মনের স্বাধীন ইচ্ছা বা ফ্রি-উইল এর সমগ্রই তো মানুষের মন আর সেই সকল ইচ্ছা পূরণই তার মানসিক সন্তুষ্টি বা প্রশান্তির নিয়ামক। এই ইচ্ছা পূরণ কত গুল ঘটনার ফলশ্রুতি যা একটার সাথে পরেরটি সম্পর্কযুক্ত। ঘটনার যোগসূত্র সম্পর্কে, সেই কবে মনে নাই বিটিভি’র একটি নাটক ”মহাকালের ঘোড়সওয়ার” দেখেছিলাম ওখানে এ প্রসঙ্গটা আনা হয়েছিল । একটি ঘটনা পরবর্তী প্রচুর ঘটনার কার্জ কারণ হতে পারে আর ওই ঘটনাটিও হয়ত আগের বহু ঘটনার ফলে ঘটে থাকবে। ঘটনা গুল দৈব সংঘটন না কি আগে থেকেই নির্ধারিত অদৃষ্টের লেখন সে নিয়ে প্রচুর বাদ প্রতিবাদ করা যেতে পারে। ও দিকে বক্তব্যকে নিতে চাচ্ছি না, ওসব আলোচনা অতি পুরাতন আর অতি সাধারণ, তার চেয়ে বরং বাস্তবতা থেকে শুরু করি।
ঘটনা-দুইঃ অনেকদিন হয়ে গেল দেশের বাড়ীর একটা জমির নাম জারি করা হচ্ছে না, তাই এবার নিজেই উদ্যোগ নিয়ে কাগজটা উঠাতে গেলাম। অফিস খোলার দিন যেতে হবে কিন্তু ব্যাংকের চাকরীতে ছুটি পাওয়া কঠিন, বসেরা পদ্মার ইলিশ ইলিশ করছিল, আমার দেশের বাড়ি পদ্মা পাড়ে মৌছা গ্রামে, লৌহজং আর মাওয়া’র কাছেই পদ্মার মাছের আড়ত, তাই আমি ইলিশ মাছ আনার ব্যবস্থা করে দিব বললাম। হঠাৎ মনে হল, দুটা ঘটনা এক করে দিলেই তো হয়। মাছ আনতে যাব আর মুন্সিগঞ্জ সদর কোর্ট থেকে কাগজটাও উঠায়ে আনব। রথ দেখা কলা বেচা সমীকরণ। সবাই রাজি হল আর আমিও খালেক ভাইকে বগলদাবা করে রওনা হয়ে গেলাম, মাওয়া হয়ে মাছ নিয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর হয়ে অফিসে আসা। দূরত্বটা যে এত লম্বা হবে আগে বুঝি নাই, তবে দুপুর দুইটার মধ্যে অফিসে পৌছাতে পেরেছিলাম। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখি কোর্ট অর্ডারে সবার নাম ঠিকই আছে শুধু আমার নামটায় ভুল। মোস্তফা সার্জিলের জায়গায় লিখেছে মোস্তফা জামিল। সার্জিল কোন বিচারে জামিল হতে পারে এটা আমার মাথায় ঢুকল না। কাছাকাছি ভুল হতে পারত, না একদম অন্য একটা নাম। এই ঘটনাটিকে কি ভাবে ব্যাখ্যা করব এখন। দেশের বাড়িতে হঠাৎ যাওয়ার ইচ্ছাই বা হল কেন? ওই জমি নিয়ে এতদিন মাথা বেথা তেমন একটা করি নাই, যা হওয়ার তা হচ্ছে, চাচা তো কাজটা উকিল দিয়ে চালায়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাই চুপচাপ বসে ছিলাম, হঠাৎ আমার বিষয়টাতে সক্রিয় অংশ গ্রহণের ইচ্ছাটা হল কেন? আমার নামটা যে কোর্ট অর্ডারে ভুল এসেছে তা কি আমি জানতাম?
ঘটনা-তিনঃ প্রায় বছর খানেক আগে এক বৃদ্ধ মহিলা তার মেয়ে সাহেনা আকতারকে নিয়ে আমাদের ইসলামিক উইন্ডোতে এসেছিলেন তার মেয়ের বিদেশ থেকে আয় করা টাকা ইসলামী ব্যাংকে না রেখে নির্ভরযোগ্য সোনালী ব্যাংকের ইসলামিক উইন্ডোতে রাখতে চায় বলে। উনাদের একাউন্ট খোলার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছিলাম তখন। ওই সময় নিরক্ষর সাহেনা আকতার জানতে চেয়েছিলেন, বিদেশ থেকে টাকা পাঠালে তা কি এই একাউন্টে চলে আসবে। আমি বলেছিলাম দুনিয়ার যে কোন প্রান্ত থেকে পাঠালেও কোন অসুবিধা হবে না। সেই সাহেনা আকতার ওমান চলে যান চাকুরী নিয়ে আর সেখান থেকে দু কি তিন মাস পর টাকা পাঠায় তার একাউন্টে। এদিকে আমাদের ব্যাংকিং সফটওয়্যার বদল হয়ে যাওয়ায় প্রতিটা একাউন্টের নম্বর খানিকটা বদল হয়ে গছে। আগের নম্বরের সামনে পিছনে দু একটা করে ডিজিট বেড়েছে। নতুন নম্বরটিও তাকে জানান হয়েছিল, কিন্তু তার সন্দেহ হল, বলল, একই একাউন্টের দুটি নম্বর হবে কেন? !! সে তার আগের নম্বরেই পাঠাবে। সে যাই হোক, আগেরটাতে পাঠালেও আমাদের বিএফটিএন (বাংলাদেশ ফান্ড ট্র্যান্সফার নেটওয়ার্ক)-এ বলা আছে তাই তারা তা আমাদের বরাবরে চালান করে দিবে, তাই বলেছিলাম অসুবিধা নাই আগের নম্বরে পাঠালেও টাকা আসবে। কয়েক মাস পর সাহেনা আকতার জানাল তিন দিন আগে সে তার মালিককে দিয়ে গ্লোবাল মানি এক্সচেঞ্জ এর মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছে কিন্তু তার একাউন্টে টাকা জমা হয় নাই। আমি খোজ নিয়ে দেখলাম তার টাকা আমাদের বিএফটিএন পর্যন্ত এসেছিল যথাসময়েই কিন্তু ওই ডেস্কে যে ছিলেন সে আমাদের ইসলামিক একাউন্ট নম্বর এর পুরাতন ফরমেট বুঝতে না পেরে ফেরত পাঠায়ে দিয়েছেন। জানা গেল ওটা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর ফরেন রেমিট্যান্স সেকশনে ফেরত গেছে, ওখানে ফোন করে জানলাম ও’রা তিন দিন ধরে রেখে তা ওমানের গ্লোবাল মানি এক্সচেঞ্জে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। সাহেনা আকতারকে জানালাম যে টাকা ফেরত গেছে, তারা যেন তা পুনরায় প্রেরণ করে আর এবার তা তার একাউন্টে চলে আসবে কোন বাধা বিপত্তি ছাড়াই। বলা বাহুল্য এর পর তিন দিন পার হয়ে গেল টাকা আসল না, অবাক ব্যাপার! আসার তো কথা। আমাদের বিএফটিএন সেলে তো এ ব্যাপারে বলা আছে যাতে টাকা আসলে ফেরত না পাঠায়, তবে আসল না কেন? আবার খোজ নিলাম, দেখা গেল, ওমানে সাহেনা আক্তারের মালিক গ্লোবাল মানি এক্সচেঞ্জের সাথে হম্বি তম্বি করায় তারা টাকাটা পুনরায় পাঠায়েছে ঠিকই তবে সাথে ফুট নোটে লিখে দিয়েছে, “if can’t credit, please return” এই ছোট্ট বাক্যাংশটির সঠিক পাঠোদ্ধারে অপারগ হয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর ফরেন রেমিট্যান্সের জনৈক অফিসার তা ধরে রেখেছেন। আমি জানতে চাওয়াতে তিনি বললেন মনে হয় ওরা এটা ফেরত পাঠাতে বলছে। অপেক্ষা করুন, আমি ফোনে নিশ্চিত হয়ে নেই। যা’ হোক উনি ফোনে জানলেন ও নিশ্চিত হয়ে আমাদের বরাবর পাঠালেন। আমিও নিশ্চিত হয়ে ওদিকে গ্রাহককে জানায়ে দিলাম কোন চিন্তা নাই টাকা কাল একাউন্টে জমা হয়ে যাবে। অবাক ব্যাপার! পরের দিনও টাকা জমা হল না। আমি ফের ফোন করলাম আইবিবিএলের ফরেন রেমিট্যান্সে। উনি খোজ নিয়ে বলল, দৈবাৎ ভুল ক্রমে উহা ওয়েজ আরনার ঢাকা’র বদলে ওয়েজ আরনার চিটাগাং এ পাঠান হয়ে গেছে। ও’রা ফেরত পাঠালে তার পর আপনাদের বরাবর পাঠান হবে। সেই টাকা চিটাগাং ঘুরে এসে ঢাকায় সাহেনা আক্তারের একাউন্টে ঢুকেছে বটে কিন্তু ক্লায়েন্টের মনে প্রবল সন্দেহ সৃষ্টি করে, তবে। প্রচুর বাক্য ব্যয় করেতে হয়েছিলি গ্রাহকের সন্দেহ দুর করতে। উনি ছাড়াও আমাদের ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর অন্যান্য ক্লায়েন্টদের টাকা সৌদি আরব সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আসে, তাদের তো এমন বিড়ম্বনা হয় না, উনার ক্ষেত্রেই এমন কেন হল?
ঘটনা-চারঃ সোনালী ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোতে আমার পোস্টিং একটি দৈব ঘটনা, যার বিষদ বর্ণনা আমি আগের একটা লেখায় বলেছি। পুনরাবৃত্তি না করে বরং রেখাচিত্রর মাধ্যমে এখানে বলি ঘটনাটি ঘটার ক্ষেত্রে কত গুল দৈব সংযোগ ঘটেছিল।
উপরের ফ্লো-চার্ট দেখলে বুঝা যায়, কার সুপারিশ কিংবা আমার প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে আমার ইচ্ছা পূরণ হয়নি। পোস্টিং এর খবর পাওয়ার পর আমার মনে হয়েছিল ২০০৪ থেকে ২০১০ পর্যন্ত হেড অফিসে মুসলিম প্রফেশনাল ফোরামের প্রতিনিধি হিসেবে অনেকের সাথে কথা বলেছি, সেমিনারের দাওয়াত দিয়েছি, সেই সূত্রেই কি আমাকে ইসলামী ব্যাংকিং এ নিয়োগ দেয়া হল? পরে বুঝেছি তা নয় বরং সময়ের প্রয়োজনে আর ইসলামী ব্যাংকিং এর ট্রেনিং টা থাকায় বাছাই প্রক্রিয়ায় আমার নামটা উঠে এসেছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, ওই প্রশিক্ষণে তো অন্যরাও ছিল, তাদের মধ্যে থেকে আমাকেই কেন বাছাই করা হল। হতে পারে আমার নামে মোহাম্মদ মোস্তফা শব্দ দুটো থাকায় তা অগ্রাধিকার পেয়েছে।
এই ঘটনাটা গুল বলার উদ্দেশ্য হল, আমরা যা চাই তা ঠিক ওই ভাবে না পেলেও কখনও অন্যভাবে ইচ্ছাটা পূরণ হয়ে যায়, যাকে ধার্মিকেরা বলে থাকেন স্রষ্টা যা করেন তা ভালর জন্যই করেন। আর এর বিপরীত হলে বলেন কি আর করা, এটা তকদীরে বা ভাগ্যে লেখা নাই। এরকম কয়েকটি ঘটনার যোগসূত্র দেখে আমার মনে হয়েছিল, আচ্ছা? বাস্তবতার কি স্বয়ংক্রিয় (অটোমেটেড) ইচ্ছা পূরণ ক্ষমতা আছে? বাস্তবতায় ঘটমান ঘটনা প্রবাহ গুল কি জীবন্ত? জীবন্ত মানে এর কি ঘটনা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আছে? কিংবা আমরা যা চাই ও চেষ্টা করি পাওয়ার তা কি বাস্তবতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়? কথা গুল আজব মনে হতে পারে কিন্তু এর চেয়েও আজব আজব ব্যাপার এই বাস্তবতায় ঘটেই চলেছে। বিষয়টাকে তাই হালকা ভাবে না নিয়ে একটু চিন্তা করেই দেখা যাক না?
ভাগ্য বিশ্লেষণে তিনটা স্কুল অব থট্স ইসলাম ধর্মে সময়ের সাপেক্ষে সৃষ্টি হয়ে গছে, একদল মনে করেন বাস্তবে যা ঘটমান থাকে তা বাতাসে ভাসমান পালকের মত যেখানে মানব ইচ্ছার মূল্য নিষ্ক্রিয়। হলিউডের টমাস হ্যাংস অভিনীত ফরেস্ট গ্যাম্প মুভিটা শুরুই হয় একটা পালকের বাতাসে ভাসতে থাকা অবস্থায়, শেষও হয় তা দিয়েই। মুভিটার মূল থিমটা কিন্তু এই ধারার চিন্তা থেকে নেয়া। আরেকটি ধারা মনে করে মানব ইচ্ছায় তার স্বাধীন মালিকানা আছে তবে ফলাফল পূর্ব নির্ধারিত। তৃতীয় দল মনে করে কাজের ইচ্ছাটাও মানবের আর তার ফলাফলও তারই প্রচেষ্টা বা কর্মের ফল আর এ সবই যদিও পূর্ব নির্ধারিত তা বুঝা মানব জ্ঞানের অতীত। শেখ ত্ত্বাকীউদ্দিন নাবায়ানীর মতানুসারীরা মনে করেন, এভাবে ভাগ্যকে ব্যাখ্যা করাটা ভুল, উপরোক্ত তিনটা স্কুল অব থট্স এর বিশ্লেষণ দৃষ্টিকোণটাই ভুল। কি ভাবে এই বিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে তা মানুষের বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত নয় বরং এই বিশ্বের কতটুকু আমাদের নিয়ন্ত্রণে আর কতটুকু নিয়ন্ত্রণের বাইরে তাই বিবেচ্য হওয়া উচিত। যে সকল ঘটনা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে তাকে স্বাভাবিক ভাবেই একজন বিশ্বাসী মেনে নিতে বাধ্য যে তা তাঁর স্রষ্টা কর্তৃক তার জন্য পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষা ক্ষেত্র এবং এর উপরই তার আমল করতে হবে। ইসলাম ধর্মানুসারীদের জন্য ভাগ্য স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত। ভাল ও মন্দ উভয়েই স্রষ্টার তরফ থেকে আসে। এটা তাদের বদ্ধমূল বিশ্বাস বা আকিদার অংশ। ধর্মে বলা হয় তোমার কর্ম ফলের প্রতিদান জীবনাবসান ও পুনরুত্থান পরবর্তী বিচার ফলের বাস্তবতা, অথচ আমার আশপাশের সকল ধর্মপ্রাণ মনে করেন বিধাতা মানুষের কাজের ফল তার জীবদ্দশাতেই অল্প বিস্তর দিয়ে দেন। এই প্যারাডক্সটা কেন তঁরা মেনে নেন তা আমি আমার এযাবৎ জীবনকালের চিন্তাধারায় বুঝতে পারি নাই। কর্মফল যদি জীবনের চলমানতাতেই দিয়ে দেয়া হয় তা হলে বিচার এর প্রয়োজন থাকবে কেন? পরীক্ষার ফলাফল তা পুরষ্কারই হোক আর তিরস্কারই হোক তা ত খাতা দেখার পর যাচাই বাছাই হবে, আগে হওয়ার তো কথা নয়। ধর্মে এ সব প্রশ্ন করা বারণ, করলে বদ্ধমূল বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলা হতে পারে তাই মুখ বন্ধ রাখাই শ্রেয়।
কিছু কিছু মহা সাহসী লোক আছেন যাদের একজন ইমরান নজর হোসেন, বিখ্যাত ইসলামী বক্তা, লেখক ও শেষ জমানার বিষয়ে ইসলামের দিক নির্দেশনার উপর গবেষক ও একাধিক বই এর লেখক, উনার পুর বিস্তারিত পরিচয় দেয়া আমার সাধ্যের বাইরে, উনাকে সামনা সামনি দেখেছি, একটা কি দুটো কথাও বলেছি। তার পর উনার বই গুল পড়েছি ও উনার ব্যাখ্যা গুল অনেক ভাল লেগেছে। শেষ জমানায় ইয়াজুস-মাজুস (গগ-মাগগ) নিয়ে উনার জানার আগ্রহ তাঁর সমসাময়িক সকল আলেমগণ বিরত থাকতে বললেও উনি তা না শুনে একাই এ নিয়ে গবেষণা করেছেন ও প্রতিবেদন আকারে সচেতন মুসলমানদের কাছে পৌছে দিয়েছেন। শেষ জমানার বিশ্লেষণ ছাড়াও, উনার লেখা ‘জেরুজালেম ইন কোরআন’ বইটা না পড়লে ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছুই বুঝার বাকি থেকে যেত। সুদের উপর লেখা তার বই পুরটা পড়া না হলেও, ‘গোল্ড দিনার ও সিলভার দেরহাম-ফিউচার অব মানি’ বইটা আমার চোখ খুলে দেয় এখনকার মুদ্রা ব্যবস্থার অসংগতি সম্পর্কে। ফজলুর রহমান আনসারী উনার গুরু আর তিনি যে আমাদের ফরিদপুরের সন্তান জেনেও যার পর নাই অবাক হয়েছিলাম।
এখানে উনার কথাটা আনার উদ্দেশ্যটা হল, শিরনামোক্ত বিষয়ে উনি একটা মন্তব্য করেছিলেন উনার চিন্তাধারার। উনি বলেছিলেন এক টক–শো তে যা ইউটিউবে উনার লেকচার ক্লিপে দেখি, কিংবা উনার কোন পিডিএফ ফাইলে পড়েছি, বলছিলেন সুরা ফাতেহা’র সাত আয়াত হল সাত আসমান উত্তরণের মত, প্রত্যেক আয়াত পড়ার সময় আমরা এক একটা আসমান উত্তরণ করি, আর আসমান বলে ত কিছু না বরং এটা হল সামাওয়াত যার মানে স্তর বা হতে পারে ডাইমেনশন। উনি পিডিএফ ফাইলে মনে হয় বলছিলেন আমাদের মনের ইচ্ছা গুল বা ইরাদা গুল হয়ত কোন আসমানে অবস্থান করে তার পর অনুমোদিত হলে তা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়। ঠিক ওই জায়গাতেই আমার উনার ওই বইটা পড়া বন্ধ হয়ে যায়, যেমনটা হয়েছিল "ঈশ্বর GOD আল্লাহর ইতিহাস" বইটা পড়ার সময় যখন লেখক (শাহ্ সৈয়দ নুরুল কবীর উয়াইসী।) দাবি করলেন যে স্রষ্টাকে দেখা যায়, আর আমি তা জানার জন্য পরবর্তী অধ্যায় গুল লাফায়ে লাফায়ে আগায়ে গিয়ে জানার চেষ্টা করছিলাম কি ভাবে উনি তা বলছেন, হতাশ হতে হয়েছে এই দেখে যে, সব জায়গায় বিভিন্ন আয়াতের সূত্র টানা কিন্তু কোথাও সরাসরি বলা নাই, বরং বলছেন মহানবী (সাল্লেলাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) গোপন হালাকায় (শিক্ষা বৈঠক) এই শিক্ষা দিতেন যা পরবর্তীতে আলী রাদিআল্লাহু আনহু ও তদ্পরবরতীতে ওলি আকরামগণ করে আসছেন ওই সিলসিলায়। তার পর আলী রাদিআল্লাহু আনহু বিষয়ে যা লিখেছেন তাতে বুঝার বাকি রইল না যে এটা শিয়াদের ঘরানার বই, তবে বইটির প্রথম কয়েকটা অধ্যায় মানব সভ্যতার অতীতের সকল মানব সৃষ্ট স্রষ্টা-ধারণা সম্পর্কে যে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন তা আমার একদমই জানা ছিল না। যা হোক বইটা শখ করে 2019 এর একুশে বই মেলা থেকে কেনা হলেও বাকি অংশটা আজও পড়ে আগাতে পারি নাই, ওই জায়গাতেই থমকে গেছি।
ইমরান নজর হোসেন এর অনুমান মত যদি তাই হয়, মানুষের ইচ্ছা গুল কোন এক সামাওয়াতে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে ধরায় আর বাস্তবতাকে ওলট পালট করে দেয় তবে ভাবতে অসুবিধা কোথায় বাস্তবতার একটা স্বয়ংক্রিয় ইচ্ছা পূরণ প্রক্রিয়া আছে। আইনেষ্টাইনের একটা অদ্ভুত রকম উক্তি হল “বিশ্বজগত সম্পর্কে সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল এটা বুঝা যায়”। বাহ্য জগতের শক্তি গুল থুরি ফোর্স গুল কেন আছে তা জানার উপায় নাই কিন্তু তারা তো স্বেচ্ছাচারী না, নিয়মাবদ্ধ, যা গাণিতিক সমীকরণ দিয়ে বুঝা যায়। মহা বিজ্ঞ নিউটন এর মনে আপেল পড়তে দেখে প্রশ্ন জেগেছিল চাঁদ কেন আপেলের মত একই ভাবে নিচে পড়ে না? তাই চাঁদ এর গতি বিধি পরখ করতে যেয়েই গ্র্যাভিটেশন সূত্র। চাঁদ ত পড়ছে অনবরত পৃথিবীর দিকেই কিন্তু অন্য কিছু তাকে আবার টানছে পেছন থেকে তাই পুরপুরি পড়তে পারছে না হয়ত। মহা-বিজ্ঞানী আইনেষ্টাইন এসে বললেন, না, এটা স্থান কাল বেকে গেছে বলে পৃথিবীর চার দিকে ঘুরছে। হকিং, আইনেষ্টাইন ও কাকা মহোদয় গন আর বলছেন যে, সূত্রবদ্ধ, নিয়মবদ্ধ, গনিতে আবদ্ধ এই মহাবিশ্ব শুরুর সময় থেকে আজ পর্যন্ত একই নিয়মে চলছে আর তাতে স্রষ্টার ইচ্ছা অনিচ্ছাটা গুরুত্ব বহ কোন ব্যাপার নয়। তবে তাঁরা স্বীকার করেন যে, বিগ-ব্যাং এর সময় কিছু প্যারামিটার সামান্য হেরফের হলে মহাবিশ্বর বর্তমান অবস্থা হত না আর এতসব প্রশ্ন করার মত মানব সদৃশ প্রাণীর অস্তিত্বই থাকত না।
এক সময় স্ট্রিং থিউরিকে আমি বিগ-ব্যাং থিওরির বিকল্প কোন থিওরি মনে করতাম, কিন্তু ইদানীং আর বিস্তারিত পড়াশুনার ফলে বুঝেছি, কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রসার ও অগুনিত কণিকা আবিষ্কারের পরবর্তী পদার্থবিদ্যার দার্শনিক সমাধানে স্ট্রিং থিউরি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই তত্ত্ব পরীক্ষা করার জন্য হয়ত একদিন সুইজারল্যান্ডে (সার্নে) সি.ই.আর.এন-এর কণিকা কোয়ালিশনের এক বিশাল যন্ত্র ”লার্জ হেড্রন কোলইডার” (LHD) ব্যবহার করা হবে। স্ট্রিং থিউরি যদি সত্যি প্রমাণিত হয় তবে এই বিশ্ব চরাচর স্রষ্টার এক মহা সঙ্গীত মূর্ছনা আর আমরা এই হাঁদা গঙ্গারামেরা মূলত তার কম্পনের ফলে সৃষ্ট ঝঙ্কারের মধ্যে বাস্তবতার সূত্র উদ্ঘাটনে ব্যস্ত। ভাগ্য ভাল হলে দেখে যেত হবে না হয়ত যে পদার্থ বিদ্যার বিজ্ঞানীরা সঙ্গীত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছে পদার্থ-প্রতিপদার্থর আদি কণার উপাদান অনুসন্ধানে। আসমান – সামাওয়াত – ডাইমেনশন এর মত ধারণা গুল গিটঠু দিতে দিতে যদি কোন এক সময় বর্জ্য আঁটুনি ফসকে যায় তখন হয়ত সকল সত্য থলের বিড়ালের মত বের হয়ে যাওয়ারও ভয় আছে। আচ্ছা বলেন তো স্রষ্টা নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন কেন? কেন আমাদের সব বলে দেন না সহজ করে? বুঝলাম যুগে যুগে নবী-রাসুলগন এসেছেন মনবকে সাবধান করতে, প্রশ্ন হল সাবধান করতে কেন, কেন নয় সব বলে দিতে? বলেছেন বটে কি থেকে কি হল, কেন হল আর এর পর কি হবে কিন্তু অন্য ধর্ম গুল তা হলে ভিন্ন ভিন্ন সমাধান দেয় কেন? সবাই একই সমাধান বলে না কেন? এ যেন মন কি যে চায় বলো, যা কিছু শুনি তার সবই ভাল, অবস্থা। বলছেনা বুঝলাম পরীক্ষা করছে, কিসের জন্য? তাঁর আনুগত্যের জন্য তো? তা ফেরেশতাই তো আছে, আমাদের লাগবে কেন? আদম সন্তানেরা সতপ্রণদিত হয়ে তাঁর অনুগত হবে ফেরেশতাদের মত নয় তাই তো? যারা তা করবে না তাদের কে ধ্বংস করার কথা বলা হয় নাই বরং তাদের অনন্তকাল আগুনে পুড়তে হবে, প্রশ্ন হল ধ্বংস করা হবে না কেন? না কি করা যাবে না? বা করার প্রসঙ্গই আসে না কেননা আত্মা’র প্রকৃতি কাউকেই বুঝতে দেয়া হয় নাই?
বিদ্যুৎ যদি ভর ভর করে ব্যবহার করেন তো ফ্যান ঘুরবে আর রোধ দিয়ে সার্কিটের মাধ্যমে ব্যবহার করলে তা দিয়ে বেতার তরঙ্গ প্রেরণ বা গ্রহণও করতে পারবেন, এই নিয়ন্ত্রণ এর বিষয়টি তাই গুরুত্ববহ। প্রকৃতির সব কিছুই নিয়মাবদ্ধ, এই নিয়ম গুল কোথা থেকে আসল? এটা কি একা একা হওয়া সম্ভব? কেউ আরোপ না করলে কি এই শৃঙ্খলা আসতে পারত? এমাইন এসিড আর প্রোটিন গঠনে যে বুদ্ধিবৃত্তিক পরযায় ক্রমিক প্রক্রিয়া তা কিভাবে সংঘটিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত অসংখ্য বার একই ভাবে, তা বিস্ময়কর বটে। ঝট পট বলা যাচ্ছে না এগুল আরোপিত নাকি সংয়ংক্রিয় সংঘটন। যদি বলে দেয়া যেত তা হলে কি এমন হতো? মানবের জন্য তা কি শুখকর হতো?
ধর্মে বলে স্রষ্টার ইচ্ছা ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না। যে সত্তার কাছে অতীত-বর্তমান আর ভবিষ্যৎ একই তার কাছে সবই জানা আর এই বিশ্ব চরাচর স্থবির হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর যে মানব সত্তা অতীত থেকে ভবিষ্যতে ধাবমান, তার কাছে এনট্রপি সর্বদা বাড়ছে, ঘটনার পরিবর্তন হচ্ছে, মহাবিশ্বও ত্বরণে সম্প্রসারিত হচ্ছে, তার কাছে সময় ভবিষ্যতে ধাবমান আর কোন কিছুই স্থির নিশ্চিত নয়। তার জন্য যে কোন ঘটনার বিশ্লেষণ দ্বান্দিক দৃষ্টিকোণ থেকেই বিচার করতে হবে। এটা সেই আদি দার্শনিক দ্বন্দ্ব, বিশ্বচরাচর স্থবির না কি চলমান, ডায়ালেকটিক না কি মেটা ফিজিক্যাল ? এর চিরায়ত দ্বন্দ্ব। স্রষ্টা’র ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হবার নয় বুঝলাম কিন্তু আমাদের বিচার বিশ্লেষণ দ্বান্দিক অর্থাৎ পরিবর্তনকে মেনে নিয়েই চিন্তা করতে হবে। তা না হলে কোন হিসাবই মিলার কথা না।
"Dhorsi dhorsi koreo dhorte parsi na."
ReplyDeleteAllah ki asolei nijeke lukiye rekhesen naki, amra take dhekhar joggota orjon korte parsina ba prakritik karonei dhekhte parbona?
আমার যা মনে হয়, ধরুণ কোন পিপড়াকে আপনি বুঝাতে চাচ্ছেন মানুষ কি, তা কি তার ক্ষুদ্র জগতের জ্ঞেনে কুলাবে? যতই চেষ্টা করেন পারবেন? প্রসঙ্গত বলি, অনেক আগে এটিএন ইন্ডিয়ার একটা চ্যানেল 1998 এর দিকে “হট ইজ রিটেন” বলে খ্রিষ্টান মিশারীর একটা প্রগ্রাম প্রচার করত, ওখানে বলেছিল তারা ফ্রি বাইবেল সরবরাহ করে, ঠিকানা পাঠালে ওরা বুক পোষ্টে তা পাঠায় দেয়, আমি আনাইছিলাম ওদের বাইবেল, ওরা চটি বই এর মত কয়েক পাতা করে পাঠাত আর প্রত্যেক গুচ্ছ পাতার শেষে একটা কোশেনায়ার থাকত, যা অনেকটা ফিড ব্যাকের মত, যা থেকে ও’রা বুঝত আমি কতটা অনুধাবন করতে পেড়েছি, কোশেনায়ার এর উপর ভিত্তি করে ও’রা পরবর্তি চটি পাঠাত। তিন সেট পাওয়ার পর আর পাঠাল না, কারন ওরা শেষ প্রশ্নপত্রে জানতে চেয়েছিল, বিধাতা যে অমুক বিশপের সাথে স্বর্গে হেটেছিল তা কি আমি বিশ্বাস করি বা স্রষ্টা যে তার আকৃতিতে মানব সৃষ্টি করেছে তা কি আমি স্বীকার করি? দুট উত্তর আমি না দিয়েছিলাম। তাই তারা আমাকে আর কোন বই পাঠায় নাই। এই সব ধর্ম প্রচারককে আমার ইদানিং ভন্ড মনে হয়। এরা ধর্মর মূল উদ্দেশ্য স্পর্কেই মুর্খ, শুধু আচার সর্বস্ব ধর্মের প্রচারক। কোথায় বিশ্ব মানবতার কল্যাণে পথ দেখাবে না শুধু উনাদের মত করে চিন্তা কর না হলে বুঝবা না, এই মত তারা সবাই এক বাক্যে প্রচার করে। এরা কম ধর্ম প্রচারক, বেশি নিজের স্বার্থ প্রচারক। -এদের থেকে সাবধান থাকবেন।
Delete