ভুল করে বাংলার বদলে রমনা লিখিনি, লেখাটা পড়ে শেষ করলে বুঝেতে পারবেন কারনটা কি। আমি একবার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ, ”এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি, সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভূমি” –এই গানের কলিগুলি শুনলেই প্রাণটা জুড়ায়ে যায়। কিন্তু এসিড টেস্ট নিলে এদেশের কয়জনের প্রাণ জুড়ায় সেটা বুঝা যেত হয়তো। ”দেশ আত্ম বোধ” তিনটা শব্দ এক করে ফেলায় হয়তো বিষয়টা ঘোলাটে হয়ে গেছে অনেকের কাছে। যারা স্বদেশ ছেড়ে বিদেশে কিছু কাল থেকেছেন তারা হয়তো এই তিনটা শব্দের সন্ধির সত্যিকারের মর্মার্থটা ধরতে পেরেছেন। আমি যখন ছোটবেলায় লিবিয়ার তবরুখ শহরে তিন বছর (১৯৮০ - ১৯৮২) ছিলাম, সেখানে ইন্ডিয়ান আর পাকিস্তানি ছিল প্রচুর, ভারতীয়রা গর্ব ভরে “হামারা ইন্ডিয়া” বলতো কথায় কথায়, এমনকি পশ্চিম বঙ্গের ওরাও হামারা ইন্ডিয়া বলতে অত্যন্ত পছন্দ করতো। ওখানকার বাঙ্গালী পরিবার গুলো প্রায়শই ঘরোয়া গেট টু গেদার করলেও তাদের হামারা বাংলাদেশ বলে ইন্ডিয়ানদের মত গর্ব করতে শুনিনি। যাদের এদেশে জন্ম ও এদেশেই বড় হওয়া তারা আসলে ”দেশ আত্ম বোধ” কাহাকে বলে বুঝে বলে মনে হয় না। যদি বুঝতই তাহলে নিজের দেশের সম্পদ পাচার করতে তাদের মন সায় দিতো না। আমার ভায়েরা ভাই যখন ক্যানাডা চলে যায় স্বদেশে তাদের সব চিহ্ন বিক্রি করে দিয়ে তখনও তার মধ্যে দেখেছি এই দেশ আত্ম বোধের দেউলিয়াত্ব। তার কাছে এসব ফালতু ইমোশনের কোন মানে হয় না। তাদের কাছে বিদেশেই জীবন আছে এদেশে সব বস্তা পচা লোকজন বসবাস করে। ওদের কাছে ভুপেন হাজারিকার গান, জীবন খুঁজে পাবি, ছুটে ছুটে আয় মানে হলো ওই উন্নত বিশ্ব থেকে ডাক এসেছে বুঝায়। স্বদেশ তাদের কাছে ভয়ংকর এক আস্তাবল এর মত।
ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ শফিক, ক্যাপশন Between Pink & yellow (Flower & leaf) Place: Mitramahi, Sylhet, Bangladesh. Camera: Nikon D5500 Taken on 20-Dec-2017 uploaded to Flicker on 7-Mar-2018
প্রতিটা জাতির নিজেকে নিয়ে গর্ব করে গান, কবিতা ও ভাব বোধ রয়েছে। জনগোষ্ঠীর শুধু নয় পশুপাখিও এই দেশ প্রেমের মোহে ভোগে। যেমন একটা শিয়াল তার ডেরা ছেড়ে অন্যত্র কমই যায়, যদি না তার এলাকায় খাদ্য সংকট কিংবা বেচে থাকার প্রতিকুল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। থিওরিটিক্যাল ইসলাম, টার্মটাকে নূতন মনে হতে পারে, আমিই বোধ হয় প্রথম ব্যবহার করলাম কারণ প্র্যাকটিসিং মুসলিমরা সমাজের নর্ম ফলো করে, থিওরি বলে তাদের হুজুর রা, যাদের অধিকাংশই তা মুখস্থ আওড়ায়, কেবল মুসলিম চিন্তাবিদরাই ইসলামের থিউরি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে থাকে। যা হোক থিওরিটিক্যাল ইসলামে এই জাতীয়তা বোধটা নিচু স্তরের মনে করা হয়, অর্থাৎ দেশীয় জাতীয়তা বোধ পরিত্যাজ্য যেহেতু ইসলাম ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সাম্যের কথা বলে। তাদের কাছে কেবল আদর্শবাদী বন্ধন হলো সব থেকে বুদ্ধিদীপ্ত ও শক্ত বন্ধন যাতে আবদ্ধ হওয়া বিশ্বের সকল বুদ্ধিমান মানুষের উচিত। কথা হচ্ছে, তাদের এই দাবী টা কতটা পোক্ত? হ্যাঁ, মুসলিম ও ইসলাম বিশ্ব মানবতা ও ভাতৃত্বের কথা বলে, তাই তাদের হাদিস আছে কিভাবে তারা কালো-সাদা কিংবা বিজাতীয় বন্ধন গুলোর বিপক্ষে ও সকলকে সমান করে সাম্য প্রতিষ্ঠার বার্তা দেয়। বর্তমান বিশ্বের মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ জনসংখ্যা ধারী রাষ্ট্রগুলো ইসলামকে কিংবা ইসলামী আইন শরিয়াকে তাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় পুরোপুরি স্থান দেয় নাই। স্বভাবতই বুঝা যায়, তারা ইসলামের মূল ভাবধারা জাতীয়তাবাদ থাকবে না, তা মানে না। তারা বরং আরব জাতীয়তাবাদ এর স্বপ্ন দেখে। ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় আপনাকে জাতীয়তা সনদ দিলেও দিতে পারে কিন্তু আরবরা কখনই একজন অনারবকে আরব সনদ দিবে না। আমি যখন তবরুখের প্রাইমারি স্কুলে ১ দিনের জন্য ভর্তি হয়েছিলাম, আমাকে খাতা পেনসিল দেয়া হয়েছিল, সেই খাতার উপর ইউরেশিয়া ও আফ্রিকার মানচিত্রে আরব রাষ্ট্রগুলোর উপর ভিন্ন রং দিয়ে একত্রিত দেখান ছিল যা আরব জাতীয়তাবাদের চৌহদ্দি। যার মানে হলো তারা শিশু বয়স থেকে জানে কারা আরব আর কারা অনারব। আমাদের দেশের সংস্কৃতি অতি পুরাতন ও সমৃদ্ধতর আমরা তার মধ্যে দিয়েই চলমান আছি, কোন বিদেশী সংস্কৃতিকে স্থান দেয়া যায়নি বা হয়নি, যদিও কালক্রমে কিছু মিশ্রণ তো হয়েই গেছে। এটা অনেকটা সিলেটে থাকাকালীন শোনা পাহাড়ি আর বাঙ্গালীদের মধ্যে যেমন বিভেদ করা হয় সেরকম। ওরা পাহাড়ি আর আমরা সমতটের বলে আমরা ভিন্ন, এই আরকি। বাঙ্গাল জাতীয়তার উপর আরব জাতীয়তা বোধ চাপানো কি যায়? এন্থ্রপলজিক্যাল পার্থক্য আছে না। কিন্তু কিছু লোক তা চাপাচ্ছে, কাজ না করলেও চাপাচ্ছে, কেউ কেউ তা গদ গদ চিত্তে মেনেও নিচ্ছে। তাতে করে কাকের লেজে ময়ূরের পুচ্ছ লাগানোর মত দেখাচ্ছে। মানব ভাবে ভর করে চলে, তাই কত কিছু তো সম্ভব এই মানব সমাজে। আমরা মাছে ভাতে বাঙ্গালী, আরবদের মত খুবজা খাই না। আমাদের মাঠ ঘাট বছরে দুই বার সোনালী ধানে ভরে উঠে, আরবের মরু প্রান্তরের বাবলা গাছের আর উটের সংস্কৃতি এখানে খাটবে কোন দুঃখে। কিন্তু খেজুর, উট আর দুম্বার মাংসর প্রতি এদেশীয় মানুষজনের এক বিজাতীয় আসক্তি আছে যার পুরটাই জোর করে চাপান মনোবৃত্তি বলে আমার মনে হয়। পায় না তাই খায় না, আঙ্গুর ফল টক জাতিয় অবস্থা আরকি।
অক্টোবর ২০২৪ এর দিকে ডলার ক্রাইসিসে প্রাইভেট ব্যাংক গুলো স্টুডেন্ট ফাইল খুলছে না, আমরা সোনালী ব্যাংক সরকারী হওয়ায় আমরা না বলতে পারিনি। তাই বাইরে পড়তে যাওয়ার চেষ্টায় এত ইয়াং জেনারেশন এই ব্যাংকের ওয়েজ আরনার শাখায় এসে ভিড় করছিল যে, আমরাও এই কাজের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত না হলেও অনেক জনের অনেক অনুরোধ রক্ষা করতে গিয়ে এই প্রক্রিয়ার সাথে কিছুটা হলেও সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। অবাক হয়েছি দেখে যে কত বিপুল পরিমাণ ছাত্র এদেশ ছেড়ে বাইরে পড়তে যেতে চায়, শুধু চায়ই না প্রায় হন্যে হয়ে পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে। ভাব খানা এমন যে বিদেশে সোনার খনি আছে আর ওখানে পড়াশুনা করলে বেশি জ্ঞানী হওয়া যাবে ও পয়সার পাহাড় বানানো যাবে। এই দেশাত্মবোধের দেউলিয়াত্ব ও যারা স্বদেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে আবারও বলি, এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি। এরা যাচ্ছে টাকার লোভে, জানে না যে লোভে পাপ আর পাপে অকাল মৃত্যুও হতে পারে। তবু তারা সে ঝুঁকি নেয়, একটু স্বচ্ছন্দ, একটু আরাম, একটু সুখে থাকা, অল্প পরিশ্রমে বেশি রোজগার এই ফ্যাক্টরগুলো মনে হয় কাজ করে তাদের মাথায়। গ্রাম ছাড়া ওই রাঙ্গা মাটির পথ শহরে আসে তার পর বিদেশে চলে যায়। এভাবেই সবাই যুগে যুগে মাইগ্রেশন করেছে। আমার বাবা-মা লিবিয়ায় গিয়ে আবার কেন দেশে ফিরে আসলো এখনও বুঝি না। ওখান থেকে লন্ডনে কিম্বা নিদেন পক্ষে মাল্টাতে মাইগ্রেট করলেও তো চলতো, না হয় ইউরোপের ইটালি, জার্মানি কিংবা সুইজারল্যান্ডে। তা না করে বাবা দেশে এসে ঢাকা শহরের মিরপুর আর বাড্ডায় জমি কিনে বাড়ি করলো।
ফটোগ্রাফার
মোহাম্মদ শফিক, ক্যাপশন Plantation Their Future Place: Sunamganj,
Sylhet, Bangladesh.
Camera: Nikon D5500 Taken on 13-Aug-2017
uploaded to Flicker on 4-Oct-2017
অনেকেই বিদেশের চকচকে শহরগুলোর ছবি দেয় কিংবা প্রান্তর জুরা টিউলিপ কিংবা বাহারি প্রকৃতির ছবি দেয় বিদেশের। চকচকে ঝকঝকে ছবি যা দেখলে মনে হয় আমাদের দেশের তুলনায় না জানি কত সুন্দর সে সব দেশ, হতেই পারে, বিশ্বের বিভিন্ন কোনায় কোনায় নয়নাভিরাম দৃশ্য থাকতেই পারে। কিন্তু উপরের ছবিটা দেখেন, এর সৌন্দর্য কেবল বাঙ্গালী প্রাণেই আন্দোলিত হতে পারে।
২৩শে জানুয়ারি ২০২৪ আমার চাচাতো ভাই এক জনের ফেইসবুক থেকে এই কথাগুলো শেয়ার দেয়ঃ
<উদ্ধৃত>”ইশ!! কেন যে আমেরিকা-ইউরোপে জন্ম হলো না!!! কত সুন্দর বাল্যকাল কাটাতাম!!! স্কুল থেকে প্রতি বছর অন্য দেশে ট্রিপে নিয়ে যেত, সামারে বনে-বাদারে ক্যাম্পিং করতাম, শীতকালে উইন্টার স্পোর্ট করতাম, ১৩-১৪ বছর বয়স থেকে গার্লফ্রেন্ড থাকত, ১৬ বছর থেকে পার্টটাইম কাজ শুরু করে টাকা জমায় ২০-২১ বছরে ওয়ার্ল্ড ট্রিপ দিতাম! What a life that would have been...... অনেক রাগ বিধাতার ওপর...গরিব দেশে জন্ম দেওয়ার কারণে।
এক বছরের বেশি হয়ে গেল আমার প্রবাস জীবনের – জার্মানির হামবুর্গ শহরে। হামবুর্গ আন্তর্জাতিক শহর – ১৮০ এর বেশি দেশের মানুষের এখানে বসবাস। এখানে আসার আগে মাত্র একজন বাংলাদেশিকে চিনতাম, তার ওপর হামবুর্গে বাংলাদেশির সংখ্যা হাতেগোনা হওয়ার কারণে প্রথম থেকেই বিদেশি বন্ধবান্ধব জুটে যায়, এদের সাথেই ওঠাবসা চলে।
পূর্বের চায়না থেকে পশ্চিমের আমেরিকা – সবার সাথে মেশার সুযোগ হয়েছে…ইংলিশটা ভালো হওয়ার কারণে অনেক জার্মান বন্ধুও জুটেছে (হাম্বুরগের জার্মানরা তাদের ইংলিশ-এর উন্নতির বেপারে খুবই সচেতন :D)… উইকেন্ডের সারারাত জেগে জীবনভিত্তিক আড্ডাও হয়েছে। সব মিলিয়ে আমি বলব গত একবছর আমার জীবনের শিক্ষামূলক সেরা সময়।
জার্মানি আসার আগে জার্মানির উপর কিছু আর্টিকেল পড়েছিলাম। এমন একটা আর্টিকেল এ ছিল লাভ ইন জার্মানি এর ওপরে। আর্টিকেলের একটা জিনিস বেশ অবাক লাগছে – জার্মানরা “আমি তোমাকে ভালবাসি” – এই কথাটা পারত পক্ষে বলে না। ২-৩ বছরের সম্পর্কের পর ও ওরা ভালবাসার কথা এড়িয়ে চলে। প্রথমে বিশ্বাস করি নাই। এখানে এসে জার্মানদের সাথে মেশার পর, বেশ কিছু জার্মান ফ্যামিলির কাছ থেকে দেখার পর ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে পারছি। এখানে বিয়ে ৪-৫ বছরের বেশি টেকে না। অধিকাংশ ফ্যামিলি বাচ্চা ছোটো থাকা অবস্থায় ভেঙে যায়। এর ফলে যেটা হয় যে, বাচ্চা ছোটো বয়স থেকেই দেখে যে বাবা-মা দুইজনের কাছেই কয়েক মাস পর পরই গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড আসছে… কেউই স্থায়ী হয় না। ছোটবেলা থেকেই একটা শিক্ষা ওরা নিয়ে নেয়, “মানুষ আসবে, মানুষ যাবে”। যার কারণে অটোমেটিক্যালি ওরা কোনো মানুষের প্রতি ইমশোনাল ডেভেলপমেন্ট করতে পারে না। কারন আনকনশাসলি ওরা এটা ধরেই নেয় যে, কেউই বেশিদিন থাকবে না। তার ওপর ১৩-১৪ বয়স থেকেই ফিসিকাল রিলেশনশিপ শুরু করে দেয় - ভালোবাসার জন্য না, আসলেই ফিজিক্যাল কিউরিসিটি থেকে এবং প্রতি বছর নতুন নতুন। যার কারণে নারী-পুরুষ সম্পর্কের ভেতর ওদের কাছে কোনো কিছু বাকি থাকে না। যার ফলে ওরা পুরো নারীপুরুষ সম্পর্কের বিষয়ে ইন্সেন্সিটিভ হয়ে যায়।
একটা ইগজ্যামপল দেই, এখানে ছেলে-মেয়ে বন্ধু (শুধু বন্ধু) একসাথে ঘুমায়… কোনরকম সমস্যা ছাড়া। গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞাসা করা, কার সাথে চ্যাট করতেছে, কারসাথে পার্টিতে যাচ্ছে– এগুলো রুড। রিলেশনশিপ ওদের কাছে নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া, নতুন শরীরের অনুভূতি নেয়া মাত্র… …ভালবাসার অনুভূতি এক অবাস্তব বিষয়। বলিঊডের মুভি দেখে প্রচণ্ড অবাক হয়– সত্যিই কি ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের মানুষরা এতোটা রোমান্টিক? এত অনুভূতি ওদের আসে কোথা থেকে? আরেকটা বিষয় হল কালেক্টিভিসম অ্যান্ড ইন্ডিভিডুয়ালিসম। গরিব দেশের সমাজ কালিক্টিভিস্টিক হয় সারভাইভাল-এর জন্য। কারণ সরকার সমাজ সবসময় ব্যাসিক নিড ফিলাপ করে না। যার কারণে আমরা ছোটবেলা থেকেই পরিবার, বন্ধু, ভালোবাসার মানুষের জন্য স্যাক্রিফাইস করা শিখি… এটাই তো ভালোবাসা, অনুভূতির জগতের ব্যাসিক। ওরা খুবই অবাক হয় শুনে, যখন আমি বলি, আমাদের প্রশ্নগুলো পুরো উল্টো– আমরা চিন্তা করি আমার আমাদের বাবা-মাকে সুখী করতে পারছি কিনা, ভালবাসার মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারছি কিনা… আর সবথেকে বড়ো বিষয় হলো, গডলেস সোসাইটিতে বড়ো হবার কারণে শেখে— এই জীবনটাই আসল, এরপর আর কিছু নাই, সব শেষ! সব মানুষের পক্ষে তার এই ধরনের বাস্তবতা মেনে নেয়া কঠিন। হার্টে সত্যের অপূর্ণতা থেকেই যায়।
মজার একটা বিষয় হলো ছোটবেলা থেকেই এতটা রোবোটিক যে, এখানে আপনি জার্মান কোনো বাচ্চাকে কাঁদতে দেখবেন না। রাস্তায় যদি কোনো বাচ্চার কান্না শুনেন, তাহলে চোখ বন্ধ করে বুঝে নিবেন টার্কিশ বা আরব বাচ্চা। আমি এখন পর্যন্ত একটা জার্মান বাচ্চাকে কাঁদতে দেখিনি… সত্যি! আমার এই অভিজ্ঞতার পর ছোটবেলার ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডের প্রতি হিংসা, ওদের প্রতি করুণায় পরিণত হয়েছে। যতবারই জার্মানদের সাথে এইসব বিষয়ে কথা বলেছি, ততবারই গম্ভীর হয়ে গেছে, ২-৩ জন কেঁদেও দিয়েছে। আসলেই ওদের মনের ইমোশনাল ভেকেন্সিটা একটু অনুভব করতে ভয় লাগে…কিভাবে এভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব? উত্তর হলো উইকডেতে কাজে ব্যস্ত থাকা, উইকেন্ডে মদে মাতাল হয়ে সব ভুলে যাওয়া… মাঝে মাঝে সাইক্রিয়াটিস্ট ভিজিট করা, অ্যান্টিডিপ্রেসসিভ ড্রাগ নেয়া… নতুন রিলেশনশিপ খোঁজা, রাস্তায় প্রথম ২-৩ মাস ওপেনে কড়া ভালোবাসা (!) বহিঃপ্রকাশ করা… তারপর আবার প্রথম থেকে শুরু করা…” <অনুদ্ধৃত> #সংকলিত @ www. Facebook. com / Uzzal.mohi
উপরের উজ্জ্বল মহির স্বীকারোক্তি আসলে কিছুই বলে না, কারণ কি জানেন, আমার পরিচিত স্কুল বন্ধু, কলেজ বন্ধু কিংবা পরিচিত জন জারাই বিদেশ গেছে তারা আর ফেরত আসে নাই, সবাই বিদেশের মজা পেয়ে গেছেন। হবেই বা না কেন? এটা তো স্বাভাবিক, আমাদের গ্রাম থেকে লোকজন শহরমুখি কেন? কারণ প্রচুর কর্মসংস্থান আছে শহরে, গ্রামের অর্থনীতির চেয়ে শহুরে অর্থনীতি বড় আর বড় অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান ও সুযোগ সুবিধা বেশি, তৃতীয় বিশ্ব থেকে প্রথম বিশ্বের অর্থনীতি অনেক বড়, তাই ওখানে লিভিং কষ্ট হাই হলেও লিভিং স্ট্যান্ডার্ড অনেক ভালো। একটা ছোট্ট বাস্তব উদাহরণ দেই। আপনি ঢাহা শহরের বিলাস বহুল বেডরুম এটাস্ট টয়লেট কাম বাথরুম ব্যবহার করেন, যা কার কার ড্রইং রুমের চেয়েও বড়, বাথটাব তো আছেই গিজার, হাই কমড তো কথাই নাই, শাওয়ার দিয়ে ঝরনার চেয়েও মজার ঠান্ডা-গরম পানি মিশ্রণ দিয়ে কুসুম কুসুম গোছল কি মজা! কি মজা, এখন আপনাকে গ্রামে কোন এক অজানা কারণে এক মাস থাকতে দেয়া হলো, যেখানে বাথরুমের নিচে কুয়া, লো কমড এর ফাঁক দিয়ে কুয়াটাও দেখাও যায়। থাকার ঘর থেকে বেশ দুরে ঝোপ ঝাড়ের কাছে সেই টয়লেট কিংবা বাথরুম, রাতে ঝি ঝি পোকার ডাক, সাপ খোপের তো কথাই নাই। মেডাম ও মহোদয় গণ চিন্তা কি করেছেন পার্থক্যটা কত বিশাল? একটা আগরতলা আরেকটা চকির তলা। সুতরাং যারা বিদেশে দৌড়ে পালাচ্ছে তাদের দোষ দেওয়া যায় কি?
ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ শফিক, ক্যাপশন Working Shady Place: Narsinghdi, Dhaka, Bangladesh. Camera: Nikon D5500 Taken on 30-Jun-2017uploaded to Flicker on 9-Jul-2017
এই প্রসঙ্গে আমার প্রিয় মজিদ ভাই, (এজিএম, সেনালী ব্যাংক পিএলসি) এর মন্তব্য ছিল এরকম “অভিবাসন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আদিকাল থেকে মানুষ প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা কারণে পৃথিবীর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে বসতি গড়ছে। উন্নত জীবনের আশায় মানুষ অভিগমন করে। আর যারা স্থায়ীভাবে দেশ ছাড়ে তাদের সম্পদ নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা তারা করবে। এছাড়া সাধারণত যাদের ন্যূনতা আর্থিক সক্ষমতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও চোখ কান খোলা রয়েছে তারাই অভিগমন করে। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে যেহেতু এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা দ্রুত ক্রমবর্ধমান এবং যেহেতু অভিবাসনের কারণসমূহ অনেক বেশি করে বিদ্যমান রয়েছে বিশেষ করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তাই আমার মনে হয় এখানে এই প্রক্রিয়া আরও অনেক দিন ব্যাপক ভাবেই চলবে। আমাদের উচিত অনিশ্চয়তাসমূহ দূর করার দিকে মনোনিবেশ করা। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি। আপনাকে ধন্যবাদ।”
মজিদ ভাই এর দেয়া যুক্তিটা খন্ডান যায় না সত্য কিন্তু উপরে উজ্জ্বল মহি যে বিষয়টি তুলে ধরে বলেছে যে, বিদেশের সমাজ দেখলে তার করুণা হয়, তার সাথে আমার বাল্যবন্ধু স্বপনের আমেরিকার সমাজের বলা কথা মিলে যায়। তিন বছর আগে গুগল ম্যাপ দিয়ে ফ্লোরিডায় ওর বাসাটা আমি বার্ড আই ভিউ দিয়ে দেখছিলাম আর ও বলেছিল আশপাশের বাসাগুলোতে তুই যে দম্পতি গুলো পাবি তারা কেউ বাচ্চা নিতে চায় না, যেটা একটা বিস্ময়বোধক ব্যাপার বলে মনে হয় আমাদের কাছে। লন্ডনে যে বন্ধুরা থাকে তাদের কাছে শুনেছি ওখানে বয়স্ক লোক আর অতি অল্পবয়স্ক মেয়ে দম্পতি দেখা যায়, কিংবা এর বিপরীত, মানে বয়স্ক মহিলা আর স্বল্প বয়স্ক তরুণ স্বামী। উজ্জ্বল মহি যে বিষয়টি তুলে এনেছে তা আসলে সমাজবিদ্যার গবেষণার বিষয় এর সাথে দেশাত্মবোধের সম্পর্ক স্বল্প, একদম যে নাই তা নয় তবে এই বিষয়টিকে কি ত্রুটি, বিচ্যুতি কিংবা বিপর্যাস হিসেবে দেখা উচিত না কি মানব সমাজের বিবর্তনের সাথে তুলনা করা উচিত তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে । দেশ ও জাতি আর দেশে বসবাসরত জনগোষ্ঠী এই দুয়ের মধ্যে যে প্রেম তা’র সাথে সমাজবিদ্যার মানব সমাজের জীবনাচরনের বিষয়টিকে উজ্জ্বল মাহি গুলায়ে ফেলেছেন বলে আমার ধারণা। এর উপর প্রযুক্তি গত উন্নয়নে আমাদের গ্রাম বাংলার চেহারাটাও তো পাল্টে যাচ্ছে দিন কে দিন। সেই গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। একনও থাকে বইকি, কিন্তু ভট ভটি নৌকার দৌরাত্ম্যে এখন আর পাল তোলা নৌকা দেখাই যায় না । চাল চিত্র পুরাই বদলে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে বলা যায়।
আমি চিন্তা করে দেখেছি আমার গ্রামের বাড়ী হলো ঢাকা শহরের রমনা থানা, আমার জন্ম হলী ফ্যামিলি হাসপাতালে,, জন্মেই নানা বাড়ি মালিবাগে, চাচারা সব শান্তিবাগে, লিবিয়া থেকে ঘুরে এসে পড়ালেখা, বড় হওয়া সব মিরপুরের শ্যাওড়াপাড়ায় কিন্তু তিন সন্তানের জন্ম কিন্তু এই রমনাতেই, ইস্কাটনে, রাজারবাগে আর সিদ্ধেশ্বরীতে। এখনও থাকি এই সিদ্ধেশ্বরীতেই। বাপ চাচাদের ছোটবেলা কেটেছে পদ্মা পাড়ে মৌছা-, লৌহজং, মুন্সিগঞ্জ এলাকায়, কিন্তু আমার তো এই ঢাকাতেই রমনা আর মিরপুরে । মা-বাবার কবর শ্যাওড়াপাড়ায় তাই মন থেকে শ্যাওড়াপাড়ার প্রতি আমার দেশাত্মবোধ কাজ করে। মনের অনেক গভীর থেকে সেই টান অনুভব করি। কবর যেন হয় শ্যাওড়াপাড়ায় বাবা-মা’র কবরের মাঝখানে, যেমনটা থাকতাম শৈশবে। এতকিছুর পরও আমার বলতে ইচ্ছা করে “আমি একবার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ”। জীবনে আর যে কয়টা দিন বাকি আছে, মুকেশের ওই গানটাই সত্য মনে হয়, ”জিনা ইহা, মরনা ইহা, ইসকে সিবা যানা কাহা?”।
https://youtu.be/_vN4tXB7_bw?si=jFWy4n8B1PYKLc6O
Song: Ami Banglay Gaan Gai |
আমি বাংলায় গান গাই | Independent song
Tune & Vocal:
Mahmuduzzaman Babu | মাহমুদুজ্জমান বাবু
Lyrics: Pratul Mukhopadhyay
Album: Chokh Vese Jay Jole
Label: Sangeeta
সম্পাদনা ও উন্নয়ন ইতিহাসঃ ০৯জানুয়ারী২০২৪> ১২জানুয়ারী২০২৪> ২৩জানুয়ারী২০২৪>২৮ফেব্রুয়ারী২০২৪> ১৪মার্চ২০২৪> ০২মে২০২৪> ২৫জুলাই২০২৪>২৮অক্টোবর২০২৪> ৬নভেম্বার২০২৪> ২৪জুলাই২০২৫>২আগস্ট২০২৫>
No comments:
Post a Comment