এমনি এমনি বলছি না, আসলে নিয়ম ভাংতে আমারও মাঝে মধ্যে ভালই লাগে। পৃথিবীর অন্য কোথাও মনে হয় না মানুষ এত স্বচ্ছন্দে ও নিশ্চিন্তে রাজপথের মাঝখান দিয়ে হাটতে পারে। পাশে ফুটপাথ খালি থাকা সত্বেও পিচ-ঢালা রাস্তায় গাড়ির তেয়াক্কা না করে একমাত্র বাঙ্গালীরা রাজপথে নিশ্চিন্তে চলাচল করে। একেবারেই স্বতন্ত্র এই জনপদ। কয়েক বছর আগে মিঠু মামা মজার কথা বলেছিল, বাংগালীদের আলু খাওয়া শিখিয়েছে পর্তুগীজরা কিন্তু তারা কখনই আলু ভর্তা করে খায় নাই, আলু ভর্তা করে খাওয়াটা আমরা ওদের শিখিয়েছি। সকল নিয়ম ভেঙ্গেচুরে নিজেদের মত করে নেই কেবল আমরাই, আর যাই হোক আমরা, আমরাই তো। আজ থেকে ১২ কি ১৫ বছর পর হয়ত হাজার চেষ্টা করেও কাউকে রাজপথে ফুটপাথ খালি থাকা স্বত্বেও স্বাধীন ভাবে চলতে দেখা যাবে না, কারণ ততদিনে এই জনপদ অনেক সভ্য হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। হয়ত এখনকার কেউ তখনকার জনতাকে দেখে অবাক হয়ে বলবে, হুদাই বাংগালী কয় নিজেরে, আচার বিচারে বাংগালীগো মত না। বাংগালী মানেই স্বাধীনচেতা, যা খুশি তাই করব – তোর বাপের রাস্তা নাকি, আমার ইচ্ছা হইছে রাস্তার মাদ্দিখান দিয়া হাটমু তর তাতে কি? এই মানুষীকতা।
শুধু রাজপথে হাটার কথাই নয়, কোন বাংগালী ব্যাংকারকে জিজ্ঞাসা করুন বলবে, ভাই নিয়ম কানুন অনেক আছে কিন্তু প্র্যাকটিস ভিন্ন, মানে হল, নিয়ম থাকবে বইয়ে কিন্তু আমরা হাটব রাস্তার মদ্ধিখান দিয়ে । নিয়ম ঠিক করা হলে আমরা নতুন প্র্যাকটিস বানায়ে নিব। ঋণ নিব কিন্তু ভুয়া কাগজপত্র দিব, আরে ভাই ব্যবস্থা করেন, টাকা পয়সা/ চা-পানি যা লাগে নিয়েন। এই যে মনভঙ্গি এর আদি কারণটা কি হতে পারে? নিয়মই যদি না মানি তবে নিয়মের কথা বলব কেন? এই তো সেদিন ফেইসবুকে আমার প্রোফাইল ব্যাংকার দেখে কয়েকজন তরুণ বড় আশা করে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল এই উদ্দেশ্য নিয়ে যদি কোন ভাবে ভুয়া ঋণ নেয়া যায়। তাদের নিরাশ করতে হয়েছে, সঠিক রাস্তা দেখায়েও দিয়েছি, কি কি করতে হবে তাও বলে দিয়েছি। ব্যবসা করা এত সহজ না, অনেক ঝুঁকি আর বাস্তব প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে ব্যবসা করতে হয়, হয়ত তারা তা এতদিনে বুঝে গেছে। সহজ সর্তে ঋণ নয়, মানুষ চায় সর্ট-কাট রাস্তায়, পন্থায় ঋণ। সেই মজ্জাগত আইন ভাঙ্গার প্রবণতা এখানেও আছে।
গত বছর ভাড়াটিয়া নিবন্ধন ফর্ম সঠিক ভাবে পূরণ করে জমা দিতে গেলাম বাড্ডা থানায়, এক গুচ্ছ ফরম জমা যে নিলো সে কেবল প্রথম ফটোকপিতে প্রাপ্তিস্বীকার সই করল, বাকিগুলোতে দিতে বললাম, বলল লাগবে না। এর পর দেখলাম সে ওই ফরমগুলো আরেকজনকে দিল, সে আমার সামনেই উনাকে বলল, আরে রাখেন তো এই সব, বলে ঢিল দিয়ে কাগজগুলো একপাশে রাখল যেন ট্রাস ক্যানটা খুঁজে পেলে তাতে ফেলে দিত। সেই সনাতন মজ্জাগত নিয়ম ভাঙ্গার প্রবণতা – আরে রাখেন তো ভাই এইসব। এই বছর শুনলাম থানার দারগা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে আর কেয়ার টেকারদের ধমকাচ্ছে, ডিএমপি ফরম দেওয়ার জন্য। আগে হোক আর পরে হোক সবাইকেই নিয়মের আওতায় আসতেই হবে।, সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থেই পুলিশ ডেটাবেজে ভাল মন্দ সবার খবর থাকতে হবে এবং তা তাদের দেয়া ফরমেট অনুযায়ীই হতে হবে আর এই কাজটা সঠিক তথ্য সমৃদ্ধ করার দায়িত্ব উভয় পক্ষের। এই সাধারণ জ্ঞানটি সবার মনে একই রকম গুরুত্ব পেতে সময় লাগছে বটে, --এই যা।
বড় রাস্তার মোড়ে সুলতান ভাই এর দোকানে চুরি হয়ে গেছে গত শনিবার। চোর তালা ভেঙ্গে ৬০ হাজার টাকা মূল্যের মজুত মালামাল নিয়ে গেছে, সুলতান ভাই বলল, কি হবে পুলিশকে জানায়ে, ওরা এসে আস পাসের এপার্টমেন্টের দারোয়ানদের অযথা হয়রানী করবে, কাজের কাজ কিচ্ছু হবে না, মাঝখান থেকে আমার কিছু টাকা যাবে আর সময় নষ্ট হবে। এই হল সাধারণ জনমত বা মানসিকতা, আমি বললাম জানায়ে রাখেন ভাই, ওরা জানুক এই রাস্তায় চুরি বেড়ে গেছে, ওরা সেই মত ওদের টহল বাড়াবে বা বিশেষ ব্যবস্থা নিবে। আপনি কিছুই জানাবেন না আর ওদের কাছ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা আশা করবেন তা কি হয়? বিগত ৩০ বছর যাবত আমি এই এলাকায় আছি, নিয়মিত পুলিশ টহল তো হচ্ছে গত বেশ কয়েক বছর ধরে, তার পরও কেন জনমনে ধারণা বদল হচ্ছে না? নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা’র দায়িত্বতো কেবল পুলিশের একার না, এটা তো সকল পক্ষেরই, সাধারণ দায়িত্ব।
অর্থনৈতিক লেনদেন যাতে সমাজে বিশৃঙ্খলা করতে না পারে তার জন্য ব্যাংক ব্যবস্থাই যথাযথ, অথচ দেখুন বিকাশের মত জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা যত্রতত্র যে কেউ একটা টেবিল পেতে শুরু করে দিল। এখানে প্রচুর বিশৃঙ্খলা হচ্ছে ঠিকই, একজনের টাকা অন্য জনের কাছে চলে যাচ্ছে, আবার অপারেটর ফোন নম্বর লেখার সময় তার বন্ধু পিছন থেকে খোঁচা দিয়ে মজা পাচ্ছে, এই সব ছোট খাট বিশৃঙ্খলার ব্যাপারে এই জনপদ উদাসীন। বরঞ্চ লেনদেনের মাত্রা বৃদ্ধি করা হয়েছে আর ব্যবস্থাটি আরো জনপ্রিয় হয়ে চলেছে। অর্থনৈতিক লেনদেনে টেলর ব্যবস্থার নিরাপত্তায় একটি স্বাভাবিক সর্বজনস্বীকৃত অবকাঠামো আছে, এমনকি এটিএম মেশিনের ক্ষত্রেও সেই সব নীতিমালা অনুসরন করা হয়, অথচ মোবাইল ব্যাংকিং আউটলেট গুলোর ব্যাপারে ও-সব বিবেচনায় আনা হয় নাই, কারণ? বাংগালিদের দিয়ে সবই সম্ভব। নিয়ম কানুন ওদের ওপর কাজ করে না। ওরা স্বতন্ত্র ও অভিনব।
নিয়ম ভাঙ্গার গান আরো আছে, যেমন ধরুন ঢাকার রাস্তায় সর্বত্র বাস স্ট্যান্ড, যখন যেখানে খুশি বাস থেকে নামতে বা উঠতে পারবেন, এই রকম সুযোগ পৃথিবীর আর কোথাও আছে কি না আমার জানা নাই। অবশ্য বাসগুলো ইদানীং রাস্তার যানজটে বেশিরভাগ সময় দাড়ায়ে থাকে তাই কারো উঠতে বা নামতে কোন অসুবিধা হয় না। অনেক সময় স্টাফ বাস কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বাস অবস্থা বুঝে পাবলিক বাসে রূপান্তরিত হয়ে যায়। আর সকাল বিকাল রাস্তায় যে ময়লার গন্ধ নাকে আসে, তার কারণ সিটি কর্পোরেশনের ওয়েস্ট কন্ট্রোল এর কিছু ৫ টনি ট্রাক ত্রিপলে ঢেকে অসময়ে ময়লা স্থানান্তর করে, ওই ট্রাকগুলো ময়লা ঢাকতে পারলেও ময়লার পানি আটকাতে পারে না আর এই পচা-গন্ধযুক্ত পানি দিয়ে রাস্তা ধৌত করতে করতে চলে। এতে করে এক কাজে দুই কাজ হয়ে যায় কিন্তু পচা গন্ধটা সারা দিনই থাকে। ভিআইপি আর বড় লোকেরা কাঁচবদ্ধ এসি গাড়ীতে চলাচল করে বলে তাঁরা এই গন্ধ পয় না।
মটরসাইকেল যে ভাড়ায় চলতে পারে তা এ জনপদের একক অভিনব আবিষ্কার, এ্যাপ ব্যবহার করে ভাড়া গাড়ীর জন্য এই ব্যবস্থা উবার প্রথম নিয়ে আসে বিশ্বের কয়েকটি উন্নত শহরে কিন্তু তাদের মথায়ও আসে নাই এই রকম ব্যবস্থা মটরসাইকেলের ক্ষেত্রও চলতে পারে। এ দেশের প্রতিষ্ঠান পাঠাও সেই কৃতিত্বের অধিকারী, অবশ্য এখন তাদেরকেও বুড়া আঙ্গুল দেখিয়ে এই জনপদ এ্যাপ ছাড়াই রিক্সা ভাড়া নেয়ার মত যত্র তত্র পাঠাও-বাইক স্ট্যান্ড বানায়ে ভাড়ায় যাচ্ছে। এতে করে সাধারণ মোটরবাইক চালক (যারা পাঠাও রাইড নেয় না) সবাই বিপদে পড়ে গেছে, সবাই তাদের পাঠাও ভাবে আর ভাড়ার দরদাম করতে চায়। এদের একজনের আক্ষেপের উত্তরে বলেছিলাম আপনারা হলুদ ষ্টিকার সম্বলিত হেলমেটের প্রচলনের প্রস্তাব করুন। যারা ভাড়া যাবে তাদের হলুদ হেলমেটে লেখা থাকবে রেন্ট-এ-রাইড, এতে করে যারা পাঠাও নয় তারা অযথা হয়রানী থেকে বেচে যাবে। আর যারা এ্যাপ ছাড়া মোটরবাইক ভাড়া নিতে চায় তারা শুধু রেন্ট-এ-রাইড হলুদ হেলমেটদের সাথে দরদাম করবে। তারা সরকারীভাবে নথিভুক্ত ও রোড পারমিট প্রাপ্তও হতে পারে যাতে জনস্বার্থ সংরক্ষিত হয়। অবশ্য এদেশে এসব নীতিমালা ছাড়াই সব চলে, এ সব নীতি ফিতি নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না।
যারা সমাজ নিয়ে গবেষণা, চিন্তা-ভাবনা করেন তাঁরা হয়তবা আমার সাথে একমত হবেন যে, সকল পুঁজিবাদী সমাজের জনগোষ্ঠি তাদের বয়স অনুযায়ী প্রায় একই রকম বা কাছা কাছি আচরণ করে থাকে। যেমন উন্নয়নশীল অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় বিষয়াদী ও মৈৗলিক চাহিদা সম্পৃক্ত ব্যবসার প্রচুর প্রসার হয়, যা এ দেশেও দেখা যাচ্ছে, খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, আবাসন, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবসার অবস্থা রমরমা। দুঃখজনক যে খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ব্যবসার সুযোগ মনে করে আথচ এগুলো মানুষের মৈৗলিক চাহিদা তাই দিনের আলো, বাতাস, নদীর পানির মত এগুলো ব্যবসার বাইরের জিনিস হওয়াই উচিত ছিল। যা হোক, ধন-সম্পদ, গাড়ী, বাড়ী ও বিলাস-ব্যসনের প্রতি এই জনগোষ্ঠির খাই খাই ভাবটা কেটে গেলেই এই বাংগালীরাই নিয়ম নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হব হলে আশা রাখি। নিজে নিয়ম মত চলবে আর অন্যকেও চলতে বলবে।
শুধু রাজপথে হাটার কথাই নয়, কোন বাংগালী ব্যাংকারকে জিজ্ঞাসা করুন বলবে, ভাই নিয়ম কানুন অনেক আছে কিন্তু প্র্যাকটিস ভিন্ন, মানে হল, নিয়ম থাকবে বইয়ে কিন্তু আমরা হাটব রাস্তার মদ্ধিখান দিয়ে । নিয়ম ঠিক করা হলে আমরা নতুন প্র্যাকটিস বানায়ে নিব। ঋণ নিব কিন্তু ভুয়া কাগজপত্র দিব, আরে ভাই ব্যবস্থা করেন, টাকা পয়সা/ চা-পানি যা লাগে নিয়েন। এই যে মনভঙ্গি এর আদি কারণটা কি হতে পারে? নিয়মই যদি না মানি তবে নিয়মের কথা বলব কেন? এই তো সেদিন ফেইসবুকে আমার প্রোফাইল ব্যাংকার দেখে কয়েকজন তরুণ বড় আশা করে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল এই উদ্দেশ্য নিয়ে যদি কোন ভাবে ভুয়া ঋণ নেয়া যায়। তাদের নিরাশ করতে হয়েছে, সঠিক রাস্তা দেখায়েও দিয়েছি, কি কি করতে হবে তাও বলে দিয়েছি। ব্যবসা করা এত সহজ না, অনেক ঝুঁকি আর বাস্তব প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে ব্যবসা করতে হয়, হয়ত তারা তা এতদিনে বুঝে গেছে। সহজ সর্তে ঋণ নয়, মানুষ চায় সর্ট-কাট রাস্তায়, পন্থায় ঋণ। সেই মজ্জাগত আইন ভাঙ্গার প্রবণতা এখানেও আছে।
গত বছর ভাড়াটিয়া নিবন্ধন ফর্ম সঠিক ভাবে পূরণ করে জমা দিতে গেলাম বাড্ডা থানায়, এক গুচ্ছ ফরম জমা যে নিলো সে কেবল প্রথম ফটোকপিতে প্রাপ্তিস্বীকার সই করল, বাকিগুলোতে দিতে বললাম, বলল লাগবে না। এর পর দেখলাম সে ওই ফরমগুলো আরেকজনকে দিল, সে আমার সামনেই উনাকে বলল, আরে রাখেন তো এই সব, বলে ঢিল দিয়ে কাগজগুলো একপাশে রাখল যেন ট্রাস ক্যানটা খুঁজে পেলে তাতে ফেলে দিত। সেই সনাতন মজ্জাগত নিয়ম ভাঙ্গার প্রবণতা – আরে রাখেন তো ভাই এইসব। এই বছর শুনলাম থানার দারগা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে আর কেয়ার টেকারদের ধমকাচ্ছে, ডিএমপি ফরম দেওয়ার জন্য। আগে হোক আর পরে হোক সবাইকেই নিয়মের আওতায় আসতেই হবে।, সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থেই পুলিশ ডেটাবেজে ভাল মন্দ সবার খবর থাকতে হবে এবং তা তাদের দেয়া ফরমেট অনুযায়ীই হতে হবে আর এই কাজটা সঠিক তথ্য সমৃদ্ধ করার দায়িত্ব উভয় পক্ষের। এই সাধারণ জ্ঞানটি সবার মনে একই রকম গুরুত্ব পেতে সময় লাগছে বটে, --এই যা।
বড় রাস্তার মোড়ে সুলতান ভাই এর দোকানে চুরি হয়ে গেছে গত শনিবার। চোর তালা ভেঙ্গে ৬০ হাজার টাকা মূল্যের মজুত মালামাল নিয়ে গেছে, সুলতান ভাই বলল, কি হবে পুলিশকে জানায়ে, ওরা এসে আস পাসের এপার্টমেন্টের দারোয়ানদের অযথা হয়রানী করবে, কাজের কাজ কিচ্ছু হবে না, মাঝখান থেকে আমার কিছু টাকা যাবে আর সময় নষ্ট হবে। এই হল সাধারণ জনমত বা মানসিকতা, আমি বললাম জানায়ে রাখেন ভাই, ওরা জানুক এই রাস্তায় চুরি বেড়ে গেছে, ওরা সেই মত ওদের টহল বাড়াবে বা বিশেষ ব্যবস্থা নিবে। আপনি কিছুই জানাবেন না আর ওদের কাছ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা আশা করবেন তা কি হয়? বিগত ৩০ বছর যাবত আমি এই এলাকায় আছি, নিয়মিত পুলিশ টহল তো হচ্ছে গত বেশ কয়েক বছর ধরে, তার পরও কেন জনমনে ধারণা বদল হচ্ছে না? নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা’র দায়িত্বতো কেবল পুলিশের একার না, এটা তো সকল পক্ষেরই, সাধারণ দায়িত্ব।
অর্থনৈতিক লেনদেন যাতে সমাজে বিশৃঙ্খলা করতে না পারে তার জন্য ব্যাংক ব্যবস্থাই যথাযথ, অথচ দেখুন বিকাশের মত জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা যত্রতত্র যে কেউ একটা টেবিল পেতে শুরু করে দিল। এখানে প্রচুর বিশৃঙ্খলা হচ্ছে ঠিকই, একজনের টাকা অন্য জনের কাছে চলে যাচ্ছে, আবার অপারেটর ফোন নম্বর লেখার সময় তার বন্ধু পিছন থেকে খোঁচা দিয়ে মজা পাচ্ছে, এই সব ছোট খাট বিশৃঙ্খলার ব্যাপারে এই জনপদ উদাসীন। বরঞ্চ লেনদেনের মাত্রা বৃদ্ধি করা হয়েছে আর ব্যবস্থাটি আরো জনপ্রিয় হয়ে চলেছে। অর্থনৈতিক লেনদেনে টেলর ব্যবস্থার নিরাপত্তায় একটি স্বাভাবিক সর্বজনস্বীকৃত অবকাঠামো আছে, এমনকি এটিএম মেশিনের ক্ষত্রেও সেই সব নীতিমালা অনুসরন করা হয়, অথচ মোবাইল ব্যাংকিং আউটলেট গুলোর ব্যাপারে ও-সব বিবেচনায় আনা হয় নাই, কারণ? বাংগালিদের দিয়ে সবই সম্ভব। নিয়ম কানুন ওদের ওপর কাজ করে না। ওরা স্বতন্ত্র ও অভিনব।
নিয়ম ভাঙ্গার গান আরো আছে, যেমন ধরুন ঢাকার রাস্তায় সর্বত্র বাস স্ট্যান্ড, যখন যেখানে খুশি বাস থেকে নামতে বা উঠতে পারবেন, এই রকম সুযোগ পৃথিবীর আর কোথাও আছে কি না আমার জানা নাই। অবশ্য বাসগুলো ইদানীং রাস্তার যানজটে বেশিরভাগ সময় দাড়ায়ে থাকে তাই কারো উঠতে বা নামতে কোন অসুবিধা হয় না। অনেক সময় স্টাফ বাস কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বাস অবস্থা বুঝে পাবলিক বাসে রূপান্তরিত হয়ে যায়। আর সকাল বিকাল রাস্তায় যে ময়লার গন্ধ নাকে আসে, তার কারণ সিটি কর্পোরেশনের ওয়েস্ট কন্ট্রোল এর কিছু ৫ টনি ট্রাক ত্রিপলে ঢেকে অসময়ে ময়লা স্থানান্তর করে, ওই ট্রাকগুলো ময়লা ঢাকতে পারলেও ময়লার পানি আটকাতে পারে না আর এই পচা-গন্ধযুক্ত পানি দিয়ে রাস্তা ধৌত করতে করতে চলে। এতে করে এক কাজে দুই কাজ হয়ে যায় কিন্তু পচা গন্ধটা সারা দিনই থাকে। ভিআইপি আর বড় লোকেরা কাঁচবদ্ধ এসি গাড়ীতে চলাচল করে বলে তাঁরা এই গন্ধ পয় না।
মটরসাইকেল যে ভাড়ায় চলতে পারে তা এ জনপদের একক অভিনব আবিষ্কার, এ্যাপ ব্যবহার করে ভাড়া গাড়ীর জন্য এই ব্যবস্থা উবার প্রথম নিয়ে আসে বিশ্বের কয়েকটি উন্নত শহরে কিন্তু তাদের মথায়ও আসে নাই এই রকম ব্যবস্থা মটরসাইকেলের ক্ষেত্রও চলতে পারে। এ দেশের প্রতিষ্ঠান পাঠাও সেই কৃতিত্বের অধিকারী, অবশ্য এখন তাদেরকেও বুড়া আঙ্গুল দেখিয়ে এই জনপদ এ্যাপ ছাড়াই রিক্সা ভাড়া নেয়ার মত যত্র তত্র পাঠাও-বাইক স্ট্যান্ড বানায়ে ভাড়ায় যাচ্ছে। এতে করে সাধারণ মোটরবাইক চালক (যারা পাঠাও রাইড নেয় না) সবাই বিপদে পড়ে গেছে, সবাই তাদের পাঠাও ভাবে আর ভাড়ার দরদাম করতে চায়। এদের একজনের আক্ষেপের উত্তরে বলেছিলাম আপনারা হলুদ ষ্টিকার সম্বলিত হেলমেটের প্রচলনের প্রস্তাব করুন। যারা ভাড়া যাবে তাদের হলুদ হেলমেটে লেখা থাকবে রেন্ট-এ-রাইড, এতে করে যারা পাঠাও নয় তারা অযথা হয়রানী থেকে বেচে যাবে। আর যারা এ্যাপ ছাড়া মোটরবাইক ভাড়া নিতে চায় তারা শুধু রেন্ট-এ-রাইড হলুদ হেলমেটদের সাথে দরদাম করবে। তারা সরকারীভাবে নথিভুক্ত ও রোড পারমিট প্রাপ্তও হতে পারে যাতে জনস্বার্থ সংরক্ষিত হয়। অবশ্য এদেশে এসব নীতিমালা ছাড়াই সব চলে, এ সব নীতি ফিতি নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না।
যারা সমাজ নিয়ে গবেষণা, চিন্তা-ভাবনা করেন তাঁরা হয়তবা আমার সাথে একমত হবেন যে, সকল পুঁজিবাদী সমাজের জনগোষ্ঠি তাদের বয়স অনুযায়ী প্রায় একই রকম বা কাছা কাছি আচরণ করে থাকে। যেমন উন্নয়নশীল অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় বিষয়াদী ও মৈৗলিক চাহিদা সম্পৃক্ত ব্যবসার প্রচুর প্রসার হয়, যা এ দেশেও দেখা যাচ্ছে, খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, আবাসন, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবসার অবস্থা রমরমা। দুঃখজনক যে খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ব্যবসার সুযোগ মনে করে আথচ এগুলো মানুষের মৈৗলিক চাহিদা তাই দিনের আলো, বাতাস, নদীর পানির মত এগুলো ব্যবসার বাইরের জিনিস হওয়াই উচিত ছিল। যা হোক, ধন-সম্পদ, গাড়ী, বাড়ী ও বিলাস-ব্যসনের প্রতি এই জনগোষ্ঠির খাই খাই ভাবটা কেটে গেলেই এই বাংগালীরাই নিয়ম নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হব হলে আশা রাখি। নিজে নিয়ম মত চলবে আর অন্যকেও চলতে বলবে।
No comments:
Post a Comment