Wednesday, November 23, 2022

সো-হোয়াট? না কি? এভ্রিথিং মেটার্স?

 

অনেক আগে, সেই বিটিভি আমলে, ১৯৮০’র দশকে যখন বিটিভিই কেবলমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল। তখন মুভি অব দ্য উইকের একটা গল্প আমার মনে আজো দাগ কেটে আছে। গল্পটা বেশ মজার, আমেরিকার কোন এক অংঙ্গ রাজ্যের কোন এক শহরে এক দল টেররিস্ট একটা ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর দখল করে তার ভিতরকার সব লোককে জিম্মি করে ফেলে, তাদের কিছু দাবি আদায়ের জন্য। ওই জিম্মি লোকগুলোর মধ্যে একটা চরিত্র ছিল, যার নাম এখন আর আমার মনে নাই। কিন্তু সে’ই ছিল ছবির মূল নায়ক। সে টেররিস্টদের সাথে কথাবার্তা বা বাক্যালাপ শুরু করে যার মূল বক্তব্য ছিল “সো-হোয়াট?” বা “তাতে এমনকি যায় আসে?”। সে প্রায় সকল বিষয়কেই নানা ভাবে ব্যাখ্যা করে সব কিছুর মানে অবশেষে তাতে কি বা যায় আসে বা সো-হোয়াট নামক তাৎপর্য হীনতায় নামায়ে আনতে সক্ষম হয়। বলা বাহুল্য দখলকৃত ওই ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এর অভ্যন্তরের কার্যকলাপ ও কথাবার্তা ওই অঞ্চলের টিভিতে সম্প্রচারিত হচ্ছিল। সেই ব্যক্তির “সো-হোয়াট”ফিলসফি ওই অংঙ্গ রাজ্যের সবার মধ্যে দারুণ ভাবে সংক্রমিত হয়। সবাই সকল কাজে এই দর্শনে জীবনের সকল বিষয়ের অর্থ হীনতা বা “সো-হোয়াট?” দেখতে পায়। সকল কাজে কর্মে এই “সো-হোয়াট?” মতাদর্শ যেন মহামারির আকারে সবার মধ্যে ছড়ায়ে যায়। পরিস্থিতি এমন দাড়ায় যে, টেররিস্টরাও এক সময় এই মতাদর্শে গ্রহণ করে জিম্মিদের ছেড়ে দেয়। নায়কের এই নায়কচিত মতাদর্শর জন্য সে ওই অংঙ্গ রাজ্যে দারুণ ভাবে অভিনন্দিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ওই অঙ্গ রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মতাদর্শ নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ওই সেমিনার শেষে তার ভক্তরা যখন তাকে নানা প্রশ্ন করে এই ”সো-হোয়াট?“ ফিলসফির নানা বিষয় জানতে চাচ্ছিল ঠিক তখন পেছনের সারি থেকে এক মেয়ে পিস্তল হাতে উঠে দাড়িয়ে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জে তাকে গুলি করে আর উচ্চ স্বরে বলে উঠে ”এভরিথিং মেটার্স”বা সব কিছুরই গুরুত্ব আছে। মুভিটির ওটাই শেষ দৃশ্য যা দর্শকদের একটা ধাক্কা দেয় বা উপলব্ধি দেয়। ছবিটির মোড়াল হলো, হয় আপনার কাছে সকল কিছুই সো-হোয়াট? অর্থহীন কিংবা সকল কিছুই গুরুত্ব বহ বা ”এভরিথিং মেটার্স”। ছবিটি দেখে আমার মনে হয়েছে সকল মানুষ এই দুই মেরু বিন্দুর মাঝখানে দোদুল্যমান অবস্থায় তাদের মূল্যবোধ নির্ধারণ করে থাকে। 

আমার একটা অনুধাবন এমন যে, কোন কিছুরই নিজস্ব কোন মূল্য নাই যতক্ষণ না আপনি তার উপর একটি মূল্য আরোপ করেন। এই মূল্য আরোপ করে মানুষ তার সমাজবদ্ধ জীবনাচরণের মাধ্যমে। মানুষের মূল্য নির্ভর করে সময়কে সে যেভাবে মূল্যায়ন করে তার উপর। আর সময়কে বিশ্লেষণ করতে হলে চাই বাস্তববাদ, ক্ষনিকবাদ আর নিয়তিবাদের জিলাপি মার্কা ধারণা গুলর সরলীকরণ। কোন কাজটাকে কতটা গুরুত্ব দিব, কখন করব, কিভাবে করব এবং কেন করব এ সবের সাথে এই বিচার বোধ, মূল্য আরোপ বোধ সব সময় সম্পর্কযুক্ত বলে মনে হয়। কাজের এই মূল্য নির্ধারণের উপর মানুষের সাফল্য বহুলাংশে কিংবা বালা যায় সর্বাংশেই নির্ভর করে বলে মনে হয়। কিন্তু এর বিচার বড়ই জটিল একটা বিষয়। যে আগে খরচ করে পরে উপার্যনের চিন্তা করে সে বোকা হওয়ার কথা কিন্তু ব্যবসায়ীক শিক্ষায় তাকে উদ্যোক্তা নামেও প্রশংসা করা হয়। যে তার উপার্যনের পরিমাপে খরচ করে তাকে ছোট মাপের মানুষ ও ঝুঁকি নিতে অক্ষম ধরা হয়। পক্ষান্তরে যে ঝুঁকি নিয়ে খরচ করে বড় মাপের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তাকে বড় মাপের মানুষ ভাবা হয়।  স্বপ্ন সেটা নয় যা ঘুমের মধ্যে দেখা যায়, স্বপ্ন সেটাই যেটা ঘুমাতে দেয় না। এটা সত্য যে মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। যার স্বপ্ন যত বড় সে তত বড়। কার্যাবলী কিংবা বিষয়বস্তুর মূল্যায়ন ও বিচার মনে হয় জীবনের সবচেয়ে কঠিন হিসাব। এই বিষয় বিভিন্ন প্রেক্ষিতে ভিন্ন ভিন্ন মান ধারণ করে যা কিনা আবার দৃষ্টিকোণের বিচ্যুতিতে আনুপাতিক হারে তার মান পরিবর্তন করে। পৃথিবীতে মূল্য বোধ পরিমাপক কোন বীজগাণিতিক সূত্র নাই যে বলা যাবে (এ+বি)(এ+বি)=এএ+এবি+বিএ+বিবি কিংবা কোন জ্যামিতিক উপপাদ্য নাই যে বলা যাবে সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণ সংলগ্ন বহু দুটি বর্গর যোগফল তার তৃতীয় বাহুর বর্গের সমান। এই গাণিতিক উপপাদ্য সম্পাদ্য সূত্র গুল প্রকৃতি থেকেই পাওয়া, যা বাস্তবতা বুঝতে আমাদের সহায়তা করে। জীবনাচরণের বিষয়াবলীর মূল্য নির্ধারণে এ রূপ সূত্র নাই কারন মাপন প্রক্রিয়ায় কোন সর্বসম্মত মানদণ্ড নির্বাচন করা হয় নাই।

মানুষের কার্যাবলী মূল্যায়নের পিছনের কারন গুলো নিয়ে বেশ কিছু মোটিভেশনাল তত্ত্ব আছে কিন্তু তার পরও মানুষ কখনো সখনো তার কর্ম স্পৃহা হারায়ে ফেলে কেন তা বিস্ময়কর ব্যাপার বটে। যত দিন যাচ্ছে তত নতুন নতুন তত্ত্ব প্রস্তাবিত ও প্রমাণিত হচ্ছে। কর্জে আগ্রহ বা উৎসাহ পাওয়ার বা না পাওয়ার বিষয়টি নিয়েও প্রচুর গবেষণা হয়ে চলেছে। এ প্রসঙ্গে রাশিয়ার সেই বিখ্যাত গল্পর তিনটি প্রশ্ন মনে পড়ে গেল যেখানে জিজ্ঞাসা করা হয় ১) ওই মূহুর্তে তোমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটি কে? ২) সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কোনটি? ৩) আর কোন সময়টি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ? শুনেছি এই গল্পটি এক সময় স্কুলের পাঠ্য বইয়ে পড়ান হতো, তা’ও আবার সেটা আমার শৈশবের আগের কথা। প্রশ্ন তিনটির উত্তর শুনলেই বুঝা যাবে প্রশ্নগুলো কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। প্রশ্ন গুলোর উত্তর হচ্ছে সেই মূহুর্তে আমার পাসের লোকটি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, সেই কাজটিই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ওই মূহুর্তে আমি যা করছি আর ওই মুহুর্তটিই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় তার জন্য। যার মানে হলো গল্পটি মানুষের সকল চিন্তাকে বর্তমানে নিবিষ্ট করতে বলছে। যা কিছু বর্তমান তাই প্রকৃত বাস্তবতা, অতীত বা ভবিষ্যৎ নয়। এটাই বাস্তববাদ কিংবা ক্ষনিকবাদ এর মূল প্রতিপাদ্য। অতীতের ব্যর্থতা আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার আশঙ্কা মানুষকে বর্তমান ভুলে দুশচিন্তা গ্রস্থ করে রাখে তাতে করে তার বর্তমানটাও ব্যর্থ হয়ে যায়। এই ক্ষতি থেকেই গল্পটা মানুষের দৃষ্টি বর্তমানে ফিরায়ে আনে।

বুঝলাম মনোযোগ বর্তমানে নিবিষ্ট করাটাই উত্তম কিন্তু অতীতের সাপেক্ষে ভবিষ্যতকে প্লট করতে না পারলে সামনের রাস্তা নির্ধারণ করাটাও তো কঠিন। অতীত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা না থাকলে ভবিষ্যতের ট্রেজেকটরি কি ভাবে অনুমান করা যবে। জীবনের গতিপথের ভবিতব্য বা ফোর-কাস্টিং করা না গেলে এই চলমান সময়ে হোচোট খাওয়ার সম্ভাবনাও তো রয়েছে? তা হলে উপায়? কতটা অতীত আমাদের মনে থাকে আর কতটা আমরা যন্ত্রের সাহায্যে বা কাগজে কলমে সংরক্ষণ করতে পারি? যতটা পারি ঠিক ততটা কি আমাদের কোন কাজে আসে? সময়ের সাথে সাথে বহু বিষয় আছে যা আর ভবিষ্যতে কোন কাজে আসে না, তবে ঠিক কোনটা প্রয়োজন আর কোনটা নয় তা পূর্ব হতে ঠিকমত বুঝা যায় না। একেক সময় মনে হয় সবই কাজে আসবে আবার মনে হয় কোনটাই কাজে আসবে না। শুনেছি ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন তার ছেলে অভিষেক বচ্চনকে নাকি বলত সব কাজ করতে হবে না বেছে কাজ কর। এই বেছে কাজ করাতেই যত মুশকিল। বাছ বিচার করাটাই অত্যন্ত জটিল বিষয়। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় আমার গৃহ শিক্ষক হাবিব স্যার আমার  সময় জ্ঞান সম্পর্কে উদাসীনতা দেখে আমাকে একটা রেজিস্টারে সময় উল্লেখ পূর্বক কি কাজ করেছি সারা দিন তা লিখে রাখতে বলেছিল। বলা বাহুল্য আমি ওই অভ্যাস পরবর্তী পাঁচ বছর চালু রেখেছিলাম। শুধু তাই নয়, প্রত্যেক দিনের আবহাওয়া আমার মানুষিক অবস্থার সাংকেতিক ব্যবস্থা সংযোজন করে সে এক মহা এলাহি কান্ড করেছি আমি ওই পাঁচ বছর, পাশাপাশি অতীতের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোও পুংখানুপুংখ ভাবে লিখে রাখতাম ডায়েরিতে। প্রচুর সময় নষ্ট করেছি আমি এই কাজ করতে গিয়ে। এতে করে আমার সময় জ্ঞান বেড়েছে নিঃসন্দেহে তার সাথে সাথে বিশ্বয় লাগত দেখে যে কি বিচিত্র ভাবে সময় পার হয়ে যাচ্ছে যার কিছুই আমরা ধরে রাখতে পারছিনা। পুরনো সেই কাগজ আর রেজিস্টার গুলো পরবর্তী ২০ বছর সংরক্ষণ করা ছিল এই আশা নিয়ে যে কোন এক সময় হয়ত তা কোন বিশেষ কাজে আসবে। ২০২২ সালে ঢাকার রাস্তার দম আটকান যানজটের কারণে যখন মিরপুরের নিজ বাসা ছেড়ে অফিসের কাছে সিদ্ধেশ্বরীর ভাড়া বাসায় আসলাম তখন ওই সব পুরাতন কাগজপত্র সব ফেলে চলে আসতে হয়েছে। আজ আর পুরাতন কিছু সংরক্ষণ করতে ইচ্ছা করে না। আমার মনের অবস্থা এভরিথিং মেটার্স থেকে সো হোয়াট পর্যায়ে পুরোপুরি শিফ্ট হয়ে গেছে।

আমার বাবা তার স্বপ্নের বাসায় একটা দেয়াল আলমারি বানিয়েছিল যাতে প্রচুর বই সংরক্ষণ করা হয়েছিল। বাড়ি বদলের সময় ওই সব বই এর অধিকাংশই ফেলে আসতে হয়েছে। আমার বাল্য বন্ধু বিপুল প্রতি ক্লাস পাস করার পর পুরনো বই খাতা গুলো বিক্রি করে দিত আমার কাছে খারাপ লাগত, আমি যত্ন করে করা আমার নোটগুলোর মায়া ত্যাগ করতে পারতাম না, সেগুলো পরবর্তীতে কি কাজেই বা আসবে আমার তো ছোট ভাইবোনও নাই। তার পরও সংরক্ষণ প্রবণতা ছিল আমার, জীবনের ৫০তম বছরে এসে এখন মনে হয় আমার ওই সংরক্ষণ প্রবণতা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় ছিল। আজ থেকে পিছন ফিরে তাকালেই কেবল তা বুঝা যায়, তখন যদি এই বুঝ থাকত তা হলে কি আমি এই সব জঞ্জাল সংরক্ষণ করতে এত কষ্ট করতাম? তবে একটা বিষয় কিন্তু আমি অর্জন করতাম তা হলো খুব বলিষ্ঠ ভাবে সামনে পদক্ষেপ নেয়া। অতীত খুব স্পষ্ট ছিল তাই আমার নিজের উপর আত্মবিশ্বাস ছিল প্রচুর। ইতিহাসের গুরুত্ব তাই হেলা ফেলা করার উপায় নাই। অতীত ইতিহাস যদি এতই গুরুত্বহীন হতো তা হলে এত খরচ করে বড় বড় জাদুঘরে পুরাতন জিনিস প্রদর্শন করা হতো না। বুঝলাম অতীত তথ্য প্রয়োজন কিন্তু কোন তথ্যটা প্রয়োজন তা আগে থেকে বুঝার উপায় নাই। তবে অত বিস্তারিত অতীত সংরক্ষণ করলে পরবর্তীতে কেবল অতীতং সরনং গচ্ছামি আওড়ান ছাড়া কিছুই করার থাকে না। বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষায় এই গচ্ছামি শব্দটা দেখেছিলাম ওদের জপমালায় সব কিছুই সরনং গচ্ছামি দিয়ে শেষ হয়। আমার ধারণা সরনং মানে হলো স্মরণ করা আর গচ্ছামি মানে যে কি তা এখনো আমার অজানা। আমার বাবা তার যশোর ও খুলনার সুগার মিলে চিফ ইঞ্জিনিয়ার থাকার সময় সুন্দরবনের মেহগনি কাঠ সংগ্রহ করে প্রচুর আসবাব পত্র তৈরি করেছিল রনবির নামক এক হেলপার কাঠ মিস্ত্রিকে কাজ শিখায়ে মিস্ত্রি বানায়ে দিয়েছিল। সে আমার বাবাকে বাপ ডাকত। বাবার কথা ছিল যা কিছু কর তা যেন এতই পোক্ত হয় যেন তা ৫০ বছরেও নষ্ট না হয়। আব্বার বানান খাট, খাবার টেবিল, সোফা, ড্রেসিং টেবিল সবই আজো একই রকম আছে আর আমরা তা ব্যবহারও করছি। আমার নতুন আসবাবপত্র তেমন কিছুই কিনতে হয় নাই। বাবার চিন্তা ঠিক ঠিকই বাস্তবায়িত হয়েছে, তার নাতির জীবনেও বোধ হয় এই আসবাব গুলো বহালতবিয়তেই কাজে আসবে। টোটাল কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট মুভমেন্ট বা টিকিউএম শুরু হয়েছিল জাপানে তারা যা বানাত তা শত বছরের গ্যারান্টি দিতে পারার মত পোক্ত করেই তৈরি করত। চিনা মতাদর্শ পরবর্তীতে নিয়ে আসল ছয় মাসের মধ্যে যা আছে সব বদল করে ফেল। কিসের কোয়ালিটি, টাকা যত কোয়ালিটি তত, যত গুর তত মিষ্টি ফিলসফি। আজ তাই শত বর্ষের পরিকল্পনা নিয়ে আর তেমন কিছুই নির্মাণ করা হয় না (পদ্মা সেতু বাদে)। মানুষের রুচি, পছন্দ ইত্যাদিও দ্রুততর সময়ের সাথে যেন বদল হয়ে যাওয়ার প্রবণতা প্রদর্শন করছে। তাই অতীতকে অতটা আঁকড়ে ধরে রাখার এখন আর প্রয়োজন পড়ে না। সমনের দিকে আগাতে থাকলে অতীত ক্রমাগত ঝাপসা হতে থাকে। আর গতি বাড়ালে তো কথাই নাই, অতীত অতি দ্রুত বিস্মৃত হয়ে যেতে বাধ্য। তবে এই সো হোয়াট মেনটালিটি মানুষকে তার ব্যর্থতা কিংবা বড় কোন দুঃখ বোধ ভুলে যেতে দারুণ ভাবে কাজ করে। বর্তমানকেই কেবল এভরিথিং মেটার্স আর অতীত কিংবা ভবিষ্যতকে যদি সো-হোয়াট হিসাবে দেখা যায় তবেই মনে হয় ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তা কাঠামটা তৈরি হয়। এই যেমন ধরুন গতকাল আর্জেন্টিনা আর সৌদি আরবের ফিফা বিশ্বকাপের খেলায় আর্জেন্টিনা ৪টি গোল করেও জিততে পারল না কারন ৪টির মধ্যে তিনটিই অফ সাইডের কারণে বাতিল হলো আর পরেরটি পেনাল্টিতে মেসি একটা গোল দিল কিন্তু খেলার দ্বীতিয়ার্ধে সৌদিআরব দুটি গোল করে জিতে গেল। বিষয়টা আর্জেন্টিনা সমর্থদের দারুণ ভাবে ব্যথিত করেছে। কত বিশ্বকাপ এলো আর গেল, কত গোল হলো কিংবা হলো না তাতে এমন কি আসে যায়। কার কার কাছে তা যথেষ্ট গুরুত্ববহ আবার কেউ হয়ত এতে তেমন কিছুই মনে করে না। জীবনটা অজস্র ঘটনার এক মহা সমষ্টি যার কিছুতো অবশ্যই গুরুত্ব বহ আবার কিছু একেবারেই গুরুত্বহীন। সবই নির্ভর করে আপনি বিষয়টিকে কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করছেন তার উপর। সংস্কৃত কথায় আছে ”গতস্য শোচনা নাস্তি”এতে যা বোঝা যায় তা হলো, অতীত মনে করাই সমস্যা তার চেয়ে বর্তমানকে নিয়ে বেচে থাকা অনেক ভালো। বেশ কিছুদিন যাবত অবসর পেলেই মনে যা আসে লিখে যাচ্ছি, কে যে আমার লেখা গুলো পড়ে বা কে পড়ে না তা বুঝার কোন উপায় নাই। পড়ুক বা না পড়ুক তাতে কি’ই বা আসে যায় (সো-হোয়াট?) তবে আমার মনের কথাগুলোর গুরুত্ব আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বা এভরি ওয়ার্ড মেটার্স।

 ৬২ দিলকুশা, ঢাকা
২৩-১১-২০২২

আপডেট হিস্ট্রিঃ ২৮জানুয়ারী২০২১> ৫ফেব্রুয়ারী২০২১> ১০অক্টোবর২০২২ > ১৬ নভেম্বর২০২২ > ২৩ নভেম্বর ২২ >

No comments:

Post a Comment