Wednesday, August 14, 2019

ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো ও বর্তমান প্রেক্ষাপট


বাংলাদেশ ব্যাংকিং অঙ্গনে সর্বপ্রথম ইসলামী ব্যাংকিং এর ধারণার সূত্রপাত ঘটে সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজে। সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল জনাব এম আজিজুল হক পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম  পর্যালোচনা করে এ দেশে কি ভাবে তা প্রবর্তন করা যায় তার উপর একটি কর্মশালার আয়োজন করেছিলেন। কর্মশালার অংশগ্রহণকারীদের সংগঠিত করে তিনি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ইসলামী ব্যাংকিং এর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ দেশে ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর মালিকানা ও কর্মপদ্ধতি বিভিন্ন হাত বদল হয়ে আজকের অবস্থায় এসেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে দশটির অধিক ইসলামী ব্যাংক ও এনবিএফআই শরীয়া ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও জনমনে ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়টি নিয়ে নানা রকম ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান দেখেতে  পাওয়া যায়। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কেবল ইসলামী ব্যাংকিংই নয়, একক নেতৃত্বহীনতার কারণে মুসলিম উম্মায় নানাবিধ বিষয়ে মতভেদ ও বাকবিতণ্ডা বহমান রয়েছে । ইসলামের অন্যান্য বিষয় নয় কেবল ইসলামী ব্যাংকিং এর উপর জনমনে যে বিভ্রান্তিকর বিষয়গুলো রয়েছে তা নিয়ে এখানে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখবো।

জনমত পর্যালোচনায় ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে যে বক্তব্যটি সবার আগে পাওয়া যাবে তা হলো “এরা ঘুরায়ে খায়”, কি খায় সে বিষয়ে যাওয়ার অবকাশ নেই, এই বক্তব্যের পর পরই এক হাসিতে সব কথা বলা হয়ে যায়। সাধারণ জনমতের বিস্ময়কর প্রবণতা এই যে, সকলেই হাস্যমুখে বলবে আসলে তো সুদ নেয় না তবে ঘুরায়ে খায়, বক্তব্যটি সরলীকরণ করলে বুঝা যায় যে, তারা এক কথায় বলতে চায় ইসলামের নামে এরা মূলত প্রতারণা করছে। শরীয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত গভীরভাবে না জেনে এরূপ নেতিবাচক মতামত প্রদান করাটা সমীচীন নয়। ইসলামী প্রডাক্টগুলো নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালনা করলে তা সম্পূর্ণ রূপে সুদ মুক্ত কিন্তু যদি কেউ অন্যথা করে তবে তা সঠিক হবে না, এই কার কার করা ভুলের জন্য ইসলামী প্রডাক্টসমূহই সূদমুক্ত নয় ভাবাটা অনুচিত। যে ভুল করছে সে তার অপকর্মের জন্য দায়ী হবে কিন্তু গ্রাহক সম্পূর্ণ রূপে সুদের ঝুঁকি মুক্ত থাকবে, কারণ সে ব্যাংকের সাথে সুদ-মুক্ত চুক্তিতে আবদ্ধ। অনেকে কনভেনশনাল ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট নন-ইন্টারেস্ট বেয়ারিং করে মনে করে সে সুদ-মুক্ত আছে, তিনি কি বুঝতে পারেন না যে, সেভিংস একাউন্ট এর চুক্তিটি নিজেই সুদের চুক্তি? এমনও অনেককে বলতে শুনেছি, সে সুদের টাকা দরিদ্রদের সাদাকা করে বা দান করে দেন, ইনিও মনে করেন এভাবে সে তার টাকাকে পরিশুদ্ধ রাখছেন। উনি হয়ত বুঝতে পারছেন না যে, টাকা রাখার মূল চুক্তিটি কিন্তু সুদের সাথে সম্পর্কযুক্ত আর এভাবে সে সুদের মধ্যেই রয়ে গেল। সুদ কি এবং কিভাবে অর্থনৈতিক লেনদেনে সুদের সৃষ্টি হতে পারে না জেনেই ঘুরায়ে খাওয়া বলাটা অনৈতিক বটে।

এর পর রয়েছ আরেকটি বিশাল বিভ্রান্ত জনমত, অনেকের ধারণা ইসলামী ব্যাংকিং শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্যই, অন্যরা তা হতে সেবা নিতে পারবে না। আমি যখন ২০১৭ সনে মিরপুর প্রিন্সিপাল অফিসে ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে উঠলাম তখন যারা হিন্দু ছিল তারা চলে গেল। এদের বেশ কয়জন আমার পরিচিতও ছিল। এই আর্থ-ব্যবস্থার সাথে ধর্মের নামটা থাকায় এই ব্যবস্থাটিকে অনেকে কেবলমাত্র ঐ ধর্মের লোকদের জন্যই বলে মনে করে। এটি মুসলমানদের ব্যর্থতা যে তারা ইসলামকে সকলের জন্য ও সকলের মঙ্গলের জন্য একটি জীবন ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। মদিনাতে তো সবাই প্রথমেই মুসলিম হয় নাই কিন্তু মুসাব বিন উমায়ের (রাঃ) তো সব ঘরে ঘরে ইসলাম পৌছে দিয়েছিলেন, সেটি কোন ইসলাম ছিল যা আজ ঘরে ঘরে পৌছান যাচ্ছে না? যে সম্প্রদায় নিজেদের ভুল চিহ্নিত করতে পারে না তারা তা সংশোধন করে পূর্বাবস্থায় পৌছাবে কোন পথে আমার জানা নাই। ইসলাম যেমন কেবলমাত্র মুসলমানদের জন্য নয় বরং সমগ্র মানব কল্যাণে, সেরূপ ইসলামী ব্যাংকিংও সকলের সেবা দানের জন্য উন্মুক্ত।

তৃতীয় বিভ্রান্তিটি অনেকটা এরকম যে, ইসলাম শব্দটি শুনলে কিংবা কোন কিছুর সাথে ইসলাম শব্দটি যুক্ত করলে জনমনে  পবিত্র কোরান ও হাদিস হতে বয়ান, তার ব্যাখ্যা ও তার আলোকে বিস্তর আলোচনা প্রত্যাশা করে থাকে, মূলত পবিত্র কোরান ও হাদিস হতে বর্ণিত তথ্য সমূহ জনসাধারণের হাতের কাছেই আছে, প্রচার পত্র সমূহেও বহুবার, বহুভাবে তা বর্ণনা করা হয়েছে। তার পরও সাধারণ জনমত কেন বিভ্রান্তিতে রয়েছে তা বিস্ময়ের অবকাশ রাখে। ইসলামের মূল উদ্দেশ্যর বদলে জনমত মনে হয় এর গন্ধটা বেশী পছন্দ করে । ইংরেজিতে যাকে বলে ফ্লেভার, সুবাস নিয়ে, সুগন্ধ গায়ে মেখেই অনেকে খুশি, মূল বিষয় পর্যন্ত যাওয়ার ইচ্ছাও নাই আর মনে হয় ইদানীং উপায়ও নাই। উপায় নাই কারণ এর প্রচারকরা গন্ধ প্রচার করে উপার্জন করে তাই উদ্দেশ্য প্রচারে তাদের আগ্রহ কম। কয়েকদিন আগে একজন মাদ্রাসার খাদেমের  সাথে পরিচয় হওয়ার সুযোগ হয়েছিল, তিনি আক্ষেপ করে বলছিলেন মাদ্রাসার খরচ এত বেড়েছে যে গত বছর দেড় লাখ টাকা তার নিজের পকেট থেকে দিতে হয়েছে। আমি জানতে চেয়েছিলাম তার আয়ের উৎস সম্পর্কে, তিনি বললেন, তিনি চান না তবে কোন মাহফিলে বক্তব্য রাখলে তাকে ২০, ৩০ হাজার টাকা অনায়াসেই দিয়ে দেয়। মানে হল তিনি ধর্ম প্রচার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সারা জীবন প্রচুর ইবাদত করেছেন অথচ মুয়ামালাত বা লেনদেনে ভুল ছিল, সে ক্ষেত্রে যে পাহার পরিমাণ ইবাদত কোন কাজে আসবে না তা কিন্তু নামকাওয়াস্তে ধর্ম প্রচারকেরা জনসাধারণকে বলেন না। ইসলাম ধর্মে পুরোহিত প্রথা নাই, শুধুমাত্র ধর্মকে অবলম্বন করে জীবিকা নির্বাহ এ ধর্মে  শুরুতে ছিল না, কিন্তু আজ তা প্রচলিত হয়েছে নানা ভাবে। এই তথাকথিত পুরহিত সদ্রস্য সম্প্রদায় সুদের ক্ষতির বিষয়ে জনগণকে কিছুই কি বলার প্রয়োজন মনে করেন না? যা জানা যায় তাদের বলার সুযোগ মসজিদ কমিটি থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শত হলেও এই কমিটিই তাদের নিয়োগ দাতা ও বেতন দাতা। তাদের অসন্তুষ্ট করা সম্ভব নয় বলেই তারাও এ সকল বিষয়ে নীরব থাকেন। সুদ তো শুধু ইসলাম ধর্মে নয়, বরং সকল সেমেটিক ধর্মে নিষিদ্ধ। সুধু সুদ কেন মুয়ামালাত কিংবা ইসলামের রাষ্ট্র ব্যবস্থা বা অর্থনীতির বিষয়ে মসজিদে কমই আলোচনার অনুমোদন দেয়া হয়, যা এ সময়কার মুসলমানদের জন্য একটি দুর্ভাগ্য বটে।

ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যা ইসলামী জীবন বিধান প্রবর্তিত সর্বসাধারণের জন্য কল্যাণকর একটি ব্যবস্থা। কোন বিশেষ গোষ্ঠী কিংবা গোত্র বা কোন বিশেষ ধর্মাবলম্বীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা নয়। কনভেনশনাল ব্যাংকিং সুদকে ব্যবসার প্রণোদনা মনে করে আর ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা সুদকে অর্থনীতিতে একটি মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাবক হিসেবে বিবেচনা করে, বৃহৎ পার্থক্যটা কেবল এখানেই। পবিত্র কোরান ও হাদিস হতে সূত্র কিংবা ব্যাখ্যা গ্রহণের আগেই এই বোধটি জনমনে নিয়ে আসা প্রয়োজন যে, সুদ অর্থনীতিতে জুলুমের বীজ বপন করে। ইসলামী ব্যাংকাররা সমাজে সুদের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জানে এবং মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তা প্রতিহত করণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন। ইসলামী নীতি আদর্শ সম্পর্কে বর্ণনার পূর্বে  সেই নীতির উদ্দেশ্য ও সমাজে তার প্রভাব সম্পর্কে সকলকে সচেতন হতে হবে এবং তার পরই পবিত্র কোরান ও হাদিস হতে তার স্বপক্ষে জানার প্রয়োজনীয়তা জনমনে সঞ্চার হবে। ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাটি ধর্ম প্রচারণার একটি বাহন নয়, বরং এটি জনকল্যাণে পরিচালিত একটি সঠিক লেনদেন প্রক্রিয়া, এই মতটি জনমত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

সোনালী ব্যাংকের গ্রাহকের একটি বৃহৎ অংশ ইসলামী মূল্যবোধে শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন মাননীয় সিইও এবং এমডি জনাব এস এ চৌধুরী মহোদয়ের সময়কালে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে প্রধান কার্যালয়ের বিআরপিডি (পি-৩) ৭৪৪৫(১)/২০০৯-১১৮০ তাং ১৯-এপ্রিল-২০০৯ পাঁচটি উইন্ডোর অনুমোদন পায়। ২৯-জন-২০১০ তারিখে তৎকালীন মাননীয় সিইও এবং এমডি জনাব হুমায়ন কবির মহোদয় সোনালী ব্যাংক, ফকিরাপুল শাখায় ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তদ্পরবর্তী মাননীয় সিইও এবং এমডি জনাব প্রদীপ কুমার দত্ত সারের সময়কালে প্রকা/এমডিডি/আইবিডি/ফ-০৭৩/উইন্ডোস্থানান্তর/৪০৭ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (নীতি শাখা-৩) এর ১৫-জানুয়ারি-২০১৫ তারিখের ২০১৪-৯১ সংখ্যক পত্রের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ফকিরাপুল শাখার উইন্ডোটি সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, ওয়েজ আরনার করপোরেট শাখা, ৬২ দিলকুশা, ঢাকায় স্থানান্তরিত হয় ১৫-মে-২০১৫ তারিখে। সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেটিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট ডিভিশন, ইসলামী ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্ট, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা’র নিয়ন্ত্রণে ২০১০ হতে ৫টি ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো পরিচালিত হয়ে আসছিল। বর্তমানে মাননীয় সিইও এবং এমডি জনাব ওবায়েদুল্লাহ আল মাসুদ সারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের পূর্বের ৫টি উইন্ডোর সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে আরো ৬টি এবং আরো ৪৬টি মোট ৫৭টি ইসলামী উইন্ডো পরিচালনার অনুমোদন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ১১টি ইতোমধ্যেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে আর বাকী গুলো অতি দ্রুত গ্রাহক সেবায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।

ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর চলমান কার্যক্রম, আমানত ও বিনিয়োগ প্রডাক্ট সমূহের পরিচিতি, কোর’আন ও হাদিসের আলোকে ইসলামী ব্যাংকিং এর যথার্থতা সম্পর্কে সম্ভাব্য গ্রাহকদের অবহিত করনের প্রয়োজনীয়তা বোধ করে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, ওয়েজ আরনার করপোরেট শাখা, ঢাকার ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো ২০১৭ সালে প্রচার পত্র বিতরণ করে। প্রচার পত্র সমূহ বিতরণ করার সময়ে এবং সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, মিরপুর প্রিন্সিপাল অফিস ও সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজ আয়োজীত কর্মশালার লেকচার প্রদান পরবর্তী অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে, ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়ে  গ্রাহকগনের মত ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মধ্যও ইসলামী ব্যাংকিং প্রডাক্ট সমূহ সম্পর্কে অস্পষ্টতা ও অজ্ঞতা প্রসূত মতামত বিদ্যমান। ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়ে বিভিন্ন কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রদত্ত মতামত থেকে বুঝা যায় যে, সোনালী ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেরই ব্যবসায়ীক লক্ষ্যমাত্রা বা করপোরেট অবজেক্টিভ থাকে, কর্মকর্তা/কর্মচারীরা যদি সেই লক্ষ্যের সাথে সহমত না হন তবে সে প্রতিষ্ঠানে প্রবৃদ্ধি হয় না। ব্যাপক প্রচারণা ছাড়া আজকের বিশ্বে ব্যবসায়ীক প্রসার সম্ভব নয়, ইসলামী প্রডাক্ট সমূহ প্রসারে জোরালো প্রচারণা করা না হলে সামগ্রিক অগ্রগতি শ্লথ হয়ে পড়বে। উপরন্তু নিজস্ব লোকজনের মধ্যে এ বিষয়ে স্বচ্ছ জ্ঞানের অভাব থাকলে গ্রাহকদের এ বিষয়ে তারা জোরালো ভাবে কোন তথ্য প্রদানেও বার্থ হবে।

বেশ কয়েক বছর আগে (২০০৪ হতে ২০১০ সাল) সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় ইসলামের মৌলিক ধারণাগুলো নিয়ে  কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাথে ইসলামী বিষয় ভিত্তিক আলাপ করার সুযোগ আমার হয়েছিল। সেই সময়কার অভিজ্ঞতা থেকে আমার যা মনে হয়েছে তা হল, বিষয়টি সরাসরি মানুষের বর্তমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডর সাথে সম্পৃক্ত না হওয়ায় কেবলমাত্র আলাপ করার খাতিরে এ বিষয়ে বিতর্ক গুলোকে বারংবার একই ভাবে উল্লেখ করে কেবল সময় ক্ষেপণ করা হয়। প্রকৃত বিষয়টি সম্পর্কে জানার আগ্রহের বদলে কেবল বিতর্কের খাতিরে বিতর্ক করার প্রবণতা লক্ষ করেছি। বিতর্কের খাতিরে বিতর্ক না করে যদি বাস্তব সম্মত সমাধানের বিষয়ে এই রূপ বলা উচিত ছিল যে, ইসলামী ব্যাংকিং প্রডাক্ট সমূহকে পর্যালোচনা করে তাকে আর কি ভাবে গ্রহনযোগ্য করা যায় সে বিষয়ে গবেষণা প্রয়োজন। সর্বোপরি বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় শরীয়া কাউন্সিলের মাধ্যমে সকল ইসলামী ব্যাংক ও এনবিএফআই এর কার্যক্রম  তদারকির ব্যবস্থা আরো জোরাল ভাবে গ্রহণ করা হলে সার্বিক ভাবে সবার জন্য ভাল হবে। কনভেনশনাল ব্যাংকিং এর পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো না ওপেন করে বরং ইসলামী ব্যাংকিং ব্রাঞ্চ বা শাখা চালু করা হলে এই সেবা প্রদান আর সহজতর ও গতিশীল হবে। সে ক্ষত্রে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ইসলামী ব্যাংকিং এর একটি পূর্ণাঙ্গ ডিভিশন সময়ের দাবী মাত্র। প্রচলিত ব্যাংকিং ধারণা হতে ভিন্ন এই ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নতুন নতুন প্রডাক্ট উন্মোচন করার অনেক সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে আর তাই এই সেক্টরে মেধাবী ব্যাংকারদের উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণ প্রদান ও নিয়োগ দান অত্যন্ত জরুরী।

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় আসা উচিত, তা হলো, পুঁজিবাদী অর্থনীতি জনগণকে সঞ্চয় করতে উৎসাহীত করে আর ইসলামী অর্থনীতি জনগণকে কোন প্রকার সঞ্চয় না করে পূর্ণ বিনিয়োগে নির্দেশনা প্রদান করে। এই বিপরীত ধারণার কারণে প্রচলিত ব্যাংকিং এর পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালনা করা নিতান্ত সহজ কাজ নয়। এই কাজে যারা সচেষ্ট তারা অত্যন্ত সাহসীকতার সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই কাজে যারা সচেষ্ট তারা অন্তত হাশরের ময়দানে শেষ বিচারের সময় বলতে পারবে যে, তারা আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (সা:) সাথে সুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শামিল ছিল। অনেকের মতে মদের ব্যবসায় এটা আবার নতুন কি? মদ কি শত পরিশোধনে বিশুদ্ধ হয়? অবশ্যই নয়, তবে মদের দোকানের পাশে যদি মদ বিহীন পানিয়ের একটি উইন্ডো খোলা হয় তবে যে মদ খায় না, সে যদি তা হতে ক্রয় করে তবে ক্ষতি কোথায়? মনে পরে একবার অফিস শেষে বাড়ী ফেরার পথে স্টাফ বাসে একজনের জানার আগ্রহে ইসলামী ব্যাংকিং ও কনভেনশনাল ব্যাংকিং এর তুলনা বুঝাতে যেয়ে বলেছিলাম একটি ফরমালিন যুক্ত অন্যটি ফরমালিন মুক্ত। এতদ্ বক্তব্যের পর অন্যদের উদ্দেশ্যে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, আমার মগজ ধোলাই করে ফেলা হয়েছে। আমি উত্তরে বলেছিলাম আপনাদেরও মগজ ধোলাই হওয়া দরকার তাহলে আপনাদের মগজও ফরমালীন মুক্ত হয়ে যাবে। এরূপ প্রচুর প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সোনালী ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর কার্যক্রম দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অদূর ভবিষ্যতে ইসলামী ব্যাংকিং সোনালী ব্যাংকের উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখবে বলে আশা রাখি।

 
এডিট ও আপডেট হিস্ট্রিঃ ২৯নভেম্বর২০১৭> ২৫সেপ্টেম্বর২০১৮> ০৮অগষ্ট২০১৯>১৪আগষ্ট২০১৯>

12 comments:

  1. Very Emerald writting on isalmi banking...
    Good job

    ReplyDelete
    Replies
    1. I am working in it, since 2017, giving training in SBSC plus taking training from BIBM, so by now i know about it a bit, that reflected in the write up.

      Delete
  2. Replies
    1. Thanks, will keep on writing, on Islami banking as well as other subjects, need constructive criticism, as it might help improve thoughtfulness through experiencing difference of opinion.

      Delete
  3. Replies
    1. Thanks, will keep on writing, on Islami banking as well as other subjects, need constructive criticism, as it might help improve thoughtfulness through experiencing difference of opinion. it is also important to know who I am talking to or who said so, it might help in building thought sharing relations.

      Delete
  4. very nice and informative post.

    ReplyDelete
    Replies
    1. Thanks, will keep on writing, on Islami banking as well as other subjects, need constructive criticism, as it might help improve thoughtfulness through experiencing difference of opinion. it is also important to know who I am talking to or who said so, it might help in building thought sharing relations. Sharing opinion and thoughts helps in many ways.

      Delete
  5. Very informative.Thank you very much for sharing...!!

    ReplyDelete
  6. The writer has good knowledge about Islamic economic rules which many even practicing Muslims don't know. May the almighty forgives us on the last day from His anger from RIBA. Thanks for your 💕 for your own religion.

    ReplyDelete