Thursday, May 12, 2022

মসজিদ ভিত্তিক সমাজ ও সম্মানিত ইমাম সাহেব গন

বাই অবগত আছেন শুক্রবারে জুম্মায় মসজিদের অবস্থা পাল্টে যায়। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দিন এত যে পণ্ডিত লোকেরা কিংবা সমাজের গণ্য মান্য বরেণ্য লোকজন তসবি,জায়নামাজ বগলদাবা করে মসজিদে আসেন তারা কি নিজেদের সন্তানদের মানুষ করার সময় একবারও ভেবেছিলেন যে,তার সন্তানটি মসজিদের সম্মানিত ইমাম হোক বা হওয়া উচিত ছিল?আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবরা হবেন কেবল গ্রাম থেকে উঠে আসা মাদ্রাসা শিক্ষিত হাফেজ সাহেবরা। ইমাম হওয়া কি ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার মত একটি পেশা হতে পারে? নামাজ পড়ানো কখনও পেশা হতে পারে? ২০১৬ সালের ১৫ই ডিসেম্বর জুম্মা থেকে এসে মহা বিরক্ত হয়ে কিছু কথা লিখেছিলাম ফেইসবুকে,কেউ কোন মন্তব্য করেনি,বড়মামা সোনালী ব্যাংক, বেগম রোকেয়া সরণী শাখার তৎকালীন ম্যানেজার তানজিম স্যারকেও পড়তে দিয়েছিলাম, কি বলেন জানার জন্য,কেউ কিছু বলেন নি,পুর ব্যাপারটি বেমালুম হজম করে ফেলেছিলেন দুজনেই। তারা কিছুই বললেন না কেন তা আজও আমার অজানা। আমার সহজ সরল প্রশ্ন ছিল লেখাটাতে,আজকে আমরা যদি মসজিদে উন্নত মনষ্ক,উচ্চ শিক্ষিত ইমাম সাহেবদের পেতাম,আমার মনে হয় জুম্মার নামাজের মত প্রত্যেক ওয়াক্তে বিশাল বিশাল জামাত হত। মসজিদের ইমাম সাহেবদের ষ্টেরিয়টাইপ হতে হবে কেন? লম্বা আলখাল্লা, আতরের গন্ধ সুফি সুফি চেহারা আর বক্তব্যর মাঝে মাঝে আরবি আয়ত কিংবা বর্তমানের দু একটা অতি প্রচলিত ইংরেজি শব্দ বলতে পারার দক্ষতা কি আধুনিক ইমাম হওয়ার পূর্ব শর্ত? বর্তমান মুসলিম সমাজ মনে করে ইসলাম ধর্ম একটি আলাদা ডিসিপ্লিন, অথচ যে বিষয়টি হওয়ার কথা ছিল তারই জীবন বিধান। তা হয়ে গেছে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার মত একটা টেকনিক্যাল সাবজেক্ট। এটা সাধারণ জ্ঞান এর মধ্যে আর নাই, হয়ে গেছে বিশেষ জ্ঞান বা বিশেষায়িত জ্ঞান। বিষয়ে ডিগ্রি না থাকলে তা নিয়ে কথা বলাও কঠিন। বুঝলাম দেশের সংবিধান কেউ পরে না, এর সব গুল ধারা সবার জানাও থাকে না তার পরও তারা নাগরিক দেশের জনগণ বলে দাবি করার অধিকার রাখে।

একটি বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠী আজ মসজিদ বিমুখ, বিষয়ে কোন পরিসংখ্যান নাই,কার মাথা ব্যথা আছে বলে মনেও হয়না কিংবা কেন বিমুখ সে বিষয়ে কোন গবেষণাও বোধ হয় নাই। কার বা গোয়াল,কে বা দেয় ধোঁয়া অবস্থা। সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর গুরুত্ব যে কমে গেছে তা নয় তবে যে বিষয় সমূহ নিয়ে আমাদের প্রত্যেক দিনের চলা ফেরা তাতে মসজিদের কোন ভূমিকা নেই। ভূমিকা থাকবে কিভাবে? এক সময় শুনেছি মসজিদ কেবল সামাজিক কেন্দ্রই ছিল না,এর মাধ্যমে খলিফার বা রাষ্ট্রপ্রধানের বার্তা বা খুদবা জনগণকে জানান হতো প্রতি শুক্রবারের জুম্মায়। আর এখন খুদবা দুই ভাগে মুখস্থ আওড়ান হয়,একই বক্তব্য বার বার জনগণকে মুখস্থ করানো হচ্ছে আরবিতে যা অর্থঅনেকেই বুঝেন না। দ্বিতীয় ভাগের একটি অংশ যে মোনাজাত তা কয় জন খেয়াল করে। আমি নিজেই তো নিউ মার্কেটের মসজিদে জুম্মার সময় এক লোককে খুদবার দ্বিতীয় অংশে দোয়া করার স্টাইলে হাত তুলে থাকতে দেখে ভড়কে গিয়েছিলাম। মসজিদ একদা ছিল কমিউনিটি সেন্টার। বিয়েও নাকি দেয়া হত, এখন যেমন চার্চে দেয়া হয়। আজকালকার মসজিদে রাজনৈতিক আলাপ নিষিদ্ধ,যে মসজিদে একদা যুদ্ধ কৌশল আলোচনা হতো এখন সেখানে রাজনীতির আলাপ নিষিদ্ধ হওয়াটা নাকি স্বাভাবিক। মসজিদে মানুষ কেবল নামাজের জন্য যাবে এরকম ধারণা ইসলামে কবে থেকে শুরু হয়েছে?মসজিদে রাজনৈতিক আলোচনা করা যাবে না,পারিবারিক কিংবা বাজারের আলোচনা করা যাবে না,তবে কি কেবল কবর আর কবর আযাব নিয়ে আলোচনা হবে? দোজোখ বেহেস্ত নিয়ে জল্পনা কল্পনা হবে? ইসলাম কোথাও বর্তমানকে ভুলে কেবল পরকাল চিন্তা করতে বলে নাই বরং বলেছে এই বর্তমান পরকালের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। কোন কোন মসজিদে মহিলারা সংরক্ষিত স্থানে এক জামাতে অংশ গ্রহণ করতে পারে কিন্তু বেশিরভাগ মসজিদে এটা সম্ভব নয়। মহিলারা কেন মসজিদে যেতে পারবে না কিংবা জামাতে অংশ গ্রহণ করতে পারবে না তা নিয়ে কারো প্রশ্ন নাই। হজ্জ এর সময় মসজিদুল হারামে তো মহিলারা অবাধে যেতে পারছে তা হলে পাড়া মহল্লার মসজিদে কেন নয়? তারা কি সামাজিক জীব নয়? তারা কি সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়?

ইমাম সাহেবরা উচ্চ শিক্ষিত হলে তারা উন্নত জনগোষ্ঠীকে সঠিক পথে সঠিক ভাবে সরল পথে জীবন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে অনুপ্রাণিত করতে পারতো। এখন অবস্থা হয়েছে উল্টা,উন্নত মনষ্ক লোক গুলো নিম্ন মনষ্ক লোক গুলোকে সামনে ঠেলে দেয় ইমাম হওয়ার জন্য। উন্নত মনষ্ক মানুষ গুলোর মনে দুর্বলতা আছে তা না হলে তারাই নেতৃত্ব নিত,অন্যদের ঠেলে সামনে দিত না। উন্নত মনষ্ক মানুষ গুলো ওই দুর্বল মানুষগুলার পিছন পিছন বেহেস্তে যেতে চাচ্ছে,সমনে আসবে না যদি ধরা পরে যায় তারা ধর্ম বিষয়ে তেমন জ্ঞান অর্জন করে নাই। আসলে দুর্বলতা হল কম জানার,জীবনের বেশীর ভাগ সময় পড়াশুনা করতে,চাকরী খুঁজতে,চাকরীর করতে আর পরিবার পরিপালন নিয়েই চলে গেছে,ধর্ম আর দর্শন ছিল সাবসিডিয়ারি বা অপ্রসংগীক বিষয়,পাস ফেলের ভয় নাই,তাই শেষ বয়সে এসে এই সব ইমাম সাহেবদের গুরু মানা ছাড়া আর গতি কি,জীবনের শেষ পরীক্ষায় তো পাশ করতে হবে,হাতে সময় কম,আখিরাতে পুল সিরাত পার হতে হবে না? এদের মধ্যে আরেকটি দল আছে যারা পরীক্ষা পাশের স্টাইলে পড়া মুখস্থর মত কোরআন হাদিস পড়ে ফেলেছে,বাস্তবতার সাথে,জীবনের উদ্দেশ্যর সাথে মিলল কি মিলল না তা দেখার সময় নাই,তার পর নিজের মতানুসারে নিজস্ব একটা স্কুল অব থট বা মাজহাব খুলে বসেন। এদের কাছে এক উম্মা,এক খলিফা,সমাজ থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত ইসলামের পরিপূর্ণতার কোন গুরুত্ব নাই। এরা একা একাই স্বর্গের স্বতন্ত্র যাত্রী।

দেশের মুসলমানরা ইমামতীর গুরুত্ব না বুঝলেও সম্রাজ্যবাদী প্রগতিশীল পক্ষ কিন্তু ঠিকই বুঝে ফেলেছেন। তারা তাই এই স্টেরিও টাইপ ইমাম হওয়া যাতে চলতেই থাকে তার জন্য তাকে পাকা পোক্ত প্রাতিষ্ঠানিক রূপও দিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমীর মাধ্যমে। মসজিদ নেটওয়ার্ক এখন এক প্রকার রাষ্ট্রীয় যন্ত্র যার মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিষ্ক্রিয়, নিস্তেজ ঘুম পারায়ে রাখা যায়। নেতৃত্ব হীনতায় ভুগতে ভুগতে মুসলিম উম্মা অবস্থা আজ বলার অপেক্ষা রাখে না,যাচ্ছে তাই, তা সবাই দেখতেই পাচ্ছেন। নানা মুনির নানা মত থুড়ি নানা মওলানার নানা মত হয়ে গেছে এখন উম্মার ভেঙ্গে যাওয়া আংশ গুল আর ভাঙ্গন থামানই যাচ্ছে না। ভেঙ্গে গুরা গুরা হয়ে গেছে। এখন ঘরে ঘরে সামান্য বিষয় নিয়ে বিতর্ক আর ঝগড়া চলতেই থাকে। এর উপর প্রযুক্তির যুগে ইউটিউবার মওলানা-মৌলবিরা অহরহ না না বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে এই সব ঝগড়া বিবাদের রসদ যোগাচ্ছে। বছরে একবার মাহফিলের নামে মধ্যরাত পর্যন্ত কান ফাটান আওয়াজে ওয়াজ করা হয় পাড়া মহল্লায় তার পর মসজিদের জন্য অর্থ সংগ্রহের যে বিস্তর প্রচেষ্টা তা যন্ত্রণাদায়ক তবে দেখার মত একটি বিষয় বটে। কেনাডায় শুনেছি আজান দেয়া নিষেধ, যে কোন ধর্মের উচ্চ আওয়াজ নিষিদ্ধ, ওখানে সিগারেটের গায়ে লেবেল দেয়াও নিষিদ্ধ। আমার অফিসের বড় স্যার ঠিকই বলেছেন যে ইসলামের সকল ভাল দিক গুল বিধর্মীরা নিয়ে চলছে আর মুসলমানরা তাদের আদর্শ রাষ্ট্র ব্যবস্থার সুন্দর দিক গুল ভুলে গেছে কেবল ধর্মীয় ভাবাবেগ তাড়িত হয়ে চলছে।

বিষয়টি অনেকটা ওপার বাংলার সঙ্গীত শিল্পী নচিকেতার রবীন্দ্র সঙ্গীত কে যুগোপযুগি করার মত ব্যাপার। তারদুবাই এর কনসার্টে তিনি বলছিলেন উনি রবীন্দ্র ব্যবসায়ী নন বরং রবীন্দ্র প্রেমী। রবীন্দ্রনাথকে আজকের বাস্তবতায় রোপণ করতে হবে। উদাহারণ দিয়ে ধীর লয়ের রবীন্দ্র সঙ্গীত------ন্দ  ধা---রা---” গানটা আধুনিকায়ন করে দ্রুত লয়ে--ন্দ ধা-রা-” রূপান্তর করতে হবে, তা তিনি গেয়েও শোনালেন। তার এই মতের সাথে সনাতনী রবীন্দ্র অনুরাগীরা দ্বিমত পোষণ করেন বলেও তিনি অবগত আছেন। সময়ের সাপেক্ষে সব বদলে যাচ্ছে না কি একই স্থান-কালে ঘুরপাক খাচ্ছে তা নিয়ে বিস্তর বাদানুবাদ আছে। আধুনিকীকরণের নামে এটা কি বিকৃতি না কি উন্নয়ন তা নিয়েও বিস্তর বিতর্ক করা যায়। সময়ের সাপেক্ষে কোনকিছুই যে একই থাকবে না, বদলাতে বাধ্য হবেই তা বাস্তব সত্য।

ইসলামী ফাউন্ডেশন অবশ্য প্রতিটি উপজেলায় মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে হাজার কোটি টাকার বাজেট নিয়ে, যেখানে মসজিদের সাথে লাইব্রেরী অন্যান্য ব্যবস্থাও থাকবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মসজিদের অধুনিকায়ন হবে তা নিশ্চিত তবে মসজিদের প্রকৃত উদ্দেশ্য এর সামাজিক প্রেক্ষিত পূর্ণাঙ্গ ভাবে সমাজে ফেরত আসবে কিনা তা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। ফজর দিয়ে দিনের শুরু আর এশা দিয়ে শেষ যে জীবন ব্যবস্থা যাতে পুর সমাজটা সিনক্রনাইজড থাকবে তা কেবল মসজিদ ভবন নির্মাণ দিয়ে হবে বলে আমার মনে হয় না। মুসলিম দেশের অফিস টাইম হওয়া উচিত ফজর নামাজের পর পরই তার পর আসর পর্যন্ত, আসরর পর হতে মাগরিব তো বিশ্রামের জন্য তার পর এশার পর তাহাজ্জুদ পর্যন্ত ব্যক্তিগত এবাদত এর জন্য, এই ধারণটা কি বেঠিক?

মুসলিম সমাজ এক জাতি বা উম্মা তা হলে তার ক্যালেন্ডার এককে দেশে একেক রকম হলে আন্ত দেশীয় মুয়ামালাত কিংবা ব্যবসা বাণিজ্য কি ভাবে সম্ভব? মুসলিম সব দেশে মুদ্রা ব্যবস্থা এক না হলে লেনদেনের বৈষম্য কি করে মীমাংসা হবে? মানি এক্সচেঞ্জে যে সুদ হতে পারে তা অনেকেই জানে না। স্বর্ণ রৌপ্য মুদ্রা ছাড়া কাগুজে মুদ্রায় মান বসায়ে যে ফিয়াট কারেন্সি তা যে ইসলাম সম্মত নয় তা নিয়ে কে বলবে?  সব মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের সম্মানিত ইমাম সাহেবরা অলোচনা করেন না। সমাজে সুদ থাকলে যে কি বিপদ তা নিয়ে তারা কিছু বলেন না, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে কিছু বলেন না শুধু বলেন পবিত্র কোরআনে কোন কোন জায়গায় একে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যা হয় আরকি, তাদের কাজ শুধু নামাজ পড়ান তাই তারা করছে। পুরোহিত প্রথার মত মন্ত্র আওড়ায়ে যাচ্ছে আর সমাজ বা রাষ্ট্র চলছে ইসলাম এর সাথে মেকি একটা সামজস্য রেখে সেই পুরাতন অনৈতিক পদ্ধতি অনুসরণ করেই। করমই হয়ে আসছে বহু কাল ধরে আর তা যেন হতেই থাকবে যতক্ষণ না আমি আপনি সবের প্রতিবাদ নির্ভয়ে করতে পারব।

এডিট হিস্ট্রিঃ 15ডিসে2015 à10মে2022

No comments:

Post a Comment