Friday, May 19, 2023

পরমত সহিষ্ণুতা বা ভিন্ন মত সহ্য করার ক্ষমতা

কঠিন বাংলায় বলা হয় পরমত সহিষ্ণুতা তাই অনেকেই এটা বুঝেন বলে মনে হয় না। ভাষার বিবর্তন সহজে চোখে পরে। আগে সাধু ভাষায় বাংলা সাহিত্য রচনা করা হতো আর এখন সাধু ভাষায় কিছু লেখা হলে পাঠক সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। অন্যদিকে কথ্য ভাষা সাহিত্যর ভাষা হয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত তার উপর আঞ্চলিক ভাষা গুলোও সাহিত্যে স্থান পাচ্ছে যেমন চিটাগাং এর “মেজবাইন্না গোস্ত হাইলে আইয়ুন” মানে হলো মেজবান এর গোস্ত খাইলে আসেন। আবার আঞ্চলিক ভাষার সংক্ষেপকরণও গ্রহণযোগ্য হচ্ছে যেমন “আই কিত্তাম” আমি কি করবো হয়ে গেল আই কিত্তাম। তিন তিন টা বাংলা শব্দ সংক্ষেপ করে আঞ্চলিক ভাষায় হয়ে গেল দুইটা শব্দ। সব কিছুরই যে বিবর্তন হচ্ছে তা স্পষ্ট দেখা যায় অথচ বিবর্তন বাদ এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কত বাদ প্রতিবাদ। মুসুল্লিদের ক্রমাগত মুসল্লিপনা বৃদ্ধিও যে একটা বিবর্তন তা তারা দেখেও দেখে না। তাদের কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শুনলে মনে হতে পারে নতুন নতুন হাদিস আবিষ্কার হচ্ছে দিন কে দিন যা তাদের পুরাতন ক্রিড বা মূল বিশ্বাসকে বা বিশ্বাস গুলোকে ভেঙ্গে শতধা বিভক্ত করে দিচ্ছে সে বিষয়ে তারা উদাসীন। জামাতুল মুসলিমিন বা তবলিগ জামাতেও যে বিভক্তি বা রাজনীতি ঢুকতে পারে তা’ও আজ সত্য হয়ে দেখা গেল। যা হোক মুসল্লিদের মুসল্লিপনা নিবে বেশি কথা বলা বিপদজনক তাই এ প্রসঙ্গে আর কিছুই বলবো না। আমার স্কুল বন্ধুদের ভাইবার গ্রুপ ৮৯আর’স ডিজি বয়েজ বা ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ হাই স্কুলের ১৯৮৯ এর এসএসসি ব্যাচের ভাইবার গ্রুপে এই মুসুল্লিপনা (মুসলমানদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ধরনের প্রচার প্রচেষ্টা) বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই বিরক্ত হচ্ছিল কিন্তু কিছু বলতে পারছিল না। তাই এক দিন বললাম আমি ইদানীং বেদ, বেদান্ত উপনিষদ অর্থ সহ পড়া শুরু করছি আর তাতে একটা শ্লোক আছে এমন যে “ভগবৎ বিষদ ভরকেং বিশ্ব” মানে হল বিধাতা ভরকে গিয়ে বিশ্ব সৃষ্টি করেছিল। বলা বাহুল্য রস করে বলেছিলাম বানানো শ্লোক, আর বাল্য বন্ধুদের আড্ডায় তা বলাই যায়। তাতেও তারা বুঝল না বলে পরে এক সময় লিখলাম ধর্ম সকল মানুষের কল্পনা বা মিথ, সর্গ, নরক বলে কিছু নাই। বিধাতা বলে কিছু নাই, কোন কালে ছিলোও না। মানুষই বিধাতা সৃষ্টি করেছে আর নিজেদের প্রয়োজনে তাকে বাচিয়ে রেখেছে। “There is no God, never was. Man created God and keeping him alive for their own need” এই পোষ্ট দেয়ার পর যা হলো তা বলাই বাহুল্য। তুল কালাম কাণ্ড শুরু হয়ে গেল কয়েক জনের মেধ্যে। একজন আমাকে ওই পোষ্ট গুলো মুছে ফেলতে বললো, একজন বললো কবিরা গুনাহ হবে তাই তওবা করতে। সবার আঘাত গুলো আমি ঠাণ্ডা মাথায় উত্তর দিলাম আর বললাম যে, আমাদের স্কুল বন্ধদের এই আড্ডাটা মানে এই নয় যে সবার মধ্যে একই বিশ্বাসে থাকতে হবে। ভিন্ন মতের বন্ধুও থাকতে পারে তাই ধর্ম নিয়ে এত মাতা মাতি না করাই ভাল। বন্ধু প্রতিম ভালবাসা আমাদের একত্র করে ঘৃণা নয়।  আর কেন সংখ্যা লঘুদের মতকে এতটা ঘৃণা করা হবে যখন আমাদের এই দেশে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার। তাই যদি হয় তবে ভিন্ন মত হলে তোদের এত আঘাত লাগছে কেন বা আঘাতটা কোথায় লাগছে বুঝে দেখতে আর সেখানেই মনের অসুখ। এর পর থেকে তাদের মুসুল্লিপনার রাশ টানা গেল। তারা বুঝতেই পারছিলনা অসাম্প্রদায়িকতা বলতে কি বুঝান হয়ে থাকে আর তাকে বাস্তবে কিভাবে অনুভব করতে হয়। আমি মূলত হাতে কলমে তা দেখায়ে দিলাম। অর্থাৎ নিজেকে ভিন্ন মতের মানুষ হিসেবে তাদের কাছে উপস্থাপন করার পর তাদের আচরণগুলো তাদের কাছেই উন্মোচন করে দিলাম। এরা তো ছোট খোকা নয়, সবারই বয়স ৫০ এর উপরে কার কার বা এক দুই বছর এদিক ওদিক। কেউ আর্মি কর্নেল, কেউ প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট (শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রণেতা), কেউ বড় ডাক্তার, কেউ উচ্চপদস্থ ব্যাংকার। এদের মানুষিক অবস্থা যদি এহেন হয় তবে পুর দেশটার বহু মানুষের মানুষিক অবস্থাটা কি হতে পারে তা এ থেকে কল্পনা করা যায়। আমি নিজেই মুসুল্লিপনা করেছি ২০০২ থেকে ২০১০ পর্যন্ত তাই আমি ওদের মানসিকতাটা কম বেশী বুঝতে পারি। আমার ইদানীং কালের মানুষিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে আর তা হতেই পারে। আমি গোঁড়া মুসলিম হতে ধর্ম নিরপেক্ষ কিংবা আর ভাল করে বলতে গেলে নাস্তিকতার দিকে কিছুটা ঝুঁকে পরছি আর তা আমার নিজস্ব বিশ্বাস এর মধ্যে পরিবর্তন বা বিবর্তন। আর আমার ভাগ্য ভাল যে আমি সেকুলার ডেমোক্র্যাটিক বা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশে বাস করি। আমাকে আমার বিশ্বাস পরিবর্তন এর জন্য কার কাছে জবাব দীহি করার প্রয়োজন পরে না।

১৮মে২০২৩ তারিখে লাইক মাইন-ডেড হোয়াটস এ্যাপ গ্রুপের (প্রাক্তন মুসলিম প্রফেশনাল ফোরাম এর সদস্যদের গ্রুপ) এর এক অতি প্রিয় ভাই এর পোষ্ট দেখে যখন বললাম পুরোপুরি একমত হতে না পারার জন্য দুঃখিত তখন আরেকজন বললো কোথায় ভিন্ন মত পাচ্ছেন জানালে বিষটা আরো পরিষ্কার হতো। তার উত্তরে আমি যা লিখেছিলাম তা নিম্নরূপ, আমার উত্তর গুলো বন্ধনী আবদ্ধ ও বোল্ড আন্ডার লাইন করা।  

// কখনো কি এমন দেখেছেন যে, কোন নাস্তিক তার ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিকতা কে আপন করে নেয়ার গল্প খুব আবেগ, ভালোবাসার কান্নার সহিত প্রকাশ করছে? বা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মে কনভার্ট হওয়া কোন লোককে একইভাবে অন্তরের গভীর থেকে ভাব প্রকাশ করতে দেখেছেন? "আজ যদি নাস্তিকতার দেখা না পেতাম, তাহলে জীবনটাই বৃথা হয়ে যেতো", নাস্তিকতার এই সত্য পথে আপনিও চলে আসুন" এমন দরদী আবেদনে কখনো কোন নাস্তিককে বলতে শুনেছেন?"

না এমন শুনবেন না, দেখবেন না, দেখা সম্ভব ও না। কিন্তু কেনো? (আমি দেখেছি নাস্তিকেরা বা বামপন্থীরা ভেনগগ পত্রিকা বিতরণ করছে, তাদের আমার অফিস থেকে অপমান করে বিতাড়িত করেছিলাম তা’ও বহু বছর আগে, ও’রা কথা বলতে পারে না কারণ ইদানীং মুসলমানদের অতিরিক্ত মুসল্লিপনা এতই বেড়েছে যে ওরা কোন ঠাসা হয়ে পরেছে, এই মুসলিম পাগল সমাজে ভিন্ন ধর্ম কি ভিন্ন মত প্রকাশ করাও কঠিন। লিবিয়ায় যেমন ছিল গাদ্দাফির নাম নেয়া যেত না, তা হলেই বিপদ। এ দেশে ইসলাম ব্যতীত কিছু বললে খবর আছে।)

অধিকাংশ ক্ষেত্রে যারা অন্য ধর্ম বা ধর্মহীনতা থেকে ইসলামে ফিরে আসে, তাদের গল্পগুলো খুব ই হৃদয়গ্রাহী হয়, আবেগ ঘন হয়, তাদের জীবনের গল্প শুনে, পড়ে, দেখে মনের অজান্তেই কান্না চলে আসে। এমনভাবে তারা তাদের ফিরে আসার ঘটনা বর্ণনা করেন যেনো ছোটবেলায় মেলায় হারিয়ে যাওয়া আপন কারো চাইতেও প্রিয় কিছু ফিরে পেয়েছেন। (ইসলামের এই আবেগ টাই ইদানীং জনপ্রিয়। আগে আবেগ তার পর ইসলাম। আবেগ আসবেই বা না কেন, প্রচণ্ড আত্ম তৃপ্তি যে দেয় এই ইসলাম বা অন্য যে কোন ধর্মে, জীবনের সকল অমীমাংসিত প্রশ্নের ব্যাখ্যা আছে ধর্মে। ভাল হলেও একই ব্যাখ্যা, খারাপ হলেও একই ব্যাখ্যা। ফুল প্রুফ সল্ভ টু অল ক্রিটিক্যাল কোয়েশচেন। সকল ধর্মেই তাই আবেগ প্রধান। ভাব জগতেই তার আসল বাস্তবতা। ইন্ডিয়াতে এই আবেগ হিন্দু ধর্মে বা সনাতন ধর্মেও দেখা যাবে। একই ভাবে তারাও আবেগে আপ্লুত হয়ে তাদের ফিরে আসার কাহিনী শুনাবে আপনাকে। নাস্তিক রা এই আত্ম তৃপ্তি থেকে বঞ্চিত তাদের কাছে সকল প্রশ্নের উত্তর নাই আর তাদের প্রাঙ্গণে নিত্তই নতুন হাদিসও উন্মোচিত হয় না। তারা আবেগ পাবে কই বরং তারা বাস্তববাদী আর বিবর্তনে বিশ্বাস করে। অপেক্ষা করে নতুন কোন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের যাতে রহস্যের ঘোর কিছুটা কমে। তাদের তো মোল্লা শ্রেণী নাই যে রোজ শুক্রবার আরবি ভাষায় খুদবা পড়বে আর সবাই গদ গদ হয়ে তা শুনে পুণ্যবান হবে।)

রিভার্টেড মুসলিমদের অভিব্যক্তিই বা এমন কেন হয়? (শুধু রিভার্টেড মুসলিম কেন যে কোন ধর্মে রিভার্টেড আবেগাপ্লুত হবেই কারণ তারা বস্তু জগত থেকে ভাব জগতে প্রবেশ করে এক মহা আত্মতৃপ্তির সন্ধান পেয়ে গেছে। আগে ছিল ছন্নছাড়া আর এখন তার অভিভাবক আছে।)

সত্য কে খুঁজে পাবার যেমন ইন্টেলেকচুয়াল আবেদন আছে, তেমনি আছে অন্তরের গভীর থেকে আবেগের আবেদন ও। (ইন্টেলেকচুয়াল আবেদন নাই, সত্য তাই যাকে আপনি সত্য বলে মনে করেন আপনার মনো-অভিজ্ঞতা দ্বারা। যুক্তিও ইন্টেলেকচুয়াল আবার ভাবও ইন্টেলেকচুয়াল, দুটার বাসাই মগজে সমান ভাবে কাজ করে, কেউ একদিকে বায়াসড অন্য কেউ আরেক দিকে।) ধরুন, দীর্ঘদিন যাবত আপনি একটা বিশেষ প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন, যার উত্তর মিলছেনা, কিন্তু চেষ্টা করতে করতে একদিন ঠিক ই উত্তর টা পেয়ে গেলেন। তখন সেই উত্তর পাবার যেই বুদ্ধিবৃত্তিক আবেদন তা যেমন উপলব্ধি করবেন, তেমনি করবেন সেই উত্তর পাওয়ার আবেগি, কান্না মাখা আবেদন ও। সেটা আপনার ইন্টালেক্ট থেকে না অন্তর থেকে উৎসারিত হবে। (ইন্টালেক্টই অন্তর, এই দ্বন্দ্ব বহু পুরাতন মনই কি আত্মা না কি মন হলো বুদ্ধি, আসলে পুরটাই ইন্টালেক্ট, একজন বিজ্ঞানী আবিষ্কারে আনন্দে আপ্লুত হয় আবার একজন বিধর্মী বা নাস্তিক আস্তিকতার প্রশান্তিতে আবেগাপ্লুত হয় কিন্তু যখন একজন ধার্মিক ধর্মের ভণ্ডামি ধরতে পেরে নাস্তিক হয় সে তখন হতাশ হয় আর যারা ধর্মান্ধ তাদের প্রতি করুণা বোধ করে।)

ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মে, বা নাস্তিকতায় কনভার্টদের গল্পে একটা জিনিস ই কমন, অহংকার। তারা জ্ঞানের এমন স্তরে পৌঁছে গেছে, যা বাকি সব ধর্মান্ধ, বর্বর জনগোষ্ঠী অর্জন করতে পারেনি, পারবেনা। তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশে থাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, ব্যঙ্গ, আর সুপেরিয়রিটি কমপ্লেক্স। এক্ষেত্রে তাদের কঠিন আত্মসংযম বা ত্যাগের কোন দৃষ্টান্ত থাকেনা, থাকেনা বিশাল কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জীবনের বিলাসী স্বপ্নগুলোকে বিলিয়ে দেয়ার কোন কার্যকারণ। দিন শেষে তাদের মৌলিক উদ্দেশ্য তো কেবল এই ই যে প্রবৃত্তির অনুসরণ, বা নফসের দাসত্ব। (ধার্মিকেরা মনে করে তারা সবজান্তা আর অন্য ধর্মের লোকজন সব গাধা আর নাস্তিকেরা তো চরম দুর্ভাগ্যের মধ্যে আছে। ধার্মিক বা নাস্তিক দু দলই নিজের অবস্থান নিয়ে গর্ব করে। ধার্মিকদের টা আত্মশ্লাঘায় পরিণত হয় আবেগের কারণে আর নাস্তিকদের অহং বোধ আসে অন্যদের মূর্খ মনে করে। যারা গোঁড়া ধার্মিক আর যারা গোঁড়া নাস্তিক দু দলই খারাপ ভাবে তাদের অহংকার প্রকাশ করে।)

অন্ধকার থেকে আলোতে আসার বা মিথ্যের জগত থেকে বহু দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে সত্যে আসার ইনিশিয়াল ফলাফল হচ্ছে আপনি অহংকারী না হয়ে বিনয়ী হবেন, নিজের জন্য কষ্ট হলেও, সত্যের পথে অন্যকে ডাকতে ত্যাগ স্বীকার করবেন। কিন্তু অন্য ধর্মে বা নাস্তিকতায় কনভার্টদের মাঝে এমন কোন নজির পাবেন না, ভুলেও না। কারণ তাদের পথটা মিথ্যা, আর মিথ্যার ইনিশিয়াল ইফেক্ট হচ্ছে অহংকারী বহিঃপ্রকাশ, আর মন যা চায় তাই করা, সেটা ভালো নাকি মন্দ তা নিয়ে বিচলিত হবার প্রয়োজন বোধ না করা।  (প্রতিটা ধর্মের লোকজনই ভাল ও মন্দর নিজ নিজ ব্যাখ্যা নিয়ে চলে, এমনকি নাস্তিকেরাও মানবতার কথা বলে তাদের ভাল মন্দের ধারনা ঠিক করে নেয়। প্রত্যেকের কাছে তার চিন্তা অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণের পথ। প্রত্যেকে যার যার মত বিনয়ী।)

অন্যদিকে ইসলামে রিভার্টদের মাঝে আপনি দেখতে পাবেন, সত্য পাবার সেই অমূল্য অনুভূতি, বিনয়ের সেই অসাধারণ বহিঃপ্রকাশ, আমিত্বের সকল প্রকার শির্ক কে বর্জন করে আত্মসমর্পণের ফিতরাতি স্বভাবে ফিরে আসার উপলব্ধি গত কান্না। সত্যের ফিতরাত ই এমন যে, তা আপনাকে যেমন ইন্টালেকচুয়ালি প্রভাবিত করবে তেমনি আপনার অন্তরের গহীনে লুকিয়ে থাকা সত্য খুঁজে পাবার আবেগকেও এড্রেস করবে। সত্যের নেচার ই হলো ত্যাগ, ত্যাগের মাধ্যমে সবচেয়ে আপন স্বত্বা কে কাছে পাবার বাসনা। অবিশ্বাস মানুষকে বাই ডিফল্ট শয়তানের মত অহংকারী বানায়, প্রবৃত্তির দাস বানায়। অন্যদিকে, ইসলামের আত্মসমর্পণ এর বিশ্বাস বাই ডিফল্ট মানুষকে বিনয়ী, পরোপকারী বানায়, নিজের ভুল, পাপ স্বীকারের মানসিকতা দান করে, ক্ষমা চাইতে উদ্বুদ্ধ করে।

সত্যের এই আবেদন অন্য কোন ধর্ম বা ধর্মহীনতার আদর্শে অনুপস্থিত, আর এটা সত্যকে চেনার অন্যতম এক বিশেষ ক্রাইটেরিয়া! (শেষের কথা গুলোয় ইসলাম বাদ দিয়ে যে কোন ধর্মের নাম বসালে এর ফাংশন একই ফলাফল দিবে। অর্থাৎ সকল ধর্মের মানুষের মানুষিকতা একই রকম তা জরথুস্তই হোক কিংবা বৌদ্ধ ধর্মই হোক সবার দাবি এই একই। নাস্তিকরা বিনয়ী নয় কিংবা সত্য খুঁজে পায় না কথাটা ঠিক না তারা তাদের মত বিনয়ী ও সত্য খুঁজে পেয়েছে বলে বিশ্বাস করে। নাস্তিক হোক বা ধার্মিক হোক সব বিষয়েই বাড়াবাড়িটা খারাপ আর আমাদের সমাজে ইদানীং মুসলিমদের বাড়াবাড়িটা বেশি চোখে পড়ে। তবে সেটা খোলস ইসলাম, মানে ইসলামের ফ্লেভার মাত্র। এখানে সুদখোর ব্যাংকার বেশী নামাজী হয়। ঘুষ অনেকে নিয়ে ভাবে তার এর জন্য আখিরাতে জবাবদিহিতা আছে তাই কাজটা করতে হবে, ইত্যাদি নানা মিশাল টাইপ মুসলিম ধর্মান্ধ লোকজনে ভরা এ দেশ। সৎ চিন্তা থেকেই সত্যকে খুঁজে পাওয়া যায় আবেগ দিয়ে নয়। ধর্মের ভাববাদে নিমজ্জিত অবস্থা থেকে বস্তুবাদের নাস্তিক মানুষগুলোকে বুঝতে পারবেন না তার জন্য ভাববাদ থেকে মাথা বের করে তার পর দেখতে হবে। ধার্মীকেরা যেমন বিধর্মীদের ধর্মের পথে আনতে চাচ্ছে তেমনি নাস্তিকেরা ধর্মের মোহাচ্ছন্ন লোদের মোহ মুক্ত করে মুক্ত মনা করতে চাচ্ছে। এই চাওয়া চাওইটাই অনৈতিক। আমারা বিভিন্ন সম্প্রদায় মিলে রাষ্ট্র গঠনের উপায় পেয়ে গেছি আর তা সফল ভাবে চলছেও, তাই এত চাওয়া  চাওইর আর দরকার কি? যার যার বিশ্বাস নিয়ে তাকে শান্তিতে থাকতে দিন। ) //

লেখাটা পোস্ট করার পর লিখেছিলাম “সকল প্রকার মুসলমানের প্রতি সমান স্রদ্ধা জ্ঞাপন করে উপরের বক্তব্য পেশ করলাম “। লেখাটা কার কার বিশ্বাসে আঘাত লাগতে পারে বলে লিখতে চেয়েছিলাম কিছু ভুল বলে থাকলে নিজ গুনে ক্ষমা করে দিয়েন। কিন্তু তা আর লিখি নাই কারণ আমার বক্তব্য কাউকে যদি আঘাত করে থাকে তবে সেটা তার সাম্প্রদায়িক মানসিকতায় আঘাত করবে যা’র বিরুদ্ধেই আমার মূল বক্তব্য। মজার ব্যাপার হলো আমার প্রত্যুতরে অতি প্রিয় লেখক ভাই কোন প্রতিবাদ করে নাই কিন্তু অন্য আরেকজন একের পর এক আঘাত করতে লাগলো, যাকে আমি ঠাণ্ডা মাথায় মোকাবেলা করেছিলাম। বাদ-প্রতিবাদ থেকেই সংবাদের সৃষ্টি হয়, যাকে বলে থিসিস<>এনটি থিসিস = সিনথেসিস। যদি ভদ্র ভাষায় বাদ প্রতিবাদ না হয় তবে নতুন সংবাদ বা উন্নত মানুষিকতা কোথা থেকে আসবে। তাই কারো বক্তব্যর প্রতিবাদের প্রয়োজন আছে, লক্ষ্য রাখতে হবে তা যেন ক্রিয়েটিভ ক্রিটিসিজম হয় ও ব্যক্তিগত ভাবে কাউকে আঘাত না করে । ইদানীং কালের টিভি টক শো গুলো তাই সামাজিক চিন্তাধারায় নতুন মতবাদ বা মনোভঙ্গি তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুখ বন্ধ করে থাকলে তো হবে না। যা কিছু অসংগতি সৃষ্টি করছে তার প্রতি ভাল মানুষিকতার মানুষগুলোকে সরব হতে হবে তা না হলে অশুভর কিংবা ভুল চিন্তা চেতনার জয় হবে আর তার প্রতিঘাত এক সময় না এক সময় আপনার উপরও এসে পরবে। আমরা এই সমাজেরই সন্তান, জন্ম নিয়েছি এখানেই আর এখানেই মরবো। আমাদের সন্তানেরা এখানেই বসবাস করবে তাই এই সমাজে যাতে সঠিক ও শুভ চিন্তার চর্চা হয় তার দিকেও আমাদের নজর রাখা উচিত বলে আমি মনে করি। বাদ প্রতিবাদ ভাল কিন্তু তা যেন ঝগড়ায় পরিণত না হয়। ভদ্র সমাজে তা হওয়াও উচিত নয়। পরের মতকে সহ্য করতে হবে তা ভাল হলে গ্রহণ করুন কিংবা তাকে তার ভুল গুলো ধরিয়ে দিন। আপনার চিন্তায় ভুল থাকলে তার সংশোধন করে নিন। পরমত সহিষ্ণুতা তাই একটা মহৎ গুন যা সমাজে কেবল মঙ্গলই বয়ে আনবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
 

এডিট ও আপডেট হিস্ট্রিঃ ১২মে২০২৩>১৮মে২০২৩>২০মে২০২৩>

Friday, May 12, 2023

গণতন্ত্রের "চার সীমাহীন স্বাধীনতার" কি আদৌ কোন প্রয়োজন আছে?

 

 হ্যাঁ গণতন্ত্র মতবাদের চারটি সীমাহীন স্বাধীনতা ১) ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ২) বিশ্বাসের স্বাধীনতা ৩) মালিকানার স্বাধীনতা ৪) মত প্রকাশের স্বাধীনতা এই চারটি স্বাধীনতার নিরঙ্কুশ অধিকারের কথা বলছি। আপনি কি মনে করেন একক ব্যক্তির ক্ষেত্রে এগুলো জীবন ও বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত? একটা সময় ছিল যখন আমি নিজে এই স্বাধীনতা চারটির বিরুদ্ধে অনেক কথা বলতাম ২০০২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত, মানে কম বেশী আট বছর। এই স্বাধীনতা গুলো হয়তো প্রয়োজনীয় কিন্তু এর সীমাহীন প্রকৃতি বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত নয় বলে মনে করতাম। আমি আমার নিজের বোধগম্যতা অন্যদের সাথে আলাপচারীতায় বলেছি যে এগুলো যদি সীমাহীন হয় তাহলে কেউ যদি আমার বন্ধুকে আমার সামনে অনৈতিকভাবে বকাঝকা করে তাহলে আমি নৈতিক ভাবে তার প্রতিবাদ করতে পারি না কারণ গণতন্ত্রে সেই ব্যক্তির বক্তব্য প্রকাশের বা মত প্রকাশের সীমাহীন অধিকার রয়েছে । তেমনি ভাবে যদি কেউ গাছ-লতা পাতাকে বা প্রকৃতিকে বিশ্ব সৃষ্টির অধিকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করে আচার অনুষ্ঠান পালন করে তবে তাতে আমার কিছু বলার থাকতে পারে না কারণ তার যে কোন কিছুতে বিশ্বাসের পূর্ণ ও নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা রয়েছে। কেউ যদি নৈতিক কিংবা অনৈতিক ভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে সেখানেও আমার কিছুই বলার থাকে না কারণ তার মালিকানার একছত্র অধিকার গণতন্ত্র সমর্থন করে। আর ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সীমাহীন হলে তো কথাই নেই যার যা খুশি তাই করবে, অন্য কার তাতে বাধা দেয়ার বা প্রতিবাদ করার কি-ই বা থাকতে পারে। বিষয়গুলি বুঝা আমাদের দেশে বা সমাজে অত্যন্ত সহজ হওয়ার কথা ছিল কারণ আমরা বাংলাদেশ নামক কম বেশী সেকুলার গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে বসবাস করে থাকি। কিভাবে একজনের আচরণ করা উচিত তার উপর গাইড লাইন থাকার প্রয়োজন রয়েছে। প্রশ্ন হল, কে সেই গাইড লাইনের সীমানা স্থাপন করবে? সামাজিক ঐকমত্য বা আমরা যাকে ইংরেজিতে কনসেনসাস বলি সেটি? আমি সামাজিক ঐকমত্যের উপর অতটা আস্থা রাখতে পারি না কারণ এটি সমাজ থেকে সমাজে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হওয়াটা স্বাভাবিক এবং কখনই একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ডে স্থির হওয়ার কথা না। কারণ এক গুচ্ছ সমাজবদ্ধ লোক অন্য গ্রামের আরেক গুচ্ছ লোক থেকে ভিন্নতর চিন্তা চেতনার হতেই পারে যা সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল বলে আমি বিশ্বাস করি। তাহলে কে স্থাপন করবে এই গাইড লাইন? কোন অথরিটি বা পরিষদ অবশ্যই থাকতে হবে যারা এই গাইড লাইনটা নির্ধারণ করে দিবে। তাই এই সীমাহীন চার স্বাধীনতা কিংবা অধিকারের সীমাবদ্ধতা মেনে নেওয়া সেই সময়ে ন্যায়সঙ্গত মনে হয়েছিল। আমি এই চার সীমাহীন অধিকার চারটির বিরোধিতা করে বলতাম এগুলোর সীমা থাকা উচিত আর তা হওয়া উচিত ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বা স্রষ্টা যা নির্ধারণ করে দিয়েছেন তা থেকে। আমি এখন ব্যাখ্যা করতে চাই কেন সময়ের সাপেক্ষে আমার বোঝার ক্ষেত্রটি ভিন্নতর হয়ে গেল। কেন আমি আজ এই চারটি নিরঙ্কুশ স্বাধীনতার স্বপক্ষে আমার মত প্রদান করতে প্রস্তুত।

 আজকের বাস্তবতায়, আমি দেখতে পাচ্ছি যে, সীমানা যদি সংকীর্ণ হয়ে যায়, এবং এটি যদি আমাকে সংকীর্ণ স্থানে ফেলে দেয় তবে কে আমাকে এর চাপ থেকে উদ্ধার করবে? উদাহরণ স্বরূপ ধরুন, কেউ এই শহরের তিনটি পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের মালিক যেখানে অনেকেরই অবস্থা এমন যে শুধু জমি কেনার চেষ্টা করছে যার উপর একটি বিল্ডিং দাড় করান যায় সমবায় এর ভিত্তিতে। হয়তো ওই বিপুল সম্পত্তি তার কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা অর্জিত হয়নি, সেটি তার পিতামাতার কাছ থেকে ওয়ারিশ সূত্রে অর্জন করেছেন । জনগণের মতামত হতে পারে, কেন তিনি এত কিছুর মালিক হবেন যখন তিনি কোন পরিশ্রম করে তা অর্জন করেননি এবং সরকার তাদের উপর নীতি প্রয়োগ করতে পারে যারা বংশগত ভাবে প্রাপ্ত হয়ে ও কিছুই না করে এত বেশি সম্পদের মালিক হয়ে গেছেন তাই তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পত্তি দরিদ্রদের জন্য ছেড়ে দেওয়া উচিত, অন্য কথায় অভাবীর দাবী বা হক হিসেবে । কিন্তু আমি নিজেই জানি কিভাবে আমার পিতামাতা দুজন তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে নিরাপদ রাখার জন্য ঘর তৈরি করতে এবং সম্পদ অর্জনের জন্য জীবনযাপনের সকল আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে তাদের পুরো জীবনের পরিশ্রম ব্যয় করে গেছেন। তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপত্তা। এখন নীতিমালার দোহাই দিয়ে কেউ কেউ তা দখলে নিতে চান? এটা কি ন্যায়সঙ্গত মনে করা যায়? আমার মতে এটি একটি নিষ্ঠুরতার কাজ। তাই যারা নিতি প্রণয়ন করেন তাদের বিষয়টা উল্টে পাল্টে সব দিক দেখে যাচাই করে তবে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা উচিত। আমি ছেলে হওয়ায় আমার চাচারা আমার বাবা মা’র রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগ নিতে পারে নি তখন তারা পথ বের করেছে যে আমার বাবা’র মা আমার দাদু বেচে থাকাকালীন বাবা মারা যাওয়ায় তারা তাদের মা’র ছয় ভাগের এক ভাগ সম্পত্তি পায় ও তা নিয়ে কত প্রচেষ্টা। ঘরের চেয়ার টেবিল গুলো পর্যন্ত তারা ছয় ভাগ এর এক ভাগ করার প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছিল। ভাগ্য ভাল যে আমার তিন সন্তানের শেষ সন্তান ছেলে তা না হলে আমার বাবার অর্জিত সকল সম্পদের উপর তারা অর্ধের ব্রাদারী হক জাহির করার জন্য উঠে পরে লাগতো। এমন নয় যে তারা অভাবী তার পরও তাদের লোভ কমতো না। আর ধর্মীয় বিচারে এরূপ ব্যবস্থা কখনই মানবতা সম্মত নয়। সময়ের সাপেক্ষে মানবতার ধারণার উন্নয়ন হয় কিন্তু ধর্ম তার নিজ জায়গায় স্থির থাকে তা সে দুই হাজার বছর আগের হোক কিংবা চোদ্দ শত বছর আগের হোক। আমার বাবা তার বাবার সম্পত্তি থেকে কিছু না নিয়ে নিজের পরিশ্রমে ও আমার মা’র সহযোগিতায় সম্পদ গড়েছে তাদের একমাত্র ছেলে ও তার সন্তানদের জন্য এখন কোন অধিকারে অন্যরা তার দাবি করার সামর্থ্য রাখে?

যদি আমরা মনে করি এই নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা গুলোকে সীমাবদ্ধ করব তাহলে এই সীমাহীন স্বাধীনতা সীমিত করার সঠিক মানদণ্ড কি হওয়া উচিত? মানুষের প্রকৃতি এমন যে তার পক্ষে একদম নিরপেক্ষ হওয়া কখনই সম্ভব নয়, নিরপেক্ষ বিচার মানুষের মনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। উদাহরণস্বরূপ যখন আমি আমার একমাত্র ছেলের দিকে তাকাই, এবং যখন আমি তার সমবয়সী অপরিচিত কোন ছেলের দিকে তাকাই, তখন বিচার সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়। তাই যদি আমরা নিরপেক্ষভাবে বিচার করি তাহলে আমি দেখতে পাচ্ছি যে এমন কোন সত্তা নেই যাকে এই দায়িত্ব অর্পণ করা যায়। হয়তো সময় আসছে যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক বিচার প্রক্রিয়া বিকশিত হবে, হয়ত তখন তা একশত ভাগ নিরপেক্ষ রায় দিতে সক্ষম হবে, আমি জানি না সেই সময়ে আমি কি বলতে পাববো। এটি এখন পর্যন্ত বর্তমান বাস্তবতা নয়।

আমার চারপাশের লোকেরা ধার্মিক এবং তারা ঐশ্বরিক আইন সম্পর্কে কথা বলবে এবং প্রশ্ন ছাড়াই তা মেনে চলবে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, আইনটি ঐশ্বরিক হওয়ায় কোনো সন্দেহর অবকাশ নেই যে এটি নিরপেক্ষ হবে। বিবেচনায় আনা যাক যারা দায়িত্বে আছেন তারা আধুনিক দিনের ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ, তারা এই পরিস্থিতিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন? তারা বলেন যে তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন কিন্তু তারা তাঁর আইনকে তাদের দৈনন্দিন কাজে প্রবেশ করতে দেন না। এমতাবস্থায় আমার মতো একজন সাধারণ ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ চরমভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়বে, ধর্মীয় ঐক্যমত্য তাদের সম্পূর্ণ ইচ্ছাশক্তি ও মালিকানার স্বাধীনতা কেড়ে নিতে পারে। আমি মনে করি না আমাকে অতীত থেকে প্রমাণ দিতে হবে, ইতিহাস নিজেই কথা বলে। এযাবৎ শুধুমাত্র দুটি স্বাধীনতা সম্পর্কে আমি উপরে আলোচনা করেছি, বাক স্বাধীনতা এবং মালিকানার স্বাধীনতা, এবার বাকি দুটোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা যাক।

বাকি দুটির সীমা নিরঙ্কুশ হলে বিষয়টি কি দাড়ায়? ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং বিশ্বাসের স্বাধীনতা, এগুলো কি প্রয়োজনীয়? উদাহরণস্বরূপ ধরুন যদি আমি ইব্রাহিমের ঈশ্বরে বিশ্বাস করি এবং আপনি একজন ব্রাহ্মণ হিসাবে ব্রক্ষ্মা কে ঈশ্বর বিশ্বাস করেন, এখন একটি সময়ে আমি আপনার বিশ্বাস সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গেলাম, কিংবা ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে গেলাম, আমি কি তা করতে পারি? এ সমাজে প্রশ্নটি করতেও আমি ভয় পাচ্ছি, এমনকি প্রশ্নটি টাইপ করার সময় আমি ভিতরে ভয় অনুভব করছি। সমাজ কি আমাকে তা করতে দেবে? আমি মনে করি আধুনিক দিনের নগর জীবনে এই প্রশ্নগুলি সমাধান করা হয়ে গেছে, তারা বলবে, কেন নয়, আপনি যা ইচ্ছা বিশ্বাস করুন, এটিকে বিশুদ্ধ ধর্মনিরপেক্ষতা (ইংরেজিতে সেকুলার) বলা হয়।, এমন একটি দেশে আমরা বসবাস করছি যা ধর্মনিরপেক্ষ দাবি করলেও বাস্তবতা হল যদি আপনি আপনার বিশ্বাস পরিবর্তন করেন, আপনি আপনার অধিকাংশ বন্ধু মহল, এমনকি আপনার পরিবারকেও হারাতে পারেন। আপনি যে সমাজের সাথে যুক্ত তাতে এবং এমনকি আপনার চাকরিতেও এটি একটি কালো দাগ ফেলতে পারে। মহাত্মা গান্ধী তাঁর অনুসারীদের চরম ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছিলেন, আমি তাঁর সম্পর্কে যতদূর পড়েছি, তিনি বলতেন, শুধুমাত্র অন্যান্য ধর্মীয় মতামত সহ্য করলেই চলবে না, এমনকি তাদের আলিঙ্গন করুন এবং তাদের মতো সমস্ত ঈশ্বরের আনুগত্য কিংবা সম্মান প্রদর্শন করুন। এটিই স্বাধীনতার স্তর যা তিনি ভেবেছিলেন সম্ভব। আমাকে জিজ্ঞাসা করুন আমি তা করতে পারি কিনা!! আমি এটি নিয়ে বার বার চিন্তা করেছি এবং সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলাম যে এটি আমার পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু সময়ের সাপেক্ষে বর্তমানে মনে হয় পারব যখন আমি জানি সকল ধর্মই আসলে মিথ বা মানুষের মন গড়া তাই যে কোন ধর্মোৎসবে অংশগ্রহণ করতে আপত্তি থাকার কথা না।

একটু গভীরে চিন্তা করলে দেখা যায় এটি কেবল অন্যের বিশ্বাসকে গ্রহণ করার বিষয় নয়, সমালোচনামূলক সংঘর্ষটি আচার-অনুষ্ঠান থেকে আসে, একজন গরু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বলি দেয়, অন্যজন মনে করে গরু তাদের ঈশ্বর বা মাতা, গোমাতা। এমনকি গরুর মল মূত্রও তাদের কাছে মহার্ঘ বা গো বর। প্রতিটি ধর্মীয় মৌলবাদী দাবি করবে যে তারা সঠিক পথে হাঁটছে এবং অন্যরা অস্বীকার করবে এই বলে যে তারা সম্পূর্ণ ভুল পথে হাঁটছে। আমি মনে করি না যে সুপার মার্কেটে কাপড় বা গহনা কেনার কেনার মতো করে ধর্ম কেনা উচিত। আমি মনে করি স্বাধীনভাবে জন্ম নেওয়ার জন্য, আমার কিছু জন্মগত অধিকার আছে, আমার বাতাসে শ্বাস নেওয়ার অধিকার আছে, কথা বলার বা এমনকি চিৎকার করার অধিকার আছে, আমি চাই আমার শক্তি এবং সামর্থ্য দিয়ে আমার সম্পদ সংরক্ষণ ও রক্ষা করার অধিকার, তা যতই হোক না কেন, আমার সামর্থ্য যতটুকু দখল করতে পারে ততটুকু অধিকার করার অধিকার আমার আছে, এবং যদি আমি কিছু বিশ্বাস করি তবে আমার বিশ্বাসকে আপনার সম্মান করা উচিত। আমি মনে করি চারটি স্বাধীনতাই মূলত ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং এর উপর সীমাবদ্ধতা বা কারো কোনো কর্তৃত্ব থাকা উচিত নয়। আমি জানি না আপনারা কি বলবেন, তবে আপনি যাই বলবেন না কেন, আমি সেটিকে আপনার কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতা হিসাবে গ্রহণ করব এবং আপনাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টাও করব না। আপনার প্রতি অনুরোধ আমার চার স্বাধীনতাতেও আপনি অযথা হস্তক্ষেপ করবেন না আর করলেও আমার অনুমতি নিয়ে করবেন। এই চারটি স্বাধীনতা মানুষ হিসেবে আমার জন্মগত অধিকার তাই মানবতার খাতিরে এগুলোকে সীমাহীনই থাকতে দিন যতক্ষণ না তা আপনার ক্ষতি করছে। এদেশের মানুষ না গণতন্ত্র বুঝে, না ধর্ম নিরপেক্ষতা বুঝে? অধিকাংশ অশিক্ষিত হওয়ায় এদেশের সংবিধানের তিন মূল ধারা সম্পর্কেও তাদের জ্ঞান সীমিত। এই অবস্থাটি এ দেশের শিক্ষিত সমাজে হওয়া উচিত নয়। অতিমাত্রায় ধর্মান্ধদের ও কুসংস্কার আচ্ছন্নদের এদেশের সরকার কঠোর হস্তে দমন করুক তাই আমাদের কামনা হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সরকারের পাশাপাশি এ বিষয়ে জনমত গড়ে তোলাও এ দেশের শিক্ষিত সমাজের কর্তব্য।
 

Edit and update history: 11dec2018 translated to Bangla on 3apr23> 13may23 >