেন। আমাদের সকল সম্মিলিত প্রচেষ্টা ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে যেতে লাগলো। কখনও কখনও আমি এই সত্যটি দেখে অবাক হয়ে যাই যে এটি সর্বদা পিছনের লোকেরা বা আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে যে কোনও উদ্যোগের পিছনে একক ব্যক্তি যা এটিকে উজ্জ্বল করে রাখে যার অবর্তমানে তা নিস্তেজ হতে থাকে। মানুষের উদ্যমের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব তাই এত গুরুত্বপূর্ণ। ফুটবল খেলার টিমওয়ার্ক থেকে শুরু করে শিল্প প্রতিষ্ঠান বা ধর্মীয় প্রচার যা-ই করেন না কেন সব সময় পেছনে একজন প্রতিভাবান উজ্জ্বল মানুষ থাকা চাই। কোন কিছুই কাজ করে না, কোন কাগজ বা প্রচার পত্র কাজ করে না, কোন সাহিত্য কাজ করে না যদি না পিছনের ব্যক্তি এটির জন্য কথা বলে বা প্রক্রিয়াটির সাথে ব্যক্তিক ভাবে জড়িত না হয়। এই লোকদের চলে যাওয়ার পরে আমি দেখতে পেলাম, দুর্নীতি এসেছে, দ্বন্দ্ব এবং বিভিন্ন বিষয়ে উত্থাপিত বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি যা অন্যথায় বিরোধপূর্ণ ছিল না। আমি আবার আমার চিন্তা থামিয়ে দিলাম, যেহেতু আমি এখন আবার একা, আমি পুনরায় আমার নিজের অন্বেষণ এবং পরীক্ষা শুরু করলাম। সাধারণভাবে কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কি ঘটতে পারতো? এর মত হবেন না কি তার মত হবেন, তিনি তার সামনে বিভিন্ন মতামত উপস্থাপন করে অস্পষ্ট হয়ে উঠতেন এবং কোন উপায় না পেয়ে অবশেষে তিনি সম্পূর্ণ অন্ধত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করতেন এবং অন্য একজনকে অনুসরণ করতে শুরু করতেন যে নিজেকে সবকিছু ঠিকঠাক করার পথপ্রদর্শক বলে দাবি করে, বা যে সবকিছুর তত্ত্ব জানার দাবি করে। যেহেতু ব্যক্তিটি তাকে বিশ্বাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই তাকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে এবং তথাকথিত ধর্মীয় ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হয়। একজন চরম নাস্তিক বলতে পারেন যারা ধর্মীয় বিশ্বাসের কাছে বশ্যতা স্বীকার করেন তারা বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অক্ষম। তারা সহজলভ্য যে কোনো ধর্মে আত্মসমর্পণ করবেন। আত্মসমর্পণের পর একজন প্লাগ এন প্লে এর মত খুঁজে পাবে নিশ্চিত প্রশান্তি বা বাস্তবতার যন্ত্রণা থেকে পূর্ণ পলায়নের পথ। তখন আর তার হাতে কিছুই নেই, সবকিছুই ভাগ্য এবং নিয়তি। তিনি প্রদত্ত ব্যাখ্যার উপর নির্ভর করে চিন্তা করেন এবং নতুন অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে অস্বীকার করেন। তিনি ধার্মিক হওয়ার পথ বেছে নেন কারণ তিনি সত্য খুঁজে পেয়েছেন বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন।
ধর্মের ক্রমবর্ধমান সংজ্ঞার পরিবর্তন
আজকের জীবন ধর্মটি যেন সকল ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান। আমার মত একজন সহজ সরল মানুষ এমনটা বলেছেন জেনে অনেকেই হয়তো একমত হবেন না। যদি এটি কোন বিখ্যাত ব্যক্তির কাছ থেকে বলা হতো, তারা হয়ত দ্বিতীয়বার ভেবে দেখতেন। জ্ঞানের উদ্দেশ্য তার প্রজ্ঞাকে সংজ্ঞায়িত করে, আপনি যদি জ্ঞানের উদ্দেশ্যটি ভুলে যান তবে তা কেবল অকেজো তত্ত্বে পরিণত হবে। উদ্দেশ্য ছাড়া আপনি কেবল বিড়বিড় করতে পারেন এবং তা কিছুই প্রদান করবে না। ধর্মীয় চিন্তাভাবনা এমন একটি শব্দ যা আমরা আজ ব্যবহার করছি কিন্তু সেই দিনগুলির কথা চিন্তা করুন যখন লোকেরা তাদের চিন্তাভাবনাগুলিকে কাগজে বা পাথরের উপরে বা গুহার দেয়াল চিত্রগুলিতে সংরক্ষণ করতে শুরু করেছিল। এই ঘূর্ণায়মান বাস্তবতার বস্তুনিষ্ঠতা এবং উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা তাদের জন্য একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর সাথে সম্পর্কিত চিন্তাগুলিকে তখনকার দিনে হয়ত কেউ দর্শন হিসাবে অভিহিত করেছিলেন, কেউ কেউ হয়ত ব্যাখ্যা করেছিলেন যে এই পুরো মহাবিশ্ব একটি কচ্ছপের শেলের উপর ভারসাম্যপূর্ণ, এবং তারা এটি আস্থাভরে বিশ্বাসও করেছিল। কারণ এটি তাদের পবিত্রতার কিংবা উপাসনার প্রবৃত্তিকে সন্তুষ্ট করতো। কেউ কেউ ব্যাখ্যা করেছেন যে সমগ্র মহাবিশ্ব পাঁচটি মৌলিক উপাদান দিয়ে তৈরি এবং তাদের মিথস্ক্রিয়া এই বিশ্বের সমস্ত ঘটনা তৈরি করে। এটি ছিল তাদের সময়ের দর্শন, সময়ের সাথে সাথে সেই বিশ্ব দর্শনটি বিবর্তিত হয়েছিল এবং কিছু লোক সংখ্যার দ্বারা প্রকৃতির ব্যাখ্যা বের করতে শুরু করেছিল এবং তারা একে বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেছিলেন, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলি দার্শনিক জ্ঞানের পরিবর্তন করেছিল এবং এটিও বিকশিত হয়েছিল। যুক্তি, দর্শন এবং বিজ্ঞান এবং তাদের বস্তুনিষ্ঠতা একই প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করা নিয়ে। তারা ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করছে কিন্তু একই উদ্দেশ্য নিয়ে। আমরা সহজভাবে বুঝতে পারি যে তাদের উদ্দেশ্য একই ছিল এবং তারা প্রকৃতি এবং এর দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার বাস্তবতা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে। সামান্য পার্থক্য আছে বটে, দর্শনের থিংক ট্যাঙ্ক আছে, বিজ্ঞানের আছে গবেষণাগার এবং ধর্মের আছে আচার-অনুষ্ঠান। মূলত মানুষ হলো এমন প্রাণী যার একটি চিন্তাশীল মন আছে। চিন্তাশীল মনকে বের করে নিলে, আপনি একটি ছাগল বা একটি গরু বা একটি গাধা খুঁজে পেতে পারেন। কোনো ক্ষেত্রে এখন আপনি হাতিও খুঁজে পাবেন, বর্তমানের আধুনিক খাদ্য কারখানার অবদান হিসেবে।
আপনি কি মনে করেন না যে নতুন ধর্মেরও আচার-অনুষ্ঠান আছে?
প্রতিটি ধর্মীয় বিপ্লবের মতো এই নতুন অনাবিষ্কৃত ধর্মেরও তার আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে, কেউ কেউ এটি দেখতে পারেন এবং কেউ এটিকে স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করে থাকেন। অনেকেই হয়তো এই অনুমানের সাথে একমত হবেন না, তাই আমি কিছু উদাহরণ দিই, উদাহরণস্বরূপ ধরুন আপনি আপনার স্ত্রীর জন্মদিন ভুলে গেছেন, আপনি কি পরিণতি আশা করবেন? অন্যান্য দিনও আছে, যেমন ভ্যালেন্টাইনস ডে, ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ডে, ফাদারস ডে, নারী দিবস ইত্যাদি। নতুন ধর্মের চারটি সীমাহীন স্বাধীনতা রয়েছে, যেমন। মালিকানার স্বাধীনতা, বিশ্বাসের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, যদিও এগুলি গণতন্ত্রের মতবাদের মতো দেখায়, এই বিশ্বাসগুলি আসলে এই মহাবিশ্বের স্বাধীনচেতা জীবনের পথ দেখায় । এই ধর্ম এগুলোকে অপরিহার্য বলে মনে করে। এই ধর্ম আপনাকে ফিয়াট কারেন্সির পরিবর্তে সোনা দিয়ে লেনদেন করতে দেবে না। এটি আপনাকে আপনার অর্থনীতিকে সুদ মুক্ত করতে দেবে না। যেহেতু ধর্মটি নতুন এবং এর ভিতরে অনেক স্বাধীনতা রয়েছে, নতুন আচার-অনুষ্ঠানগুলি মানুষের তৈরি এবং যে কোনও সময় পরিবর্তন করা যেতে পারে, এইভাবে মানুষের মনের উদ্ভাবন আচার তৈরি করতে এবং প্রয়োজন অনুসারে তাদের পরিবর্তন করতে আনন্দ পায়। প্রশ্ন হল এই ধর্মের মোল্লা কারা? যতদূর আমি দেখতে পাচ্ছি, ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা, ধর্মনিরপেক্ষ অভিজাত ব্যবসায়ীরা সমগ্র ধর্মীয় পরিবেশ গঠনে সাহায্য করে, আধুনিক দিনের ধর্ম হিসাবে, তাদের ধর্মের ধর্ম প্রচারের জন্য সম্প্রদায় কেন্দ্রের প্রয়োজন হয় না, বরং সাধারণ মানুষ সহজেই খুঁজে পায়। তাদের হোটেল, নাইট ক্লাব এবং রিসোর্টে। অন্য কথায় এই হোটেল, নাইট ক্লাব এবং রিসোর্টগুলো নতুন ধর্মের আশ্রম।
বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের দ্বারা বাধ্য হয়ে পরিবর্তিত জীবনধারা
বৈজ্ঞানিক নব নব উদ্ভাবন ধর্মনিরপেক্ষ জীবনধারা গ্রহণ করার আরেকটি কারণ। যখন সাধারণ মানুষ হার্ট ট্রান্সপ্লান্টেশন, রবোটিক শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, জেনেটিক ত্রুটি সংশোধন, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সম্পর্কে জানে, তখন তারা আরও কিছুটা চিন্তা করে যে বিজ্ঞান হয়তো খুব শীঘ্রই এমন একটি বড়ি আবিষ্কার করবে যা সমস্ত অসুস্থতা নিরাময় করে দিবে এবং একদিন হয়তো বিজ্ঞান ক্ষয় এবং মৃত্যু নিরাময়কারী একটি বড়ি উদ্ভাবন করেই ফেলবে। তারা এর বাইরে চিন্তা করতে পারে না, যদি একটি অনন্ত জীবন তার কাছে বাস্তব হতে পারে তা আনন্দদায়ক না বিরক্তিকর হবে? তাহলে সে এমন একটা অনন্ত জীবন দিয়ে কি করত যার শেষ নেই। ধার্মিকরা এটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে না কারণ তাদের কিছু পূর্বনির্ধারিত উত্তর রয়েছে যেমন অনন্ত জীবনে পরকালের সমস্ত আনন্দ থাকবে এবং এর জন্য তারা পার্থিব জীবনের আনন্দ ত্যাগ করে। একজন সাধারণ মানুষের জন্য সময়, যা একটি অনিশ্চিত সময়ে শেষ হবে এবং এই জীবন যেটিতে সে সচেতন, দিনরাত্রি পরিবর্তনশীলতা, আবহাওয়ার পটভূমির ছন্দের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা হল বেঁচে থাকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় সত্য। ধরে নেয়া যাক বিজ্ঞান ক্ষয় ও মৃত্যু নিরাময়কারী একটি বড়ি আবিষ্কার করলো, জীবনের প্রতি মানুষের আচরণ তখন কেমন হবে? আমি মনে করি এটি একই হবে, সম্পদ দখলের জন্য অবিরাম সংগ্রাম যা ভবিষ্যতে উদ্বেগমুক্ত জীবনযাপন নিশ্চিত করবে। মানব জাতি তখন সমগ্র মহাবিশ্বকে জনবহুল করার জন্য নির্দেশিত হবে।
বিজ্ঞানের বাক্সের ভিতরে বাক্সটি কি অনন্তের দিকে ঝুঁকছে না?
যদিও সাধারণ মানুষ বিজ্ঞান এবং এর ভবিষ্যদ্বাণীতে চূড়ান্ত বিশ্বাস রাখবে, কেবলমাত্র এই কারণে যে এটির উদ্ভাবন তাদের জীবনকে প্রভাবিত করছে। এটি পরকাল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে না কারণ এটি মনগড়া কিংবা স্পেকুলেটিভ কিছু ব্যাখ্যা করতে অক্ষম বরং এই সময়কে শাশ্বত রূপের দিকে প্রসারিত করার চেষ্টা করে। বিজ্ঞান এই প্রকৃতির একটি পর্যবেক্ষণ গবেষণা, কিন্তু এটি এখন মানুষের জীবনধারাকে রূপ দিচ্ছে, এবং তার ভবিষ্যৎ বলার চেষ্টা করছে। ধর্মবিশ্বাস মরেছে, দর্শনও মরেছে; শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক বিশ্বাস আজ বেঁচে আছে। আপনি সম্মত হন বা না হন, আপনি পরিবর্তনটি থামাতে পারবেন না, সময় ক্রল করবেই এবং বাস্তবতা এটির সাথে এগিয়ে যাবে। সময়ের আন্তলীন গুণাবলী বোঝা তাই এই বাস্তবতার পরিবর্তনের ধরণগুলি বোঝার জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়।
আমার চাচাতো ভাই ডা. মোহাম্মদ আব্দুল আলীম লেখাটি পরে তার সারমর্ম করেছে নিম্নরূপঃ মানুষ কেন ধর্মনিরপেক্ষ হতে পছন্দ করে তার পেছনে কিছু মূল কারণ রয়েছে। অনেক মানুষ ধর্মীয় বিশ্বাসকে অস্বীকার বা ত্যাগ না করে বরং এটিকে অন্যদের সাথে মিলিয়ে নিয়ে তাদের জীবনধারাকে সহজতর করতে চান। তারা কঠোর ধর্মীয় বিধি নিষেধের বাইরে থাকতে পছন্দ করেন, বিশেষ করে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে। ধর্মনিরপেক্ষতা মানুষের স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত বিকাশের সুযোগ দেয়, যা তাদের জীবনের অন্যান্য অর্জনকে উপভোগ করতে সাহায্য করে। কিছু মানুষ ধর্মীয় নেতাদের বা ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির কঠোর নিয়ম ও আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ করতে চান না। তারা ধর্মনিরপেক্ষতার মধ্যে মুক্তি এবং নিরপেক্ষতা খুঁজে পান, যা তাদের জীবনকে সহজ এবং কম নিয়ন্ত্রিত করে তোলে। অনেকেই তাদের চিন্তার স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য এবং বিভিন্ন বাস্তবতাকে গ্রহণ করার জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা বেছে নেন। এই পছন্দটি তাদেরকে সমাজে স্বাধীনভাবে চলতে, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে শিখতে, এবং ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে নিজেদেরকে আরও বেশি প্রমাণ করার সুযোগ দেয়।
Update history 11dec2018 Translated to Bangla on 26dec2022> 28jan2023>7feb2023> 12aug24>
No comments:
Post a Comment