হকিংস এর ব্ল্যাক হোল বই এর ১২তম অধ্যায়ে “আগে
থেকেই কি সব ঠিক করা আছে” এর উপর আমার কিছু বক্তব্য আছে। তার আগে এ বিষয়ে আমার পূর্ব-ধারনা বা প্রি-কনসেপ্ট গুল
যাচাই করে নেই, পাশাপাশি অপরাপর অন্যান্যদের সাথে আলাপের ফলে যা বুঝেছি তাদের
প্রি-কনসেপ্ট-গুলরও উল্লেখ করব সংক্ষেপে। এই বিষয়টা অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই অর্থে
যে, এই বিষয়টা নিয়ে অনেকেই কথা বলেন না। হকিংস মহাশয়ের ব্ল্যাক হোল বইয়ের এই
অধ্যায়টি আমি একাধিকবার পরেছি যাতে করে বিষয়টাতে উনি কি বলতে চাচ্ছেন আর আমরা
সচরাচর যা বুঝে থাকি তার সাথে সামঞ্জস্য সূত্রটা বুঝে দেখা। বিষয়টা স্পর্শকাতর এই
কারণে যে, এটা মুসলিমদের আকিদাকেও শক্তভাবে নাড়া দেয়। এ বিষয়টা ভালভাবে বুঝে না
দেখে অনেক মুসলিম নিজের অজান্তে সেকুলার হয়ে যায় বলে আমার মনে হয়েছে। অনেকটা এ রকম
যে, অত শত বুঝি না, তার চেয়ে বরং যে যা বলে বলুক, আমার বুঝ আমি বুঝি। মানুষের এই
বুঝতে না চাওয়াটা মূলত অন্যর সাথে আমার মত মিলুক আর নাই মিলুক আমি যা বুঝেছি তা’ই
সর্বতোভাবে সঠিক ধরে নেয়া। এতে করে তাঁর অভ্যন্তরীণ চিন্তা প্রক্রিয়াটা যেমন পোক্ত
হয় না তেমনি অন্য লোকজন তার মতামত থেকেও বঞ্চিত হন। বিষয়টা নিয়ে আমি এত চিন্তিত
কেন তা বলে নেই। বিষয়টা আমার মধ্যে সমাধান করা ছিল আজ হতে প্রায় ৭ কি ৮ বছর আগে
একটা ধর্মীয় পাঠ সভার দীর্ঘমেয়াদী আলোচনায়। বিষয়টা তো মীমাংসিতই ছিল তা হলে আবার এ
নিয়ে ভাবনা কেন? কারণ আর কিছুই না ৭ কি ৮ বছর আগের সমাধানটা এখনকার বিচারে
অকার্যকর হয়ে গেছে। বিষয়টার পূর্ণ সমাধান করতে চাচ্ছি আমি তাই বর্তমান বাস্তবতার
বিচার বিশ্লেষণে।
বইটিতে হকিংস মহোদয় বলেছেন ”নিয়তিবাদ কিংবা
নির্ধারণীয়তাবাদে (ডিটারমিনিজম) এ সমস্যাগুলো নিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী আলোচনা হয়েছে।
এই আলোচনা ছিল কিন্তু খানিকটা পণ্ডিতি ব্যাপার। কারণ তখন আমরা বিজ্ঞানের বিধি সম্পর্কে
পূর্ণ জ্ঞান থেকে অনেক দূরে এবং আমরা জানতাম না মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থা কি করে
নির্ধারিত হয়েছিল। “ হকিংস তার এই অধ্যায়েই লিখেছেন, ”যারা ভবিতব্যে বিশ্বাস করেন তারাও
রাস্তা পার হওয়ার সময় দুদিক দেখে তবে রাস্তা পার হন।” বিষয়টা বুঝা এত সহজ নয়, শেখ তাক্কিউদ্দিন
নবায়াণীর বই নিধামুল ইসলামের দ্বিতীয় অধ্যায় কয়েক সপ্তাহ ধরে পাঠ সভায় আলোচনার পর একটা
জায়গায় নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল আবার আজও হকিংস এর বই ব্ল্যাক হোল এর অনুবাদ গ্রন্থ’র
১২ তম অধ্যায় ১৪ বার পরেও অবস্থা সেই একই, এ যেন সপ্ত খণ্ড রামায়ণ পড়ে সীতা কার বাপ
বুঝার মত অবস্থা। তবে মোটামুটি আমার চিন্তা ভাবনায় একটা মীমাংসা হয়ে যাচ্ছে। হকিংস
মহোদয় ভবিতব্য পূর্ব নির্ধারিত এর পক্ষে রায় দিয়ে পরক্ষনেই বলেছেন তা না’ও তো হতে পারে।
তার মীমাংসাটা ধাঁধাঁটার সমাধান প্রদান করে না। আমি নিজের জন্যই একটা মীমাংসায় পৌছতে
চাই।
ইসলাম ধর্মীয় পাঠ সভার দীর্ঘ
আলোচনায় যা বুঝতাম তা হল, এই প্রশ্নটা ভাগ্য নিয়ে, ভাগ্যে কি আছে বা ভবিতব্যটা কি
তা আমরা আগে থেকে জানতে পারিনা, নানা রকম শঙ্কায় ভুগি। প্রচলিত কথায় বলা হয় কপালের লেখন না
যায় খণ্ডন। ইসলাম ধর্ম
অনুসারীদের দৃঢ় বিশ্বাস যে ভাগ্য আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত এতটাই যে একটা গাছের
পাতাও তার ইচ্ছা ছাড়া নড়ে না। খারাপ হোক বা ভাল হোক তা সবই পূর্ব নির্ধারিত। এই
বিষয়টা নিয়ে ইসলাম ধর্মানুসারীদের মধ্যে তিনটা চিন্তা ধারার সৃষ্টি হয়, একটি বলে
আমরা কেবল পালকের মত ঘটনাক্রমে ভেসে বেড়াচ্ছি তাই আমাদের নিজেদের থেকে ভাগ্যের উপর
হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ নাই। কর্মযোগ ও ফলাফল দুটাই পূর্ব নির্ধারিত। হলিউডের টমাস
হ্যাংস অভিনীত ফরেস্ট গ্যাম্প ছায়াছবিতে শুরুটাও হয় উড়তে থাকা পালক দিয়ে শেষ ও হয়
ওই পালক এর উরে চলা দিয়ে। এই চিন্তা ধারাটা তাই একক ভাবে ইসলামী চিন্তাধারা নাও
হতে পারে, পশ্চিমা চিন্তাতেও এটা আছে। ইসলামী দর্শনে আরেকটি ধারা হল যারা মনে করে
কর্ম যোগ মানে কর্মটি করার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা আছে
কিন্তু ফলাফল আল্লাহর হাতে। আমি গাছ লাগাতে পারি, গাছে পানি দিয়ে যত্ন করে বড় করতে
পারি কিন্তু তাতে ফল হবে কি না বা ফলটা উন্নত জাতের হবে কিনা তা আমার নিয়ন্ত্রণের
বাইরে। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে আম গাছের চাড়া বড় করলে তাতে কখনই কাঁঠাল
ধরবে না। এটাও বলা যায় যে আমি যদি বেলে মাটিতে গাছ লাগাই তা হলেও গাছটা বড় হবে না।
গাছটার যত্ন নেওয়া, সারমটি দেয়া, পরিচর্যা করা এ সব করলে তবেই ফলের আশা করা যায়।
ওই আশা পর্যন্তই শেষ, নিশ্চিত করে কিছু বলার উপায় নেই। এ বছর খরা হবে না বন্যা হবে
তা আগে থেকে কেউ বলতে পারে না। দিবা রাত্রির আবর্তনের মত এ সবই আমাদের নিয়ন্ত্রণের
বাইরে। ”আমরা চেষ্টা করতে পারি বাকিটা আল্লাহর হাতে” এটা একটা প্রচলিত কথা এদের
কাছে। আরেকটি ধারা আছে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে যারা মনে করে কর্ম ও কর্মফল দুটাই
মানুষের হাতে যার বিচার হবে পুনরুত্থান পরবর্তী হাশরের মাঠে। এদের মুতাজিলা সেক্ট
বলা হয় বলে জানি। তাই গাছ লাগান ও গাছে ফল হওয়া দুটাই মানুষের কর্ম যোগের ফলাফল।
এটা ওই ”মানুষ তার নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ে” বলার মত অবস্থা, পার্থক্যটা হল ভাল ও
খারাপ আল্লাহর তরফ থেকে আসে এই দৃঢ় বিশ্বাস তারাও মানে তবে কর্মের ইচ্ছা মানুষের
স্বাধীন ইচ্ছা ও তার ফলাফল তার কর্মের ফল, তারা মনে করে কর্মের ইচ্ছার উপরই তাদের
বিচার হবে আর ফলাফল আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত প্রাকৃতিক নিয়মানুযায়ীই হবে।
নাস্তিক্যবাদের “মানুষ তার নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ে” মতবাদের সাথে তাই তাদের এখানে
পার্থক্য। প্রখ্যাত লেখক শেখ তাক্কিউদ্দিন নবায়ানী তার নিধামুল ইসলাম বই এর
দ্বিতীয় অধ্যায়ে বলেছেন এই তিন চিন্তা ধারার প্রতিটির চিন্তা প্রেক্ষিত বা
ভিউ-পয়েন্ট ভুল। সবাই জানতে চাচ্ছে বিধাতা কি ভাবে তার বিশ্বটা নিয়ন্ত্রণ করছেন ও
তাতে তার ভাগ্যটা কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। তিঁনি বলতে চাচ্ছেন ভাববার প্রেক্ষিতটা
হবে আমাদের নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব সীমানার বিচারে। প্রকৃতিতে যা কিছু আমাদের
নিয়ন্ত্রণের বাইরে হচ্ছে তার জন্য আমরা দায়ী হতে পারি না আর তা আমাদের ভাগ্যর উপর
প্রভাব ফেললেও আমাদের করার কিছু নেই। এর পর আসে মনুষ্য সমাজ কর্তৃক কর্মকাণ্ডের
ফলাফলে আপনার ভাগ্যর প্রভাবিত হওয়ার বিষয়। মনে রাখতে হবে এর কতটুকু আপনি নিয়ন্ত্রণ
করতে পারেন, যদি তা আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে তবে তা কার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে?
মুসলিম বিশ্বাস অনুসারে তা অবশ্যই আর কেউ নয় বরং স্বয়ং আল্লাহ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত
বলে আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে। তাই এই দ্বিতীয় গণ্ডিতে ঘটমান ঘটনা গুলর জন্য আপনার
তেমন কিছু করার নেই। যেমন ধরুন হঠাৎ রাস্তায় অনেক দিন আগের এক বন্ধুর সাথে দেখা
হয়ে গেল, কিংবা কোন গন্তব্যে যাওয়ার সময় হঠাৎ রাস্তায় জামে আটকা পরে গেছেন। এর পর
আসে যা কিছু আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কেবল সেই অংশটুকুতে আপনি স্বাধীন ও তার
কর্মযোগ ও ফলাফলের জন্য আপনি দায়বদ্ধ হবেন। তাই আপনার স্বাধীন বৃত্তটাতে স্রষ্টা
হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণ করেন কি না কিংবা ফেরেশতারা হস্তক্ষেপ করে কিনা তা চিন্তার
প্রেক্ষিত হওয়া উচিত নয়। এই চিন্তা প্রেক্ষিতে কি হলে কি হবে না ভেবে ভাবতে হবে
কতটুকু আমি করতে পারি আর তার জন্য আমার দায়বদ্ধতাটা কতখানি। কাজ যেটা আমি করছি তা
ন্যায় না অন্যায় তাই কেবল বিচার্য হওয়া উচিত। চিন্তা প্রেক্ষিতের এই দিক পরিবর্তন
করতে নিধামুল ইসলাম বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে শেখ তাকিউদ্দিন নাবায়ানী এই পরামর্শই
দিয়েছেন। যাহোক এবার হকিংস এর মতামত গুলোয় ফেরত আসি।
বাংলায় অনুবাদকৃত হকিংস মহোদয় তার বই ব্ল্যাক হোল এর ১২ তম অধ্যায়ে
ঠিক এ বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছেন যদি আমরা ধরে নেই সব কিছু আগে থেকে ঠিক করা আছে তবে
তিনটা সমস্যা হয়। তিনি তিনটা সমস্যা উল্লেখ করে তার সমাধান বা মতামত প্রদান করেছেন।
আমি উক্ত তিনটি সমস্যা নিজ ভাষায় উল্লেখ করে তিনি যা বলতে চেয়েছেন তার পাশাপাশি আমি
যা বুঝি তারও সংযোগ করে একটা নিশ্চিত সীমানায় পৌছাতে চাই। একটি সমন্বিত একীভূত তত্ত্ব
যা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা দিতে পারে বা নিয়ন্ত্রণ করে এরূপ একটি
সমন্বিত একীভূত তত্ত্ব কখনও সম্ভব নয় বলে তিনি তার শেষ বই “থিওরি অব এভরিথিং” এ উল্লেখ
করেছেন। যা হতে পারে তা হল কত গুল তত্ত্বর সমষ্টি যা এই বিশ্ব পরিচালনার পিছনে কাজ
করছে। একক সমন্বিত তত্ত্ব বলতে আসলে তিনি স্রষ্টার সঞ্জাই বুঝাচ্ছেন। গাণিতিক দর্শন
অর্থাৎ তারা পদার্থ বিদ্যার গণিত ব্যবহার করে বিগ ব্যাং থেকে সময়ের সূচনা ও আজ পর্যন্ত
মহাবিশ্বর বিস্তার ও সম্প্রসারণের পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা প্রদানে সক্ষম হয়েছেন। কেবল ব্ল্যাক
হোলের কেন্দ্রের সিগুলারিটি নাকি ইনফিনিট কনট্রাকশান (অনন্ত সংকোচন) তা প্রমাণের বাকি
আছে এখনো। ব্ল্যাক মেটার সম্পর্কেও সঠিক কিছু বলতে পারা যাচ্ছে না। তবে মহাবিশ্বটার
সীমানা আছে কিন্তু কিনারা নাই এটা প্রমাণ করা গেছে বটে গাণিতিক সমীকরণে। তার মানে এটা
এক মহা গোলক বা বেলুন যা ক্রমাগত স্ফীত হচ্ছে। এর বাহিরে কি আছে বলার উপায় নেই। হতে
পারে বেলুনটা আরেকটা বড় বেলুনের মধ্যে আছে কিংবা এরকম অনেক গুল বেলুন আছে একটা আরেকটার
সমান্তরাল কিংবা একাধিকটি একে অপরকে ইন্টারসেক্ট করে এক মহা জট সৃষ্টি করেছে। মহাবিশ্বর
চারটি প্রধান বল বা ফোর্স তথা ১) গ্রাভিটেশনাল ২) ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ৩) উইক নিউক্লিয়ার
৪)স্ট্রং নিউক্লিয়ার ফোর্স একীভূত করে তাকে স্রষ্টা হিসেবে বিবেচনা করার প্রবণতা সেই
আব-আতশ-খাক-বাত (পানি-আগুন-মাটি-বাতাস) আমল থেকেই চলে আসছে। তা অতি পুরাতন চিন্তা চেতনা
বটে যার মীমাংসা আজও হয় নাই। আদি কালে যেমন বলা হতো এই মহাবিশ্বটা একটা কচ্ছপের পিঠের
উপর আছে, কার আজব চিন্তা থেকে এই বিশ্বাস এসেছিল তা বলা নাই তবে এটা প্রচলিত বিশ্বাস
ছিল, আর আজকের ব্যাখ্যা তার চাইতে কতটাই বা ভিন্ন। ওই সময় তো তাও মহাবিশ্বটা কোথায়
আছে কল্পনা করা গেছে। কিন্তু জ্ঞান বিজ্ঞানের এই উন্নত সময়ে সেই কল্পনার সুযোগটাও নষ্ট
হয়ে গেছে।
হকিংস আলোচিত (১ম) প্রথম
সমস্যাটি উল্লেখ করেছেন তিনি এভাবে “ধরে নেয়া যাক মহান ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব গাণিতিক
বাগ্বিধিতে সুষ্ঠ এবং সংক্ষিপ্ত। সর্ব বিষয়ক সম্পর্কীয় তত্ত্বের একটি বিশেষত্ব এবং
সারল্য থাকা উচিত। অথচ কি করে আমরা চার পাশের জটিলতা এবং খুঁটিনাটি বিশদ বিস্তার দেখতে
পাই কয়েকটি সমীকরণ তার কারণ দেখাতে পারে। সত্যিই কি বিশ্বাস কারা যেতে পারে যে মহান
ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব স্থির করে দিয়েছিল এ সপ্তাহের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গানের রেকর্ডের
শিরোনামে থাকবে সিয়াত ও’কনোর কিংবা কসমোপলিটানের প্রচ্ছদপটে ম্যাডোনা থাকবে?” কিংবা
গতকাল ০১ জুন ২০২২ রাতে আর্জেন্টিনা বনাম ইটালির ফাইনাল খেলার প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনা
২ টা গোল করবে আর দ্বিতীয় অর্ধে আরও ১টা গোল করবে। প্রথমার্ধের পর আমি ঘুমায়ে গিয়েছিলাম
তাই দ্বিতীয়ার্ধে যে আরও একটা গোল দিয়েছে তা জানা ছিলনা, পরবর্তী দিন অফিস যাওয়ার পথে
রেডিও টুডের সকালের খবরে জানতে পারলাম। একটি ঘটনার সাথে কত শত সহস্র
ঘটনা জড়িত আর সবগুলো পূর্ব পরিকল্পিত হলে সে তো এক মহা কাণ্ড।
হকিংস প্রথম সমস্যাটার আলোচনায় বলেছেন কণাবাদী বলবিদ্যায় অনিশ্চয়তার
সূত্র মতে কণার অবস্থান জানা গেলে তার ভরবেগ বা মোমেন্টাম জানার উপায় থাকে না। গাণিতিক
ভাবে কণার অবস্থান যত নিশ্চিত হওয়া যায় তার ভরবেগ তত অনির্দিষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে
মহাবিশ্বর উপাদানগুলো অনেক দুরে দুরে অবস্থিত বলে এর প্রভাব চোখে পরে না কিন্তু বিগ-ব্যাং
এর সময় যখন সকল বল ও ভর এক বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত ছিল তার পর মহা বিস্ফোরণ হল তখন থেকে
আজ পর্যন্ত মহাবিশ্ব আজ যে ভাবে আছে তা আরও অন্য অনেক ভাবে বাস্তবায়িত হতে পরত। অর্থাৎ
আমরা এখন যে বাস্তবতা দেখছি তার থেকে ভিন্নতর বিভিন্ন বাস্তবতার সৃষ্টি হতে পারত কিন্তু
তা না হয়ে আমাদের এই বাস্তবতা হওয়াটা একটা ঘটনা সংঘটন। ভিন্ন বাস্তবতায় হয়ত জার্মান
বাহিনী ২য় বিশ্বযুদ্ধে জয়ী হতে পারে কিন্তু তা না হয়ে আমরা জানি তারা মিত্র বাহিনীর
কাছে পরাজিত হয়েছিল। ভিন্ন বাস্তবতায় হয়ত ডাইনোসর প্রজাতি বিলুপ্ত হয় নাই আর মানব প্রকৃতি
বানরের মতই রয়ে গেছে। তা না হয়ে আজকের পৃথিবীটা এরকম হয়েছে তা এক দৈব সংঘটন না কি কোন
ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন । মহা বিস্ফোরণের প্রাথমিক অবস্থায় বল ও
ভরের সামান্য তারতম্য হলে আজকের পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার মত মহাবিশ্ব তৈরিই হতো না আর তার
মাঝে বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে মানুষ থাকা তো দুরের কথা।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ বলা হয়ে থাকে মানুষটার গায়ের রং, চুলের
রং, রক্ত কণার পরিমাণ, উচ্চতা, আয়ুষ্কাল, ধূমপায়ী হবে কি না এ রকম আর অনেক কিছু সবই
নাকি মানব দেহের প্রতিটি কোষের ২৩ জোরা ক্রোমোজোমে জেনেটিক কোডে কোডিং করে আগে থেকেই
নির্দিষ্ট করা থাকে। সেদিক থেকে এই বৈশিষ্ট্য গুলো মানুষের জন্ম থেকেই নির্ধারিত। এ
গুলো তো হল মানুষের গাঠনিক বিষয়াবলী কিন্তু এই প্রাথমিক উপাদানের নির্ধারিত থাকা তার
জীবনকালে তারই দ্বারা সংঘটিত কর্মকাণ্ডে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলাটা স্বাভাবিক। কিন্তু
প্রশ্নটা হল এই জেনেটিক কোডিং কার হতে লেখা, উত্তরটা একমাত্র ধার্মিক মতবাদে দেয়া সম্ভব।
পত্র পল্লব সহ এই বিশাল প্রকৃতি যাতে আমরা ডুবে আছি আমরাও এই প্রকৃতিরই অংশ। বিচ্ছিন্ন
কোন সত্তা নই। উরে এসে জুরে বসা হলে মানব প্রকৃতি এই প্রাকৃতিক পরিবেশে খাপ খাওয়াতে
পারলেও তার গাঠনিক উপাদান ভিন্ন হতে বাধ্য ছিল, কিন্তু তা নয় বরং এই প্রকৃতিরই উপাদান
দিয়ে গড়া এই মানব কাঠামো। এ মর্তের মাটি দিয়েই তৈরি মানব সকল বলে ধর্মগ্রন্থ। নাস্তিক্যবাদের
দাবি যে মানব বুদ্ধিমত্তাই হল প্রকৃতির সর্বাপেক্ষা উন্নত বস্তু বা উপাদান যা অন্য
কোন জীব বা জড়-র মধ্যে নাই। এই কথাটাই কি আশরাফুল মখলুকাত (সকল সৃষ্টির শেরা) ধর্মীয়
বিশ্বাসীরা বলে থাকে না? ধর্মের অবস্থান অধিবিদ্য ভাববাদে। অধুনা বলা হয় ভাববাদের দিন
শেষ এখন বস্তুবাদের জমানা। বস্তুবাদ থেকে সাম্যবাদ এর উত্থান ও সময়ের সাপেক্ষে এর ক্রমাগত
ব্যর্থতাও দৃশ্যমান। বস্তুবাদীই নাস্তিকতার জন্মদাতা আর বস্তুবাদের পতন মানে আধুনিক মানসে নাস্তিকতারও পতন। তাই বলে অগ্রবর্তী
মনব সভ্যতা যে অধিবিদ্য ভাববাদে ফেরত গেছে কিংবা ধর্মিও মতবাদ সমূহের কোন একটাতে ঐক্যমত্য
হয়েছে? তা নয়। এই অদ্ভুত মানব সভ্যতায় সব গুল মতবাদই লিভ এন্ড লেট লিভ পদ্ধতিতে কেউ
এটা কেউ ওটা তে মনস্থির করে বসে আছে বা জীবন চালাচ্ছে। বিষয়টা এখন এমন যে একটা হলেই
হল, সব মতবাদই তো সাধারণ ভালকে ভাল আর সাধারণ মন্দকে মন্দ বলে। কঠিন কঠোর হয়ে মৌলবাদী
হওয়ার দরকার কি। বরং লিবারেল হয়ে সেকুলার বা ধর্ম নিরপেক্ষ থাকা অনেক সহজ। বিশেষ করে
ধর্ম যখন প্রাত্যহিক অর্থনীতিতে তেমন একটা নাক গলায় না। যেহেতু ভবিষ্যৎ সম্পর্কে না
বিজ্ঞান না ধর্ম স্পষ্ট করে কিছু্ই বলতে পারে না তাই এটাকে ভবিতব্যর উপর ছেড়ে দেওয়াই
যুক্তি যুক্ত। এটাই বোধ হয় সর্বাধিক আধুনিক মানুষের মনোভঙ্গি বর্তমান সময়কালে।
হকিংস আলোচিত (২) দ্বিতীয়
সমস্যাটি উল্লেখ করেছেন এভাবে “মহান ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব সমস্তই স্থির করে এ কল্পনের
দ্বিতীয় সমস্যাঃ আমরা যা বলি সবই নির্ধারিত হয় তত্ত্বটি দিয়ে। কিন্তু বাক্যটি সঠিক
হবে সেটা কেন নির্ধারিত হবে? ভুল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি নয় কি? কারণ একটি সঠিক বক্তব্য
থাকলে ভুল বক্তব্য অনেক থাকে।” দ্বিতীয় সমস্যার
আলোচনায় তিনি ডারউনের প্রাকৃতিক নির্বাচন (ন্যাচারাল সিলেকশন) এর সারভাইবাল এ্যাট দি
ফিটেস্ট অধিকল্পনকে বেছে নিয়েছেন। উনার মতে জীবনের উৎপত্তি দৈব সংঘটনে প্রোটিন অণুর
মত বৃহৎ অণুর সৃষ্টি হয়েছে যা হতে ডিএনএ আর আরএনএ (ডি-অক্সিরাইবোজ নিউক্লিক এসিড বা
রাইবোজ নিউক্লিক এসিড) তৎ পরবর্তীতে জীবাণু ও অমেরুদণ্ডী প্রাণী, মেরুদণ্ডী প্রাণীর
সৃষ্টি। উনি বলছেন বানর আর মানবের ডিএনএ’র মধ্যে সদৃশ আছে। সামান্য পরিবর্তনে মানুষের
স্মৃতি ধারণ ক্ষমতা ও ভাষা ব্যবহার করার ক্ষমতার জন্য, অন্য ভাবে বলা যায় বুদ্ধিমত্তা
বা ইনটালেক্ট এর সৃষ্টি। আর তারও বহু বছর পর লিখিত ইতিহাস সঞ্চিত রাখার ইতিহাস মাত্র
১০ হাজার বছরের। বানর থেকে মানুষে রূপান্তরে ৩০০ কোটি বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। উনি বলছেন
ডিএনএ তে ত্রুটি ছিল বলেই সারভাইভালের জন্য এক প্রজাতি নিম্নতর প্রজাতিকে বিলুপ্ত
করে তার জায়গা দখল করে নেয়। বিষয়টা ন্যাচারাল সিলেকশন এর মাধ্যমেই হয়েছে বলে তার মত।
এই অধি-কল্পনা যা পরীক্ষাগারে পর্যবেক্ষণ করে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। তাই অনুমান ভিত্তিক।
কিছুদিন আগে হারুন ইয়াহিয়া (তুরস্কর আদনান ওখতার এর ছদ্মনাম) প্রকাশিত বইগুল বিস্তারিত
ছবি সহকারে ডারউনের প্রস্তাবিত ন্যাচারাল সিলেকশন কে ভ্রান্ত প্রমাণের প্রচুর প্রমাণ
উপস্থাপন করেছেন। এখানে কার বক্তব্যটি সঠিক তা নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। আমার মতে
ন্যাচারাল সিলেকশন মতবাদটাই সঠিক আর প্রোটিন অণুর সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া দেখলে অবাক না
হয়ে পারা যায় না। এত জটিল অণু কিভাবে সংয়ক্রিয় ভাবে নিজে থেকেই সংগঠিত হয় তা আশ্চর্য
জনক বটে। এই যে আমার মতামত এটা কি পূর্ব নির্ধারিত না কি আমার নিজস্ব সিদ্ধান্ত, আমি
এখন নিলাম যা আগে ছিল না? না কি তা আরোপিত আগে থেকেই ঠিক করা ছিল যে আমি সঠিক সিদ্ধান্ত
নিব কিংবা বেঠিক সিদ্ধান্ত নিব। এটা সেই দ্বিঘাত সমীকরণের মত হয়ে গেল। দুটো ভেরিয়েবল
একসাথে সমাধান করার উপায় থাকে না যদি না একটা জানা যায়।
জর্ডানের শেখ তাকীউদ্দিন নাবাহানি (রাহিমহুল্লাহ) তার বই “থটস” এ বলেছেন, যে
কোন সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত বাস্তব ভিত্তিক, তা যুক্তিবাদী ভাবধারারও হবে না আবার
বিজ্ঞান ধর্মী ভাবধারারও হবে না কারণ তাতে মনগড়া বা স্পেকুলেশান সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা
থাকে। বাস্তব ভিত্তিক যা বাস্তবে আছে বুঝা যায় আর যা মনকে প্রশান্ত করে এরূপ একটি মীমাংসায়
পৌঁছান যায় কেবল রেশনাল থিংকিং পদ্ধতিতে। এটা গভীর চিন্তা নয় বরং আলোকিত চিন্তার প্রেক্ষিত
থেকে বিচার করতে হবে। সেই বাস্তব ভিত্তি থেকে বিচার করলে দ্বিতীয় সমস্যাটা এমন যে,
আমি এখন যা বলব তা কি আগে থেকেই ঠিক করা আছে? আমি তো এর পক্ষে কিংবা বিপক্ষেও বলতে
পারি। এটা কি পূর্ব নির্ধারিত না কি আমার ইচ্ছাধীন। আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা বা ফ্রি-উইলই
তো মন, মনের ইচ্ছা তা’ও কি পূর্ব নির্ধারিত, তা হলে আমার স্বকীয় সত্তার অস্তিত্বর সঞ্জা
টা কি হবে। আমি তবে কি রোবট না কি ফেরেশতা যাদের নিজেদের ইচ্ছা বলে কিছু নাই। আবার
প্রশ্ন রাখা যায় ফেরেশতাদের যদি স্বাধীন চিন্তা শক্তি না থাকতো বা মহান স্রষ্টা যদি
তাদের সেই ক্ষমতা না দিতেন তবে তাদের জিজ্ঞাসা করার প্রসঙ্গটা কি আসত যে মর্তে আদম
বা স্রষ্টার খলিফা বা প্রতিনিধি পাঠান হবে, সেক্ষেত্রে তাদের মতামত টা কি।
হকিংস আলোচিত (৩) তৃতীয়
সমস্যাটি উল্লেখ করেছেন এভাবে “আগে থেকেই সব ঠিক করা রয়েছে – এই কল্পনের আরেকটি
সমস্যা আমরা মনে করি আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা রয়েছে। আমরা যদি কিছু করব বলে ঠিক করি, তাহলে
সেটা করার স্বাধীনতা আমাদের আছে। কিন্তু সবই যদি বিজ্ঞানের বিধি দিয়ে নির্ধারিত হয়
তাহলে স্বাধীন ইচ্ছা নিশ্চয়ই একটা মায়া এবং আমাদের যদি স্বাধীন ইচ্ছা না থাকে তাহলে
কৃতকর্মের জন্য আমাদের দায়িত্বের ভিত্তি কি? কোন উন্মাদ যদি কোন অপরাধ করে তাহলে আমরা
তাকে শাস্তি দিই না। তার কারণ আমরা মেনে নিয়েছি, সে এ কাজ না করে পারে না। কিন্তু মহান
ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব যদি আমাদের সকলের নিয়ামক হয় তাহলে আমরা কেউই সে কাজ না করে পারি না।
সুতরাং কৃতকর্মের জন্য কোন লোককে দায়ী করা হবে?”
মানুষের মষ্তষ্কে রয়েছে ২.৫ মিলিয়ন গিগাবাইট মেমরির সমতুল্য
জায়গা যার মাত্র ১০% সে ব্যবহার করে থাকে, তার চোখের ক্ষমতা ৩২৪ মিলিয়ন পিক্সেল, কিডনিতে
রয়েছে ১.২ মিলিয়ন ফিল্টারিং ইউনিট, চলাচল ও ব্যালেন্সের জন্য রয়েছে ২০৬ হাড্ডির পা,
বছরে ৩৮ মিলিয়ন রিদমের বা পাল্স এর হৃদ যন্ত্র যা দেহজুরে বিস্তৃত ৪০ হাজার কিলোমিটার
রক্ত সংবহন তন্ত্রে রক্ত সঞ্চালনে সক্ষম। মানবের এতদ্ বিবরণ যেন দানবের সমান। আর তার
মস্তিষ্ক তে কত লক্ষ কোটি নিউরন সমন্বয়ে গঠিত, তা যেন একটা ছোটোখাটো মহাবিশ্ব। এত বৃহৎ
দানবের ভবিতব্য ফোরকাস্ট করা বিজ্ঞানের বর্তমান ক্ষমতায় প্রায় অসম্ভব। অদূর ভবিষ্যতে
করা যাবে তা কল্পনা করাও শক্ত। মানবিক আচরণ
প্রসঙ্গে হকিংস তার বইয়ে লিখেছেন “মানবিক আচরণ সম্পর্কে কোন ভবিষ্যদ্বাণী করার অসামর্থ্যের
সত্যিকারের কারণ এ কাজটা খুব শক্ত। আমরা আমাদের মস্তিষ্কের ক্রিয়া শাসনকারী মূলগত ভৌত
বিধিগুলো জানি। তুলনায় তারা সরল কিন্তু কয়েকটি কণিকা বেশি জড়িত থাকলে সমীকরণ সমাধান
খুবই শক্ত। এমনকি সরলতর নিউটনীয় তত্ত্বেও নির্ভুলভাবে সমীকরণ সমাধান করা যায় শুধুমাত্র
দুটি কণিকার ক্ষেত্রে। তিনটি কিংবা ততোধিক কণিকা থাকলে আসন্নতার দ্বারস্থ হতে হয়। কণিকার
সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কাঠিন্যও বাড়ে। মানুষের মস্তিষ্কে প্রায় ১০২৬ কিংবা ১০০
মিলিয়ন বিলিয়ন বিলিয়ন কণা রয়েছে। মস্তিষ্কের প্রাথমিক অবস্থা এবং যে স্নায়বিক উপাত্তগুলো তাতে প্রবেশ
করছে, সেটা জানা থাকলে বোঝা যাবে এ সংখ্যা এত বেশি যে, আমরা কোনোদিনও মস্তিষ্ক কি রকম
আচরণ করবে সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারবো না।” তিনি আরও বলেছেন “যা ঘটে তার সবই
পূর্ব পরিকল্পিত, এই কল্পনের ওপর নির্ভর করে কেউ নিজের আচরণের ভিত গড়তে পারে না কারণ,
ভাগ্যে কি নির্ধারিত আছে সেটা সে জানে না।”
অনেকের প্রশ্ন সবই যদি পূর্ব হতে
নির্ধারিত হয়ে থাকে তা হলে আমি কোন অন্যায় করলে তা তো আমার দোষ হওয়ার কথা নয়। এরূপ
ভুল চিন্তা থেকে রেহাই পেতে নিধামুল ইসলাম বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে শেখ তাকীউদ্দিন নাবাহানি (রাহিমহুল্লাহ)র পরামর্শ মত চিন্তা প্রেক্ষিত টা একটা সমাধান দেয় বটে। আমার স্বাধীন
কর্মবৃত্তে আমি যা করছি তার জন্যই আমি দায়বদ্ধ, তার জন্যই আমার বিচার হবে, আমার
নিয়ন্ত্রণের বাইরের কোন কর্মকাণ্ডের পরিণতির জন্য আমি দায়বদ্ধ নই। তাই আমার
অজান্তে আমার বারান্দার কোন একটা গাছের টব পড়ে গিয়ে নিচে দড়িয়ে থাকা কোন লোকের
মাথা ফেটে গেলে তার জন্য আমি দায়ী নই। ছুরি দিয়ে আপেল কাটব না মানুষের গলা কাটব তা
আমার ইচ্ছাধীন, চাকু কাটবে কারণ তার ধার আছে এটা তার বৈশিষ্ট্য। ওই চাকু দিয়ে আমি
কি করছি তার জন্য আমি দায়ী, চাকুটা দায়ী নয়। তাই প্রকৃতির উপাদানের নিয়ম গুল নির্দিষ্ট
আর এই প্রকৃতিতে আমার স্বাধীন জগতে আমি সেই প্রাকৃতিক উপাদান সমূহ দিয়ে যা করব
তা’র প্রেক্ষিতেই আমার বিচার হবে বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করে।
কয়েকটি ঘটনার উদাহারণ দিলে হয়ত বিষয়টি আরও স্পষ্ট হতে পারে।
বিগত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ আমি অফিস থেকে স্টাফ বাসে বাড়ি ফিরছিলাম, সামান্য বৃষ্টি হওয়াতে
ভাবলাম পাঠাও মোটরসাইকেলে গেলে ভিজে যাব তাই ঘুরো পথে সিদ্ধান্ত নিলাম স্টাফ বাসেই
যাব যতই সময় লাগুক না কেন। সন্ধ্যা ৬টা হতে ৮টা বাসে বসা বিরক্ত লাগছিল, খিদাও পেয়েছিল।
র্যাংস ফ্লাইওভারে আবারও জ্যামে আটকা পরেছে দোতালা স্টাফ বাসটি। ভাবলাম নিচে গিয়ে
দেখি বাদাম ওয়ালা পাওয়া যায় কিনা। বাস থেকে নেমে এক বাদাম ওয়ালাকে দেখি বাদাম বিক্রি
করছে, ও’র কাছে বললাম তাড়াতাড়ি আমাকে ১০ টাকার বাদাম দাও। ও তখন পাশে দাঁড়ান একটা প্রিজন
ভ্যানের একাধিক বাড়ান হাতে বাদাম তুলে দিতে ব্যস্ত তাই আমাকে দিতে পারছিল না। এমন সময়
জ্যামে জমে থাকা গাড়ি গুল চলা শুরু করল, আমি আমাদের স্টাফ বাসের সামনে আর পাশ দিয়ে
একটা লম্বা বাস চলে যাচ্ছে তাই সড়তে পারছিনা, যখন বাসটা পাস কাটাল আমি সরে এস আমাদের
স্টাফ বাসে উঠতে গেলাম কিন্তু হেল্পার নাদের আমাকে ধরতে গিয়ে উল্টা ধাক্কা লাগল, চলন্ত
বাসে উঠতে না পেরে পরে গেলাম, একদিকে সরি সারি মোটরসাইকেল আর একদিকে স্টাফ বাস, ডান
পাটা ভাজ করেছিলাম কিন্তু বাম পা’টা চাকার নিচে চলে গেল, প্রতিটা আঙ্গুলের উপর দিয়ে
বাসের চাকা যাওয়াও টের পেলাম, এক মটরসাইকেলওয়ালা বলছিল পা’ টা গেছে। বাসের হেল্পার
নাদের সহ একজন আমাকে ধরে বাসে উঠাল, উঠে ভাল করে বাম পা টা গোড়ালি থেকে নারা চার করে
দেখলাম, করা যায়, বাসের মধ্যে হেটেও দেখলাম, হাটা যাচ্ছে। মোবাইলের টর্চ দিয়ে দেখলাম
পা টার গোড়ালি থেকে বাম পাশে থেঁতলে গেছে, রক্তও দেখা যাচ্ছে। ফোন করলাম ছেলে বেলার
বন্ধু হাড়ের ডাক্তার টিপুকে, ও বলল ও বান্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছে, আর আমি যেহেতু
ততোক্ষণে আগারগাঁও এর কাছে চলে এসেছি আর পঙ্গু হাসপাতাল কাছাকাছি তাই ওখানে ডাক্তার
আছে আমাকে দেখতে পারবে। রওনা হলাম একা একাই, রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম পঙ্গু হাসপাতালে।
ওখানে এক্সরে করে ডাক্তার দেখল পা এর হাঁর একটাও ভাঙ্গে নাই, নরম টিসু গুল শুধু থেঁতলে
গেছে। প্লাসটার করে তবে বাড়ি ফিরেছিলাম সেদিন অনেক রাতে। আমার এই এক্সিডেন্টের পুরটাই
কি ছিল পূর্ব নির্ধারিত। এই যে আমার বিরক্ত হয়ে বাস থেকে নামা, আমি তো বাদাম ওয়ালাকে
বাসে উঠে আসতে বলতে পারতাম, তা না করে কেন নিচে নামলাম। আমার বাম গোড়ালির উপর দিয়ে
দোতালা বাসের একটা চাকা চলে গেল তার পরও একটা হাড়ও ভাংল না, সবাই বলে বাবা-মা এর দোয়া
ছিল আমার উপর। আমার চাচাত ভাই হিরা আইসিডিডিআরবি’র ডাক্তার, ও তো বিশ্বাসই করে না আমার
পা এর উপর দিয়ে দোতালা বাস এর চাকা চলে গেছে, ও’র কথায় তা হলে তো হাড় গুড়া গুড়া হয়ে
যাওয়ার কথা। ১১ দিন বিছানায় পরে থেকে হাটতে পারলাম আর প্রায় এক মাসে স্বাভাবিক হলাম।
এই যে ঘটনা, এটার কতটা পূর্ব নির্ধারিত আর কতটা দৈব সংঘটন তা গবেষণার বিষয় বটে। মুসলিম
হিসেবে বিশ্বাস করতেই হবে যে এর পুরটাই নির্ধারিত ছিল কিন্তু তা কিসের জন্য আজকের এই
লেখায় বিষয়টার উল্লেখ করব বলে? ওই ঘটনায় পা টা কাটা পরলে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যেতাম, চাকুরী
হারাতাম, জীবনে বিপর্যয় নেমে আসত। তা ঘটেনি, আমি আবার স্বাভাবিক হয়েছি যদিও বাম পাতে
জোর কম পাই ইদানীং। বাস থেকে নামার সিদ্ধান্তটি আমার স্বাধীন ইচ্ছা না কি আমার উপর
আরোপিত ইচ্ছা ছিল? হলিউডের ম্যাট্রিক্স মুভিতে
দেখান হয় জীবনের পারপাস বা উদ্দেশ্য কত গুল চয়েস (পছন্দ) বা সুযোগ (অপশান) এর এক গোলক
ধাঁধাঁ। উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যে পৌছাতে আপনার সামনে বাধা আসবেই আর তার সমাধানে একাধিক
অপশান বা সুযোগ থাকবে, এর মধ্য হতে আপনাকেই বেছে নিতে হবে সঠিক পথটি। তাই বলা হয় পথ
অনেক কিন্তু লক্ষ্য একটাই। কোন পথে যাবেন তা আপনার উপর। পছন্দ আমার হলে সেই সিদ্ধান্তটাও
কি পূর্ব হতে ঠিক করা আছে? আমার মনের স্বাধীনতার মাত্রাটা তবে কতটুকু? এক্ষেত্রে শেখ
তাকিউদ্দিন নবায়ানীর বাই নিধামুল ইসলামের দ্বিতীয় অধ্যায়ে যা বলেছেন যে আমাদের স্বাধীন
ইচ্ছার গণ্ডি কেবল মাত্র আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন গোলকে। তাই বাসে উঠলে ড্রাইভার এর ইচ্ছার
উপর আমাদের নিয়ন্ত্রিত বিশ্বটা ছোট হয়ে আসে তখন ওই বাস ড্রাইভারের নিয়ন্ত্রিত বিশ্বে
আমাদের হাত পা বাধা অবস্থায় থাকতে হয়। স্রষ্টা ওই ড্রাইভার এর ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন
তার উপরই যে আমার ভাগ্য নির্ভর করে তাও নয়। কারণ ড্রাইভার ভুল করে বাসটাকে খাদে নিয়ে
ফেললে তাতে বেশ কিছু যাত্রী ক্ষত-বিক্ষত কিংবা নিহত হলেও আমার কিছু নাও তো হতে পারে
আবার হতেও পারে। এরূপ ক্ষেত্রে আমার স্বাধীন ইচ্ছার গণ্ডিটা কতটুকু তা বুঝা অত্যন্ত
কঠিন বটে। আমি একবার ২০০০ সালে সিলেট থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় ফিরছিলাম, টিকেট না পেয়ে
পুরটা পথ বুফে কারে কখন দাড়ায়ে কখন বসে আসতে হয়, যখন তেজগাঁও এর বাকটা পার হচ্ছিল ট্র্রেন
তখন এর গতি অত্যন্ত ধীর হয়ে যায়, আমার মনে হচ্ছিল সেই কমলাপুর না গিয়ে এখানে নেমে গেলে
বাসায় তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে, যেই ভাবা সেই কাজ, দিলাম লাফ, হাতে ছিল একটা ঝিনুকের তৈরি
ঝাড়বাতি, ওটা ভঙ্গুর বলে বুফে কারের ওয়েটারকে ধরতে বলেছিলাম যাতে আমি নেমে গেলে আমাকে
ছুড়ে দিবে। আমি নামলাম ঠিকই তর পর দৌড়াতে দৌড়াতে এক পর্যায়ে পরে গেলাম। আমি পরে যাওয়াতে
ওই ওয়েটার আর আমাকে ঝাড়বাতিটা ছুড়ে দিলনা, আমি আহত হই নাই, কেবল হাতঘড়িটার ফিতা ছিঁড়ে
গিয়েছিল। ওই অবস্থায় আমি রিক্সা নিয়ে কাওরান বাজার থেকে কমলাপুর যেয়ে ওই ট্রেন খুঁজে
বের করে সেই ঝাড়বাতিটা উদ্ধার করেছিলাম। এই ঘটনা গুলোর সবগুলি কি পূর্ব নির্ধারিত না
কি আমার ইচ্ছাধীন ছিল। ঝাড়বাতিটা আমি আমেরিকার এক পেন ফ্রেন্ড কে পাঠাব চিন্তা করে
কিনেছিলাম তাই ও’টার এত গুরুত্ব ছিল আমার কাছে কিন্তু সেই ঝিনুকের তৈরি ঝাড়বাতিটা আর
পাঠানো হয় নাই সেই পেন ফ্রেন্ডকে। মানব ইচ্ছা আর তার বাস্তবায়ন এখানে স্রষ্টা হস্তক্ষেপ
করেন বলে আমার মনে হয় না। স্বাধীন ইচ্ছা প্রয়োগের সীমানাটা কখনো বাড়ে কখনো কমে এবং
তা সীমাবদ্ধ বাস্তবতার প্রেক্ষিতে।
অনেক আগে এটিএন বাংলা টিভিতে “ইট ইজ রিটেন” অনুষ্ঠানে বলা হতো
তাদের কাছে চিঠি লিখলে তারা ফ্রি বাইবেল পাঠায়ে দিবে, লিখেছিলাম চিঠি, ও’রা পাঠাল কত
গুল বাইবেলের পৃষ্ঠা যার শেষে একটি প্রশ্নপত্র। যা পূরণ করে ওদের ফেরত পাঠালে ওরা পরবর্তী
সেট পাঠাবে। এভাবে তৃতীয় সেট টা তে এক জায়গায় লেখা কোন এক পাদ্রী স্রষ্টার সাথে ইডেন
বাগানে হেটে হেটে কথা বলছেন। অর্থাৎ স্রষ্টা মানব সদৃশ ও তারই ইমেজে মানব সৃষ্টি করেছেন,
এটা আমি মানি কি না তা জানতে চাচ্ছে। আমি উত্তর না বলাতে ও’রা আমাকে পরবর্তীতে আর কিছুই
পাঠায় নাই। প্রতিটা ধর্ম প্রচারকই অন্যকে তার মত করে বিশ্ব বিবেচনা করতে বাধ্য করতে
চায়, এই প্রবণতাটা নিজেই নেতিবাচক। প্রত্যেক মানব আত্মারই নিজস্ব স্বাধীন চিন্তা শক্তি
আছে, তাকে কাঁটাতার দিয়ে বাধতে হবে কেন? আর এই বাধ্য করাতে ওই ধর্ম প্রচারকেরই বা কি
সন্তুষ্টি নিহিত থাকতে পারে তা বুঝা মুশকিল। মানুষের চিন্তা করার ক্ষমতা ও তা প্রকাশ
করার বাসনাই তাকে মানব করে তুলে। বানর থেকে শুরু করে অন্য সকল প্রাণীর এই ক্ষমতা নাই।
স্রষ্টা তা তাদের দেন নাই। এই স্বাধীনতাটাও কি তবে অবরুদ্ধ প্রাকৃতিক নিতি দ্বারা?
আমি পরবর্তী লাইনটা কি লিখব তা যদি আগে থেকেই ঠিক করা থাকে তবে আর লিখার কি দরকার,
না কি আমি বাধ্য তা আমাকে লিখতেই হবে? হলিউড মুভি “ব্রুস অলমাইটি”তে দেখায় স্রষ্টা’র
ভূমিকায় মরগান ফ্রিমেন তার ক্ষমতা মানব চরিত্রে অভিনয়কারী জিম ক্যরিকে হস্তান্তর করার
সময় বলছে, সে সবই পারবে কিন্তু মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা বা ফ্রি-উইলে কোন হস্তক্ষেপ করতে
পারবে না। ইসলাম ধর্মেও আছে হক্কউল ইবাদ আল্লাহ হাশরের ময়দানে ক্ষমা করবেন না। অর্থাৎ
যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির কাছে কিছু পাওনা থাকে তবে তা তাকে পরিশোধ করতেই
হবে। তা বস্তুগত হোক বা মনস্তাত্ত্বিক হোক।
পদার্থ বিদ্যার স্ট্রিং থিওরিতে এই ত্রিমাত্রিক বিশ্বে আর অনেক
মাত্রা আছে তা বিগ ব্যাং এর পর কুঁকড়ে এত ছোট হয়ে গেছে যে তা আমাদের নজরেই আসে না।
তা নজরে আসলে আমাদের দেহাকৃতি হয়ত অন্যরকম দেখাত। জনাব জাফর ইকবাল মহোদয় তার ছোটদের
জন্য লেখা বই য়ে বলেছেন দ্বিমাত্রিক বিশ্ব হওয়া সম্ভব নয় তাতে প্রানীগুল খাদ্যনালী
বরাবর দু টুকরা হয়ে যেত। বহু মাত্রিক বিশ্বে যে মাত্রা গুল কুকরে ছোট হয়ে গেছে যা আমরা
দেখতেই পাইনা সেই মাত্রাতেই হয়ত আমাদের দুই কাঁধে দুই ফেরেশতা মুনকার-নাকির বসে বসে
আমাদের ভাল মন্দের রেজিস্টার পরিপালন করছেন কে জানে। তাছাড়া জানা যায় মহাবিশ্বর সূচনা
লগ্নে ম্যাটার আর এন্টি-মেটার তথা পদার্থ ও প্রতি পদার্থ ছিল, একটি অপরটিকে অকার্যকর
করার পর যে টুকু পদার্থ বেচে গেছে তা দিয়েই নাকি এই বিশাল মহাবিশ্ব গঠিত। হকিংস তার
বই যে বলেছেন ভবিষ্যতে যাওয়া সম্ভব নয় কারণ ভবিষ্যতে গেলে সেই অবস্থার পরিবর্তন সাধন
করলে তা বর্তমানকে বদলে দিবে। তেমনি অতীতেও যাওয়া সম্ভব নয় কারণ সে ক্ষেত্রেও আমরা
বর্তমানকে প্রভাবিত করতে পারব। হলিউডের ব্যাক টু দ্যা ফিউচার মুভির কথা উল্লেখ করেছেন
তিনি। তিনি অন্যত্র বলেছেন বিকল্প অতীতের মত বিকল্প ভবিষ্যৎ আছে। তাই অতীত কিংবা ভবিষ্যতে
যাওয়ার কোন সম্ভাবনাই নাই। বর্তমানই তাই আমাদের একমাত্র অস্তিত্ব ও বাস্তবতা।
আমার প্রাক্তন গাড়ির ড্রাইভার সোহেল প্রায়ই বলতো আল্লাহ কত মহান
তিনি তিমি মাছেরও রিজিকের ব্যবস্থা করেন, যে তিমি মাছ আস্ত একটা হাতি গলধকরণ করে ফেলতে
পারে। তাকে নিয়ে নাস্তা করতাম যখন সে আমাকে গাড়ি চালনার প্রিশিক্ষন দিত। তখন দেখতাম
তার’ও তিমি মাছের মত খিদা, প্রচুর খেত। রিজিক পূর্ব নির্ধারিত এটা মুসলমানদের দৃঢ় বিশ্বাস।
রিজিক নিয়ে সংগৃহীত কিছু কথা এ রকম, “■▪রিযিকেরর সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছেঃ টাকা, পয়সা, অর্থ এবং সম্পদ।
■▪রিজিক এর সর্বোচ্চ
স্তর হচ্ছেঃ শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা। ■▪রিজিকের সর্বোত্তম স্তর হচ্ছেঃ পুণ্যবান স্ত্রী এবং পরিশুদ্ধ
নেক সন্তান এবং ■▪রিজিক এর পরিপূর্ণ স্তর হচ্ছেঃ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি। ■▪ রিজিক খুব গভীর
একটি বিষয়, যদি আমরা তা বুঝতে পারি। ■▪ আমি পুরো জীবনে কত টাকা আয় করবো সেটা লিখিত, কে আমার জীবনসঙ্গী
হবে সেটা লিখিত, কবে কোথায় মারা যাবো সেটাও লিখিত এবং কতটা খাবার ও পানীয় গ্রহণ করবো
তাও লিখিত বা নির্দিষ্ট। ■▪ আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, আমি কতগুলো দানা বা ভাত দুনিয়াতে
খেয়ে তারপর মারা যাবো সেটা লিখিত। একটি দানাও কম না এবং একটিও বেশি। ■▪ ধরুন এটা লিখিত
যে আমি সারাজীবনে এক কোটি টাকা আয় করবো, এই সিদ্ধান্ত আল্লাহ্ তা'আলা নিয়েছেন। ■▪ কিন্তু, আমি
হালাল উপায়ে আয় করবো না হারাম উপায়ে আয় করবো সেই সিদ্ধান্ত একান্তই আমার। ■▪ যদি ধৈর্য ধারণ
করি, আল্লাহ্ তা'আলার কাছে চাই, তাহলে হালাল উপায়ে ওই এক কোটি টাকা আয় করেই আমি মারা
যাবো। আর হারাম উপায়ে হলেও ওই এক কোটিই... নাথিং মোর, নাথিং লেস! ■▪ আমি যেই ফলটি
আজকে টেকনাফ বসে খাচ্ছি, সেটা হয়ত ইতালি কিংবা
থাইল্যান্ড থেকে ইমপোর্ট করা। ওই গাছে যখন মুকুল ধরেছে তখনই নির্ধারিত হয়েছে যে, সেটি
আমার কাছে পৌঁছাবে। এর মধ্যে কত পাখি ওই ফলের উপর বসেছে, কত মানুষ এই ফলটি পাড়তে গেছে,
দোকানে অনেকে এই ফলটি নেড়েচেড়ে রেখে গেছে, পছন্দ হয় নি বা কিনেনি। এই সব ঘটনার কারণ
একটাই, ফলটি আমার রিজিকে লিখিত। যতক্ষণ না আমি কিনতে যাচ্ছি, ততক্ষণ সেটা ওখানেই থাকবে।
এর মধ্যে আমি মারা যেতে পারতাম, অন্য কোথাও চলে যেতে পারতাম, কিন্তু না! রিজিকে যেহেতু
লিখিত আমি এই ফলটি না খেয়ে মারা যাবো না। ■▪ রিজিক জিনিসটা এতোটাই শক্তিশালী! ■▪ কিংবা যেই আত্মীয়
কিংবা বন্ধু-বান্ধব আমার বাসায় আসছে, সে আসলে আমার খাবার খাচ্ছে না। এটা তারই রিজিক,
শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা'ইলা আমার মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। হতে পারে এর মধ্যে
আমাদের জন্য মঙ্গল রয়েছে। ■▪ কেউ কারোটা খাচ্ছে না, যে যার রিজিকের ভাগই খাচ্ছেন। ■▪ আমরা হালাল না
হারাম উপায়ে খাচ্ছি, সেটা নির্ভর করছে আমি আল্লাহ্ তা'আলার উপর কতটুকু তওয়াক্কল আছি,
কতটুকু ভরসা করে আছি। কেননা, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ -------"দুনিয়ায় বিচরণকারী এমন
কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নেই। তাদের স্থায়ী এবং অস্থায়ী অবস্থানস্থল
সম্পর্কে তিনি অবহিত। সব কিছুই একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা আছে।" (সুরা হুদ : আয়াত
৬) ■▪ আল্লাহ তা'আলা
অন্যত্র বলেনঃ -------"যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য কোনো না কোনো পথ বের
করে দেবেন। আর তাকে (এমন উৎস থেকে) রিজিক দেবেন, যা সে ধারণাও করতে পারবে না।"
(সুরা ত্বালাক : আয়াত ২-৩)। ” রিজিক প্রসঙ্গে, যথার্থ ব্যাখ্যার পাশাপাশি অনেক অতিরঞ্জন
আছে। উপরোক্ত সংগৃহীত রিজিক সম্পর্কীয় বক্তব্য পড়লে বুঝা যায় রিজিকের সঠিক ব্যাখ্যা
দিতে দিতে তাকে এক পর্যায়ে এত বড় করে ফেলা হয়েছে যে তা সকল বিষয়কে আত্মস্থ করে ফেলে।
ভাবাবেগের আতিশয্যে কোন বিষয়ের সঞ্জায়নের উদ্দেশ্যটাকে ভণ্ডুল করে দেয়ার প্রবণতা এরকম
অনেক দেখা যায়।
হকিংস মহোদয় তার অধ্যায় শেষে বলেছেন, যদি প্রশ্ন করেন সব কিছু কি আগে থেকেই ঠিক করা আছে, আমার উত্তর হ্যাঁ। তবে উত্তর না ও তো হতে পারে। তাঁর এই উত্তর দ্বিধান্বিত। এত আলোচনার পর এই দ্বিধান্বিত মতামত আমার ভাল লাগে নাই। এবার আমি যা বুঝি তা বলি, প্রথমত আমি মনে করি মানুষের স্বাধীন নিন্ত্রনাধীন সীমানার মধ্যে কর্মযোগ ও কর্মফল দুটই মানুষের হাতে। কর্মফল নির্দিষ্ট জেনে মানুষ চিন্তার ভিত রচনা করতে পারে না। এটা নিতান্তই অবাস্তব। ছোটোখাটো খুঁটি নাটি বিষয়গুলো পূর্ব নির্ধারিত হয়ে আছে ভাবতে আমার ইচ্ছা করে না। আমার স্বাধীন ইচ্ছা আছে, আমি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমি যা বলছি তা ঠিক না বেঠিক বা এটাই ঠিক হবে কেন, এর অন্যথাও তো ঠিক হতে পারে। হতেই তো পারে, কিন্তু আমাকে একটা ভিত্তি বেছে নিয়েই তো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই ভিত্তিটা নিঃসন্দেহে আমার মনের স্বাধীন চেতনার অস্তিত্ব। এই ক্ষমতা স্রষ্টাই মানবকে প্রদান করেছেন এবং তিনি তা নিন্ত্রন করেন বলে আমার বিশ্বাস হয় না। তা হলে ফেরেশ্তা আর মানবের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকতো না। এই মীমাংসা আমার আকিদার সাথে সংঘর্ষিক নয় এই কারণে যে, আমার উপর আরোপিত স্বাধীনতার সীমানা স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত আর এই স্বাধীন ক্ষেত্রে আমার আচার বিচার ও কর্ম সম্পাদন সকল কিছুর জন্যই আমি দায় বদ্ধ। এই সীমিত ক্ষেত্রে ও ক্ষমতায় আমি সব দিক থেকে স্বাধীন ব্যক্তি।
ফুট নোটঃ ১২ তম
অধ্যায়, বইঃ ”ব্ল্যাক হোল” মূলঃ স্টিফেন হকিং ভাষান্তরঃ এনায়েত রসুল, প্রথম প্রকাশ
২০১১, ”আকাশ” - সিকদার প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স এর একটি সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা,
৩৮ বাংলাবাজার, ঢাকা-১০০০।
এডিট হিষ্ট্রঃ ০৬জুন২০২১> ২৩মে২০২২>
২৯মে২০২২>০১জুন২০২২>৪জুন২০২২> ৮জুন২০২২>
No comments:
Post a Comment