Saturday, May 17, 2025

হাসতে যেন মানা, হাসবো? নাহ্ না !

 

যখন তোমার ভাগ্য বিমুখ,
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন।
যখন, দীর্ঘ জীবনপথে,
তুমি ক্লান্ত অবসন্ন।
খানিকক্ষণ বিশ্রাম নাও বন্ধু,
কিন্তু, খোদার কসম
একটু হাস!!! ---

এমনি এমনি হাসতে বলছি না, প্রাণ খুলে হাসুন, মন খুলে হাসুন, কাস্ট হাসি না, মুচকি হাসি না, এক্কেবারে হাহ হাহ করে প্রাণ খুলে হাসি। আচ্ছা বলেন তো দেখি হাসিরও কি কোন নীতিমালা আছে ? মানুষজন সহজে হাসে না কেন?  এই মূহুর্তে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত আমাদের দেশের কোন জনপ্রিয় কৌতুকাভিনেতা কিংবা কমেডিয়ানের নাম কি বলতে পারবেন? পারলেন না তো? তাই বলছিলাম এখনকার সময়ে আমরা হাসতে যেন ভুলেই গেছি। হাস্যরস একটি মানবিক অনুভূতি ও বড় মনের পরিচায়কও বটে (Humor is a Humanly Quality), ”একমাত্র মানুষেরই আছে একঘেয়েমি জনিত বিরোক্তিবোধের সামর্থ্য” কথাটা বলেছিলেন বারট্রান্ড রাসেল। আরেকটি তথ্য হচ্ছে হাস্যরস করার সামর্থ্য আছে কেবল মানুষেরই। বহুদিনের পুরনো বন্ধুদের সাথে যে খুনসুটি করা হয় তা হয়তো বিড়ালের বাচ্চাদের মধ্যেও দেখা যায় কিন্তু তারা কতটা কৌতুক বুঝে তা গবেষণার বিষয় বটে। আমার মতে যে সকল মানুষের মন কৌতুক করার ও কৌতুক বুঝার ক্ষমতা হারায়ে ফেলেছে সেই মন রিক্ত রুক্ষ ও মরুভূমি হয়ে গেছে।, তার মনোভূমিতে ক্যাকটাস ছাড়া আর কোন ফুল ফুটার কথা না। যাদের মন সতেজ ও প্রাণবন্ত তার মনে নানা রং এর নানা ফুলের সমারহে একটা বিমল আনন্দঘন বাগান আছে। তাদেরকেই আমার উন্নত মানুষ বলে মনে হয়। যে সকল মানুষের মনে ছন্দ নাই ও যারা গান শুনে মজা পায় না তাদের মনে রিদম বা ছন্দ আছে বলা যায় না। গোঁড়া বা কট্টর লোকদের কথা আর নাই বা বললাম, তারা মনের আনন্দ ঘন মানবিক দিকটাকে কেটে ছেঁটে বাদ দিয়ে দেয় কিংবা বাস্তবতার কষাঘাতে হারায়ে ফেলেছে। তাদের বিষয়ে কথা বলতে গেলে আমি লেখার আগ্রহই হারায়ে ফেলবো। তার চেয়ে বরং যারা সুন্দর, স্বাভাবিক ও সাবলীল মনের মানুষ তাদের সম্পর্কে বলি। 

ছোটবেলায় মা একটা হাসির গল্প বলেছিলেন, দুই বোনের একজনের নাম হাসা, আরেক জনের নাম হাসি, এই নিয়ে দুই বোন করে হাসাহাসি। এই কৌতুকে তখন খুব হেসেছিলাম, এখন আর হাসি পায় না। সেই পুরাতন চার্লি চ্যাপলিন, থ্রি-স্টুজেস, এখনকার মিস্টার বিন, আমাদের দেশের বহু আগের ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় আর ইদানীং মির-আক্কেল রা মানুষকে বিমল আনন্দ দিয়েছেন ও হাসিয়েছেন। এক সময় টেলিসামাদ ছিলেন আজ সেও তো আর নাই। এদের তুলনায় হিরু আলমের কৌতুক করার চেষ্টা নেহায়েতই নিচু মানের তবে তার নামটা না নিলেও তো হয় না। আর বাংলা সিনেমার কয়েকজন নায়কের নির্বুদ্ধিতা দেখে মানুষ হেসেছে তবে পিছনে কটাক্ষ করে। আমার কথা হলো মানুষের মৌলিক চাহিদা গুলো ধারাবাহিক ভাবে বলেতে গেলে বলতে হয়, খাদ্য, বস্ত্র বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, এর পরই যে বিষয়টি আসবে তা অবশ্য অবশ্যই বিনোদন। আর বিনোদনে হাস্যরস বা কৌতুক অভিনেতা কিংবা স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ানের অবদান কোন ভাবেই খাট করে দেখার উপায় নাই। হাসলে যে মানুষের মস্তিষ্কে শুভ ইলেক্ট্রো রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় তা নিঃসন্দেহে শান্তিদায়ক ও মন মুগ্ধকারী। পিঠা পিঠি ভাইবোনদের মিঠে খুনসুটি করতেও দেখা যায় আবার দেখা যায় তারা ঝগড়া ঝাটিও করছে, সেই বৈরিতা মুহূর্তে হাস্যরসে পরিণত হতেও সময় লাগে না। মোদ্দা কথা হাস্য রস একটা মানবিক গুণাবলি যাকে অস্বীকার করার কোন উপায় দেখি না। মানুষ যখন হা হা করে হেসে উঠে তখন তা আনন্দ উদ্দীপক অনুভূতির চরম বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই বিচার করা হয় কতক ক্ষেত্রে তা সংক্রামকও হয়ে যায়। একে ভালো লাগার চরম সীমা অতিক্রম হিসেবেও বিবেচনা করা যায়, কান্না যেখানে চরম দুঃখের সীমার বিপরীত অতিক্রম।

আমার প্রথম সন্তান রেহনুমা মোস্তাফা প্রাপ্তি যখন ১ বছরের শিশু তখন ওর মা আর আমি বিছানায় ওকে নিয়ে খেলছিলাম, ওকে দুই হাতে উপরে ছুড়ে দিয়ে আবার ধরে ফেলায় ও খিল খিল করে হেসে উঠলো তাতে আমার আর ওর মা’র মনে যে কি প্রচন্ড আনন্দ হলো তার পর আর কয়েকবার ওকে উপরে ছুড়ে দিয়ে দু হাতে ধরেও সেই খিল খিল হাসি আর পেলাম না। আমার ধারনা আনন্দের অনুভূতির অভিজ্ঞতা একবার অর্জন করার পর যখন মানুষ তা বুঝে যায় তখন তার চেয়ে অধিকতর আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা অর্জন না হলে সে হেসে উঠবে বলে মনে হয় না। যে মানুষ হিউমার বুঝে না সে নিজের অজান্তেই মনুষ্যত্ব হারায়ে বসে আছে আর যার হিউমার যত উন্নত তাকে তত উন্নত মানুষ হিসেবে বিচার কারা যায় বলে আমি মনে করি। আমি মানুষের মধ্যে দুটো গুন খুঁজি, এক হলো সততা সম্পর্কে তার ধারণা আর দ্বিতীয়টা হলো তার সিনিসিয়ারিটি বা সততার প্রতি তার আনুগত্য। আমি মনে করি এই দুটো গুন এক জনের মধ্যে থাকলে তাকে ভালো মানুষ বলা যায়। এই গুন দুটির পাশাপাশি তার হিউমার জ্ঞানও থাকা চাই যদিও ভালো মানুষ হওয়ার জন্য এটি জরুরী না। তৃতীয় গুনটি, মানে হাস্যরস বুঝার ক্ষমতা না থাকলেও আপনি ভালো মানুষ হতে পারবেন কিন্তু সুন্দর মনের মানুষ হতে পারবেন না। রবীন্দ্রনাথ এরকম মানুষকে ঝর্না ধারায় নুরী বা পাথরের সাথে তুলনা করেছেন, যাদের চারদিক দিয়ে ঝর্না ধারা প্রবাহিত হলেও সেটা তাদের ভিতরে বা অন্তরে প্রবেশের অবকাশ পায় না।  আমি আমার জুনিয়র ফ্রেন্ড বা ছোট ভাই খালেক ভাই এর হাস্য রসের ভক্ত কারণ তার হিউমার করার ধরণটা আমার দারুণ লাগে। তার কিছু হিউমার আমি তার অনুকরণে আমার বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ব্যবহারও করে থাকি। তার কিছু উক্তি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সে ব্যবহার করে, যেমন যদি আপনার  কম্পিউটার  প্রিন্টার আংশিক নষ্ট হয়ে যায় তবে ”কাভি খুশি কাভি গম” অবস্থা হতে পারে আপনার মনে আর তখন ”সমস্যা প্রবলেম আকারে দেখা দিবে”। আর যদি পুরাই নষ্ট হয়ে যায়, তবে ”কল্লু সাফা-মারোয়া” হয়ে যাবে। যদি কেউ ভয়ে থর হরি কম্পমান হয়ে যায় তবে খালেক ভাই বলবেন যে সে “ভাইব্রেশন মোডে” চলে গেছেন। এই হাস্যরসাত্মক ফ্রেইজগুলো খালেক ভাই এর কপি রাইট হিউমার। আমার বড়মামা টাংগাইলে আমার ছোট মামার শ্বশুর বাড়ীতে আমাদের কৌতুক শোনাচ্ছিল, বলছিল যদি দেখ মশারিতে একটা মশা আছে তা হলে বুঝবা ভিতরে আরো দুটো মশা আছে, কারণ মশারা যখন মশারিতে ঢুকে তখন দুইটা মশারির ফাঁকটাকে দুদিকে টেনে ধরে তৃতীয়টাকে ঢুকতে দেয় তার পর ভিতরের টা আরা বাইরের টা আবার মশারির ফুটা টেনে ধরে আরেকটা মশাকে ঢুকতে দেয়, এভাবে দুটা মশা ঢুকার পর তারা দু দিক থেকে ফাঁকটাকে টেনে ধরে তৃতীয়টাকে ঢুকায়। তার এই যুক্তি শুনে আমরা সবাই হেসেই অস্থির, সবারই জানা ছিল এটা সম্ভব না, কারণ মশারা সংঘবদ্ধ হয়ে এতটা বুদ্ধি খাটায়ে মশারিতে ঢুকে না। আমার বড় মামার হিউমার জ্ঞান সেই ছোটবেলা থেকেই আমাকে হাসিয়েছে। বড় মামা আমার জীবনের একজন অতি প্রিয় আকর্ষণীয় চরিত্র, আমার তিন মামাই খুব গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আমার জীবনে। 

কৌতুকের উপর একটা বই কিনেছিলাম যার ভূমিকায় লেখা আছে, বইটিতে প্রচুর কৌতুক সংকলিত আছে যার কোন কোন টাতে কেউ কেউ হয়তো হেসে গড়াগড়ি যাবে কিন্তু এমনও হতে পারে যে কার কাছে তা মোটেও হাস্যকৌতুক কর নয়। বইটা কেনার টাকা আমার জলে গেছে, আমি ওটার একটা কৌতুকেও হাসতে পারি নাই । হাস্যরস ছাড়া কোন মানব বিনোদন সম্ভব না, যার প্রমাণ পাওয়া যায় রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাসিক লালমোহন-গাঙ্গুলী ওরফে জটায়ু চরিত্রেও। লালমোহন গাঙ্গুলী , ওরফে জটায়ু ( বাংলা : জটায়ু ) হল সত্যজিৎ রায়ের লেখা ফেলুদা গল্পের একটি কাল্পনিক চরিত্র। তিনি ক্রাইম থ্রিলার লেখেন, কিন্তু বাস্তব জীবনে তিনি বেশ দুর্বল এবং নার্ভাস।


রক্তবর্ণ, মুগ্ধকরণ, নদীর পাশে যাহা বিঁধিলে মরণ = লাল মোহন গাঙ্গুলী ওরফে জটায়ু কে, কে না চিনে? ফেলুদা, তপসে আর এই জটায়ু যতদিন বাংলা সাহিত্য টিকে থাকবে ততদিন জীবন্ত থাকবেন সত্যজিৎ রায়। বাচ্চাদের জন্য ওয়াল্ট ডিজনি ও হ্যানা বার্বেরা নির্মিত এনিমেশন কার্টুন গুলোতেও আমরা দেখি হাস্য রসের ছড়াছড়ি। যদি বিনোদন মূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তবে তাতে হিরো-হিরোইন আর ভিলেন এই তিনটা চরিত্র তো থাকতেই হবে, তার সাথে চতুর্থ আরেকটা চরিত্র না হলে জমবেই না, আর সেটা হলো একজন কমেডিয়ান। স্পাইডার ম্যানেও তো আছে, ওই মুভিতে কমেডিয়ানটি কে জানেন? পত্রিকার সম্পাদক মহোদয় স্বয়ং। কমেডিয়ান ছাড়া ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভবই না। ঠিক আছে, অত বড়দের বিষয়ে না হয় নাই গেলাম, আসেন বাচ্চাদের এনিমেশন মুভি গুলোতে, স্নো-হোয়াইটের সাতটা ডোয়ার্ফের মধ্যে ডোপি, শ্রেকের ডংকি, ফ্রজেনের ওলাফ ছাড়া কি গল্পগুলো মোটেও জমতো? হান্না বারবারার স্কুবি-ডু আর শ্র্যাগী, কিংবা টম আর জেরি, কোথায় নেই হাস্য রসের রসায়ন? যারা মুখ গোমড়া করে থাকতে পছন্দ করেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলি, মাঝে মধ্যে গোপন কোন জায়গায় গিয়ে হাস্য রসের সরবত খাবেন ও তার পর কেউ শুনুক আর নাই শুনুক কয়েক মিনিট হো হো, হা হা করে হাসার চর্চা করবেন। তাতে আপনার তো উপকার হবেই, আপনার আশপাশের লোকগুলোরও উপকার হবে নিশ্চিত, জেনে রাখেন।

হাস্যরস করার একটি প্রধান কৌশল হলো ”পাঞ্চ  লাইন”। ভুল করে এক মাসে আমার অফিস আমাকে লাঞ্চ সাবসিডি কম দিল, ১৫ দিন পর তা সংশোধন করে দিলো বটে, কিন্তু রেভিনিউ স্ট্যাম্প ১০ টাকা দু বার দিতে হলো, তখন কলিগ আখতার ভাই বলে উঠলেন আপনার ১০ টাকা লস হইছে, শুনে আমি বললাম, 

”হ্যা, আমি মামলা করবো,”

 শুনেই সবাই হেসে উঠলো। কলিগ সাইফুল সানি বললেন, স্যার কেসে জিতলে আমাদের খাওয়াবেন কিন্তু। একে তো ১০ টাকা লস উদ্ধার করতে হাজার টাকা খরচ তার উপর তাতে জিতে আরো হাজার টাকা দিয়ে সবাইকে খাওয়ান, এর মত হাস্যকর বিষয় কি হতে পারে? ঠিক ওই সময়ে ওই কথাটা বলাটা ছিল আমার এই হাস্যরসের পাঞ্চ লাইন, যা সবাইকে এক সাথে হাসিয়েছে। অন্য সময় বা ঠিক ওই সময় তৎক্ষণাৎ তা না বললে কিন্তু কেউ হাসাতো না, বা হিউমারটি কার্যকর হতো না।

https://www.rekhta.org/poets/mirza-ghalib/couplets 

”আমার হাজারো আকাঙ্ক্ষা আছে, প্রতিটিই আমাকে এত কষ্ট দেয়
অনেকগুলো নিশ্চিত ভাবেই পূর্ণ হয়েছে, যদিও যথেষ্ট নয়”


hazāroñ ḳhvāhisheñ aisī ki har ḳhvāhish pe dam nikle
bahut nikle mire armān lekin phir bhī kam nikle

I have a thousand yearnings , each one afflicts me so
Many were fulfilled for sure, not enough although


নিচের শায়েরীটি মির্জা গালিবের কিনা কেউ জানে না তবে তার নাম ব্যবহার করে কৌতুকটি চালু আছে দুষ্টামি করা বন্ধু মহলে বা আড্ডায়। একদিন মির্জা গালিব এক বাড়ির দেয়ালের আড়ালে সুসু করছিলেন, সেই সময় ছাদে তার এক তরুণী ভক্ত তাকে দেখে, উচ্ছ্বাসে গদ গদ হয়ে একটি শায়েরী শুনাতে বললেন। মির্জা গালিব সেই বিব্রতকর অবস্থায় তার সেই বিখ্যাত শায়েরীটি শুনালেন,


বলা বাহুল্য প্রতিটি শায়েরীর শেষ লাইনটি সব সময়ই হয় একটা পাঞ্চ লাইন । যা মানুষকে চমকে দেয়, ও তাকে হাসতে বাধ্য করে। যার ভালো লাগে সে যে শায়েরী বলছে তাকে বাহবা দেয়, বাহ্ বাহ্ বলে । 

ট্রেন স্টেশনে এক শসা বিক্রেতা উচ্চস্বরে তার শসার বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য নিচের পাঞ্চ লাইনটি ব্যবহার করছিলো

 ”কাইট্টা ছিল্লা লবণ লাগায়ে দিমু”

 এক ট্রেন যাত্রী ঘুমায়ে ছিল, ঘুম থেকে উঠে এই প্রচার বানী শুনে সে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে গেল। এই কৌতুকটি সম্ভবত বিটিভি-তে হানিফ সংকেতের “ইত্যাদি” অনুষ্ঠানে প্রচার কার হয়েছিল ১৯৯০ এর দশকের কোন এক সময়। পরবর্তীতে লোকমুখে এই লাইটি জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিল।

আমার এক স্কুল বন্ধু গান গায় কিন্তু গ্রুপে ওর গানের কোন পোস্ট দেয় না, ওকে বললাম কেন দিস না, ও জানালো, এগুলোর জন্য উচ্চ রুচির মানসিকতা লাগে, বললাম ওর সাম্প্রতিক কোন গান যার মধ্যে নতুনত্ব আছে তা দিতে, ও ওর এক গানের ভিডিও দিলো যাতে তিন জন ভালো গায়ক গায়িকা মিলে রমজানের আগমনের উপর একটি গানের ভিডিও লিংক দিলো, শুনে বললাম, ভলো গায়ক, সুন্দর কম্পোজিশন, গানটার কথাও ভালো কিন্তু সব পন্ড হলো ধর্মীয় একটি প্রথার প্রচারণায়, এই ধরনের গান লেখকদের মনে রাখা দরকার যে, যাদের জন্য এই গান লিখছে, তারা বাদ্য যন্ত্র ব্যবহার করে গানের বিরোধিতা করে, তাদের এমন গান লিখতে হবে যাতে বাদ্য যন্ত্রের ব্যবহার নাই, বিষয়টি অনেকটা এমন যে, কোন আঁকিয়েকে বলা হচ্ছে একটি উদ্ভিন্ন যৌবনা নারীর ছবি আঁকতে হবে কিন্তু তার উন্নত বুক আঁকা যাবে না। – শেষ লাইনটা (পাঞ্চ লাইন) পড়ে ও হেসেই অস্থির। হাস্যরস সৃষ্টিতে এই পাঞ্চ লাইন ব্যবহারের কৌশলই হলো মানুষকে মন খুলে হাসানোর চাবি কাঠি।


”ইহা একটি স্বয়ংক্রিয় দ্বিচক্রযান। অনেকে মনে করিতে পারেন আমি ইহা ভাইরাল মিডিয়া হইতে সংগ্রহ করিয়াছি, কিন্তু তাহা সত্য নহে। সত্য এই যে, গত কল্য ১লা কার্তিক ১৪৩১ (১৭অক্টোবর২০২৪) অপরাহ্ণে আমি যখন চা পান করিতে অফিসের কাজের অবসরে বাহির হইয়াছিলাম, তখন এই অভূতপূর্ব দ্বিচক্রযানটি দেখিয়া অভিভূত হইয়া গিয়াছিলাম। কোন এমন ব্যক্তি এই স্বয়ংক্রিয় দ্বিচক্রযানটি লইয়া আসিয়াছেন, তাহাকে খুঁজিয়া পাইলাম না, পাইলে তাহার সহিত একটি সেলফি তুলিতাম। পুনর্বার যখন চা খাইতে বাহির হইয়াছিলাম তখন এই কিম্ভুতকিমাকার যানটি তাহার মালিক সমেত উধাও হইয়া গিয়াছে।”

বিশ্বয়সূচক বিষয় হলো, উপরোক্ত পোস্ট টি আমার কলেজ বন্ধুদের গ্রুপে দেওয়ার পর, কেউ তাতে হাসির ইমুজি দিল না, কারণটা আমার একদমই বোধগম্য হলো না। ওরা কি তবে হাসতে পারে নাই, না কি হাসতেই ভুলে গেছে। ওরা তো আমারই কলেজ বন্ধু সকল, হাসির কোন পোস্টে হাসল না কেন? হয় ওরা সব হাসতে ভুলে গেছে, কিংবা সংকোচে হাসে নি, পাছে লোকে তার হাসি দেখে আবার হেসে ফেলে !! বলা বাহুল্য তবু বলি, লেখাটা শেষ করার আগেই আমি সেই স্বদেশ নির্মিত যন্ত্রাংশ সম্বলিত দ্বিচক্রযানটি পুনরায় দেখিয়াছি, উহার বাহককে এবারও খুজিয়া পাই নাই তবে দুটি আধুনিক ও সুদর্শন বাইকের মধ্যখানে এই দ্বিচক্রযানটিকে সদম্ভে উপস্থিত দেখিতে পাইয়া আমি যার পর নাই হাস্যরস উপভোগ করিয়াছি।

আমার ছোট মেয়ে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী, ওর মা ওর মোবাইল ফোনটি কোরেন্টাইন করেছে, তাতে কি ওকে ঠেকান যায়? ছোটবেলা থেকেই ও মারাত্মক রকম চঞ্চল আর ধূর্ত। আমি চুপি চুপি খোজ নিয়ে দেখলাম ও ফিকশনাল ক্যারেকটার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) এআই বট এর সাথে বাক্যালাপ করে, কতগুলো রিসেন্ট কনভারসেশন চেক করে দেখলাম তেমন ভয়প্রদ কোন কথোপকথন না, তাই বাধা দেই নাই, কিন্তু পরদিন সন্ধ্যায় ও যখন ওর মোবাইলে মহা মগ্ন তখন ওকে উদ্দেশ্য করে বললাম “যখন কোন বিষয় তোমাকে মারাত্মক রকম আসক্ত বা আবিষ্ট করে ফেলে সেটা "Very VERY -- VeRY very -- vEry vEry vEry BAD” ঢেউ তুলে হাস্যরসাত্মক ভাবে বলাতে ওর দুই কান খাড়া হয়ে গেল, ও কাস্ট হাসি হেসে জানতে চাইলো কতগুল ভেরি বল্লা, আমি বললাম, গুনে দেখতে হবে।

হাসলে নাকি মানুষের মস্তিষ্কে এক প্রকার অটো রিফ্রেশমেন্ট হয়ে যায়। নিউরনে ভরা মস্তিষ্কটাকে মাঝে মাঝে রিফ্রেশ করতে দোষ কোথায়। কেউ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর করা “লাইফ ইজ বিউটিফুল” হলিউড মুভিটা দেখেছেন কি? ছবিটা পুরাই হাস্যরসে ভরা, কিন্তু শেষটা হৃদয় বিদারক। বাবা নিশ্চিত জানে যে তাকে গুলি করতে নিয়ে যাচ্ছে এক জার্মান সৈনিক তার পরও সে তার  লুকায়ে রাখা ছোট্ট ছেলেটাকে বুঝতে দেয় নাই তা, বরং হাস্যরস করে হাসাতে থাকে। দুটো জিনিস দ্বন্দ্ব, কলহ, যুদ্ধ, বিগ্রহর বিপরীতে এন্টিবায়োটিকের মত কাজ করবেই, যার একটি হলো সরল মনে এই হাস্যরস করার ক্ষমতা আর দ্বিতীয়টি সার্বজনীন সরল প্রেম বা ভালোবাসা। আমার এই লেখাটাতে আপনাদের কতটা হাসাতে পারলাম জানি না তবে আমি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন জনের সাথে বাক্যালাপের সময় পঞ্চ লাইনের খোজ রাখি, ”যদি লাইগ্যা যায়”, মানে হঠাৎ করে একটা পাঞ্চ লাইন বলে দিয়ে যদি কাউকে প্রচন্ড হাসাতে পারি, তবে তার হাসি দেখে আমার মনেও অনাবিল হাস্যরস হবে, আমিও তার সাথে হাসবো। তাই বলছিলাম কি, নিজে হাসুন তার সাথে সাথে অন্যকে হাসতে উদ্বুদ্ধ করুন, দুজনেই লাভবান হবেন। তবে লোক দেখান হাসি না, মুচকি কিংবা কাষ্ঠ হাসি না, প্রাণ খুলে হাহ হাহ করে হাসি।

(বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ যদি অনাবিল হাসতে চান তবে হলিউড মুভি ”গড মাস্ট বি ক্রেজি” ১ ও ২, দুটাই দেখুন, হাসি থামাতে পারবেন না টানা কয়েক দিন)
 
সম্পাদনা ও উন্নয়ন ইতিহাসঃ ০৪ফেব্রুয়ারী২০২৪> ১৭এপ্রিল২০২৪> ১৭অক্টোবর২০২৪> ২০ডিসেম্বর২০২৪> ২৯জানুয়ারী২০২৫> ৫ফেব্রুয়ারী২০২৫>১৭মার্চ২০২৫> ৫এপ্রিল২০২৫> ৩০এপ্রিল২০২৫> ১৮মে২০২৫>