Tuesday, July 19, 2022

বিশ্বায়নের যুগে ধর্মনিরপেক্ষতা

একমাত্র সন্তান হওয়ায় বাবা-মা আমার জীবনের সব থেকে বড় বাস্তবতা ছিল জন্মের পর হতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। বাবা - মা চলে গেলেন, বাবা ১৯৯০এ আর মা ২০১৬ তে, চলছে ২০২২, স্বাভাবিক আনুমানিক হিসাবে আমি হয়তো চলে যাবো ২০৩০ থেকে ২০৩৫ এর মধ্যে যে কোন সময়ে, হয়তো আমার স্ত্রী চলে যাবে আরও ৬ বা ৭ বছর আগে বা পরে। প্রশ্ন হলো, আমার তিন সন্তান কে কোথায় রেখে যাবো, ওদের ক্রমান্বয়ে সময় হাতে আছে হয়তো বা আরো ৫০ থেকে ৭০ বছর জীবনকাল। বাবা হতে আমার ছেলে মুসাব পর্যন্ত এই কয়টি ব্যক্তিবর্গের বাস্তবতায় উপস্থিতির সামগ্রিক উদ্দেশ্য বা বিধেয়টা কি? ইসলাম ধর্মমতে স্রষ্টা তাঁর ইবাদতের জন্য মানব সৃষ্টি করেছেন (পবিত্র আসমানি কিতাব কোরআনে তো তাই তিঁনি বলেছেন), ইবাদত মানে তাঁর নির্দেশ মান্য করা, তাঁর অনুগত্যকে স্বীকার করা ও তাকে রব (প্রতিপালক) হিসেবে মান্য করা এবং তার ক্ষমতায় অন্য কিছুকে/কাউকে শরিক না করা। স্রষ্টা সব কিছুই তার ইবাদতের (আনুগত্য ও সকল নির্দেশ মান্য করা) জন্য সৃষ্টি করেছেন এটা আমরা সরল চিন্তা দিয়ে বুঝতে পারি। সকল চিন্তা ঝেড়ে ফেলে কেবল তাঁর নির্দেশ পালন করলেই হলো, তা হলেই পরকালে অনন্ত জীবন পাওয়া যাবে যেখানে কারো কোন বিপদ হবে না, সকল সুখ চাওয়া মাত্রই পাওয়া যাবে এই ধারনাই ইসলাম সহ অপর সকল ধর্মগুরুরাও অনেকটা একইভাবে প্রচার করে থাকেন। তাদের বক্তব্য যথেষ্ট পরিমাণ ধর্মীয় নথি পত্রে লিখিত শ্লোক কিংবা স্ক্রিপচার দ্বারা প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত। বিপদ হলো সকল ধর্মের গুরুদের বক্তব্য প্রায়শ একই, অন্যভাবে বলা যায় সামগ্রিক অর্থ একই। একই ভাবে দার্শনিকদের বক্তব্যও ভাববাদের এক পর্যায়ে অনেকটা একই রকম, যেমন বলা হয়ে থাকে বাস্তবতার সকলই প্রপঞ্চ বা অলীক। প্রকৃত বাস্তবতা আসলে মানুষের মনে।, দার্শনিকদের মত বিবর্তনে বস্তুবাদ পর্যায়ে এসে বাস্তবতাকে সত্য সত্যই বাস্তব বলে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বস্তুবাদীরা এক ধাপ আগে বেড়ে এই বাস্তবতাকেই সব কিছুর মন বিহীন/মনশুন্য বানিয়ে ফেলেছে। বাস্তবতা যেহেতু তাদের কাছে মন/মানস/আত্মন/আত্মা (দি থিং ইন ইটসেল্ফ) বিহীন আর এর স্রষ্টা যেহেতু বাস্তবতায় অস্তিত্বশীল নেই তাই তাঁর অস্তিত্বও নেই -তাদের মতে। তারা মনে করে এই বাস্তবতা এক দৈব ঘটনা, মনব জন্ম তথা এই অজৈব/নির্জীব বিশ্ব কাঠামোতে হঠাৎ ভাইরাস হতে ব্যাকটেরিয়া তার পর ক্রমান্বয়ে চিন্তাশীল মানবের আবির্ভাব একটি অজৈব হতে জৈব বিশ্ব ব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয় দৈব প্রকাশ আর এই প্রক্রিয়ার উন্মোচনে বা ক্রমবিকাশে কোন বহির্বিশ্ব অলৌকিক উচ্চতর মন/বুদ্ধিক কোন অস্তিত্ব’র দিকনির্দেশনা কিংবা পরিকল্পনাকারীর স্রষ্টার হস্তক্ষেপ নেই। ইসলামী পাঠ সভা নিধামুল ইসলাম শিক্ষায় ২০০২ হতে ২০০৮এ এই সকল ধারনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার পরও কেন আজ এ নিয়ে এত দ্বিধা মনে তাই আশ্চর্য লাগে। মুসলিম প্রফেশনালস ফোরামে থাকাকালীন মজিদ ভাই ও হানিফ ভাই এর সাথেও নিধাম এর প্রথম, দ্বিতীয় আর তৃতীয় অধ্যয়ে এই বিষয়গুলোই আলোচিত হয়েছিল। নিধামুল ইসলাম বইয়ে শেখ তাক্কীউদ্দিন নভায়ানী যে ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, তা হলো বস্তবতার চরিত্র বা এট্রিবিউট হলো সবকিছুই সীমাবদ্ধ ও নির্ভরশীল, বাস্তবতাতে কোন কিছু নেই যা সীমাহীন কিংবা স্বয়ংসম্পূর্ণ আর এই সার্বজনীন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই প্রমাণ করে এই বাস্তবতা ভঙ্গুর ও কোনকিছুর উপর নির্ভর করে টিকে আছে। ইট ইজ এ ক্লেজ সার্কিট ইউনিভার্স। এটি একটি আবদ্ধ প্রণালীবদ্ধ মহাবিশ্ব বটে। অনেকটা একুরিয়ামের মত, মাছগুলো যেমন কাচের কাছে আসলে আর আগাতে পারে না, বুঝতেও পারে না যে কেন আগাতে পারছে না, মানব বোধগম্য বিশ্ব ব্যবস্থাটি ঠিক সেরকেই। এখনও, কোয়ান্টাম জগতে তরঙ্গ’র কণা দশা মনে হয় যেন টিভি পর্দায় যেভাবে তরঙ্গকে প্রদর্শন করা হয় তার মত, অনেকটা, এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের বক্তব্য “আমাদের অভিজ্ঞতায় চলে আসে” বলা থেকে বোঝা যায় মনে হয় কণা বলে কিছু নেই, পুরটাই শক্তি তরঙ্গ যা স্ট্রিং থিউরি পক্ষেও কিছুটা ইঙ্গিত দেয়। মহাবিশ্বে ব্ল্যাক ম্যাটার এর অস্তিত্ব যদি গাণিতিক বাস্তবতায় চলে আসে তবে বলতে হবে বর্তমান বিশ্ব বীক্ষণটি আবার বিশাল ধাক্কা খেতে যাচ্ছে। এই অস্পষ্ট/অসম্পূর্ণ বিশ্ব বীক্ষণ প্রমাণ করে এযাবৎ মানব জ্ঞান বিশ্ব সৃষ্টি কিংবা এর চলমান বাস্তবতাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করতে পারেনি। কিছুটা অবশ্যই পেরেছে কিন্তু পুরোটা পারেনি। বিগ ব্যাং থিওরি বেশী জনপ্রিয় হলেও স্ট্রিং থিওরি’র যুক্তি কাঠামো কম পোক্ত নয়। স্টিফেন হকিং এর তিনটি তীর তথা, সময়ের তীর, মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের তীর, এনট্রপি’র তীর কোনটাকেই রিভার্স কিংবা বিপরীত মুখি করার কোন কৌশল মানব জ্ঞান এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারেনি। প্রাকৃতিক নিয়মগুলো যেমন অভিকর্ষ, মহাকর্ষ, বাস্তবতার গাণিতিক নীতির পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিপালন ও ব্যতিক্রম না করা, শক্তি ও ভরের নিত্যতা ও একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে পরিবর্তন যোগ্য হওয়া, এই নিয়ম গুলো কি একা একাই প্রতিষ্ঠিত? সবই দৈব সংঘটন? সারভাইভাল এ্যাট দি ফিটেষ্ট যুক্তির উপর নির্ভর করে হয়েছে? যুতসই ভাবে এঁটে গেছে তাই টিকে গেছে নীতি মত হয়েছে? নাকি কোন ঊর্ধ্বতন বুদ্ধিবৃত্তিক অস্তিত্ব হতে নির্ধারিত হয়ে হয়েছে? ধর্ম ও অধর্ম’র বিতর্কটি এখানেই। একটি কথা ঠিক প্রকৃতিতে কোন বিশৃঙ্খলা নেই, কোথায় প্রাকৃতিক নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটছে না। হ্যাঁ ক্লাইমেট চেঞ্জ হচ্ছে অতি ধীরে গতিতে আর তার কারণও পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু কোন আম গাছে হঠাৎ করে আতা ফল ফলতে দেখা যাচ্ছে না। পুরো বাস্তবতাটি একটি একক সেট সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দ্বারা সুশৃঙ্খলভাবে সময়ের মাঝে চলমান আছে। এই প্রতিভাসটি যেমন এক ইশ্বরবাদী ধর্মের পক্ষের প্রমাণ তেমনি এও বলা যায় যে, যেহেতু বিবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বটা সম্প্রসারিত হয়েছে তাই নিয়ম গুল শৃঙ্খলিত যার ফলে শেগুলি টিকে আছে। যে নিয়ম গুল টিকে নাই সেগুল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যেমন মেটার আর এন্টি মেটার এর মধ্যে এন্টি মেটার আর অবশিষ্ট নাই, শুধু মেটার টিকে আছে।

বিশ্ব চরাচরের পুরো বিষয়টির ধার্মিক/অধার্মিক দুই দিকই বুঝতে চাচ্ছি ভালভাবে কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারছিনা, কারণটাও ব্যাখ্যা করা যায় যে, একা একা সিদ্ধান্ত না নিয়ে অপর কোন একজন যে, বিবেচনায় অধিকতর জ্ঞান সম্পন্ন বলে মনে হয় তাকে দিয়ে যাচাই বাছাই করে নেয়া। আগে ঠিক করে নিতে হবে কোন ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ হলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। যেমন ১৯৯৯ -২০০০ সালে ১০টি নির্দিষ্ট প্রশ্ন সেট নির্ধারণ করেছিলাম, যে বা যারা এর সঠিক উত্তর দিতে পারবেন তারা ঊর্ধ্বতন জ্ঞান সম্পন্ন আমাকে সঠিক পথ দেখাতে পারবেন বলে ধরে নিয়েছিলাম। ডা. সাঈদ ভাই কে প্রশ্নগুলো দিয়েছিলাম, সে ধানমন্ডির তখনকার আমার অফিস টেকনোকিডস্ এসে কি ঠিকঠিক প্রশ্নগুলো উত্তর দিয়েছিলেন কি? কয়েকটির দিয়েছিল, কয়েকটি স্কিপ করে গেছেন, কিন্তু প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, উনি ঊর্ধ্বতন দৃষ্টিকোণ থেকে আমার প্রশ্নগুলোর উপর আলোকপাত করতে পারবেন, তার পর নিধামের প্রথম দ্বিতীয় অধ্যায়ের আলোচনায় আমার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন নিজে নিজেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়া। বিস্তর পড়াশুনা, খণ্ড খণ্ড আলোচনাও সহযোগিতা করেছে উত্তরগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হতে। .সাঈদ ভাই তার পর মজিদ ভাই, মির্জা আমিন ভাই, হানিফ ভাই, হারুন ভাই, বারী ভাই, যুবক ফোনের আরিফ ভাই কে ভালো লেগেছিল এবং একত্রিত ঐক্যমত্যে আস্থা অর্জিত হয়েছিল। বর্তমানে যে সকল লোকজন এর সান্নিধ্যে আমি আসছি তারা কেউ উপরোক্ত লোকগুলোর মত উন্নত মানসিকতার নয়, তাই ঐক্যমত্যে আস্থার বিষয়টি তৈরি হচ্ছে না, যা আমার মনকে অস্থির করে রাখছে।

এখানে একটু বলে রাখি, আমি মনে করি মানুষের কর্ম চিন্তায় তার মনের মিশ্রণ থাকবেই, তা না হলে তা মানবীয় হবে না। ধর্ম শাস্ত্র বিশেষ করে ইসলাম ধর্মে শৈল্পিক (মন মিশ্রিত মানব কর্ম) দিকটি অন্য রকম যা আমার পূর্বের মুসলিম ভাইয়েরা তেমন ভাবে গুরুত্ব প্রদান করেননি। অপর দিকে হিন্দু তথা ভারতীয় সভ্যতা, পশ্চিমা সভ্যতায় শৈল্পিক বিষয়াবলীর বিপুল পরিমাণ অগ্রসরমানতা আমার মধ্যে বিশ্বয় সৃষ্টি করে। মানব মন বাধ্য হয়ে কিছু করলে তাতে মনের মিশ্রণ হবে না আর তা না হলে তা শৈল্পিক হবে না, আর শৈল্পিক না হলে তা মানবীয় হবে না। সঙ্গীত শিল্পকলাতে মানব মনের যে বহিঃপ্রকাশ ঘটে তা নিঃসন্দেহে বৈপ্লবিক। মানব জড় পদার্থ নয় তাই এর ক্রমাগত মানবিক উন্নয়ন হবেই, যারা জোর করে মানব বিকাশকে দমিয়ে রাখতে চায় তারা মূলত ধর্মান্ধতা, কুসষ্কার আর পশ্চাদপতার স্বীকার। আমি এও মনে করি যে, পূর্বে যা ছিল ধর্ম চিন্তা, তা বহু পূর্বে ছিল দর্শন তার পরবর্তীতে বিজ্ঞান চিন্তায় পর্যবসিত হয়েছে। এই পর্যায় অতিক্রম গুলো কেন বিজ্ঞ ব্যক্তিরা স্বীকার করেন না তা আমার বোধগম্য নয়। প্রত্যেক পর্যায় হতে তারা একটি শাখা এখন পর্যন্ত টেনে আনছেন কেন? কারণ মনে হয় প্রত্যেক পর্যায় অতিক্রমের সময় পূর্বতন অর্জিত জ্ঞানের অহমিকা তাকে সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ বা বাতিল হিসেবে গণ্য করতে মানব মন সায় দেয়নি।

ইউভাল নোয়া হারারিরসেপিয়েন্সমানুষের ইতিহাসবইটা পরলে উপরোক্ত আলোচনাগুলো সম্পূর্ণ অর্থহীন মনে হয়। পৃথিবীর বয়স ৪৬০ কোটি বছরেরও বেশী। মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব মাত্র ১০ হাজার বছর আগের। বানর থেকে নর-বানরে রূপান্তরে লেগেছে ৩০০ কোটি বছর। ১০ হাজার বছরের ইতিহাসে মানব শিকারি সংগ্রাহক পাথর যুগ থেকে বের হয়ে এসে কৃষি বিপ্লব সংঘটিত করেছে, আগুনের ব্যবহার শিখেছে, ব্রোঞ্জ পরে লোহা গলায়ে তার যন্ত্রপাতি তৈরি করেছে। শিল্প বিপ্লব ঘটিয়েছে। ধর্ম সমূহের বিস্তার সে অর্থে এই মাত্র কিছু কাল আগে অর্থাৎ কৃষি বিপ্লবের সময়কালের ঘটনা। মানুষ তখন স্থায়ী ভাবে কৃষি কার্য পশুপালন করে বসবাস শুরু করে। ইসলাম ধর্মে হাবিল কাবিলের গল্পে হাবিল বোধ হয় ছিলেন কৃষিজীবী আর কাবিল পশুপালন করতেন। তাই তারা যখন যার যার উৎপাদিত পণ্য স্রষ্টার জন্য উৎসর্গ করলেন তখন পশু কোরবানি স্রষ্টার নিকট কবুল হয়েছিল। অন্তত গল্পে তাই বলা আছে। ২০০০ শতকে এসে মানব সভ্যতা এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্যে চলমান রয়েছে। এই গত কয়েক দশকে বিজ্ঞানের যা অগ্রগতি তা বিস্ময়কর রকম দ্রুত মানুষের জীবনাচরণ বদলে দিচ্ছে। জন্ম ক্ষণিকের আর অপূর্ণতায় ভরা বরং পরজন্মে বা মৃত্যু পরবর্তী অনন্ত জীবনের সুখের জন্য জীবনে কাজ করে যাওয়ার যে তত্ত্ব তাতে করে জীবনে অন্তত সুখে থাকা যাবে যুক্তিতে ধর্মাচরণ যুগে আর যুক্তি যুক্ত মনে হয় না। ইউভাল নোয়া হারারিরসেপিয়েন্সমানুষের ইতিহাস বইটা প্রচুর প্রমাণ উপস্থাপন করে আর তার বর্ণনা যেন বার্ড আই ভিউ থেকে পুর মানব ইতিহাসটাকে বর্ণনা করে। তার বর্ণনা আরঈশ্বর, স্রষ্টা, আল্লাহ ইতিহাসবইটাতে বলা কথাগুলোতে মিল আছে কিছুটা, যখন বইটাতে বলা হয় ইতিহাসের এক সময় আদম নামে এক ব্যক্তি এক স্রষ্টায় বিশ্বাসের কথা বলা শুরু করেন। আবার ইব্রাহীম আঃ তৎকালে প্রচলিত প্রথম সন্তান কোরবানি প্রথা বাতিল করে তার পরিবর্তে পশু কোরবানি প্রথা চালু করেন। হলিউড অভিনেতা মরগান ফ্রিমেন উপস্থাপিত ওয়ার্ম হোল ডকুমেন্টারি সিরিজে দেখান হয় বাইবেল ওল্ড টেস্টামেন্টে এর এ্যাডাম আর ইভ এর স্বর্গ ইডেন গার্ডেনের বর্ণনা মেসোপটেমিয়ার দাজলা ফোরাত নদির মোহনার বর্ণনার সাথে মিলে যায়। তখনকার মোহনাটি মানচিত্রের খানিকটা পৃথক পটভূমিতে ছিল প্রাকৃতিক ভাবেই। যেখানে বেবিলনীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল বহু বহু বছর আগে। আরেকটা ডকুমেন্টারিতে দেখান হয় একজন ব্যক্তির মতামত তেমন কোন পার্থক্য সৃষ্টি করে না কিন্তু যখন তাদের প্লাটফরম (চিন্তার ভিত্তিমূল) ধরে নাড়া দেয়া হয় তখন সবগুলো ব্যক্তি সমান তালে নড়তে থাকে। একই ধর্মে প্রচুর মানুষের সহমত মূলত তাদের চিন্তার ভিত্তিমূলে একই তালে নাড়া দেয়ার মত বিষয়। একটা সময় ছিল যখন ইসলামী খেলাফত ব্যবস্থা পুনরায় ফেরত আসার স্বপ্ন দেখতাম তা নিয়ে মানুষের সাথে বিতর্ক করতাম। মিডিল ইস্টে আইএসআইএস এর তাণ্ডব দেখে সেই আশার গুড়ে বালি। ইমরান নজর হোসেনের আখেরুজ জামান (শেষ জামানা) এর বই বক্তব্য গুলো আর দজ্জাল আর ইয়াযুস মাজুস (গগ-মাগগ) নিয়েও প্রচুর বাক বিতণ্ডা করেছি বেশ কিছু দিন। এখন এসব কিছুই আর ভাল লাগে না। তাছাড়া মুসলিম উম্মার নানা মুনির নানা মতে শতধা বিভক্ত অবস্থাও ভাল লাগে না। তার চেয়ে বরং ইউভাল নোয়া হারারির বক্তব্য অনেক যুক্তিযুক্ত মনে হয়। ইসলাম মূলত আরব দেশীয় কালচার বহন করে আর আরবি ভাষাকে স্বর্গীয় ভাষা হিসেবে মেনে নিতে বলে যেমন ইহুদিরা হিব্রু ভাষাকে স্রষ্টার ভাষা মনে করে। নূহ নবীর এক ছেলের নাম ছিল সেম তার নাম থেকেই বা তার নামেই সেমেটিক এক স্রষ্টা বাদী ধর্মের সমষ্টি সকল বলে ডা.জকির নায়েক এর বই লেখা আছে। অর্থাৎ ইহুদী, খ্রিষ্টান আর মুসলিম ধর্ম সম্প্রদায়। অন্যদিকে ভেদিক/বেদিক বা ভেদ/বেদ ভিত্তিক ধর্ম সমূহ যেমন হিন্দু ধর্ম ঋক বেদ, আয়ুরবেদ, অথর্ব বেদ ইত্যাদি। এত মুনির এত মত এর দরকার নাই বরং সাদা মনেই বুঝা যায় যেখানে বিষয়টা শত কোটি বছরের বিবর্তন আর আমাদের আয়ুষ্কাল মাত্র ৬০ কি ৭০ বছর। এত বৃহৎ ক্যানভাসে আমার অস্তিত্ব অতি ক্ষুদ্র। সব ধর্মই দাবী করে তারা সঠিক সর্বত ভাবে বিশ্ব চরাচরের অস্তিত্ব ভবিতব্য ব্যাখ্যা করতে পারে। তা তারা পারেও কল্পনার উপর ভর করে। মৃত্যুর ওপার থেকে যেহেতু কেউ -মেইল কিংবা  তার বার্তা টরে-টক্কা পাঠায় নাই তাই সকল বিষয় কেবল বিশ্বাস নির্ভর। বিশ্বাসে মিলায় সিন্ধু তর্কে বহু দুর। মানুষকে মৃত্যু  মৃত্যু পরবর্তী কবর আজাব এর ভয় দেখান আর তদপরবর্তী বিচার দিবস তার প্রেক্ষিতে দোজখ বেহেস্ত এর সমাধান দেয়া নিয়ে যে কত বিচিত্র বর্ণনা আর গাল-গল্প তার আর যেন শেষ নাই। ধর্ম চিন্তা উদ্ভাবনী মানব মষ্তিস্কের অকাল মৃত্যু বললেও ভুল হবে বলে মনে হয় না।

কেবল অন্ধ বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে মন সায় দেয় না। দোটানার মন নিয়ে বেচে থাকাও কঠিন। আমার মানুষিকতার এই দোদুল্যমানতা বহু আগে থেকেই বিদ্যমান, আর নতুন কি। তবে এই ৫০ বছরের জীবনের ইতিহাসে ধর্মের চেয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক অধর্মর প্রতি আমার ঝোঁকটা বেশি বলে দেখা যায়। আমার বেশির ভাগ পরিচিত মানুষই ধর্ম বিশ্বাসী কিন্তু তাদের আবেগ তাড়িত কথাবার্তা আমার ইদানীং আর ভাল লাগে না। প্রচুর আবেগ উচ্ছ্বাসে তারা তাদের বক্তব্য যখন পেশ করেন তখন মনে হয় অন্য কোথাও যাই, অন্য কারো সাথে কথা বলি। এই এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাটা ইদানীং আমার মধ্যে দেখা যাচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক বিশ্বে হতে পারে যে, মৌলিক প্রশ্ন সকল এর উত্তর সরাসরি দেয়া যাচ্ছে না তার পরও নতুন সম্ভাবনা ক্রমাগত উন্মোচিতই হচ্ছে উত্তর খুঁজার আর উত্তর দেবার। এই দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে তাই ধর্ম চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়াই শ্রেয় বলে আমার মনে হয়। ২০০২ সালের যে লিফলেটটিব্লাইন্ড ফেইথ অর ইন্টেলেকচুয়াল বিলিফআমার চিন্তার মোর ঘুরায়ে দিয়েছিল তা বর্তমানে আর কাজ করছে না। ইন্টেলেকচুয়াল বিলিফ বলতে উনারা যা বুঝাতে চাচ্ছিলেন তা হলো ইসলাম ধর্মে অন্ধ বিশ্বাসের জায়গা নাই আছে ইন্টেলেকচুয়াল বিলিফ, এই বিলিফ বলতে তারা সেই মৌলিক প্রশ্ন এত সব কি একা একাই স্বয়ংক্রিয় ভাবে ঘটছে নাকি এই সীমাবদ্ধ নির্ভরশীল বিশ্ব কোন অতি প্রাকৃত স্রষ্টার নির্দেশনা মত হয়েছে সেই আদি অকৃত্রিম প্রশ্নে চিন্তা কল্পকে নিয়ে যায় তার পর তাকে ওই নিশ্চিত বিশ্বাসে নিয়ে আসে যে, অবশ্য অবশ্যই এই বিশাল ব্রক্ষ্মান্ড এক জন এবং অতি আবশ্যক একজনই স্রষ্টা আছেন যার কাছ হতে এই ব্রক্ষ্মান্ড সম্পর্কে না জানলে আমাদের আর কার কাছ থেকে জানার উপায় নাই। বিজ্ঞানের মনোভঙ্গি আর এই মনোভঙ্গি পরস্পর সাংঘর্ষিক। একটি সকল প্রশ্নর উত্তর প্রদান করে অন্যটি সকল প্রশ্নর উত্তর খুঁজে বেড়ায়। বিজ্ঞান কোন নতুন কিছু আবিষ্কার করলেই তারা বলেন যে দেখ দেখ আমরা ১৪০০ বছর আগেই সম্পর্কে প্রমাণ পেয়েছি। এই খুঁজে পেয়েছি আর নতুন করে খুঁজে পাওয়ার মধ্যে অনেক তফাত। তারা বলতে চান এত বই, এত গবেষণার তেমন দরকার নাই, সকল প্রশ্নর উত্তর ধর্মগ্রন্থেই আছে। মানুষের এই যে আর্থসামাজিক অবস্থার দ্রুত পট পরিবর্তনকে তারা কি দিয়ে ব্যাখ্যা দিবেন আমার জানা নাই।

আমার এই মতামত সমূহ সময় ও অভিজ্ঞতার সাথে পরিবর্তনশীল তাই আমার কথা গুল থেকে অনুরোধ কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। রবীন্দ্রনাথের গোঁড়া’তেও এমন একটা চরিত্র ছিল যে মনে করত তার জন্য ধর্ম নয় তবে সাধারণ মানুষের জন্য ধর্মের দরকার আছে। তার সাথে আমার বক্তব্য গুল যেন মিলে যায়। আমাদের সমাজের অসাধু উচ্চ পর্যায়ের লোকসকল হয়ত তেমনই মনে করেন। উপর মহলে অধিকাংশ লোক সৎ ও সাধু না হলে দেশটা দেউলিয়া হয়ে যেত, তাই আমি মনে করি বর্তমানে উপর মহলে বেশিরভাগই সৎ ও সাধু। অসাধু বলতে বুঝাচ্ছি যারা প্রচলিত কাঠামোকে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করে। উপরের আলোচনায় আমার মত ও পথ এর নানা বাকগুলো তুলে ধরার উদ্দেশ্য নিজের চিন্তা ভাবনা গুলো একটু গুছায়ে নেয়া। নিজেই নিজের চিন্তা গুলকে প্রশ্ন করা যাতে তা সঠিক পথে এগুচ্ছে কিনা তা যাচাই করে দেখা। আমার মতে আমি পরিপার্শ্বিক ধর্মাবলম্বী সমাজ কাঠামোকে অস্বীকার করে অধার্মিক হতে পারছি না, কিন্তু হতে চাচ্ছি বলে মনে হয়। ধর্মকে স্বীকারও করতে পারছিনা আবার অস্বীকারও করতে পারছিনা এরকম দোটানায় আছি। আমার মত মানুষের সংখ্যা যদি বৃদ্ধি পায় তবে তা নিঃসন্দেহে সমাজে কোন মঙ্গল বয়ে আনবে না। একটা না একটা কনক্রিট বা স্বতঃসিদ্ধ চিন্তাধারায় নিজেকে স্থাপন না করতে পারলে আমারও ক্ষতি, সমাজেরও ক্ষতি। ৩৩ ভাষায় অনূদিত ইন্টারন্যাশনাল বেস্টসেলার “চতুর্থ শিল্প বিপ্লব” –ক্লাউস শোয়াব, অনুবাদ ওয়ালি-উল-মারূফ মতিন তার বইয়ে বলেছেন ”চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে যে সমস্ত অনুমান করা যায়, তাতে মনে হয় এর মধ্যে একটা ধর্মনিরপেক্ষতার সুর আছে। যে সমস্ত সমাজ ধর্ম নির্ভর, সেগুলোর সাথে একটা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে। বিশ্বায়নের সময় একটা ধর্মনিরপেক্ষ ধর্ম দর্শন সৃষ্টি হয়েই যায়। চরমপন্থিরা এই দৃষ্টিকোণকে পছন্দ করবে না”।

আপডেট হিস্ট্রিঃ ১৪আগষ্ট১৭>২৮জুন২০২২> ১২জুলাই২০২২ >১৯জুলাই২০২২ >

No comments:

Post a Comment