Wednesday, June 15, 2022

অস্তিত্ব বলতে আমরা যা বুঝি


অস্তিত্ব নিয়ে একটি অধ্যায় ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হারুন অর রশিদ সারের বইয়ে, সেখানে তিনি বলেছেন অস্তিত্বের দ্বি-অর্থবোধক শব্দ গুচ্ছ কেমন হতে পারে। মূলত অধ্যায়টি মনে হয়েছে যেন শব্দের দ্বিঅর্থবোধকতা নিয়ে লেখা। ধরুন ইউনিকর্ন বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব আছে কি নেই? কিংবা ছিল কি না? নাকি এটি কেবল মানব মনের কল্পনা। যদি কেবল কল্পনা হয় তবে কি আমরা বলতে পারি ইউনিকর্ন মানব কল্পনায় অস্তিত্বশীল? যদি তাই হয় তবে মানব কল্পনার জগত কি অস্তিত্বশীল নাকি একে অনস্তিত্ব বলবো। তিনি বলেছেন “কেউ মনে করে না যে, অশ্বমানব, পরি কল্পরাষ্ট্র বাস্তব, তবে মনে করে যে, বাস্তব জগৎ হতে সতন্ত্র কোন জগতে তাদের অস্তিত্ব আছে আর এভাবেই আলোচনার জগৎ ধারণাটির উদ্ভব হয়।” আমার মতে বাস্তবতা হলো পরিপার্শ্ব সম্পর্কে আত্মা/আত্মন এর পঞ্চ-ইন্দ্রিয় লব্ধ উপলব্ধি হতে বহির্বিশ্ব (আত্মন হতে বহির্বিশ্ব) সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যার ভিত্তিতে আমাদের মানসে বিকল্প কিংবা অবিকল নকল বাস্তবতার প্রতিবিম্ব (সিমুলেশন) যাকে বাস্তব ধরে নিয়ে আমরা তার মধ্যে চলাচল কিংবা সকল কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে থাকি। ধরে নিতে হয় কারণ এই প্রকল্পিত বাস্তবতা যে সত্য-বাস্তবতার অবিকল অনুরূপ তা প্রমাণ করার আমাদের কাছে কোন উপায় নাই। হ্যাঁ আমার বন্ধু কিংবা বিশ্বাস ভাজন কাউকে দিয়ে আমি যাচাই করে নিতে পারি যে, গোলাপ সত্য সত্যই লাল বা আকাশ নীল, কিন্তু আমার সেই বিশ্বাস ভাজন ব্যক্তিটিও তো আমার কল্পিত বা উপলব্ধি লব্ধ প্রকল্পিত বাস্তবতায় অস্তিত্বশীল। তার সত্য বাস্তবতায় অস্তিত্বশীল হওযার নিশ্চয়তার প্রমাণ আমি কি দিয়ে বা কাকে দিয়ে দিব? কি ভাবে তা প্রমাণ করব?  আমরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেলে এই প্রকল্পিত বাস্তবতা অস্তিত্বশীল থাকে কি’না তা প্রমাণ করার কোন উপায় মানব জ্ঞানে নাই। এই ধারনা গুল থেকেই দুইটি চিন্তা ধারার সৃষ্টি হয়েছে বহু যুগ আগে, (১) ভাববাদ বা আইডিয়ালিজম (২) বস্তুবাদ বা ম্যাটেরিয়ালিজম। ভাববাদ যেখানে সত্য-বাস্তবতা বলে কিছু নেই, আর বস্তুবাদ যেখানে কেবল বস্তু রয়েছে ভাববার কোন অবকাশ নেই। আমরা তা (বস্তুসকল) অনুধাবন করি ও তাকে সত্য ধরে নিয়ে বাস্তবতায় কর্মসম্পাদন কিংবা বিচরণ করি। বাস্তবতায় সময়ের ধারনা যোগ করলে আরও দুটি চিন্তা ধারা সৃষ্টি হয় অস্তিত্ব’র পূর্ণাঙ্গ ধারনা নির্মাণে। সময়ে সব পরিবর্তন হচ্ছে পরষ্পরীক সংঘর্ষের মাধ্যমে (৩) দ্বান্দিকতা/ডায়ালেকটিক্স, সময়ের সাথে কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে না কেবল তার প্রকাশ পরিবর্তিত হচ্ছে (৪) অধিবিদ্যা/মেটাফিজিক্স। বিজ্ঞান দ্বান্দিক বস্তুবাদকেই সমর্থন করে এসেছে এত কাল কিন্তু কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্স এর অনিশ্চয়তার যুগে বিজ্ঞান পুনরায় দ্বান্দিক ভাববাদ কিংবা অধিবিদ্য ভাববাদে ফেরত যেতে চাচ্ছে বলে মনে হতে পারে অনেকের কাছে। শতাব্দীকালের এই চিরায়ত ধাঁধা যার কোনটিই সুনিশ্চিত ভাবে প্রমাণযোগ্য নয় এক ভয়াবহ মন-বিক্ষেপ সৃষ্টি করে যা মানুষকে কোন না কোন বৃহৎ শক্তির কাছে আত্মসমর্পণে প্রলুব্ধ করে আর একেই আমরা মানুষের সেংটিফিকেশন ইনিষ্টিং বা উপাসনা প্রবৃত্তি বলে থাকি। যা অত্যন্ত প্রবল ভাবে মানুষকে প্রলুব্ধ করে বলে মনে হয়। মানুষ নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় এবং সে নিজে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে বেচে থাকতে হয় তাকে। আবার প্রকৃতির কোন কিছুই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, তারাও একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত কিংবা নির্ভর বা আপোষ করে টিকে আছে। প্রশ্ন আসে এর সীমানা কোথায়? শেষ কার উপর বা কিসের উপর নির্ভর করে সবকিছু টিকে আছে? এখানেই স্রষ্টার ধারণার উৎপত্তি ও তদ্ কর্তৃক এই বিশ্বচরাচর নির্মাণ, নিয়ন্ত্রণ, ভারসাম্য, ধ্বংস ইত্যাদি সকল বিষয় নির্ধারণের ধারনার উৎপত্তি। নাস্তিকেরা এখানেই অস্বীকার করে আর আস্তিকেরা এখানেই নানা ধর্মের বিবরণ প্রদান করে ও তর্কবিতর্ক করে কোনটি সঠিক আর কোনটি সঠিক নয়, তা নিয়ে। সকল ধর্ম নিঃসন্দেহে অধিবিদ্য ভাববাদের চিন্তাধারায় পড়বে। আর নাস্তিকতা নিঃসন্দেহে দ্বান্দিক বস্তুবাদ কিংবা অধিবিদ্য বস্তুবাদের চিন্তাধারায় পড়বে। এই ধারা গুলর মধ্যকার দ্বন্দ্ব’র কোন সুনিশ্চিত পরিসমাপ্তি নেই। এই শিবির গুলোর যে কোন একটায় আপনাকে মনস্থির করতেই হবে। হয় এসপার না হয় ওসপার, মাঝামাঝি ঝুলে থাকলেই বিপদ, দুলতেই থাকবেন আজীবন।

তাহলে সেই প্রথম প্রশ্নে আসা যাক, অস্তিত্ব’র ধারনাটি কি? আর বাস্তবতার ধারনাটি কি হতে পারে? অস্তিত্ব’র ধারনা স্রষ্টার অস্তিত্ব’র উপর নির্ভরশীল, অর্থাৎ ধার্মিকদের ব্যাখ্যানুযায়ী স্রষ্টার অস্তিত্বই বাকী সব অস্তিত্বের ও সত্য-বাস্তবতার প্রমাণ আর ধর্ম অস্বীকারকারীদের কাছে সময়ের সাপেক্ষে বস্তুর বিবর্তনই প্রকৃত অস্তিত্ব বা সত্য বাস্তবতার প্রমাণ। এই উভয় শিবিরের যুক্তি তর্ক পর্যালোচনা করা হলে কাউকেই সুনিশ্চিত ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে ছুড়ে ফেলে দেয়া যায় না। আবু হানিফা (র.আ)’র সেই বিতর্ক যে এই বিশ্ব চরাচর একাএকাই দৈব সংঘটনে একত্রিত হয়ে এক পর্যায়ে চিন্তাশীল মানব সম্প্রদায় (প্রাণী’র) সৃষ্টি করেছে এটি মানব বুদ্ধিতে বিশ্বাসযোগ্য নয়, যেমন ভাবে তার ১ ঘণ্টা দেরী হওয়ার সময় নদীর পাড়ের কলাগাছগুলো নিজেরা ভেলা বানিয়ে তাকে পার করে দিয়েছে এটি কারো বিশ্বাস হচ্ছিল না। এই মহাবিশ্বের বিন্দু সদৃশ গ্রহ পৃথিবীর জন্ম হতে বহু লক্ষ কোটি বছর পরে অতি ক্ষুদ্র সময়ের অতি ক্ষুদ্র ভগনাংশে চিন্তাশীল মানুষের উদ্ভব যারা একমাত্র প্রশ্ন করার ক্ষমতা রাখে এ সব কোথা থেকে এলো আর এর পরিণতি কি হতে যাচ্ছে। মানবকুল ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদির বিস্তার ঘটাবে না তো কি চিন্তাশূন্য নর-বানরকুল ঘটাবে? এটা উন্নত মানব প্রকৃতি যে, সে প্রশ্ন করবে, চিন্তা করবে, গবেষণা করবে, এবং একটি সুনিশ্চিত সমাধানে এসে সুস্থিত হবে। এটিই মানব প্রকৃতি এবং মানব চিন্তা জগতের অনিষ্পন্ন বিরোধগুলো বা বিভাজনগুলো সুস্পষ্ট সমাধান করবে। এখানে ধার্মিকগণ আলোকিত চিন্তার কথা বলে আর বস্তুবাদী গন গভীর চিন্তার কথা বলে যা কেবল বিষয়বস্তুকে বিশ্লেষণ/ব্যাখ্যা করে কিন্তু আলোকিত চিন্তা বিষয়বস্তুকে তার উদ্দেশ্যর সাথে সম্পৃক্ত করে তাকে বিশ্লেষণ বা ব্যাখ্যা করে।

এই প্রকাশ্য (এ্যাপিয়ার্ড) বহির্বিশ্ব/মহাবিশ্ব ও এর মধ্যে মানব অস্তিত্ব’র উদ্দেশ্য ধর্ম প্রদত্ত ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে সুনিশ্চিত ভাবে নির্ধারণ করা যাচ্ছে না কিংবা নির্ধারণ করার কোন সুনির্দিষ্ট সূচক নেই বিধায় যে যার ইচ্ছামত দর্শন কিংবা ধর্মবিশ্বাস  নির্ধারণ করে নিয়ে তাতে পূর্ণাঙ্গ মননিবেশ করে বসে আছে। তা যুক্তি তর্ক দিয়ে হোক কিংবা তর্কের ঊর্ধ্বে উঠে কেবলমাত্র বিশ্বাস স্থাপন করে হোক। এরূপ সম্মিলিত বিশ্বাস বিভিন্ন ধর্মাচরণ, গোত্র, মতাদর্শ, চিন্তাধারা/স্কুল অব থট্স এর সৃষ্টি করেছে। যুগযুগ ধরে প্রতি ঘণ্টায় হাজার হাজার মানুষের জন্ম-মৃত্যু ও নতুন প্রজন্ম সম্মিলনে যে মানব সভ্যতা গড়ে উঠেছে তাই বর্তমানের মানব সৃষ্ট মানবগোষ্ঠীর মানবীয় প্রতিভাস বিশ্ব। এই বিশ্বে সত্য/মিথ্যা’র ভিত্তি যার যার ধর্ম/দর্শন প্রদত্ত নীতিমালা। মানব বিস্তার কিংবা অন্য কীট পতঙ্গ, পাখিকুল, জলজ প্রাণী ও মেরুদণ্ডী প্রাণীকুলের বিস্তার প্রায় সমরূপ এবং একটি সমসত্ব ইকো-সিস্টেম এর মাধ্যমে এই বিশ্বে স্থাপিত যা সারভাইবাল ষ্ট্রাগল (অস্তিত্বের সংগ্রাম) এর সংঘর্ষ প্রক্রিয়ায় উচ্চতর প্রাণীকুল নিম্নতর প্রাণীকুলের (তা হয় কৌশল, দৈহিক গড়ন, বুদ্ধিবৃত্তি) উপর প্রভাব বিস্তারের মধ্যে দিয়ে হয়েছে। ডারউইন প্রদত্ত সারভাইভাল এ্যাট দি ফিটেস্ট যুক্তিটি মূলত এ কথাই বলে। বিবর্তন বলতে বুঝায় ক্রমাগত একই প্রক্রিয়ার আবর্তনের ফলে অপ্রয়োজনীয় কিংবা অতিরিক্ত অংশের বা বংশের বিলোপ ও প্রয়োজনীয় অংশের বা বংশের ক্রমবৃদ্ধি। প্রচণ্ড গতিতে চলমান, ঘূর্ণায়মান ও সমপ্রসারণরত এই মহাবিশ্ব ও তার অতীব ক্ষুদ্র গ্রহ পৃথিবীর মানবকুলের তথা প্রাণীকুলের বিবর্তন নিঃসন্দেহে একটি আশ্চর্য ঘটনা তবে এটিই যে একমাত্র ঘটনা তা কোন ভাবে বলার উপায় নেই। এই বিস্তৃত মহাবিশ্বের পূর্ণাঙ্গ চিত্র বা সাইট ম্যাপ আমাদের কাছে নাই আর এই বিশাল ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ বা নিরীক্ষণ করা একক মানবের জীবন ব্যাপ্তিতে সম্ভবই নয়। এমনকি কয়েক প্রজন্মের জীবন ব্যাপ্তিতেও সম্ভব নয়। উপরন্তু সময় সংকোচন ও স্থান সম্প্রসারণের আইনেষ্টাইনের গাণিতিক বাস্তবতা সত্য প্রমাণিত হওয়ায় মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানব ধারণাও ত্রুটিপূর্ণ মনে হয়। ব্ল্যাক-হোল, ব্ল্যাক-ম্যাটার এর অস্তিত্ব বিষয়টিকে আরও ঘোলাটে করে দিয়েছে, তেমনি ভাবে কোয়ান্টাম মেকানিক্স জগতের অতি ক্ষুদ্র কণিকার কণার দশার অবস্থান আর ভরবেগ মাপন যেন ছায়াছবির চলমান পর্দায় মাছ ধরার মত হওয়ায় উক্ত ধারনাও বাস্তবতার সুনির্দিষ্টতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রেখেছে। ইসলামী বক্তা, চিন্তাবীদ ও লেখক ইমরান নজর হোসেনের বক্তব্য অনুযায়ী আসমানি গ্রন্থ পবিত্র কোরআনে সমাওয়াত সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা মূলত ডাইমেনশন চেঞ্জ, থ্রিডি রিয়েলিটি (ত্রিমাত্রিক বাস্তবতা) হলো এই বাস্তব প্রতিভাস মহাবিশ্ব। এক সামাওয়াত থেকে অন্য সামাওয়াতে এই থ্রিডি রিয়েলিটি অন্যরকম বাস্তবতা। এই সামাওয়াতকে বকধার্মিকেরা এক আকাশ, ২য় আকাশ, চৌথ আসমান এই ভাবে চিন্তা করে থাকে। আসমানি গ্রন্থ পবিত্র কোর’আনে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী আল্লাহ (সুবহানাওয়া তায়ালা) সাত (ক্লাসিক্যাল আরবিতে সাত মানে বহু) সামাওয়াত উপরে তার আরশে নিজেকে স্থাপন করেছেন। বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ ভাবে বুঝার ক্ষমতা তিঁনি (সুবহানাওয়া তায়ালা) মানবকুলকে দেন নাই। অর্থাৎ, স্থান, কাল, পাত্র তথা উপাদান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে কোন নিশ্চয়তায় মানব জ্ঞান পৌছুতে অক্ষম, অনেকটা বানর এর মস্তিষ্ক যেমন গণিত এর জ্ঞান অর্জনে অক্ষম। তবে মানব মস্তিষ্ক নিজেই বিবর্তন ক্ষম ও দ্রুত বিকাশমান তাই এই বাধা হয়তো সে দ্রুত অতিক্রম করতে সক্ষম হবে কোন এক দিন। বাস্তবতার ধরণটি এমন যেন তা দিবা রাত্রির আবর্তনে কোন বই এর পাতা উল্টানোর মত প্রতিনিয়ত একই ভাবে প্রত্যর্পণ করে। আর প্রকৃত বাস্তবতা বুঝতে পারলেই এর মাঝে আমাদের অস্তিত্বটা বুঝা সহজ হবে।

এই চলমান বাস্তবতা সম্পর্কে আমার অনুধাবন গুলো হলো, এটি সর্বদা সতেজ ও কখনো পিছন ফিরে তাকায় না। ”Reality is ever fresh and never looks back”. এই বাস্তবতা কতগুলো পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমাদের নিয়ে যায়। “Reality can be perceived as phase transition through situation channels” আগে হোক বা পরে হোক বাস্তবতায় ভারসাম্য আসবেই “Another sublime attribute of reality is equilibrium”. এতদসত্বেও বাস্তবতার কিছু ধাঁধা আমি লক্ষ্য করেছি, যেমন (১) আমরা আকাশকে নীল দেখি ও সরল দৃষ্টিতে দিনে মেঘ, সূর্য’র চলমান অবস্থান যেন কারুকার্য কৃত পৃথিবীর ছাদ বলে মনে হয়। রাতে সেই একই আকাশ অন্ধকার কাল কিন্তু চাঁদ ও নক্ষত্রের কারুকার্যে বিস্ময়কর দৃষ্টি নন্দন। পৃথিবীর ভূমি কোথাও উর্বর সবুজ কোথাও ধুসর মরু, উত্তাল মহাসমুদ্র আর উপরে ছাদ সরূপ আকাশ, এর বাইরে কিছু আছে বলে বিশ্বাসই হয় না। অথচ প্রকৃত বাস্তবতা হলো এই প্রতিভাসের পুরোটাই মিথ্যা এক ধাঁধা। (২) এই পার্থিব বাস্তবতার যে কোন স্থানে দাঁড়ালে মনে হবে আমি শূন্য গতিতে স্থির হয়ে আছি। যা সত্য নয়, কারণ পৃথিবিটা নিজেই ঘূর্ণায়মান যা প্রতি মিনিটে ১৮ কিলোমিটার বেগে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। যার সাথে আমরাও ঘুরন্ত অবস্থায় চলমান। অনেকটা ছোটবেলার মেরি-গো-রাউন্ডের মত অবস্থা। (৩) দিবা রাত্রির আবর্তনে সময়কে চলমান মনে হয় কিন্তু চলমান হওয়ার ক্ষেত্রে একটি সূচনা বিন্দু ও অভিলক্ষ্য লাগে না হলে কোথা হতে কোন উদ্দেশ্যে চলমান বলার উপায় কি? প্রকৃত পক্ষে সময় এর পরিমাপক উপায় বলে মানুষের হতে কিছুই নেই। ঘড়ি কেবল পার্থিব দিবা রাত্রির আবর্তন ৩৬০ ডিগ্রী এ্যাংগেলে পরিমাপ করার উপায় মাত্র। সেই কবে বিগ ব্যাং হয়েছিল তা হতে সময়ের সূচনা হয়ত মাপা হয় যাকে মহাকাল বললেও ভুল হবে কেননা এই বিগ ব্যাং হয়ত অন্য কোন বৃহত্তর মহাশূন্যের ব্ল্যাক হোলের বিপরীত প্রান্ত, তা হতেই পারে? মহাকালের সত্য সময় চলমান না কি আমরা আবর্তিত হয়ে একই জায়গায় কিংবা একই দশায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অবস্থান করি মাত্র? প্রকৃত বাস্তবতার এ আরেক প্রকট ধাঁধা।

এই বাস্তব প্রতিভাস ও এর মধ্যকার যে ধাঁধা তা কেবল মানব জ্ঞান বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে হয়েছে, বিজ্ঞানের অগ্রগতি না হলে এই বিভ্রান্তিগুলো ধরা যেত না। ধরা যাক একটি চতুষ্পদ জন্তু যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া কিংবা বানর এর কাছে বাস্তবতাটি কি রকম হতে পারে? স্বাভাবিক ভাবে তাদের মস্তিষ্ক বিকশিত না হওয়ায় তারা বর্তমান ছাড়া আর কিছুই বুঝে না, প্রাণী মস্তিষ্কের যে প্রধান তিনটি প্রবৃত্তি বা ইনিসটিংক্ট ১)সারভাইভাল তথা টিকে থাকা ২) প্রক্রিয়েশনাল বা স্পিসিস বা জাতিগত প্রবৃত্তি অর্থাৎ বংশবৃদ্ধি ইনিসটিংক্ট ৩) সেংটিফিকেশন ইনিসটিংক্ট বা উপাসনা প্রবৃত্তি, নিম্নতর প্রাণীকুলের তৃতীয় প্রবৃত্তিটি স্বাভাবিক ভাবেই কাজ করবে না আর একমাত্র মানব মস্তিষ্কেই ৩য় প্রবৃত্তি পর্যন্ত কাজ করবে। যার ফলে একটি পিপড়ার বিশ্ব একরকম, একটি খরগোশের বিশ্ব অন্য রকম হওয়াই স্বাভাবিক। এই প্রেক্ষিতে বলা যায়, এই বিশ্ব প্রতিভাসের প্রকৃতি মস্তিষ্কের বিকাশের উপর নির্ভরশীল, যে মস্তিষ্ক যত বিকশিত সে মস্তিষ্ক তত স্পষ্ট ভাবে এই প্রতিভাসকে উপলব্ধি করতে পারবে কিন্তু উচ্চতর মস্তিষ্ক নিম্নতর মস্তিষ্কের প্রতিভাস ব্যাখ্যা করতে পারলেও নিম্নতর মস্তিষ্কের পক্ষে উচ্চতর মস্তিষ্কের প্রতিভাস বুঝা সম্ভব নয়। প্রতিভাস বুঝার ক্ষমতা অর্থাৎ বাস্তবতাকে আরও স্পষ্ট করে বুঝার চেষ্টা করা মূলত হলো মানব মনের অনুসন্ধিৎসা, যার কারণেই বিজ্ঞান/দর্শন/ধর্ম এর অবতারণা। সচেতনতার সীমানা বৃদ্ধির চেষ্টার কারণেই, দূরবীক্ষণ যন্ত্র, অণুবীক্ষণ যন্ত্র ও সকল যন্ত্র-বিশেষের ব্যবহার, হাবল স্পেস টেলিস্কোপ হতে ভয়েজার ও অন্যান্য মহাকাশ অভিযান।

মানব অনুসন্ধিৎসা হতেই মানব চিন্তন, অভিযাত্রা, অনুসন্ধান। চিন্তন হতে তার বাস্তবায়ন যেমন রোবটিক্স, মানব চেতনা ও সক্ষমতার সীমানা অতিক্রমের অদম্য চেষ্টা। অলিম্পিক এর বিভিন্ন ইভেন্টে পূর্বের রেকর্ড ভঙ্গ করার ইতিহাস নিলেই যার প্রমাণ পাওয়া যাবে। মানব চিন্তাকে বাস্তবায়ন তা রোবটিক্স হোক, সেলার কার হোক, কিংবা শিল্পীর হাতের তুলি হোক কিংবা কোন নতুন সঙ্গীত হোক, অবিরত তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অনেকটা যে ভাবে পিপড়ার এক নতুন কলোনি তার কর্মকাণ্ড একই ভাবে সম্পাদন করতে আপ্রাণ প্রচেষ্টায় প্রবৃত্ত হয়। পিপড়ার প্রবৃত্তি ও কর্মপদ্ধতি তার মতই তো হবে আর মানবকুল এর প্রকৃতি ও কর্ম প্রকৃতি তো মানুষের মতই হচ্ছে। পার্থক্য কেবল মানব মস্তিষ্ক স্ব-প্রণদিত ভাবে বিকশিত হতে পারে। অন্য নিম্নবর্তী প্রাণীকুল এর দুটি প্রবৃত্তিও একই রকম, আরও ভালো সারভাইভাল আরও ভালো বংশ বৃদ্ধি বান্ধব পরিবেশের জন্য সংগ্রাম সকল জীবিত প্রাণীকুলের সাধারণ প্রবৃত্তির বা প্রবণতার মত। সকলেই তাদের বর্তমান অবস্থান হতে আরও ভালো, আরও সুবিধাজনক অবস্থানে উত্তরণের সংগ্রামে মহা ব্যস্ত। এই অবস্থান থেকে বলা যায় সকল প্রাণীকুল এর সাধারণ প্রবৃত্তি একই আর তা হলো উন্নততর (যা বর্তমানে তার চেয়ে ভাল অবস্থানে তাদের নিজস্ব বিচারে) অবস্থানে উত্তরণের সদা সর্বদা সংগ্রামে নিয়োজিত থাকা। আর এর প্রয়োজনে নিজ গোত্র, নিজ জাতী ও অপরাপর সকল প্রজাতির সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া। সকল প্রাণীকুলের এই সাধারণ প্রবৃত্তি মূলত কি প্রমাণ করে? প্রাণের আবির্ভাব হতে আজ পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতা ও সংগ্রাম অব্যাহত আছে একই ভাবে। গাছ, মাছ, পশু, পাখি,  মানবকুল সকল ক্ষেত্রে জাতী হতে উপজাতি হতে প্রজাতি হতে ধাপ পরিবর্তন করে প্রতি প্রজাতি বিভাজিত কিংবা সংযোজিত হয়ে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ও বহু প্রজাতির বিলুপ্তি কি প্রাণ বিকাশের ক্রমধারাই প্রমাণ করে না? অক্সিজেন বেইজ্ড এই প্রাণীকুল এক প্রকার হয়তো অন্য কোন গ্রহে নাইট্রোজেন বেইজ্ড প্রাণীকুল অন্যরকম হবে বা হতে পারে? কোন উপায় আছে এরূপ যদি হয় তাকে অস্বীকার করার? যদিবা অন্য গ্রহের অন্য মৌল ভিত্তি’র প্রাণীকুল পাওয়া গেল, হয় সে আমাদের চেয়ে অনুন্নত, তাহলেও এই বিশ্ব বীক্ষণ প্রতিভাস বদলে যেত, আর যদি তা আমাদের চেয়ে উন্নত হতো তবেও এই বিশ্বের বাস্তবতার প্রেক্ষিত বদলে যেত। হকিং এর গ্র্যান্ড ডিজাইন ও থিওরি অব এভরিথিং বই দুটো মূলত এই বিশ্ব প্রতিভাসের সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা প্রদানের উদ্দেশ্যে রচিত, যার পরিপূর্ণতায় দর্শন/বিজ্ঞান/ধর্মের সকল দ্বন্দ্বর সমাধান বা অবসান হয়ে যেত।  কিন্তু তা হয় নি বরং তার বইগুলো আরও বহু নতুন অমীমাংসিত প্রশ্ন রেখে গেছে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যে, মানব চিন্তনের এই সকল দ্বন্দ্বের কোন সুস্পষ্ট সমাধান নেই। মানবকুল এই সকল দ্বন্দ্ব নিয়েই অগ্রসরমান কিংবা ক্রমবর্ধমান। বিস্ময়কর দিকটি হচ্ছে, পরিচিত ও আশপাশের সকল মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে কোন বিশেষ চিন্তা ভাবনা নেই। কোন লেখক কিংবা উপন্যাসিক বা দার্শনিক দিকনির্দেশনা দিলে তবে শিক্ষিত সমাজে এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তার বিস্তার হয় আর স্বল্প শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত মণ্ডলে রাম-করিম-সিং এর মত উদ্ভট ধর্মগুরুর বা পীর-ফকির এর সৃষ্টি হয় যাকে তারা সকল অন্ধভাবে অনুসরণ করে। এ সকল কারণেই উন্নততর মানব সম্প্রদায় এর সৃজন হচ্ছে। উন্নত, শিক্ষিত, আধুনিক যন্ত্রকৌশলে পারদর্শী মানব সম্প্রদায়ই মূলত নব্য মানব কূলের বিবর্তন। এই বিবর্তিত আধুনিক মানব সম্প্রদায় না ধর্মান্ধ, না কোন নির্দিষ্ট কট্টর ভাববাদে আবিষ্ট হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। এদেরকেই আমরা ধর্মনিরপেক্ষ বা সেকুলার মানব সম্প্রদায় বলছি। ধর্মের নামে সাধারণ মানব সকলের উপর নির্যাতন কিংবা হুমকি সৃষ্টি করাই সন্ত্রাসবাদ। জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনাচরণের উপর হস্তক্ষেপ কিংবা তাদেরকে কোন নির্দিষ্ট জীবনাচরণে বাধ্য করা এক প্রকার জুলুম কিংবা নির্যাতনের মতই। এ পর্যায়ে গে/লেসবিয়ান, হোমো-বিবাহ সমাজে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা তার কথা চলে আসে, সাথে সাথে আরও আসে সাময়িক সঙ্গী বদল কিংবা স্বেচ্ছা বিবাহ স্বল্পকালীনের মত এডাল্ট্রি ও ফরনিকেশনের বিষয়গুলো। বিভিন্ন ধর্ম, সমাজ এগুলোকে রেগুলেট/নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে, মূলত সন্তানের দায়িত্ব, পরিচয়, বংশ ইত্যাদি বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। আজকের বিশ্বে সন্তানের জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর নানা পদ্ধতি, পরিচয়ের স্বাধীনতা ও বংশগতি ধারণার বিলুপ্তির কারণে সমাজ/ধর্মের বাধা নিষেধ নতুন প্রজন্ম মানছে না। এই প্রেক্ষাপটে গে বা লেসবিয়ান-বিবাহ বিভিন্ন দেশে গ্রহণযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। এই সব মানব সকল তাদের ব্যক্তিগত গৃহে কোনে একাধিক ব্যক্তি সমন্বয়ে যৌন সম্ভোগের বিষয়ে ধর্ম-সমাজ-রাষ্ট্র কারো হস্তক্ষেপ মানতে নারাজ। সমাজে এই নিয়ে বিশৃঙ্খলা হলে তা স্বাভাবিক রাষ্ট্রীয় বিধিবিধান মতেই সিভিল কোর্টে সমাধান হবে। একদিকে বিশাল অনুন্নত জনগোষ্ঠী আরেক দিকে অতি আধুনিক মানবকুল আর তার সাথে সাথে সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক বিবর্তন বা পরিবর্তন। পরিবার, সন্তান, বংশ, ইত্যাদির গুরুত্ব পূর্বের থেকে বদলে গেছে। বর্তমান বিশ্বে আধুনিক মানব সমাজগুলোর মানব-সংযোগের প্রকৃতি ভিন্নতর। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্ম পরিমন্ডলে গোষ্ঠী ভিত্তিক মানব সকলের সংস্কৃতি ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় বিবর্তিত হচ্ছে যা পূর্বতন ধর্ম-মত, সমাজ ধারা হতে অতি মাত্রায় বিভিন্ন। একেই মনবকুলের বিবর্তনের বর্তমান বাস্তব প্রতিভাস হিসেবে মনে হচ্ছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ, বিশ্বায়নের বিশাল প্রভাব, পূর্বতন সকল ধর্ম-ধারণা, সমাজ ধারণাকে ধ্বংস করে নূতন ধারণার জন্ম দিচ্ছে। একদল জোরপূর্বক পূর্বতন ধারণাকে আঁকড়ে ধরে আছে আরেক দল সমাজ ও ব্যক্তি জীবনাচরণে নূতন নূতন ধারণাকে যুক্ত করছে স্বেচ্ছাচারের মত। সঞ্জানুযায়ী এটিই মানব বিবর্তন, একদল লোক অশিক্ষিত-অর্ধ শিক্ষিত চরম দুর্দশার মধ্যে দিয়ে উৎপাদন যন্ত্রে নাট-বল্টুর মত যাতা-কলে পিষ্ট হয়ে জীবন যাপন করবে আর আরেকদল আধুনিক যন্ত্রকৌশল ব্যবহার করে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল জীবন যাপন করবে। পৃথিবী মানব জনসংখ্যায় ভরপুর হয়ে গেলেও এই প্রক্রিয়ায় বিবর্তন ঘটবেই। হয়তো এক পর্যায়ে অনুন্নত মানব-ফুয়েলের পরিবর্তে যন্ত্র-মানব বা রোবট চলে আসবে, তবে পূর্ণাঙ্গ ভাবে সকল মানবকে উন্নত মান-সম্মত মানবে পরিবর্তিত করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। এক দলকে যন্ত্র-কলে পিষ্ট হয়ে মানবেতর জীবন বেছে নিতেই হবে। উন্নততর মানবে পরিবর্তিত হওয়ার জন্য শিশুকাল হতে শিক্ষার প্রচণ্ড চাপ মূলত এ কারণেই। তা’হলে বিবর্তিত মানবকুল হল তারা যারা উচ্চ মাত্রায় শিক্ষিত ও যন্ত্রকৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে বিলাস বহুল জীবন যাপন করতে পারছে ও তাদের বসবাস এমন নগর রাষ্ট্রে যেখানে তাদের যত্ন ও সেবা দানের ব্যবস্থা নগর-রাষ্ট্র সমূহ সেবাদাসের মাধ্যমে সম্পাদন করে থাকে। এই সঞ্জানুযায়ী রোমান সম্রাজ্যেও একইরূপ ব্যবস্থা ছিল। রাজা-প্রজা সম্পর্কের এইটি একটি উন্নত সংস্করণ, জমিদার প্রথার মতই এটি একটি বিবর্তিত ব্যবস্থা। এই ব্যাখ্যানুযায়ী মানবজীবনের উদ্দেশ্য হ’ল কেবল উন্নততর অবস্থানে উত্তরণের প্রচেষ্টা ও তার জন্য সদা সর্বদা সংগ্রাম। যা অন্য প্রাণী সকল এমনকি উদ্ভিদ প্রজাতীয় করে যাচ্ছে কিন্তু নিম্ন জাতের প্রাণ হওয়ায় তাদের আর বিবর্তন হচ্ছে না। বিবর্তিত মানবগোষ্ঠী নতুন কোন প্রাণীতে পরিণত হচ্ছে যা’র পত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের চেহারা দেখলেই। এরা একরোখা, অধ্যবসায়ী, পরিশ্রমী, সংকল্পে অবিচল, উৎপাদন কৌশলে বিশ্বাসী, স্বাস্থসচেতন ও দৃষ্টি নন্দন।

এমতাবস্থায়, হয় এই ব্যবস্থাটি মেনে নাও কিংবা একে অস্বীকার করো, মেনে নিলে “গো উইথ দ্যা ফ্লো” হবে আর অস্বীকার করলে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। হয় উন্নত সম্প্রদায় হও নয়তো ফুয়েল মানব সেবা দাস হও, এই অপশন বা উপায় গুলোই রয়ে গেছে কেবল। ধর্ম অনুসরণ করলে থিতু হয়ে ধর্মাচরণ কর আর ধর্ম অস্বীকার করলে ধেই ধেই করে স্বেচ্ছাচার কর। সম্পদ আহরণ, সংরক্ষণ ও এর সুষ্ঠ ব্যবহারের মাধ্যমে আরও সম্পদ আহরণের ব্যবস্থা করাকেই মনে হচ্ছে সারভাইভাল ইনিসটিংক্ট এর বেটার সারভাইভাল এর একমাত্র প্রেক্ষিত। যেহেতু কোন মীমাংসায় পৌঁছানো যাচ্ছে না, যে কোন সময় ভূমিকম্পে সর্বস্ব হারানো কিংবা কারো মৃত্যু হয়ে যেতে পারে, সম্পদ বেহাত হয়ে যেতে পারে আর তাই এই বাস্তবতা প্রতিভাসে টিকে থাকা ও উত্তর উত্তর প্রবৃদ্ধির জন্য চাই নিরন্তর প্রচেষ্টা। এই প্রচেষ্টা এক প্রকার প্রতিযোগিতা, অপরাপর সকলের তুলনায় তোমার নিজের অবস্থান তবে সকল ক্রাইটেরিয়া বিচারে এনে অবস্থান নির্ধারণ করতে হবে। উন্নততর মানুষে বিবর্তিত হতে গেলে যাবতীয় সরঞ্জাম এরও সমন্বয় করতে হবে। জীবৎকালের ব্যাপ্তি সীমিত তাই এর মধ্যেই পরবর্তী প্রজন্মকে উন্নততর অবস্থানে প্রতিস্থাপিত করে রেখে যেতে হবে।

তাহলে বর্তমান বাস্তবতার উদ্দেশ্য-বিধেয় দাঁড়াচ্ছে এরকম ১। সম্পদ আহরণ, সংরক্ষণ ও এর সুষ্ঠ ব্যবহারের মাধ্যমে আরও সম্পদ আহরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা । ২। এই বাস্তবতায় টিকে থাকা ও উত্তর উত্তর প্রবৃদ্ধির জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। ৩। উন্নততর মানুষে বিবর্তিত হতে গেলে যাবতীয় সরঞ্জাম এর সমন্বয় করা। ৪। জীবৎকালের ব্যাপ্তি সীমিত তাই এর মধ্যেই পরবর্তী প্রজন্মকে উন্নততর অবস্থানে প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা। এই চারটি সংকল্পে বর্তমান মানব সকল এক মত বলে মনে হয়। যেহেতু অনন্ত কাল বেচে থাকা যাবে না তাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম যাতে টিকে থাকে তার ব্যবস্থা করা। ধার্মিক হোক বা না হোক অস্তিত্ব বলতে আধুনিক মানব সমাজ মূলত একেই বুঝে থাকে বলে মনে হয়।  

 এডিট হিস্ট্রিঃ ০৭সেপ্টেম্বর২০১৭>  ১৭সেপ্টেম্বর২০১৭> ১৯সেপ্টেম্বর২০১৭>০৯জুন২০২২>১৪জুন২০২২>

No comments:

Post a Comment