Wednesday, August 14, 2019

ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো ও বর্তমান প্রেক্ষাপট


বাংলাদেশ ব্যাংকিং অঙ্গনে সর্বপ্রথম ইসলামী ব্যাংকিং এর ধারণার সূত্রপাত ঘটে সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজে। সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল জনাব এম আজিজুল হক পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম  পর্যালোচনা করে এ দেশে কি ভাবে তা প্রবর্তন করা যায় তার উপর একটি কর্মশালার আয়োজন করেছিলেন। কর্মশালার অংশগ্রহণকারীদের সংগঠিত করে তিনি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ইসলামী ব্যাংকিং এর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ দেশে ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর মালিকানা ও কর্মপদ্ধতি বিভিন্ন হাত বদল হয়ে আজকের অবস্থায় এসেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে দশটির অধিক ইসলামী ব্যাংক ও এনবিএফআই শরীয়া ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও জনমনে ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়টি নিয়ে নানা রকম ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান দেখেতে  পাওয়া যায়। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কেবল ইসলামী ব্যাংকিংই নয়, একক নেতৃত্বহীনতার কারণে মুসলিম উম্মায় নানাবিধ বিষয়ে মতভেদ ও বাকবিতণ্ডা বহমান রয়েছে । ইসলামের অন্যান্য বিষয় নয় কেবল ইসলামী ব্যাংকিং এর উপর জনমনে যে বিভ্রান্তিকর বিষয়গুলো রয়েছে তা নিয়ে এখানে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখবো।

জনমত পর্যালোচনায় ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে যে বক্তব্যটি সবার আগে পাওয়া যাবে তা হলো “এরা ঘুরায়ে খায়”, কি খায় সে বিষয়ে যাওয়ার অবকাশ নেই, এই বক্তব্যের পর পরই এক হাসিতে সব কথা বলা হয়ে যায়। সাধারণ জনমতের বিস্ময়কর প্রবণতা এই যে, সকলেই হাস্যমুখে বলবে আসলে তো সুদ নেয় না তবে ঘুরায়ে খায়, বক্তব্যটি সরলীকরণ করলে বুঝা যায় যে, তারা এক কথায় বলতে চায় ইসলামের নামে এরা মূলত প্রতারণা করছে। শরীয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত গভীরভাবে না জেনে এরূপ নেতিবাচক মতামত প্রদান করাটা সমীচীন নয়। ইসলামী প্রডাক্টগুলো নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালনা করলে তা সম্পূর্ণ রূপে সুদ মুক্ত কিন্তু যদি কেউ অন্যথা করে তবে তা সঠিক হবে না, এই কার কার করা ভুলের জন্য ইসলামী প্রডাক্টসমূহই সূদমুক্ত নয় ভাবাটা অনুচিত। যে ভুল করছে সে তার অপকর্মের জন্য দায়ী হবে কিন্তু গ্রাহক সম্পূর্ণ রূপে সুদের ঝুঁকি মুক্ত থাকবে, কারণ সে ব্যাংকের সাথে সুদ-মুক্ত চুক্তিতে আবদ্ধ। অনেকে কনভেনশনাল ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট নন-ইন্টারেস্ট বেয়ারিং করে মনে করে সে সুদ-মুক্ত আছে, তিনি কি বুঝতে পারেন না যে, সেভিংস একাউন্ট এর চুক্তিটি নিজেই সুদের চুক্তি? এমনও অনেককে বলতে শুনেছি, সে সুদের টাকা দরিদ্রদের সাদাকা করে বা দান করে দেন, ইনিও মনে করেন এভাবে সে তার টাকাকে পরিশুদ্ধ রাখছেন। উনি হয়ত বুঝতে পারছেন না যে, টাকা রাখার মূল চুক্তিটি কিন্তু সুদের সাথে সম্পর্কযুক্ত আর এভাবে সে সুদের মধ্যেই রয়ে গেল। সুদ কি এবং কিভাবে অর্থনৈতিক লেনদেনে সুদের সৃষ্টি হতে পারে না জেনেই ঘুরায়ে খাওয়া বলাটা অনৈতিক বটে।

এর পর রয়েছ আরেকটি বিশাল বিভ্রান্ত জনমত, অনেকের ধারণা ইসলামী ব্যাংকিং শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্যই, অন্যরা তা হতে সেবা নিতে পারবে না। আমি যখন ২০১৭ সনে মিরপুর প্রিন্সিপাল অফিসে ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে উঠলাম তখন যারা হিন্দু ছিল তারা চলে গেল। এদের বেশ কয়জন আমার পরিচিতও ছিল। এই আর্থ-ব্যবস্থার সাথে ধর্মের নামটা থাকায় এই ব্যবস্থাটিকে অনেকে কেবলমাত্র ঐ ধর্মের লোকদের জন্যই বলে মনে করে। এটি মুসলমানদের ব্যর্থতা যে তারা ইসলামকে সকলের জন্য ও সকলের মঙ্গলের জন্য একটি জীবন ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। মদিনাতে তো সবাই প্রথমেই মুসলিম হয় নাই কিন্তু মুসাব বিন উমায়ের (রাঃ) তো সব ঘরে ঘরে ইসলাম পৌছে দিয়েছিলেন, সেটি কোন ইসলাম ছিল যা আজ ঘরে ঘরে পৌছান যাচ্ছে না? যে সম্প্রদায় নিজেদের ভুল চিহ্নিত করতে পারে না তারা তা সংশোধন করে পূর্বাবস্থায় পৌছাবে কোন পথে আমার জানা নাই। ইসলাম যেমন কেবলমাত্র মুসলমানদের জন্য নয় বরং সমগ্র মানব কল্যাণে, সেরূপ ইসলামী ব্যাংকিংও সকলের সেবা দানের জন্য উন্মুক্ত।

তৃতীয় বিভ্রান্তিটি অনেকটা এরকম যে, ইসলাম শব্দটি শুনলে কিংবা কোন কিছুর সাথে ইসলাম শব্দটি যুক্ত করলে জনমনে  পবিত্র কোরান ও হাদিস হতে বয়ান, তার ব্যাখ্যা ও তার আলোকে বিস্তর আলোচনা প্রত্যাশা করে থাকে, মূলত পবিত্র কোরান ও হাদিস হতে বর্ণিত তথ্য সমূহ জনসাধারণের হাতের কাছেই আছে, প্রচার পত্র সমূহেও বহুবার, বহুভাবে তা বর্ণনা করা হয়েছে। তার পরও সাধারণ জনমত কেন বিভ্রান্তিতে রয়েছে তা বিস্ময়ের অবকাশ রাখে। ইসলামের মূল উদ্দেশ্যর বদলে জনমত মনে হয় এর গন্ধটা বেশী পছন্দ করে । ইংরেজিতে যাকে বলে ফ্লেভার, সুবাস নিয়ে, সুগন্ধ গায়ে মেখেই অনেকে খুশি, মূল বিষয় পর্যন্ত যাওয়ার ইচ্ছাও নাই আর মনে হয় ইদানীং উপায়ও নাই। উপায় নাই কারণ এর প্রচারকরা গন্ধ প্রচার করে উপার্জন করে তাই উদ্দেশ্য প্রচারে তাদের আগ্রহ কম। কয়েকদিন আগে একজন মাদ্রাসার খাদেমের  সাথে পরিচয় হওয়ার সুযোগ হয়েছিল, তিনি আক্ষেপ করে বলছিলেন মাদ্রাসার খরচ এত বেড়েছে যে গত বছর দেড় লাখ টাকা তার নিজের পকেট থেকে দিতে হয়েছে। আমি জানতে চেয়েছিলাম তার আয়ের উৎস সম্পর্কে, তিনি বললেন, তিনি চান না তবে কোন মাহফিলে বক্তব্য রাখলে তাকে ২০, ৩০ হাজার টাকা অনায়াসেই দিয়ে দেয়। মানে হল তিনি ধর্ম প্রচার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সারা জীবন প্রচুর ইবাদত করেছেন অথচ মুয়ামালাত বা লেনদেনে ভুল ছিল, সে ক্ষেত্রে যে পাহার পরিমাণ ইবাদত কোন কাজে আসবে না তা কিন্তু নামকাওয়াস্তে ধর্ম প্রচারকেরা জনসাধারণকে বলেন না। ইসলাম ধর্মে পুরোহিত প্রথা নাই, শুধুমাত্র ধর্মকে অবলম্বন করে জীবিকা নির্বাহ এ ধর্মে  শুরুতে ছিল না, কিন্তু আজ তা প্রচলিত হয়েছে নানা ভাবে। এই তথাকথিত পুরহিত সদ্রস্য সম্প্রদায় সুদের ক্ষতির বিষয়ে জনগণকে কিছুই কি বলার প্রয়োজন মনে করেন না? যা জানা যায় তাদের বলার সুযোগ মসজিদ কমিটি থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শত হলেও এই কমিটিই তাদের নিয়োগ দাতা ও বেতন দাতা। তাদের অসন্তুষ্ট করা সম্ভব নয় বলেই তারাও এ সকল বিষয়ে নীরব থাকেন। সুদ তো শুধু ইসলাম ধর্মে নয়, বরং সকল সেমেটিক ধর্মে নিষিদ্ধ। সুধু সুদ কেন মুয়ামালাত কিংবা ইসলামের রাষ্ট্র ব্যবস্থা বা অর্থনীতির বিষয়ে মসজিদে কমই আলোচনার অনুমোদন দেয়া হয়, যা এ সময়কার মুসলমানদের জন্য একটি দুর্ভাগ্য বটে।

ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যা ইসলামী জীবন বিধান প্রবর্তিত সর্বসাধারণের জন্য কল্যাণকর একটি ব্যবস্থা। কোন বিশেষ গোষ্ঠী কিংবা গোত্র বা কোন বিশেষ ধর্মাবলম্বীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা নয়। কনভেনশনাল ব্যাংকিং সুদকে ব্যবসার প্রণোদনা মনে করে আর ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা সুদকে অর্থনীতিতে একটি মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাবক হিসেবে বিবেচনা করে, বৃহৎ পার্থক্যটা কেবল এখানেই। পবিত্র কোরান ও হাদিস হতে সূত্র কিংবা ব্যাখ্যা গ্রহণের আগেই এই বোধটি জনমনে নিয়ে আসা প্রয়োজন যে, সুদ অর্থনীতিতে জুলুমের বীজ বপন করে। ইসলামী ব্যাংকাররা সমাজে সুদের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জানে এবং মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তা প্রতিহত করণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন। ইসলামী নীতি আদর্শ সম্পর্কে বর্ণনার পূর্বে  সেই নীতির উদ্দেশ্য ও সমাজে তার প্রভাব সম্পর্কে সকলকে সচেতন হতে হবে এবং তার পরই পবিত্র কোরান ও হাদিস হতে তার স্বপক্ষে জানার প্রয়োজনীয়তা জনমনে সঞ্চার হবে। ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাটি ধর্ম প্রচারণার একটি বাহন নয়, বরং এটি জনকল্যাণে পরিচালিত একটি সঠিক লেনদেন প্রক্রিয়া, এই মতটি জনমত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

সোনালী ব্যাংকের গ্রাহকের একটি বৃহৎ অংশ ইসলামী মূল্যবোধে শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন মাননীয় সিইও এবং এমডি জনাব এস এ চৌধুরী মহোদয়ের সময়কালে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে প্রধান কার্যালয়ের বিআরপিডি (পি-৩) ৭৪৪৫(১)/২০০৯-১১৮০ তাং ১৯-এপ্রিল-২০০৯ পাঁচটি উইন্ডোর অনুমোদন পায়। ২৯-জন-২০১০ তারিখে তৎকালীন মাননীয় সিইও এবং এমডি জনাব হুমায়ন কবির মহোদয় সোনালী ব্যাংক, ফকিরাপুল শাখায় ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তদ্পরবর্তী মাননীয় সিইও এবং এমডি জনাব প্রদীপ কুমার দত্ত সারের সময়কালে প্রকা/এমডিডি/আইবিডি/ফ-০৭৩/উইন্ডোস্থানান্তর/৪০৭ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (নীতি শাখা-৩) এর ১৫-জানুয়ারি-২০১৫ তারিখের ২০১৪-৯১ সংখ্যক পত্রের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ফকিরাপুল শাখার উইন্ডোটি সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, ওয়েজ আরনার করপোরেট শাখা, ৬২ দিলকুশা, ঢাকায় স্থানান্তরিত হয় ১৫-মে-২০১৫ তারিখে। সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেটিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট ডিভিশন, ইসলামী ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্ট, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা’র নিয়ন্ত্রণে ২০১০ হতে ৫টি ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো পরিচালিত হয়ে আসছিল। বর্তমানে মাননীয় সিইও এবং এমডি জনাব ওবায়েদুল্লাহ আল মাসুদ সারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের পূর্বের ৫টি উইন্ডোর সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে আরো ৬টি এবং আরো ৪৬টি মোট ৫৭টি ইসলামী উইন্ডো পরিচালনার অনুমোদন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ১১টি ইতোমধ্যেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে আর বাকী গুলো অতি দ্রুত গ্রাহক সেবায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।

ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর চলমান কার্যক্রম, আমানত ও বিনিয়োগ প্রডাক্ট সমূহের পরিচিতি, কোর’আন ও হাদিসের আলোকে ইসলামী ব্যাংকিং এর যথার্থতা সম্পর্কে সম্ভাব্য গ্রাহকদের অবহিত করনের প্রয়োজনীয়তা বোধ করে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, ওয়েজ আরনার করপোরেট শাখা, ঢাকার ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো ২০১৭ সালে প্রচার পত্র বিতরণ করে। প্রচার পত্র সমূহ বিতরণ করার সময়ে এবং সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, মিরপুর প্রিন্সিপাল অফিস ও সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজ আয়োজীত কর্মশালার লেকচার প্রদান পরবর্তী অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে, ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়ে  গ্রাহকগনের মত ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মধ্যও ইসলামী ব্যাংকিং প্রডাক্ট সমূহ সম্পর্কে অস্পষ্টতা ও অজ্ঞতা প্রসূত মতামত বিদ্যমান। ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়ে বিভিন্ন কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রদত্ত মতামত থেকে বুঝা যায় যে, সোনালী ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেরই ব্যবসায়ীক লক্ষ্যমাত্রা বা করপোরেট অবজেক্টিভ থাকে, কর্মকর্তা/কর্মচারীরা যদি সেই লক্ষ্যের সাথে সহমত না হন তবে সে প্রতিষ্ঠানে প্রবৃদ্ধি হয় না। ব্যাপক প্রচারণা ছাড়া আজকের বিশ্বে ব্যবসায়ীক প্রসার সম্ভব নয়, ইসলামী প্রডাক্ট সমূহ প্রসারে জোরালো প্রচারণা করা না হলে সামগ্রিক অগ্রগতি শ্লথ হয়ে পড়বে। উপরন্তু নিজস্ব লোকজনের মধ্যে এ বিষয়ে স্বচ্ছ জ্ঞানের অভাব থাকলে গ্রাহকদের এ বিষয়ে তারা জোরালো ভাবে কোন তথ্য প্রদানেও বার্থ হবে।

বেশ কয়েক বছর আগে (২০০৪ হতে ২০১০ সাল) সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় ইসলামের মৌলিক ধারণাগুলো নিয়ে  কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাথে ইসলামী বিষয় ভিত্তিক আলাপ করার সুযোগ আমার হয়েছিল। সেই সময়কার অভিজ্ঞতা থেকে আমার যা মনে হয়েছে তা হল, বিষয়টি সরাসরি মানুষের বর্তমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডর সাথে সম্পৃক্ত না হওয়ায় কেবলমাত্র আলাপ করার খাতিরে এ বিষয়ে বিতর্ক গুলোকে বারংবার একই ভাবে উল্লেখ করে কেবল সময় ক্ষেপণ করা হয়। প্রকৃত বিষয়টি সম্পর্কে জানার আগ্রহের বদলে কেবল বিতর্কের খাতিরে বিতর্ক করার প্রবণতা লক্ষ করেছি। বিতর্কের খাতিরে বিতর্ক না করে যদি বাস্তব সম্মত সমাধানের বিষয়ে এই রূপ বলা উচিত ছিল যে, ইসলামী ব্যাংকিং প্রডাক্ট সমূহকে পর্যালোচনা করে তাকে আর কি ভাবে গ্রহনযোগ্য করা যায় সে বিষয়ে গবেষণা প্রয়োজন। সর্বোপরি বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় শরীয়া কাউন্সিলের মাধ্যমে সকল ইসলামী ব্যাংক ও এনবিএফআই এর কার্যক্রম  তদারকির ব্যবস্থা আরো জোরাল ভাবে গ্রহণ করা হলে সার্বিক ভাবে সবার জন্য ভাল হবে। কনভেনশনাল ব্যাংকিং এর পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো না ওপেন করে বরং ইসলামী ব্যাংকিং ব্রাঞ্চ বা শাখা চালু করা হলে এই সেবা প্রদান আর সহজতর ও গতিশীল হবে। সে ক্ষত্রে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ইসলামী ব্যাংকিং এর একটি পূর্ণাঙ্গ ডিভিশন সময়ের দাবী মাত্র। প্রচলিত ব্যাংকিং ধারণা হতে ভিন্ন এই ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নতুন নতুন প্রডাক্ট উন্মোচন করার অনেক সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে আর তাই এই সেক্টরে মেধাবী ব্যাংকারদের উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণ প্রদান ও নিয়োগ দান অত্যন্ত জরুরী।

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় আসা উচিত, তা হলো, পুঁজিবাদী অর্থনীতি জনগণকে সঞ্চয় করতে উৎসাহীত করে আর ইসলামী অর্থনীতি জনগণকে কোন প্রকার সঞ্চয় না করে পূর্ণ বিনিয়োগে নির্দেশনা প্রদান করে। এই বিপরীত ধারণার কারণে প্রচলিত ব্যাংকিং এর পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালনা করা নিতান্ত সহজ কাজ নয়। এই কাজে যারা সচেষ্ট তারা অত্যন্ত সাহসীকতার সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই কাজে যারা সচেষ্ট তারা অন্তত হাশরের ময়দানে শেষ বিচারের সময় বলতে পারবে যে, তারা আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (সা:) সাথে সুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শামিল ছিল। অনেকের মতে মদের ব্যবসায় এটা আবার নতুন কি? মদ কি শত পরিশোধনে বিশুদ্ধ হয়? অবশ্যই নয়, তবে মদের দোকানের পাশে যদি মদ বিহীন পানিয়ের একটি উইন্ডো খোলা হয় তবে যে মদ খায় না, সে যদি তা হতে ক্রয় করে তবে ক্ষতি কোথায়? মনে পরে একবার অফিস শেষে বাড়ী ফেরার পথে স্টাফ বাসে একজনের জানার আগ্রহে ইসলামী ব্যাংকিং ও কনভেনশনাল ব্যাংকিং এর তুলনা বুঝাতে যেয়ে বলেছিলাম একটি ফরমালিন যুক্ত অন্যটি ফরমালিন মুক্ত। এতদ্ বক্তব্যের পর অন্যদের উদ্দেশ্যে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, আমার মগজ ধোলাই করে ফেলা হয়েছে। আমি উত্তরে বলেছিলাম আপনাদেরও মগজ ধোলাই হওয়া দরকার তাহলে আপনাদের মগজও ফরমালীন মুক্ত হয়ে যাবে। এরূপ প্রচুর প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সোনালী ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর কার্যক্রম দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অদূর ভবিষ্যতে ইসলামী ব্যাংকিং সোনালী ব্যাংকের উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখবে বলে আশা রাখি।

 
এডিট ও আপডেট হিস্ট্রিঃ ২৯নভেম্বর২০১৭> ২৫সেপ্টেম্বর২০১৮> ০৮অগষ্ট২০১৯>১৪আগষ্ট২০১৯>

Tuesday, August 6, 2019

মানুষের মূল্য নির্ভর করে – সময়কে সে যে ভাবে মূল্যায়ন করে তার উপর (A Man’s value corresponds to the value he assign’s to his time)


মানুষের মূল্য নির্ভর করে – সময়কে সে যে ভাবে মূল্যায়ন করে তার উপর, ইংরেজি থেকে অনুবাদ ১৭ডিসেম্বর২০০৯>০৬আগষ্ট২০১৯> সময় যেন স্রষ্টার হাত, যা তার সাথে সব কিছুকে এক নির্দিষ্ট দিকে সরিয়ে নিয়ে যায়। কেউ এর কারণ বুঝতে পারে আর একে দেখে স্রষ্টার দেয়া অভিজ্ঞ বুদ্ধিমত্তার আলোকে। এরাই প্রত্যেক দিনের সময়কে আকরে ধরে আর স্রষ্টার দেয়া বুদ্ধিমত্তার সাথে তাদের জীবনকে সরল পথে চালিত করতে সক্ষম হয়। অন্যরা সময়কে দেখে খণ্ডিত বিচ্ছিন্ন অবস্থায়, অনেকটা উত্তল বা অবতল আয়নায় দেখার মত,যেখানে কাছের জিনিসকে দূরে আর দূরের জিনিষকে খুব কাছে মনে হয়। এই ভুল বুঝার কারণ তারা সময়কে স্রষ্টার হাতের সাথে তুলনা করতে পারে না। বুঝতে পারে না যে উদ্দেশ্যে স্রষ্টা আমাদের এই “সময় ও স্থানের” এক বদ্ধ জগতে আবদ্ধ করে দিয়েছেন। যে অভাবনীয় সুযোগ তিনি আমাদের দিয়েছেন নিজেদের পরিশুদ্ধ করে নেয়ার ও প্রতিকুল পরিবেশে সংগ্রামের মাধ্যমে উন্নত গুণাবলী অর্জনের। আর এভাবেই যাতে আমরা তৈরি হয়ে উঠি সেই দিনের জন্য যে দিন আমরা তার সাথে পুনর্মিলিত হব।

আধ্যাত্মিক বাণীতে এমনও বলা হয়ে থাকে যে,“আদমের সন্তানেরা সময়ের মাঝে অভিশপ্ত আর আমিই সময়,আমার হাতেই দিন ও রাত্রির আবর্তন”। যারা এ সত্য এখনও বুঝতে পারেনি, সময় তাদের কাছে ঝামেলা পূর্ণ ও বিরক্তিকর বলে মনে হতে পারে। তাই আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত নিজেদের পরিবর্তনের দিকে যাতে সময়ের সাথে আমরা সহজ হয়ে চলতে পারি। সময়কে নিয়ে এই সমস্যা বুঝতে পারা আমাদের জন্য স্রষ্টার আশীর্বাদ। যেমন পেটে ব্যথা হলে আমরা বুঝতে পারি আমাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন দরকার তেমনি সময়ের সমস্যাকে দুর করার জন্য প্রয়োজন আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন। কারো জন্য সময় যেন উড়ে চলে,তাদেরকে অসহায় ভাবে পিঠে নিয়ে যেন তারা পাগলা ঘেরায় চড়ে রওনা হয়েছে কোন পাহাড়ি দুর্গম  পথে। আবার কারো জন্য সময় যেন থেমে আছে নিশ্চল/নিথর হয়ে। সময় আমাদের ইচ্ছামত আমাদের সাথে জোরেও চলবেনা আবার থেমেও থাকবে না।

সবার আগে বুঝা দরকার সময়ের মূল্যটা কত? একবার খরচ করে ফেললে যার পুনরুদ্ধার অসম্ভব। পৃথিবীর সবাই মিলে সব সম্পদ এক করেও সময়ের এক মুহূর্তকে ফিরিয়ে আনতে পারেনা,আর তাই সময়ের মূল্য কল্পনার অতীত। তার পরও মানুষ সময়কে অবহেলা করে ঘন্টার পর ঘণ্টা,আরও সুযোগ খুঁজে অবসর যাপনের। এরূপ অনেক মানুষের পক্ষেই সময়ের সাথে শান্তিপূর্ণ ভাবে যাত্রা করা সম্ভব হয় না (শুধু তারাই নয় যারা ডাক্তারি মতে মানুষিক ভাবে বিষণ্ণ)। প্রত্যেক তরুণ নারী পুরুষ সারা বিশ্বকে দ্রুততার সাথে উপভোগ করতে চায়। তাদের এই আবেগ,উপভোগের দ্রুততাই সময়কে উড়িয়ে নিয়ে চলে। তাই প্রায়ই দেখা যায় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত গুলোতে মানুষ তার আবেগ নিয়ন্ত্রণে বার্থ হয় ও আনন্দ উপভোগের উন্মাদনায় সকল শক্তি খরচ করে ফেলে। এই নিয়ন্ত্রনহীন পথে তারা দ্রুত সকল সামর্থ্য হারিয়ে বোকার মত নিঃস্ব হয়ে পরে। জীবন যেন একটি ম্যারাথন দৌর, এ দৌড়ে দম ধরে রাখতে হয়,প্রথমেই দ্রুত দমে চললে খুব অল্প দূরত্বেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়। ভবিষ্যতের প্রয়োজনে শক্তি ধরে রাখার মত ধৈর্য খুব কম তরুণের মধ্যেই দেখা যায়।

বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই খুব অল্প সংখ্যক তরুণ আদর্শবাদ বা ধর্মের পথে পা বাড়ায়। তদের অধিকাংশই হয় কোন ব্যর্থতা থেকে উদ্ধার পেতে বা কোন দুঃখ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে এ পথের খোঁজ করে। এটি অত্যন্ত কঠিন কাজ,কেননা সে তার সকল শক্তিই আর্থ হীন ভাবে খরচ করে ফেলেছে। আর তার শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা অত্যন্ত নিচু স্তরে নেমে গেছে। এদের অনেকেই হয়ত এখনো তরুণ। অতিরিক্ত আনন্দ উপভোগের প্রবল উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে এর বিপরীত অবস্থা অবসাদ ও বিষণ্ণতা ভর করে এ সব তরুণদের মধ্যে। তখন সময় আর উড়ে চলে না বরং সাপের মত একেবেকে ধীর গতিতে তাদের টেনে নিয়ে চলে। একজন বিষন্ন মানুষ আশা করে সময় আবার দ্রুত চলুক কিন্তু তার বদলে মিনিটকে মনে হয় ঘন্টা, ঘন্টাকে মনে হয় দিন আর দিনকে সপ্তাহ। বিশেষ করে যারা তাদের শক্তি ও ক্ষমতা অপব্যবহার করে তারাই এরকম অবস্থার শিকার হয়। মানুষের জন্য এমন ভাবাটা এতটাই বোকার মত যে সময় আবার দ্রুত চলবে যখন আমরা আগেই বলেছি যে সময়ের মুহূর্তগুলো অমূল্য মুক্তা কণার মত।

প্রচলিত আদর্শ নীতিমালার একটি সহজ নীতি এই যে,“মানুষের মূল্য নির্ভর করে – সময়কে সে যেভাবে মূল্যায়ন করে তার উপর”। যদি সময়কে তুমি মূল্যহীন মনে কর যা দ্রুত চলে যাবে তবে তুমি নিজেই এই পৃথিবীতে আর্থহীন হয়ে পরবে, বেচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই সে ক্ষেত্রে উত্তম। কেন? কারণ তুমি চেয়েছিলে কেবলমাত্র মানবিক শক্তির আর্থহীন/নিয়ন্ত্রনহীন উপভোগ। মানবিক শক্তি একটি অমূল্য সম্পদ। এখন যখন আরেকটি অমূল্য সম্পদ সময় আর তোমার হাতে নেই বরং তুমি এর নিচে চাপা পরে গেছ। তোমার মানবিক শক্তি এমন ভাবে ব্যবহার কর যেন তা সময়ের সাথে সঠিকভাবে মূল্যায়নযোগ্য হয়। সময়কে যখন মুক্তার মত খরচ করবে মানুষের চোখে তোমার উন্নতি ও উচ্চতর অবস্থায় উত্তরণই কেবল দেখতে পাবে। আরেকটি আদর্শ  ছোট নীতি এরকম ‍”একজন সফল ব্যক্তি তার সময়ের সন্তান” এর মানে হল ব্যক্তিটি তার সময়কে ততটাই গভীরভাবে শ্রদ্ধা করবে যতটা তার বাবা/মাকে করে। একজন প্রকৃত সফল ব্যক্তি কখনই সময়ের মুহূর্তকে অপব্যয় করে না বরং একে এমনভাবে আঁকড়ে ধরে যেমন একজন ঘোড়সাওয়ার তার ঘোড়ার লাগাম ধরে ঘোড়াটিকে সঠিক পথে চালিত করে।  একজন প্রকৃত সফল ব্যক্তিকে দেখ, দেখবে সে সব সময় কোন না কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত রয়েছে আর কখনই অপরের জন্য ক্ষতিকর বা অযথা কাজে ব্যস্ত নয়। একজন ব্যক্তি যদি এভাবেই নিজেকে চালিত করে তবে সে নিজেকে পরিপূর্ণতার পথেই নিয়ে যাবে কারণ সে জানবে তার কি করণীয়। তার আত্মদৃষ্টি কখনই অন্ধ হবে না। সে অনাহুত যে কোন অবস্থা সম্পর্কে আগে থেকেই সতর্ক থাকবে।

আমাদের গ্র্যান্ড শেখ এরূপ বলতেন যে, “হে মানুষেরা কিভাবে তোমরা দিন অতিবাহিত করছ? সময়ের অপচয় করোনা, বরং সময় ও স্থানকে এমনভাবে বুনে চল যেন তা গৌরবময় অতীতে পরিণত হয় ও সম্মান নিয়ে আসে ভবিষ্যৎ ও তার পরবর্তী জীবনের জন্য”। যারা আদর্শ পথের অনুসরণ করে তাদের জন্য সময়ের অপচয় ও অপব্যবহার একটি অপরাধ। নিজের মানবিক শক্তি ও অমূল্য সময়কে নিয়ন্ত্রণ কর, প্রতিটি মুহূর্তকে জীবন্ত করে তোল।

৩০ডিসেম্বর১৮> ২০০২ সালে আমার বিজু মামার কম্পিউটার মেরামত করতে গিয়ে ‘সময়’ নিয়ে লেখকের নামবিহীন ইংরেজি একটি আরটিক্যাল পেয়েছিলাম, তা এতই ভাল লেগেছিল যে, অনুবাদ করে ফেলি, কিন্তু তখনকার বিজয়-সুলেখা ফন্টে অনুবাদ করায় তা আর ইদানীং পড়া যাচ্ছে না, ভাগ্য ভাল যে হার্ড কপি সংগ্রহ করা ছিল, যা থেকে তাকে আবার নির্মাণ করা যাচ্ছে। আমার হিসাবে অনুবাদটি ভালই করেছিলাম, ইংরেজি আরটিক্যালটা এখনো ঐ রকমই আছে। ‘সময়’কে বুঝার ক্ষেত্রে আরটিক্যালটি আমার অনেক কাজে এসেছিল, এখনও যতবারই পড়ি মনে হয় সময় সম্পর্কে ধারণাটির পুনরায় ঝালাই হয়ে গেল। ‘সময়’ নিয়ে আমার আরো বেশ কিছু নতুন ধরনা/ভাবনা আর সংশয় জন্ম নিয়েছে যা নিয়ে পরে এক সময় লিখার ইচ্ছা আছে। যেখানে আমি বলতে চাই যে ঘড়ির সময়ের আপত ধারণাটি সম্পূর্ণ রূপে মনব সভ্যতার নিজের প্রয়োজনে তৈরি করা সূর্য নির্ভর মানব সৃষ্ট একটি ধারণা মাত্র, মূল সময় বা মহাকালের সাথে যার কোন সম্পর্ক  নাই। আমরা সঠিক সময় মাপতে পারিনা আর মহাকাল পরিমাপক কোন যন্ত্র মানব জ্ঞানে সম্ভব নয়। ০৬আগষ্ট১৯> বর্তমান  বাস্তব প্রেক্ষিতে সময়ের মূল্য তাই শূন্য বা মূল্যহীন অথবা তা প্রকৃত বাস্তবতার নামান্তর, আর তাই বাস্তবতার অন্তরনীহিত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেছিলাম “বাস্তবতা সর্বদাই সতেজ ও কখনই পেছন ফিরে তাকায় না”। বিগ ব্যাং থেকে যে সময় বা মহাকালের শুরু তা জানতে হলে হকিং এর বই পড়লেই যথেষ্ট, মাল্টি ইউনিভার্স সত্য হলে সময়ের শুরু কখন তা জানা প্রায় অসম্ভব আর আমরা যাকে সময় বলি তা মূলত আমাদের প্রয়োজনে নিজেদের কাজ গুছানর কাজে সৃষ্টি করা সূর্য নির্ভর সর্বজনস্বীকৃত একটি পরিমাপ পদ্ধতি মাত্র। সময় সচেতনতার বিষয়টি তাই ব্যবহারিক সময় নিয়ে বলা মহাকাল নিয়ে নয়। অতীত – বর্তমান – ভবিষ্যৎ নিয়ে সময়ের এই যে প্রবহমানতা তা না দেখা যায় না অনুভব করা যায়, কেবল বুদ্ধি দিয়ে অনুধাবন করা যায়। হকিং এর ব্রিফ হিষ্ট্রি অব টাইম, গ্র্যান্ড ডিজাইন আর থিউরি অফ এভরিথিং বইগুলা পড়লে বুঝা যায় সময়ের এই ধারণাটি কতটা জটিল। তাঁর লেখায় কয়েকটি উক্তি খুব মজার, এক জায়গায় যেমন বলছে, আমাদের অতীত মনে থাকে তাহলে ভবিষ্যৎ কেন মনে থাকবে না? আর বিগ ব্যাং ব্যাখ্যায় কণা বিশ্বের অনিশ্চয়তা তত্ত্ব ব্যবহার করে সে বলছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মত অনিশ্চিত অতীত রয়েছে। তার এ যুক্তি প্রমাণিত হলে সাইন্স ফিকশনের টাইম ট্রাভেল সম্ভব হবে না, কারণ অলটারনেটিভ ভবিষ্যতের মত অতীতেরও রয়েছে একাধিক ধারা। হুমায়ুন আহমেদও তাঁর একটি উপন্যাসে উল্লেখ করেছিলেন এই প্যারালাল বা সমান্তরাল বিশ্বের সম্ভাবনার কথা। মানব মনে সময় অনুধাবনেরও ভিন্নতা রয়েছে, সময়কে সঠিক মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রেও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মতামত। সময় নিয়ে হয়ত অনেক বিশ্লেষণী মন্তব্য পাওয়া যাবে তবে আমার ধারনা সময়কে আমরা সঠিকভাবে বুঝতে পারি না আর তাই এই সময়ের প্রেক্ষাপটে জীবন ও জগতের ধারণাগুলোও নান ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে দিয়ে স্থাপন করি বলেই তা কখনই সঠিক হয় না।