প্রশ্নঃ03 30নভেম্বর2020> ধন্যবাদ বন্ধু। তুমি কনভেনশনাল ব্যাংকিং এর ব্যাখ্যা দিয়েছো, এবার ইসলামি ব্যাংকিং এ রিস্ক নিয়ে কিভাবে লাভ এবং লস হয় সেটার ব্যাখ্যা দাও এবং সেটার সাথে কনভেনশনাল ব্যাংকিং এর পার্থক্যটা কোথায়, সেটা ব্যাখ্যা করো। (প্রশ্নকর্তা ডা. তমাল আমার ছোটবেলার বন্ধু এখন লন্ডনের বড় ডাক্তার) ওঁর প্রশ্নটা প্যারাফ্রেজ করলে দাড়ায় অনেকটা এরকমঃ এখানকার ইসলামী ব্যাংক গুল যে ব্যবসা করে তার সাথে কনভেনশনাল ব্যাংকিং এর ব্যবসার মূল পার্থক্যটা কোথায়?
আমার উত্তর 04ডিসেম্বর২০> ব্যবসা মাত্রই তাতে রিস্ক থাকবেই, কথায় বলে যত রিক্স তত লাভ বা নো রিস্ক নো গেইন। কনভেনশনাল ব্যাংক গুল সরাসরি বাজারে ব্যবসা করতে পারে না। আইন করে বাধা দেয়া আছে যে সে সরাসরি ব্যবসায় ইনভল্ভ হতে পারবে না। তাকে তার কোন ক্লায়েন্ট এর মাধ্যমে ব্যবসা করতে হবে। এর মানে হল, সে তার ক্লায়েন্ট এর সাথে ব্যবসায়িক চুক্তিতে আবদ্ধ হবে শুধু মাত্র টাকা লেনদেনে কিন্তু ব্যবসায় হস্তক্ষেপ বা তদারকির অধিকার ছাড়া। তার তা দরকারও নাই, সে টাকা দিবে ক্লায়েন্টের কোম্পানিকে, সে সেই টাকা নির্ধারিত সময় মোতাবেক লাভ সহ ফেরত দিতে বাধ্য, এখানে লাভ লস হল কি না হল তা কনভেনশনাল ব্যাংক এর দেখার বিষয় না। চুক্তিটা হল টাকা নাও, বছর শেষে লভ্যাংশ দাও, লস করলেও দাও যা কথা দিছ। এখন আস ইসলামী ব্যাংকের ব্যবসার ধরণে, ইসলামী ব্যাংক এর মূল নীতিই হল ব্যবসার মাধ্যমে টাকা বৃদ্ধি করা বা টাকা বানান। তাই ইসলামী ব্যাংক সরাসরি বাজারে ব্যবসায় অংশ নিতে পারে। এখানে গ্রাহক বা ক্লায়েন্ট মুদারিব অর্থাৎ দক্ষ ব্যবসায়ী আর ব্যাংক হল সাহেব-আল-মা’ল, টাকার বা ফান্ডের বা ক্যাপিটালের অংশীদার এবং চুক্তি মোতাবেক সে ব্যবসায় অংশগ্রহণও করতে পারে আবার স্লিপিং পার্টনার এর মত না’ও পারে। তবে সে ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত। বেকল টাকা দিয়ে খালাস তা নয়। সে একজন ব্যবসায়িক অংশীদার, হতে পারে কোন কোন ক্ষেত্রে স্লিপিং পার্টনার, কিন্তু কনভেনশনাল ব্যাংকের মত সে ক্লায়েন্টকে এই শর্তে টাকা দেয় না যে, যা খুশি কর বছর শেষে লভ্যাংশ দিতে তুমি বাধ্য। বরং ইসলামী ব্যাংক যখন তার ক্লায়েন্ট এর সাথে ব্যবসায়ী সম্পর্কে আবদ্ধ হয় তখন শর্ত থাকে যে ব্যবসায় যদি লস হয় তবে তা ব্যাংক বিবেচনায় আনবে। এই কারণেই বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকের প্রথমদিককার মুশারাকা (যৌথ কারবার) গুল সব লসে গিয়ে এই ভাবে যৌথ কারবার বা মুশারাকা প্রডাক্ট গুলর মাধ্যমে বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। বরং এখন বাই মোয়াজ্জল (বাকিতে বিক্রয়) কিংবা এইচপিএসএম (ভাড়ায় বিক্রয়) এই সব নীতিমালার উপর প্রডাক্ট প্রণয়ন করা হচ্ছে। সাধারণ জনগণের কথা হল যদি লস স্বীকার করে নেয়া হয় তা হলে কি ব্যাংক টাকা দিবে? টাকা নিয়ে যদি মুদারিব উইন্ডো ড্রেসিং করে ফাইনাল একাউন্টে লস দেখায় যা আসলে ভুয়া, তখন ইসলামী ব্যাংকের কি অবস্থা হবে। তা কি তারা মেনে নিবে? এর উত্তরে বলতে হয়, পদ্ধতি গুল কি, এ দেশে মুশারাকা অকার্যকর প্রমাণ হয়ে গেছে, কারণ এখানকার মানুষের লুকানর প্রবণতা বা উইন্ডো-ড্রেসিং করার প্রবণতা অনেক বেশী। যদি মুদারাবা (ফান্ড এর মালিক ব্যাংক [সাহেব আল মা’ল] ও ব্যবসায়ী হল ক্লায়েন্ট [মুদারিব]) এই পদ্ধতিতে ব্যবসা করা যায় তবে জামানতের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক গুল ভাল ব্যবসা করতে পারবে। এখন কথা হল সেদিন স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ফয়সাল ভাই ফট করে বলে বসল জামানত নেয়া নাকি ইসলামে হারাম বা ইসলামে জামানত নেয়ার প্রচলন নাই, আমি অবাক হলাম, আমি নিজেই হাদিস পড়ছি যেখানে নবীজি ঘোড়ার লাগাম বন্ধক রেখে টাকা ধার নিয়েছিলেন বলে বলা আছে আর আমরা নব্য মুসলমানরা ফতোয়া দিচ্ছি জামানত নেয়া যাবে না। তাহলে তা কি যুক্তিতে খাটবে? জামানত টা কেন নেয়া হল? এটা রিস্ককে হালকা করে বা কোন কোন ক্ষেত্রে রিস্ক নাই করে দেয় বলে? এখন যদি চুক্তি থাকে যে আমি ব্যাংক সাহেব আল মাল তুমি মুদারিব আমার টাকা নিলা ব্যবসা করার জন্য। ব্যবসাও করলা, প্রথম বছর লাভ দিলা চুক্তি মত 50:50 কিন্তু পরের বছর তোমার লস হল, সেই লসও আমি মানলাম চুক্তি মত 50:50 বা চুক্তিতে যা ছিল, ধরা যাক তুমি রাজি হইছিলা লস হলে 40:60 হবে তাই মানলাম তার পরের বছর তুমি বল্লা বা আমিও দেখলাম লস হল এত বেশি যে আমার আর তোমার ব্যবসায় টাকা খাটাতে ইচ্ছা হল না, তখন চুক্তি মোতাবেক আমি আমার মূল টাকাটা ওই বন্ধক বা জামানত হতে তুলে নিতে পারব, এই হল ইসলামে জামানতের মাধ্যমে টাকার লেনদেন বা মুয়ামালাত। এটা বুঝতে হবে যে, আমি কিন্তু লাভ হিসাব করে ওই জামানত থেকে টাকা তুলতে পারব না, যা দিয়েছিলাম মূলধন বা মূল টাকা, সেইটা তুলতে পারব। কনভেনশনাল ব্যাংক হলে সুদাসলে মুনাফা হিসাব করে টাকাটা তুলে নিত, তা ইসলামী ব্যাংক করবে না বা করতে পারে না। যদি জামানত থেকে পুর টাকাটা তুলা না যায় তা হলে বাকি টাকা ছাড় দেয়ার (এহসান করার) বিধান ইসলামী ব্যাংকে আছে। উদাহারন দেই, তুমি বন্ধক রেখেছিলা যে ফ্ল্যাট-টা তা ডেপরিসিয়েট করে বিক্রয়মূল্য কমে গেছে এখনকার বাজারে অথবা যে স্বর্ণালংকার তুমি বন্ধক বা জামানত রেখে টাকা নিয়েছিলা তা’র মূল্য কমে যাওয়ায় যে টাকাটা আমি তোমাকে ধার দিয়েছিলাম তোমার ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য তার তুলনায় এখন কমে গেছে জামানতের বিক্রয়মূল্য। তখন বাকি টাকা ইসলামী ব্যাংক এহসান করে দেয়। কনভেনশনাল ব্যাংকও এ রকম করে ক্লাসিফায়েড লোনের ক্ষেত্রে যেমন সুদ মৌকুফ করে দেয় বা রাইট অফ করে। ওরা সুদ মৌকুফ করে ক্লাসিফায়েড লোনের আর ইসলামী ব্যাংক সুদারোপই করে না মৌকুফ করবে কি? ও’রা মৌকুফ করে আর ইসলামী ব্যাংক এহসান করে। তুই এখন বলবি এটা শুধু কথার মারপ্যাচ, দুটা আসলে একই? মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ, কিন্তু তাই কি? সুদাসল ধার্য করে সুদটা মাফ করা আর মুল টাকাটা উঠাতে গিয়ে পুরটা উঠাতে না পেরে বাকিটা মাফ করে দেয়া কি এক? দুই বার চিন্তা করবি উত্তর দেয়ার আগে। সে মুদারাবা চুক্তি বাতিল করে টাকাটা তুলে নেয় মাত্র, অতিরিক্ত তুলতে পারে না কারণ অতিরিক্ত তুললে তা সুদ হয়ে যাবে তাই বিক্রয়মূল্য বেশি হলে অতিরিক্ত টাকা তাকে চ্যারেটি বা সাদাকা করে দিতে হয়। প্রত্যেক ইসলামী ব্যাংকের স্কুল, হসপিটাল আছে, এগোল চলে কি দিয়ে? এই সাদাকার টাকা দিয়ে। জাকাতের টাকা তো স্কুল বা হসপিটালে দেয়া যায় না। ইসলামী ব্যাংকের হসপিটাল, স্কুল গুল চলে এই এহসানের বা জামানতের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে। ইসলামী ব্যাংক বলতে পারত, তুমি মিয়া আমারে খালি লস দেখাইতাস, আমি মানি না আমারে হিসাব কইরা প্রতি বছর লাভ 50:50 পারসেন্ট দিতে হইব। তা কিন্তু ইসলামী ব্যাংক বলবে না। উপরের যা আলাপ করলাম তা থেকে তমাল কি বুঝতে পারছিস, দুর থেকে দেখতে দুটা ব্যবস্থা প্রায় একই রকম কিন্তু কাছ আসলে বুঝা যায় একটা জুলুম করে না আর আরেকটা জুলুম করে টাকা আদায় করে। দোস্ত, দুর থেকে কাশ বন সব সময় ঘনই মনে হয় কিন্তু কাছে আসলে সব পরিষ্কার বুঝা যায়। তোমাকে ইসলামী ব্যাংকিং এর আর কাছে আসতে হবে, তখন সব পরিষ্কার বুঝতে পারবি।
প্রশ্নঃ 02: 29অক্টোবর2020> স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পুরটাই ইসলামী ব্যাংকে কনভারসন হওয়ার অনুমোদন পেয়েছে। আচ্ছা এটা তো ঠিক যে, সব ইসলামী ব্যাংকের কেউই পুরপরি ইসলামী শরিয়া সম্মত কাজ করতে পারছে না, জোড়া তালি দিয়ে চলছে, যাতে আখিরাতে অন্তত বলা যায় আমরা চেষ্টা করেছিলাম, অন্তত যাতে শেষ রক্ষা হয়? স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ফয়সাল ভাই বলছিলেন ফোন কনভারসেশনে। উনি জনতা ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক হয়ে এখন স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে কর্মরত আছেন।
আমার উত্তরঃ ফয়সাল ভাই আমার কমনওয়েল্থ এমবিএ ব্যাচ-মেট, আমরা দুজনেই প্রথম ব্যাচের গ্র্যাজুয়েট, আমাদের সম্পর্কও খুব ভাল, কিন্তু তার কথায় সবসময় একটা প্যাঁচ থাকেই, এটা তার কথা বলার ধরণ। ধরণটা যদিও আমার দেশের বাড়ী বিক্রমপুর আধুনা মুন্সিগঞ্জ এর কপিরাইট প্রবণতা তাই আমার মধ্যে ওটা না থাকলেও আমি ঠিকই ধরতে পারি এই উস্কে দেয়া কথার ভঙ্গি। মনিপুরি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মহোদয়ের সাথে টেকনোকিড্স এর ক্যানাডিয়ান কম্পিউটিং ফর কিডস প্রডাক্ট গুল নিয়ে আলোচনার সুযোগ হয়েছিল একবার,। উনার সম্পর্কে আগে থেকেই আমাকে জানান হয়েছিল যে উনি কাউকে পরীক্ষা করতে চাইলে প্রথমেই তাকে কথার মারপ্যাচে গর্তে ফেলে দেন। সে যদি ওই গর্ত থেকে উঠতে সক্ষম হন তবে সে যোগ্য তা না হলে নয়। কাউকে উসকে দিয়ে কথা বলার প্রবণতা মনে এই মন ভঙ্গির একটি বিবর্তিত ধাঁরা। সে যাই হোক, আমি যতই বুঝাই ফয়সাল ভাইকে যে, তার ধারণা সঠিক নয়, ইসলামী ব্যাংকাররা জোড়া তালি দিয়ে একটা ব্যবস্থা চালু রেখেছে, বিষয়টা এমন নয়, তা’ও উনি উনার চিন্তাধারায় অটল থাকতে চান। অবশেষে বলেছিলাম, যে বিষয়ে আপনি পুরোপুরি বিশ্বাস বা আস্থা রাখতে পারছেন না সে ব্যবস্থা জনগণের জন্য আপনি অফার করতে পারেন না, করাটা উচিতও না। আগে পুরপুরি নিশ্চিত হন তার পর তা বাস্তবে প্রয়োগ করুন। আর যদি আপনার এই ইসলামী ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির কোন প্রডাক্ট সম্পর্কে সন্দেহ দুর না হয়, তবে তা সবিস্তারে আমাকে প্রদান করুন আমি পুর ইন্ডাস্ট্রিতে ঝড় তলে তা ঠিক করে দিব। আমাদের প্রডাক্ট গুল যখন ডিজাইন করা হয় তখন তা শরিয়া কমপ্লাই করে কি না তার এসিড টেস্ট করে নেয়া হয় তার পরই ওই সুদ মুক্ত ভেকসিন বাজারজাত করণ করা হয়। বিষয়টা এত সস্তাও না আবার সহজও না। আমার দৃঢ় কথনের পর ফয়সাল ভাই কিছুটা নমনীয় কণ্ঠে জানাল তাদের চেয়ারম্যান অনেক কষ্ট স্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংক এর গভর্নর এর কাছ থেকে ইসলামী ব্যাংকিং এ পূর্ণ কনভারসনের অনুমোদন এনেছে, এখন এটা না চালু করে উপায় নাই। আমি জানালাম আমাদের কাছে খবর আছে যে উল্লেখিত ব্যাংকটির কিছু কিছু কর্মকর্তা ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করেন, খবরটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স থেকে পাওয়া গিয়েছিল গত বছর, যখন ওখানে উইন্ডোতে ইসলামী ব্যাংকিং সফ্টওয়ার হিকমা ব্যবহার করা হতো, আমরাও ইরা ইনফো টেক এর একই হিকমা সিবিএস ব্যবহার করে উইন্ডো চালাতাম। ফয়সাল ভাই এর কথায় সেই তথ্যর সত্যতা আর ভাল ভাবে প্রতিষ্ঠিত হল। অদ্ভুত বিষয় এই যে, ইসলামী ব্যাংকিং নিয়ে কনভেনশনাল ব্যাংকারদের মধ্যে এই দোনমনা ভাবটা অত্যন্ত প্রকোট আর অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। এটা তাদের দোষ না, তারা যাদের গুরু মেনে ব্যাংকিং শিখেছে হটাত করে তাদের বিরুদ্ধ কোন মতবাদ তারা সহজ ভাবে মানতে পারেন না বলেই আমার মনে হয়েছে।
প্রশ্নঃ 01: ইসলামীক শরিয়ার কয়েকটা নাম ব্যবহার করে এখানকার ইসলামী ব্যাংক গুল মানুষের গলা কাটছে। কনভেনশনাল ব্যাংকিং এর সাথে মূল পার্থক্যটা কোথায়?
02নভেম্বর2020 (প্রশ্ন করেছিল তমাল আমার ছোটবেলার বন্ধু এখন লন্ডনের বড় ডাক্তার)
আমার উত্তর 04নভেম্বর২০২০> পদ্ধতি আর তার প্রয়োগ, থিওরি আর বাস্তবতায় তার প্রয়োগ (theory into practice), এখানটায় একটা বিরাট চ্যালেঞ্জে আছে। তমাল তোর সাথে সেদিন আলাপ করার সময় কথা কেটে যাচ্ছিল বলে তেমন কিছু বলতে পারি নাই আর তুমি মিয়া মনে করছিলা তর্কে জিতা গেছ। শুন তুমি যেমন ডাক্তার ডাক্তারি বুঝ, আমিও তো ব্যাংকার ব্যাংকিং বুঝি, এইটা তো মান? তোমার কথা হল ইসলামী ব্যাংকগুলা সব ধোঁকাবাজি করছে আর মানুষকে বোকা বানাচ্ছে, তা’ই যদি হতো তা হলে আমরা বিনা মার্কেটিং-এ কোটি কোটি টাকা আমানত পেতাম না। খটকাটা তা হলে কোথায়? প্রথম কথা হচ্ছে, ইসলামী ব্যাংকিং একটা ব্যাংকিং প্রক্রিয়া, থিউরি হিসেবে একদম সাউন্ড। পুরাপুরি শুদ মুক্ত কিন্তু যারা এটা মার্কেটে প্লে করছে তাদের প্র্যাকটিসে গলদ থাকতেই পারে, তুমি তাই দেখছ আর পুর সিস্টেমটাকে দোষারোপ করছ।
মুদারাবা, মুশারাকা, বাই-মুয়াজ্জাল, সালাম এগুল সবই শরিয়া সম্মত ব্যবস্থা এ সকল ট্রেনজেকশান (আরবিতে মুয়ামালাত) এ কোন সুদ সৃষ্টি হয় না। সবার আগে বুঝতে হবে কি ভাবে লেন-দেনে সুদ (অনৈতিক ভাবে টাকার আদান প্রদান) সংঘটিত হতে পারে। সুদ দু ভাবে সৃষ্টি হতে পারে [সুদ দুই প্রকার] এক) যদি দেনাদার-পাওনাদার এর মধ্যকার চুক্তি এ রকম হয় যে, একজন টাকা ধার নিল এই শর্তে যে নির্দিষ্ট সময় পর সে যা নিয়েছে তার অতিরিক্ত প্রদান করতে বাধ্য। এই ঝুঁকি মুক্ত করে টাকা বিনিয়োগ ও তা ফেরত পাওয়ার বাধ্যবাধকতাটাই সুদ, অর্থাৎ ঝুঁকি না নিয়ে টাকা ধার দিলে বা নিলে তা সুদ সৃষ্টি করবেই। সম্পদের মালিক আল্লাহ (সুবহানাওয়াতায়ালা) তিনি সেই সম্পদ যাকে ইচ্ছা তাকে দিবেন, সেখানে তোমার তা আঁকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা কেন? একে বলে রিবা-আন নেসাই (সময় সাপেক্ষে যদি টাকা বৃদ্ধি পায় কোন বিনিয়োগের ঝুঁকি ছাড়াই)। (দুই) কেউ কার কাছে এক বস্তা খেজুর রাখল বিনিময়ে সময় সাপেক্ষে বা সময়ের হিসাব গুরুত্বে না এনে সে বেশি দাবি করল বা কম পেল বা নিম্ন মানের খেজুর পেল তা হলেও তা সুদ বা রিবা বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ পণ্যর মানের হেরফেরে করে লেনদেন করলে বলে রিবা আল ফাদাল। এ দু ধরনের লেন-দেন চুক্তি ইসলামে সম্পূর্ণ রূপে হারাম বা নিষিদ্ধ। এছাড়াও আর দুভাবে সুদ সৃষ্টি হয়, (1) বৈদেশিক মুদ্রার চল কে ইসলাম মানে না, সকল দেশে একই মুদ্রা ব্যবস্থা থাকবে, আর তা হবে স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক, তাই বর্তমানের বৈদেশিক মুদ্রার দেশিয় মুদ্রায় কনভার্সনের মাধ্যমে সুদ সৃষ্টি হয়, (2) আরেকটি হল, আরোপিত মুদ্রাস্ফীতির মাধ্যমে, সরকার যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে মুদ্রাস্ফীতি ঘটায় (এরকম হয়েছিল একবার বহু আগে লন্ডনেই) তা হলেও সুদ সৃষ্টি হয়।
ইসলামিক ইকনমি আর ধন-তান্ত্রিক (ক্যাপিটালিষ্ট) ইকনমির মূল পার্থক্য হল, একটা অপরটির সম্পূর্ণ বিপরীত। ক্যাপিটালিষ্ট ইকনমি বলে সঞ্চয় কর ও ক্যাপিটাল ফর্ম কর তার পর বিনিয়োগ কর। আর ইসলামিক ইকনমি বলে একদম সঞ্চয় না কর (সব টাকা বিনিয়োগ কর), করলে বিপদ, বরং পুর টাকাটাই বাজারে খাটাও। আর এ কারণেই ইসলামিক ব্যবস্থায় টাকা সঞ্চয়ের জন্য কোন ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রচলন করা হয় নাই। বরং বায়তুল মাল এর ট্রেজারি ফাংশন এর প্রচলন করা হয়েছিল যা ওমর (রাঃ) এর সময় পূর্ণাঙ্গ একাউন্টিং এর আদল পায়। এখন ক্যাপিটালিষ্ট ইকনমির মধ্যে যদি ইসলামিক ইকনমির একটা ব্যবস্থা চালনা করা হয় তবে কোন যুক্তিতে তা সফল হবে? তাকে তো স্রোতের বিরুদ্ধে চলতে হচ্ছে। এই বিরুদ্ধে চলতে চলতেই তাকে ক্যাপিটালিষ্টিক ব্যবস্থা গুলর সাথে প্রতিযোগিতাও করতে হচ্ছে। তাই এর প্রডাক্ট গুল দেখতে প্রায় একই রকম মনে হয়। এক গ্লাস জিন আর এক গ্লাস পানি দু-টাই বর্ণহীন ও দেখতেও এক রকম কিন্তু তা এক জিনিস না ?
মূল পার্থক্যটা লেন-দেন চুক্তির মধ্যে ধরা পরে। ব্যবসা তো উভয়ই করবে কিন্তু লেন-দেন চুক্তি ও ঝুঁকির বিষয়টা দুটি ব্যবস্থায় একেবারেই ভিন্ন মাত্রার। ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সুদি ব্যবসা প্রসার লাভ করবে কারণ তা স্রোতের টানে চলছে আর স্রোতের বিপরীতে চলা ইসলামী ব্যাংকিংকে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হচ্ছে। তাই বলে ইসলামী ব্যাংকিং এর নাম ভাঙ্গায়ে যদি কেউ ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনুকরণে সুদি ব্যবসার মত আচরণ করে তবে তা পুরপুরি ধোঁকাবাজি। কিন্তু এতে ব্যাংক গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না আখিরাতে, কারণ তার নিয়তে কোন ভুল নাই কিন্তু ব্যাংকর ব্যাটা ফেঁসে যাবে ও অনন্ত কাল আগুনে জ্বলবে।
এখন তোর কথায় আসি, ইসলামী ব্যাংক গুলা মুদারাবা, সুকুক, হাদিয়া এই সব টার্ম ব্যবহার করে মূলত কনভেনশনাল ব্যাংক গুলর মতই এমনকি আর খারাপ ভাবে গ্রাহকদের মাথায় কাঠাল ভাংছে। আমার কথা হল আমি কোন চুক্তিতে ব্যাংকের কাছে টাকা রাখছি বা নিচ্ছি, সেটা কি ইসলাম সম্মত, অর্থাৎ সেই স্কিমটা কি শরিয়া কম্পলায়েন্ট কি না? যদি তা শুধু খাতা কলমে হয়ে থাকে তবে আমি অবশ্যই তাতে চুক্তিবদ্ধ হব না। এখন আমাদের দেশে শরিয়া কাউন্সিল আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের, আমাদের ইনটারনাল শরিয়া অডিটও হয়, ও’রা দেখে আমরা প্রত্যেকটা স্কিম শরিয়া বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী পালন করছি কি না। যদি তা না করা হয় তবে আমাদের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। তাই আমরা কখনই নীতিমালা’র বাইরে যাই না। নীতিমালা গুল কি শরিয়া সম্মত তা দেখবে আমাদের শরিয়া বোর্ড, যেখানে ইসলামী জ্ঞান সম্পন্ন ও বহুল পরিচিত ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। সমস্যা হল আমাদের শরিয়া বোর্ড এর সম্মানিত সদস্য ব্যক্তিবর্গ এর মধ্যে। তাঁরা অধিক ইসলামী জ্ঞান সম্পন্ন হলেও সাম্প্রতিক বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থা, মুদ্রানীতি, অর্থনীতি ও আধুনিক ব্যবসার বিষয়ের জ্ঞানে ঘাটতি বা অনীহা আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলা আমাদের জন্য যদিও বেয়াদবি তার পরও বলব আছে বলেই মনে হয়। বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের বা মুসলিম উম্মায় যে অধঃপতন ও পরাজয় তা কিন্তু না বললেও খালি চোখেই ধরা পরে, যেমন বেনামাজি কিন্তু জাকাত ঠিকঠিক দিচ্ছে। ঘুষ খাচ্ছে আবার বছর বছর হজ্জ করছে। মারাত্মক রকম অধঃপতন ঘটে গেছে মুসলিম উম্মায়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এটা বুঝা খুব শক্ত নয় যে অনেককেই হয়ত পাওয়া যাবে যারা ইসলামের নাম ভাঙ্গায়ে অনৈতিক ব্যবসা করছে। সেই দিক থেকে তোর অবজারভেশন মনে হয় ঠিকই আছে। শেষে তাই বলব, এই সব নিয়েই আমাদের দিন রাত্রি চলছে আবার সংগ্রামও চলছে। <>
ধন্যবাদ বন্ধু। তুমি কনভেনশনাল ব্যাংকিং এর ব্যাখ্যা দিয়েছো, এবার ইসলামি ব্যাংকিং এ রিস্ক নিয়ে কিভাবে লাভ এবং লস হয় সেটার ব্যাখ্যা দাও এবং সেটার সাথে কনভেনশনাল ব্যাংকিং এর পার্থক্যটা কোথায়, সেটা ব্যাখ্যা করো
ReplyDeleteঠকি আছে ব্যাখ্যা দিব, তার আগে ফয়সাল ভাইয়ের প্রশ্নটার জবাব প্রায় রেডি হয়ে গেছে, ওটা দিয়ে তোর নতুন প্রশ্নে চলে আসব।
Delete