Thursday, January 3, 2019

ব্রাহ্মন, আত্মন ও বিরোধী সমাগম




২৯ডিসেম্বর১৮> আগেই বলে রাখি, যাদের জীবন জগত সম্পর্কে গভীর চিন্তার অভ্যাস বা আগ্রহ নেই তাদের এই লেখাটা দুরবোধ্য মনে হতে পারে, গভীর চিন্তা আলোকিত চিন্তার পার্থক্য এই যায়গায় যে, প্রথমটি কেবল অনুসন্ধান করে আর পরেরটি বক্তব্যকে উদ্দেশ্যের সাথে সম্পৃক্ত করে যুক্তিযুক্ত হয়। বিখ্যাত দার্শনিক ভিটগেনষ্টাইনের মন্তব্য যে, দর্শন কেবল মাত্র ভাষার চাতুর্যে পরিণত হয়েছে, আমার তা মনে হয় না। মানব সভ্যতা কতগুলো অমীমাংসিত প্রতিপাদ্য নিয়ে বহালতবিয়তে অগ্রসর হচ্ছে আর তাতেই আমার যত আপত্তি। এত বড় বড় বিষয়ের মীমাংসা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় কিন্তু সংক্রান্ত আমার প্রশ্নগুলো উত্থাপন করা সম্ভব আর তারই চেষ্টা করেছি এখানে। ১৩ডিসেম্বর১৮> ব্রাহ্মন আত্মন টার্ম  দুটি অনেকের কাছে উদ্ভট লাগতে পারে, কিন্তু আমি প্রায় নিশ্চিত যদি এই টার্ম গুলো ইংরেজিতে উল্লেখ করা হতো তা হলে তা উদ্ভট তো লাগতই না বরং অনেকে কেবল উচ্চারণ করেই নিজেকে জ্ঞানী অভিজাত মনে করতে চাইত।  আমি এই টার্ম গুলো পড়ার পর অন্য বইয়ে চলে গেয়েছিলাম হঠাৎ একদিন মনে পরলো, কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না, কোন বইয়ে পড়েছিলাম, এমন তো কখনও হয় নাই, যা আমি পড়ি গুরুত্বপূর্ণ মনে কির তার সূত্র আমার জানা থাকে, ক্ষত্রে এমন হলো কেন? অনেক দুশ্চিন্তায় পরেছিলাম, এমন মনে হচ্ছিল যে, বোধ হয় আমি কোথাও পড়ি নাই বরং কেবল অনুমান করছি, মাথাটাই বোধ হয় নষ্ট হয়ে গেছে। পরে এমন এক বইয়ে তা খুঁজে পেলাম যার পর আমি একাধিক বই হাতে নিয়েছিলাম বলেই মনে এত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল। বিরোধী সমাগম এর ইংরেজি প্রতিশব্দ আমার জানা নাই তবে এর সঞ্জা আমাকে বাস্তবতার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য প্রতিবন্ধক প্রবণতা বুঝতে সাহায্য করেছে। টার্মটি দ্বান্দিক বস্তুবাদের বই থেকে নেয়া, ধারার পরবর্তী টার্ম প্রতিষেধের প্রতিষেধ (Negation of Negation) এখনও আমার কাছে অস্পষ্ট, যার কিছুটা বুঝেছি, পুরোটা নয়। দ্বান্দিক বস্তুবাদের একটি বক্তব্য এমন যেখানে বলা হয় মানব স্রষ্টা পরস্পর বিরোধী ধারনা, একটি সকল অভাব অন্যটি সকল পূর্ণতার, এই ধারনার সাথেও আমি এখনো একমত নই, যদিও যুক্তি দিয়ে খণ্ডাতে পারছিনা। তবে যুগান্তকারী বিজ্ঞানী আইনেষ্টাইনের এক বক্তব্য এমন যে স্রষ্টার ধারণা মূলত মানব মনের অসহায়ত্ব সকল দুর্বলতার ফলাফল এবং হকিং এর বক্তব্য এমন যে বিগ ব্যাং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে স্রষ্টার হস্তক্ষেপের কোন অবকাশ ছিল না, সে চাইলেও কিছু করতে পারতেন না এরূপ বক্তব্যর সাথে আমি এখন পর্যন্ত সন্দেহ প্রকাশ করি বা এখনো কোন মীমাংসায় পৌছাই নাই। আইনেষ্টাইন যদি স্রষ্টার অস্তিত্ব সম্পর্কে এরূপ বক্তব্য প্রদান কের থাকে তবে কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্সের অনিশ্চয়তা সূত্র সম্পর্কে নীলস বোর এর সাথে তার সেই বিখ্যাত বিতর্কে কেন বলেছিলেন স্রষ্টা বিশ্ব নিয়ে পাশা (gamble) খেলেন না। অনিশ্চয়তা সূত্র বিস্তারিত পর্যালোচনা করলে এমন মনে হতে পারে যেন বাস্তবতা সিনেমার সেলুলয়েড ফিতার মত, হঠাৎ কোন একটা স্থির সেকশন নিলে ছবিটির স্থির চিত্র পাওয়া যায়, অর্থাৎ অবস্থান  নিশ্চিত হওয়া যায় যা চলমান অবস্থায় অস্পষ্ট হয়ে পরে। আমার মনে হয় কণার অবস্থান ভরবেগ গাণিতিক ভাবে সুনিশ্চিত করে বলা যাবে না এই বাস্তবতাকে আইনেষ্টাইন মেনে নিতে পারেননি বলেই উক্ত বক্তব্য করেছিলেন। তার বক্তব্যর পেছনে স্রষ্টার অস্তিত্ব বিষয়ক কোন প্রসঙ্গ ছিল না বলে আমার মনে হয়েছে। বাস্তবতা নিয়ে স্রষ্টা পাশা খেলেন না বলতে মনে হয় তিনি বলতে চেয়েছেন, স্রষ্টা তার সৃষ্টিতে কোন অনিশ্চয়তা রাখতে পারে না। আর তাই যদি হয় তবে গাণিতিক ভাবে আমাদের অনিশ্চয়তার পক্ষে রায় দেয়া বা মেনে নেয়া সঠিক হবে না। যা হোক প্রসঙ্গে আসা যাক, ব্রাহ্মণ, আত্মন বিরোধী সমাগম সম্পর্কে আমি যা বলতে চাচ্ছি

২৯নভেম্বর১৮> যা বাহ্য (appear) যা অন্তস্থ (inherent) দুয়ের মাঝে যে স্ববিরোধ তা অবশ্যই বিরোধী সমাগম নয়। আমি দুটি ভিন্ন দর্শনের ধারণা কাছাকাছি আনার চেষ্টা করবো। ব্রাহ্মণ আত্মন স্ব-বিরোধী নিঃসন্দেহে আর আত্মনের ধারণাটি কেন এত গুরুত্ব পেল তা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। যা কিছু বাহ্য (what appears) তাই বাস্তব (real), এই বাস্তবতার অভ্যন্তরে ভোমরার প্রাণ কেন থাকবে? আত্মন বা দি থিং ইন ইটসেল্ফ (the thing in itself) এর ধারনার কারণেই প্রশ্ন করেছিলাম এই আত্মন বা আত্মা (soul) কি আমি ভিন্ন আমারই পৃথক স্বতন্ত্র সত্ত্বা (entity)? অনেক চেষ্টা করেও কোন মীমাংসায় আসতে পারি নাই। যা বুঝেছি তা হলো, অলৌকিকতা বা আদ্ধাত্ব কে মেনে নিলে আত্মা স্বতন্ত্র আমি হতে ভিন্ন আমারই সত্ত্বা, খাঁচার ভিতর অচিন পাখি, তা না হলে নয়। ব্রাহ্মণ বা ব্রম্মান্ড (the cosmos) বিদ্যমান বাহ্য এবং চলমান যা বিরোধী সমাগম অতিক্রম করে কোন এক দিকে চলছে। আমার ব্যক্তিগত অনুমান এটি কোথাও যাচ্ছে না, সম্পসারণকে কি চলমান বলা যায়?  আমরা না দিক (direction) জানি, না সত্য সময় জানি, কতগুলো গাণিতিক ধারনার উপর ভিত্তি করে মানব জ্ঞান এত দুর চলে এসেছে। কতগুলো মূল মৌলিক বিষয়কে মীমাংসা করা হয়নি বা করা যায়নি। আমার মনে হয় মানবতার আত্ম-অহং বোধ থেকেই আত্মন এর ধারণা উৎপত্তি। যে আত্ম-অহং বোধ ভুলভাবে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড কেন্দ্রে পৃথিবীকে স্থাপন করেছিল সেই একই সূত্র হতে এর উৎপত্তি বলে আমার ধারণা। যা বাহ্য তা অস্তিত্বশীল (exist) আর যা বাহ্য নয় তাকে আস্তিত্বশীল ভাবতে হবে কেন? যা ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য (palpable) তাই বাস্তব, যা ইন্দ্রিয়াতীত তা আমার বোধগম্যতারও অতীত।

যন্ত্র ব্যবহার করে ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়েছে অনেক কিন্তু মৌলিক বিষয়গুলো অমীমাংসিতই রয়ে গেছে। আমার এই ব্যাখ্যা যা ইন্দ্রিয়াতীত তা অবাস্তব মূলত বাস্তববাদের সাথে মিলে যাবে। আমার উদ্দেশ্য বাস্তববাদের পক্ষে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে নয়, আমি বলতে চাচ্ছি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তার ভাষা ছন্দ কবিতায় যে বললেন, রাম তোমার মনে যা উদয় হয়েছে তাই সত্য, বাস্তবে যা দেখছ তা সত্য নয়, বক্তব্যটি অতি পুরাতন অধিবিদ্য (metaphysical) ভাবধারারই পুনরুল্লেখ, এই বক্তব্যর সত্যতা কতখানি। অর্থাৎ দ্যা থিং ইন ইটসেল্ফ (the thing in itself) এর বিষয়টি আমি মানতে চাচ্ছি না, কিন্তু একে অস্বীকার করলে আমাকে বস্তুবাদ, নাস্তিকতা, বাস্তববাদ ইত্যাদির পক্ষে চলে যেতে হয়, যাকে সম্পূর্ণরূপে সঠিক বলে আমি মনে করি না। ২৯ডিসেম্বর১৮> আর নিজের আত্মার ধারণার বিরুদ্ধে কথা বলা অত্যন্ত কঠিন অনেকটা স্ব-বিরোধী হয়ে যায়। আত্মাকে অস্বীকার করলে মানব কেবল এক প্রকার জৈবিক যন্ত্রে পরিণত হয়। মনব এর মত এত বিশাল এক ধারণাকে এত ছোট করে দেখাটা মনে হয় ঠিক নয়। মানব ধারণাকে এত বিশাল অনন্ত এর সাথে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে হাজার বছর ধরে। কেউ এর যুক্তিযুক্ততা নিয়ে প্রশ্ন করেনি। নিজেকে বড় ভাবতে কার না ভাল লাগে?
বিরোধী সমাগম অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বিষয় বলেই মনে হয়। যা কিছুই করতে যাননা কেন আপনি বিরোধের সম্মুখীন হবেনই। বিরোধ অতিক্রম করেই গতি ত্বরণ। এক সময় ভাবতাম কিছু করতে গেলেই এত বিরোধ আসবে কেন? এখন জানি বিরুদ্ধতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই কেবল অগ্রগমন সম্ভব। সংঘর্ষ  মূলত গতির অপর এক বৈশিষ্ট্যে বা উপাদান। বাস্তবতার এই বৈশিষ্ট্যের উদঘাটন নাস্তিকবাদ বা দ্বাদন্দীক বস্তুবাদ করে থাকলেও এটা যে প্রকৃতিতে বিদ্যমান তা সত্য বলেই মনে হয়, এক্ষেত্রে তা উদঘাটন কে করলো সেটি বিবেচ্য হওয়ার কথা নয়। পরিমাণগত পরিবর্তন গুনগত রূপান্তর ঘটায় কোন এক ক্রান্তি বিন্দুতে, যেমন পানিতে তাপ বৃদ্ধি ঠিক ১০০ ডিগ্রি সেনটিগ্রেডে বাষ্পে পরিণত হবে তার আগে বা পরে নয়, অন্য ধাতু বা বিষয়বস্তুর ক্ষত্রে এই ক্রান্তি ক্ষণ ভিন্ন এবং সকল ক্ষত্রে তা বিরোধী সমাগম অতিক্রম করেই সংঘটিত হতে বাধ্য। প্রশ্ন হল বিভিন্ন বিষয়বস্তুর ক্ষত্রে এই ক্রান্তিবিন্দুর বা ক্রান্তি ক্ষণের নির্ধারণ কে করে দিল? এটা কি প্রাকৃতিক নির্বাচনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে গেছে না কি কোন অধি আত্মার (super being) নির্দেশে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে? বাহ্য বস্তু তার বৈশিষ্ট্যর নির্ধারক নিয়ে এই যে  ধাঁধা তা মানব জ্ঞান আজো মীমাংসা করতে পারেনি আর এই অপারগতা থেকেই আত্মন বা দ্যা থিং ইন ইটসেল্ফ এর জন্ম বলে মনে হয়। ২৩ডিসেম্বর১৮> আত্মা অধি আত্মার ধারণা কেবল অধিবিদ্য আধ্যাত্ববাদের ফসল হওয়াই সম্ভব। হার্ট ওভার হেড প্রেমের জনপ্রিয় ধারণাগুলোও এই একই ধারার উপ-ধারণা বলে আমার মনে হয়েছে। 
০৬ডিসেম্বর১৮> অলৌকিকতার জন্ম মানব চিন্তায় ঠিক কখন এসেছে বলা বোধ হয় খুব মুশকিল নয়, যেহেতু মানুষ চিন্তাশীল প্রাণী তার চিন্তার জগতে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে চিন্তা আসবে এটাই স্বাভাবিক। বাহ্য জগতের অস্তিত্বর আদি অন্ত খুঁজার চেষ্টা অত্যন্ত মানবিক, বানরকুলের বা গরুকুলের পক্ষে তা করা সম্ভব নয়। জগতে কিছুই স্থির নেই, সবই সর্বদা পরিবর্তিত হচ্ছে, প্রকৃতির এই সদা পরিবর্তনশীল বাস্তবতায় মানুষ তার অবস্থান যাচাই বাছাই করবেই। মৌলিক প্রশ্নগুলোর উৎপত্তি মানব মনে আসা খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। দৃশ্যমান জগতের জটিলতা সমাধানে মানব মন সদা সর্বদা ব্যস্ত। ১৩ডিসেম্বর১৮> বাস্তবতার শাশ্বত বৈশিষ্ট্য যেমন সবকিছুই সীমাবদ্ধ (limited) পরনির্ভরশীল (dependent) আর এই পরনির্ভরশীলতার (dependency) শেষ কোথায় যেহেতু কার পক্ষে জানা সম্ভব নয় সেহেতু হয় আপনাকে নিজেকে এ্যাকুরিয়ামের মাছ সদ্রশ্য প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে না হয় এ্যাকুরিয়ামের মালিকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করতে হবে। যেহেতু মাছ চিন্তাশীল প্রাণী নয় তাই তার জন্য এ্যাকুরিয়ামে বসবাস তেমন সমস্যার বিষয় নয়, কিন্তু চিন্তাশীল প্রাণী হওয়ায় মানুষের জন্য তা দম ফাটা পরিস্থিতি। যতক্ষণনা হুমায়ুন আহমেদের মত বলে বসেন মানুষ যত ছোটই হোকনা কেন তার মন মহাকাশের মত অনন্ত। যতক্ষণনা পরজন্ম, নির্বাণ কিংবা পুনরুত্থান স্বর্গ-নরকের ধারণাগুলোকে যুক্তিযুক্ত করা যায়। অথবা বিবর্তনের ধারায় ভবিষ্যতের কোন এক সময় নিজেকে বিশ্বজগতের স্রষ্টায় ভূমিকায় কল্পনা করা যায়। এযাবৎ প্রতিষ্ঠিত সবগুলো দার্শনিক ধারণাকেই প্রশ্নের সম্মুখীন করা যায় যেহেতু ০৯ডিসেম্বর১৮> কতগুলো বাস্তব বিষয়কে মানুষ আজ পর্যন্ত ব্যাখ্যা করতে পারে নাই, যেমন জীবাণু অভ্যন্তরে প্রোটিন সংশ্লেষণের মত জটিল প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে কি করে হয়, কে এই জটিল প্রণালী (complex system) অনুগুলোতে দিল? ১৩ডিসেম্বর১৮>উচ্চতর জীবের বাই-পোলার প্রজনন কার সিদ্ধান্ত, স্বপরাগী ফুলের মত তাদের মধ্যে একক হতে বহুর প্রজনন কেন হয় না? প্রাণীকুলের মধ্যে এত বিচিত্র প্রজনন প্রক্রিয়া কার পরিকল্পনা? নারী-পুরুষ হতে যে নতুন শিশু জন্ম নিলো তা উভয়ের বৈশিষ্ট্য নিয়ে ভূমিষ্ঠ হলে তাকে কেন কেবল পুরুষের বংশধর বলা হবে? প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে কি একই প্রাণ প্রবাহিত হয়? আউট অব বক্স প্রশ্নগুলো বিদঘুটে মনে হতে পারে কিন্তু এগুলো কেন আজও মীমাংসা করা হয়নি, সে প্রসঙ্গে কি মনে কোন সংশয় জাগে না? বিষয়গুলো মীমাংসা না করে মানব-সকল সময়ে অবগাহন (indulge) করে জীবন উপভোগে বিভোর হয়ে আছে? তা কি কম উদ্ভট নয়? সেক্ষেত্রে জীবন নিজেই একপ্রকার নেশা সদৃশ হয়ে গেল না? প্রশ্নগুলো হাস্যকর লাগতে পারে, কিন্তু চেষ্টা করে দেখুন না উত্তর খুঁজে পান কি না।
২৩ডিসেম্বর১৮> হলিউড মুভি ম্যাট্রিক্স এর ধারণা যে অলীক বিশ্ব রচনা করে তাতে কেবল মানব মনকে তাতে যুক্ত করে তার দেহকে ব্যাটারির মত শক্তি উৎপাদক সেল হিসেবে ব্যবহারের যে চল-চিত্রকল্প, এই ধারণাটিকে ফালতু বলে উড়িয়ে দেওয়ার কিংবা রূপকথার গল্প বলার উপায় নাই, হ্যাঁ এরূপ বাস্তবতা উদ্ভট কিন্তু যে ব্যক্তি চিন্তা করে এই সিনেমা স্ক্রিপ্ট লিখেছে তার এরকম চিন্তা কল্প রচনার প্রশংসা না করে পারা যায় না। তেমনিভাবে লুসী ছবির যে গল্প বা চিন্তা-কল্প যে মানব তার মস্তিষ্কের ১০% হতে ১৫% ব্যবহার করেই ২০০০ বছরে এতকিছু করে ফেলেছে আর যদি অদূর ভবিষ্যতে কেউ ১০০% ব্যবহার করতে সক্ষম হয় তবে সে প্রকৃতিতে বিলীন হয়ে যাবে যা বৌদ্ধ ধর্মের কপিরাইট নির্বাণ প্রাপ্তি বা সিদ্ধিলাভে সক্ষম হবে মস্তিষ্কের শতভাগ ব্যবহার করতে পারলে যে এই পরিণতিই হবে তা নাও হতে পারে তবে সবারই তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। কেউ এর চেয়ে ভাল পরিণতির চিত্রকল্প করে দেখাক না আর কি হতে পারতে? তা না করে মানুষ কেবল সমালোচনা করতে অন্যকে হেয় প্রমাণ করার মজা নিতে বেশী আগ্রহী বলে মনে হয়। হলিউড মুভি আই-রব এক জায়গায় বলা হচ্ছে যে পুরাতন রোবটগুলোর সঙ্ঘবদ্ধ থাকার প্রবণতা কোথা থেকে এলো? মূলত ছবিটিতে যন্ত্রমানবে প্রাণের সঞ্চার এর সৃজন হচ্ছে অনুমান করার চেষ্টা করা হয়েছে আর ম্যাট্রিক্স মুভির শেষটিতে নিও- যন্ত্র-জগতের সাথে সন্ধি স্থাপন করে যন্ত্র মানব যৌথ সভ্যতার যে ধারণা উপসংহার করা হয়েছে তা মানব মনেরই কল্পনা। ম্যাট্রিক্স মুভি নিয়ে ধর্ম অনুরাগীরা ভীষণ সমালোচনা  করেছে এই বলে যে, যুবক মনে এইসব উদ্ভট ধারণার প্রভাব তাকে কেবল বিভ্রান্তই করবে। তেমনি শুনেছি বলিউডের মুভি পিকে নাকি চীন জাপানে সরকারী ভাবে অনুবাদ প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে পিকে মুভিটি কিন্তু ধর্মর রিরুদ্ধে করা হয়নি কিন্তু নাস্তিক সম্প্রদায় তা তাদের কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছে। মানব জাতির প্রকৃত প্রবণতাটা এখান থেকে ধরা পড়ার কথা। আমর মতে ধর্ম নিরপেক্ষতা ধর্মান্ধতামুক্ত চিন্তা পিকে চলচিত্রটির মূল প্রতিপাদ্য। কোন জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা তার সংস্কৃতি জীবনাচরণে প্রতিফলিত হবেই। চলচিত্রর চিত্রকল্পগুলো সেই প্রতিফলনের বাস্তব অত্যন্ত শক্তিশালী প্রমাণ। সিনেমা দেখে মানুষ বিনোদনের জন্য, এখানে আবার চিন্তা ভাবনা কোথা থেকে আসবে? চিন্তা থেকে বিনোদন পাওয়ার মানুষ আমাদের আশপাশে খুব কমই আছে বলে মনে হয়। আর আমাদের চিত্রজগতের প্রডাকশনগুলো প্রমাণ করে আমাদের দেশের মানব মানের অবস্থান কোথায়।

একবার আমার এক কলেজ বন্ধু কে আমার সম্প্রতি অপর এক লেখক বন্ধুর সাথে পরিচয় করায়ে দিয়েছিলাম এতদ্ উদ্দেশ্যে যে হয়তো তাদের জ্ঞানী মনের সম্মিলনে উন্নত কিছু পাওয়া যাবে। যা দেখলাম উনারা কেবল পরস্পরের জ্ঞান নিয়ে দ্বন্দ্ব যুদ্ধ শুরু করে দিল। কি জানে? আমি যা জানি তাই সত্য এই আত্ম অহমিকাই মানুষের সকল জ্ঞানের মূল্যকে শূন্য মানে নামায়ে নিয়ে আসে। এদের অবস্থা গোলাপ বা জবা ফুলের মত, অতি সুন্দর ফুল কিন্তু কোন ফল দিতে পারে না। মানব মন নিয়ে আমার একটি ধারণা ছিল যে, মানব ইচ্ছাকৃত ভাবে তার মনকে জটিল করে রাখে, যদি সে তা না করে তবে তা মনই হবে না, অর্থাৎ মন এর সঞ্জাই এমন যে তাকে কিছু পরিমাণে অবোধগম্য থাকতে হবে। সরল মনে বোধগম্যতা বেশী আর জটিল মনে বোধগম্যতা কম, আর যদি পুরটাই বোধগম্য হয়ে যায় তা হলে তো কবি সাহিত্যিকদের কাজ শেষ হয়ে যাবে। তা কি করে সম্ভব? ! আর আমার মনের কথা বা চিন্তা যদি আমি না বলি তা হলে কার পক্ষেই তা জানা সম্ভব নয়। আমার মনের যত চিন্তা সকল কে জটবদ্ধ করে অন্ধকারে তালাবন্ধ করে জটিল মন সৃষ্টি করে রাখতে পারি আবার মনের চিন্তাগুলো আপনার সাথে বিনিময় করে সরল মনের মানুষ হওয়ার সিদ্ধান্তও নিতে পারি। দর্শন  শব্দটি একটি বিশাল বিষয়কে সঞ্জায়ীত করে, শব্দটির একটি নিজস্ব অর্থও তো আছে, ওই অর্থটি কি এর নামকরণের উদ্দেশ্য নির্দেশ করে না? যা বাহ্য তা নিয়ে যে এর যাত্রা শুরু বলে মনে হয়। আর আত্মন এর ধারণা এই যাত্রায় পরে এসেছে বলে অনুমান করা যায়। তা না হলে দর্শনের নাম আত্মন হয়ে যেতে পারতো। ০৩জানুয়ারী১৯> আত্মা বা আত্মনের প্রকৃতি উদঘাটনই দর্শনের মূল উদ্দেশ্য বলে আমার মনে হয়েছে। যা আজও অমীমাংসিতই রয়ে গেছে। বাহ্য বা ব্রাহ্মন হতে আত্মনে পৌছতে পারলেই দর্শনের কাজ শেষ হয়ে যাবে। মজার ব্যাপার হল, আত্মন বলে যদি কিছু নাই থাকে তবে অনুসন্ধান অনন্তকাল ধরে চলতেই থাকবে যেমন বলা হয়ে থাকে ক্রিটিক্যাল ভরে মহাবিশ্ব সবসময় সম্প্রসারিতই হতে থাকবে কোথায় তা কেউ কখনই জানবে না যতক্ষণ না এর সীমানয় পৌছুনো যায়।

No comments:

Post a Comment