জীবন জিজ্ঞাসায় পর পর কয়েকটা মোটা মোটা বই পড়ে ফেললাম। বই গুলো দ্রুত পড়ার কারণে মাথার মধ্যে সব খিচুড়ি পাকায়ে গেছে। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার গুলো মানব মনসে বিশ্ববিক্ষনকে আমূল পরিবর্তন করে দেয়। আর তার সাথে পরিবর্তিত হয় তার জীবন ও জগত সম্পর্কে সকল ধারণা গুলো। ইউভাল নোয়া হারারীর স্যাপিয়েন্স-মানুষের ইতিহাস, ইসমাইল আল ফারুকী ও ডেভিড সফার এটলাস অব রিলিজিয়ন্স, ক্লাউস শোয়াব এর চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, জেরি কয়েনের বিবর্তনবাদ কেন সত্য, জামাল নজরুল ইসলামের আলটিমেট ফেইট অফ দি উইনিভার্স এই বইগুলোর সকল বক্তব্য একসাথে ঘোটা মিক্স করলে যা পাওয়া যায় তা হলো বিবর্তনবাদ বিশাল ক্যানভাসে হচ্ছে যা চলমান আর প্রজাতি থেকে প্রজাতিতে বিবর্তন প্রাকৃতিক নিয়ম মেনেই হয়েছে এতে বিশ্বের বাইরে থেকে কোন স্রষ্টার হস্তক্ষেপের অবশ্যকতা তো নেইই বরং তা হয়ে থাকলে বর্তমান বিশ্বটা ঠিক এরকম হতো না। আমরা যে সকল বই পড়ি তা আমাদের মনস্তত্বে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। জামাল নজরুল ইসলাম তার বইয়ে ১ এর পর ১০০টা শূন্য বসালে যে সংখ্যা হয় তত বছর পর্যন্ত মহাবিশ্বের পরিণতি ব্যাখ্যা করেছেন অত্যন্ত যুক্তি সহকারে। তত দিনে সকল গ্যালাক্সি মিলে এক বিশাল ব্ল্যাক হোল হবে যা পরবর্তীতে আরে বহু লক্ষ কোটি বছরের ব্যবধানে তা’ও আবার বিলীন হয়ে যাবে বিশাল এই মহা শূন্যে। যদিবা এই মহাবিশ্বটা সর্বদা সম্প্রসারিতই হতে থাকে নচেৎ এক পর্যায়ে সংকোচন শুরু হলে তা এত দ্রুত হবে যে একাধিক গ্যালাক্সি একে অপরের উপর আছড়ে পড়ে এক মহা প্রলয়ে সব ধ্বংস হয়ে যাবে। এটা অনেকটা সিনেমার ফিতার ব্যাক প্লে’র মত ঘটনা ঘটবে। এনট্রপি উল্টা দিকে প্রবাহিত হবে। টেবিল থেকে পড়ে যাওয়া কাপ যেটা ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে গিয়েছিল তা পুনরায় জোড়া লেগে টেবিলের উপর উঠে পরার মত ঘটনা ঘটবে। ইউভাল নোয়া হারারীর স্যাপিয়েন্স আর ইসমাইল আল ফারুকী ও ডেভিড সফার এটলাস অব রিলিজিয়ন্স পরলে বুঝা যায় মানুষের বিশ্বাস নির্ভর ধর্মসমূহ বেশিরভাগই মানুষের কল্পনা প্রসূত। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বইটি বলছে মানুষ সুদীর্ঘ সময়ে বিবর্তিত হয়ে সাইবর্গ বা যন্ত্র সংযুক্ত কিম্ভুত কিমাকার মানুষে পরিণত হবে । আমাদের এই ছোট্ট জীবনেই কত না পরিবর্তন দেখলাম। আর এই সব নতুন ধারনা গুলো যে সময়ের সাথে সত্য হয়ে যাবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। মান ইয়া না মান বিষয়গুলো এরকমই হবে। যতই বদ্ধমূল পূর্ব ধারনায় আঘাত করুক না কেন, বাস্তবতাটা এরকম ভাবেই বিকশিত হতে চলেছে মনে হয়। মহাবিশ্ব সেই বিগ ব্যাং এর সময় থেকে আজো স্ফীত বা সম্প্রসারিত হয়েই চলেছে। বেলুনটা ফুলছে যেন তাতে কেউ ফু দিয়েই যাচ্ছে। আসলে কার ফু দেওয়ারও দরকার নাই। গাণিতিক ভাবেই প্রমাণিত এই ফু টা একা একাই কাজ করছে। সবই যদি একা একাই কাজ করে তবে অতি-প্রাকৃত কোন উচ্চতর সত্ত্বার অস্তিত্বের প্রয়োজনটা কোথায়? তা কেবল মানব মনেই সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। সকল ধর্মের সূত্রপাত ও বিকাশ মানুষের বুদ্ধিমত্তা বিকাশের এমন একটা পর্যায়ে যা মানব বিবর্তনের ছোট্ট একটি অংশে সীমাবদ্ধ। আনুমানিক ৪০০০ বিসি থেকে ১০০০ এডি এর মধ্যে সকল ধর্মের উৎপত্তি। অথচ মানব বিবর্তন ৩ শত কোটি বছর ধরে চলছে বলে জীবাশ্ম রেকর্ডে পাওয়া যায়। বিবর্তনের ক্যানভাসটা অনেক অনেক বড় আর এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া, তেমনি মহাবিশ্বর সম্প্রসারণশীল প্রক্রিয়াটাও কোটি কোটি বছর ধরে আজও চলমান। বিবর্তন আজও ঘটমান মহাবিশ্বর সম্প্রসারমান এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ব বিক্ষাটা স্থাপন করলেই কেবল বাস্তবতার অনুধাবনটা সঠিক ভাবে পাওয়া যাবে বলে মনে হয়। অসীম সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বর ১০১০০ ( ১ এর পর ১০০টা শূন্য বসালে যা হয়) বছর পর মানব কাঠামটা কি হতে পারে তা এখন কল্পনা করাও অত্যন্ত কঠিন বিষয়। বিবর্তনের গবেষণায় পাওয়া গেছে যে ডাইনোসর থেকে বহু বহু বছর পর পাখির উৎপত্তি হয়েছে আর জল হতে স্থলে প্রাণীকুল স্থানান্তরিত হওয়ার পর পুনরায় জলহস্তী থেকে সুদীর্ঘ সময়ে তিমি মাছের বিবর্তন হয়েছে, তিমি মাছের দেহের পিছনের অকেজো পা সদৃশ অংশগুলো তার বাস্তব প্রমাণ বহন করে। মাছ থেকে উভচর তার পর স্তন্যপায়ী তার পর বানর প্রজাতি ও তারও বহু বহু প্রজাতির বিলুপ্তির পর বুদ্ধিমান মানব ও বুদ্ধিহীন শিম্পাঞ্জির দুটি ধারায় বিবর্তন। এ সবই প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলাফল। বিজ্ঞানের এই ব্যাখ্যাটা আজ পূর্বের চেয়ে আরো বহু পরিমাণ প্রমাণ নির্ভর বৈজ্ঞানিক সত্যে পরিণত হয়ে গেছে। কিছুকাল আগেও বিবর্তনবাদকে ভুয়া বলে উড়ায়ে দেয়া যেত কিন্তু বর্তমান বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদিতে তা আর পারা যাবে বলে মনে হয় না। বিবর্তনবাদ বিরোধীদের তাই পিছু হটতেই হবে। প্রকৃতি যতটুকু সুযোগ দিচ্ছে গাছের মূল সে দিক দিয়েই বাড়ছে তেমনি প্রকৃতির যেখানে রাস্তা দিচ্ছে সেখান দিয়েই প্রজাত্তায়ন ঘটছে। প্রকৃতির এই বিশাল ক্যানভাসে মানুষের অস্তিত্ব ও বিস্তার অতি ক্ষুদ্র সময়ের একটি ঘটনা মাত্র। প্রকৃতির সকল প্রজাতি টিকে থাকার প্রয়োজনে যার পর নাই নিরন্তর প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে তার পরও লক্ষ কোটি (অগুনিত) প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ও হয়ে গেছে। যারা প্রকৃতির বাধা অতিক্রম করে টিকে থাকতে পারছে তারাই বিস্তার লাভ করছে ও পরবর্তী প্রজন্মে তাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে বা প্রজাত্তায়ন ঘটছে। যারা তা পারছে না তারা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়টি সকল ধার্মিক ব্যাখ্যার সাথে সাংঘর্ষিক কিন্তু ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলোর সংঘাত নতুন নয় সেই গালিলিও আমল থেকেই হয়ে আসছে। অবশেষে জয় বিজ্ঞানেরই হচ্ছে। বিজ্ঞান কোন একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মতাদর্শ নয়, এটা বহু মানুষের পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ লব্ধ পরিশ্রমের ফলাফল। তাই এক গুচ্ছ লোকের মতাদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক হলেও তাতে কার কিছু যায় আসে না। অগুনিত ভাইরাস থেকে অগুনিত মানুষ সহ সকল প্রাণী জন্মাচ্ছে, জীবন চক্রে আবর্তিত হয়ে পরবর্তী প্রজন্ম রেখে আবার নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রাণ টিকে থাকছে কিন্তু প্রাণীটির বা প্রাণী গোষ্ঠির অস্তিত্ব থাকছে না। ঝাঁকে ঝাঁকে মরছে আর ঝাঁকে ঝাঁকে জন্মাচ্ছে। বাস্তবতার এই চিত্রটা সহজে অনুধাবন করা কঠিন। এই কঠোর বাস্তবতার সার্বিক যৌক্তিকতাটাও ধরা খুব মুশকিল। মনে হয় যেন কোন কারণ ছাড়াই এ সব কিছু এক সুবিশাল ঘটমান, চলমান বাস্তবতা।
অঞ্জন দত্তর গান “যাচ্ছে চলে সব হন্তদন্ত হয়ে, এত সব যাচ্ছে কোথায়” এর উত্তরে বলতে হয়, সবই সময়ের গহীন গহ্বরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যা যাচ্ছে তা আর ফিরে আসবার নয়। বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ মতে তা’র আর পর নাই, নাই কোন ঠিকানা। এ যেন রবীন্দ্রনাথের কণিকা পদ্য “স্ফুলিঙ্গ তার পাখায় পেল ক্ষণ কালের ছন্দ, উড়ে গিয়ে ফুরিয়ে গেল, সেই তারি আনন্দ”। মানুষের ফিরে আসার উচ্চাশা এ হিসাবে ব্যর্থ। অমোঘ সত্যটা হলো যা বর্তমান তা’র কোন ভবিষ্যৎ পুনরাবৃত্তি নেই। আছে কেবল নতুন মাত্রায় বিবর্তিত অবস্থা। গত ৫০ বছর আগে আমার কোন অস্তিত্ব ছিল না তেমনি আগামী ২০ কি ৩০ বছর পর আমার অস্তিত্ব থাকবে না। এই ক্ষুদ্র জীবনকালে মানুষের এত মাতামাতি, হানাহানি, ছুটাছুটি দেখে অবাক লাগে। এত কিছু করার উদ্দীপনা মানুষ পায় কোথা থেকে? সে নিশ্চিত জানে “জন্মিলে মরিতে হয় জানিবে নিশ্চয়”। সকল ধর্ম মৃত্যু পরবর্তী ব্যবস্থাপত্র জানায়ে দিয়েছে। তাই সকল ধার্মিক ব্যক্তি ধর্মানুসরন করে অত্যন্ত শান্তিতে জীবন যাপন করে থাকে। মৃত্যুর পর কি হবে তা সম্পর্কে নিশ্চিন্ত থাকলে এই পার্থিব জীবনে কর্ম উদ্দিপনা পাওয়াটা স্বাভাবিক। যদি বলা হয় মৃত্যুর পর আর কিছু নাই, কেবল শূন্যতা, নাই কোন প্রতিদান কিংবা প্রত্যাবর্তন তা হলে মানুষের মধ্যে যে প্রচণ্ড রকম নৈরাশ্য জন্ম নিবে তা কি দিয়ে নিভাবেন? যারা বিবর্তনকে মেনে নিয়েছে তারা কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই জীবন যাপন করে থাকে। পৃথিবী কেন্দ্রিক মহাবিশ্ব থেকে সূর্য কেন্দ্রিক মহাবিশ্ব তার পর কেন্দ্র বিহীন সম্প্রসারণশীল মহাশূন্য ধারনা গুলতে উত্তরণেও মানব গোষ্ঠীর অস্বস্তি ছিল। কিন্তু এখন তা সবারই সাধারণ জ্ঞান তাই আর তাতে কারো আপত্তি থাকে না। এমন দিন আসবে যখন বিবর্তন বাদ নিয়েও কার কোন আপত্তি থাকবে বলে মনে হয় না। যারা ধর্মের বিষয়ে অত্যন্ত গোঁড়া তারা হয়ত মানতে পারবে না কিন্তু এক সময় না এক সময়, এই প্রজন্মে না হয় পরবর্তী কয়েক প্রজন্মের মধ্যে তাদের মধ্যেও পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়। তার পরও প্রশ্ন থেকেই যায় এত সব যাচ্ছে কোথায়? কোথাও যাচ্ছে না বরং একই স্থান ও কালে অনন্ত কাল ধরে টিকে আছে, এই মতবাদে কেউ সন্তুষ্ট হতে চায় না। কোন ধর্মই এরকম কোন মতবাদ দেয় নাই কারণ বোধ হয় মানুষের মন তা মানতে চায় না। কার্য কারণের যুগে এরূপ মতবাদ ধোপে টেকে না। সর্ব সম্মত কোন ধারনায় মানব সভ্যতা একমত হতে পারে নাই উপরন্তু মানব সকল একই ভাষায় কথাও বলে না। ৩০০০ এর উপর ভাষার উৎপত্তি প্রমাণ করে সারা পৃথিবী জোড়া মানব সভ্যতা নানা ভাবে বিকশিত হয়েছে। সকল ধর্মের উৎপত্তি আরব আর ভারত মহাদেশে অন্য মহাদেশগুলো কেবল শামানবাদ দিয়েই ধর্মের কাজ চালায়ে নিয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা নাস্তিকেরা সংখ্যায় কম হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ধর্ম সকল অমীমাংসিত প্রশ্নে উত্তর প্রদান করে থাকে। ধর্ম মানুষকে প্রশান্তি দেয়।
ইউভাল নোয়া হারারীর মতে ধর্ম সকল এসেছে মানব সভ্যতা বিকাশের একটা পর্যায়ে
আর সকল ধর্মর বিকাশ প্রায় একই সাথে বা পর্যায়ক্রমে সমসাময়িক শতাব্দীগুলোতে।
বিশেষ করে যখন মানুষ কৃষি কাজে ব্রতী হয়ে স্থায়ী আবাস ও সমাজ গঠন করে।
বিচ্ছিন্ন ভাবে হলেও সব গুলো মানব সম্প্রদায় জনগণের নৈতিক কল্যাণের আশায় এই
সব ধর্ম মতে বিশ্বাস স্থাপন করে আর রাজ্য শাসন ও ধর্মের মধ্যে দ্বন্দ্ব
সৃষ্টি হয়েছে আর তা বেশির ভাগ সময় একে অপরকে সহযোগিতাও করেছে। হিন্দু ধর্ম
বা সিন্ধু ধর্ম বহু পুরাতন সেই ঋকবেদ এর যুগ থেকে আছে আর এমেরেন্ডিয়ান
ধর্মে শামান বাদ আর সাইবেরিয়ার শামান বাদ এত বিশাল এলাকা জুরে বহুকাল টিকে
ছিল বলে জানা যায়। তার পর আসে চিন এর কনফুসিয় ও টাও বাদের বিস্তার ও তার
সাথে বৌদ্ধ ধর্মের ঘাত প্রতিঘাত। ধর্ম নিয়ে এত কিছু হয়ে গেছে বছরের পর বছর
ধরে। এসব ধর্মগুলোর উপাসনা করার বৈচিত্রও দেখার মত বিষয়, কখন তা হাস্যকর
রকম অদ্ভুতও বটে। জৈন আর শিখদের ব্যাপারগুলোও কম বৈচিত্রময় আর হাস্যকর নয়।
জরথুস্ট্র বাদ আর তখনকার আরও কিছু মতবাদ ও এদের সংঘাত বেশ মজার ঘটনা। এর পর
আসে ইহুদীবাদ, খ্রিস্টবাদ আর ইসলামের বিষয়াবলী। অনেকের মতামত এত সব ধর্ম
সকল যেন মানুষের কল্পনা প্রসূত। বইগুলো পড়লে তেমনই মনে হয়। কোন ব্যক্তির
কথা বা গল্পে বিশাল মানব সকলকে এক মতে আনা সম্ভব নয় কিন্তু যদি বলা হয়
বিশ্ব জগতের স্রষ্টার কাছ থেকে নিয়ম কানুন বানীসমূহ এসেছে তখন তা বিশাল
সংখ্যক মানুষকে বিশ্বাস করান যায় সহজে। প্রতিটি ধর্ম তার অনুসারীদের
স্বর্গের প্রত্যাশা প্রদান করে আর স্রষ্টার বিরাগভাজনদের নরকের ভয় দেখায়।
প্রত্যেক ধর্ম নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ সত্য ধর্ম হিসেবে দাবি করে। যত ভিন্ন
ধাঁচেরই হোক না কেন ধর্ম সকলের প্যাটার্ন যেন একই রকম। কনফুসিয়াসের ধারনা
গুলো ও টাওবাদী ধারনা গুলো এই বিজ্ঞানের যুগে বাতিল হয়ে যায় তেমনি বাতিল হয়
হিন্দু ধর্মে বেদ আর পুরাণের দাবি গুলোও। তার পরও কেন এত বিশাল সংখ্যক
মানুষ ধর্ম বাতিকে ভুগে বুঝতে পারা যায় না। ইহুদি – খ্রিষ্টান – মুসলিম
ধারনা গুল এক সুতায় বাধা, এগুলোর উৎপত্তি ও বিস্তার বিবেচনা করলে বুঝা যায়
এরা আরব ভূখণ্ডর কালচারই বহন করে। সব ধর্মে নতুনরা পূর্বতন গুরুজনদের
বক্তব্যকে গুরুত্ব দেন বলেই তারা সেই ধর্মে আবিষ্ট হয়ে মনে প্রাণে তাকেই
আঁকড়ে ধরে। আমাদের দেশে ইসলাম ধর্মের এত বিস্তার মূলত মুসলিম পরিবারগুলোর
উত্তরসূরিদের আবেগ তাড়িত মতাদর্শ বই আর কিছু বলে আমার মনে হয় না। আমার নানা
ভাই তার বড় ছেলেকে এক পিরের সাথে দেখা করায়ে দিয়েছিল পরবর্তীতে ওই পীরের
সাথে তার আর দেখা হয় নাই কিন্তু বড় মামা আজীবন তার বাবার কথা মত নামাজ রোজা
করে গেছেন। আমার মা’ নানা ভাই এর প্রথম সন্তান তার বাবার আদর্শের মত আজীবন
ধর্মাচরণ করে গেছেন। ছোট মামা ব্যতিক্রম তিনি একসময় ধর্মের প্রতি অতটা
আসক্ত না হলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধর্মের দিকে ঝুঁকে গেছেন। নিরপেক্ষ
দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে চিন্তা ভাবনা করে ধর্মের প্রতি আসক্ত হতে আমি কম
মানুষকেই দেখেছি।
আমার সকল বন্ধু যারা সেই স্কুল থেকে অদ্যাবধি যোগসূত্র বজায় রেখেছে তাদের মাঝেও ধর্মের বিষয়গুলো নিয়ে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আসক্ত হতে দেখি। ধর্ম তা যেটাই হোক না কেন তা মানুষের জীবনকে একটা সুন্দর ছাঁচে বিন্যাস্ত করে দেয়। যেহেতু এই বিশাল বিশ্ব চরাচর নিয়ে কোন ভাবনা থাকে না, এটা কোথা থেকে আসল আর কই যাচ্ছে তাই ধার্মিক মনটা প্রশান্ত থাকে। জীবন সংক্রান্ত যত বিতর্ক সবগুলোর সমাধান দেয় ধর্ম তাই এই মতাদর্শটি এত জনপ্রিয়। অধর্ম বা ধর্মনিরপেক্ষতা কিংবা নাস্তিকতা এর বিপরীত মেরুর ধারনা। তারা একে মুক্ত মন বলে আর ধার্মিক মনকে বদ্ধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ মত বলে। মুক্ত মন বলতে যা বোঝানো হয় তা হলো যে মন সকল ধারনা সমূহকে স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহণ করে, যাচাই বাছাই করে তার পর তার মতে যা সঠিক তা গ্রহণ করে। অন্য পক্ষে ধার্মিক মন হলো যা কিছু নতুন তা কে ধর্মের বিধি বিধানের ছাকনি দিয়ে যাচাই করে তার পর গ্রহণ করে। প্রতিটি ধর্ম তাদের অনুসারীদের বৃদ্ধি করার জন্য প্রচুর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে তা সে যে ধর্মই হোক না কেন। তা যদি সত্য ধর্ম হয় তবে তার এত প্রচার প্রচারণার দরকারটাই বা কি? বিভিন্ন ধর্মের সাথে তুলনা করে তাকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণই বা করতে হবে কেন। ধর্ম জিজ্ঞাসা তো মানুষের সহজাত বুদ্ধিবৃত্তিক জিজ্ঞাসা, সে নিজেই তো সত্যকে খুঁজে নিবে। অন্যকে নিজ মতাদর্শে প্রলুব্ধ করার এই যে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা তার পেছনের যুক্তি টা কি হতে পারে। আমার পাশের মানুষটি আমার মত করে বিশ্ববিক্ষণ করে না, তার নিজস্ব একটি ভিন্ন মত আছে তা হলে আমার অসুবিধাটা কোথায়? বিবর্তন বাদ নিয়ে নানা মতভেদ আছে কিন্তু সাম্প্রতিক দশক গুলতে বিবর্তনের উপর প্রচুর জীবাশ্ম প্রমাণ পাওয়া গেছে। ধার্মিকদের দৃঢ় বিশ্বাসে তা প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে স্বাভাবিক ভাবেই। তারা মানে সৃষ্টিতত্ববিদরা কিংবা আইডি বা ইনটালিজেন্ট ডিজাইন মুভমেন্টের মতানুসারীরা স্কুলে বিবর্তন বাদ যাতে না পড়ান হয় তার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। যা পর্যবেক্ষণগত ভাবে সত্য ও বিজ্ঞ বিজ্ঞানী মহল যাকে সত্য বলে মতামত দিচ্ছে তা নিয়ে সমাজ এর কিছু সংখ্যক গোঁড়া ধর্মাবলম্বী কেন এত প্রতিরোধ সৃষ্টি করবে। ২০১২ সালে স্কুলে যৌন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে ইংল্যান্ড যাতে যা খুশি তাই শিখান হচ্ছে আর যত বিপত্তি বিবর্তন বাদে এর পাঠ্যক্রম নিয়ে। একটা আশার কথা হলো যতই গালিলিও কিংবা জিওর্দানো ব্রুনো দের মেরে ফেলা হোক না কেন সত্যকে কেউ ধামা চাপা দিতে পারে নাই আজ পর্যন্ত। সত্যের জন্য জীবন দাও কিংবা না দাও, সত্য সর্বদা প্রকাশ পাবেই। বিজ্ঞানের দর্শনে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য কিন্তু কাউকে দাওয়াত কিংবা আমন্ত্রণ জানানর দরকার পরে না। সকলে নিজের প্রচেষ্টায় সঠিক জ্ঞানটা খুঁজে নেয়। ধর্মগুলোর যত প্রচার প্রচারণা আর তা নিয়ে বাক বিতণ্ডা, মার-মার কাট–কাট অবস্থা। এটা প্রায় অবধারিত ভাবে ধরে নেয়া যায় যে আগামী কয়েক শতক পরে ধর্ম সমূহকে হয়ত জাদুঘরে খুঁজোতে হতে পারে যদিও এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। যারা নাস্তিক তারা যে প্রচারণা করে না তা নয়। তাদেরও নিজস্ব দলমত আছে আর তারাও চায় সবাই তাদের মত হয়ে যাক। এই টানা হেঁচড়ার কোন মানে হয় না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটা আশীর্বাদের মত। ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে ভিন্ন মত পোষণ করার শাস্তিস্বরূপ প্রাণ দণ্ড পর্যন্ত গড়াতে পারে। ধার্মিক মানুষকে নাস্তিকেরা নেশাগ্রস্থ হিসেবে বিবেচনা করে তাই চিন রাশিয়ার মত দেশ গুলোতে ধার্মিক লোকদের উপর প্রচুর অত্যাচারও করা হয়েছে। এত আচার আর অত্যাচারের দরকারটাই বা কি? বিজ্ঞান আজ বহু কিছুর সুন্দর ব্যাখ্যা দিচ্ছে। সবাই একমতে আসবে না তা সত্য কিন্তু সবাইকে এক মতে আনতে হবে কেন? রাষ্ট্র যা মানব সভ্যতার সর্ব বৃহৎ সংঘ তা কি নীতিতে চলবে, লেনদেন কিভাবে হবে এই সব বিষয় গুলোতে দ্বন্দ্ব আসে মানুষের বিশ্ববিক্ষন ও বিশ্ব দর্শনের উপর ভিত্তি করে। মজার ব্যাপার হলো ধর্ম নিরপেক্ষতা নিরপেক্ষ ভাবে এই সব প্রতিষ্ঠান গুলো পরিচালনার পদ্ধতিও বলে দিচ্ছে। তা হলে সমস্যাটা কোথায়?
বিবর্তন বাদ কেন নয় বইটার লেখক জেরি কয়েন তার বইয়ে প্রচুর প্রমাণ উত্থাপন করেছেন বিবর্তন বাদ এর সমর্থনে। আজ যখন আমরা এর বিরুদ্ধে বলি তারা আসলে অন্ধ ভাবে এর বিরোধিতা করি কিংবা অল্প জেনে যখন দেখি তা ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক তখন মত পাল্টে এর বিরুদ্ধে বলি। এই জমানায় এর বিরধীতা করা নির্বুদ্ধিতার সামিল হয়ে যাচ্ছে। এক সময় মুসলিমরা এই উপমহাদেশে ইংরেজি শিক্ষার বিরোধিতা করেছে, তাতে লাভ কিছু হয় নাই বরং এখন বহু অভিভাবক তার সন্তানদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করে। হুজুররা পানি ওয়ালা ড্যান্স বাদ্যরত সুইমিং পুলে নামার কথা নয় কিন্তু তারাও নামছে তবে গানটা বন্ধ করে। নিষেধ থাকা সত্যেও দু-একজন লুঙ্গি পড়েই সুইমিং পুলে নেমে পড়তে দেখলাম রাঙ্গামাটির আর্মি পার্কের সুইমিং পুলে কয়েকদিন আগে । ধর্মমতে ছবি তোলা নিষেধ কিন্তু এখন হাতরে মুঠায় ছবি তুলার যন্ত্র বহন করে চলেছে বহু গোঁড়া ধার্মিক। তাই বলা যায় শিল্প বিপ্লব ও প্রযুক্তির যুগে ধর্মীয় গোঁড়ামি গুলো হাস্যকর রকম ভাবে পরিত্যক্ত হচ্ছে। ধর্ম টিকে আছে কেবল তা জীবনের তাৎপর্য তা সত্য কিংবা কল্পনা যাই হোক মানুষকে প্রচণ্ড প্রশান্তি প্রদান করতে সক্ষম বলে। জীবনটা ”কেন“ এই প্রশ্নের সুন্দর ব্যাখ্যা দিতে পারে ধর্ম তাই ধর্ম এত জনপ্রিয়।
বুঝলাম কোন অতিপ্রাকৃত বুদ্ধিবৃত্তিক অস্তিত্বর নির্দেশনার প্রয়োজন নাই এই চলমান প্রকৃতির জন্য কিন্তু কতগুলো অদ্ভুত বিষয় মনে প্রশ্ন বিদ্ধ হয়েই থাকবে। যেমন লজ্জাবতী গাছের পাতা গুলো দিনে মেলে ধরে কিন্তু রাতে তা নিজের পাতা গুলো বন্ধ করে রাখে, তখন যদি কেউ আঙ্গুল দিয়ে পাতার ডাল গুলো ধরে তখন তা আরো নিস্তেজ হয়ে নুয়ে পড়ে। রাতে যে পাতগুলো কোন কাজে আসবে না তা ওই গাছটাকে কে বোঝাল? ও’র নিজস্ব তো কোন বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গ নাই। কিংবা ধরুন গোলাপ গাছ তার ফুলটা বাচাতে কাটা’র ব্যবস্থা করেছে, যে ফুল থেকে কোন ফল হবে না তা’কে বাঁচানোর জন্য গাছটার এত কসরত কেন? জেরি কয়েন তার বইয়েই বলেছে এক ধরনের জীবাণু আছে যা পিপড়াকে আক্রান্ত করে যখন তার পেট ফুলে যায় তখন পাখি তা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে যেখানে জীবাণুটা বংশ বিস্তারের সুযোগ পায় বা তার জীবন চক্র এই চক্রাকারে ঘুরে। এখানে ওই জীবাণুটার পক্ষে জানা কিভাবে সম্ভব যে, পিপড়াকে সংক্রামিত করলে তা পাখিদের চোখে পড়বে ও তা তারা খাবে? কিংবা ধরুন এই কিছুদিন আগের মহামারি করনা ভাইরাস কি ভাবে জানবে যে মানুষের ফুসফুসে তার বংশ বৃদ্ধির জন্য সুন্দর ব্যবস্থা আছে, যেখানে তাকে পৌছাতেই হবে। হয় প্রকৃতি আমাদের সাথে মজা করছে না হয় স্রষ্টা এমন এক বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন যাকে সে একা একাই বিকশিত হতে দিয়েছেন। সেদিন মিরপুরে এক বাসার দেয়াল লিখনে দেখলাম লেখা আছে স্রষ্টা বা সদা প্রভু তার সৃষ্টি এই বিশ্বকে এতটাই ভালবেসেছেন যে তা সে তার প্রিয় পুত্রকে উপহার হিসেবে দান করেছেন। এ সব কথাবার্তা আজকের বাস্তবতায় কিভাবে ধোপে টিকে তা আমরা জানা নাই। সিদ্ধেশ্বরীর কালী মন্দিরে কৌতূহল বসত ঘুরতে গিয়ে দেখলাম জায়গায় জায়গায় মহিলারা এক একটা থালাতে সন্ধ্যা প্রদীপ জালায়ে বসে আছে। কেউ কেউ মূর্তি কে প্রণাম করছে কেউ বা সেজদা করছে। এ সকল কর্মকাণ্ড মানুষের ধর্মের প্রতি প্রগাড় বিশ্বাস থেকেই আসে। শিক্ষিত মানুষজনও এ সব আচরণে প্রবৃত্ত হয় কারণ ধর্ম মানুষের জীবনের সকল কেন’র উত্তর প্রদান করতে সক্ষম। যা বিনা বাক্য ব্যয়ে আপনি মেনে নিতে বাধ্য তাই তা প্রশান্তি দায়কও বটে। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের জীবনে একটা কেন বা কারণ বা অর্থ থাকে ততদিন সে মানুষটি প্রেরণা সহকারে শান্তিতে জীবনাচরণ করতে পারে। অন্যথায় তার মধ্যে হতাশা ভর করে ও তার আধিক্যে আত্মহত্যা প্রবণতা দেখা দেয়াটা স্বাভাবিক। জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিখ নিৎসে-র (১৮৪৪ – ১৯০০) একটি জ্ঞানগর্ভ উক্তি এখানে প্রাসঙ্গিকঃ “যার জীবনে বেঁচে থাকার জন্য একটি ‘কেন’ রয়েছে সে ’যে কোন উপায়ে’ জীবনের বোঝা বহন করতে পারে” (He who has a why to live for can bear almost any how) মানুষের এই ধর্ম বিশ্বাস এর আবিষ্কারও তাই আত্মরক্ষা মূলক একটি বিবর্তন বলেই মনে হয়। বহু শত কোটি বছর পর একদিন হয়ত এই ধার্মিক মানবগোষ্ঠী সাইবার যুগেও হোমো-ডিউস কিংবা সাইবার্গ হয়েও নতুন কোন ধর্ম বিশ্বাস আবিষ্কার করে থাকবে। কিংবা ডুয়েল-কোর আর্টিফিশিয়াল হার্ট নির্মাণ করে দীর্ঘ জীবন বেচে থাকার কৌশল আবিষ্কার করতে সক্ষম হবে – কে জানে?
তথ্য সূত্রঃ
১। হোয়াই ইভোল্যুশন ইজ ট্রু [বিবর্তন কেন সত্য] মূলঃ জেরি কয়েন, অনুবাদঃ কাজী মাহবুব হাসান, প্রকাশকঃ উড়াল বুকস, প্রকাশ কালঃ সেপ্টেম্বর ২০২০
২। সেপিয়েন্স – মানুষের ইতিহাস মূলঃ ইউভাল নোয়া হারারি, ভাষান্তরঃ সুফিয়ান লতিফ, শুভ্র সরকার, রাগিব আহসান, প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
৩। দি আলটিমেইট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স [মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি] মূলঃ জামাল নজরুল ইসলাম অনুবাদঃ অনঙ্গভূষন দাস, প্রকাশকঃ নাগরী, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
৪। হিস্ট্রি অব দ্য রিলিজিয়ন [হিসটোরিক্যাল এ্যাটলাস অব রিলিজিয়নস অব দ্য ওয়ার্ল্ড] মূল ইসমাইল আল ফারুকী ও ডেভিড সফার অনুবাদঃ আসাদ ইকবাল মামুন প্রকাশকঃ ঐতিহ্য, প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০১৫ প্রথম ঐতিহ্য প্রকাশ অক্টোবর ২০২১।
৫। “চতুর্থ শিল্প বিপ্লব” –ক্লাউস শোয়াব, অনুবাদ ওয়ালি-উল-মারূফ মতিন
৬। বিশ্বাস ধর্ম যুক্তি – হাসান নাসির, প্রথম প্রকাশ একুশে বইমেলা ২০১৩।
৭। জীবনের তাৎপর্যের সন্ধানে [ম্যান’স সার্চ ফর মিনিং] মূলঃ ভিক্টর এমিল ফ্র্যাঙ্কেল ভাষান্তর এহসান উল হক, প্রকাশকঃ আতাউল কবির খান, বিন্দুতে সিন্ধু, প্রথম প্রকাশ আগস্ট ২০১৯।
আপডেট হিস্ট্রিঃ ২৪আগষ্ট২০২১> ২৮আগষ্ট২১> ৩১জুলাই২২> ২৬সেপ্টেম্বর২২>১৭ অক্টোবর ২০২২>
১০ নভেম্বর ২০২২ >
No comments:
Post a Comment