মানুষের মূল্য নির্ভর করে – সময়কে সে যে ভাবে মূল্যায়ন করে তার উপর, ইংরেজি থেকে অনুবাদ ১৭ডিসেম্বর২০০৯>০৬আগষ্ট২০১৯> সময় যেন স্রষ্টার হাত, যা তার সাথে সব কিছুকে এক নির্দিষ্ট দিকে সরিয়ে নিয়ে যায়। কেউ এর কারণ বুঝতে পারে আর একে দেখে স্রষ্টার দেয়া অভিজ্ঞ বুদ্ধিমত্তার আলোকে। এরাই প্রত্যেক দিনের সময়কে আকরে ধরে আর স্রষ্টার দেয়া বুদ্ধিমত্তার সাথে তাদের জীবনকে সরল পথে চালিত করতে সক্ষম হয়। অন্যরা সময়কে দেখে খণ্ডিত বিচ্ছিন্ন অবস্থায়, অনেকটা উত্তল বা অবতল আয়নায় দেখার মত,যেখানে কাছের জিনিসকে দূরে আর দূরের জিনিষকে খুব কাছে মনে হয়। এই ভুল বুঝার কারণ তারা সময়কে স্রষ্টার হাতের সাথে তুলনা করতে পারে না। বুঝতে পারে না যে উদ্দেশ্যে স্রষ্টা আমাদের এই “সময় ও স্থানের” এক বদ্ধ জগতে আবদ্ধ করে দিয়েছেন। যে অভাবনীয় সুযোগ তিনি আমাদের দিয়েছেন নিজেদের পরিশুদ্ধ করে নেয়ার ও প্রতিকুল পরিবেশে সংগ্রামের মাধ্যমে উন্নত গুণাবলী অর্জনের। আর এভাবেই যাতে আমরা তৈরি হয়ে উঠি সেই দিনের জন্য যে দিন আমরা তার সাথে পুনর্মিলিত হব।
আধ্যাত্মিক বাণীতে এমনও বলা হয়ে থাকে যে,“আদমের সন্তানেরা সময়ের মাঝে অভিশপ্ত আর আমিই সময়,আমার হাতেই দিন ও রাত্রির আবর্তন”। যারা এ সত্য এখনও বুঝতে পারেনি, সময় তাদের কাছে ঝামেলা পূর্ণ ও বিরক্তিকর বলে মনে হতে পারে। তাই আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত নিজেদের পরিবর্তনের দিকে যাতে সময়ের সাথে আমরা সহজ হয়ে চলতে পারি। সময়কে নিয়ে এই সমস্যা বুঝতে পারা আমাদের জন্য স্রষ্টার আশীর্বাদ। যেমন পেটে ব্যথা হলে আমরা বুঝতে পারি আমাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন দরকার তেমনি সময়ের সমস্যাকে দুর করার জন্য প্রয়োজন আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন। কারো জন্য সময় যেন উড়ে চলে,তাদেরকে অসহায় ভাবে পিঠে নিয়ে যেন তারা পাগলা ঘেরায় চড়ে রওনা হয়েছে কোন পাহাড়ি দুর্গম পথে। আবার কারো জন্য সময় যেন থেমে আছে নিশ্চল/নিথর হয়ে। সময় আমাদের ইচ্ছামত আমাদের সাথে জোরেও চলবেনা আবার থেমেও থাকবে না।
সবার আগে বুঝা দরকার সময়ের মূল্যটা কত? একবার খরচ করে ফেললে যার পুনরুদ্ধার অসম্ভব। পৃথিবীর সবাই মিলে সব সম্পদ এক করেও সময়ের এক মুহূর্তকে ফিরিয়ে আনতে পারেনা,আর তাই সময়ের মূল্য কল্পনার অতীত। তার পরও মানুষ সময়কে অবহেলা করে ঘন্টার পর ঘণ্টা,আরও সুযোগ খুঁজে অবসর যাপনের। এরূপ অনেক মানুষের পক্ষেই সময়ের সাথে শান্তিপূর্ণ ভাবে যাত্রা করা সম্ভব হয় না (শুধু তারাই নয় যারা ডাক্তারি মতে মানুষিক ভাবে বিষণ্ণ)। প্রত্যেক তরুণ নারী পুরুষ সারা বিশ্বকে দ্রুততার সাথে উপভোগ করতে চায়। তাদের এই আবেগ,উপভোগের দ্রুততাই সময়কে উড়িয়ে নিয়ে চলে। তাই প্রায়ই দেখা যায় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত গুলোতে মানুষ তার আবেগ নিয়ন্ত্রণে বার্থ হয় ও আনন্দ উপভোগের উন্মাদনায় সকল শক্তি খরচ করে ফেলে। এই নিয়ন্ত্রনহীন পথে তারা দ্রুত সকল সামর্থ্য হারিয়ে বোকার মত নিঃস্ব হয়ে পরে। জীবন যেন একটি ম্যারাথন দৌর, এ দৌড়ে দম ধরে রাখতে হয়,প্রথমেই দ্রুত দমে চললে খুব অল্প দূরত্বেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়। ভবিষ্যতের প্রয়োজনে শক্তি ধরে রাখার মত ধৈর্য খুব কম তরুণের মধ্যেই দেখা যায়।
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই খুব অল্প সংখ্যক তরুণ আদর্শবাদ বা ধর্মের পথে পা বাড়ায়। তদের অধিকাংশই হয় কোন ব্যর্থতা থেকে উদ্ধার পেতে বা কোন দুঃখ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে এ পথের খোঁজ করে। এটি অত্যন্ত কঠিন কাজ,কেননা সে তার সকল শক্তিই আর্থ হীন ভাবে খরচ করে ফেলেছে। আর তার শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা অত্যন্ত নিচু স্তরে নেমে গেছে। এদের অনেকেই হয়ত এখনো তরুণ। অতিরিক্ত আনন্দ উপভোগের প্রবল উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে এর বিপরীত অবস্থা অবসাদ ও বিষণ্ণতা ভর করে এ সব তরুণদের মধ্যে। তখন সময় আর উড়ে চলে না বরং সাপের মত একেবেকে ধীর গতিতে তাদের টেনে নিয়ে চলে। একজন বিষন্ন মানুষ আশা করে সময় আবার দ্রুত চলুক কিন্তু তার বদলে মিনিটকে মনে হয় ঘন্টা, ঘন্টাকে মনে হয় দিন আর দিনকে সপ্তাহ। বিশেষ করে যারা তাদের শক্তি ও ক্ষমতা অপব্যবহার করে তারাই এরকম অবস্থার শিকার হয়। মানুষের জন্য এমন ভাবাটা এতটাই বোকার মত যে সময় আবার দ্রুত চলবে যখন আমরা আগেই বলেছি যে সময়ের মুহূর্তগুলো অমূল্য মুক্তা কণার মত।
প্রচলিত আদর্শ নীতিমালার একটি সহজ নীতি এই যে,“মানুষের মূল্য নির্ভর করে – সময়কে সে যেভাবে মূল্যায়ন করে তার উপর”। যদি সময়কে তুমি মূল্যহীন মনে কর যা দ্রুত চলে যাবে তবে তুমি নিজেই এই পৃথিবীতে আর্থহীন হয়ে পরবে, বেচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই সে ক্ষেত্রে উত্তম। কেন? কারণ তুমি চেয়েছিলে কেবলমাত্র মানবিক শক্তির আর্থহীন/নিয়ন্ত্রনহীন উপভোগ। মানবিক শক্তি একটি অমূল্য সম্পদ। এখন যখন আরেকটি অমূল্য সম্পদ সময় আর তোমার হাতে নেই বরং তুমি এর নিচে চাপা পরে গেছ। তোমার মানবিক শক্তি এমন ভাবে ব্যবহার কর যেন তা সময়ের সাথে সঠিকভাবে মূল্যায়নযোগ্য হয়। সময়কে যখন মুক্তার মত খরচ করবে মানুষের চোখে তোমার উন্নতি ও উচ্চতর অবস্থায় উত্তরণই কেবল দেখতে পাবে। আরেকটি আদর্শ ছোট নীতি এরকম ”একজন সফল ব্যক্তি তার সময়ের সন্তান” এর মানে হল ব্যক্তিটি তার সময়কে ততটাই গভীরভাবে শ্রদ্ধা করবে যতটা তার বাবা/মাকে করে। একজন প্রকৃত সফল ব্যক্তি কখনই সময়ের মুহূর্তকে অপব্যয় করে না বরং একে এমনভাবে আঁকড়ে ধরে যেমন একজন ঘোড়সাওয়ার তার ঘোড়ার লাগাম ধরে ঘোড়াটিকে সঠিক পথে চালিত করে। একজন প্রকৃত সফল ব্যক্তিকে দেখ, দেখবে সে সব সময় কোন না কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত রয়েছে আর কখনই অপরের জন্য ক্ষতিকর বা অযথা কাজে ব্যস্ত নয়। একজন ব্যক্তি যদি এভাবেই নিজেকে চালিত করে তবে সে নিজেকে পরিপূর্ণতার পথেই নিয়ে যাবে কারণ সে জানবে তার কি করণীয়। তার আত্মদৃষ্টি কখনই অন্ধ হবে না। সে অনাহুত যে কোন অবস্থা সম্পর্কে আগে থেকেই সতর্ক থাকবে।
আমাদের গ্র্যান্ড শেখ এরূপ বলতেন যে, “হে মানুষেরা কিভাবে তোমরা দিন অতিবাহিত করছ? সময়ের অপচয় করোনা, বরং সময় ও স্থানকে এমনভাবে বুনে চল যেন তা গৌরবময় অতীতে পরিণত হয় ও সম্মান নিয়ে আসে ভবিষ্যৎ ও তার পরবর্তী জীবনের জন্য”। যারা আদর্শ পথের অনুসরণ করে তাদের জন্য সময়ের অপচয় ও অপব্যবহার একটি অপরাধ। নিজের মানবিক শক্তি ও অমূল্য সময়কে নিয়ন্ত্রণ কর, প্রতিটি মুহূর্তকে জীবন্ত করে তোল।
৩০ডিসেম্বর১৮> ২০০২ সালে আমার বিজু মামার কম্পিউটার মেরামত করতে গিয়ে ‘সময়’ নিয়ে লেখকের নামবিহীন ইংরেজি একটি আরটিক্যাল পেয়েছিলাম, তা এতই ভাল লেগেছিল যে, অনুবাদ করে ফেলি, কিন্তু তখনকার বিজয়-সুলেখা ফন্টে অনুবাদ করায় তা আর ইদানীং পড়া যাচ্ছে না, ভাগ্য ভাল যে হার্ড কপি সংগ্রহ করা ছিল, যা থেকে তাকে আবার নির্মাণ করা যাচ্ছে। আমার হিসাবে অনুবাদটি ভালই করেছিলাম, ইংরেজি আরটিক্যালটা এখনো ঐ রকমই আছে। ‘সময়’কে বুঝার ক্ষেত্রে আরটিক্যালটি আমার অনেক কাজে এসেছিল, এখনও যতবারই পড়ি মনে হয় সময় সম্পর্কে ধারণাটির পুনরায় ঝালাই হয়ে গেল। ‘সময়’ নিয়ে আমার আরো বেশ কিছু নতুন ধরনা/ভাবনা আর সংশয় জন্ম নিয়েছে যা নিয়ে পরে এক সময় লিখার ইচ্ছা আছে। যেখানে আমি বলতে চাই যে ঘড়ির সময়ের আপত ধারণাটি সম্পূর্ণ রূপে মনব সভ্যতার নিজের প্রয়োজনে তৈরি করা সূর্য নির্ভর মানব সৃষ্ট একটি ধারণা মাত্র, মূল সময় বা মহাকালের সাথে যার কোন সম্পর্ক নাই। আমরা সঠিক সময় মাপতে পারিনা আর মহাকাল পরিমাপক কোন যন্ত্র মানব জ্ঞানে সম্ভব নয়। ০৬আগষ্ট১৯> বর্তমান বাস্তব প্রেক্ষিতে সময়ের মূল্য তাই শূন্য বা মূল্যহীন অথবা তা প্রকৃত বাস্তবতার নামান্তর, আর তাই বাস্তবতার অন্তরনীহিত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেছিলাম “বাস্তবতা সর্বদাই সতেজ ও কখনই পেছন ফিরে তাকায় না”। বিগ ব্যাং থেকে যে সময় বা মহাকালের শুরু তা জানতে হলে হকিং এর বই পড়লেই যথেষ্ট, মাল্টি ইউনিভার্স সত্য হলে সময়ের শুরু কখন তা জানা প্রায় অসম্ভব আর আমরা যাকে সময় বলি তা মূলত আমাদের প্রয়োজনে নিজেদের কাজ গুছানর কাজে সৃষ্টি করা সূর্য নির্ভর সর্বজনস্বীকৃত একটি পরিমাপ পদ্ধতি মাত্র। সময় সচেতনতার বিষয়টি তাই ব্যবহারিক সময় নিয়ে বলা মহাকাল নিয়ে নয়। অতীত – বর্তমান – ভবিষ্যৎ নিয়ে সময়ের এই যে প্রবহমানতা তা না দেখা যায় না অনুভব করা যায়, কেবল বুদ্ধি দিয়ে অনুধাবন করা যায়। হকিং এর ব্রিফ হিষ্ট্রি অব টাইম, গ্র্যান্ড ডিজাইন আর থিউরি অফ এভরিথিং বইগুলা পড়লে বুঝা যায় সময়ের এই ধারণাটি কতটা জটিল। তাঁর লেখায় কয়েকটি উক্তি খুব মজার, এক জায়গায় যেমন বলছে, আমাদের অতীত মনে থাকে তাহলে ভবিষ্যৎ কেন মনে থাকবে না? আর বিগ ব্যাং ব্যাখ্যায় কণা বিশ্বের অনিশ্চয়তা তত্ত্ব ব্যবহার করে সে বলছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মত অনিশ্চিত অতীত রয়েছে। তার এ যুক্তি প্রমাণিত হলে সাইন্স ফিকশনের টাইম ট্রাভেল সম্ভব হবে না, কারণ অলটারনেটিভ ভবিষ্যতের মত অতীতেরও রয়েছে একাধিক ধারা। হুমায়ুন আহমেদও তাঁর একটি উপন্যাসে উল্লেখ করেছিলেন এই প্যারালাল বা সমান্তরাল বিশ্বের সম্ভাবনার কথা। মানব মনে সময় অনুধাবনেরও ভিন্নতা রয়েছে, সময়কে সঠিক মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রেও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মতামত। সময় নিয়ে হয়ত অনেক বিশ্লেষণী মন্তব্য পাওয়া যাবে তবে আমার ধারনা সময়কে আমরা সঠিকভাবে বুঝতে পারি না আর তাই এই সময়ের প্রেক্ষাপটে জীবন ও জগতের ধারণাগুলোও নান ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে দিয়ে স্থাপন করি বলেই তা কখনই সঠিক হয় না।
আধ্যাত্মিক বাণীতে এমনও বলা হয়ে থাকে যে,“আদমের সন্তানেরা সময়ের মাঝে অভিশপ্ত আর আমিই সময়,আমার হাতেই দিন ও রাত্রির আবর্তন”। যারা এ সত্য এখনও বুঝতে পারেনি, সময় তাদের কাছে ঝামেলা পূর্ণ ও বিরক্তিকর বলে মনে হতে পারে। তাই আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত নিজেদের পরিবর্তনের দিকে যাতে সময়ের সাথে আমরা সহজ হয়ে চলতে পারি। সময়কে নিয়ে এই সমস্যা বুঝতে পারা আমাদের জন্য স্রষ্টার আশীর্বাদ। যেমন পেটে ব্যথা হলে আমরা বুঝতে পারি আমাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন দরকার তেমনি সময়ের সমস্যাকে দুর করার জন্য প্রয়োজন আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন। কারো জন্য সময় যেন উড়ে চলে,তাদেরকে অসহায় ভাবে পিঠে নিয়ে যেন তারা পাগলা ঘেরায় চড়ে রওনা হয়েছে কোন পাহাড়ি দুর্গম পথে। আবার কারো জন্য সময় যেন থেমে আছে নিশ্চল/নিথর হয়ে। সময় আমাদের ইচ্ছামত আমাদের সাথে জোরেও চলবেনা আবার থেমেও থাকবে না।
সবার আগে বুঝা দরকার সময়ের মূল্যটা কত? একবার খরচ করে ফেললে যার পুনরুদ্ধার অসম্ভব। পৃথিবীর সবাই মিলে সব সম্পদ এক করেও সময়ের এক মুহূর্তকে ফিরিয়ে আনতে পারেনা,আর তাই সময়ের মূল্য কল্পনার অতীত। তার পরও মানুষ সময়কে অবহেলা করে ঘন্টার পর ঘণ্টা,আরও সুযোগ খুঁজে অবসর যাপনের। এরূপ অনেক মানুষের পক্ষেই সময়ের সাথে শান্তিপূর্ণ ভাবে যাত্রা করা সম্ভব হয় না (শুধু তারাই নয় যারা ডাক্তারি মতে মানুষিক ভাবে বিষণ্ণ)। প্রত্যেক তরুণ নারী পুরুষ সারা বিশ্বকে দ্রুততার সাথে উপভোগ করতে চায়। তাদের এই আবেগ,উপভোগের দ্রুততাই সময়কে উড়িয়ে নিয়ে চলে। তাই প্রায়ই দেখা যায় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত গুলোতে মানুষ তার আবেগ নিয়ন্ত্রণে বার্থ হয় ও আনন্দ উপভোগের উন্মাদনায় সকল শক্তি খরচ করে ফেলে। এই নিয়ন্ত্রনহীন পথে তারা দ্রুত সকল সামর্থ্য হারিয়ে বোকার মত নিঃস্ব হয়ে পরে। জীবন যেন একটি ম্যারাথন দৌর, এ দৌড়ে দম ধরে রাখতে হয়,প্রথমেই দ্রুত দমে চললে খুব অল্প দূরত্বেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়। ভবিষ্যতের প্রয়োজনে শক্তি ধরে রাখার মত ধৈর্য খুব কম তরুণের মধ্যেই দেখা যায়।
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই খুব অল্প সংখ্যক তরুণ আদর্শবাদ বা ধর্মের পথে পা বাড়ায়। তদের অধিকাংশই হয় কোন ব্যর্থতা থেকে উদ্ধার পেতে বা কোন দুঃখ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে এ পথের খোঁজ করে। এটি অত্যন্ত কঠিন কাজ,কেননা সে তার সকল শক্তিই আর্থ হীন ভাবে খরচ করে ফেলেছে। আর তার শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা অত্যন্ত নিচু স্তরে নেমে গেছে। এদের অনেকেই হয়ত এখনো তরুণ। অতিরিক্ত আনন্দ উপভোগের প্রবল উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে এর বিপরীত অবস্থা অবসাদ ও বিষণ্ণতা ভর করে এ সব তরুণদের মধ্যে। তখন সময় আর উড়ে চলে না বরং সাপের মত একেবেকে ধীর গতিতে তাদের টেনে নিয়ে চলে। একজন বিষন্ন মানুষ আশা করে সময় আবার দ্রুত চলুক কিন্তু তার বদলে মিনিটকে মনে হয় ঘন্টা, ঘন্টাকে মনে হয় দিন আর দিনকে সপ্তাহ। বিশেষ করে যারা তাদের শক্তি ও ক্ষমতা অপব্যবহার করে তারাই এরকম অবস্থার শিকার হয়। মানুষের জন্য এমন ভাবাটা এতটাই বোকার মত যে সময় আবার দ্রুত চলবে যখন আমরা আগেই বলেছি যে সময়ের মুহূর্তগুলো অমূল্য মুক্তা কণার মত।
প্রচলিত আদর্শ নীতিমালার একটি সহজ নীতি এই যে,“মানুষের মূল্য নির্ভর করে – সময়কে সে যেভাবে মূল্যায়ন করে তার উপর”। যদি সময়কে তুমি মূল্যহীন মনে কর যা দ্রুত চলে যাবে তবে তুমি নিজেই এই পৃথিবীতে আর্থহীন হয়ে পরবে, বেচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই সে ক্ষেত্রে উত্তম। কেন? কারণ তুমি চেয়েছিলে কেবলমাত্র মানবিক শক্তির আর্থহীন/নিয়ন্ত্রনহীন উপভোগ। মানবিক শক্তি একটি অমূল্য সম্পদ। এখন যখন আরেকটি অমূল্য সম্পদ সময় আর তোমার হাতে নেই বরং তুমি এর নিচে চাপা পরে গেছ। তোমার মানবিক শক্তি এমন ভাবে ব্যবহার কর যেন তা সময়ের সাথে সঠিকভাবে মূল্যায়নযোগ্য হয়। সময়কে যখন মুক্তার মত খরচ করবে মানুষের চোখে তোমার উন্নতি ও উচ্চতর অবস্থায় উত্তরণই কেবল দেখতে পাবে। আরেকটি আদর্শ ছোট নীতি এরকম ”একজন সফল ব্যক্তি তার সময়ের সন্তান” এর মানে হল ব্যক্তিটি তার সময়কে ততটাই গভীরভাবে শ্রদ্ধা করবে যতটা তার বাবা/মাকে করে। একজন প্রকৃত সফল ব্যক্তি কখনই সময়ের মুহূর্তকে অপব্যয় করে না বরং একে এমনভাবে আঁকড়ে ধরে যেমন একজন ঘোড়সাওয়ার তার ঘোড়ার লাগাম ধরে ঘোড়াটিকে সঠিক পথে চালিত করে। একজন প্রকৃত সফল ব্যক্তিকে দেখ, দেখবে সে সব সময় কোন না কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত রয়েছে আর কখনই অপরের জন্য ক্ষতিকর বা অযথা কাজে ব্যস্ত নয়। একজন ব্যক্তি যদি এভাবেই নিজেকে চালিত করে তবে সে নিজেকে পরিপূর্ণতার পথেই নিয়ে যাবে কারণ সে জানবে তার কি করণীয়। তার আত্মদৃষ্টি কখনই অন্ধ হবে না। সে অনাহুত যে কোন অবস্থা সম্পর্কে আগে থেকেই সতর্ক থাকবে।
আমাদের গ্র্যান্ড শেখ এরূপ বলতেন যে, “হে মানুষেরা কিভাবে তোমরা দিন অতিবাহিত করছ? সময়ের অপচয় করোনা, বরং সময় ও স্থানকে এমনভাবে বুনে চল যেন তা গৌরবময় অতীতে পরিণত হয় ও সম্মান নিয়ে আসে ভবিষ্যৎ ও তার পরবর্তী জীবনের জন্য”। যারা আদর্শ পথের অনুসরণ করে তাদের জন্য সময়ের অপচয় ও অপব্যবহার একটি অপরাধ। নিজের মানবিক শক্তি ও অমূল্য সময়কে নিয়ন্ত্রণ কর, প্রতিটি মুহূর্তকে জীবন্ত করে তোল।
৩০ডিসেম্বর১৮> ২০০২ সালে আমার বিজু মামার কম্পিউটার মেরামত করতে গিয়ে ‘সময়’ নিয়ে লেখকের নামবিহীন ইংরেজি একটি আরটিক্যাল পেয়েছিলাম, তা এতই ভাল লেগেছিল যে, অনুবাদ করে ফেলি, কিন্তু তখনকার বিজয়-সুলেখা ফন্টে অনুবাদ করায় তা আর ইদানীং পড়া যাচ্ছে না, ভাগ্য ভাল যে হার্ড কপি সংগ্রহ করা ছিল, যা থেকে তাকে আবার নির্মাণ করা যাচ্ছে। আমার হিসাবে অনুবাদটি ভালই করেছিলাম, ইংরেজি আরটিক্যালটা এখনো ঐ রকমই আছে। ‘সময়’কে বুঝার ক্ষেত্রে আরটিক্যালটি আমার অনেক কাজে এসেছিল, এখনও যতবারই পড়ি মনে হয় সময় সম্পর্কে ধারণাটির পুনরায় ঝালাই হয়ে গেল। ‘সময়’ নিয়ে আমার আরো বেশ কিছু নতুন ধরনা/ভাবনা আর সংশয় জন্ম নিয়েছে যা নিয়ে পরে এক সময় লিখার ইচ্ছা আছে। যেখানে আমি বলতে চাই যে ঘড়ির সময়ের আপত ধারণাটি সম্পূর্ণ রূপে মনব সভ্যতার নিজের প্রয়োজনে তৈরি করা সূর্য নির্ভর মানব সৃষ্ট একটি ধারণা মাত্র, মূল সময় বা মহাকালের সাথে যার কোন সম্পর্ক নাই। আমরা সঠিক সময় মাপতে পারিনা আর মহাকাল পরিমাপক কোন যন্ত্র মানব জ্ঞানে সম্ভব নয়। ০৬আগষ্ট১৯> বর্তমান বাস্তব প্রেক্ষিতে সময়ের মূল্য তাই শূন্য বা মূল্যহীন অথবা তা প্রকৃত বাস্তবতার নামান্তর, আর তাই বাস্তবতার অন্তরনীহিত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেছিলাম “বাস্তবতা সর্বদাই সতেজ ও কখনই পেছন ফিরে তাকায় না”। বিগ ব্যাং থেকে যে সময় বা মহাকালের শুরু তা জানতে হলে হকিং এর বই পড়লেই যথেষ্ট, মাল্টি ইউনিভার্স সত্য হলে সময়ের শুরু কখন তা জানা প্রায় অসম্ভব আর আমরা যাকে সময় বলি তা মূলত আমাদের প্রয়োজনে নিজেদের কাজ গুছানর কাজে সৃষ্টি করা সূর্য নির্ভর সর্বজনস্বীকৃত একটি পরিমাপ পদ্ধতি মাত্র। সময় সচেতনতার বিষয়টি তাই ব্যবহারিক সময় নিয়ে বলা মহাকাল নিয়ে নয়। অতীত – বর্তমান – ভবিষ্যৎ নিয়ে সময়ের এই যে প্রবহমানতা তা না দেখা যায় না অনুভব করা যায়, কেবল বুদ্ধি দিয়ে অনুধাবন করা যায়। হকিং এর ব্রিফ হিষ্ট্রি অব টাইম, গ্র্যান্ড ডিজাইন আর থিউরি অফ এভরিথিং বইগুলা পড়লে বুঝা যায় সময়ের এই ধারণাটি কতটা জটিল। তাঁর লেখায় কয়েকটি উক্তি খুব মজার, এক জায়গায় যেমন বলছে, আমাদের অতীত মনে থাকে তাহলে ভবিষ্যৎ কেন মনে থাকবে না? আর বিগ ব্যাং ব্যাখ্যায় কণা বিশ্বের অনিশ্চয়তা তত্ত্ব ব্যবহার করে সে বলছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মত অনিশ্চিত অতীত রয়েছে। তার এ যুক্তি প্রমাণিত হলে সাইন্স ফিকশনের টাইম ট্রাভেল সম্ভব হবে না, কারণ অলটারনেটিভ ভবিষ্যতের মত অতীতেরও রয়েছে একাধিক ধারা। হুমায়ুন আহমেদও তাঁর একটি উপন্যাসে উল্লেখ করেছিলেন এই প্যারালাল বা সমান্তরাল বিশ্বের সম্ভাবনার কথা। মানব মনে সময় অনুধাবনেরও ভিন্নতা রয়েছে, সময়কে সঠিক মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রেও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মতামত। সময় নিয়ে হয়ত অনেক বিশ্লেষণী মন্তব্য পাওয়া যাবে তবে আমার ধারনা সময়কে আমরা সঠিকভাবে বুঝতে পারি না আর তাই এই সময়ের প্রেক্ষাপটে জীবন ও জগতের ধারণাগুলোও নান ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে দিয়ে স্থাপন করি বলেই তা কখনই সঠিক হয় না।
সময় কাহাকে বলে? কার কাছে সময় একদম নাই,
ReplyDeleteআবার কার সময় ফুরাতে চায় না। "A person's value corresponds to the value he assins to his time" নাম বিহিন এই আরটিকেল টা আনুবাদ করেছিলাম বহুদিন আগে। সময় বুঝতে আমার খুব কাজে এসেছিল।