Wednesday, July 6, 2022

আমার স্মৃতিতে সেম্বা (কমনওয়েল্থ এক্সিকিউটিভ এমবিএ) আর সেম্বা এলুমনাই ক্লাব -বাংলাদেশ

 


বিগত ২০-মে-২০২২ সাম্পান রেস্টুরেন্টে সেম্বা পুনরমিলনীর আয়োজন করা হয়ে গেল। গত দুই বছর আমার একক প্রচেষ্টায় পুনরমিলনীর আয়োজন করা হয়েছিল, এবার মাহমুদুল ইসলাম ভাই (অপসোনিন ফার্মা’র) আর ডা.স্বপন ভাই এর সহযোগিতায় আমার কষ্টটা কম। তৃতীয় ব্যাচ থেকে সিবলী ভাই এর কাছ থেকেও ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। মনে হয় এবার একটা বড় কিছু হবে। তারাহুরো করে স্মৃতিচারণ করার উদ্দেশ্য হলো নতুন যারা আসছেন তাদের ইতিহাসটা জানা প্রয়োজন আর আমি যেহেতু প্রথম থেকেই বিভিন্ন ইভেন্টে এর সাথে সম্পৃক্ত তাই আমার কাছ থেকে মজার গল্প গুল শুনলে হয়ত তারা আরও অনুপ্রাণিত হতে পারেন। অনেক গুল ঘটনা এই সংগঠনটাকে ঘিরে ইতোমধ্যে হয়ে গেছে যার সবকটা আমরা সবাই জানিও না। এর মধ্যে আমাদের দুই জন পরলোকগতও হয়ে গেছেন। তাদের কথা নতুনরা জানেন না। তাই একটা লগ বই এর মত আমার স্মৃতি গুল কাজে আসবে বলেই এই লেখাটা ২০ মে তারিখের আগেই শেষ করতে চাচ্ছিলাম কিন্তু তা আর হলো না। যা হোক, সময় পাওয়াতে একদম প্রথম থেকেই শুরু করব স্মৃতিচারণ যাতে করে এই সংগঠনের ঘটনার ঘাত প্রতিঘাত গুলো যা আমার চোখে দেখা তা উঠে আসে। আমি প্রথম ব্যচের বা লেভেলের হওয়ায় সবগুলো ঘটনা প্রবাহই উল্লেখ করব যাতে তা’র ধারাবাহিকতা টা ঠিক থাকে।

আমার এসএসসি ঢাকার ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ হাইস্কুল থেকে ১৯৮৯ এ। পরবর্তীতে পড়াশুনা করি আদমজী ক্যান্ট কলেজ আর তিতুমির কলেজে। আমার কর্মজীবনের শুরু ১৯৯৮ এ ঢাকার কাকরাইলের একটি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ফার্ম “করনা-আইটি” তে। মানব জমিন পত্রিকা অনলাইনে আপলোড করতাম তখন আমি একা। ঔ সময় ওয়েব বেইজ্ড পত্রিকা দু একটা ছিল মাত্র। এর পর সময়টা ২০০১, তৎকালের ইন্ডিয়া-বেক্সিমকো-কেডিএস ফ্রেঞ্চাইজি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এনআইআইটি (NIIT) এর সিলেট আম্বরখানার সেন্টারে ফ্যাকাল্টি (প্রশিক্ষক) হিসেবে চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে ঢাকায় চলে আসি আর ধানমন্ডির (কেনাডিয়ান ফ্রেঞ্চাইজি) টেকনো-কিড্স এ বাচ্চাদের কম্পিউটার প্রশিক্ষক হিসেবে চাকুরীতে ঢুকি। পড়াশুনা আর আগে বাড়ানোর জন্য নতুন একটা ভালো কোর্স খুজছিলাম, কি করা যায়, কোথায় করা যায়। এমবিএ তো করাই যায় বিভিন্ন প্রাইভেট ইউনিভারসিটিতে কিন্তু তখন চাকরিরত অবস্থায় রেগুলার এমবিএ করাটা সম্ভব ছিল না। আর সোনালী ব্যাংকে চাকুরীতে ঢুকবো চিন্তাতেই ছিল না তখন। হটাতই একদিন পেপারে বিজ্ঞাপন দেখলাম কমনওয়েল্থ এক্সিকিউটিভ এমবিএ কোর্স ওপেন ইউনিভার্সিটি তে শুরু হতে যাচ্ছে যার জন্য ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ও অন্যান্য তথ্যাদি দেয়া ছিল। বিজ্ঞাপন দেখেই খুব আগ্রহ হলো, তার পরপরই খোজ খবর নিতেই আমার ই-মেইলে সেই একই বিজ্ঞাপনের বিস্তারিত তথ্য চলে আসল। আরও আগ্রহ বেরে গেল। ঢাকা আরআরসি (রিজিওনাল রিসোর্স সেন্টার) তে গেলাম আর ওখান থেকে প্রসপেক্টাস এনে ভর্তি পরীক্ষার নমুনা মোতাবেক প্রস্তুত হলাম। ঢাকার তেজগাঁও কলেজ পুরটা ভাড়া নিয়ে প্রায় ৩০০০ পরীক্ষার্থীর মধ্য হতে ২৫০ জন কে বেছে নেয়া হয়। ভাগ্য ভাল ওই ২৫০ জনের মধ্যে আমিও ছিলাম। নবীন বরন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বা বাউবি’র স্কুল অব বিজনেস এর স্যারদের দেখে খুব ভাল লাগল। বিশেষ করে সালমা আপার প্রাণবন্ত বক্তব্য ভাল অনুপ্রেরণার জন্ম দিয়েছিল। ক্লাস হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমার্স ফ্যাকাল্টিতে আর টিউটোরিয়াল ক্লাস গুলো নিবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসররা জেনে কোর্সের মান সম্পর্কেও উচ্চ ধারনা হয়েছিল। চাকুরীর পাশাপাশি পড়াশুনা আর প্রতিটি সাবজেক্টে মাত্র ১৬টা টিউটোরিয়াল ক্লাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরগন ভালই ক্লাস নিতেন, কিন্তু কয়েকজন ছিলেন ক্লাসে এস শুধু বসে থাকতেন। ভাবটা এমন এটা তো টিউটোরিয়াল ক্লাস, তাই ছাত্ররা প্রশ্ন না করলে বলার কি বা আছে। এরকম দেখে আমরা সালমা ম্যাডামকে কমপ্লেইন করলাম আর তিনিও ব্যবস্থা নিলেন। ততদিনে দ্বিতীয় ব্যাচ এর ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে। শোনা যাচ্ছিল সালমা আপা কমার্স ফ্যাকাল্টিতে বসার ব্যবস্থা চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে মারত্বক অভিমান করে ঢাকা আরআরসি তেই এসি ক্লাসরুম এর ব্যবস্থা করেছেন। যার মানে হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমার্স ফ্যাকাল্টিতে আর আমাদের ক্লাস হবে না। এটা জানতে পেরে প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্রদের মধ্যে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলো। আমরা চাচ্ছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে কিন্তু উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস এর ছাত্র আমরা আর আমাদের স্যর-ম্যাডামদের ইচ্ছা বা জেদ হলো, যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমার্স ফ্যাকাল্টি তাদের গুরুত্ব দেয় না তাই তাদের এসি ক্লাস রুম আমাদের লাগবে না, বরং তারাই তাদের ছাত্রদের নিজেদের ক্লাস রুমে পড়াবে। যে দিন আমাদের সার-ম্যাডামরা ঢাকা আরআরসি’র নতুন এসি ক্লাস রুমে বসে আছে আমাদের অপেক্ষায় আমরা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমার্স ফ্যাকাল্টিতে অবস্থান ধর্মঘটের মত বসে আছি। যখন শুনলাম আমাদের স্কুল অব বিজনেসের স্যার-ম্যাডামরা রাগ করছেন তখন সবাইকে বুঝায়ে নিয়ে ঢাকা আরআরসি তে চলে গেলাম। শুরু হলো ঢাকা আরআরসি’র ক্যাম্পাসে ক্লাস নেয়া। স্টাডি ম্যটেরিয়াল হিসাবে ইন্ডিয়ার ইগনু (ইন্দিরা গান্ধি ওপেন ইউনিভারসিটি)র সিডি গুলো বেশ কাজে এসেছিল। বিবিসি’র সেম্বার উপর বিশেষ প্রোগ্রাম আর তাদের ওয়েব সাইটে সংরক্ষিত পিডিএফ ফাইল গুলোও দারুণ অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। সবগুলো পিডিএফ ডাউন লোড করে পাড়া হয়েছিল আর সেম্বার উপর ম্যাগাজিনটা পেয়ে তো মহা খুশি, অনেক কাজে এসেছে এগুল। যদিও অনেকে স্টাডি ম্যাটেরিয়াল নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিল সেই সময়। আমাদের সময় বইগুলো ছিল ফটোকপি করে স্পাইরাল বাইন্ডিং করা। তখনও ছাপা হয় নি কানাডার কমনওয়েল্থ অব লরনিং থেকে পাঠান কোর্স এর বইগুলো।

আমার সেম্বা কোর্সের শুরু ও শেষ দারুণ দু-জন মানুষের সাথে। শুরুতে এলজিইডি’র ইঞ্জিনিয়ার আলী হোসেন ভাই (বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে সপরিবারে আছেন) আর শেষ করি এনসিসি ব্যাংকের সাদিক ভাই এর সাথে। এই দু-জন অসাধারণ ব্যক্তির সাথে পরিচয় হওয়া ও একসাতে পড়াশুনার সুযোগ আমার জীবনের একটা বড় পাওয়া। ঢাকা কলেজের বিপরীতে জনতা ব্যাংকে প্রথম কোর্স ফি জমা দেয়ার সময় আলী হোসেন ভাই এর সাথে পরিচয়। আমি চারটা কোর্স নিবো শুনে উনি মহা বেকে বসলেন, বললেন আপনি দুটার বেশি কোর্স নিয়েন না, পারবেন না। আমি একরোখা বললাম পারব, কিন্তু উনি আমাকে চারটা নিতেই দিলেন না। উনার কথা মতই দুটা কোর্সের টাকা জমা দিলাম। পরবর্তীতে উনার অনুরোধে বা প্রস্তাবে উনার সাথে বিসিএস পরীক্ষাও একসাথেই দিয়েছিলাম আর ভাইবা পর্যন্ত একসাথেই ছিলাম। দুজনই ভাইবায় ধরা খেলাম। পরে সোনালী ব্যাংকের চাকরিটা হয়ে গেল আমার আর আলী ভাই তারও বেশ কয়েক বছর পর সপরিবারে অস্ট্রেলিয়া চলে গেলেন। ঢাবি’র কমার্স ফ্যাকাল্টিতে থাকাকালীন শোনা গেল কমনওয়েল্থ অব লারনিং এর অশা মেডাম ক্যানাডা থেকে ঢাকায় আমাদের কোর্স পরিদর্শনে আসছেন আর আমরা যেন আমাদের সুবিধা-অসুবিধা গুলো লিখিত আকারে উনাকে দেই। আমি উনাকে দিয়েছিলাম কয়েকটা প্রশ্ন, তার মধ্যে ছিল ১)আমাদের কোর্স ৯০ ক্রেডিটের অথচ একে এক্সিকিউটিভ এমবিএ বলার কারণ কি, একে কি রেগুলার এমবিএ বলা যায় না? উত্তরে বলেছিলেন এই প্রোগ্রাম চালু করার ১০ বছর আগে থেকে পরিকল্পিত তাই সহজে এর নাম পরিবর্তন করা যাবে না। ২) প্রশ্ন করেছিলাম যেহেতু সেম্বা আর সেম্পা’র মধ্যে মাত্র দুটা সাবজেক্টের পার্থক্য তা হলে যদি কেউ ওই দুটো সাবজেক্ট করে নেয় পাশাপাশি তা হলে তাকে কি সেম্বা’র সাথে সাথে সেম্পার সার্টিফিকেটও দেয়া যায় কি না। উত্তরে উনি বলেছিলেন, এমন কি কখনও হয় যে সাবসিডিয়ারি কোন সাবজেক্ট এ আপনাকে ওই সাবজেক্টের মাস্টার্স ডিগ্রি দিয়ে দেয়া হয়? অর্থাৎ এরকম সম্ভব নয়।

আমাদের সময় তিন মাস পিছানোর পর মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট পরীক্ষা হয় তাই ফিলিপ কটলারের মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট বইটা ভাল ভাবে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম আর একেবারে জম্পেশ একটা পরীক্ষা দিয়ে কাঙ্ক্ষিত মানের চেয়ে কম নম্বর পেয়ে বেশ মন খারাপও হয়েছিল। একবার পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে এম এম মাসুদ (দাদা) ভাই এর উদ্যোগে আমরা বাউবি তে রওনা হই। মাসুদ ভাই কে দাদা বলার কারণ তিনি তখন ঢাকা ইপিজেডএ কোরিয়ান দাদা হেড ওয়ার কোম্পানিতে উঁচু পদে (সম্ভবত ডিজিএম পদে) কর্মরত ছিলেন। আর উনার উদ্যমও অসাধারণ ছিল। যা হোক আমরা ডিন এর সাথে দেখা করে আমাদের পরীক্ষা পিছানর যুক্তি গুলো বলেছিলাম, পরে কি হয়েছিল এখন আর মনে নাই তবে পথিমধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লায়ন্সের ক্যাটারিং সার্ভিস অফিসের এক সেম্বা মেটের ওখানে দারুণ খাওয়া দাওয়া হয়েছিল মনে আছে। এই মাসুদ ভাই এর উদ্যোগেই দ্বিতীয় ব্যাচের সাথে প্রথম ব্যাচের কয়েকজন (যার মধ্যে আমিও ছিলাম) নিয়ে একটা পিকনিক আয়োজন হয়। এটাতে অংশ গ্রহণ করার পর পরলাম মহা বিপদে। প্রথম ব্যাচের কয়েকজন তো ভিতর ভিতর খেপে আছে। জাহাঙ্গীর ভাই তখন সম্ভবত প্রিমিয়ার ব্যাংকে ছিলেন, উনার অফিসে মিটিং ডাকা হলো, কেন দ্বিতীয় ব্যাচের পোলাপানরা প্রথম ব্যাচকে বাদ দিয়ে পিকনিক করল, আমি মহা সংকোচে সেই মিটিং এ অংশ গ্রহণ করেছিলাম। বিশেষ করে জাহাঙ্গীর ভাই ফোনে বলেছিলেন আপনার আসাটা নাকি জরুরী। ওখানে বলা হচ্ছিল কিছু কিছু প্রথম ব্যাচের লোকজনও সেই পিকনিকে গিয়েছে। নিজেকে অপরাধী অপরাধী ভাবছিলাম তখন, ভাগ্য ভাল ধরা পরি নাই বেকায়দা ভাবে, যদিও একজন বলেই বসে, পিকনিকে উনিও তো ছিলেন, অন্যদের কথাবার্তার মাঝে ওই কথা চাপা পরে যায়। যা হোক, পিকনিকটা আনন্দময় ও দারুণ হয়েছিল। একসাতে ফুটবল খেলা, গানের আসর সহ দারুণ উপভোগ্য সময় কাটিয়েছিলাম আমরা সে সময়। মফিজ ভাই এর সাথে ওই পিকনিকেই পরিচয় আমার কার্ড দেখে বলেছিলেন আপনি তা হলে ইয়ং ব্যাংকার। মফিজ ভাইকে তখন থেকেই দেখতাম সবার কার্ড সংগ্রহ করছেন ও সবার সাথে পরিচিত হচ্ছেন, আজও তার আগ্রহ ও উদ্যমও সেইরকমই দেখি। এটা নিঃসন্দেহে উনার একটা মহৎ গুন। বিপু ভাই (উত্তরা ব্যাংক) এর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান মফিজ ভাই এর আসার ছাদে হয়েছিল শুনেছিলাম। মফিজ ভাই-ভাবি কে নিয়ে বিপু ভাই বেশ কয়েকটা ভ্রমণ করেন, উত্তরা ব্যাকের ভ্রমণ বিলাস সংগঠনের পক্ষ থেকে নিঝুম দীপের টুরে আমার পরিবার সহ আমিও উনাদের সাথে গিয়েছিলাম, সেবার নিঝুম দীপ থেকে ফেরার পথে জাহাজটা চরে আটকে যায়, তখন মফিজ ভাই এর ফোন কলে কোস্ট গার্ডরা চলে এসেছিল সাহায্য করতে। শুনেছিলাম মফিজ ভাবিকে নিয়ে বিপু ভাই, মাসুদ-মুন্নি ও’রা খাগড়াছড়িও ঘুরে আসেন যেখানে মফিজ ভাবির মাথা কেটে গিয়েছিল কোন এক দুর্ঘটনায় আর মফিজ ভাই এর ফোন কলে আর্মির লোকজন তাদের সহযোগিতা করেন।

একদিন হন্তদন্ত হয়ে জমুনা ব্যাংকের (বর্তমানে সীমান্ত ব্যাংকে কর্মরত) ফয়সাল ভাই আসল ঢাকা আরআরসিতে, এসেই বলল তার নাকি সব সেমিস্টার শেষ আর পরীক্ষা দিতে পারবেন না। তাকে খাতায় সেমিস্টার গুলর ব্যাপ্তি লিখে দেখালাম তার তখনও একটা সেমিস্টার বাকি। উনি যেন তেন প্রকরণে গায়ে জর থাকা অবস্থায় পরীক্ষা দিয়ে তার বাকি সব সাবজেক্ট গুল পাস করে গেলেন। এই ফয়সাল ভাই আর বিপু ভাই এর কাছ থেকেই শুনতাম এলুমনাই ফরমিং এ মাহমুদ ভাই ও জাহাঙ্গীর ভাই  উদ্যোগ নিয়েছেন আর রেজিস্ট্রেশন ফরমও পাওয়া যাচ্ছে। তাহমিদ ভাই তখন সিলেটের কোন একটা টি গার্ডেনের ম্যানেজার ছিলেন তখন, উনিও ছিলেন উদ্যোগটার সাথে। ততদিনে তৃতীয় ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। পরিচয় হলো শাহরিয়ার মামুন ভাই (বর্তমানে উনি আর বেচে নাই) আর ওমর ফারুক ভাই এর সাথে। দুজনই ছিলেন মহা উচ্ছ্বসিত আর সেম্বার ক্লাস গুলো করে মহা আনন্দিত। অফিসের নানা কাজের চাপে ভুলেই গিয়েছিলাম কোন সাবজেক্ট গুল পাস করেছি আর কোন গুলো বাকি ছিল, তাই একটা চিঠি লিখে চলে গেলাম বাউবি’র স্কুল অব বিজনেসে, ওখান থেকে জেনে আসলাম কি কি বাকি আছে। আমার তখনও ফিনানসিয়াল একাউন্টিং বাকি, কি করা যায় ভাবছি। সাদিক ভাই এক পরীক্ষা শেষে এসে বলল আপনার কি একাউন্টিং বাকি? সাদিক ভাই সম্পর্কে মজার বিষয়টা বলে নেই, উনি বহু পূর্ব হতেই এনসিসি ব্যাংকে আছেন। আমি যখন ২০০১এ টেকনোকিড্সএ কর্মরত তখন এক বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের এনসিসি ব্যাংকে গিয়েছিলাম টাকা জমা দিতে। সাদিক ভাই তখন ওখানকার ম্যানেজার, ভাল করে উনাকে চিনতামও না। আমি বিকালে টাকা জমা রাখতে যাওয়াতে উনি হেসে বলেছিলেন টাকা রাখতে পারি কিন্তু টাকা জমা হবে রবি বার। আমি রাজি হয়েছিলাম আর টাকাটা উনার জিম্মায় রেখে এসেছিলাম। তখন ঘুণাক্ষরেও জানতাম না যে একদিন এই ম্যানেজার সাহেবের সাথে আমার পড়াশুনা সংক্রান্ত ঘনিষ্ট একটা সম্পর্ক হবে। এই ঘটনাটা ঘটেছিল সেম্বাতে পড়াশুনা শুরু করার আগে ২০০১ সনে আর আমার সেম্বাতে পড়তে শুরু করা ২০০২ তে। যা হোক দুজনই একাউন্টিং নিয়ে চিন্তিত। আমি আমার পূর্বের কর্মক্ষেত্র এনআইআইটির কলিগ চন্দন দা কে খুজছিলাম মনে মনে। তিনি ওই চাকরী ছেড়ে নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজে জয়েন করেছেন বলে শুনেছি। তিনি এনআইআইটির একাউন্টেন্ট ছিলেন। এরকম সময় এক বৃষ্টি ভিজা দিনে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের নিচে বাস স্টপে উনার সাথে কাকতালীয় ভাবে দেখা হয়ে গেল। বহু দিন পর দেখা হওয়ায় দুজনেই মহা খুশি। এই সুযোগে উনার কাছে সাহায্য চাইলাম আর তার পর উনি যে ছাত্রদের কোচিং করান সেই জায়গায় আমি, সাদিক ভাই আর মিনি আপা ক্লাস করলাম বেশ কয়েক দিন। তার পর পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষার ফলাফলের দিন আমি আগে পৌঁছে যাই আরআরসিতে, খুঁজে দেখলাম পাস করেছি আর সাদিক ভাই রিক্সায় আসছিল জিজ্ঞাসা করল তার খবর কি? আমি বললাম মিষ্টি নিয়ে আসেন। দু জনে এক সাথে পাস করে বের হলাম ওই দফায়। মিনি আপার খোজ পেলাম না, মনে হয় সে বার তার হয় নাই। আমি আর সাদিক ভাই এর পর একসাথে সিটি কলেজের মোড়ে এক রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া করলাম।

আমার প্রজেক্ট পেপার নিয়ে মহা কাণ্ড হয়েছিল। স্কুল অব বিজনেস এর এসোসিয়েট প্রফেসার ডা. মোঃ মাইনুল ইসলাম স্যার এর তত্ত্বাবধানে সাম্প্রতিক বিশ্ব অর্থনীতি ও ইসলামী অর্থনীতির উপর তুলনা মূলক গবেষণা ছিল আমার প্রজেক্ট বা মাস্টার পেপার যার টাইটেল ছিল “A COMPARATIVE STUDY BETWEEN CONTEMPORARY GLOBAL ECONOMIC SYSTEM AND ISLAMIC ECONOMIC SYSTEM” । ওই সময় অফিসিয়াল কাজে এত ব্যস্ত ছিলাম যে, প্রচুর সময় নিয়ে মনের মত করে প্রজেক্ট এর কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না, তার পর যখন সময় হলো তখন ফোন করলাম সারকে। উনি ফোন পেয়ে বললেন তিনি খুব অসুস্থ এবং হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এদিকে আমার রেজিস্ট্রেশনের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফোন করলাম স্কুল অব বিজনেসে, অন্য এক স্যার ধরলেন, তাকে বললাম, অফিস ছুটি পাই না কেমন করে দেখা করব, উনি উল্টা বকা দিয়ে বললেন তা হলে কি আমি আপনার সাথে দেখা করব? এ রকম অসহযোগিতা পেয়ে মনে উৎকণ্ঠা নিয়ে গেলাম চলে স্কুল অব বিজনেসে। ওখানে যেয়ে তো হতবাক। মাইনুল স্যার বহালতবিয়তে অফিসে, তিনি আর রাগ দেখায়ে বললেন আপনি নাকি বলে বেড়াচ্ছেন আমি হাসপাতালে ভর্তি, কই আমার তো কোন অসুস্থতা নাই। আমার চোখ ছানা বড়া। ভাল করে ফোন নম্বর চেক করে দেখলাম। আমি ভুল করে আমার মামার বন্ধু ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডারমাটলজির হেড অব ডিপার্টমেন্ট মঞ্জু মামাকে ফোন করেছিলাম, উনিও প্রফেসর আর উনি ভেবেছিলেন উনার কোন ছাত্র ফোন করেছে। ভুল বুঝতে পেরে নিজের গালে নিজে চর মারতে ইচ্ছা হয়েছিল এই যা। যা হোক পরে প্রজেক্ট শেষ করে মাইনুল সারকে বেশ কয়েকবার দেখালাম, শেষ বার মনে আছে যেতে হয়েছিল ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে যখন উনি ওখানে ক্লাস নিতে গিয়েছিলেন। উনি বলেছিলেন প্রজেক্ট পেপারটা একটা বই আকারে প্রকাশ করতে। এত কষ্ট করে যে প্রজেক্ট করা হলো তার নম্বর অন্যকে দেয় হয়েছিল টেবুলেশান সিটে, সেটাও মাইনুল স্যার ঠিক করে দিয়েছিলেন সেই সময়। আমার প্রভিশনাল সার্টিফিকেট আনতে গিয়ে সিএনজি ট্যাক্সিতে আগুন লেগেছিল। যখন জানলাম প্রভিশনাল সার্টিফিকেট উঠান যাবে তখন অফিস ছুটি নিয়ে আমাদেরই প্রাইভেট সিএনজি ট্যাক্সি নিয়ে রওনা দিলাম বাউবি। ওখান থেকে সার্টিফিকেট উঠানর পর যখন ফেরত আসছি তখন পাশ দিয়ে যাওয়া এক মটর সাইকেল আরহী হাত দিয়ে দেখায়ে বলে গেল আগুন লেগেছে সাইলেন্সর পাইপে। আমার গাধা মার্কা ড্রাইভার আসার সময় সাইলেন্সর পাইপের নিচে কাগজ দিয়ে ওটা যাতে শব্দ না করে শক্ত ভাবে লেগে থাকে তার ব্যবস্থা করেছিল। ওই কাগজ থেকেই আগুন লেগেছে। আগুন লেগেছে শুনার পর তাড়াতাড়ি গারি থামায়ে পাশের দোকান থেকে কলশি ভর্তি পানি ঢেলে তবে ফির রওনা হওয়া। ওই দিন আগুন লেগেছে জানতে না পারলে এই ইহকালের সমাপ্তি ওই দিনই হয়ে যেত। যে দিন কনভোকেশন হলো মহা ধুম ধামে সেদিন গরমে যে কষ্ট হয়েছিল পাশাপাশি যে আনন্দ হয়েছিল তা প্রায় সমান সমান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংকর দা’র সাথে দেখা। দু-জন একসাথে টাই, কনভোকেশন গাউন আর হেট পরে নিয়েছিলাম। অত্যন্ত গরমে ভাজা ভাজা হওয়া আর যে বিশাল পেন্ডেল বানিয়েছিল তা দেখার মত, এত গরম যে লাগবে তা আগে বুঝা যায় নাই। তবে সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে আমি, সাদিক ভাই, সুমি মেডাম, সংকর দা আর ওমর ফারুক ভাই প্রচুর ফটো সেশন করেছিলাম। তখন ডা. স্বপন ভাই ও ইঞ্জিনিয়ার খায়ের ভাই সহ আরও অনেকে ছিল কিন্তু উনাদেরকে তখন অতটা ভাল ভাবে চিনতাম না। সংকর দা, বিপু ভাই, মফিজ ভাই উনারাও ছিলেন একসাথে। তবে আমার কাছে অত্যধিক গরমটাই মনে আছে। কনভোকেশন শেষে বিপু ভাই এর গাড়িতে চাপাচাপি করে অনেকের সাথে ঢাকায় ফেরত আসার সময় ওমর ফারুক ভাই এর প্রচুর কথাবার্তার কথাও মনে আছে ভালই।

২০০৫ কি ২০০৬ এর দিকে সেম্বা এলুমনাই ক্লাব নিয়ে প্রথম ব্যাচের মাহমুদ ভাই (মিলিনিয়াম সফটওয়্যার) আর জাহাঙ্গীর ভাই (তখন প্রাইম ব্যাংকে ছিলেন বর্তমানে এবি ব্যাংকে) প্রথম প্রসঙ্গ তোলেন তাদের সাথে দ্বিতীয় ব্যাচের তাহমিদ ভাই (বর্তমানে ইউসিবিএল এ আছেন) বিপু ভাই (তখন উত্তরা ব্যাংকে ছিলেন) আর প্রথম ব্যাচের ফয়সাল ভাই (তখন যমুনা ব্যাংকে ছিলেন) উনারা বেশ তৎপর ছিলেন। ২০০৮ কি ২০০৯ এর দিকে এক সময় মুন্নির কিডনি সংক্রান্ত মারাত্মক এক অসুখ হলো যাতে প্রচুর খরচ, তখন সেম্বা এলুমনাই ক্লাব থেকে সহযোগিতা করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ব্যাচের মাসুদ ভাই (বিআইবিএম) এর সাথে মুন্নির বিয়ে আরেকটি চমকপ্রদ ঘটনা যার ফলে ওদের সেম্বা কাপল বলে ডাকা হয়। এরকম এক সময় তাহমিদ ভাই এক মিটিং ডাকে সেই মিটিং এ প্রস্তাব রাখা হয়েছিল সেম্বা এলুমনাই ক্লাবকে আরজিএসসি তে রেজিস্ট্রেশন করা হবে কি না আর হলে কবে হবে। আমি বোকার মত বলে বসেছিলাম, আমাদের সংগঠনের যে ধরন তাতে তাকে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে কেন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে?, শুনে তাহমিদ ভাই মহা হাসি দিয়েছিল। ওই সময় প্রস্তাবিত কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (রিটায়ার্ড) মফিজ ভাই এর নাম আসলে তিনি তাতে সম্মত হওয়োর আগেই ডা. খালেদ ভাই  (Dr. Khaled Samsul Islam Doller) বা ডলার ভাই (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) এর বাদানুবাদ এর সৃষ্টি হয়। ডা. খালেদ ভাই বলছিলেন মফিজ ভাইকে কেন তিনি ভাবছেন তাকেই চেয়ারম্যান করা হবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।  খালেদ ভাই ক্যানাডায়  সেম্বা করতে গেয়েছিলেন কিন্তু ওখান থেকে বলা হয় বাংলাদেশেই এটা চালু হচ্ছে ভারত, পাকিস্তান আর শ্রীলংকার পাশাপাশি, তখন তিনি এদেশে ফিরে সেম্বা কোর্সটা করেন। উনি বিশ্বের প্রায় ৬৪’র উপর দেশে গেছেন সরকারী কাজে ও ব্যবস্থাপনায়। যা হোক বিপু ভাই, ফয়সাল ভাই উনারা খালেদ ভাই এর বাসায় যেতেন আর বেশ কয়েকটা ভ্রমণ এও সফর সঙ্গী ছিলেন। উনারা কুয়াকাটা, ইন্ডিয়া আর বান্দরোনে একসাথে গেছেন বেরাতে। বান্দরবান টুরে আমিও গিয়েছিলাম উনাদের সাথে। তখনই খালেদ ভাই এর সাথে ঘনিষ্ঠ আলাপ হয়। খালেদ ভাই নিঃসন্তান ছিলেন আর উনার অকাল মৃত্যু আমাদের সবাইকে ব্যথিত করেছে। উনি কি অজানা কারণে কার সাথে দেখা করতে লোকাল বাসে করে শ্যাওড়াপাড়া শামিম সরণীর মাথায় নামতে গিয়ে রাস্তায় পরে যান, তার কান দিয়ে রক্ত চলে এসেছিল, তখন শামিম সরণীর ওখানে কনকর্ড এর অনামিকা টাওয়ার এর কনষ্ট্রাংশান ইঞ্জিনিয়াররা তাকে রাস্তা থেকে তুলে আনে ফুটপাতে ও পানি দেয় মাথায়। আমার বাসা এই শামিম সরণীতেই সামান্য ভিতরে। আমি তখন অফিসে তাই জানতেও পারি নাই এই দুর্ঘটনার কথা, পরে জেনেছি। উনাকে কেউ চিনে না তাই কেউ কিছু করছিল না, অচেনা দুজন, একজন চাকরীর ইন্টার্ভিউ দিয়ে ফিরছিল তার ছেলে বন্ধুর সাথে তারা খালেদ ভাইকে নিয়ে আল হেলাল হাসপাতালে যায়। ওখানকার ডাক্তার রা জানতে পারেন যে উনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বড় ডাক্তার, সাথে সাথে উনাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। উনার ব্রেন হেমারেজ হয়ে গিয়েছিল। এয়ার এম্বুলেন্স করে দেশের বাইরে পাঠানর উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল কিন্তু সব বৃথা যায়। উনি আমাদের ছেড়ে চলে যান ওপারে।

সেম্বা এলুমনাই ক্লাব এর বেশ কিছু অনুষ্ঠান হয়, তার মধ্যে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের গল্ফ ক্লাবে অনুষ্ঠান, ধানমন্ডির সাম্পানে অনুষ্ঠান আর মহাখালির ক্যাপ্টেনস কিচেনের অনুষ্ঠান গুলো উল্লেখ যোগ্য। আমি তখন উদ্যোগতাদের মধ্যে ছিলাম না শুধু অংশ গ্রহণ করতাম। তবে টেকনিক্যালি আমি সব সময় যুক্ত ছিলাম। ফেইসবুক পেইজ ও গ্রুপ ওপেন করা (তখনও ম্যাসেঞ্জার ফেইসবুকের সাথে ট্যাগ করা ছিল না যদিও) ভাইবার গ্রুপ, হোয়াটস এ্যাপ গ্রুপ ওপেন করার ক্ষেত্রে আমার ভূমিকা ছিল। ভাইবার গ্রুপটা ওপেন হয় এক ঈদে যখন বিপু ভাই এর ভাইবার থেকে প্রচুর ম্যাসেজ আসছিল। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম এটা কি নতুন কোন সেম্বা গ্রুপ কিনা, তখন তাহমিদ ভাই জানায় এটা বিপু ভাই এর নিজস্ব আইডি আর আমরা একটা সেম্বা গ্রুপ ভাইবারেও খুলতে পারি। আমি তখন তা করি। আমি নিয়মিত এই গ্রুপ গুল আপডেট করতাম। এরকম সময়ে ফেইসবুকে শ্রীলঙ্কার সেম্বা এলুমনাই এর সাথে যোগাযোগ হয়। পাকিস্তানের একজনও সংযুক্ত হয় তবে ভারতের কাউকে পাওয়া যায় নাই। শ্রীলঙ্কায় ওরা পুনর্মিলনই করবে শুনে ওরাই আমাদের কয়েকজনের বক্তব্য সম্বলিত একটা মুভি ক্লিপ দিতে বলল। আমি উদ্যোগ নিয়ে সবাইকে জানালাম। আমাদের পক্ষ থেকে মাহমুদ ভাই এর অফিসে মুভি ক্লিপ বানান আর তার পর মফিজ ভাই এর বাসা থেকে লাইভ যুক্ত ছিলাম আমরা শ্রীলঙ্কার সেম্বা এলুমনাই এর পুনর্মিলনই অনুষ্ঠানে। এর পর অনেকদিন কেটে যায় কার কোন উদ্যোগ আর দেখা যাচ্ছিল না। আমি অবশ্য বসে থাকি নাই। আমার অনলাইনে ডাটা সংগ্রহর জন্য এন্ট্রি ফরম ও এক্সেল ডাটাবেইজ করার চেষ্টা দেখে মাহমুদ ভাই (মিলিনিয়াম সফটওয়্যার) গুগল ডকস থেকে অনলাইন ফরম বানায়ে দিল আমি অনলাইনে আমার বানান মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর ফরম এর পাশাপাশি গুগল ডকস এর লিংকটাও শেয়ার করে চলছিলাম। আর সংগ্রহীত রিটার্ন ফরমগুলোর ডাটাবেইজ করছিলাম তবে কাজ অত্যন্ত ধীর গতিতে আগাচ্ছিল। এরকম সময়  ট্রাষ্ট ব্যাংকের এক ভাই এর অনুরোধে পুনরায় বহু দিন পর আমার একক উদ্যোগে ১লা নভেম্বর ২০১৯ তারিখে ফের মহাখালির ক্যাপ্টেনস কিচেনে আরেকটা পুনর্মিলনই অনুষ্ঠান সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে আমি প্রস্তাব রেখেছিলাম একটি প্যানেল করার যারা বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে সিম্বা দ্যা হোয়াইট লায়ন এলুমনাই এর পক্ষ থেকে প্রেস কনফারেন্স এর মাধ্যমে সমাজের কল্যাণমূলক ইস্যুতে বক্তব্য প্রদান করবে এবং সোশ্যাল প্রেশার গ্রুপ এর মত কাজ করবে। তাদের এই কাজের জন্য দ্বিতীয় টায়ার থাকবে যারা ওই প্যানেলের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। এই অনুষ্ঠানে টাকা সংগ্রহর কাজটা তৃতীয় ব্যাচের মামুন শাহরিয়ার ভাই খুব ভাল ভাবে করেন। এর বেশ কয়েক মাস পর তার মৃত্যু সংবাদ তার স্ত্রী তার ফেইসবুকের আইডিতে দেয়। বিপু ভাই জানয় খবরটা, ফোন করি মামুন ভাই এর নম্বরে তখন তার স্ত্রী দুঃসংবাদের সত্যতা জানান। অত্যন্ত চটপটে প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন মামুন শাহরিয়ার, তার অকাল মৃত্যুতে তাই খুব খারাপ লেগেছিল।

করনা কালীন সময়ে জুম মিটিং ছাড়া গতি ছিল না তাই ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ এ একটা জুম মিটিং এর ডাক দেয়া হয়, এবারও সংকর দা আর আমার উদ্যোগটাই মুখ্য ছিল। সংকর দা তখন ইউসিবিএল এর ক্যাপিটাল মার্কেট এ ছিলেন আর ওই ব্যাংকেই তাহমিদ ভাই সেক্রেটারি লেভেলে আছেন। তাহমিদ ভাই আনঅফিসিয়ালি সংকর দাকে বলতেন কাজকর্ম  চালু রাখতে আর সংকর দা’র অফিস ছিল আমার অফিসের কাছে, তাই উনি চলে আসতেন সময় পেলেই। এনসিসি ব্যাংকের সাদিক ভাইও তখন মতিঝিল হেড অফিসের ১১ তলায় বসতেন। একবার উনার দাওয়াতে মতিঝিলের এনসিসি ব্যাংক টাওয়ারের টপ ফ্লোরে লাঞ্চও করলাম যেখানে ছোট খাট মিটিং এর মত আলোচনাও হয়েছিল। ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ এর এই জুম মিটিংএই অপসোনিন ফার্মার মাহমুদুল ভাই কে পেলাম, উনি বললেন বাউবি’র এমবিএ এলুমনাই এর নাম বউমা যার গঠনতন্ত্র তার কাছে আছে আর আমাদেরটা ওটার আদলে বানানো যায়। আমরা উনাকে তার একটা কপি ডা.স্বপন ভাইকে পাঠাতে বললাম। উনি সেটা আমাকে আর ডা. স্বপন ভাইকে পাঠিয়েছিলেন। এর মধ্যে মোঃ আবুল কালাম আজাদ ডিন সারের উদ্যোগে জুম মিটিং হলো যাতে উনি জানালো সিওএল থেকে একটা সার্ভে হচ্ছে। যারা সেম্বা কোর্স সম্পন্ন করেছেন তাদের বর্তমান অবস্থার কতটা উন্নতি হয়েছে তা জানাই ছিল সার্ভের মূল উদ্দেশ্য। স্যার আমাদের সবাইকে ওই লিংকে ঢুকে সার্ভেতে অংশ গ্রহণ করতে বললেন। আমরা যত জন পেরেছি তাতে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। তখন থেকেই হোয়াটস এ্যপে দুটো গ্রুপ হয়ে গেল আমাদের, একটা আজাদ স্যার এর করা আর আরেকটা আমাদের আগের করা।

২০২২ সালের রোজার মধ্যে মাহমুদুল ভাই (অপসোনিন ফার্মা) একটা উদ্যোগ নিলেন ঢাকা আরআরসিতে ইফতার পার্টির কিন্তু সময়ের অভাবে যথেষ্ট পরিমাণ সেম্বা মেটেদের সাথে যোগাযোগ না হওয়ায় আমি তাহমিদ ভাই এর সাথে আলোচনা করে প্রোগ্রামটা পিছিয়ে দিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী করার প্রস্তাব রাখলাম যার সাথে মাহমুদুল ভাইও একমত ছিলেন। পরে ডা.স্বপন ভাই প্রস্তাবটা হোয়াটস এ্র্যাপে দিলে বেশ ভাল সাড়া পাওয়া যায়। তখন ঈদ পরবর্তী একটা জুম মিটিং কল করা হয় ১১ মে ২০২২ তারিখে, যেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এই পুনর্মিলনীটা কোথায় কখন করা যায়। জুম মিটিং গুলো আমি ইনিসিয়েট করায় ওগুলো রেকর্ড করে ইউটিউবে সংরক্ষণ করা যায় আর তার লিংক সবাইকে শেয়ার করা যায়। কিন্তু এই মিটিং টা মাহমুদুল ভাই আয়োজন করায় এর রেকর্ডেড কোন ভার্সন আমাদের হাতে নাই। তো এই মিটিং এই সিদ্ধান্ত হয় আবার ধানমন্ডি’র সাম্পান রেস্টুরেন্টেই ২০ মে ২০২২ তারিখ সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান হবে। শিবলী ভাই এর সাথে ভাল কথা বার্তা হয় আমার মিটিং নিয়ে আর মাহমুদুল ভাই স্পটে গিয়ে সব ঠিকঠাক করে পরদিন আমাকে জানায়। এই অনুষ্ঠান এযাবৎ সেম্বা এলুমনাই এর সর্বচ্চ উপস্থিতি ৮৬ জন নিশ্চিত করেন। প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল ভাল। অনুষ্ঠান চলাকালীন সাবসক্রিপশন কালেকশন করেন নূরুদ্দিন আকাশ ভাই আর অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কুতুবউদ্দিন ভাই। এই সাম্পানের অনুষ্ঠান, আমার হিসাবে অনলাইন অফলঅইন মিলায়ে সেম্বা এলুমনাই এর ১১ তম অনুষ্ঠান। এত বড় একটা অনুষ্ঠান হয়ে যাওয়ার পর সংগঠনটা এবার ভাল ভাবে দাড়িয়ে যাবে বলে আমরা আশাবাদী। অনুষ্ঠানটিতে মফিজ ভাইকে কনভেনার ও আমাকে মেম্বার সেক্রেটারি হিসেবে সবার সম্মতি নেয়া হয়। যার পরবর্তী কার্যক্রম এখনো চলমান। এর মধ্যে ১৮ জুন ২০২২ আরেকটি সাধারণ আলোচনার জুম মিটিং হয়ে যায় যেখানে চট্টগ্রাম এর মওলা ভাই উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে ২০ মে ২০২২ তারিখ এর অনুষ্ঠানের মিটিং মিনিটস তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে মফিজ ভাই এর কো-অর্ডিনেশানে। সবার আন্তরিক সহযোগিতা পেলে প্রতিষ্ঠানটি ভাল ভাবে সংগঠিত হবে বলে আশা করা যায়।

 আপডেট হিস্ট্রি: ১৫মে২০২> ২২জুন২০২২> ২৯জুন২০২২>৬জুলাই২০২২>

No comments:

Post a Comment