Sunday, September 22, 2019

লেখালেখির গুরুত্ব সম্পর্কে আমার ধারণা



বাপ্পা মজুমদার ও সামিনা চৌধারীর ‘এক মুঠো গানএ্যালবামের “আকাশ খুলে বসে আছি, তাও কেন দেখছো না” গানটা যারা শুনেছেন তারা এর জনপ্রিয়তার কথা জানেন। গানের এই লাইটি অন্য ভাবেও তো বলা যেত, যেমন “হাঁ করে বসে আছি তাও কেন আসছ নাকিংবা “পসরা সাজায়ে বসে আছি তাও কেন কিনছ না অথবা “সেজে-গুজে বেড়াতে এসেছি তাও কিছু বলছ না?” কিংবা ধরুন যদি বলি “এত এত লেখা লিখছি তাও কেন পড়ছ না?” ইত্যাদি, কিন্তু তাতে কি তা এত জনপ্রিয় হত? তাতে কি তা সাহিত্য হত? হত না কারণ সাহিত্যের ভাষা ভিন্ন, আর তা হল মানুষের মনের ভাষা, জ্ঞানের ভাষা নয়। সাহিত্য হল মানব মনের প্রতিচ্ছবি, এটি এমন এক আলোর পৃথিবী যেখানে যা আসে সব আলোকিত হয়ে আসে। এই আকাশ তো নীল আকাশ নয় বরং মনের আকাশ। এই গানের সাথে আমার বেশ কিছু স্মৃতি জড়িত তাই গানটা হঠা‌ৎ কানে আসলে সেই স্মৃতীগুলো মনে চলে আসে। গানটার গুরুত্বও আমার কাছে একটু অন্যরকম ও বিশেষ বটে। সেই স্মৃতি নিয়ে কিছু বলার ইচ্ছা নাই এখানে, বরং পারষ্পরিক ভাব বিনিময় মাধ্যম গুলো নিয়ে কয়েকটা বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যা সচরাচর বলা হয় না বা যে উদ্দেশ্য গুলোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয় না। এই বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ “সাহিত্যের সামগ্রী” অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আমি প্রবন্ধটি সাধু থেকে চলিত ভাষায় রূপান্তর করেছিলাম ২০০৪ এ, এই উদ্দেশ্য নিয়ে যে তা আরো স্পষ্ট করে বুঝতে পারি। সাধু-তে লেখার চল ইদানীং উঠে গেছে কিন্তু সাধু ভাষা সেই সময় লেখালেখির ক্ষেত্রে সম্ভ্রান্ত ভাষা মনে করা হত। চলিত ভাষার সুবিধা এই যে, তা বিষয়বস্তুকে স্বচ্ছ ও দ্রুততার সাথে বুঝতে সহায়তা করে। যুগ-যুগান্তরে মানব মনোভঙ্গি পরিবর্তন হলেও মূল ভাবধারা একই থাকে। আলোচনার সুবিধার জন্য সাহিত্যের সামগ্রীর উপর লেখা রবীন্দ্রনাথের মূল্যবান প্রবন্ধটি এখানে সংযোজন করছি, তার পর আমার বক্তব্য উল্লেখ করব।


<উদ্ধৃতি> একেবারে খাঁটি ভাবে নিজের আনন্দের জন্য লেখা সাহিত্য নয়। অনেকে কবিত্ব করে বলেন যে, পাখি যেমন নিজের উল্লাসে গান করে লেখকের রচনার উচ্ছ্বাসও সেরকম আত্মগত, পাঠকেরা যেন তা আড়ি পেতে শুনে থাকেন। পাখির গানের মধ্যে পাখি সমাজের প্রতি যে কোন লক্ষ্য নাই, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। থাকুক বা না থাকুক তা নিয়ে তর্ক করা বৃথা। কিন্তু লেখকের রচনার প্রধান লক্ষ্য পাঠক সমাজ। আমাদের মনের ভাবের একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি এই যে, সে নানা মনের মধ্যে নিজেকে অনুভূত করতে চায়, প্রকৃতিতে আমরা দেখি টিকে থাকার জন্য প্রাণীদের মধ্যে সব সময় একটা চেষ্টা চলছে, যে জীব বংশ বিস্তারের মাধ্যমে যত বেশী জায়গা জুড়তে পারে তার জীবনের অধিকার তত বেশী বেড়ে যায়, নিজের অস্তিত্বকে সে যেন তত অধিক সত্য করে তোলে। মানুষের মনোভাবের মধ্যে সেরকম একটা চেষ্টা আছে, তফাতের মধ্যে এই যে প্রাণের অধিকার দেশে কালে, মনোভাবের অধিকার মনে এবং কালে। মনোভাবের চেষ্টা বহু কাল ধরে মনকে আয়ত্ত করা। আমি যা চিন্তা করছি, যা অনুভব করেছি তা মরবে না, তা মন হতে মনে, কাল হতে কালে, চিন্তিত হয়ে, অনুভূত হয়ে প্রবাহিত হয়ে চলবে। আমরা যে মূর্তি গড়ছি, ছবি আঁকছি, কবিতা লিখছি, পাথরের মন্দির নির্মাণ করছি, দেশ বিদেশে চিরকাল ধরে অবিরাম এই যে একটা চেষ্টা চলছে এটা আর কিছুই নয়, মানুষের হৃদয় মানুষের হৃদয়ের মধ্যে অমরতা প্রার্থনা করছে।  সাহিত্যে এই চিরস্থায়িত্বের চেষ্টাই মানুষের প্রিয় চেষ্টা। যা জ্ঞানের কথা তা প্রচার হয়ে গেলেই তার উদ্দেশ্য সফল হয়ে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু হৃদয়ের ভাবের কথা প্রচারের মাধ্যমে পুরাতন হয় না। সূর্য যে পূর্ব দিকে উঠে, এ কথা আর আমাদের মন আকর্ষণ করে না কিন্তু সূর্যোদয়ের যে সৌন্দর্য ও আনন্দ তা জীবন সৃষ্টির পর হতে আজ পর্যন্ত আমাদের কাছে অম্লান আছে। রচনা বলতে গেলে, ভাবের সাথে ভাব প্রকাশের উপায় দুটোকেই সমান ভাবে বুঝায় কিন্তু বিশেষ করে উপায়টাই লেখকের। দীঘি বলতে জল এবং খনন করা আধার দুই-ই একসঙ্গে বুঝায়। জল মানুষের সৃষ্টি নয় তা চিরন্তন। সেই জলকে বিশেষ ভাবে সবার জন্য সুদীর্ঘকাল রক্ষা করবার যে উপায় তাই-ই কীর্তিমান মানুষের নিজের। অতএব দেখা যাচ্ছে যে, ভাবকে নিজের করে সকলের করাই সাহিত্য এবং তাই-ই ললিত কলা। সাধারণ জিনিসকে বিশেষ ভাবে নিজের করে সেই উপায়েই তাকে পুনরায় বিশেষভাবে সাধারণের করে তোলাই সাহিত্যের কাজ। যে সকল জিনিস অন্যের হৃদয়ে সঞ্চারিত হওয়ার জন্য প্রতিভাশালী হৃদয়ের কাছে সুর, রং, ইঙ্গিত, প্রার্থনা করে, যা আমাদের হৃদয়ের মাধ্যমে সৃষ্টি না হয়ে উঠলে অন্য হৃদয়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না, তাই সাহিত্যের সামগ্রী। তা আকারে-প্রকারে, ভাবে-ভাষায়, সুরে-ছন্দে মিলে তবেই বাচতে পারে। তা মানুষের একান্ত আপনার – তা আবিষ্কার নয়, অনুকরণ নয়, তা সৃষ্টি। <অন-উদ্ধৃত>

সাহিত্যের সামগ্রীতে কবিগুরু সাহিত্য সম্পর্কে যা বলেছেন তা হল গান, কবিতা, নাটক ইত্যাদির উদ্দেশ্য হল মানুষের মনে উদয় হওয়া বা সৃষ্টি হওয়া ভাব গুলো মন থেকে মনে প্রবাহিত করে দেয়া ও তাকে সময়ের মধ্যে স্থায়িত্ব দেয়া। সাহিত্য সমাজে মানুষের জীবনাচরণের বিষয়াবলী হতে বেছে নিয়ে তাকে আরো পরিশীলিত করে নতুন ভাবে প্রকাশ করে। অনেকটা ধুয়ে মুছে নতুন ভাবে প্রকাশ করে। সাহিত্যের সামগ্রী প্রবন্ধটি একটি মূল্যবান রচনা আর আমার সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞানের গোঁড়া বলা যায়। সাহিত্যের সামগ্রী প্রবন্ধে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ যা বলেছেন তা ছাড়াও আর কয়েকটি উদ্দেশ্য আছে বলে আমার মনে হয়েছে আর তা হল চিন্তনের সাধারণীকরণ বা সার্বিকীকরণ (স্ট্যানডারডাইজেসন আফ থট্স), চিন্তা-চেতনার সার্বিকীকরণ। আমি যা ভাবছি তা সঠিক কিনা, কোথাও ভুল হচ্ছে কিনা? আর যদি ভুল থেকেই থাকে তা হলে সেটা কি? এই বিষয়ে সাধারণ স্বীকৃত মতটির যথার্থতা বিচার করা। এই সব প্রশ্নর সমাধানও লেখালেখির আরেকটি উদ্দেশ্য। সাহিত্য ও সংষ্কৃতি একটি জনগোষ্টির স্বাস্থ্য সম্পর্কে থারমমিটারের মত কাজ করে। অতি জনপ্রিয় ভারতীয় অভিনেতা আমিতাভ বচ্চনের একটি কথা আমাকে চমকে দিয়েছিল, সে বলছিল, অভিনেতারা মূলত একটি মাধ্যম বা মিডিয়া, তার কথায় চট করে একটা জট খুলে গেল, আগে ভাবতাম এত বিভিন্ন চরিত্র এক ব্যক্তি দারুন ভাবে অভিনয় করছে কি ভাবে আর তাকে অন্য চরিত্রে দেখা সত্যেও এই চরিত্রে আমিই বা কেন তা মেনে নিচ্ছি? অমিতাভ বচ্চনের কথায় বুঝলাম, অভিনেতা মূলত যে চরিত্রটি চিত্রণ করছে তা সাহিত্যের একটি ধারা বা বলা যায় অত্যন্ত শক্তিশালী ধারা যার মাধ্যমে একটি তথ্য বা ধারনা বিপুল পরিমাণে জনমনে সঞ্চার করা সম্ভব হয়। তাই চলচ্চিত্র বা মুভি হল সাহিত্যের সব থেকে বড় বাহন যাকে সর্ববৃহৎ কমপোজিট আর্টও বলা হয়। এই যে বৃহৎ বুলডোজার আর্ট এর কথা বললাম এটারও শুরু ঐ লেখালেখির মধ্য দিয়েই। তাই লেখালেখি সম্পর্কে হ্যারি পটারের লেখিকা বা রচয়িতা জে কে রাওলিং এর উক্তি, “লেখালেখি ভালোবাসার চেয়েও বেশি কিছু। এটা আবশ্যিকতা।

লেখালেখির প্রচলিত উদ্দেশ্যের পাশাপাশি আরেকটি উদ্দেশ্য আছে তা হল অন্য একটি বা একাধিক মনের সাথে কানেক্ট করা বা সংযোগ স্থাপন। অন্যর কাছে নিজের সুচিন্তাটা পৌছে দেয়া ও তার কাছ থেকে উত্তর প্রত্যাশা করা বা ওই বিষয়ে তার মতামত জানার প্রত্যাশা। লেখালেখিকে একমুখী ভাবা হলেও আসলে তা দ্বিমুখী (ইন্টার‍্যাক্টিভ) প্রক্রিয়া। ফেইসবুকের কোন post এ জানা অজানা কেউ লাইক দিলে মনে কেন আনন্দ উদ্দীপন হয় তা নিয়ে গবেষনা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে যে এতে আমাদের দেহ মনে রাসায়নিক পরিবর্তন হয় যা মানুষকে ক্ষণিক আনন্দ পুলক দেয়, তাই সে তা আরো পেতে চায় আর তার পর তাতে আবিষ্ট হয়ে যায়, মনস্তাত্ত্বিক গবেষকরা সেই কথাই বলেছেন। আমার কিন্তু আরেকটি কারণ মনে হয়েছে এর পিছনে কাজ করে আর তা হল, কোন আত্মা তার আকৃতি খুঁজে পায় না যতক্ষণ না সে তার প্রেরিত বার্তার প্রত্যুত্তর খুঁজে পায়, সে আরেকজনের কাছ থেকে তার কথার, ছবির, কাজের স্বীকৃতি চায় বা তার আলোকে নিজেকে বিচার করতে চায়। বিষয়টা অনেকটা রাডার স্ক্যানারের মত কাজ করে, ছুঁড়ে দেয়া আলোর প্রতিবিম্বে নিজের আকৃতি দেখতে পায়। যেহেতু নিজেকে মাপার বা দেখার আর কোন উপায় তার কাছে নাই। সে ঘুরে নিজেকে দেখতে পায় না তাই অন্যর চোখ দিয়ে নিজেকে দেখতে চায়। আয়নায় দেখা প্রতিচ্ছবির কথা ভাবছেন? আয়না সব সময় আপনার বিপরীত প্রতিচ্ছবি বা অপজিট প্যারেটি দেখাবে, ডান চোখ বন্ধ করে দেখবেন আয়নাতে আপনার প্রতিচ্ছবি বাম চোখ বন্ধ করে রেখেছে। অন্যের চোখই তাই নিজেকে দেখার সঠিক আয়না। লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে পাঠক মহলে মন্তব্য, সমালোচনা তাই লেখকের আত্ম উপলব্ধিতে অনেক কাজে আসে, ক্রিটিক ভাল হোক বা মন্দ হোক তার লেখার মান উন্নত করে দেয়। এ বিষয়ে রাওলিং বলেছেন লেখকের সবচেয়ে বড় সমালোচক তার মনের মধ্যেই বাস করে। বাইরের সমালোচেকের চেয়ে ভিতরকার সমালোচকের প্রতি লেখকের ভয় বেশী, তাই লেখিকা তাকে বিস্কুট খেতে দেন। ক্লাস এইটে পড়ার সময় একটা চকচকে ছোট  নতুন কাচি দিয়ে সাদা কাগজের ঝালর কাটার অভ্যাস তৈরী হয়েছিল, শুধু ঝালর কাটাই নয় তার একটার চেয়ে আরেকটার সৌন্দর্য বিচার করতে যেয়ে তাকে শ্রেণীকরণ ও সবচেয়ে সুন্দরটি মাপতে গিয়ে যা বুঝেছিলাম তা হল পরিমাপাক নীতিমালা বা কোন মানদণ্ড ছাড়া কেবল মনের বিচারে সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ বা নির্বাচন সম্ভব নয়। মানবিক বিচার আর যুক্তির বিচারে বিস্তর পার্থক্য আর তাই সেইটাই সব থেকে ভাল যা মন তার নিজস্ব ভাব ধারায় সুন্দর বলে বিচার করে। এই বিচার বোধের সাধারণ মানদণ্ডের জনমত (কনসেনসাস) গঠন করতেও সাহিত্য বিশাল ভূমিকা পালন করে।

লেখালেখির আরেকটি উদ্দেশ্য, মনের ভাবকে ভাষায় রূপান্তর করা। ভাব প্রকাশের উপায়টাকে রবীন্দ্রনাথ দীঘির সাথে তুলনা করেছেন আর দিঘীর জলকে চিরায়ত জ্ঞানের বা ভাবধারার সাথে। ভাব প্রকাশের উপায় তা ভাষা হোক, চিত্র কর্ম হোক কিংবা চলচ্চিত্র, এই উপায়টাই মানুষের সৃষ্টি। সূর্যোদয়ের অনুভব একেক মনে একেক ভাবে প্রতিভাত হতে পারে তার প্রকাশে ভিন্নতা থকাটাই স্বাভাবিক আর এই শাশ্বত সৌন্দযের অভিব্যাক্তিই সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথ ‘ভাষা ও ছন্দ কবিতায় মনে উদয় হওয়া ভাবকে প্রকৃত সত্য বলে উল্লেখ করেছেন, আসলে প্রকৃত মানুষ তো তার মনের ভাবেই বিরাজ করে, ভাষা দিয়ে সে নিজেকে প্রকাশ করতে চায় অন্যের কাছে। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্যেও ভাষার শক্তি তাই অনেক। মনের ভাবকে ভাষায় রূপান্তর লেখালেখির অন্যতম উদ্দেশ্য বলে আমার মনে হয়েছে। নিজে বুঝা ও অন্যকে বুঝান বা তার মনের ভাবের সাথে মিলায়ে দেখা। মনের বার্তা অন্য মনের কাছে পৌছে দেওয়া। মনের ভাব তো যুক্তির নীতিতে চলে না আবার যুক্তি ছাড়া তাকে অপরের কাছে বা সবার কাছে গ্রহনযোগ্যও করা যায় না। এই প্যারাডক্স সমাধানের একমাত্র উপায় এই ভাব বিনিময়ের মিথষ্ক্রিয়া। যাকে সমাজবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন বাদ-প্রতিবাদ-সংবাদ বা সংলাপ (ডায়ালেকটিক্স)। নতুন কিছুর উদ্ভাবনই হয় এই ডায়ালেকটিক্সের মাধ্যমে। পুরাতনের সাথে নতুন সম্ভাবনার মিশ্রণেই ধারাবাহিক উন্নতি সম্ভব। “কলি ফুটেছি কি ফুটে নাই, অলি বার বার ফিরে যায় আর “আকাশ খুলে বসে আছি, তাও কেন দেখছনা গান দুটির ভাবার্থ প্রায় একই কিন্তু একটি অতি পুরাতন আরেকটি নতুন। একমাত্র মানুষ নামক প্রাণীরই একঘেয়েমি জনিত বিরোক্তি বোধের সামর্থ্য আছে, তাই সে সব সময় নতুন কিছু সৃষ্টির উন্মাদনায় ভুগে। নতুন উদ্ভাবন তাই মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। লেখালেখির মাধ্যমেই নতুন উদ্ভাবন সম্ভব হয়। এক জায়গায় পড়েছিলাম “কেউ মনে করে না যে, অশ্ব মানব, পরি, কল্প রাষ্ট্র (ইউটোপিয়া) বাস্তব, তবে মনে করা হয় যে, বাস্তব জগত হতে স্বতন্ত্র কোন জগতে তাদের অস্তিত্ব আছে আর এভাবেই আলোচনার জগত ধারনাটির উদ্ভব হয়।‍ একঘেয়েমি জনিত বিরোক্তি বোধের সামর্থ্যর মত কল্পনা করার শিক্তও একমাত্র মানুষেরই আছে। কল্পনায় ভর করে পুরাতন যুগের অশ্ব মানব হতে আজকের যুগের স্পাইডার ম্যান, সুপারম্যান এ্যাভেনজারস আর ড্রাকুলারাও বিশ্ব সাহিত্যের জীবন্ত চরিত্র। হলপ করে বলতে পারবেন টম এন্ড জেরির কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই? বরং তারা এতটাই জীবন্ত যে তার কখনও বিনাস হবে না। অস্তিত্বের দার্শনিক সত্যাসত্য অত্যন্ত বিতর্কিত একটি বিষয়। বাহ্য আর অন্তস্থ কিংবা যদি বলি ব্রাক্ষণ ও আত্মন ইংরেজিতে যাকে বলে ‘এ্যাপিয়ারেন্স আর ‘দ্যা থিং ইন ইটসেল্ফ এর প্যারাডক্সটা এই বিশ্বজগতে কখনই সমাধান যোগ্য হবে বলে মনে হয় না। এই দ্বন্দ্ব না থাকলে সকলের মন একই রকম হয়ে যেত অনেকটা জীবন শূন্য ধুসর মরুর মত। তাই খানিকটা অসংগতি ও তন্ময়তার ভাব মানব সঞ্জায় সংযুক্ত করা আছে। থাকাটাই ভাল, মানব মনের তন্ময়তাকে কেটে ছেঁটে বাদ দিয়ে যান্ত্রিক মানব সৃষ্টি করা যাবে ঠিকই কিন্তু তাতে মানবতা ধ্বংস হয়ে যাবে।

মনের গভীরতায় বা চিন্তার জগতে ডাইভ বা ড্রাইভ দেয়া একটি চমকপ্রদ ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাও বটে। যার মন যত তথ্য বহুল তার তত বিস্তৃত বিচরণ ক্ষমতা। সৈয়দ মুজতবা আলীর গল্পের সেই বই পড়া আর মাছির পুঞ্জাক্ষীর সাথে তুলনা করা এর সাথে মিলে যায়। লেখালেখির পাশাপাশি বই পড়ার অভ্যাসটাও তাই জরুরী। বই পড়া ছাড়া যদি আপনি চিন্তার জগতে ডাইভ দেন তবে নির্ঘাত পথ হারাবেন। মনের ভুবন হাজার কোটি মহাবিশ্বর চেয়েও বড় বলে মানব মন ভাবতে পছন্দ করে। এক সময়কার সাহিত্য আরেক সময়ের সাহিত্যের সাথে মিলবে না আবার এক এলাকার সাহিত্য অন্য এলাকার সাহিত্যর সাথেও মিলবে না কিন্তু বিশ্বসাহিত্যর সাধারনিকৃত রূপ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ের ও বিভিন্ন এলাকার মানুষের চিন্তুা ভাবনা একই রকম হওয়ার ও তো কথা নয়। তবে মনে রেখাপাত করে সেই সাহিত্য যা সাম্প্রতিক বাস্তবতা ও মানুষের জীবনাচরণের সাথে মিলে যায়। রবীন্দ্র রচনা আর নজরুল রচনার পার্থক্যটা খেয়াল করলেই বুঝা যায় প্রত্যেক মানুষের মনোভঙ্গির একটি স্বাতন্ত্র্য আছে, হুবহু একই রকম কখনই হবে না তার পরও বিশ্বায়নের এই যুগে সকল মানুষের জীবনাচরণের ও চিন্তা ভাবনার মধ্যে একটি একক ধারায় বিবর্তন শুরু হয়ে গেছে। মহাকালের ধারায় বিশ্ব সাহিত্যের এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়াই এখন সাহিত্যের প্রকৃত বাস্তবতা। গানে যা বলা হচ্ছে কিংবা গল্প, নাটক, চলচ্চিত্র এ সবের আরেক দিক শিক্ষাদান এই আর্থে যে তা স্টেনডারডাইজ করে ও নতুন রূপকল্প প্রস্তাব করে। আমরা অনেকে মন খুলে কথা বলি না হয়ত এই কারনে যে, কে কি মনে করে, পাছে লোকে আময় মূর্খ ভাবে, অবমূল্যায়ন করে কিংবা আমার মনের কথা বুঝে আমার ক্ষতিসাধন করে, এইসব হাবিজাবি অযথা কারণে, অনেকের অবশ্য অভ্যাস আছে মনটাকে চিন্তামুক্ত রাখার, তারা মন চিন্তুাশুন্য করে মনকে প্রশান্ত রাখার চেষ্টা করে। আমার এক বন্ধু বলতো চিন্তা করলেই তার মাথা ধরে, ও মূলত সকল চিন্তাকেই দুশ্চিন্তা মনে করত। এ রকম যারা তারা কি জীবনের মৌলিক চিন্তু গুলো যা মানব সভ্যতা আজও সমাধান করতে পারেনি তা থেকে মুক্তি পায়? জনাব হকিংস তার শেষ গ্রন্থ ‘থিওরি অফ এভরিথিং এ বার বার স্রষ্টার প্রসঙ্গে টেনে এনেছে বলে সমালোচিত হল, আর অতি ব্যক্তিত্ব, বা উচ্চতর মানব হওয়ার চেষ্টা রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী, মাদার তেরেসারা করেছেন কিন্তু মানব সভ্যতার এই ২০০০ বছরের লিখত ইতিহাস ছাড়াও আরও প্রায় ৬০০০ বছরের পুরাতন প্রত্নতত্ত্ব যুগের মানুষ আর এখনকার মানুষে পার্থক্যটা ভেবে দেখুন? চিন্তা-চেতনায় এখনকার মানুষেরা কতটাই না এগিয়ে গেছে। মত প্রকাশে অনীহা মানে হল আপনি নিজেকে ও অন্যকে অবহেলা করছেন আর সভ্যতার বিকাশে আপনার অংশগ্রহণকে অস্বীকার করছেন। মানব যোগাযোগের ক্ষেত্রে মৌন থাকাটা তাই একটা অপরাধ।

লিখালিখির আরেকটি উদ্দেশ্য আত্মপ্রকাশের বাসনা যা একটি শক্তিশালী মানব প্রবৃত্তি বা ইনিসটিং। বারট্রান্ড রাসেলের বই ‘অরাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বৃত্তি-প্রবৃত্তিবইটি ছাড়াও ম্যকিয়াভেলি বা ম্যাসলস হাইয়ারারকী অব নিড্স, কিংবা ইমাম গাজ্জালীর মানব প্রবৃত্তির উপর বক্তব্য গুলো ম্যাস আপ করলেও এই বক্তব্যই পাওয়া যাবে। আত্মপ্রকাশ বা নিজেকে অন্যর কাছে প্রকাশ করার চিরন্তন মানব প্রবণতাও লিখালিখির আরেকটি উদ্দেশ্য। আত্মপ্রকাশ, মানব সংযোগ, সমাজ গঠন, আত্মউন্নয়ন এরকম প্রায় সব মানবিক ক্ষেত্রেই লেখালেখির বিশেষ অবদান আছে। আত্মপ্রকাশ না করলে একের মতের সাথে অন্যর মত মিলবে কিভাবে ? সমাজ বা সংঘ সংগঠনের প্রথম ধাপই তাই এই লেখালেখি। আমার খালার ঘনিষ্ট বান্ধবীর মামা তখনকার জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আহসান আলীর ‘পূর্ব বাংলা কবিতার সেই লাইনটা এখনও মনে রেখাপাত করে, “আমার পূর্ব বাংলা, অনেক পাতার ঘনিষ্টতায় এক প্রগাড় নিকুঞ্জ। ভাগ্য ভাল উনি লিখেন নাই আমার সোনার বাংলা অনেক নৌকার ঘনঘটায় এক প্রকাণ্ড কর্মযজ্ঞ। সাহিত্যের রাজনীতিকরন করা উচিত না আর তা করলে প্রকৃত সাহিত্য হবে না। উদ্দেশ্য প্রণদিত ভাবে লেখালেখিকে ব্যবহার করে যারা রাজনৈতিক মত প্রতিষ্ঠা করতে চায় কিংবা কিছু অসাধু সাংবাদিক যারা অন্যের দুর্বলতা প্রকাশ করে তাকে বিপদের ভয় দেখিয়ে টাকা কামাই করেত চায় তারা সাহিত্যের কাল বাজারী। আর যারা লেখালেখিকে বানিজ্যিকী করণ করেছেন, যুব মানসকে পুঁজি করে প্রকাশক ও নিজের জন্য বিপুল সম্পদ আয়ত্ত করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন তাদের সম্পর্কে আমার কিছুই বলার নাই। সমাজের সুস্থ মানুষ গুলোই তার বিচার করবে আর কালের বিচারে তাদের কাজের গুরুত্বও কমে যাবে। তন্ময়তার ভাষাই প্রকৃত সাহিত্য, তা-ই আমাদের সংস্কার বা সংস্কৃতি হওয়া উচিত।

আমার লেখা-লেখির উদ্দেশ্যটা এবার বলে ফেলি? মনে অনেক কথা আর চিন্তার জটাজাল, এই চিন্তার জটিলতা সরলীকরণের জন্যই লিখে চিন্তা করার চেষ্টা, বিশ্লেষনে সময় লাগে, লিখলে তা সহজ হয়। আত্মসমালচনা, আত্মকথন আর যথার্থতার মানদণ্ড বা বিবেক গঠনের প্রয়োজনেই লিখতে থাকি। তাছাড়া মানুষ প্রকৃতিগত ভাবে নিষঙ্গ, সে বড় একা, তার বসবাস মনোজগতে আবদ্ধ, বহির্বিশ্বে তার বিস্তারের একটাই উপায় আছে আর তা হল অন্যের মনের সাথে ভাব বিনিময় করা। শেষ করতে চাই এই বলে, মন খুলে কথা বলুন, নিজের মতকে সবার কাছে প্রকাশ করে দিন তা ভাল হোক আর মন্দ হোক কিচ্ছু যায় আসে না, আপনার আমার সবার জন্য তা অবশেষে ভালই হবে। এতে করে সম্মিলিত ও সামগ্রিক মানব আত্মা তথা মানব সভ্যতা সমৃদ্ধ হবে। কিছু দিনের মধ্যেই আমি আপনি মহাকালের চোরাবালীতে বিলীন হয়ে যাব কিন্তু আমাদের কথাগুলো বা ভাবনা গুলো হয়ত মন থেকে মনে বিরাজ করতে থাকবে, আর এটাই চিরন্তন বিশ্ব মানবতা। 
 
 
এডিট ও আপডেট হিস্ট্রিঃ ০৩সেপ্টেম্বর২০১৯> ১৯সেপ্টেম্বর২০১৯> ১১ডিসেম্বর২০২৩>

Tuesday, September 10, 2019

সাক, সুকুক ও ইসলামী ব্যাংকিং


মূসক যদি বুঝে থাকেন তাহলেও সুকুক বুঝেন কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। খেয়াল রাখবেন, এটা শুশুক বা শামুক নয় সুকুক, সাকের বহুবচন সুকুক। যখন প্রথম মূসক বলা চালু হল, অর্থাৎ যখন ভ্যাট বা ভ্যালু এ্যাডেড ট্যাক্স এর বদলে “মূল্য সংযোজন কর” বা মুসক বালা শুরু হল তখন নতুন যারা শুনেছেন তাদের মূষিক বা মিশুক জাতীয় কোন প্রাণীর কথাই প্রথম প্রথম হয়ত মনে হত । বিষয়টা অনেকটা এরকম, আগে জানতাম Source Tax  এখন বলি TDS বা Tax Deducted at Source মোদ্দা কথা একই তবে একটু ঘুরায়ে বলা হয়েছে আরকি। সুকুক বা সাক শব্দটা নতুন মনে হলেও তা নতুন নয় বরং সাক থেকেই চেক শব্দের উৎপত্তি – কথাটা শুনে চমকে যাওয়ার মতই বিষয়, এতো পুরাতন? ! সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজের ফ্যাকাল্টি শামীম ভাই সাককে একটু ভিন্ন ভাবে উচ্চারণ করে তাকে আলাদা করতে চাচ্ছিল, আমি পরিষ্কার করে বললাম, ডেটা বা ডাটা হল ডাটা শাক তাই না? আর এটা হল শুধু শাক বা সাক যার উচ্চারণটাও কাছাকাছিই হবে।

আমি বেশ কবার মারাত্মক রকম চমকেছি জীবনে, প্রথমবার বোধহয় রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছের একটি গল্পের পাঞ্চ লাইন “হৃদয়টা যদি লোহার বয়লার হইত তবে দপ করিয়া ফাটিয়া যাইত” পড়ে যে বিরামহীন হfশি হেসেছিলাম ছাত্রজীবনে তা ছিল আমার জীবনের রেকর্ড পরিমাণ হাশির চমক আর ইদানীং যখন জানলাম ব্রিফ হিষ্ট্রি অব টাইম বইটা লিখার সময় বা তার আগে হকিংস মহাশয় জেকব ব্রাওনস্কি’র তাত্ত্বিক টিভি সিরিয়াল “দি এ্যাসেন্ট অব ম্যান” দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। অবাক হয়েছিলাম এই ভেবে যে, আরে  হকিংস সাহেব তো তা হলে এই সেদিনকার কথা বলছেন, ১৯৮৭ সাল, আর আমি তো তখন ক্লাস এইটের স্কুল ছাত্র, আমারও তো প্রিয় ডকুমেন্টারি ছিল ওটা, বিবিসি থেকে নিয়ে বিটিভি সাপ্তাহিক প্রচার করত। তখন অবশ্য ওই একটা টিভি চ্যানেল বিটিভিই ছিল অন্ধের যোষ্ঠি। জেকব ব্রাওনস্কির বই “দ্যা কমন সেন্স অব সাইন্স” এর বাংলা অনুবাদ গ্রন্থ মেলা থেকে কিনতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেছিলাম আর তা পড়ে নিজেকে মহা পণ্ডিত পণ্ডিত ভাবতাম ছাত্রাবস্থায়, বলা বাহুল্য বইটা দুই বার পড়েছি, আর দ্বিতীয়বার দাগায়ে নাস্তানাভুত করে ছেড়েছি। এই হকিংস ভদ্র মহোদয়ও তাঁর ভক্ত ছিলেন?!, বলে কি !! এর পরেরর বিস্ময়কর খবরটি ছিল ১৯৮৩ সালের পূর্বে এম আজিজুল হক স্যার, সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজের প্রথম অধ্যাপক কর্তৃক ইসলামী ব্যাংকিং এ দেশে সূত্রপাতের কথা জানতে পারা। বলে কি এরা, ইসলামী ব্যাংকিং এর শুরুটা সোনালী ব্যাংকে?! অবাক না হয়ে যাই কই। তেমনই চমকপ্রদ হল সাক থেকে চেক শব্দের উ‌ৎপত্তির কথা জানতে পারার চমক। বিআইবিএম এর ক্লাসে আলমগির স্যার যখন কথাটা বলল, তখন মাথার ভিতর ঢং করে একটা ঘন্টা বেজেছিল, হলপ করে বলতে পারি আপনিও চমকের মধ্যে আছেন, না চমকালও অবাক হয়েছেন ত বটেই।

আমাদের ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোতে নতুন প্রডাক্ট দরকার, কিন্তু তা কি হতে পারে তা নিয়ে ভাবতে হয়েছে অনেক। এটা, সেটা, অন্যরা কি করছে, আমরা কি করতে পারি ভেবে অস্থির, নতুন কিছু মাথায় আসছিল না, কিন্তু যখন সুকুক সম্পর্কে জানলাম, তখন বুঝলাম এই খানেই দরজা খুলবে। বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতিতে সুকুকের সম্ভাবনা অনেক, আরব ইসলামি বিশ্বে সুকুক অতি পরিচিত একটি আর্থিক ইনসট্রুমেন্ট। আলমগির স্যার তার ক্লাসে আমাদের কোরআনের জ্ঞান কত তা মাপতে মাপতেই সময় পার করে দিলেন, অথচ তাঁর লেকচার সিট পরে দেখি, ওরে বাবা !! কত কি যে আছে এই সুকুক নিয়ে। উনি প্রচুর সুকুকের স্ট্রাকচার দিয়েছেন তার স্লাইড গুলোতে। ক্লাস শেষে যাওয়ার সময় স্যার বলে গিয়েছিলেন লেকচার সিট গুলো পড়তে রিডিং গ্লাস লাগবে, তা লেগেছিল ঠিকই, চারটা করে স্লাইড একটা পেইজে প্রিন্ট দেয়া। ছোট হয়েছে ঠিকই তবে সুকুক স্ট্রাকচার গুলো খুব ভাল ভাবেই বুঝা যাচ্ছে। লেকচারে বা লেকচার সিটেই হোক কিংবা পড়াশুনার জন্যই হোক, ফ্লো চার্ট , স্ট্রাকচার, হাইয়ারআরকি ট্রি স্ক্যামেটিক বা স্টেটিসটিকাল ডেটার গ্রাফিকাল রিপ্রেজেনটেশন ইলাসট্রেশন গুলো দারুণ ভাবে কাজে আসে। বিষয়টা বুঝতে এতটাই সহজ হয় যে, এক ঝটকায় অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যায়। রিডিং গ্লাসে আলমগির স্যারের দেয়া সুকুক স্ট্রাকচার গুলো যতই দেখি ততই নানা রকম প্রডাক্ট একটার পর একটা মাথায় উদয় হতে থাকল। এতদিন আতিপাতি করে খুঁজেও নতুন ইসলামী প্রডাক্টের প ও পাই নাই আর এখন ঝুড়ি ঝুড়ি আইডিয়া। সুকুক নিয়ে গুগল সার্চ দিলাম সেখানে এক ব্যাংক গ্রিন সুকুক পর্যন্ত চলে গেছে বলে পত্রিকায় পেলাম। অথচ এখন পর্যন্ত আমরা সাদা মানে সাধারণ সুকুক কি তাই জানি না।

সুকুক নিয়ে এতটা খোঁজা খুঁজি হয়ত করা হতনা যদি না এর উপর লেকচার দেওয়ার চাপ থাকত। গত দুই বছরের মত এবারও সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজের (এসবিএসসি’র) মিজান স্যার এর ফোন আসল ঠিক যখন ভাবছিলাম এবছর তো ক্লাস নেয়ার ডাক পরল না । মিজান স্যার যে বিষয় গুলোর উপর ক্লাস নিতে বলল তা গত বছরও নিয়েছি, তাই তাতে নতুন কিছু প্রস্তুতি নেয়ার  ছিল না, কিন্তু প্রথম ক্লাসের শেষে বেখাপ্পা একটা শব্দ এই সুকুক দেয়া আছে কেন তা প্রথমে মাথায় ঢুকল না। ক্লাস দুটোর একটা লাঞ্চ ব্রেকের আগে আরেকটা পরে। দুটো ক্লাসের বিষয়বস্তু ধারাবাহিক বটে কিন্তু মাঝখানে এই সুকুক কেন? আর সুকুক প্রথম ক্লাসের শেষে বললে পরের ক্লাসে বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা কিভাবে ধরে রাখা যাবে তা নিয়ে ভাবনায় পরেছিলাম। যা হোক, কি মনে করে মিজান সার সুকুক কে ঐ যায়গায় প্লেস করেছে জানিনা কিন্তু আমি এই বার সুকুক নিয়ে অনেক কিছুই জানি ও প্রচুর বলতে পারব বলে মনে হল। আমাকে দুইটি ক্লাসের প্রথমটির শেষাংশে দেয়া হয়েছে সুকুকের বিষয়ে বলার জন্য কিন্তু আমার যা রসদ তাতে সারা দিন বক্তব্য রাখলেও শেষ হবে না। সব কিছুই নির্ভর করছিল ক্লাসে অংশগ্রহণকারীদের ব্যাংকিং বিষয়ে অভিজ্ঞতার উপর, যদি তারা পুরাতন হয় তবে অন্য বিষয় গুলো অত বিস্তারিত না বলে বরং সুকুকে সময়টা টেনে আনা যাবে, এই ভেবেই গিয়েছিলাম ক্লাস নিতে, কিন্তু তা হয়নি। অংশগ্রহণকারীদের সবাই প্রায় নতুন তাই তাদের কোন বিষয়ই কম বলা যাবে না, বরঞ্চ সুকুক সম্পর্কে পরিচিতিমূলক স্বল্প বক্তব্যই তাদের জন্য ভাল হবে, বেশী বললে দুটি ক্লাসের মূল ধারার সাথে তা গোলমেলে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। সুকুক নিয়ে সেই বিশাল বক্তব্য সংক্ষেপ করতে করতে মাত্র ১০ মিনিটে সুকুকের বক্তব্য শেষ করতে হয়েছিল সেদিনকার ক্লাসে। কে কি বুঝেছে জানি না তবে সুকুক যে ইসলামী ব্যাংকিং এর একটি সম্ভাবনাময় ইনসট্রমেন্ট তা সবাই বোধ হয়ে জেনে গেছে।

সুকুক নিয়ে আমি যত সম্ভাবনাই দেখি না কেন উপর মহল থেকে যতক্ষণ না কোন নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে ততক্ষণ এই নতুন সম্ভাবনার কোন দাম নাই। সেদিন একজন বলছিল বন্দর সংলগ্ন শাখা গুলোতে দৈনিক এমন সব ব্যবসা আছে যে এক লোক সকালে চেক ছাড়া প্রচুর টাকা নিয়ে যায় আর বিকালে তার অধিক জমা দিয়ে যায়, সমস্যা হল সে সকালে কোন ভাউচার ছাড়াই টাকাটা নেয় যেহেতু তার একাউন্টে কোন টাকাই থাকে না। ব্যাংকিং হিসাবে এটা অবৈধ, ম্যানেজার পরিচিত বিধায় কাজটা সে করে আসছিল বেশ কিছুদিন ধরে, কিন্তু একদিন অডিট এসে ভোল্টের টাকা আর ক্যাশ বই এর ব্যালেন্সে ব্যাপক অমিল পাওয়ায় সেই ম্যানেজার সাসপেন্ড হয়ে যায়। এখানে কেউ কিন্তু অর্থ তসরুপ করেনি বরং এটি বৈধ ব্যবসা যা ব্যাংকের কোন প্রক্রিয়ায় প্রনালীবদ্ধ করা যায়নি। যায়নি কারণ কনভেনশনাল ব্যাংক সরাসরি ব্যবসা করতে পারবে না, কিন্তু এই সমস্যা ইসলামী ব্যাংকে নাই বরং মুসারাকা সুকুক এর মাধ্যমে এই ব্যবসা ইসলামী ব্যাংকিং করতে পারবে। সুকুক অথরিটির মাধ্যমে উক্ত শাখা ঐ ব্যক্তিকে এক দিনের জন্য বড় মাপের টাকা ঋণ দিতে পারবে যা সে দিন শেষে মুনাফা সহ প্রদান করবে আর বিনিময়ে সে কমিশন নিবে বা মুনাফার একটা অংশ যা সুকুক চুক্তিতে থাকবে তা নিয়ে যাবে। সেই পুরন প্রবাদটা আবার বলতে হয়, ব্যবসার প্রয়জনে ব্যাংকিং, ব্যাংকিং এর প্রয়জনে ব্যাবসা নয়। সাবজেক্টিভিটি আর অবজেক্টিভিটি নিয়ে এই যে গোলমাল তা বহুবছর ধরেই চলে আসছে। একদিকে জট খুলে তো আর এক দিকে নতুন করে জট লাগে। জীবনের জন্য ধর্ম  না ধর্মের জন্য জীবন? বাচর জন্য খাওয়া না কি খাওয়ার জন্য বাচা? ঘোড়ার জন্য গাড়ী নাকি গাড়ির জন্য ঘোড়া। এই হাতি ঘোড়ার বিভ্রান্তি মানব সমাজে চলতেই থাকবে। উন্নত বিশ্বে অবশ্য এই বিভ্রান্তি কমে গেছে, যাবেই তো, তা না হলে তারা উন্নত হল কি করে।

কনভেনশনাল ব্যাংক বাজারে সরাসরি ব্যবসা করতে পারে না কিন্তু ইসলামী ব্যাংক পারে কারণ তার নীতিমালাই ব্যবসার উপর প্রতিষ্ঠিত, সে অর্থে এটি একটি আর্থিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বটে। এই একটি কারণে ইসলামী ব্যাংকিং নীতিগত ভাবে একধাপ এগিয়ে, কোন ইহুদী ব্যাংকার আমার সাথে একমত হবেন না, কারণ তিনি ব্যাংকিং বলতে বুঝেন বসে বসে টাকা উপার্জন, কিন্তু ইসলামী ব্যাংকিং তা মানে না। বসে বসে টাকা উপার্জন অস্বাভাবিকই শুধু নয় অনৈতিকও বটে। টাকা বাড়াতে হলে তাকে অবশ্যই ব্যবসায় খাটতে হবে এটা হল একজন মুসলিম ব্যাংকারের দৃঢ় বিশ্বাস। ইহুদি ব্যাংকিং নীতি অন্যকে বা অন্যর টাকার কৌশলগত ব্যবহার করে অন্যকে দিয়ে ফয়দা উঠায়ে নেওয়াকে ব্যাংকিং দক্ষতা মনে করে।  সরলীকরণ করলে দাড়ায় অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়া বা কৈ মাছের তেলেই কৈ মাছটি ভাজা। ইসলামী ব্যাংকিং নীতি অন্যের টাকা তার অনুমোদনে ব্যবহার করে অন্যের সম্পৃক্ততায় বা নিজে ব্যবসায় খাটান নিশ্চিত করে অন্যকে মুনাফা করে দেওয়া ও তার সম্মতিতে নিজের জন্য লভ্যাংশের একটা ভাগ নেওয়া। প্রথমটি বৈধ কৃত গণপ্রতারণার কৌশল আর পরেরটি স্বাভাবিক ব্যবসা।

সুকুকের আরেকটি চমকপ্রদ ফিচার হল এর বন্ড মার্কেট ফ্লেভার বা শেয়ার মার্কেট ফ্লেভার। ব্যাংক কারবারকে যদি বলা হয় পরের টাকায় পোদ্দারী তবে শেয়ার মার্কেট হল পরের টাকায় জুয়া চুরি। এই বক্তব্য হয়ত কার কার মধ্যে বিচিত্র অনুভূতির সৃষ্টি করতে পারে তবে এই কথার বিপক্ষে যদি কেউ বেট ধরে তবে আমার কাছে যে তথ্য সম্ভার আছে তাতে আমার জিতে যাওযার সম্ভাবনাই বেশী। তুরুপের তাস বা ট্রাম্প কার্ড আমার হতে তাই ভয় নাই। ইসলামের মুয়ামালাতে শেয়ার মার্কেটকে মানা করা আছে !! এবার কেউ কেউ সত্যি সত্যি আমার উপর খেপে যাবেন মনে হয়। ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা সমর্পকে আমারই এক স্যার বলতেন ‍‍তখনকি আর মুদ্রার চল ছিল? তখনত বারটার চলত !! আমি হতবাক!! সে আমাকে এর বিপক্ষে প্রমাণ দেখাতে বলেছিল। খুঁজাখুঁজি করে যা দেখলাম তাতে দেখা যায় তখন দুটোই চালু ছিল। মুদ্রার এক্সচেঞ্জ রেটের পার্থক্য মুসলমান বা প্রকৃত খ্রীষ্টানরা মানে না কারণ তাতেও রিবা বা সুদ হয়ে যায়। ইসা (আঃ) এ রকম যারা করছিল তাদের উপর মারাত্মক রেগে গিয়েছিলেন বলে কথিত আছে। আর ইজিপ্টে ইউসুফ (আঃ) কে তো কয়েক দেরহামে বিক্রি করে দেয়ার কথা আর স্পষ্ট ভাবেই পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে। তা হলে কেন স্যার বললেন তখন কেবল বারটার প্রথা ছিল মুদ্রার প্রচলন ছিল না? বা মুদ্রায় কেনা বেচা হত না !! বাস্তবতা বড়ই বিচিত্র। এ থেকে বুঝা যায় অনেকেই মনে করেন সেই সময় এত পুরাতন যে, তখন আধুনিক একাউন্টিং ছিল না, কিংবা ধরুন ডেরিভেটিভ এর মত এত জটিল অংক তারা করতে পারত না আর তাই এ বিষয়ে সেই ১৪০০ বছর আগে আইন করে এসব মানা করার প্রসঙ্গই আসে না। এইবার তবে তুরুপের তাসটা দেখাই ? আপনাদের তথাকথিত পশ্চিমা পণ্ডিত মহাশয়েরা যাদের আধুনিক একাউন্টিং এর গুরু মানা হয় তারা ত শূন্যর ব্যবহারই জানত না,  যদি না আল খারেজমী গণিতে শূন্যর ব্যবহার শিখায়ে দিত। ১৪০০ বছর আগের সেই আরব দেশে উটের কেনা বেচার উপর একটি হাদিসে ডেরিভেটিভের উপর আইন দেয়া আছে খুঁজে দেখবেন। তুরুপের আরেকটি তাস হল, ইসলাম আপনাকে আপনার ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি আছে এমন সকল আর্থিক লেনদেন চুক্তি বা পদ্ধতিকে বাতিল করেছে। ইসলাম ব্যবসায় স্বতন্ত্র সত্ত্বা হিসেবে লিমিটেড কোম্পানিকেও স্বীকার করে না কারণ একমাত্র মানব – মানব চুক্তি সম্ভব, বা ফান্ড – ফান্ড চুক্তি সম্ভব ইসলামে, মানব – ফান্ড চুক্তিকে ইসলাম কখনই সমর্থন করে নাই, এর মনে হল ব্যবসা একটি ব্যক্তি নিরপেক্ষ পৃথক স্বত্বা তা ইসলাম মানে না । যে সম্পদের উপর বিক্রেতার অধিকার নাই তার উপরও চুক্তি কিংবা ভবিষ্যতে হতে পারে সেই সম্ভাবনার উপর ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সমূহ ইসলাম মানা করে। কেবল স্পেকুলেশনের উপর ভিত্তি করে ব্যবসা করা ইসলামে নাই। আর এতে যে কোন পক্ষের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় তা নাকচ করে দেয়া হয়েছে। যা-হোক, চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী, উলু বনে মুক্তা ছিটানর মত বোকমি না করাই ভাল। কার সাথে এ নিয়ে বিশাল বিতর্ক করার ইচ্ছা নাই আমার, যাদের এই নীতিগুলো আপত্তিকর লাগছে তাদের অনুরোধ করব ইসলামী অর্থনীতির প্রাথমিক বই গুলো পড়তে, তা হলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।  এই লেখা লেখার সময় আমার এক সহকর্মীর বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেনিং চলছিল বন্ড এর উপর, সে ফিরে যখন বলল যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি সুকুক নিয়ে তেমন কোন চিন্তা-ভাবনা নাই। সুকুক নিয়ে তার প্রশ্নের জবাবে প্রশিক্ষণে তাই বলা হয়েছে। এই কথা শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এত ভাল একটা ইনসট্রমেন্ট অথচ এদেশের মানুষ জানেই না আবার উপর থেকেও কেউ এর জন্য কিছু করছে না। যা বলছিলাম, সুকুকের শেয়ার মার্কেট ফ্লেভার রয়েছে, অর্থাৎ বন্ড মার্কেটের মত এটাকে চালনা করা যায় আবার শেয়ার মার্কেটেও তাকে প্লট করা সম্ভব। উদাহারণ স্বরূপ পদ্মা সেতুর উপর সুকুক ছাড়া যেত, কিংবা মেট্র-রেলের উপরও করা যেত। কর্তার  ইচ্ছায় কর্ম, কর্তা ব্যক্তিরা চায় না, আমরা হাউ কাউ করে আর কি করতে পারব। তবে এই কথাটা জানা থাকা প্রয়জন যে, বর্তমান শেয়ার মার্কেট ইসলাম অনুমোদন করে না নীতিগত কারণে কিন্তু সুকুকে সেই নীতিগত প্রতিবন্ধকতা থাকে না। তাই ইসলামী বন্ড সুকুকে বিনিয়োগ সুদ মুক্ত হবে ও সমাজে কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না। শেয়ার মার্কেটে ধস গুলো যারা অনুভব ও উপভোগ করেছেন তারা বুঝেন শেয়ার মার্কেট সমাজে কত খানি ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে। সুকুক সেই ঝুঁকি থেকে মুক্ত।

একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, যারা অনেক কিছু জেনে যায় তারা তা সহজেই সরলীকরণ করে অন্যকে বুঝতে সহযোগীতা করতে পারে, কিন্তু তখন তারা সহজ করে আর অন্যদের বলতে চায় না । মনে হয় তাতে করে তাদের কষ্টার্জিত জ্ঞানের অসম্মানের সম্ভাবনা থাকে। ধরুন যদি বলি হুন্ডি এর বহু পূর্ব সংস্করণ হল সাক আর তারই সমরূপ প্রতিশব্দ হল বন্ড। আব্বাসীয় আমলের সেই খলিফা হারুন অর রশিদের সময় বিপদজনক রাজ্যের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার জন্য নগদ অর্থ না নিয়ে একটি লিখিত আর্থিক ডকুমেন্ট বা বন্ড সার্টিফিকেট নিয়ে যাওয়া আর হুন্ডি নিয়ে যাওয়া বলা কি ভুল বলা হবে? কেন যে খামাখা সহজ বিষয় গুলোকে জটিল ভাবে উপস্থাপন করা হয় তা আমার বোধগম্যতার বাইরে। সাক বা হুন্ডির বৈধ ও সারবীকিকৃত (ষ্ট্যাণ্ডার্ডাইজড) ফরমেটই পরবর্তীতে চেক বা বন্ড ইনুষ্ট্রমেন্ট। ইতিহাস আর উদ্দেশ্য অবজ্ঞা করা হয় বলেই আজকালকার নব্য প্রজন্মের কার কার মধ্যে সংকীর্ণ মনোভাব দেখেতে পাওয়া যায়। পুরন দিনের সেই সব বড় মনের, বড় মাপের মানুষ ইদানীং কমই দেখতে পাওয়া যায়। সেই পুরাতন প্যারাডক্স এখানেও কাজ করে, জ্ঞানার্জনের জন্য পড়াশুনা না পড়াশুনার জন্য জ্ঞান, ইদানীং তো ক্যারিয়ার এর জন্য পড়াশুনা তাতে জ্ঞান থাকুক আরা না থাকুক কিচ্ছু আসে যায় না। ব্যাপারটা এখন এরকম, পড়াশুনা কর পরীক্ষার জন্য, চাকরী কর আর্থ উপার্জনের জন্য, কেউ বলে না পড়াশুনা কর  জ্ঞানার্জনের জন্য আর চাকরী কর আনন্দময় জীবনযাপনের জন্য। যে তার পড়াশুনা আর চাকরী একই ধারায় করে তার আনন্দ চিন্তা করে দেখেছেন? ওরকম একজন মানুষ বোধহয় আমাদের সোনালী ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি স্যার, জনাব ওবায়েদউল্লাহ আল মাসুদ, উনি টিভি সাক্ষাৎকারেও বলেছেন, ছাত্রাবস্থায় উনি স্বপ্ন দেখেছেন ব্যাংকার হওয়ার, পড়াশুনাও করেছেন ওই লাইনে আর কর্মক্ষেত্রও তিনি অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়ে আসছেন ব্যাংকিঙে। ইসলামী ব্যাংকিঙে সুকুক একটি ভাল বিনিয়োগ মাধ্যম তা সম্পর্কে নিজের অভিমত জানানই ছিল এই লেখার উদ্দেশ্য। একটু মজা করে লিখেছি, তাই তা যদি খানিকটা আনন্দ দিতে পারে তাতেই খুশি।

১৯আগষ্ট১৯>৪সেপ্টেম্বর১৯>০৯সেপ্টেম্বর১৯>